গদ্রবঙ্গার অভিশাপ
গদ্রবঙ্গার অভিশাপ
অবশেষে ডিলটা ফাইনাল হয়ে গেল। গ্ৰামের পুরানো বাড়ির পাশের পতিত জমি আর আমাদের পুরানো কোঠা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ভেঙ্গে একটা বড় সোসাইটি করবে ‘নীড় খোঁজে মন’। এত দিন ধরে শরিকি ঝামেলায় আটকে ছিল গ্ৰামের এই প্রপার্টিটা। হঠাৎ করেই কেসটা আমার দিকে চলে এলো কোনো এক অলৌকিক উপায়। নীড় খোঁজে মনের পছন্দ হয়ে গেল জায়গাটা। শিলিগুড়ির নকশাল বাড়ির কাছে পাহাড়ের কোলে এত বড় জমিটা পেয়ে ওরাও খুব খুশি। সামনেই কাঞ্চনজঙ্ঘা, চারপাশে সবুজ চা বাগান।
ডিল ফাইনাল হওয়ার পর বাড়ি ফিরেই প্রথম চোখে পড়ল পুতুলটার দিকে। কি যেন একটা খটমট নাম বলেছিল লখাই কাকা!! বদ্র নাকি গঙ্গা, বেশ দেখতে পুতুলটা। একদম একটা ছোট্ট শিশু। একেবারে জীবন্ত কয়েকদিনের বাচ্চার আদল। মুনাই খুব খুশি হবে পুতুলটা দেখলে। ওঁর সাত মাস ছলছে, আপাতত বাপের বাড়িতে আছে ও। পুতুলটাকে খুব আদর করতে ইচ্ছা করছিল। ওটাকে নিয়ে সোফায় বসতেই ঝনঝন করে কাঁচের বাসন ভাঙ্গার আওয়াজ পেলাম। পিছন ফিরে দেখি লখাই কাকা চায়ের সরঞ্জাম ফেলে দুটো বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আমাদের বাড়ি চল্লিশ বছরের উপর আছে এই লখাই কাকা। বাড়ির লোক বলা যেতেই পারে। মুনাই ওর ভরসায় আমাকে রেখে বাপের বাড়ি যেতে পারে। আমার যত্নের কোনো ত্রুটি করে না কাকা। এছাড়া ছিল মতির মা, রান্না করত। চারদিন হয় কাজে আসছে না। তাই কাকাই চা করে এনেছিল বোধহয়।
-'' কি হল কাকা ? ওভাবে কি দেখছ? বয়স হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। যাও , পরিষ্কার করে ফেল।''
দামি টি সেটটা ভেঙ্গে কেমন হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে ছিল কাকা। আমার কথায় চমকে উঠে বলল -''পুতুলটা ভালো না বাবুন, ওটাকে ধরো না। ''ওর ঠোঁট গুলো কেমন কাঁপছিল। যবে থেকে পুতুলটা বাড়ি এনেছি কাকা কেমন যেন করছে এটাকে দেখলেই।
-''আরে কাকা, আমার জন্য পুতুলটা লাকি গো। জানো, পুতুল টা এলো আর ঐ নকশাল বাড়ির জমিটার ডিলটা আজ ফাইনাল হয়ে গেলো। আমার একটা বড় শেয়ার থাকছে ঐ প্রোজেক্টে। '' আমি হাসতে হাসতে বললাম। পাঁচ বছর ধরে জমিটা নিয়ে ভুগছিলাম। এতো সহজে সব হয়ে যাবে ভাবিই নি।
-''ঐ জমিতে তোমাদের কুল দেবীর মন্দির ছিল বাবুন। ওটা বিক্রি করে দিলে ?''
-''আরে কাকা, ঐ জঙ্গুলে জমি আর বাস্তুভিটার ধ্বংসাবশেষ রেখে কি লাভ বলো তো।ঐ মন্দিরে তো পূজো বন্ধই হোয়ে গেছিল আজ কতো বছর। এই এত বড় বাড়ি আমাদের ....''
