Payel Guha

Horror Classics Thriller

5.0  

Payel Guha

Horror Classics Thriller

বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি।।

বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি।।

14 mins
622



উফ্! হাঁপিয়ে গিয়েছি এতোটা পাহাড় ভাঙতে ভাঙতে। আর শালা স্নিগ্ধাশীষ বলেও না কোথায় যাচ্ছি। আমরা সিকিমের লাচুং-কে পিছনে ফেলে পাহাড়ের চড়াই উঠছি। বরফ পড়া শুরু হয়েছে, বরফাবৃত পাহাড় জনশূন্য। আমি আশাও করি না, এখানে কেউ থাকবে। অবশ্য থাকতেও পারে ইয়েতি-তিয়েতির গল্প তো অনেক শোনা যায়। লাচুং থেকে যখন রওনা দিয়েছিলাম তখন বিকেল, এখন রাত দশটা, হেঁটে চলেছি; এই পাহাড় ভেঙে কোথায় যাচ্ছি যতবার জিজ্ঞেস করি কিছুই বলে না ব্যাটা।


স্নিগ্ধ ইতিহাস পাগল ছেলে, সবসময় ওর রিসার্চ চলতেই থাকে, রিসেন্ট বৌদ্ধধর্ম নিয়ে রিসার্চ শুরু করেছে, আর সিকিমে তো মনাষ্ট্রির অভাব নেই তাই ওর এখানে আসা। আর আমি হলাম সেই হুলো বেড়াল যে ওর কোমড় বেঁধেছে। আমি অত ইতিহাস বুঝি না, আমার পাহাড় হলেই হলো। তাই যখন শুনলাম ব্যাটা সিকিম আসছে আমি সঙ্গ ধরলাম‌। ব্যাটা প্রথমেই আমাকে সাবধান করেছিল, “যাবি? ভেবে দেখ পরে আপশোস করবিনা তো? পরে কিন্তু বলিস না আমি সাবধান করিনি...”

নাহ্! সত্যি আপশোস হচ্ছে আমার। এতো খাটাবে জানলে আসতাম-ই না...


মনে মনে গজগজ করতে করতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম। হঠাৎ সামনে এগোতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম স্নিগ্ধর গায়ে।

“কিরে! দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?”, প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে ওর মুখের দিকে তাকাতে দেখি ও সামনের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ অনুসরণ করে দেখি, অন্ধকারে আমাদের সামনে এক শরীরী ছায়া, কে এই নির্জন প্রান্তরে?


ক্রমশ...


২/


একটা ঘিসঘিসে কন্ঠস্বরে কথা ভেসে এলো। কী বলল বুঝলাম না, মানে যে ভাষায় বলল সেটা আমি জানি না। এমন নির্জন প্রান্তরে রাতের বেলায় অন্ধকার থেকে এক প্রাগৈতিহাসিক কন্ঠস্বর... গলা শুকিয়ে গেছিল আমার। দেখলাম স্নিগ্ধ উত্তর দিল সেই ভাষায়। আমি জানি স্নিগ্ধ'র অনেক ভাষাই আয়ত্তে আছে, এটাই তার সুফল। উল্টোদিক থেকে আবার একটা প্রশ্ন আসলো, আবার উত্তর দিল স্নিগ্ধ। হঠাৎ আমার কী খেয়াল পড়লো স্নিগ্ধর হাতের দিকে তাকালাম। অদ্ভুত ওর হাতের টর্চটা বন্ধ!টর্চ না জ্বালিয়ে, কার সাথে কথা বলছি না জেনে কেন বকছে! যেমন ভাবনা তেমনি কাজ, এক নিমিষে ওর হাত থেকে টর্চটা নিয়ে ছুঁড়লাম সেদিকে যেখান থেকে কন্ঠস্বরটা ভেসে আসছিল। ঘটনাটা এতো চকিতে করেছিলাম যে, না স্নিগ্ধ বুঝেছে, আর হয়তো সে-ও বোঝেনি।

আলোতে যা দেখলাম, প্রথম চোখ ফেলতেই বুক কেঁপে উঠলো আমার। গায়ে তার বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মতো লাল চাদর, মাথা মুড়ানো, কিন্তু ভয়াবহ তার মুখটা... রক্ত শূন্য, শুষ্ক! মুখে অসংখ্য অসংখ্য বলিরেখা, কুতকুতে চোখ। গলার স্বর শুনে যে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে বিশেষন দিয়েছিলাম, তা খুব একটা ভুল নয়। কিন্তু আমি চমকে গেলাম স্নিগ্ধর ব্যবহারে। আমি কয়েকসেকেন্ডের মতো আলোটা তার মুখে ফেলেছিলাম তাতে সে একটু চমকে যায়, আর সেই মুহূর্তে স্নিগ্ধ আলোটা নিভিয়ে দিল, “ কী করছিস কী? উনি রুষ্ট হবেন তো!” তেড়েফুঁড়ে বলেই ওনাকে ওই অজানা ভাষায় কাকুতির স্বরে কী যেন বলে গেল। সম্ভবত ও ক্ষমা চাইল। কিছুক্ষন স্তব্ধতা, তারপর সে এক কথায় কী বললেন, আর স্নিগ্ধ এগোতে শুরু করলো; পিছনঘুরে আমায় পিছন-পিছন এগোতে বলল।


