Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Debdutta Banerjee

Drama

4  

Debdutta Banerjee

Drama

সুখ পাখি

সুখ পাখি

6 mins
4.8K


কলকাতায় প্রথম এসে আমি সরকারি কর্মরতা মহিলা হোষ্টেলে দীর্ঘ চার বছর কাটিয়েছি। নানাধরনের এবং বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা এখানে থাকত। কেউ কেউ যেমন খুব ভাল সরকারি চাকুরী করত কেউ আবার জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার জন‍্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতো।কোন ছোট্ট একটা কাজ করেই কেউ সুুুখে থাকার চেষ্টা করত। আবার দীর্ঘ কর্ম জীবন শেষ করেও কেউ কেউ সুখের দেখা পেত না। এই হোস্টেল জীবন নিয়ে অনায়াসে একটা উপন‍্যাস লেখা যায়।


আমার পাশের ঘরে ছিল আশা বলে একটা মিষ্টি মেয়ে। ও কোনো ডক্টরের চেম্বারে কাজ করতো। টুকটাক ফিজিওথেরাপিও করতো। আশার স্বভাবটা ভারি মিষ্টি ছিল। আমার সাথে ওর খুব সুন্দর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। ওর গানের গলাটা ছিল ভারি সুন্দর। আর ওর ঠাকুর দেবতার প্রতি ভক্তি ছিল দেখার মতো। কত যে উপোস করতো, আমি নিজেও আজ মনে করতে পারবো না। উপোস করে লালপাড় শাড়ি পরে পায়ে আলতা আর কয়েকটা সিটি গোল্ডের গয়না পরে ও যখন মন্দিরে যেতো ওকে দেখেই বেশ দেবী দেবী লাগতো। এই হাসি খুশি মেয়েটার মধ‍্যেও অনেক দুঃখ লুকিয়েছিল।


এক মেঘলা দিনে আমি যখন বাড়ির জন‍্য মন খারাপ করে একা একাই বালিশ ভেজাচ্ছিলাম, ও এসে ছোট বোনের মতো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিল ওর গল্প।মালদার কাছে এক গ্ৰামে ওর বাড়ি ছিল। একটা ছোট ভাই ছিল ওর। আর ছিল আমবাগান। শরিকি ঝামেলায় ওদের জমি আর বাগান হাতছাড়া হয়ে গেছিল। এক জল ঝড়ের রাতে ওর বাবা মা কে মেরে ফেলেছিল ওর নিজের কাকারাই। আলমারির পিছনে লুকিয়ে সাত বছরের মেয়েটা দেখেছিল সেই ঘটনা যা আজও ওর স্বপ্নে ঘুরে ঘুরে আসে।ছোট ভাইটাকে তুলে নিয়ে গেছিল কাকারা। ও কিছুই করতে পারে নি। পরদিন থানায় আবার ওর কাকারা বলেছিল, সত‍্যিকথা বললে ভাইটাকেও মেরে দেবে। ও ভয়ে কিছুই বলতে পারে নি। এর পর ওর জায়গা হয় হোমে। ভাইকে আর দেখতে পায় নি কখনো। হোমেই অনেক প্রতিকুলতার মধ‍্যে পড়াশোনা করে ও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু উচ্চমাধ‍্যমিকের পর ওকে এই কাজটা খুঁজে দেয় হোম আর এই হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয়। 


ও খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারত। আর পাঁচটা মেয়ের মতো ও বিয়ে আর নিজের সংসারের স্বপ্ন দেখতো। ওর সাজগোজের মধ‍্যে একটা বউ বউ ভাব থাকত। সিঁথিটাই রাঙ্গাতে পারতো না! পরে আমি মাঝে মাঝে ওর জন‍্য পাত্র চাই কলমে দাগ দিতাম। কিন্তু একটা অনাথ হোমের মেয়েকে বিয়ে করতে কেউ এগিয়ে আসতো না। ওকেও বলতাম তেমন কাউকে খুঁজে পেলে আমরা বন্ধুরা দাঁড়িয়ে ওর বিয়ে দেবো। ও লাজুক হাসতো। আমাদের হোস্টেলের একটা সিকিউরিটির ছেলে ছিল মির আলম বলে। ও যে আশাকে পছন্দ করতো আমি জানতাম। কিন্তু আশা হিন্দু বলে ওকে কখনো পাত্তা দেয় নি। কিছুদিন পর ছেলেটা চলে গেছিল কাজ ছেড়ে। শুনেছিলাম ও ট‍্যাক্সি চালাচ্ছে।হঠাৎ কয়েকদিন ধরে আশাকে খুব খুশি খুশি লাগছিল। শুনলাম অবশেষে ওর জীবনে একজন এসেছে, নাম জিতেন্দ্র সিং। ছেলেটা কোনো নার্সিং হোমে কাজ করে। হুগলীতে বাড়ি, শিখ। দু তিন মাস আশা খুব খুশিতেই ছিল। একদিন আমার সাথে পরিচয় করালো ছেলেটার। এর পর আমি আর আশা গিয়ে ওর বিয়ের বাজার করেছিলাম। একমাস পরে পাঞ্জাবী মতেই বিয়ে শুনলাম। এর পনেরো দিন পর দেখি আশা খুব চিন্তিত। কাজে যায় না। উদভ্রান্তের মতো বসে থাকে। ওকে একটু চেপে ধরতেই কেঁদে ফেলল। বলল যে বিয়ের পর থাকবে বলে ওরা ঘর ভাড়া খুঁঁজছিল।জিতেন্দ্র একটা ঘর পেয়েছিল, সেই এডভান্স বাবদ এবং ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন‍্য নিজের জমানো তেইশ হাজার টাকা আর একটা সোনার আংটি ও জিতের হাতে তুলে দিয়েছিল পাঁচ দিন আগে। তারপর থেকে জিতের ফোন বন্ধ। আশা ওর বাড়ি চেনে না। তখনো আশার মনে ক্ষীণ আশা জেগে রয়েছে যে জিত ফিরে আসবে। হয়তো অসুস্থ বা আটকে গেছে কোথাও।


