arijit bhattacharya

Drama

1.0  

arijit bhattacharya

Drama

বসন্তের সেই সোনালী বিকাল

বসন্তের সেই সোনালী বিকাল

8 mins
1.5K


শুরু করলাম সাধারণ জীবনে অসাধারণ এক প্রেমের কাহিনী।


উফ্, ফাইনালি ট্রেন থেকে নামতে তো পারলাম।যা ভিড় ছিল এই শিয়ালদা-বনগাঁ লোকালে, বাপরে বাপ! লোকে যে কি করে এত ভিড় ট্রেনে বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করে বোঝাই যায় না। একে ট্রেনের সংখ্যা কম, তায় ট্রেন লেট। ভিড় তো হবেই, আর প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি চরমে পৌঁছেছে।এ ওকে ধাক্কা দিচ্ছে, ও আবার একে গালাগাল করছে। যাই হোক, ট্রেন থেকে নেমে অবশেষে স্বস্তি পেলাম।


ফেব্রুয়ারী মাসের অপরাহ্ণ , স্টেশনের নাম হৃদয়পুর, অর্থাৎ হৃদয়ের শহর। যদিও তেমন কোনো বড়ো শহর নয়, স্টেশন থেকে কিছু দূর গেলে গ্রাম পড়বে। স্টেশন বলতে মাত্র দুটো প্ল্যাটফর্ম, একটা শিয়ালদাগামী ডাউন ট্রেনের জন্য, আর একটা শিয়ালদা থেকে আগত আপ ট্রেনের জন্য।আর যেটা এখানকার বিখ্যাত সেটা হল দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে মা নীহারিকা বুক স্টল আর এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে দীনুদার চায়ের দোকান।


এটা ফেব্রুয়ারী, ফুলের মাস, প্রেমের মাস।ভ্যালেনটাইনস ডে , যা প্রেমিক আর কবিদের দিন , আসতে আর বেশি দিন নেই। প্রকৃতিরাণী অপরূপ সজ্জায় সেজে উঠেছেন। গাছের শাখা-প্রশাখা ভরে উঠেছে নতুন পাতা আর ফুলে।প্ল্যাটফর্মের ওপর দোকানীরা গোলাপের পসরা নিয়ে বসেছে। প্রেমের বার্তা নিয়ে বয়ে যাচ্ছে মর্মর দখিনা বাতাস।ফুটেছে লাল পলাশ।প্রকৃতিকে এত মোহময়ী দেখে হেসে উঠল নীল আকাশ।আকাশে বাতাসে প্রেমের গন্ধ। প্রকৃতিরাণী যেন তার সুমিষ্ট অনিন্দ্যকন্ঠে প্রেমের গান গেয়ে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘোষণা করছেন। বাতাস আমার কানের কাছে এসে প্রেমের কথা বলছে। আর এমন সময়ই আমার মনে পড়ল পৌলমীকে!


আমি শুভাশিস, শুভাশিস ভট্টাচার্য্য। ফিজিক্সের একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট এবং একজন শখের লেখক। আমি এখন থাকি সোদপুরের অমরাবতীতে ফ্ল্যাটে। আজকে হঠাৎই হৃদয়পুরে আসার কারণ জানাব না। সময়ের সাথে সাথে পাঠকই তা জানতে পারবেন। ধৈর্য ধরে একটু অপেক্ষা করুন।


পৌলমী, আমার প্রথম ক্রাশ, আমার প্রথম প্রেম। জানি না ঠিক কোন্ মুহূর্তে আমার ক্রাশ আমার ভালোবাসায় পরিণত হল বা ঠিক কোন্ সেই মুহূর্তে পূর্বরাগের উত্তেজনা পরিণত হয়েছিল অনুরাগের প্রশান্তিতে । কিন্তু , একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে, এই কাজে নিয়তি বা অদৃষ্ট বড়ো ভূমিকা নিয়েছিল।