এতোক্ষণ ঠিক কী হলো তা বুঝতে পারিনি, তাই একটু তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে স্নিগ্ধর কাঁধ টেনে ধরে জিজ্ঞেস করলাম,“কোথায় যাচ্ছি? উনি কে? কি বললেন?”

একটু জোরেই বলে ফেলেছিলাম শেষ কথাটা, দেখলাম উনি পিছন ফিরে তাকালো। স্নিগ্ধ আমাকে ধমকে বলল, “সসস্! আস্তে কথা বল, প্রকৃতির রাজ্যে গলার জোর দেখানো নিষিদ্ধ। উনি কিন্তু তোর ব্যবহার পছন্দ করছে না”

ভরকে গেলাম। কে উনি? না! এখন জানার উপায় নেই। চুপচাপ এগিয়ে যাওয়াটাই উচিত ভেবে চুপচাপ এগোলাম। কিন্তু স্নিগ্ধর কথাটা আমার মাথা আওড়াতে লাগলো। প্রকৃতির রাজ্য! অনেকক্ষন ধরে একটা কিছু বে'ঠিক লাগছিল। এ'বার এই কথাটা আমার ইন্দ্রিয়কে সজাগ করলো। পাহাড়ের একটা নিজস্ব আমেজ আছে, একটা মাদকতা আছে, পাহাড়ের হাওয়াতেই একটা মাতাল করা সুর আছে, প্রাণ আছে— কিন্তু এই জায়গাটা বড্ড নিষ্প্রাণ। হ্যাঁ! এটাই তখন থেকে খেয়াল করছিলাম। ওই লোকটার সাথে দেখা হওয়ার জায়গাটা থেকে লক্ষ্য করছি। এটা প্রকৃতির রাজ্য! নাকি প্রকৃতির বাইরের?


এতোক্ষণে এগিয়েছি আমরা অনেকটা। সামনের একটা পাথরের বাঁক, ওটা পেরোতেই দেখলাম সামনে উন্মুক্ত তুষারাবৃত প্রান্তর, নেমে গিয়েছে খাদ, বাঁদিকে একটা মনাষ্ট্রি; জনহীন প্রান্তরে কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে।

উনি আগে গিয়ে ঢুকলেন, তার পিছন পিছন স্নিগ্ধ। তারপর চৌকাঠ পেরোলাম আমি, আর আমার সাড়া শরীরের রোয়া খাঁড়া হয়ে গেল। সবাই বলে, আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নাকি খুব সজাগ!

মন জানান দিচ্ছে, জায়গাটা আর যাই হোক মঙ্গলজনক নয়। কিন্তু বুদ্ধের শরণ অমঙ্গলজনক কীভাবে হয়?


৩/


ওই লোকটা আমাদের মঠের একটা ঘরে আনলেন, বুঝলাম এখানেই থাকবো আমরা। গোটা মঠটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে কিছু বড়ো প্রদীপ, কিছু জায়গা আলোকিত করে আছে, আর সেই আলোয় গোটা মঠের বিভিন্ন জায়গার বিভৎস দর্শন মুখোশ গুলো যেন মঠটিকে নরকের প্রতিরূপ বানিয়ে ফেলেছে। চারিদিকের অখণ্ড নিস্তব্দতা, অমানুষিক শীতলতা যেন জানান দেয় এটা সত্যি সত্যিই নরক...


ওই লোকটা একটা প্রদীপ রেখে গেল ঘরে। তারপর কী যেন বলল, চলে গেল। স্নিগ্ধ ক্লান্ত হয়ে বসল বিছানায়, এতোক্ষন পর আমার দিকে তাকানোর ওর সময় হলো। 

— কী হলো তোর?

— তোর মনে আছে তুই আমাকে নিয়ে এসেছিস?

— আরে বুঝিস না ক্যানো, ওনাদের এখানে থাকবো, ওনাদের রুষ্ট করলে চলে? 

— কে উনি? 

— এ মঠের লামা

— অ্যাঁ! উনি ওখানে গেলেন কিভাবে?

