Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Action Crime

1.4  

Debdutta Banerjee

Action Crime

একটি সন্ত্রাসের মৃত‍্যু

একটি সন্ত্রাসের মৃত‍্যু

9 mins
1.9K


এবারের জন্মদিনটাও অয়ন মনে রাখেনি। এই জারনালিজমের লাইনের লোকগুলো নিজের কাজ আর কেরিয়ার ছাড়া কিছুই বোঝে না। বিবাহ বার্ষিকীর দিন হোটেলে খাওয়াবে বলে সেজে বসেছিল। রাত এগারোটায় বাবু জানালেন এক সন্ত্রাসবাদী ধরা পড়েছে বনগাঁ সীমান্তে। তিনি সেখানে গেছেন।


আর আজ সেই সূত্র ধরে দেশকে উদ্ধার করতে বেআইনি অস্ত্রর পেছনে ছুটছেন বাবু। কদিন আগে নাকি একটা বড় উইপনের কনসাইনমেন্ট ঢুকেছে বনগাঁ দিয়ে। যে ধরা পড়েছিল সে তো সুইসাইড করে মরে ভূত। অয়ন এখন খবরের পেছনে ছুটছে। তার মাঝেই এলো খারাপ খবরটা। টিভি চালিয়ে হতভম্ব দিঠি, এমনও হয় !! আজকাল চারদিকে শুধু খুনের খবর !!


পরদিন প্রথম পাতায় বড় করে বেরিয়েছিল খবরটা। কাল থেকে বহুবার বহু চ্যানেলে দেখিয়েছে ঘটনাটা। নানারকম বিশ্লেষণ করেছেন বিদ্বজ্জনেরা। অয়ন নিজেও গেছিল কভার করতে। রাতে অয়নের মুখ থেকেও শুনেছে ও। তবুও মনের কোনে একটা চিনচিনে অনুভূতি, এমন কি কোনো মা করতে পারে ? নিজে মেয়ে বলেই কি এমন মনে হচ্ছে? নাকি আজন্ম লালিত সেই প্রবচন,

 কুপুত্র যদি হয়/ কুমাতা কদাপি নয়!!


পেপারটা রেখে বারান্দায় উঠে আসে দিঠি। হেমন্তের রোদে নিচের পার্কে খেলে বেড়াচ্ছে কয়েকটা শিশু। মায়ের বসে গল্প করছে এদিক ওদিক। বয়স্করা হাঁটছে। ছুটির দিনের পরিচিত দৃশ্য।


বেশ কয়েক বছর আগে মনি মাসি ওকে আর দীপনকে নিয়ে এভাবেই পাড়ার পার্কে আসতেন। ছেলেকে চোখে হারাতেন মাসি। অতিরিক্ত আদরে বাদর তৈরি হচ্ছিল দীপন।


জ্ঞান হয়ে থেকে মনি মাসিকে সাদা কাপড়েই দেখে এসেছে দিঠি। মায়ের কাছে শুনেছিল স্কুলের হেড সার ছিলেন দীপনের বাবা অজিত নাগ। অনেক নকশাল পন্থীকে বাড়িতে লুকিয়ে রাখতেন উনি। প্রচ্ছন্ন মদত দিতেন ওদের। এক রাতে পুলিশের গুলিতে সব শেষ। পরে অবশ্য ঐ স্কুলেই লাইব্রেরী দেখাশোনার কাজ পান মনি মাসি। পাড়ার সবাই ওঁকে ভালোবাসতো। একাই দীপনকে মানুষ করছিলেন।ছেলেটা ছিল ক্রিকেট অনুরাগী, ভালো খেলত। কিন্তু আসতে আসতে বদলে যাচ্ছিল। ওদের বাড়ির পাশেই থাকত দিঠিরা।