আমি বারাসত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল হাই স্কুলে তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি আর হৃদয়পুরে তপনস্যারের কাছে যেতাম অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান আর জীবনবিজ্ঞানের প্রাইভেট টিউশন নিতে। আমি তখন হৃদয়পুরে মামার বাড়িতে থাকতাম।তপনস্যারের ব্যাচেই পৌলমীর সাথে পরিচয় হয়েছিল আমার। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যেটা আশ্চর্যের সেটা হল, আমার পূর্বরাগ বা infatuation চিরাচরিত স্টাইলে হয় নি। যখন প্রথম পৌলমীকে দেখলাম তখন ওর প্রতি আমার সেরকম কোনো প্রেম বা আকর্ষণের অনুভূতিই গড়ে ওঠে নি।তখন মেয়েদের থেকে একটু দূরত্বই রাখতাম বলতে গেলে। লাজুক ছিলাম আর সমবয়সী মেয়েদের একটু ভয়ই লাগত।


আর পৌলমী তো ছিল বারাসাত গার্লস হাইস্কুলের ফোর্থ গার্ল।তপনস্যার তো রীতিমতো ওকে নিয়ে গর্ব করতেন। ব্যাচে অঙ্কের পরীক্ষা হলে ও যে হায়েস্ট পাবে, এটা মোটামুটি আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে থাকত ।


আমিও অঙ্ক মোটামুটি পারতাম। সেবার এক কেলেঙ্কারি হয়ে গেল। তপনস্যার বললেন, তিনি এবার পুরো একশো মার্কসের এক্সাম নেবেন।আর সৌভাগ্যক্রমে বা দুর্ভাগ্যক্রমে আমি পেয়ে গেলাম হায়েস্ট মার্কস।ব্যাস, সেদিন স্যারের মুখে আমার প্রশংসা আর ধরে না। এইভাবে পৌলমীর সাথে গড়ে উঠল আমার অদ্ভূত এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আমরা হয়ে উঠলাম একে অপরের কম্পিটিটর। ব্যাচের মধ্যে আমাদের দুইজনেরই আলাদা আলাদা সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি হয়ে গেল। কেউ একে সাপোর্ট করছে , তো কেউ ওকে সাপোর্ট করছে।করতে লাগলাম একে অপরকে ঈর্ষা। আর এই প্রচণ্ড ঈর্ষা থেকেই তৈরি হল আমাদের বন্ধুত্ব।


মনের কোণে অনেকদিন ধরেই এই ইচ্ছাটা সুপ্ত ছিল যে, বন্ধুত্ব করব পৌলমীর সাথে। একটু কথা বলব। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় পৌলমী আমায় পাত্তাই দেয় নি, অনবরত ঝগড়া করে গেছে। কিন্তু, ক্লাস এইটে পড়ার সময় আমার সামনে এসে গেল সেই সুযোগ। একদিন জীবনবিজ্ঞান পড়ানোর সময় তপনস্যার আমার আঁকার খুব প্রশংসা করছিলেন। হঠাৎ এমন কি হল জানি না! দুম করে ছুটির পর পৌলমী আমার কাছে এসে বলল, "শুভ, তোর খাতাটা একটু দে তো!"অবাক হয়ে আমি ওকে খাতাটা দিলাম। ও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার আঁকাটাকে ( দ্বিবীজপত্রী কাণ্ডের প্রস্থচ্ছেদ)অনেকক্ষণ ধরে যাকে বলা যায় নিরীক্ষণ করল। তারপর জীবনে হয়তো এইবার প্রথম আমাকে প্রশংসাসূচক স্বরে বলল," শুভ, তুই সত্যিই খুব ভালো আঁকিস রে।তোর হাত খুব ভালো।আর পয়েন্টিংটাও খুব সুন্দর করিস।খুব সুন্দর।"


আমার তো এই শুনে মাথা ঘুরতে লাগল।যে এতদিনে কথায় কথায় আমার সমালোচনা করত, আজ তার মুখেই হঠাৎ আমার প্রশংসা।অদৃষ্টের মায়াবী খেলা ছাড়া একে কিই বা বলব!এরপর ধীরে ধীরে পৌলমীর সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে লাগল।"ধীরে ধীরে সে মেরি জিন্দেগী মে আনা, ধীরে ধীরে সে মেরি দিলকো চুরানা।"ধীরে ধীরে পৌলমী আমার জীবনে প্রবেশ করতে লাগল।


পৌলমী আর আমার বন্ধুত্ব তৈরি হতে লাগল।সেই বন্ধুত্বের পরিসর বলতে, অবসর সময়ে পড়াশুনা নিয়ে আলোচনা করা এবং কার কোন্ পরীক্ষার কেমন প্রিপারেশন চলছে তাই নিয়ে আলোচনা করা।এই ছিল টপিক! যাই হোক, এইভাবে বন্ধুত্ব তো হল!


