হাড়গিলে ডাক্তার আর পেত্নী টুকু
হাড়গিলে ডাক্তার আর পেত্নী টুকু
হাত থেকে সহসাই খসে পড়লো টুকটুকে গোলাপি রঙের প্লাস্টিকের ছোট্ট টর্চটা; প্লাস্টিকের জিনিস বলে শরীরের ওপর আঘাতের চিহ্ন দেখা যাবে না হয়তো তবে ওর জীবন জ্যোতি গেল নিভে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছেনা রাজদীপ তবে স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে ওই কালো কালো ছায়া মূর্তি গুলো একটু একটু করে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। শরীরের চারপাশে উষ্ণ অনুভূতি, দরদর করে ঘামছে রাজদীপ। একটা হাত এসে পেঁচিয়ে ধরলো ওর গলা, ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটোকে আশ্রয় করে বাঁচতে চায় তেমনই ওর সরু লিকলিকে হাত দুটো দিয়ে প্রাণপণে গলায় পেঁচিয়ে থাকা রোমশ হাতটাকে ছাড়াবার চেষ্টা করতে লাগলো ও। কিন্তু নাহ আর পারছে না, দম ফুরিয়ে এলো বলে… মা...ও মা… মাগো তোমাদের আর দেখতে পেলাম না কোনোদিনও…
এক এক করে রাজদীপের চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকলো প্রিয়জনের মুখ গুলো… মা, বাবা, দাদা, বৌদি, ছোট্ট তুনতাই, কাউকেই আর দেখতে পাবে না কোনোদিনও। তুনতাই গোলাপি টর্চটা আর দেওয়া হলো না রে তোকে, মা তোমাকে আর বেনারস নিয়ে যেতে পারলাম না গো, বৌদি পুজোয় তোমার পছন্দের শাড়িও আর কিনে দিতে পারল না তোমার এই ছোট ভাইটা। সবাই ভালো থেকো, ভালো থেকো সবাই...
রাজদীপ চৌধুরী, ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর পোস্টিং পেয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার এই প্রত্যন্ত গ্রামটাতে। গ্রামটা থেকে বাংলাদেশের বর্ডার খুব দূরে নয়। এই গ্রামটাতেই নাকি কোনো এক মন্ত্রী মশাইয়ের আদি বাড়ি হওয়ায় তাঁরই উদ্যোগে কিছুদিন আগেই তৈরি হয়েছে এই ছোট্ট গ্রামীণ হসপিটালটি। মন্ত্রী মশাইয়ের আদি বাড়িটাকেই হসপিটালের রূপ দেওয়া হয়েছে, আর বাড়িটারই একপাশে বানানো হয়েছে ডাক্তারদের কোয়ার্টার। পোস্টিং এর জায়গা শুনে মা একটু কান্নাকাটি করছিল ঠিকই আর বাবাও বলছিলেন অন্যত্র পোস্টিং পাওয়া যায়না কিনা একটু খোঁজ খবর করতে কিন্তু রাজদীপ সে কথা কানেই তোলেনি, উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছিলো তার রক্ত! ছোটোবেলাকার স্বপ্ন তার গ্রামে গিয়ে গরিব মানুষদের সেবা করবে, কতবার “তোমার জীবনের লক্ষ্য” রচনায় একথা লিখেছে সে আর এখন যখন সুযোগ এসেছে তখন পিছিয়ে যাবে! কদাপি নয়। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে মৃত্যুর দ্বারে দাঁড়িয়ে মা বাবার বারণ না শোনার জন্য ভীষন ভাবে আফশোষ হতে লাগলো রাজদীপের। যদি শুনতো তাঁদের কথা তবে আজ বেঘোরে এভাবে প্রানটা তো খোয়াতে হতোনা।
রাজদীপের মনে পড়ে গেল আজ থেকে ঠিক দেড় মাস আগে এক সন্ধ্যেবেলা বাস থেকে নেমে যখন এই গ্রামের মাটিতে পা রেখেছিল তখন ওর শিরায় শিরায় বইছিল উত্তেজনা, তার কতদিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মুখে এ কথা ভেবেই শিহরিত হয়েছিল সে। কিন্তু তখন ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি যে তার এই শিহরন পরবর্তীকালে অব্যাহত থাকলেও শিহরণের কারণটা শীঘ্রই পাল্টে যেতে চলেছে। একটা ট্রলি নিয়ে বাস স্টপ থেকে রাজদীপকে আনতে এসেছিল রামভরস দাস, এক আধা বিহারী আধা বাঙালি মাঝ বয়েসি লোক। সে নাকি এখানে ডাক্তারবাবুদের ফাইফরমাস খাটে। ট্রলিতে আসতে আসতে জ্যোৎস্না ভরা রাতে গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ছেলেবেলায় গ্রামের বাড়িতে কাটানো দিনগুলোয় নস্টালজিয়ায় ভেসে যাচ্ছিল রাজদীপ; কিন্তু হঠাৎ করেই রামভরসের ডাকে চমকে উঠেছিল,
“ছার উদিকে দেগবেননি, উ হচ্চে নিধিরামের পুকুর।”
“তো?”