একটু আরাম করে বসে স্নিগ্ধ বলল,“ এনাদের অনেক ক্ষমতা, উনি বুঝতেই পেরেছিলেন যে আমরা ওনাদের জায়গায় পা দিয়েছি তাই চলে যান। আমাদের কী উদ্দেশ্য তা জেনে তারপর ঢুকতে দিলেন।

এবার বুঝলাম তখন কী কথা হয়েছিল। এবার আমি জিজ্ঞেস করলাম, “এখন কী বলে গেলেন?”

— বললেন, একটু পর আমাদের খাবার দিয়ে যাবেন।”

খাবারের কথা শুনে অনুভব করলাম খিদে পেয়েছে। খাবার আসবে শুনে খিদেটা একটু মাথা চাড়া দিল। 

— কী ভাষায় কথা বলিস বলতো?

— তিব্বতী

—ও বাবা!

— এই জায়গাটা অনেক বছর আগে তিব্বতের অন্তর্ভুক্ত-ই ছিল।পরে লাচুং-এর সাথে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই মঠটা কিন্তু অন্য মনাষ্ট্রির থেকে আলাদা, খেয়াল করেছিস?

— হ্যাঁ তা করেছি বৈকী! কীরম সব রাক্ষস-খোক্ষশের মুখ! এমন গল্পের বই'তে পড়েছিলাম, ওগুলো কী?

— অপদেবতা!

খালি মুখেই বিষম খেলাম আমি, “কী!”

—হ্যাঁ। তিব্বতে ব্রজযান ধর্মমত প্রচার হলে বৌদ্ধধর্মে তন্ত্রচারের প্রবেশ ঘটে। তখন এক লামা নাম 'মুংচী' যিনি এই মঠেই ছিলেন, শুরু করেন তন্ত্র সাধনা। আর ভূত-প্রেত, অপদেবতা-র আরাধনা, আবাহনে শয়তানের পুজো শুরু করেন।

— কী?

— হ্যাঁ। আমাদের হিন্দু ধর্মতেও তো এমন অনেক কাহিনী শোনা যায়‌। পড়েছি এই মঠে বোধিসত্ত্ব নয়, প্রার্থনা কক্ষে শয়তান প্রতিষ্ঠিত‌।

আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। একটা অদ্ভুত অনুভুতি ছড়িয়ে পরল শরীর মন জুড়ে‌। স্নিগ্ধ আরো বলল, “মুলতঃ যারা কালো যাদুর চর্চা করে তাদের কাছে এই মঠ তীর্থ ভুমি”

এবার বুঝলাম, এ মঠে কেন এতো নরকসুলভ আবহ। আমি বললাম, “এতো কিছু জেনে এখানে এসেছিস ক্যানো?”

স্নিগ্ধ হেসে বলল,“এটাই কারন। এমন জায়গা চাক্ষুষ করার ইচ্ছে জাগে না বুঝি! আর তাছাড়া...”

কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে যায়, দরজার দিকে তাকায়, দেখি ওই লামা এসেছে খাবার নিয়ে। খাবার রেখে যখন বেরোতে যায় তখন স্নিগ্ধ একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তাকে, তার উত্তর দিয়ে চলে যান।

— কী জিজ্ঞেস করলি?

— প্রধান লামার সাথে দেখা করা যাবে কী না!

— কী বললেন?

— কাল সকালে দেখা করতে হবে।

আমি আর বসে থাকতে পারছিলাম না, দেখি স্যুপ জাতীয় কিছু একটা দিয়েছে, ধোঁয়া উঠছে বাটি থেকে, দেখেই বড্ড খিদে পেল।

আমি এগিয়ে খাওয়া শুরু করবো, হঠাৎ উনি আবার আসলো, কিছু একটা বলল; তারপর দরজাটা উনিই বন্ধ করে দিল। আমি একটু অবাক হয়ে যাই, কী বলল তা জানতে চাইলে স্নিগ্ধ কথার উত্তর দেয় না। স্নিগ্ধ-র দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ থম-থম করছে। ভয়? না! ওর এক্সপ্রেশনটা ভাষা দিয়ে বোঝাতে গেলে বলতে হয়, আহত বাঘ! নিজের ভাবনায় নিজের হাসি পেল, কী সব ভাবছি... হয়তো ও টেনশন করছে ভেবে খাওয়া শুরু করলাম। 


ক্রমশ...


৪/


সকালটা স্বর্গীয় বললেও ভুল হবে না। জানলা দিয়ে যখন বাইরে তাকালাম, চারদিক তুষার শুভ্র, গাঢ় নীল আকাশ। মনটায় অদ্ভুত একটা আনন্দে ভরে গেল। আমার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়াল স্নিগ্ধ। কিছু মুহূর্ত কাটলে, আমার কাঁধটা শক্ত করে চেপে বলল,“তৈরি হ্ আজকের দিনটার জন্য”

আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “কেন? কী আছে আজ?”