সংস্কৃত ছিল পৌলমীর প্রিয় সাবজেক্ট।বলতে গেলে, আমারও অন্যতম ফেভারিট সাবজেক্ট ছিল সংস্কৃত।ভালোই পেতাম, কিন্তু স্কুলের হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষায় একেবারে রেকর্ড মার্কস পেয়ে বসলাম।99।স্কুলের স্যারেদের আনন্দ তো আর ধরে না।বলা বাহুল্য, এই কথা তপনস্যারের কানে গিয়ে পৌঁছাল।স্যার তো শুনেই stunned। কি বলবেন আর ভেবেই পাচ্ছেন না। কোনো রকমে তিনি বললেন, "বাপরে বাপ 99, বলিস কি!


সেদিন দেখলাম পৌলমী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। বাইরে বইছিল নভেম্বরের সকালের উত্তুরে হাওয়া। তপনস্যারের বাড়িটা গ্রামের দিকে। ভেসে আসছিল রাজহাঁসের ডাক।অনেকক্ষণ নির্নিমেষ নয়নে চেয়ে রইলাম পৌলমীর দিকে।আর পৌলমীও আমার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে রইল।ওর ঘন কালো কোঁকড়ানো চুল, অপরূপ টানা টানা আঁখি, রক্তিম ঠোঁটের মধ্যে কি যেন একটা যাদু ছিল-যেটা আমায় আকৃষ্ট করেছিল। বলা বাহুল্য, সেই প্রথমবারের জন্য পৌলমীকে ভালো লাগতে শুরু হল।এর নামই কি পূর্বরাগ! যা পরবর্তী ভবিষ্যতে পরিণত হতে চলেছে গভীর আবেগমথিত প্রেমে! কিন্তু একটা কথা এখনোও মনে আছে, আমার জন্য তখন যেন সময় মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল। পৃথিবী যেন পরিণত হয়েছিল এক স্বর্গোদ্যানে।এবং আমাদের চারিপাশ থেকে তপনস্যার এবং অন্যদের অস্তিত্ব মুছে গিয়েছিল ক্ষণিকের জন্য।হারিয়ে গিয়েছিলাম, জাস্ট হারিয়ে গিয়েছিলাম পৌলমীর ঐ দু'চোখের ভাষা পড়তে।ক্ষণিকের মধ্যে চমক ভাঙল। যাই হোক, কোথাও না কোথাও পৌলমীকেও স্থান দিয়েছিলাম।


ধীরে ধীরেই পৌলমীর সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গতা বাড়তে লাগল। ওর সাথে প্রচুর জিনিস নিয়ে আড্ডা-ইয়ার্কি ,হাসি ঠাট্টা হত। সেদিনের কথা আজও মনে আছে, তপনস্যারের ব্যাচে ছুটি হয়ে গেছে। দাদু তখনও এসে পৌঁছান নি। একসাথে আমরা রবিদার দোকান থেকে দই ফুচকা খেয়েছিলাম। দই-ফুচকার স্বাদ তো খুবই ভালো, কিন্তু তা যদি ক্রাশের সাথে খাওয়া যায় , তাহলে তার স্বাদ যে আরও মধুর লাগে, তা নিঃসন্দেহে।


কতোবার ভেবেছি যে, ওর হাতের আঙুল একটু ছুঁয়ে দেখি।ওর মাথার চুলের স্পর্শ অনুভব করি। তবুও, ওকে তো কখনোই কাছে পাই না।কবে যে আসবে আমার প্রথম প্রেমের স্পর্শ আর গন্ধকে অনুভব করার সুযোগ!