“আপনারা শহরের লোক ছার, কি আর বলি বিশ্বেস করবেননি নিচ্চয়! তবু বলচি। সবাই বলে যে লোক রাতে এই পুকুরের দিকে তাকায় তাকেই নিধিরামের ছোটো ব্যাটাটা ডেকে লেয়।
আরে আরে বাবু তাকাবেননি তাকাবেননি।”
চমকে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়েছিল রাজদীপ, “বুঝলাম না তোমার কথা।”
“এখানে সে কতা বলতে পারবুনি ছার, আপনার কোটারে গিয়ে বলবো।”
রাজদীপ বুঝেছিল নিশ্চয় ভুত প্রেত নিয়ে কোনো ব্যাপার হবে, যদিও ও ভুত প্রেতে বিশ্বাস করেনা তাও কেন না জানি পুকুরটার দিকে আর তাকাতে ইচ্ছে হয়নি। কোয়াটারে এসে জেনেছিল যে কোনো এককালে গ্রামের জনৈক নিধিরাম নামক ব্যক্তির বছর বারোর ছেলেটা খেলতে খেলতে ওই পুকুরে ডুবে মারা যায়, সেই থেকে যেই নাকি রাতের বেলায় ওই পুকুরের দিকে তাকিয়েছে একবার সেই দেখতে পেয়েছে সেই ছেলেটিকে পুকুরের ওপর ভেসে থাকতে আর বেশিক্ষণ সেদিকে যেই তাকিয়েছে তাকেই নাকি নিধিরামের ছেলে ডেকে নিয়ে চলে গেছে জলের গভীরে। এসব গাঁজাখুরি কথায় বিশ্বাস করেনি রাজদীপ, শুধু ওর মনটা সেই হতভাগ্য বাচ্চাটার কথা ভেবে উদাস হয়ে গিয়েছিল।
পরের দিন সকালে রাজদীপের আলাপ হয়েছিল ডাক্তার সোমনাথ দেবের সঙ্গে। মধ্য চল্লিশের এই হাসিখুশি মানুষটা রাজদীপকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, “উফফ বাঁচালে ভাই, একলা আর পারছিলাম না।”
রাজদীপ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “এই গ্রামে এতো রোগী হয়!”
“আরে না না। রোগীর চাপ না, এ অন্য ব্যাপার। সারাদিন এই পুরোনো দিনের বাড়িটায় একলা থাকা যে কি ভয়ঙ্কর যে না থেকেছে সে বুঝবেনা।”
রাজদীপ ভেবেছিল ডাঃ দেব হয়তো একলা থাকতে পছন্দ করেন না তাই এরকম বলছেন, কিন্তু পরক্ষণেই ওর ভুল ভেঙেছিল যখন ডাঃ দেব জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কোথায় থাকার প্ল্যান করছো হে?”
“কেন কোয়ার্টারে!”
“পাগল নাকি তুমি! ওই কোয়ার্টারে কেউ থাকে!”
“কেন? আমার তো কাল বেশ লাগলো আর যে মেয়েটি খাবার দিয়ে গেল তারও রান্নার হাত চমৎকার। তাহলে অসুবিধা কোথায়?”
“আহা তুমি বুঝছো না ভায়া। এ ব্যাপার অন্য। বলছি তুমি সুপারন্যাচারালে বিশ্বাস করো?”
“স্যার আপনিও যে রামভরসর মতো কথা বলতে লেগে গেলেন!”
“জানি তুমি বিশ্বাস করছ না, ভাবছো একজন ডাক্তার হয়ে আমি এসব বলছি কিন্তু বিশ্বাস করো ভায়া তোমার মতো প্রথম প্রথম আমিও মানতে চাইনি কিছু বাট…”
“কি?”
