শঙ্খচূর্ণী
শঙ্খচূর্ণী


গ্রাম বাংলায় শাঁকচুন্নী বা শঙ্খচূর্ণী অতি পরিচিত বা আরো ভালো করে বললে অতিপরিচিতা। লোককথা অনুযায়ী,কোনো সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীর মৃত্যু হলে তার আত্মার যদি সদগতি না হয়,তবেই তা শাঁকচুন্নীতে পরিণত হয়। এদের হাতে শাঁখা থাকে। খোলা চুলে এরা আমগাছের ওপর বসবাস করে এবং পুরুষ দেখলে তাদের নানাভাবে প্রলোভিত করে। এরকমই এক শাঁকচুন্নীর গল্প আজ শোনাব।
আলুয়াবাড়ি রোডের কাছেই সুন্দর স্নিগ্ধ গ্রাম হুসলুডাঙা। এখানেই বেড়াতে এসেছে শিবনাথ। সে আগেই জনশ্রুতি শুনেছে,শনিবার রাতে নাকি এখানে শাঁকচুন্নী ঘুরে বেড়ায়। এর আগেও গ্রামে তিনজন অবিবাহিত পুরুষের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। তিনজনেই হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মারা গিয়েছে,কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সবার শরীরে বিন্দুমাত্রও রক্ত ছিল না,বিস্ফারিত চোখের তারায় অজানা ভয় সুস্পষ্ট। গ্রামবাসীদের ধারণা তিনজনকেই শাঁকচুন্নীতে মেরেছে। এইসব কথায় বিশ্বাস করে না শিবনাথ। আজ শনিবার,তায় পূর্ণিমা।গ্রামের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে শিবনাথ। একেই গ্রামবাঙলা শস্যশ্যামলা,তারওপর এখন মায়াবী চন্দ্রালোকে সমগ্র বিশ্বচরাচরকে অপূর্ব লাগছে। প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে খোলা মনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল শিবনাথ। হঠাৎই দেখল লাল শাড়ি আর মূল্যবান অলঙ্কারে সুসজ্জিতা একজন সদ্যবিবাহিতা তরুণী খোলা চুলে ঝিলের ধারে বসে কাঁদছে। হাতে শাঁখা। ভেসে আসছে আতরের সুগন্ধ।এতো রাতে,এ তো সাধারণ গাঁয়ের মেয়ে নয়,নিশ্চয়ই কোনো ধনী পরিবারের মেয়ে হবে।কিন্তু এতো রাতে কি করছে! আর এমন করুণ সুরে কাঁদছেই বা কেন। মেয়েটার কাছে গিয়ে পিছন থেকে ডাকল শিবনাথ। "কে তুমি,এমন করে কাঁদছই বা কেন!" চুপ করল মেয়েটা। এবার শিবনাথের দিকে ফিরল। মেয়েটা শিবনাথের দিকে ফিরতেই আতঙ্কে আঁতকে উঠল শিবনাথ। মেয়েটার মুখের জায়গায় সাদা নরকরোটি,চোখের জায়গায় অক্ষিকোটর,আর আর সেই কোটরে নরকের আগুন জ্বলছে। খিলখিল অপার্থিব স্বরে হেসে উঠল তরুণী। না আর পারল না শিবনাথ,উত্তেজনা,বিস্ময় আর আতঙ্কে হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে গেল তার। পরের দিন ঝিলের ধারে পাওয়া গেল শিবনাথের রক্তশূন্য মৃতদেহ।বিস্ফারিত হয়ে যাওয়া চোখের তারায় আতঙ্ক সুস্পষ্ট।