Himansu Chaudhuri

Abstract Horror

4  

Himansu Chaudhuri

Abstract Horror

দর্পণে কার মুখ

দর্পণে কার মুখ

8 mins
5.6K



হিমাংশু চৌধুরী 


দর্পণে কার মুখ


ঠিক দুপুরবেলা, যখন কেউ কোত্থাও নেই, যখন বাইরে থেকে মাঝে মাঝে কোন অজানা পাখির ডাক ভেসে আসে, রাস্তা দিয়ে কখনো চলে যাওয়া রিক্সা বা ভ্যানগাড়ির বা সাইকেলের স্পোকের সাথে কেন্দ্রীয় প্লাস্টিক বুরুশের ঘষা লাগার কিরিকিরি আওয়াজ শোনা যায় মাঝে মাঝে, কখনো বা বেলের ট্রিং ট্রিং আওয়াজ, এই বন্ধ্যা কলকাতার অবশিষ্ট দু একটা গাছের ধূলিধূসরিত পাতা যখন মাঝে মাঝে হাওয়ায় নড়ে একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ে আহ্লাদে খসখস আওয়াজ করে যার মৃদু রেশ শোনা যায়,  কোন অটোয় লাগানো টেপের ঝিনচ্যাক গানের হঠাৎ শোনা এক মুহূর্ত যেন ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা অপসৃয়মান দৃশ্যাবলী অথবা আর কিছুই শোনা যায় না নিস্তব্ধতার শব্দ ছাড়া, ঠিক সেই সময়, সাততলার উপরে বন্ধঘরের মধ্যে বিষণ্ণ দুপুরযাপন করতে করতে সুরমাকে ডাক দেয় আর এক সুরমা। হাতছানি দেয়, প্রলোভন দেখায়, বলে, এসো সুরমা, দেখো কত্ত সুখ। দেখো, এখানে কত লোকজন, কত বন্ধু, তোমার স্কুলবেলা, কলেজবেলা, ছেলেবেলা, তোমার মা বাপি, তোমার না হওয়া বাচ্চাটা, তোমার বন্ধু, তোমার অরণি, সব দেখো এখানে আছে। মাথার মধ্যে বিনবিন করে একই কথা বলে চলে অন্য সুরমা। এসো দেখো। কেউ জানবেনা, তুমি চুপটি করে এসে ঘুরে যাও একবারটি। অনুনয় করে, মিনতি করে।


মাঝে মাঝে, ঐ মাসের মধ্যে বিশেষ দুচারদিন, যেদিনগুলোয় সুরমা মাথার মধ্যে থেকে ঐ ইশারাগুলো বের করে দিতে পারে না, এড়াতে পারেনা আমন্ত্রণ, সেদিনগুলোয় ও দুপুরে খাট থেকে নেমে যায় আয়নার ধারে। দর্পণে প্রতিচ্ছবি পড়ে, সব বেবাক উলটো। এই দিনগুলোয় এই মুকুরে ছায়া পড়ে উলটোদিকের দেয়ালে টাঙানো ল্যান্ডস্কেপটার। অনিমেষ যেটা নীলামে নিয়ে এসেছিলো এই প্রমাণ সাইজের আয়নাটার সাথে, পার্ক স্ট্রিট এর নীলামঘর থেকে। ছবিটার পাশে সুরমার ঘরের দরজার প্রতিচ্ছবি, কিন্তু যেন ঠিক উলটো নয়। সুরমার মনে হয় এখানেই, এখানেই তার থাকার কথা, এই আরশিনগরে। কিন্তু কি করে যাওয়া যাবে আরশিনগরে? ছটফট করে ও, ওদিকে দর্পণ থেকে অন্য সুরমা ডেকেই যায়, এসো, এসো সুরমা। দেখে যাও, এখানে গ্লানি নেই, অনিমেষ নেই, মাঝরাতে নৈর্ব্যাক্তিকভাবে অনিমেষের সাথে সম্পূর্ণ ভালোবাসাহীন যান্ত্রিক ভালোবাসার অভিনয় নেই। এখানে অরণি আছে। এসো সুরমা, এসো। সুরমা রোজ রোজ এই ডাক শোনে নিশির ডাকের মতো, যেতে চায়, কিন্তু ভেবে পায় না কি ভাবে যাবে।