চোরা হাসি হেসে বলল,“আজকের মতো দিন খুব কম হয় ভাই! আজকের জন্য কতদিন অপেক্ষা করেছি আমি... আজকের জন্যেই তোকে সাবধান করেছিলাম... আজ'ই তো...”

— কী আজ?

হাসল, "বুদ্ধপূর্ণিমা” 

খুট্ করে শব্দ হলে, আমরা একসাথেই পিছন ফিরি, দেখি দরজা খুলে দিয়েছে। লামার সাথে আমরা দেখা করতে পারি— সেটা উনি স্নিগ্ধকে জানালে আমরা ঘর থেকে বেরোই। আর ঘরের বাইরে পা দিয়েই আমার মন বলে উঠল, “আজকের দিনটা ভালো নয়...”


একটা আলো-আঁধারী কক্ষে ঢুকলাম। ঘরটি আহামরি বড়ো নয়, কোনো আসবাব নেই, ঘরের মাঝে একটা আসন পাতা, সেখানে বসে আছেন একজন লাল চাদর গায়ে—ওনার সামনে জ্বলছে একটা প্রদীপ, তাতে আলোকিত হয়ে আছে ওনার মুখ। এই পুরো মঠটাই আলো-আঁধারি, দিনের বেলাতেও যেন সন্ধ্যে হয়ে থাকে। এসব ভাবতে ভাবতে ওনার সামনে গিয়ে বসলাম। স্নিগ্ধ হাতজোড় করে প্রণাম করতে দেখে আমিও প্রণাম করলাম, ভুলে গেছিলাম প্রণাম করতে‌। উনি বিনিময়ে স্মিত হাসলেন। তারপর তাকালেন আমাদের দিকে। এই প্রথম এই মঠের কারোর চোখে মায়া-স্নেহ দেখলাম; মনটা শান্ত হয়ে গেল।

স্পষ্ট বাংলায় উনি বললেন, “বোধিসত্ত্ব তোমাদের মঙ্গল করুক।” আর স্নিগ্ধ-র দিকে তাকিয়ে বললেন,“তোমার শুভবুদ্ধি হোক”

স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ও যেন একটু অবাক হয়েছে। ভ্রু-তে কিঞ্চিত ভাঁজ। কিছুক্ষন শান্ত থেকে নিজেকে যেন গুছিয়ে নিল ও, তারপর শান্ত স্বরে লামাকে বলল, “আমি আপনার থেকে একটা অনুমতি চাই”

উনি হাসলেন তারপর মাথা নাড়িয়ে বলার অনুমতি দিলে স্নিগ্ধ বলে,“আমি পড়েছি এ মঠের এক গুপ্ত আরাধনা কক্ষ রয়েছে, আমি যেখানে আজ পুজোয় বসতে চাই। চিন্তা করবেন না, আমি তন্ত্র নিয়ে চর্চা করি...”

লামার মুখে হাসি দেখে ও থামলো, লামা বললেন,“আমি জানি তোমার উদ্দেশ্য। তোমার উদ্দেশ্য সফল হবে না। অতীত চিরস্থায়ী নয়। তবু আমি তোমায় আটকাবো না আমি জানি আজ কী হতে চলেছে। তবে হ্যাঁ! তুমি আরাধনা কক্ষে পুজো করো, কিন্তু গুপ্ত আরাধনা কক্ষ সকলের জন্য নয়”

একটু যেন অধৈর্য হলো স্নিগ্ধ। আমি ওর এই স্বভাব আমার চেনা, ওকে কেউ বাঁধা দিলে এমন করে।

স্নিগ্ধ বলল,“কেন দেবেন না? এখানে তো অনেকেই...” ও শেষ করার আগে লামা বললেন, “আজ এক বিরল পূর্ণিমা। তুমি হয়তো দেখতে পাচ্ছ আমাদের মঠ ফাঁকা! কারন আজকের দিনে আমরা চাই নি কেউ আজ শয়তানকে জাগাক। নেহাত এতো কষ্ট করে তোমরা এসেছো তাই থাকতে দিয়েছি।”

শয়তানকে জাগাবে স্নিগ্ধ? অবাক চোখে স্নিগ্ধর দিকে তাকালে দেখি ওর চোখে প্রশ্ন, উনি জানলেন কিভাবে!

আমি এতোক্ষনে বললাম, “স্নিগ্ধ! উনি কী বলছেন?”