কাকা টি সেটের টুকরো গুছিয়ে নিতে নিতে বলল -''আমার কিছু ভালো লাগছে না বাবুন। নিচে বিট্টুর খুব জ্বর এসেছে আজ দুদিন। ''
বিট্টু আমার মামাতো ভাই এর ছেলে। ওদের অবস্থা তেমন ভালো নয়, আমার ভাই আমার ব্যবসা দেখে। একতলায় দুটো ঘর ওদের থাকতে দিয়েছি। বিট্টু খুব মিষ্টি ছেলে। মাত্র দু বছরেই কথা বলতে শিখেছে। পটপট করে আধো আধো কথা বলে।
-''আর চা করো না কাকা। বিট্টুকে দেখে আসি একবার। মিন্টুকে খবরটাও দিয়ে আসি জমির। '' পুতুলটা শোকেসের উপর রেখে বেরিয়ে এলাম।
******
তিনদিন পর এসেছিলাম জমির একটা কাজ দেখতে। আসলে এই প্রোজেক্টের অর্ধেক শেয়ার আমার। জঙ্গল পরিষ্কার করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। কুল দেবীর মন্দিরের দিকটায় কাজ হচ্ছিল। হঠাৎ কয়েকজন লেবার দৌড়ে এলো। একটা লোহার বাক্স পাওয়া গেছে ওখানে মাটির নিচে। বাক্স ঠিক নয়, ছোট সিন্ধুক। খুলতেই আমার মাথা ঘুরে গেল। বেশ কিছু ঠাকুরের সোনার গহনা ঝলমল করে উঠল। ঠাকুর্দার কাছে শুনেছিলাম কালাপাহাড়ের হাত থেকে মন্দির আর কুল দেবীকে রক্ষা করতে এই মন্দির থেকে রাতারাতি সবকিছু সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু দেবীমায়ের ছোট এক সিন্ধুক গহনা হারিয়ে গেছিল। বহু খুঁজেও পাওয়া যায়নি। এই কি তবে সেই হারিয়ে যাওয়া গুপ্তধন?
বাক্সটা নিয়ে টলতে টলতে গাড়িতে উঠলাম। লোক জানাজানি যত কম হয় ভালো। লেবার গুলোকে বেশ কিছু টাকা দিয়েছিলাম এ কথা গোপন করার জন্য।
কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই একটা খারাপ খবর শুনে মনটা ভার হয়ে গেল। সন্ধ্যায় রক্ত বমি করতে করতে বিট্টু চলে গেছে সবাই কে ছেড়ে। কোনরকমে ঘরে বাক্সটা রেখে নিচে নেমে এলাম। মিন্টু আর ওর স্ত্রী বিনতা ভীষণ কাঁদছে। মুনাই জানলেও দুঃখ পাবে। খুব ভালোবাসতো ও বাচ্চাটাকে।
সব মিটিয়ে ঘরে ফিরতে ভোর হয়ে গেছিল। শোকেসের উপর গলুমলু পুতুলটা একটা সতেজ বাচ্চার মত হাসছে। মনে হয় এখনি লাফিয়ে কোলে আসবে।এক মায়ের আজ কোল খালি হয়ে গেলো হটাত করে । আর কয়েক মাস পর আমার আর মুনাইয়ের সন্তান আসবে পৃথিবীর বুকে। সেই অনাগত শিশুর কথা ভেবেই পুতুলটা এনেছিলাম ঐ শালবনীর হাটের থেকে। একটা বৃদ্ধ বড় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছিল বেশ কিছু কাঠের আর মাটির পুতুল। সাঁওতাল রমণী, খেলনা পুতুল, নানা রকম মূর্তির ভেতর এই পুতুলটা বেশ নজর কেড়েছিল। হয়ত অবচেতনে পিতৃত্বের স্বাদ লুকিয়ে রয়েছে বলেই কিনে নিয়েছিলাম পুতুলটা। ভেবেছিলাম মুনাইকে দিয়ে আসবো। ও ঘরে সুন্দর বাচ্চার পোষ্টার লাগিয়েছে। ও দেখলে খুশি হবে। বেশ কিছুদিন ও বাড়ি যাওয়া হয়নি। ও আছে লেক টাউনে ওর মায়ের কাছে।