ক্লাস নাইনে পড়ার সময় রীতিমতো পৌলমীর প্রেমে ডুবে গেলাম। হরিণীর মতো ওর ঘন কৃষ্ণ চক্ষু রীতিমতো আমার ঘুম কেড়ে নিল! ও কিছুটা শ্যামবর্ণ ছিল। ওকে দেখলে আমার কেবলই মনে হত,"কৃষ্ণকলি, আমি তারেই বলি...........................দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।"কিছুটা হয়তো মোটা ছিল, কিন্তু আমি বা ত কোনোদিন ফিগার নিয়ে খুঁতখুঁতে ছিলাম না। তাই, এটা আমার প্রেমে পড়ার পথে কোনোদিনই বাধা হয়ে ওঠে নি। কতোরাত স্বপ্ন দেখেছি, বৃষ্টিতে একসঙ্গে ভিজবার, ওর ঘাড়ে চুম্বন করার, পূর্ণিমার রূপোলী জ্যোৎস্নালোকে প্রেমাস্পদার হৃদস্পন্দন অনুভব করার।শীতে দিগন্তবিস্তৃত সর্ষেক্ষেতের মধ্যে প্রেমাস্পদার আলিঙ্গনে ধরা দেবার। মনের মধ্যে ভাসছিল প্রেমের ঢেউ। কল্পনার জগতে ভাসতাম আমার প্রেমগাথা নিয়ে।


ইচ্ছা ছিল, যখন শ্রাবণের পটভূমিতে আকাশ ভরে উঠবে ঘন কালো মেঘরাজিতে এবং শোনা যাবে, রঙিন পেখম মেলা ময়ূরের কেকাধ্বনি ,তখন আমি শ্রীকৃষ্ণের মতো বাঁশি বাজিয়ে ডাকব আমার পৌলমীকে আর শ্রীরাধিকার মতো পৃথিবীর সকল আকর্ষণ ছেড়ে নীল শাড়ি পরে ছুটে আসবে পৌলমী। আর বর্ষারাতে, যখন ঘন ঘন বিদ্যুল্লতা চমকাবে, তখন হবে আমাদের প্রেমের মিলন।


বাদলা হাওয়া কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলবে প্রেমের কথা। আর আমি অনুভব করব, সূর্যমুখী ফুলের মতো পৌলমীর স্তনের স্পর্শ। সত্যিই , প্রেমের স্বর্গে যেন ভাসছিলাম। " বাদলধারা বহিছে আজিকে, যেমনই অলকানন্দা।" হৃদয়ে রিনরিনিয়ে বাজত এই সুরলহরী।


এইভাবে বাড়ছিল মানসিক চাঞ্চল্য। পড়াশুনার ক্ষতি হতে লাগল। জীবনের এই মোড়ে এমন একজন মানুষের সাথে আমার পরিচয় হল , যিনি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি হলেন আমাদের স্কুলের বাংলার নতুন শিক্ষক ভাস্করদা-ভাস্কর চক্রবর্তী।


ভাস্করদা একদিন পড়াতে পড়াতে এক দারুণ কথা বলেছিলেন। "প্রেম মানে চাঞ্চল্য নয়, প্রেমের অর্থ প্রশান্তি। প্রেম মানে দুর্বলতা নয়, প্রেম হল হৃদয়ের প্রসারতা।মনের গভীরতা। প্রেমের অর্থ ভোগ নয়,প্রেমের অর্থ হল ত্যাগ।"ক্লাস টেনে বাংলা পড়ানোর সময় কোনো একটা প্রসঙ্গে বলা ভাস্করদার এইসব কথা আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল।দাগ কেটেছিল আমার মনে। আমার পুরানো চিন্তাভাবনার প্রতি এ ছিল এক দমকা হাওয়া।ধীরে ধীরে এইভাবে প্রেম সম্পর্কে পাল্টালো উপলব্ধি।পেলাভ এক অদ্ভূত মানসিক প্রশান্তি। চতুর্দিকে যেন পাহাড়ের পরিষ্কার হাওয়া বইছে। এক অপূর্ব অনুভূতি, যা দেহ ও মনের পক্ষে অত্যন্ত শুভময়!অত্যন্ত মঙ্গলদায়ক।