উত্তর না দিয়ে ও লামাকে বললেন, “আমি যা ঠিক করি, আমি তা করেই ছাড়ি। আপনি কিন্তু আমাকে আটকাতে পারবেন না”

হাসলেন প্রধান লামা, স্নেহভরে আমার দিকে তাকালেন,বললেন, “সিদ্ধার্থ যখন ত্রানকর্তা আমার চিন্তা কী!”


অ্যাঁ! আমি ত্রানকর্তা? নিজের মাথায় নিজেই চাটি মারলাম। একটু হকচকিয়ে গেছিলাম, আসলে এ সিদ্ধার্থ আমি না, বুদ্ধ...


৫/


এখন বুঝেছি স্নিগ্ধ সেদিন আমাকে মজা করে কথাটা বলেনি। আসলে ওটা ছিল প্রচ্ছন্ন হুমকি। 


লামার ঘর থেকে বেরোনোর পর, আমরা মঠটা ঘুরে দেখি। গোটা মঠটাই ওমন নানান মুখোশে ভর্তি, শুধু একটা জায়গায় বুদ্ধের মূর্তি। প্রার্থনাকক্ষে গিয়ে দেখি ওখানে কোনো মূর্তি নেই। ঘরটায় সম্ভবত কখনো আলো প্রবেশ করে না‌। ঘরটির মাঝে একটা বড়ো কুয়ো, স্নিগ্ধ জানায়, ওটা নাকি রক্তকুয়ো। ওখানে নাকি বলী দেয়। অতো বড়ো কুয়োতে... না! আমি এগোয়নি দেখার জন্য, ক্যামন একটা করে উঠলো শরীরটা। কিন্তু স্নিগ্ধ আমাকে জোর করে কাঁধ ধরে এগিয়ে নিয়ে গেল ওই কুয়োর সামনে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি, আমার কানের কাছে মুখ এনে স্নিগ্ধ বলে, “চোখ খোল। দেখ, তোর দেখা দরকার। কোথায় তোর স্হান হবে...”

ওর ওই শান্ত, শীতল কন্ঠস্বরে এই কথাগুলো শুনে শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। তাকালাম ওর দিকে, ওর ঠোঁটের হাসিটাকে শয়তানের হাসি বললে ভুল হবে না।


আমি ঘরে চলে আসি, কিছু করার ছিল না বলে জানলার পাশে বসে সঙ্গে আনা গল্পের বই পড়তে পড়তে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো স্নিগ্ধর ডাকে।

—আরে এই ওঠ! খেয়ে নে।

আমি আলমোড়া ভেঙে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বিকেল চারটে। ও বাবা! অনেকক্ষন ঘুমিয়ে ছিলাম তো তবে!

দেখলাম একটা পাথরের পাত্রে কীরকম একটা থকথকে তরল জাতীয় কী এনেছে স্নিগ্ধ। 

— কী এটা?

— যাই হোক না কেন, খা! এটা ছাড়া অন্য কিছু জুটবে না।

এতক্ষনে চোখ পড়লো স্নিগ্ধর দিকে‌‌। একটা রক্তাম্বর কাপড় দিয়ে শরীরের নিম্নাংশ ঢাকা, খালি গায়ে দাঁড়িয়ে। এতো ঠান্ডায় খালি গা! পাগল নাকি! কথাটা বলতে ও উত্তরে বলে, “এটা খা দেখবি তোর ও গরম লাগবে”

সন্দেহপ্রবন দৃষ্টি ওর দিকে হেনে হাত থেকে পাত্রটা নিয়ে গলায় ঢাললাম‌। কী বিচ্ছিরি খেতে! সম্ভবত গাছ-টাছের রস বা কিছু জাতীয় হবে। তবু গলাধঃকরণ করলাম, কারন স্নিগ্ধ ফেলতে দিল না। খাওয়া হতেই আবার ও বেরিয়ে গেল। কোথায় ছিল? কোথায় গেল কিছুই জানি না আমি। জানলার দিকে তাকালাম। উঁচু পর্বতের চূড়ায় লাল আভা লেগেছে... সূর্য ডুবছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ দেখলাম চারদিক কালো হয়ে গেল, গাঢ় কাল। যেন কোনো এক অন্ধকার গহ্বরের অতলে তলিয়ে যাচ্ছি। যাচ্ছি তো যাচ্ছি... হঠাৎ একটা আলোর রেখা দেখতে পেলাম‌। না আলো নয়, কেউ একজন বসে আছে তার চারপাশ দিয়ে আলোর ছটা। ধ্যান মগ্ন, শান্ত সমাহিত মূর্তি... সিদ্ধার্থ!

কানে খালি বাজতে লাগলো লামার কথাটা, “সিদ্ধার্থ যখন ত্রানকর্তা আমার চিন্তা কী!”


বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি।।


৬/


“সিদ্ধার্থ! সিদ্ধার্থ... কীরে...”, হিপনোটাইজ করার মতো শান্ত স্বরে নিজের নামটা শুনে আসতে আসতে সাড় ফিরতে শুরু করেছে আমার। কী হয়েছিল আমার? আমি তো...

একী! আমি ... আমি কোথায় এটা? চোখ খুলতে যা দেখলাম তাতে আমার হৃদপিন্ড বেড়িয়ে আসার জোগাড়। আমি রক্তবস্ত্র পরে একটা পাটাতনের উপর বসে আছি সেই কুয়োর উপর! কুয়োর মধ্যে থেকে উঠে আসছে মরা পচা গন্ধ। সামনে দেখি যজ্ঞের আগুন জ্বলছে, আর স্নিগ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে।


“কী করছিস আমার সাথে?”, কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম আমি। কারন আমি বেশ বুঝতে পারছি যা কিছু হচ্ছে সব স্নিগ্ধ করছে। আমাকে দেখে প্রথমে ও হাসলো, তারপর বলল, “দেখ তুই নিশ্চয়ই জানিস যেকোনো পুজোয় বলির দরকার হয়..."

— ম...মানে? 

— এখনোও বুঝতে পারছিস না? 

— তুই কী পাগল হয়ে গেছিস?

ও কিছু বোঝায় আগে আমি লাফ দিয়ে নেমে পরি। রে রে করে ওঠে স্নিগ্ধ। মঠের ওই লামাটা ও আরেকজন আমাকে ঘিরে ধরে। বুঝতে পারছি এদের দলে টেনেছে ও।

— জানিস তো সিধু! আজ থেকে দু'বছর আগে তোকে যখন দেখি, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম বলির জন্য শাস্ত্রে বর্ণিত সেই বিশেষ গুন হলো তোর মধ্যে আছে। তাই তো তোর সাথে আলাপ জমালাম, বন্ধুত্ব করলাম। সব আজকের দিনটার জন্য। তুই তো জানিস এসব তন্ত্র-মন্ত্র-মাইথোলজি নিয়ে আমি অনেক বই পড়েছি। শুধু পড়লেই কী হয়? আমি সেগুলো করে দেখি... এক্সপেরিমেন্ট! হ্যাঁ তারজন্য মাঝে মাঝে তোর মতোন কিছু মানুষকে বলি দিতেই হয়। কিন্তু এটাই থ্রিল জানিস তো! এমনকি একবার তো একজনকে দিয়ে ডাকিনী জাগরন চর্চায় ভুল হলে কী হতে পারে সেটাও পরীক্ষা করেছিলাম, দেখেছিলাম সেই লোকটার মুন্ডু ছিঁড়ে নিয়েছিল। কী বিভৎস! কিন্তু আমার এক্সপেরিমেন্ট সাকসেসফুল হয়েছিল। হেব্বি আনন্দ পেয়েছিলাম। আজ যেমন তোকে নিয়ে করছি।

— তুই কী উন্মাদ! তোকে বিশ্বাস করেছিলাম আমি...

— হ্যাঁ জানি তো। তোদের বিশ্বাসটাই তো আমার শক্তি‌। কথায় বলে না? বিশ্বাসে মিলায় বস্তু...

ও পাগল হয়ে গেছে। ওর সাথে কথা না বলে আমি পালানোর পথ খোঁজার চেষ্টা শুরু করি। তা দেখে স্নিগ্ধ হেসে বলে, “পারবি না। তোকে সমর্পন করা হয়ে গিয়েছে, তুই যদি যজ্ঞস্থল থেকে পালাস তবে শয়তানের চররা তোকে মারবে। আর সেটাই আমি দেখতে চাই, তাই তো তোকে জাগালাম। বুঝেছো?"

আমি আর দাঁড়ায়নি ওর কথা শোনার জন্য। ওরা বোঝার আগেই দৌঁড় দিই। ওরা আমার পিছু নিয়েছে‌‌। প্রধান লামা! হ্যাঁ, উনিই আমায় বাঁচাতে পারবেন, মাথায় আসতেই আমি ওনার ঘরের দিকে ছুটলাম। আমার পিছনে ছ'জোড়া পায়ের শব্দ ভেসে আসছে, আর আমি বুঝতে পারছি আরো কিছু ছায়া আমার আমাকে ঘিরে আমার সাথেই যাচ্ছে, এটা আমার অনুভূতি‌ জানান দিচ্ছে। 


লামার ঘরে দরজা খুলে ঢুকে থমকে গেলাম, কিছু দেখতে পাচ্ছি না। ডাকলাম দু'বার কিন্তু কোনো সাড়া নেই। এদিকে আমি টের পাচ্ছি আমার পাশে কোনো শীতল অশরীরীর উপস্থিতি, হঠাৎ একটা ধাক্কা!