আজও,তখন থেকে অন্য সুরমা তাকে ডেকেই যাচ্ছে ফিসফিস করে। সুরমা আর সহ্য করতে পারে না, দর্পণের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অন্য সুরমা প্রশ্ন করে, আসবে সুরমা, এখানে আসবে? সে অসহিষ্ণু হয়ে বলে, যাবো, কিন্তু কি করে? কি করে যাবো তোমার ওখানে? অন্য সুরমা বলে, সোজা, তুমি আমার জায়গায় এসো, আমি তোমার জায়গায়। কিন্তু কি করে, কি ভাবে আমি তোমার কাছে যাবো? অন্য সুরমা বলে, পারবে, চেষ্টা করলে পারবে। খুব চেষ্টা করো। সুরমা দর্পণে অন্য সুরমার ছায়ামুখে মমতাময়ী মায়াহাত বোলায়। তারপর আঙুল বোলায় তার গায়ে, সেখান থেকে আস্তে আস্তে আঙুল সরিয়ে নিয়ে আসে পুরনো ল্যান্ডস্কেপে, তারপর নিয়ে আসে তার ঘরের বন্ধ দরজায়। 


বুক ধ্বক করে ওঠে সুরমার। সে উপলব্ধি করে, মায়ামুকুরে তার ঘরের দরজার ছায়া পড়েছে ঠিকই, কিন্তু এ যেন ঠিক তার ঘরের দরজা নয়। ঐ দরজার আড়ালেই আছে তার আরশিনগর। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে ওর, শিরশিরানি হয়, বুঝতে পারে, সামান্য ঠেলা দিলেই খুলে যাবে দরজা, তারপরে, তারপরে কি হবে? 


চোখ বন্ধ করে দরজায় ঠেলা দেয় সুরমা, বুঝতে পারে যে দরজা খুলে গেলো। ভয়ে ও চোখ খুলতে পারে না। পুকুরে স্নান করার সময়ে জলে ডুব দিয়ে চুপ করে থাকলে যেমন কানের মধ্যে ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজ হয়, আর মাথাটা ক্রমশ ভারী হতে থাকে, সেরকম সুরমারও মাথাটা ক্রমশ ভারী হয়ে উঠতে থাকে। এরপরে আওয়াজটা বাড়তে বাড়তে যখন অসহ্য হয়ে ওঠে, তখন সুরমা চোখ খুলে ফেলে। দেখে ঘোর দুপুরে সে কলকাতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। 


রাস্তায় গাড়ি চলছে, লোকজন হাঁটছে, ট্রিংট্রিং ঘন্টা বাজিয়ে ট্রাম চলছে, পাশ দিয়ে বিপুল বেগে জগঝম্প গান বাজিয়ে চলে গেল একটা কালো রঙের অটো। সুরমা সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। রাস্তাগুলো যেন ভিডিও ফাস্ট ফরোয়ার্ড করার মতো দ্রুত পিছনে চলে যাচ্ছে।। হঠাৎ সুরমা তাকিয়ে দেখে সে দঁড়িয়ে আছে ডালহাউসির মোড়ে, সামনেই অনিমেষের অফিস। তিনতলায় অনিমেষের অফিস। ইম্পোর্ট এক্সপোর্ট এর ব্যবসা। একটা গোটা ফ্লোর জুড়ে ওর অফিস। পঁচিশ তিরিশজন স্টাফ। সুরমা আগে দুএকবার এসেছে এখানে। লিফট দিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে এসে তিরুপতি ট্রেডার্স লেখা কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে সুরমা। 


ভিতরে সবাই আপনমনে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। সুরমা ঢুকলো, কেউ ফিরেও তাকালো না। ম্যানেজিং ডাইরেক্টর লেখা কেবিনের বাইরে টুলে বসে ঝিমোতে থাকা বেয়ারা রতন বোধ হয় তাকে খেয়ালই করেনি, লাল আলো উপেক্ষা করে দরজা ঠেলে ঢোকার আগে ভাবলো সুরমা।


ভিতরে অনিমেষ তখন একমনে ওর সেক্রেটারি ঋতমার ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে, ওর বাঁ হাত যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াচ্ছে ঋতমার সংক্ষিপ্ত ব্লাউজের উপরে মোম পিছল পিঠে। বুড়ো আঙুল আর তর্জনি মাঝে মাঝে চেপে ধরছে, হাত বোলাচ্ছে মহার্ঘ্য গোলাপি মুক্তোর নেকলেসটাকে। ডান হাত কখনো ঋতমার উদ্ধত বুকে, কখনো বা পেটে, আবার কখনো তার সঘন নিতম্ব সাপটে ধরছে। অনিমেষ চেয়ারে বসে আর ঋতমা ঈষৎ সামনের দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে সে অনিমেষের সামনে উবু হয়ে বসে পড়ে। এতক্ষণে, ঋতমা সুমনার দৃষ্টি অবরোধ করেছিলো, সুরমার মনে ক্ষীণ আশা ছিলো, হয়তো দেখবে ঋতমার সামনের ব্যাক্তিটি অনিমেষ নয়, যদিও তর্জনীতে নীলার আঙটিটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু ঋতমা বসে পড়ায় সেই বাধা সরে গেল, এবং সুরমা দেখলো স্পষ্টতই অনিমেষ এক নিবিড় আশ্লেষে আবিষ্ট হয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।


সুরমা খুব নৈর্ব্যক্তিকভাবে চেয়ে থাকে ঘটমান বর্তমানের দিকে। সামনে যে নাটক অভিনীত হচ্ছে, তাতে তার ভূমিকা নিয়ে কোন সংশয় নেই, যদিও সে যেন এসবের অনেক উর্ধে। দ্রুত সময় কেটে যায়, অনিমেষের দিকে সে অনিমেষনেত্রে চেয়ে থাকে, অপেক্ষা করে, কখন অনিমেষ চোখ খুলে তাকে দেখবে। একটু উল্লসিতাও হয়, এই ভেবে যে, যাক এরপরে তাকে আর অনিমেষের অঙ্কশায়িনী হতে হবে না। অনিচ্ছুক সঙ্গমকৃত্য আর না করলেও চলবে। সে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে, অনিমেষের চোখ খোলার জন্য।


চরম মুহুর্তে অনিমেষ অস্ফুট শব্দ করে। তার চোখ পট করে খুলে যায়, ছন্দোবদ্ধভাবে তার শরীর কেঁপে ওঠে কয়েকবার। চোখের মণি দ্রুত প্রসারিত সঙ্কুচিত হয় তার সাথে তাল মিলিয়ে। সুরমা এমন স্পষ্টভাবে তা দেখতে পায়, যেন, পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনিমেষ একবার তৃপ্তিদায়ক শ্বাস ফেলে ফের চোখ বন্ধ করে ফেলে, ঋতমা তার ডান হাতে রুমাল নিয়ে মুখ মুছতে ব্যাস্ত থাকে, আর তখন, ঠিক তখনই, সুরমা বুঝতে পারে, ওরা তাকে দেখতে পাচ্ছে না।


অসম্ভব প্রতিশোধস্পৃহায়, যা কিনা জন্ম নেয় এই বোধ থেকে যে, এর পরেও, অনিমেষ যখন ফিরে যাবে বাড়িতে, তাকে এক বিছানায় শুতে হবে, সুরমা পৌঁছে যায় টেবিলের পাশে, হাতে তুলে নেয় টেবিলে রাখা ছ ইঞ্চি ফল কাটা ছুরিটা আর আমূল বসিয়ে দেয় ঋতমার ঘাড়ে, দুই কশেরুকার মাঝখানে। তারপরে হতচকিত অনিমেষকে উপেক্ষা করে সে বেরিয়ে আসে বাইরে। রতন ততক্ষণে, ঋতমার আর্তনাদ শুনে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। অনিমেষ তখন হতবুদ্ধি হয়ে বসে আছে চেয়ারে, প্যান্টের উপরিভাগ খোলা, সেখানে মুখ গুঁজে পড়ে আছে ঋতমা, নিশ্চিত ভাবেই মৃত। তার ঘাড় থেকে রক্ত পড়ে ভিজে যাচ্ছে অনিমেষের প্যান্ট আর দামী কার্পেট। রক্তের একটা সরু ধারা ঋতমার ফর্সা ক্ষণপুর্বের আবেদনময়ী উন্মুক্ত পিঠ বেয়ে নেমে এসে তার ব্লাউজের গাঢ় লাল রঙকে কালচে লাল করে তুলছে। 