কিন্তু প্রথমদিন পুতুলটা দেখেই লখাই কাকা বেশ ভয় পেয়েছিল। বলেছিল -''ওটাকে কেন আনলে বাড়িতে। ওটা অপদেবতা, খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বাবুন। নদীতে ফেলে দাও ওটা।''
লখাই কাকা সাঁওতাল , ওদের বিশ্বাস এই পুতুল অপদেবতা। কি একটা খটমট নাম বলেছিল সেদিন। সাঁওতালরা নাকি এ পুতুলকে খুব মানে।
-''সব ঐ গদ্রবঙ্গার জন্য বাবুন। এখনো বলছি, ফেলে দাও ওটা। ও রক্ত খেতে শুরু করেছে। '' আমার হাতে পুতুলটা দেখে কাঁপতে কাঁপতে বলল কাকা। কখন যে পেছনে এসেছে দেখিনি।
আমি বললাম -'' কাল বাস্তু ভিটার মন্দির থেকে দেবী মায়ের গহনার বাক্স পেয়েছি কাকা। সব সোনার গহনা। তোমায় বলাই হয়নি। সব আমার এই লাকি পুতুলের জন্য। ঐ গহনা তিন পুরুষ ধরে কেউ পায়নি তুমিও জানো। ''
-''ঠিক বলেছ, এই পুতুল যার কাছে থাকে তার সৌভাগ্য উথলে ওঠে। সোনা দানা টাকা না চাইতেই আসতে থাকে। কিন্তু গদ্রবঙ্গা সব কিছুর চরম দাম নেয়। কড়ায় গণ্ডায় নিজের পাওনা বুঝে নেয় এই পুতুল। '' কাকার মুখ ফ্যাঁকাসে। চোখ বড়বড় করে বলল -''বৌ মণির কথা ভেবে ওটাকে ফেলে এস সেবকের তিস্তায়। দুদিন পর নতুন অতিথি আসবে ঘরে ।''
পুতুলটার লাল ঠোট দুটো যেত আমায় চুমু খেতে চাইছে। একটা নেশার মত আমায় টানছে ঐ গ
দ্রবঙ্গা। শোওয়ার ঘরে মাথার কাছে রেখে দিলাম যত্ন করে। এতো সুন্দর পুতুল কেউ ফেলে দেয় কখনো!
পরদিন সকালে চা নিয়ে এসে লখাই কাকা খুব উসখুস করছিলো, আমি তাকাতেই বলল -''আমায় এবার ছাড়ান দাও বাবুন। বুড়া হইছি। এবার দ্যেশে যাই। ''
বুঝলাম অভিমান হয়েছে কথা শুনিনি বলে। বললাম -''আমার ছেলের মুখ না দেখেই যেতে চাইছ কাকা। আর কটা দিন থাকো। আর আমাদের ছেড়ে যাবেই বা কেন?''
-''ভালো হবে না বাবুন। গদ্রবঙ্গার ছায়া পড়েছে এ বাড়িতে। বিট্টুকে টেনে নিয়েছে ঐ রাক্ষস। এরপর কার পালা কে জানে। ঐ পুতুল তোমায় দু হাতে দেবে আর বলি নেবে কচি প্রাণের। '' কাকার কথায় পুতুলটার দিকে চেয়ে দেখি চোখ যেন জ্বলছে। রেগে গেছে যেন। ধুর, কি সব ভাবছি। উঠে পড়লাম। আজ একটা টেন্ডার খুলবে। তাড়াতাড়ি যেতে হবে অফিস।পুতুলটাকে একটু আদর করে বেরিয়ে এলাম।
*******
এবারো গদ্রবঙ্গার কৃপায় লক্ষী লাভ হল। বড় কাজের বরাত পেয়েছি। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই মিন্টুর বৌয়ের সাথে দেখা। কয়েকদিন কেঁদে কেঁদে পাষাণ হয়ে গেছে মেয়েটা। এমনিতে আমায় খুব সম্মান করে। বললাম -''কিছু বলবে ?''