“পারলাম না। সপ্তাহ দু তিনের মাথায় কোয়ার্টার ছেড়ে যেতে হলো। এখন শহর থেকে যাতায়াত করি, কষ্ট হয় ঠিকই কিন্তু শান্তিতে আছি। তোমার বৌদিও মেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকে। তাই বলছি ভাই থেকো না এখানে, আমি যা যা সমস্যা ভোগ করেছি তা তোমাকে করতে দেব না। শহরে চলো, ভালো বাড়ি পেয়ে যাবে।”
“কিন্তু আমরা দুজনেই যদি সকালে ডিউটি করে রাতে শহরে চলে যাই তাহলে রাত-বিরেতে কেউ অসুস্থ হলে তখন কি হবে?”
“ছাড়তো ভাই ওসব ডিউটির কথা। সেই কথাটা শোননি? ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা।’ আগে নিজেরা বাঁচি তারপর লোককে বাঁচাবো।”
এরপর ডাঃ দেব তার অলৌকিক অনুভূতির কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করেছিলেন রাজদীপের সামনে আর তাতে রাজদীপের বিরক্তি আরও বেড়ে গিয়েছিল। ভুত ব্যাপারটা একটা সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম বা ইলিউশন ছাড়া কিছুই নয়; অথচ একজন ডাক্তার হয়ে এরকম অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হলে রামভরসর মত মানুষগুলো কুসংস্কার মুক্ত হবে কিভাবে! কিন্তু আজ রাজদীপের কান্না পেয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে কেন সেদিন ডাঃ দেবের কথাগুলো শুনলো না ও তাহলে তো এইদিন দেখতে হতোনা ওকে!
দু তিনদিন পর থেকেই গণ্ডগোলটা শুরু হয়েছিল। সন্ধ্যে হলেই রাজদীপের মনে হতো কে যেন জানলার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে, নীরবে ওকে দেখে যাচ্ছে। অথচ রাজদীপ জানলার দিকে তাকিয়েও কিচ্ছু দেখতে পায়নি, এমনকি বাইরে গিয়েও খুঁজে পায়নি কাউকে। এর কিছুদিন পর রাত হলেই ছাদে শুরু হতো বিকৃত আওয়াজ, কেউ যেন বড়বড় পা ফেলে হেঁটে বেড়াচ্ছে ছাদ জুড়ে। শরীরের দিক থেকে হাড়গিলে হলে কি হবে সাহসের দিক থেকে রাজদীপের জুড়ি মেলা ভার। রাত্রে বেলা একলাই বাড়ি থেকে আনা পাঁচ সেলের টর্চটা নিয়ে চলে গিয়েছিল ছাদে। হসপিটাল তৈরির সময় অতিরিক্ত হওয়া সরঞ্জামের স্তূপ ছাড়া শরীরী অশরীরী আর কোন রকম কিছুর অস্তিত্বই খুঁজে পায়নি সেখানে। অথচ ও নেমে আসার পরই আবার শুরু হয়েছিল আওয়াজ। সিঁড়ি থেকে নামার সময় হাত থেকে সজোরে পড়ে গিয়ে টর্চটাও ভেঙে ফেলেছিলো সেদিন। এতসব সত্ত্বেও রাজদীপ মনে মনে ভেবেছিল যে রামভরস আর ডাঃ দেবের কথা গুলো ওর মনে গেঁথে গিয়েই বোধহয় এরকম ইলিউশন তৈরি হচ্ছে।
রামভরস একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, “আপনি ঠিকাচেন তো ছার? কোনো পবলেম হয়নি তো?”