যত জোরে ধাক্কা লাগলো তাতে আমার মাথা পাথরের দেওয়ালে লেগে থেঁতলে যাবার কথা, কিন্তু একী! আমি একটা কাঠের দরজায় গিয়ে ধাক্কা খাই, আমার ভারে দরজাটা খুলে যায় আর আমি পড়ে যাই মেঝেতে। একটু সময় লাগলো নিজেকে সামলে নিতে, হাতে ব্যথা লেগেছে। একটা ঘর এটা, এটাও অন্ধকার তবে ঘরের মাঝে কিছু একটা আছে। সেটা ভালোভাবে বোঝার আগেই আমি অনুভব করলাম গলার পাশটায় কেউ যেন ধারালো ব্লেডের মতোন হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। কঁকিয়ে উঠলাম। লামার ঘরের দরজার কাছ থেকে স্নিগ্ধর গলা পাচ্ছি, ও হাসতে হাসতে বলছে, “বলেছিলাম না পারবি না বাঁচতে। এই রগড় গুলো দেখবো বলেই তো...” বলতে বলতে হঠাৎ ওর কন্ঠস্বরে বদলে গেল। আমি ওই অবস্থাতেই ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলাম। গলার পাশ থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে বুঝতে পারছি। দেখি স্নিগ্ধ উচ্ছ্বসিত হয়ে ঢুকে এলো ঘরে‌।

“এটাই সেই গুপ্তঘর!”, বলে ও দিকবিদিক ভুলে এগিয়ে গেলো ঘরের মধ্যেখানে, ঘরের মাঝে একটা ক্ষীন আলোর রশ্মি আছে কিছু একটা জিনিসকে বেষ্টন করে... বুদ্ধমুর্তি! একটা দিব্য বুদ্ধমূর্তি। আমি স্বপ্নে এমনটাই দেখেছিলাম না? 

দেখি স্নিগ্ধর চোখ জ্বলজ্বল করছে, “এতো সেই সোনার বুদ্ধ!" ও মূর্তিটা ধরতে গেলে, মনে হলো যেন বিদ্যুত শক্ খেল। ছিটকে মাটিতে পড়ল ও। তখনই বাইরে থেকে লামারা কিছু বলল, তা শুনে স্নিগ্ধ যেন ঘরের আবহাওয়া বোঝার চেষ্টা করলো। আমিও বুঝতে পারছি ঘরটা অত্যন্ত শীতল হয়ে উঠেছে, শোঁ শোঁ শব্দ যেন মনে হচ্ছে ঘরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। নিমেষে ছুটল বাইরে ও, দরজাটা বন্ধ করে দিল। আমি পরে রইলাম ঘরে।


পরিস্থিতি যে ভালো না তা বুঝতেই পারছি, কী করবো এখন? আবার লামার কথাটা মনে পড়লো, “সিদ্ধার্থ যখন ত্রানকর্তা আমার চিন্তা কী!”

সিদ্ধার্থ! আমি আর কিছু না ভেবে বুদ্ধমূর্তিকে জড়িয়ে ধরলাম। না! আমার কিছু হলো না।

খুব একটা বড়ো না মুর্তিটা, ছ'হাত লম্বা হবে। কী মনে হলো, আমি মুর্তিটাকে তুলে নিলাম‌ কোলে। আমার মন বলল, এই মূর্তিটাই আমার রক্ষাকবজ‌। আর সত্যি দেখলাম আমার শরীরের চারপাশে একটা সোনালি বলয় তৈরি হচ্ছে। আশপাশের অশরীরীদের দেখতে না পেলেও নিস্ফল আক্রোশের গর্জন শুনতে পাচ্ছিলাম‌, ওদের হাত থেকে তবে এই মূর্তিই আমায় বাঁচাচ্ছে।


৭)


এরপর যা শুরু হলো, তা অবর্ননীয়! হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হলো, তুমুল ভুমিকম্প যেন সারা পৃথিবী রসাতলে চলে যাবে। আমি মূর্তিটাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললাম, “সিদ্ধার্থ, আমার সহায় হইও।" হঠাৎ দরজাটাও খুলে গেল। না কোনো অলৌকিক কিছু না, আসলে মঠটা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। আমি আর দাঁড়ালাম না, ছুটলাম, মূর্তিটা নিয়েই ছুটলাম। বাইরে বেড়িয়ে স্নিগ্ধ কোথায় দেখার চেষ্টা করলাম না, বরং সোজা মঠের বাইরে বেড়িয়ে যাই। বাইরে গিয়ে পিছন ফিরে দেখি মঠটা ভেঙে পড়ছে। দাঁড়ালাম আমি, ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছে, কীভাবে যে বেঁচে বেরোলাম তা আমিও জানি না। 


— কে বলল তুই বেঁচে গিয়েছিস?