-''পুতুলটা ফেলে দিন দাদা। মতির মা পালিয়েছে ওর জন্য। লখাই কাকাও চলে যেতে চাইছে। বিট্টুকে খেয়েও ওর পেট ভরেনি। এরপর ও আরও খাবে। ''
বাচ্চা হারিয়ে এক মা পাগল হতে বসেছে। মায়া হচ্ছিল। বললাম -''তুমি তো শিক্ষিত!! এসব কথায় কান দিও না। ''
-''দাদা, মুনাই দির কথা ভেবে ওটা ফেলে দিন। আপনাদের না কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। '' বলে ও ঘরে ঢুকে গেল।
মনটা খচখচ করছিল, একটা নিরীহ পুতুলকে সবাই ভয় পাচ্ছে এ যুগে। শোয়ার ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ল পুতুলটা। মুখটা কি নিষ্পাপ, হাসি মাখা। যেন আমার সন্তান কোলে উঠতে ছাইছে। নেশার মত কোলে নিয়ে আদর করছিলাম।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। মুনাই বাথরুমে পড়ে গেছে। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে ওর মা বাবা। পুতুল রেখে ছুটে বার হলাম। নানারকম বাজে চিন্তা আসছিল মাথায়। তবে কী কাকার কথাই ঠিক। ওটা পুতুল নয়, অপদেবতা! ওঁর
জন্যই কী হচ্ছে এসব? হসপিটালে গিয়ে শুনলাম ওটিতে নিয়ে গেছে মুনাইকে। লখাই কাকাও ছুটে এসেছিল আমার সাথে। ও যে আমাদের ভীষণ ভালোবাসে।
আপন মনে কি সব বলে চলেছে ও বিড়বিড় করে। মনে হয় কোনো মন্ত্র পড়ছে। আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখ খুলল, লাল টুকটুকে চোখ। বলল -''এখনো সময় আছে। ফেলে দে গদ্রবঙ্গাকে। ও সাঁওতালদের অপদেবতা। তোকে দেবে দু হাত ভরে। কচি প্রাণের বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে তোকে সোনায় মুড়ে দেবে। আর কচি রক্ত না পেলে শেষ করে দেবে তোদের পরিবার কে। '' উত্তেজনায় আমায় ‘তুই’ বলছে কাকা।
এক অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠলাম। একটু পরে ডাক্তার এসে বলল মুনাই ভালো আছে। তবে আমাদের সন্তান আর নেই .....
সেবক কালী বাড়ির সামনে তিস্তার বুকে ছুড়ে ফেলব পুতুলটাকে। বারবার বলে দিয়েছে লখাই কাকা।ছুড়ে ফেলে পিছন ফিরে তাকাতে মানা করেছে । একা আসতে দেয় নি কাকা, নিজেই আসতে ছেয়েছিল। শেষে আমার বন্ধু অর্ণব সাথে এসেছে। আসতে আসতে সব শুনে অর্ণব বলল -''এ যুগের ছেলে হয়ে তুই এসব বিশ্বাস করিস !! দেখি তোর অপদেবতাকে ।''
কাগজে মোরা পুতুলটা দেখে বলল -''এই কিউট পুতুলটা ফেলে দিবি? আমায় দে, মেয়ে খেলবে। ''
আমি বললাম -''ভুল করিস না। আমার বাড়িতে কি হয়েছে সব তো জানিস। ''
-''এমন দুর্ঘটনা প্রচুর হয়। তুই এটা আমায় দে। আচ্ছা, কয়দিন রেখে দেখি না হয়। জলে তো আমিও ফেলতে পারবো।'' ওর যুক্তি তর্ক আর জেদের কাছে হার মানতেই হল। সেবক রেল গেট থেকে ফিরে এলো গদ্রবঙ্গা।