রামভরসর চোখ মুখ দেখে রাজদীপ বুঝতে পেয়েছিল যে সে কি শোনার আশায় জিজ্ঞেস করছে। রামভরসকে সেদিন পাত্তা না দিলেও রাজদীপ মনে মনে টের পেয়েছিল ওর সাহসের ঝাঁপিতে বোধহয় আস্তে আস্তে টান পড়তে শুরু করেছে। যতই হোক এই এত বড় নির্জন বাড়িতে একলা থাকতে এমনিই লোকের ভয় করবে তার ওপর আবার এসব গুজব শোনার পর কার আর মাথার ঠিক থাকে! তবুও তখন অবধি এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা মাথায় আনেনি রাজদীপ। কিন্তু দুদিন আগে যা ঘটলো তারপরই এই কোয়ার্টার ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হয় ও।
তখন রাত প্রায় দু’টা হবে। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ আর ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যায় রাজদীপের। নাহ আজ আর শব্দটা ছাদ থেকে নয়, আসছে মাটির নীচে থেকে। কিন্তু এ কিভাবে সম্ভব! কিছুক্ষন টানা আওয়াজটা হওয়ার পর সব কিছু শান্ত হয়ে যায় কিন্তু সারারাত আর দুচোখের পাতা এক করতে পারেনা রাজদীপ। পরের দিন সকালে রাতের ঘটনার কথা ভাবতে ভাবতে খানিকটা বেখেয়ালেই ডাঃ দেবকে ওর জন্য শহরে ভালো বাড়ি দেখার কথা বলে ফেলে। নাহ! এভাবে দিনের পর দিন থাকা যায়না। ভুত না মনের ভুল সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নয় রাজদীপ, তবে এই তীব্র মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকলে নিজেই খুব শীঘ্রই যে অসুস্থ হয়ে পড়বে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ডাঃ দেব ম্যাজিকের মতো আজ সকালেই একটা বাড়ির সন্ধান নিয়ে আসেন। সাময়িক ভাবে খুশী হলেও কিছুক্ষন পরই রাজদীপের মনটা কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কোথায় গেল ওর আদর্শ! ওর কর্তব্যবোধ! ভয় পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে ও। এই তো গতকাল সন্ধেবেলাই একটি মেয়ে প্রচন্ড পেট ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হতে এসেছিল। রাজদীপ না থাকলে কি করে চিকিৎসা হতো মেয়েটির! হসপিটালের অন্যান্য কর্মচারীর সংখ্যাও অল্প, তারাও রাত হলেই ভ্যানিশ হয়ে যায় ডিউটি ছেড়ে। রাজদীপ একদিন এ নিয়ে বকাবকি করতে গেলে ডাঃ দেব বেশ কড়া ভাষাতেই ওকে বলেছিলেন যে ওর নিজের প্রাণের মায়া না থাকতে পারে কিন্তু তা বলে অন্যকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার কোনো অধিকার ওর নেই, ও নাকি জেনে বুঝে অধঃস্তনদের ওপর খবরদারি করছে। অপমানে সেদিন রাজদীপের মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে উঠেছিল কিন্তু বাবার কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আর কথা বাড়ায়নি। চাকরিতে জয়েন করার আগে বাবা বারবার করে বলেছিলেন কলিগদের সাথে কোনো ঝামেলায় না জড়াতে। সত্যি বলতে এই হসপিটালে এসে এর কর্মপদ্ধতি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল রাজদীপ। কোথায় ওর স্বপ্নের জায়গা আর কোথায় এটা! তাও রাজদীপ নিজের মতো করে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল সব কিছু নিয়ম মাফিক করার কিন্তু একলার চেষ্টায় কি বা হয়!