কিন্তু আমি বুঝে গেছিলাম কি হয়েছে। ওকে নিয়ে থানায় যেতেও চেয়েছিলাম। কারন ঐ টাকাটা ও তিল তিল করে জমিয়েছিল। ওর ভালবাসা আর শেষ সম্বল টুকু লুঠ করে ওকে নিঃস্ব করে ছুঁড়ে ফেলে চলে গেছিল ঐ জিতেন্দ্র। কিন্তু আশা থানায় যায়নি। এরপর মেয়েটা নিজেকে এক কঠিন আবরণে ঢেকে ফেলেছিল। পূজা আর উপোস করতো আগের মতোই। কিছুদিন পর শুনলাম একটা নতুন ছেলে এসেছে ওর জীবনে। ওর পাশের এক অন‍্য ডাক্তারের চেম্বারে কাজ করে। আভাস গোয়েল, এই ছেলেটা জৈন। তাই আশা নিরামিশ খেতে শুরু করেছিল। ওর নাকি শুদ্ধিকরণ হবে বলেছিল।তবে এই ছেলেটিও বেশিদিন টেকে নি। কাজ ছেড়ে চলে গেছিল অন‍্য কোথাও।এই সময় আমাদের পাশের ঘরে শান্তা রোজারিও বলে একটি মেয়ে আসে। ও একটা প্রাইভেট স্কুলে ক্লারিক‍্যাল জব করতো। আশার সাথে ওর ভালোই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মেয়েটা আশার এই উপোস করা পূজা করা দেখে বলতো -"এতো যে পূজা করো তোমার ভগবান তোমায় কি দেয় ?"

আশা বলতো -"জানি না।তবু করি। এটাই মনের শান্তি।"

শান্তা একদিন ওকে বলল -"তুমি আমার সাথে চার্চে যাবে? তোমার ভাল লাগবে। ভগবান তো সবই সমান। "


আশা গেছিল, কারণ ভগবানের ঘর নিয়ে ওর মনে হয়তো কোনো ভেদাভেদ ছিল না।কদিন পর লক্ষ‍্য করি আশা নিয়মিত ওর সাথে চার্চে যাচ্ছে। আমি একদিন জিজ্ঞেস করায় আশা বলল -"আমার ভগবান আমায় কিছু দেয় নি। কিন্তু শান্তার গড কথা শোনে, শান্তাকে সব কিছু দিচ্ছে ওর গড।"


আমি বুঝতে পারছিলাম ওর ভালোই ব্রেন ওয়াশ চলছে। আমার বাড়ি নর্থ বেঙ্গলে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার দলিত আদিবাসীদের ধর্মান্তরিত হতে দেখেছি ন্যূনতম সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে। তাই জানতাম ও কি বলবে!

আমি বললাম -"আশা, যে জিনিস গুলোকে এতোদিন আঁকড়ে বড় হয়েছিলে সব রাতারাতি ভুলতে হবে। বিয়ে হলেও ঐ আলতা সিঁদুর পরতে পারবে না। সংসার হবে হয়তো বাঁধন হবে পলকা। "

কিন্তু ওর মুখে একটাই কথা -" ওদের গড কথা শোনে। গরীবদের দুঃখ বোঝে।"