********
জমির প্রোজেক্ট টা একটা বড় ডিসপিউটে আটকে গেছিল। টেন্ডারটাতেও দেখা গেল লাভ হবে না তেমন। দু দিন মন মেজাজ ভালো ছিল না। মুনাই ও বাড়িতেই রেস্টে আছে। খুব ভেঙে পড়েছিল ও। ভাবছিলাম ওকে নিয়ে দুদিন কোথাও ঘুরে আসবো। ফোনটা বাজতেই দেখি অর্ণবের ফোন। প্রথমেই একটা দারুণ খবর দিল, ওর অনেক দিন ধরে আটকে থাকা প্রমোশনটা হয়েছে। আর শ্বশুর বাড়ির তরফে বড় একটা সম্পত্তি পেয়েছে।
আমি কিন্তু খুশি হতে পারলাম না। কেমন একটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলাম! বললাম -''ঋজিকা কেমন আছে? ওকে সাবধানে রাখিস। '' ওঁর একমাত্র মেয়ের নাম ঋজিকা। খুব মিষ্টি মেয়েটা। জোর করে খাড়াপ ভাবনা গুলো
কে মন থেকে দূর করতে একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গুণগুণ করছিলাম।
কিন্তু পরদিন ভোর রাতেই এসেছিল আবার অর্ণবের ফোন। ঋজিকাকে হসপিটালে নিয়ে গেছে। রক্তবমি করছে হঠাৎ।
আমি বললাম -''গদ্রবঙ্গার অভিশাপ!! তুই পুতুলটা ফেলে দে এখনো বলছি। ''
ও ফোন রেখে দিয়েছিল। দুপুরে এলো খারাপ খবরটা। মেয়েটা আর নেই!!
ওঁদের বাড়ি গিয়ে শুনলাম ডাক্তাররা কিছুই ধরতে পারেনি। কী ভাষায় ওঁদের সান্ত্বনা দেবো বুঝতে পারছিলাম না। সবাই শ্মশানে বার হতেই আমি পুতুলটাকে খুঁজতে শুরু করেছিলাম। অর্ণবের মেয়ের ঘরে পেলাম টাকে, যেন এক অবুঝ বাচ্চা হাসছে আমায় দেখে। ওটাকে ব্যাগে ভরে নিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরলাম। আর কাউকে ওর বলি হতে দেবো না। লখাই কাকাকে সঙ্গে নিয়ে সোজা সেবকের পথে রওনা দিলাম। সেবকেশ্বরী কালীবাড়ির সামনে গিয়ে ওটাকে বার করলাম। পুতুলটাকে ছুড়ে দিলাম তিস্তায়। তবে পড়ল নাকি গাছে আটকে গেল কে জানে!! কাকা পিছন ফিরতে বারণ করায় আর সেভাবে দেখিনি। ও কী এক মন্ত্র পড়ছিল বিড়বিড় করে।
মন্দিরে পূজা দিয়ে বহুদিন পর বাড়ি এসে ঘুমিয়েছিলাম শান্তিতে। বাড়িটা বেশ অন্য রকম লাগছিলো।
ঘটনাটা কিন্তু এখানেই শেষ হতে পারত। মুনাইকে নিয়ে পুরী ঘুরে এসেছি। মন বেশ শান্ত। পুতুলটার কথা কাউকে বলি নি, এমন কী মুনাইকেও জানাই নি। লখাই কাকা বারণ করেছিলো কাউকে বলতে। প্রায় ছয়মাস পরের কথা। মুনাই ঘটনাটা ভুলে আবার কনসিভ করেছিল। বাড়িতে বেশ আনন্দের পরিবেশ। ওর ভাই আদি এসেছিল খবরটা শুনে দেখা করতে। একটা উপহার এনেছিল দিদির জন্য। অনেক গল্প হল বহু দিন পর। রাতে আদিকে এগিয়ে দিয়ে ফিরে এসে ঘরে ঢুকেই আমি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেছীলাম। একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেছিল শিরদাঁড়া বেঁয়ে। দেখি মুনাই সোফায় বসে একটা পুতুল নিয়ে খেলছে। পুতুলটা আমার ভীষণ পরিচিত।
-''কি সুন্দর দেখো। আদি দিয়ে গেল সুখবর শুনে। একদম সত্যিকারের বাচ্চার মতো। '' ও আমার দিকে তুলে ধরল পুতুলটা।
গদ্রবঙ্গা হাসছে আমায় দেখে!!