কাল কোয়ার্টার ছেড়ে চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলেও এক অদ্ভুত দোটানায় পড়ে গিয়েছিল রাজদীপ। আর তাই সন্ধেবেলাতে কোয়াটারে ফিরেও একটু রাতের দিকে আবার গিয়েছিল হসপিটালে। বর্তমানে ভর্তি থাকা তিনজন রোগীই অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ওদের দিকে একবার দেখে নিয়ে তারপর উদ্ভ্রান্তের মতো গোটা হসপিটালটায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল রাজদীপ, মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ এসে দাঁড়িয়েছিল হসপিটালের স্টোর রুমের সামনে। আশ্চর্য দরজায় তালা দেওয়া নেই! এই লোকগুলো করেটা কি! কাল সকালে খুব কষে ধমকে দিতে হবে, এতটা ইররেস্পন্সিবল সব! খানিকটা বেখেয়ালেই দরজা টেনে ভেতরে ঢুকেছিলো রাজদীপ, হাতে ছিল তিন বছরের ভাইপো তুনতাইয়ের জন্য ট্রেনে কেনা গোলাপি রঙের টর্চটা।
এই প্রথম স্টোর রুমের ভেতরে ঢুকছে রাজদীপ। ছোট্ট টর্চটার আলো ফেলে দেখতে পেলো চারিদিকে স্তূপ করে রাখা আছে হসপিটালে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী। এই টর্চের হালকা আলোয় দেওয়ালের ওপর জিনিসগুলোর ছায়া পড়ে এক একটা অদ্ভুত আকৃতি তৈরি করেছিল, তুনতাই থাকলে এগুলো দেখিয়ে দৈত্য দানো বলে বেশ ভয় দেখানো যেত ওকে। হেসে ফেললো রাজদীপ, কতদিন দেখেনি দুস্টুটাকে। স্টোর রুম থেকে বেরিয়ে আসছিল রাজদীপ কিন্তু হঠাৎ ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যেন বলে উঠলো প্রথম ইন্দ্রিয় বঞ্চনা করছে ওর সাথে, একটা দরকারি কিছু ওর নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। আবার পেছন ফিরলো রাজদীপ। টর্চের আলো ফেলতে লাগলো চারিদিকে, নাহ! কোথাও তো কোনো অস্বাভাবিক কিছু নেই। তাহলে ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় মিথ্যে বললো! আরে! এতক্ষন তো খেয়াল পড়েনি ওই কাঠের তাকটা খালি পড়ে আছে অথচ এতগুলো জিনিস মেঝেতে এভাবে রাখা কেন! উফফ এরা যে কি কাজ করে না! পায়ে পায়ে তাকটার কাছে এগিয়ে গেল রাজদীপ। আশ্চর্য তাকটায় একফোঁটা ধুলো নেই! এ কি করে সম্ভব? অব্যবহৃত পড়ে আছে তাও একফোঁটা ধুলো নেই! টর্চের আলোটা ভালো করে তাকটার গায়ে ফেললো রাজদীপ। জিনিসটা চোখ এড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু ছিল না কিন্তু তবুও রাজদীপের নজরে পড়লো, কাঠের তাকটার বামদিকে একটা গোল কালো উঁচু মতো জিনিস। স্বাভাবিক নিয়মেই সেটায় আঙ্গুল চালালো রাজদীপ, জিনিসটা ভেতরের দিকে ঢুকে গেলো। একি? এটা কি তবে কোনো সুইচ! বেশি কথা ভাবার সময় পেলোনা রাজদীপ তার আগেই মৃদু ঘড়ঘর শব্দ করে তাকটা ডান দিক থেকে বাম দিকে ঘুরে গেল আর রাজদীপের সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেল এক দেওয়াল জুড়ে এক অন্ধকার গর্ত। চমকে উঠে দু পা পিছিয়ে এলো রাজদীপ, তারপর আবার ওটার কাছে এগিয়ে গিয়ে টর্চের আলো ফেললো গর্তটার মধ্যে। সেখান থেকে একটা লম্বা সিঁড়ি নেমে গেছে নীচে, অন্ধকারের জন্য যার শেষ প্রান্তটা দেখা যায়না।
কিছু কিছু সময় থাকে যখন সাহসে নয় উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি বিচার করতে হয়, আর তা যদি না করা হয় তখন বিপদকে এড়ানো মুশকিল। অনেক সময় অতি বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাও এমন ভুল করে বসেন। আর এখন রাজদীপেরও হলো ঠিক সেই অবস্থা! শুধুমাত্র সাহসের ডানায় ভর করে হাতে একটা কুড়ি টাকা দামের টর্চ নিয়ে সে নামতে শুরু করলো সিঁড়ি ধরে। ক'ধাপ নেমেছে গোনেনি ও, তবে সিঁড়ি শেষ হতে যে জায়গায় পৌঁছালো সেটা একটা বিশাল হলঘর বলা চলে। সেখানে থরে থরে সাজানো রয়েছে কার্ডবোর্ডের বাক্স। মুহূর্তের মধ্যে একটা