এরপর খুব দ্রুত আমি আশাকে বদলে যেতে দেখেছি। ও নাকি ওর দুঃখ চিঠি লিখে গডকে জানিয়েছিল। চার্চে পোষ্ট করেছিল। প্রথমেই ওর চাকরী হলো এক ভাল ইংরাজি স্কুলে আয়া হিসাবে। আর দুপুর থেকে আরেক ডাক্তারের চেম্বারে কাজ করতো। এরপর ওর জীবনে একটি ছেলে এল জোসেফ, যে দু বছর আগেই ধর্মান্তরিত হয়েছিল। ওর স্কুলেই হোস্টেলের দেখাশোনা করে। এরপর আশা ধর্মান্তরিত হল। ওর পালক পিতা মাতা পেল। ওর নাম হয়েছিল আ্যলিস। ওরাও বাড়ি ভাড়া পাচ্ছিল না, আবার চিঠি লিখেছিল। এ বার এক খ্রিস্টান বৃদ্ধর বাড়ি ওরা জায়গা পেল। তবে বৃদ্ধকে দেখাশোনাও করতে হবে। ওর পালক পিতা মাতা ওদের বিয়ে দিয়েছিল ভালো করেই। চার্চে ওদের বিয়ে হয়েছিল। সাদা গাউন পরা আ্যলিসকে দেখে সেই শাড়ি আর আলতা পরা আশার কথা বার বার মনে পরছিল। ওর শুভ্র সিঁথি রাঙ্গানোর ইচ্ছাটা এ ভাবেই চাপা পড়ে গিয়েছিল। তবে ওর সংসার করার ইচ্ছা পূরণ হলো দেখে খুশি হয়েছিলাম। এর ছমাস পর নন্দনে দেখা হয়েছিল আশার সাথে।লাল টুকটুকে শাড়ি আর সিটি গোল্ডের গহনায় মিষ্টি লাগছিল। তবে শাখা সিঁদুর আর আলতা সাহস করে পরতে পারে নি। ওর বরকেও দেখলাম খুব খুশি। মনটা ভাল হয়ে গেছিল।


ধর্ম কি এই আনন্দের থেকে বড়!! জানি না।এরপর আমার বিয়ে হয়ে গেছে। প্রায় তিন বছর পর নিউ মার্কেটে বোরখা পরা আশাকে দেখে চমকে উঠেছিলাম। আশা বলে ডাকতেই ও চমকে উঠে তাকায়, আমায় দেখে একগাল হেসে জড়িয়ে ধরে। বলে ওর নাম এখন আয়েশা। আমি অবাক, ওকে টেনে নিয়ে গেলাম পাশের একটা রেস্টুরেন্টের কেবিনে। আমার চোখে হাজার প্রশ্ন। 


আশা বলল -"প্রথম প্রথম গড আমাদের সব কথা শুনলেও যেদিন ধরা পড়লো জোসেফের লিভার ক‍্যানসার, আর গডকে সাথে পাই নি। তিনমাসের মধ‍্যেই জোসেফ চলে গেছিল। যে বাড়িতে থাকতাম বুড়োটা ভাল ছিল না। ওর নোংরা নজর থেকে নিজেকে বাঁচাতে হোস্টেলে ফিরে গেছিলাম। জোসেফের চিকিৎসায় সর্বশান্ত হয়েছিলাম আগেই। এবার স্কুলের চাকরীটাও গেল। আবার চিঠি লিখলাম। কিন্তু কিছুই লাভ হল না এবার। ঐ ডাক্তারের চেম্বারের কাজটা করে কোনোরকমে দিন কাটছিল। শান্তা চলে গেছিল ততদিনে বিয়ে করে। হঠাৎ একদিন মিরের সাথে দেখা হয়েছিল রাস্তায়। ও এখন ওলা চালায়। লোন নিয়ে একটা গাড়ি কিনেছে। সব শুনে ও বলেছিল একবার যখন ধর্ম বদলেছি আর একবার বদলালে শাখা সিঁদুর নয় ওর নামে মেহেন্দী আর কাচের চুরি পরতে পারবো আজীবন। আমার তখন একটা নিশ্চিত আশ্রয় আর একটা শক্ত কাঁধের প্রয়োজন ছিল। দু দিন পর ওর কথা মেনে এবার আয়েশা হলাম। এখন আমার এক ছেলে, ওকে স্কুলে দিয়ে এখানে এসেছি ঈদের বাজার করতে।"


আমি কথা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কি বলবো ওকে? চলে আসার আগে একবার ঐ বোরখা পরা মেয়েটার মধ‍্যে সেই উচ্ছল চঞ্চল লাজুক ধর্মভিরু মেয়েটাকে খুঁজেছিলাম... শিবরাত্রির উপোসের বদলে ও এখন রোজা রাখে! রথের দড়ি না টেনে ও নামাজ পড়ে। কিন্তু ও কি সত‍্যি সুখি? উত্তরটা আজও পাই নি!! ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সুখের খোঁজে ও বারবার ছুটে গেছে। কে জানে ও পেয়েছে কিনা সেই অলিক সুখের খোঁজ!

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

More bengali story from Debdutta Banerjee

Similar bengali story from Drama