বিয়ের পর ওদের খোঁজ আর রাখত না দিঠি। গত ছমাস আগে একটা ক্রিকেট বেটিং করতে গিয়ে দীপন একটা খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় দু একটা কথা কানে এসেছিল। মনি মাসি দিন রাত এক করে থানা পুলিশ করে ছেলেকে বাঁচিয়েছিল। দীপনকে একটা দোকান করে দিয়েছিল মাসি বাড়ির সামনে। ওদের বাড়িটা অনেকটা জায়গা নিয়ে। ইদানীং প্রমোটার যাদবের নজর পড়েছিল ওদিকে। দীপনকে রাজি করিয়েই ফেলেছিল কিন্তু মনি মাসি রাজি হয়নি। এই নিয়েই নাকি অশান্তি, আর তার জেরেই মাসি নাকি ছেলেকে মেরে দিয়েছিল।


আজকাল খবরগুলোকে তেল মশলার মোড়কে মুখরোচক গল্পের মত করে পরিবেশন করা হয়। পেপারে মনি মাসির চরিত্র নিয়ে গল্প লিখেছে, আবার টিভিতে দীপনের জীবনের অন্ধকার অধ্যায় গুলো তুলে ধরছিল একেকটা চ্যানেল।ছেলেটা সঠিক পরিকাঠামো পেলে ভালো ক্রিকেট প্লেয়ার হতে পারত।কিন্তু… কি যে হয়ে গেলো।মনি মাসির সাথে নাকি ছেলের বনিবনা ছিল না। আরো কত কথা।

বিকেলে জন্মদিন বলে দিঠির বাবা এসেছিলেন পায়েস নিয়ে। বাবা মা পছন্দ করতেন মনি মাসিকে। চা খেতে খেতে ওর বাবা বললেন -''কত কেস তো শলভ করিস, মনির কেসটা একটু দেখ না তোরা।''


-'' সে যদি নিজেই দোষ স্বীকার করে আমরা কি করবো?'' দিঠি বলে ওঠে।

-''দীপনের অনেক বদ গুন ছিল। কিন্তু মনি ওকে স্নেহ করত। সেই মনি ওকে মেরে দিল !! এটাই আশ্চর্য!!''

-''দীপন কে মানুষ করার অনেক চেষ্টা করেছিল মাসি। তবে শাসন যদি ছোট থেকেই করত ... ছোটবেলায় এতো বেশি আদর দিয়েছিল মাসি এসব তার ফল।"

-''কাল রাতে দীপনদের বাড়িতে চোর ঢুকেছিল জানিস। ওদের নিচতলাটা তো বহুদিন কেউ থাকে না। ঘরগুলো সারানো হয় না ড্যাম্প। দোতলা পুলিশ সিল করে দিয়েছে। কাল মাঝরাতে বাথরুম যেতে গিয়ে দেখি ওদের নিচ তলায় দু টো সরু আলো ঘুরছে। মোবাইলের আলোর মত। আমি কে ওখানে বলে চিৎকার করতেই সবাই ধুপধাপ দৌড়। তিনজন ছিল । ভাবছি পুলিশ কে বলব। ''

দিঠি একটু অবাক হয়। বলে -''চুরি করার মত কি ছিল ওদের ঘরে। মাসিতো খুব অল্প টাকা মায়না পেত। রিটায়ার্ড হয়ে বেশ টাকা খরচ করে ছেলেকে দোকান খুলে দিয়েছিল। ''

-''সেটাই ভাবছি। চিন্তার বিষয়। ''


দু এক কথার পর বাবা চলে যেতেই দিঠি ভাবতে বসে ব্যপারটা নিয়ে।


রাতে অয়ন ফিরলে সব রাগ ভুলে ওকে সব বলে দিঠি বলে -'' তুমি বলেছিলে মনি মাসির সাথে দেখা করবে ? ''

-''গেছিলাম, মহিলা পাথর হয় গেছেন। একটা কথাও বলেন নি। ''

-''দীপনকে চোখে হারাত মাসি। কখনো গায়ে হাত তোলে নি। ঐ ভাবে মাথায় পেতলের ফুলদানী দিয়ে মেরে মেরে .... যারা দেখেছে বলছে দৃশ্যটা অসহ্য, ঘিলু রক্তে মাখামাখি.... মরে যাওয়ার পরেও মাসি মেরেই চলেছিল এক ভাবে। কতটা রেগে গেলে এক মা এমন করতে পারে ?''