কন্ঠস্বরটা শুনে আমার বুক হিম হয়ে গেল। পিছন ঘুরে দেখি স্নিগ্ধ।

— আমার ইচ্ছে সফল হলো না তোর জন্য। আজ আমার সাধনা পূর্ণ হলে আমি আরো বড়ো পিশাচসিদ্ধ হয়ে উঠতে পারতাম। আরো ক্ষমতা হতো, কিন্তু তোর জন্য...

ও আমার দিকে এগোতে শুরু করেছে, ওর চোখে মৃত্যুর নেশা। আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি এভাবে পিছোতে থাকলে আমার স্হান ওই খাদে হবে।

— মূর্তিটা দে।

আমি বললাম, না‌।

— এটা আমি চুরি করে এমনিই নিয়ে যেতাম, জানিস এটার মূল্য কত? দে ওটা, তারপর তোর ব্যবস্থা তো...

কথা শেষ না করে থেমে যায়। ওর চোখ-মুখ নিমেষে বদলে গেছে, ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে আমার পিছনে কাকে দেখছে? আমার পিছনে তো...

আমি পিছন ফিরে দেখবো ভাবছি, স্নিগ্ধ কিসে ভয় পেল জানি না, দেখি ওর উল্টো দিকে দৌঁড় দিতে গিয়ে পা ফসকে চোখের সামনে খাদে গড়িয়ে পরে যায়।


কিছুক্ষন নরকের নিস্তব্দতা। এতোক্ষন পর আমার শরীরে শীতের অনুভূতি হচ্ছে। খালি গায়ে দাঁড়িয়ে বরফাবৃত পাহাড়ের বুকে যেখানে কেউ নেই আমি একা। হঠাৎ পাশে তাকালাম, চমকে যাই।

— আপনি?

প্রধান লামা! উনি তবে বাইরে ছিলেন? ওনাকে দেখেই কি স্নিগ্ধ!? 


তারপর উনি আমাকে রাস্তা দেখিয়ে দেন পাহাড় থেকে ফেরার। আমাকে ওনার চাদরটা দেন। জনপদে আসার আগেই উনি ফিরে যান, তখন ভোর হতে যায়, উনি যাবার আগে আমি শুধু একটা প্রশ্ন করেছিলাম,“একটা কথা জিজ্ঞেস করি? এই মঠে তো কালোযাদুর চর্চা হয়, তবে আপনি এখানে... মানে আপনাকে তো...”

উনি ম্লান হাসলেন, “অতীত চিরস্থায়ী নয় সিদ্ধার্থ। এই মঠে বুদ্ধ আরাধনাই হয়। যারা যারা শয়তান আরাধনা করে অপরের ক্ষতি করে, তাদের শাস্তি দেবার জন্য বুদ্ধর আরাধনা হয়। কর্মফল যে সবাইকে ভোগ করতে হয়। আজ যা যা হলো, এটাও কর্মফল। আর মঠের যা হলো তোমাকে নিমিত্ত করে এটা নিয়তি, তুমিই ছিলে সেই বিশেষ গুন যুক্ত ব্যক্তি। আজকের দিনের অপেক্ষায় আমি ছিলাম। আজ আমার মুক্তি। সাবধানে থেকো সিদ্ধার্থ, তথাগত তোমার সহায় হোক।”


৮)


কেটে গিয়েছে এরপর পাঁচ-পাঁচটা মাস। আমার জীবনের এই ঘটনা আমি কোনোদিন ভুলবো না। তবে আজ পাঁচ মাস পর এই ঘটনাটার কথা আবার ভাবছি কারন, আজ পেপারের একটা ঘটনা আমাকে আবার এটা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে।

পেপারে বেড়িয়েছে, “সিকিমের তিব্বত সীমান্তের লোকচক্ষুর আড়ালের এক প্রাচীন মনাষ্ট্রি ‘ডেমোন মনাষ্ট্রি- প্রাকৃতিক কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেখানে তিন লামার দেহ পাওয়া গিয়েছে। আরেকজনের দেহ পাওয়া গিয়েছে সম্ভবত মঠের প্রধান লামা, তাকে কেউ খুন করেছে ছুরিকাঘাতে। মৃতদেহ পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে উনি পাঁচমাস আগে মারা গিয়েছেন...”


এখন আমার মনে একটাই প্রশ্ন, স্নিগ্ধ লামাকে দেখে ভয় পেয়েছিল? তবে কী ...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror