Sanghamitra Roychowdhury

Horror

3.6  

Sanghamitra Roychowdhury

Horror

মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক) ৪

মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক) ৪

2 mins
4.0K


মায়ার ছায়া (ধারাবাহিক)


শ্রীতমা হাসপাতাল থেকে সোজা গাড়ীতে করে বাবা মায়ের সাথে কলকাতায় রওনা হয়েছে। অনুভব এখন ক'দিন ডাঃ আসলামের সাথেই থাকবে। ওরা কোয়ার্টার ছেড়ে দিয়েছে। সেদিন হাসপাতাল থেকে ডিউটি সেরে প্রায় ভোররাতে কোয়ার্টারে ফিরে অনুভব গেটের সামনে শ্রীতমাকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। সর্বাঙ্গ সপসপে ভিজে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। সম্ভবত দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যাওয়ার জন্য কপালে গভীর ক্ষত। অনুভব নিজেই কোনোরকমে শ্রীতমাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর পাক্কা দশটা দিন আধো অচৈতন্য অবস্থায় ছিলো শ্রীতমা। কলকাতার বাড়ী থেকে মা বাবাকে খবর দিয়ে আনিয়েছে অনুভব। হাসপাতালের সহকর্মীরাই দু'হাতে আগলে শ্রীতমার চিকিৎসা, সেবা, শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুলেছে। তবে অনুভব আর শ্রীতমাকে ঐ কোয়ার্টারে আর থাকতে ওখানকার সবাই মানা করেছে। বিজ্ঞানের ছাত্র ডাক্তার অনুভবের যুক্তি বুদ্ধিও যেন এই ঘটনায় কেমন একটু থমকে দাঁড়িয়েছে।


অনুভবের ব্যাখ্যায় হয়তো ঐ মেয়েটাকে দেখা একটা হ্যালুসিনেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। তবুও ওদের ওখানকার স্থানীয় মানুষের কথা একেবারে উড়িয়ে দিতেও পারে নি, কেবলমাত্র শ্রীতমার নিরাপত্তার কথা ভেবেই। যে ঘটনা ঘটেছিলো, তাতে আরও বড় রকমের বিপদ হতে পারতো। অকারণ ঝুঁকি নেওয়া সমীচীন হবে না। তাই আপাতত শ্রীতমা কলকাতায় থাকুক, আর অনুভব আসলামের সাথে মেস করে।


হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মেসে যাবার পথে কোয়ার্টারের গেটটার দিকে তাকিয়ে অনুভবের গাটা শিরশির করে উঠলো। যদি শ্রীতমার সাথে আরও খারাপ কিছু হয়ে যেতো? আগে কানাঘুষো শুনেছে, পাত্তা দেয় নি অনুভব একেবারেই। গত বছর দশেক আগে মায়া নামের মাওবাদী মেয়েটি পুলিশের সাথে সংঘর্ষে, নাকি অন্যকোনো ভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম অবস্থায় ঐ খালি কোয়ার্টারের গেটের সামনে পড়ে মারা যায়। আশ্রয় অথবা চিকিৎসার সন্ধানে এসেছিলো হয়তোবা। জানা নেই। বডিটা পড়েছিলো, সেটা অনেকেই দেখেছিলো। সেদিনও শীতের ও বৃষ্টির এবং অমাবস্যার অন্ধকার রাত ছিলো। তারপরে অবশ্য জানা গিয়েছিলো মেয়েটির নাম মায়া। তারপর থেকে বেশ কিছু মানুষই নাকি প্রায়ই বৃষ্টির রাতে অথবা অমাবস্যার রাতে ওখানে একটা মেয়ের বডি পড়ে থাকতে দেখেছে। যুক্তি ও তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নেওয়া গেলো, এই ঘটনা জানা থাকায় বিভ্রান্তিবশতঃ মানুষের হ্যালুসিনেশন ঘটছে। কিন্তু শ্রীতমার ক্ষেত্রে কী করে হ্যালুসিনেশন ঘটবে? শ্রীতমা তো এই ঘটনার কথা শোনেই নি। তাছাড়া শ্রীতমা যথেষ্ট সাহসী মেয়ে, ভয় পেয়ে ভুলভাল বলবে বলেও মনে হয় না। অনুভবের খুবই ভুল হয়েছিলো এমন এক পাণ্ডব বিবর্জিত প্রান্তিক শহরে শ্রীতমাকে নিয়ে ঐরকম নিরিবিলি এক কোয়ার্টারে থাকতে আসা। অন্যরকমের বড়সড় বিপদের হাত থেকে যে শ্রীতমা রক্ষা পেয়েছে, তাই যথেষ্ট। নাহ্, এবার ছুটি নিয়ে কলকাতায় গিয়ে একটু তদ্বির করবে কোনো বড় জেলা শহরে বা কলকাতায় যাতে ট্রান্সফার পাওয়া যায়। নিজের অজান্তেই অনুভবের চোখটা আবার বন্ধ কোয়ার্টারের বন্ধ গেটের দিকে চলে গেলো, যেখানটায় শ্রীতমা হয়তো মায়ার ছায়া দেখেছিলো, অন্ততঃ ওর তেমনই দাবী!

আর সত্যিই তো, সেদিন তো অমাবস্যাই ছিলো, তাই তো রামরতিও দুপুরেই ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছিলো।

যুক্তিবাদী ডাঃ অনুভব সেনগুপ্তের শিরদাঁড়া বেয়ে এক শিরশিরে শীতল স্রোত নেমে গেলেও, মাঘী শীতেও কপালজোড়া বিন্দু বিন্দু ঘাম।


Rate this content
Log in