-''দীপন কিছুদিন আগে একটা খুনের ঝামেলায় জড়িয়েছিল। ছোটা আরশাদ খুন হয়েছিল। ও ছিল একজন ড্রাগ মাফিয়া।ক্রিকেটের বেটিং ও করত। আর ওর মোবাইলে শেষ ফোন এসেছিল দীপনের। শেষ একমাস দীপনের সাথে ওর যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল নাকি ঐ ক্রিকেট নিয়ে। সেদিন ইন্ডিয়ার খেলা ছিল। গঙ্গার ধারে যেখানে ওর ডেড বডি পাওয়া যায় দীপনের টাওয়ার লোকেশন ঐ সময় ওখানেই ছিল। কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে ছাড়া পায় দীপন। ও কোর্টে বলেছিল ওখানে আরশাদের সাথে দেখা করার কথা ছিল। ও গেছিল। কিন্তু আরশাদ আসেনি। ও কিছুক্ষণ থেকে ফিরে আসে। ওর মা ভালো উকিল ধরেছিল। ''

-''আরশাদের সাথে ওর কি দরকার পুলিশ প্রশ্ন করেনি?”

-“আরশাদের প্রমোটিং এর ও ব্যবসা ছিল যাদবের সাথে। ওদের বাড়িটা আরশাদ আর যাদব কিনতে চাইছিল।সেটাই বলেছিল ও। এসব থানার থেকেই জানলাম। ''

দিঠি যত শুনছিল জট আরো পাকিয়ে যাচ্ছিল। সুতোর মাথাগুলোই খুঁজে পাচ্ছিল না। ছোটবেলায় দেখা মনি মাসি ও দীপনের কথা খুব মনে পড়ছিল।


পরদিন অয়নের সাথে কোর্টে গেছিল দিঠি। ওর বাবাও গেছিল। অয়ন স্টোরিটা কভার করছে ওর অফিস থেকে। তাই ওরা মনি মাসির সাথে কথা বলার পারমিশন পেয়েছিল।


দিঠি মনি মাসিকে দেখে চিনতে পারে না। এই কয়দিনে একদম বুড়ি হয়ে গেছে মাসি। চোখের নিচে কালি, চুল আলুথালু, পরনের কাপড়টাও নোংরা। মনি মাসির দু চোখের দৃষ্টিতে একরাশ শূন্যতা। দিঠি প্রশ্ন করে -''মাসি কি হয়েছিল খুলে বলো । আমি তো জানি তুমি দীপনকে কতটা ভালো বাসতে। ''

মনি মাসি যেন শুনতেই পায় না। দিঠি মাসির পাশে বেঞ্চে বসে, দুটো পুলিশ খৈনি ডলছে একটু দূরে। এখনি মাসির কেসটা উঠবে এজলাসে। মাসির হাতের উপর একটা হাত রাখে দিঠি, বলে -''খুলে বলো মাসি। আমরা তোমার সঙ্গে আছি। ''

-''আমি শেষ করেছি ঐ পাপকে। আমিই বয়ে এনেছিলাম ওকে, নিজে হাতে শেষ করেছি।দেশকে বাঁচিয়েছি একটা শয়তানের হাত থেকে। '' কেটে কেটে কথা গুলো বলে মনি মাসি।

-''কিন্তু কেনো মাসি ? কি দোষ ছিল ওর ?''

-''দোষ আমার, ওকে জন্ম দিয়ে দোষ করেছি, বড় করে পাপ করেছি। আরো আগেই মেরে দিলে ... উফ, বড্ড দেরি করেছিলাম। জানিস কত রক্ত... রক্তের নদী ...''

অসংলগ্ন কথা বলছিল মহিলা। দিঠি আরেকটু চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দেয়।

কোর্টে মাসির মানসিক বিকৃতির কথা বলে উকিল ডাক্তারি পরীক্ষার দাবি তুলেছিল। কিন্তু মাসি পরিষ্কার বলে সে সজ্ঞানে ছেলেকে মেরেছে। ফাঁসির আর্জি জানায় নিজেই। তিনদিন পর শুনানির দিন ধার্য হয়। 


কেসটা দেখছিল পুলিশ অফিসার প্রদীপ দাশ। কথায় কথায় দিঠি ওনাকে জানায় মনি মাসির বাড়ি চোর ঢোকার খবর। বলে -''পাহারার ব্যবস্থা করুন। "

প্রদীপ দাশ বলেন-'' কি আর এমন আছে ওখানে!! হয়তো ছিচকে চোর কেউ ঢুকেছিল। ''

-''তিনজন ঢুকেছিল। হাতে ছিল মোবাইল। ছিচকে চোররা এভাবে চুরি করে কি ? কোনো প্রমাণ নষ্ট হচ্ছে না তো ?''

ভ্রু কুচকে ভাবছিলেন ইন্সপেক্টর দাশ।


-''আচ্ছা আরশাদ খুনের কেসটা কি হল ?ওটাও তো আপনি দেখছিলেন।'' দিঠি আবার প্রশ্ন করে।

-''এখনো চলছে, কেউ ধরা পড়েনি। ক্রিকেট বেটিংয়ের আড়ালে আরশাদ ইদানিং বেআইনি অস্ত্র বিক্রি শুরু করেছিল। একটা বড় কনসাইনমেন্ট ঢুকেছিল গত মাসে। সেটার জেরেই খুন। দু দলের রেষারেষি। এর বেশি কিছু জানা যায় নি। ''

-'' অস্ত্র ..!!''

-''হ্যাঁ, বাংলাদেশ হয়ে ঢুকেছিল। তবে প্রমাণ নেই তেমন। খোঁজ চলছে। ''

-''প্রমোটার যাদবের সাথে কাজ করছিল আরশাদ !!''

-''ওর টাকা খাটাচ্ছিল প্রমোটিং ব্যবসায়। সিন্ডিকেটকে চমকানো, জমি বাড়ি উচ্ছেদ এসব কাজ করত ওর দলের ছেলেরা। ''

বাড়ি ফেরার পথে দিঠির মনে পড়ছিল ছোটবেলার কথা। দীপনের বাবাকে দিঠি কখনো দেখেনি। কিন্তু ওদের বাড়িতে অনেক গল্পের বই ছিল। তার লোভে দিঠি যেত। মেসোর একটা বড় ছবি ছিল বাঁধানো। মেসোর মৃত্যুদিনে মাসি সবাইকে চকলেট দিতেন। শান্ত স্বভাবের শিক্ষক মানুষটা দেশকে ভালোবেসে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পরেছিল কি করে সে সব গল্প বলতেন মাসি। খুব শক্ত ছিলেন মনি মাসি। আর মেসোকে শ্রদ্ধা করতেন খুব।


আর তার ছেলে হয়ে দীপন একটা বজ্জাত তৈরি হয়েছিল। মেয়েদের পেছনে লাগা, ছিচকে চুরি, ঘরের জিনিস বেঁচে জুয়া খেলা এসব শুরু করেছিল ছোটবেলাতেই। দিঠি তাই ওর সাথে মিশত না। মেসোর একটা দামি কলম ছিল। ওঁর ফটোর নিচেই রাখা থাকত। সেটাও বিক্রি করে দিয়েছিল দীপন। মাসি কেঁদেছিলেন খুব। কিন্তু মারেন নি।


অয়ন বসে বসে একটা ইংরেজি মুভি দেখছিল। দিঠি রাতের খাবার সাজাচ্ছিল টেবিলে। মন পড়ে রয়েছে মনি মাসির কাছে। হয়তো যাবজ্জীবন সাজা হবে। তবে মহিলা ভেতর ভেতর মরেই গেছে।


টিভির আওয়াজে বিরক্ত লাগছিল দিঠির, এই ধরনের ভায়োলেন্ট মুভি আজকাল ও দেখেই না। সাউন্ডটা কমাতে বলে অয়নকে। অস্ত্র পাচার হচ্ছে বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক দেশে। কি সব অভিনব পদ্ধতি!!


হঠাৎ একটা কথা ঝিলিক দেয় দিঠির মাথায়। তবে কি .... তার মানে ঐ জন্যই...

-''আরে খাবার তো ঠাণ্ডাই হয়ে গেলো। কি ভাবছ এভাবে দাঁড়িয়ে?'' অয়ন একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে। মুভিটা শেষ হয়েছে দিঠি খেয়াল করেনি এমন চিন্তায় ডুবেছিল। হঠাৎ বলে -''এখুনি প্রদীপ দাশকে ফোন করো। ''

-''আরে, কি হয়েছে বলবে তো ?'' অয়ন রুটির ক্যাসারোল বন্ধ করতে করতে বলে।

দিঠি ততক্ষণে অয়নের ফোনে নম্বর খুঁজতে ব্যস্ত। অয়ন প্রথম রুটিটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে শোনে দিঠি বলছে -''হ্যালো, দাশ বাবু, আমি দিঠি ..''

....

-''এখনি মনি মাসি মানে দীপনদের বাড়িতে ফোর্স নিয়ে যেতে হবে। ''

....

-'' না না, এই রাতেই। ওদের বাড়ি আর দোকান সার্চ করুন, ওয়ারেন্ট লাগলে নিয়ে আসবেন। আমিও আসছি। ব্যাপারটা গোপনীয়,তার আগে...''


রুটিটা শেষ করতে করতে অয়ন বোঝে এখনি ছুটতে হবে। দিঠি কিছু টের পেয়েছে। ফোনে যা এক তরফের কথা অয়ন শুনতে পেল তাতে ওর উৎকণ্ঠাও চরমে পৌঁছেছিল। দিঠি কুর্তি বদলে একটা পাতলা চাদর গায়ে বেরিয়ে এসেছে। অয়ন প্যান্টটা বদলে ওর সাথে নেমে পড়ে। খাবার এমন বহুদিন ছড়ানো পড়ে থাকে ওদের বাড়িতে।


হেমন্তের কুয়াশাচ্ছন্ন রাত, কৃষ্ণপক্ষ চলছে, সামনেই অমাবস্যা। দু একটা টিমটিমে তারা ছাড়া নিকষ কালো আকাশ। তাড়াহুড়োয় ওডোমস মেখে আসেনি অয়ন আর দিঠি। শব্দের ভয়ে মশাও মারতে পারছে না। মাঝরাত পার হয়ে গেছে বহুক্ষণ। অল্প খিদে পাচ্ছে দিঠির। পাশেই নিজের ছোটবেলার বাড়ি। গেলেই মা খেতে দেবে। কিন্তু ওর অনুমান ঠিক হলে অনেক বড় ঘটনার সাক্ষী হবে ওরা আজ। চাদরের ভেতর মোবাইলে দেখে রাত আড়াইটা। দূরে রাস্তায় একটা গাড়ির আওয়াজ যেন, কয়েকটা কুকুর ডেকে ওঠে। সবার মোবাইল সাইলেন্ট। ইন্সপেক্টর দাশের ফোনটা একবার ভাইব্রেট করেই থেমে যায়। সবাই নিজের নিজের পজিশনে রয়েছে।


পাঁচিলের পাশে নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছে গাড়িটা। তিনটে কালো অবয়ব টুপটাপ পাঁচিল টপকে ঢোকে। দীপনের দোকানের পেছনে একটা বড় গুদাম ঘর। গালা মাল স্টোর হয় ওখানে। সেই দরজাটা খুট করে খোলে লোকগুলো। সাথে সাথে ইন্সপেক্টর দাশের বাঁশির শব্দ, মুহূর্তের মধ্যে বড় বড় টর্চের আলোয় আলোকিত জায়গাটা। প্রথম জন পকেটে হাত ঢোকাতেই ওর হাতে গুলি করে একজন অফিসার। দলটাকে ধরতে বেগ পেতে হয় না তেমন আর।


গুদাম খুলে বড় বড় চাল আটা চিনির বস্তা পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে এলো বিদেশি অস্ত্রর ভাণ্ডার।

পরদিনের ব্রেকিং নিউজ অয়নদের কাগজে। বিশাল অস্ত্রর ভাণ্ডার উদ্ধার কলকাতার বুকে। বাকি কাগজ গুলো এ খবর জেনেছে সকালে।

কাঁদছিলেন মনি মাসি। দিঠি ওঁর হাত শক্ত করে ধরে বসেছিল। উনি বলছিলেন -''বিশ্বাস কর, এতটা জানতাম না। ও বখে গেছিল। আরশাদের দলের সাথে ঘুরছিল কি সব ধান্দায় জানতাম। সেদিন ও ফোনে কাউকে চোরাই অস্ত্রের কথা বলছিল। শুনে মাথাটা কেমন গুলিয়ে গেলো। কার রক্ত ওর শরীরে !! দেশের জন্য শহীদ ওর বাবা !! দেশকে ভালোবেসে তাঁর স্মৃতিতে কাটালাম গোটা জীবন। আর আজ ওর চোরাই ব্যবসায়, দেশকে বিক্রি করা টাকায় খাবো ? অনেক আগেই শেষ করে দেওয়া উচিৎ ছিল রে। ভুল করেছি। তবে বাড়িতেই ওসব রয়েছে জানতাম না আমি। ''


পুলিশ কমিশনার ছাড়াও বড় বড় গোয়েন্দা প্রধানরা উপস্থিত ছিল। ইন্সপেক্টর দাশ বললেন -''ঘটনা যে এদিকে ঘুরে যাবে ভাবিনি। আমার এলাকায় এত বড় চোরাই অস্ত্রর ঘাঁটি!! দিঠি ম্যাডাম কে ধন্যবাদ। আপনার থেকেই সবটা শুনবো। ''


-''আসলে দীপন কে ছোট থেকেই চিনতাম। মাসি একসময় ওকে চোখে হারাতেন। সেই মাসি ওকে নৃশংস ভাবে খুন করেছেন এর পেছনে বড় কারণ থাকবে জানতাম। ওর ক্রিকেট বেটিং, আরশাদ খুনের ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়া, আরশাদের চোরাই অস্ত্রর কারবার, ওদের খালি বাড়িতে চোরের উৎপাত সব মিলিয়ে এমনটাই ভেবেছিলাম। দীপন নতুন দল করেছিল। আরশাদকে মেরে অস্ত্রের দখল নিয়েছিল। ওর গুদামের থেকে ভালো লুকানোর জায়গা আর হতে পারে না। ভদ্র পাড়ায় বাড়ি।


ওর মা অস্ত্রর ব্যবসা শুনেই ওকে মেরে দিল। ওর দলের বাকিরা অস্ত্রটা উদ্ধার করতে চেয়েছিল। অল্প করে সরাচ্ছিল হয়তো।সেই রাতে বাবার চিৎকারে পারেনি। বাকিটা তো সবাই জানে। ''


-''একটা বড় বিপদের হাত থেকে দেশকে বাঁচালেন ম্যাডাম। '' কমিশনারের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস।

-''আমি নয়। বাঁচিয়েছেন এক দেশ প্রেমিক মা, এক শহীদের স্ত্রী। ওঁর বলিদান। '' ভেজা গলায় বলে দিঠি।

-''আমরা অবশ্যই ব্যাপারটা দেখবো। ওঁকে সম্মানের সঙ্গে মুক্ত করা হবে হয়তো, সেভাবেই কেস কোর্ট যাবে। ''

সকালের মিষ্টি রোদে শীতের ছোঁওয়া। বাড়ি ফিরতে ফিরতে দিঠি ভাবছিল মাসির কথা। ভালো উকিল খুঁজতে হবে এবার। বেশ খিদে পাচ্ছিল ওর। চা বিস্কুট ছাড়া থানায় কিছুই খাওয়ায়নি। আজ আবার ইন্ডিয়া পাকিস্থানের ক্রিকেট ম্যাচ রয়েছে দুপুর থেকে। তার আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করতে হবে।আজ আর রান্নাঘরে ঢুকতে ইচ্ছা করছে না।


পাড়ার মোরে একটা বড় মিষ্টির দোকান, কচুরি ভাজার গন্ধ ম ম করছে। অয়ন গাড়ি থামাতেই দিঠি হেসে ফেলল। সত্যিই অয়ন মনের কথা বোঝে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action