গন্ডগোলের গন্ধ পেলো রাজদীপ, এগিয়ে গিয়ে একটা বাক্সের ওপর টর্চের আলো ফেললো রাজদীপ। বাক্সের গায়ে আটকানো কাগজে লেখা একটা জনপ্রিয় হার্টের ওষুধের নাম। চমকে উঠলো ও। এই বাক্সগুলোয় কি তবে ওষুধ ভরা আছে? বাক্সের গায়ে হাত দিয়ে ভেতরের জিনিসটাকে অনুভব করার চেষ্টা করলো। নাহ! বোঝা সম্ভব না, বাইরের আস্তরণতা বড্ড শক্ত। জোরে একটা নিশ্বাস নিলো রাজদীপ তারপর আবার চোখ চালালো গোটা হল ঘরটায়, হলের একপ্রান্তে একটা দরজা, পাশে আরও রুম আছে নিশ্চয়। এতক্ষনে রাজদীপের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল মেঝের নীচ থেকে ভেসে আসা শব্দের রহস্য। এই ঘরগুলোর মতো হয়তো রাজদীপ যে ঘরে থাকে তার নিচেও ঘর আছে, আর সেখানেই শব্দ করে ভয় দেখানো হচ্ছিল ওকে। ওষুধ গুলো যে আসলে কি সেই নিয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই রাজদীপের। যাইহোক, এখানে থাকা আর বোধহয় ঠিক না, যে কোনো মুহূর্তে বিপদ হতে পারে। যা করার কাল সকালে করতে হবে। ডাঃ দেবকে নিয়ে আগে একবার এসে দেখে যাবে সব, তারপর পুলিশ ডাকতে হবে। সিঁড়ির দিকে ঘুরতে যাবে রাজদীপ এমন সময় ওর মুখে একটা জোরালো আলো এসে পড়লো। অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ করে ধেয়ে আসা তীব্র আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে গেল রাজদীপের, হাত থেকে ছোটো টর্চটা পড়লো ছিটকে। আগন্তুক লোকটাও নিভিয়ে দিলো তার টর্চ আর তারপরেই রাজদীপের এই অবস্থা।
“আরে কালু দাঁড়া দাঁড়া, মরার আগে বেচারা একবার জেনে তো নিক কেন মরছে।”
একটা অচেনা গলা মুখে কিছু চিবোতে চিবোতে জনৈক কালুকে উদ্দেশ্য করে বললো কথাগুলি। রাজদীপ অনুমান করতে পারলো ওর গলায় চেপে বসে রোমশ এই হাতটার মালিকের নাম তবে কালু। কালু লোকটা কোনো শব্দ খরচ করলোনা, শুধু এক বিকট শব্দে হেসে রাজদীপের আগে থেকে ভয় পেয়ে থাকা পিলেটাকে আরও চমকে দিলো।
“কেন ভায়া? বেশ তো কাল তল্পিতল্পা নিয়ে শহরে চলে যেতে, তা না! শুধু শুধু আজ রাতের জন্য মাতব্বরি কেন করতে গেলে হে?”
“স্যার আপনি!”
যারা এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের মধ্যে কিছু চেনা লোক যে থাকবে তা আগেই অনুমান করেছিল রাজদীপ কিন্তু তা বলে এই মানুষটা! গলার স্বরটা স্পষ্ট শুনেও যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা ওর।
“না ভায়া তোমার মতো অত আদর্শবাদী আমি নই, আমার চাই পয়সা বুঝলে?”
“বলি ও হাড়গিলে ডাক্তার তুই আমাদের সাথে লড়তে চলে এলি খালি হাতে! তোর সাহস আছে বলতে হয়।” এই গলার মালিককে রাজদীপ চেনেনা।
“ও ছার বলি কি কাল সকালটা কাটিয়েই তো নতুন ঘরে চলি যেতেন তা না শুদু শুদু মরতি এলেন!”
“রামভরস তুমি! তুমিও এদের সাথে যুক্ত? তাই তুমি আমাকে আসার দিন থেকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করতে?”
“আপনাকে ছার ভয় দেখাতে কি কি না করেচি! আপনার জানলা দিয়ে রোজ সন্দে বেলা কুকি কুকি খেলেচি, এই কালু ওর এই মোটা গতর লিয়ে মই বেয়ে ছাদে উঠে লাফদড়ি খেলেচে, এরকম আরও কত কি! আপনি তাও কিনা কিসেও ভয় পেলেননি! বলতে হবে আপনার কলিজার জোর আছে। হিঃ হিঃ।”
রাজদীপ ভাবতে পারছিল না যে রামভরসকে একটা সহজ সরল গ্রাম্য লোক ভেবেছিল তারও এমন কুৎসিত রূপ থাকতে পারে! আর ডাঃ দেব যাকে একজন হাসিখুশি মিশুকে মানুষ বলে মনে হতো, মানুষের সেবা করার ব্রত যিনি নিয়েছিলেন সেও এমন অপরাধ জগতের কান্ডারি হতে পারে!