ধীরে ধীরে পৌলমীর ভালোবাসা অনুভব করতে লাগলাম প্রকৃতির মধ্যে। এজন্য পৌলমী অনেক দূরে থাকলেও কোনোদিন ওকে মিস করি নি। বসন্তের দখিনা হাওয়ার মধ্যে অনুভব করতাম পৌলমীর শ্বাস, পৌলমীকে অনুভব করতাম শরতের নদীর ধারে কাশফুলের ঢেউয়ের মধ্যে, কোকিলের কুহুতানের মধ্যে ছিল পৌলমী, শীতের ভোরে ঘাসের আগায় জমে থাকা মুক্তার মতো শিশিরবিন্দুর মধ্যে অনুভব করেছি পৌলমীর ভালোবাসাকে।মাধ্যমিকের পর যখন ভোলাদাদুর সাথে টেরাকোটার শহর বিষ্ণুপুর বেড়াতে গেলাম, তখন মন মাতাল করা লাল পলাশ আর শাল-শিমূল-মহুয়া বনের মধ্যে উপলব্ধি করেছিলাম পৌলমীকে।তখন পৌলমীর থেকে দেড়শো মাইল দূরে ছিলাম, কিন্তু আমাদের মানসিক দূরত্ব একেবারেই তৈরি হয় নি ।


পৌলমীর সাথে ক্লাস ইলেভেনে একসাথে পার্থ স্যারের বাংলা টিউশনির ব্যাচে ভর্তি হলাম। স্যার যখন পড়াচ্ছিলেন সৈয়দ আলাওলের 'পদ্মাবতীর বিবাহমঙ্গল ' ,সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতীর মধ্যে অনুভব করেছিলাম পৌলমীকে।হারিয়ে গিয়েছিলাম সুদূর কোনো অতীতে!


ভেজা খোলা চুলে কতোবার পৌলমী আমার কল্পনায় এসেছে। স্বপ্নে ওকে কতোবার আলিঙ্গন করেছি!


কতোবার ভেবেছি পৌলমীকে প্রপোজ করি, ওকে নিজের মনের কথা খুলে বলি। কিন্তু; লজ্জা, ভয় বা আমার চিরাচরিত দোনামনা ভাবের জন্য বলতে পারি নি। ভেবেছিলাম, উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই ওকে প্রপোজ করব।কিন্তু, সে আর হয়ে ওঠে নি!


এসময় আমার জীবনে আসে আরেক পরিবর্তন। হৃদয়পুরের মামাবাড়ি ছেড়ে চলে আসি সোদপুরে নিজেদের বাড়িতে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হলাম। আবাসিক হোস্টেলে থাকতাম।ফেসবুকে পৌলমীর সাথে যোগাযোগ অটুট ছিল, নিয়মিত চ্যাটিংও হত। কিন্তু, আমি ঠিক করেছি যে, নিজের গোপন অনুভূতি যা এতদিন ধরে মনের গভীরে আমি সযত্নে লালন -পালন করেছি, তা ওকে সামনা সামনিই বলব।খুলে দেব মনের দরজা!


তাই দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবার ফিরছি হৃদয়পুর।ফিজিক্সে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছি নরেন্দ্রপুর থেকেই, লেখালেখির জগতেও কিছুটা নাম হয়েছি। সাহিত্য আনন্দের মতো ম্যাগাজিনেও আমার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।এছাড়া প্রতিলিপি তো আছেই!আজ বসন্তের বিকালে যে পৌলমীর সাথে দেখা করব, একথা ফেসবুকে ওকে আগেই জানিয়ে রেখেছি। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে যে কথা বলতে পারি নি, সে কথা বাস্তবের মাটিতে পা রেখে ওর চোখে চোখ রেখে ওকে সরাসরিই জানাব। জানি না, ও কি উত্তর দেবে!তবে আমার মনের কথা আজ আমি খুলে বলবই।


বসন্তের বিকালে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য অপরূপ। অপরূপ নীল আকাশ আর রক্তকে আরও রোম্যান্টিক করে তুলে বইছে দখিনা বাতাস।কতো সুন্দর এই পৃথিবী আজ! নবরূপে প্রকৃতিরাণী আজ সজ্জিতা, ধরণীর বুকে সদর্পে বিরাজে বসন্ত।


------------- সমাপ্ত---------------------


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama