ভয়
ভয়
-''বিশ্বাস করুণ ডাক্তারবাবু আমার স্ত্রী আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি পাগল হয়ে যাবো।আর সহ্য করতে পারছি না। ''
ছেলেটার চোখেমুখে একটা উৎকন্ঠা। ডঃ তলাপাত্র ভালো করে স্টাডি করে নিয়ে বললেন -''মেয়েছেলেকে আবার ভয় পাওয়ার কি আছে ? আপনি ওকে দাবিয়ে রাখতে পারছেন না? কি এমন ভয় দেখাচ্ছে সে ? প্রথম দিন থেকে মেয়েদের চাপে রাখতে হয়। এই আমাকেই দেখুন, আমি বাড়ি ঢুকলেই বৌ ভয় পায়। হাতের কাছে জল, বাড়ির পোশাক, রুমাল এসব না থাকলেই আমি চিৎকার করবো সে জানে। আমার পছন্দ মত রান্না করা, ঘরদোর গুছিয়ে রাখা আর বাচ্চা মানুষ করা এইটুকুই তো কাজ।"
আগন্তুক বলে -''চাপেই তো রাখতাম ডাক্তারবাবু। গত দশ বছর ধরে সকাল বিকেল নিয়ম করে বেল্ট দিয়ে.... থাক সে কথা। কত দিন না খেতে দিয়ে বাথরুমে বন্ধ করে রেখেছি। কিন্তু পরশু.... দরজার কাঠের ডাসাটা একটু বেশিই জোরে লেগেছিল মাথায়। শালী মরল না জানেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাথা, ও ভাবেই হাসতে শুরু করল। সে কি পাগলের মত হাসি, কান যেন ছিড়ে যাচ্ছে।''
ডাক্তার বাবু মনে মনে বলেন ' আ কেস অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার। '
মুখে বলেন -'' বেঁঁচে আছে তো ? ''
-''সেটাই তো মুশকিল। ঐ ভাবে রক্ত ঝরেই চলেছে পরশু থেকে। যতই ওকে বন্ধ করে রাখছি কি করে যেন বেরিয়ে আসছে। এমনকি অফিসেও পৌঁছে যাচ্ছে। ''
ডাঃ তলাপাত্র এবার মুখ তুলে চাইলেন !!
-''এখানেও এসেছে, ঐ দেখুন দরজার সামনে!!''
পেশেন্টের কথায় একবার দরজার দিকে তাকান ডাক্তার। হাতের পেন ছিটকে পড়ে। উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছেন উনি। কে ওটা? লম্বা খোলা চুলে মুখের অর্ধেক ঢাকা, রক্তের ধারা গড়িয়ে নেমেছে সিঁথি থেকে সারা মুখে।
ঠিক তখুনি দরজা খুলে ঘরে ঢোকে নার্স রমা। মহিলার রক্তে ভেজা শরীরের ভেতর দিয়ে চলে এলো রমা, ও কি দেখতে পেলো না মহিলাকে !!
দু জোরা বিস্ময়ে বেরিয়ে আসা চোখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে সে ডাক্তার তলাপাত্রকে বলে -''আপনার শ্বশুর ফোন করেছিল, আপনার স্ত্রী নাকি দু দিন ধরে ফোন তুলছে না। একবার ফোন করতে বলেছে। ''
রমা আবার ঐ শরীরটার ভেতর দিয়েই ফিরে গেলো। হাসির শব্দটা এবার কানে আসছে। হাসছে মহিলা, হাসিটা খুব চেনা। ঐ তো রক্ত মাখা হাতে মুখের উপর থেকে চুল সরাচ্ছে। কি...কিন্তু এ কে ? তলাপাত্র পিছনে সরতে গিয়ে পড়েই যাচ্ছিলেন। এ তো মুকুল.. ওঁর পনেরো বছরের বিবাহিতা স্ত্রী।পরশু পিতলের ফুলদানি দিয়ে মাথায়... সহ্য করতে পারেনি মুকুল। এখনো বডিটা রয়েছে ফ্রিজের ভেতর। কিন্তু মুকুল এখানে কী করে আসতে পারে।
-''ডাক্তারবাবু, আমায় বাঁচান। '' লোকটা ওঁর পা জড়িয়ে ধরে কাঁপছে। আর তো কেউ নেই চেম্বারে। ডাক্তারবাবু বুঝতে পারেন অত্যাধিক স্ট্রেস আর এই পেশেন্টের গল্প মিলেমিশে ওঁর হ্যালুসিনেশন হয়েছিল। খচখচ করে প্রেশকিপশন লিখে পেশেন্টটাকে বিদায় করলেন আগে। বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে আয়নায় তাকিয়েই চমকে উঠলেন। ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে মুকুল। রক্ত আর ঘিলু গড়িয়ে নেমেছে মাথা থেকে। এক লাফে বাথরুমের বাইরে এলেন উনি। আজ একটু ক্লাবে যেতে হবে। স্ট্রেস কমানো দরকার।
দ্বিতীয় পেগে চুমুক দিয়েই জোরে বিষম খেলেন ডাক্তার তলাপাত্র। ঠিক সামনেই চেয়ারেই মুকুল। সেই রক্তে ভেজা মাথা। কেউ দেখার আগেই গাড়িতে গিয়ে উঠলেন উনি। সামনের সিগ্যনালে দাঁড়াতেই মিররে চোখ গেল। একি? পিছনের সিটে বসে রয়েছে মুকুল.... এবার ভয়ে গাড়ি রাস্তায় ফেলে ছুটতে শুরু করলেন তিনি।
সামনেই ওঁর সার ডঃ রায়ের বাড়ি, বিশাল বড় মানসিক রোগের ডাক্তার।
ওঁর বাড়ি ঢুকতে ঢুকতে একবার পিছন ফিরে তাকালেন ডাক্তার তলাপাত্র। ঐ তো, ওধারের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মুকুল। বেল বাজাতেই ডঃ রায় বেরিয়ে এলেন।
-''আমার স্ত্রী আমাকে ভীষণ ভয় দেখাচ্ছে সার। আর পারছি না। '' জ্ঞান হিরিয়ে লুটিয়ে পড়লেন ডাক্তার তলাপাত্র।