“যাওয়ার আগে শুনে যান ডাক্তারবাবু এসব হাসপাতাল টাসপাতাল সব চোখের ধুলো। আসল কারবার তো চলে নীচে। হিঃ হিঃ! হিরোগিরি না করে বড় ডাক্তার বাবুর মতো আমাদের সাথে যোগ দিলে পারতেন, জাল ওষুধের কারবারে মুনাফাই মুনাফা।”
“এ যে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার লোক নয় সে আমি প্রথম দিন দেখেই বুঝে গেছিলাম। তাই তো তোদের ভুতের নাটক করতে বলি।”
“হুম ঠিক বলেছেন ডাক্তার বাবু। নে নে কালু দেরি করিস না, এসব উটকো ঝামেলাকে সরা তাড়াতাড়ি। মালের ডেলিভারি দেওয়া হয়ে গেলে তারপর পেছনের রাস্তা দিয়ে নিধিরামের পুকুরে এর বডিটা ফেলে দিয়ে আসবি, যা চেহারা এর বেশি আওয়াজও উঠবেনা জলে।” একটা অচেনা গলা তাড়া দিলো কালুকে।
“সোমনাথ দা…” শেষ চেষ্টা হিসেবে নিজের প্রাণ ভিক্ষা করতে গেল রাজদীপ কিন্তু ওর কথা শেষ হলো না তার আগেই কালুর হাত আরও জোরে চেপে বসলো ওর গলায়।
“ভায়া, কিচ্ছু করার নেই আমার। অতিরিক্ত সাহস না দেখালেই পারতে। যাইহোক, আমাদের কাছে ছুরি ঘোড়া সব মজুত আছে কিন্তু তোমার জন্য আমাদের কালুই যথেষ্ট। টাটা ভায়া।” একটা জোরালো শক্তির ইমারজেন্সি লাইট জ্বালালো রামভরস। ওদের মুখ গুলোর দিকে চেয়ে রাজদীপের শুধু মনে হলো এরা আদৌ মানুষ! কালুর গলার মুষ্টি আরও শক্ত হয়ে চেপে বসছে। মা… মা গো…
শেষ মুহূর্তের জন্য আতঙ্কে দু চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল রাজদীপ, কিন্তু আচমকাই গলার বাঁধনটা আলগা হয়ে যেতে দেখে চোখ খুললো ও। একি! এ কালু এমন কাটা কলা গাছের মতো লুটিয়ে পড়লো কি করে! তারপরেই দেখতে পেল কালু একটু আগে যেখানটায় দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন এক মহিলা। লাল শাড়ি, লম্বা লম্বা চুল, সিঁথি ভর্তি সিঁদুর… কিন্তু এ মহিলার মধ্যে কিছু একটা অস্বাভাবিক না! আরে এই মহিলা তো… ট্রান্সপারেন্ট! আঁ… আঁ… আঁ… চিৎকার করে উঠলো রাজদীপ।
“আঃ! মলো যা! বলি ছোঁড়া এমন সময় মাকে নয় মাসিকে ডাকতে হয় বুঝলি?”
নিজের মুলোর মতো সাদা দাঁত গুলো বের করে হাসলেন ওই ট্রান্সপারেন্ট মহিলা। আর সামলাতে পারলো না রাজদীপ, ধপ করে বসে পড়লো মাটিতে।
“টু… টুকু মাসি তুমি!”
রামভরসর আতঙ্কিত গলা। মুহূর্তের মধ্যে ওই ট্রান্সপারেন্ট মহিলা বা টুকু মাসির হাতটা ইলাস্টিকের মতো লম্বা হয়ে গিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রামভরসর গালে মারলো একটা মোক্ষম চড়,
“হাঁ লো ব্যাটা ই আমি তোর টুকু মাসি। তা ছোঁড়া এককালে তোকে কত আদর করে আচার খাইয়েচি আর তুই কিনা এখন এসে মস্তানী কচ্চিস! লজ্জা করে না?”
রামভরসর লজ্জা করলো কিনা বোঝা গেল না, তার আগেই চড়ের প্রাবল্য মূর্ছা গেল সে। ঘরের মধ্যে থাকা বাকি মানুষ গুলো এবার শুরু করলো ছোটাছুটি। কিন্তু টুকু মাসিকে এড়িয়ে যাবে কোথায়! মাসির হাত পা গুলো ইলাস্টিকের মতো লম্বা হয়ে হয়ে বদমাইশ গুলোকে পটাপট পটকে দিতে থাকলো। টুকু মাসির ফাইট দেখতে দেখতে রাজদীপের মনে পড়ে যাচ্ছিল নব্বইয়ের দশকে কম বাজেটের বাংলা ছবিগুলোর শেষে থাকা অতিরঞ্জিত মারপিটের দৃশ্যের কথা; সেগুলো দেখলে উত্তেজনা তো দূর উল্টে পেট গুড়গুড় করে হাসি পেত ওর। যদিও এখন রাজদীপের মোটেও হাসি পাচ্ছেনা বা টুকু মাসিরও রাজদীপকে হাসানোর কোনো অভিপ্রায় আছে বলে মনে হলো না।
মিনিট দশেকের মধ্যে সব কটাকে কাবু করে ফেললো টুকু মাসি। এখন রাজদীপের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জনা সাতেক লোক, কেউ বা চিত হয়ে পড়ে আছে, কেউ কেউ উপুড় হয়ে। ডাঃ দেব তো হতে বন্দুক ধরে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন, মাথাটা নীচের দিকে ঝুলে গেছে, অচৈতন্য শরীর। বন্দুকটা নিয়ে বোকার মতো টুকু মাসির দিকে ফায়ার করার চেষ্টা করেছিলেন, তাই এই অবস্থা। সব কটা ক্রিমিনালকে ধরাশায়ী করে মুখ একটা অদ্ভুত শব্দ করলেন টুকু মাসি, তারপর রাজদীপের দিকে ঘুরে তাকালেন,
“ও ছোঁড়া কানচিস কেন লো?”
“মাসি…”
“কি লো?”
“আমি এখানে আসার পর থেকে ওরা আমাকে ভুতের ভয় দেখাতো রোজ, আমি ভয় পেতাম না কারণ ভাবতাম ভুত বলে কিছু হয়না। কিন্তু আজ যখন জানলাম ভুত বলে কিছু হয়… এখন আর ভয় পাইনা মাসি। তুমি মহান। তুমি যেভাবে আমাকে সাহায্য করলে, এই বদমাইশগুলোকে শাস্তি দিলে…”
“ও লো থাম থাম… এসব উপকার টুপকার আমি বুজিনি বাপু। দেখলুম কালো মুসকুন্ডাটা তোকে মাত্তে যাচ্চে তাই এলুম। তোকে মেরে দিলে আমি সমস্যায় পড়ে যেতুম যে।”
“তোমার আবার সমস্যা কিসের!”
“কেন আবার তুই মরে ভুত হয়ে ঘাঁটি গাঁড়তিস একেনে, দিয়ে দুদিন পর বে থা করে বউ আনতিস ঘরে তখন তোর বউ এসে আমার সাতে চুলোচুলি কত্ত রোজ। শোন বাপু এ আমার জায়গা এখনে আর কাউকে থাকতে দুবনি ব্যস।”
“তুমি এই জন্য আমায় বাঁচালে?”
“হুম…
"নে নে ছোঁড়া এবার বিদেয় হ দিকি। তোর মেসো এখন হাওয়া খেতে বেরিচে, ফিরে এসে তোকে দেখলে খুব রাগারাগি করবে।”
“তার মানে এরা যে জাল ওষুধের কারবার চালাতো তোমার তাতে কিচ্ছু এসে যায়না?”
“আ মোলো যা, জাল না জল তা জেনে আমি কি করব লো! আমি বাপু মুখ্যু সুখ্যু ভুত, রোজ দেখতাম আসতো ওরা দিয়ে কিসব কত্তো তারপর চলে যেত। ভাবতুম ডাক্তার বাবু আছে যখন তখন নিশ্চয় ভালো কাজ কিছু হবে কিন্তু আজ তোকে যখন মাত্তে গেল তখন বুজলুম আসলে সব এরা শয়তান। খারাপ কাজ কচ্চে।”
“হুম মাসি খুব খারাপ কাজ করতো এরা। এদের জন্য কত হাজার হাজার মানুষ… উফফ ভাবলেও শিউরে উঠছি। তা তুমি এদের মেরে ফেললে!”
“দূর হ… আমার জায়গা দখল করে লিবি বলে তোকে বাঁচালুম আর তারপর আমি নিজেই কিনা এদের মেরে নিজের পায়ে কুড়ুল মারব! কাল পুলিশ নে এসে এগুলানকে তুলে যাবি। নে নে যা এখন দেখি বাপু…”
“আচ্ছা।”
নিজের ক্লান্ত অবসন্ন শরীরটাকে কোনো মতে টেনে হিঁচড়ে সিঁড়ির কাছে আনলো রাজদীপ। ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার। একটু মুক্ত বাতাস চাই, অনেক ধকল গেল আজ।
“এই ছোঁড়া শোন।”
ঘুরে তাকালো রাজদীপ, “বলো।”
“বলছি তুই এই হাসপাতাল ছেড়ে যাসনি লো। গেরামের মানুষগুলানের তোকে দরকার। আমি নিজে বিনে চিকিচ্ছায় মরেছি জানিস তো!”
কেমন উদাস হয়ে গেল টুকু মাসি।
মৃদু হাসলো রাজদীপ, “হাসপাতালের ভুতগুলোকে তো তুমি জখম করে দিয়েছ মাসি, এবার আর কেউ আমাকে এখান থেকে সরাতে পারবেনা। কথা দিয়ে গেলাম।”
রাজদীপের আশ্বাস পেয়ে দু হাত তুলে ওকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করল টুকু মাসি,
“বেঁচে থাক বাবা। দুগ্গা দুগ্গা।”
(সমাপ্ত)