টকটক করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে সুরমা কলকাতার অরণ্যে। পুরো ব্যপারটাই একটা দুঃস্বপ্ন বলে মনে হয় ওর। কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে ভেবে বাপের বাড়ির রাস্তা ধরে। নিমেষে পৌঁছে যায় যাদবপুর। এইট বি বাস স্ট্যান্ড থেকে ডাইনে ঘুরে মিনিট পাঁচেক হেঁটে সে অনায়াসে এসে যায় বাড়ির সামনে। পুরনো একতলা বাড়িটা তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে। অন্ধকার, দরজা ঢেকেছে মাকড়শার জাল। আগাছায় ভর্তি চারিপাশ। মা বাবা মারা গেছেন প্রায় তিন বছর হয়ে গেলো, এখানে আর তাদের কি করে পাওয়া যাবে? একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সুরমা রওনা দেয় অরণির বাড়ির দিকে। সেই অরণি, যে তাকে ছাড়া বাঁচবে না বলেছিলো, চাকরি না থাকায় বাবা যার সাথে বিয়ে দেয় নি। দিব্যি তো বেঁচে আছে অরণি। বাড়ির নেমপ্লেটে জ্বলজ্বল করছে অরণি সেন আর শ্রেয়া সেন এর নাম। মরেছে শুধু সুরমা।এখন দুপুরবেলা, বাড়িতে অরণি থাকবে না, তবে ওর বৌ তো আছে। যে সংসারসুখ সুরমার পাওয়ার কথা, তা ভোগ করছে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা এই মেয়ে। একদিন, বহুদিন আগে, বোধ হয় গত জন্মে, কলেজ থেকে সুরমা চলে এসেছিলো, অরণির সাথে, ওর বাড়িতে সেদিন কেউ ছিলো না, ঐ ঘরে, ঐ বিছানায়ই কি এখন শ্রেয়া আর অরণি- আর ভাবতে ইচ্ছে করে না সুরমার। ঋতমার পরে কি তাহলে শ্রেয়া? হি হি করে হেসে ফেলে সুরমা। গেট খুলে ভিতরে ঢোকার জন্য পা বাড়িয়েছে সবে, এমন সময় একটা দু বিনুনি করা মিষ্টি বাচ্চা দৌড়ে চলে আসে বারান্দায়, আমায় ধত্তে পায়ে না, আমায় ধত্তে পায়ে না বলতে বলতে। পিছনে জলের বোতল হাতে এক দীর্ঘাঙ্গী নারী, স্পষ্টতই অরণির মেয়ে আর বৌ, শ্রেয়া। অনিমেষের উপর ঘেন্নায় অ্যাবরশন না করলে, আজ সুরমারও এরকম একটা বাচ্চা থাকতে পারতো। বাচ্চাটার অপাপবিদ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে বিষণ্ণতা একটু একটু করে কাটতে থাকে সুরমার। সে ফিরে চলে নিজের বা অনিমেষের বাড়ির দিকে।


এবারে নিজের বাড়িতে সাততলার ফ্ল্যাট। এতক্ষণে হয়ে যাওয়া অভ্যাস মতো দরজা ঠেলে ঢুকতে গিয়ে সুরমা দেখে, দরজা বন্ধ। বেল বাজায়, কিন্তু দরজার ওধারে কোন শব্দ শোনা যায় না। কি করবে বুঝতে না পেরে চুপ করে সে দাঁড়িয়ে থাকে। এতক্ষণে ওর মাথায় ঝিঁঝিঁপোকার ডাকটা ফের ফেরত চলে আসে। আওয়াজটা বাড়তে বাড়তে প্রায় সমুদ্রগর্জনের মতো হয়ে ওঠার মুহূর্তে ও চোখ খুলে দেখে, সামনে আলোকিত এক চৌকো গহ্বর। আর কোন রাস্তা নেই দেখে সে পা বাড়ায় ঐ গহ্বরের দিকে, আর তখনই সিঁড়িপথের দিকে তাকিয়ে দেখে চারিদিক থেকে এগিয়ে আসছে আরো অনেক গুলো সুরমা, দশটা, বিশটা- অগুন্তি। তারা এসে পৌঁছোবার আগেই গহ্বরের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়, আর সুরমা সামনে তাকিয়ে দেখে, স্বচ্ছ এক পর্দার মধ্য দিয়ে তার শোবার ঘরটা দেখা যাচ্ছে। ওখানে শুয়ে আছে যে, সে সুরমা না অন্য সুরমা? ঠিক বুঝতে পারে না সে। তবে এটুকু বুঝতে পারে যে, ঐ সুরমা যতক্ষণ না এখানে আসছে, ততক্ষণ সে আরশিনগরেই বন্দী। সামনে দাঁড়িয়ে সে অন্য সুরমার কাছে বার্তা পাঠাতে থাকে, এসো,এসো সুরমা, দেখো এখানে কত্ত সুখ! এখানে অরণি আছে, অনিমেষ নেই। এখানে তুমি আছো, আবার তুমি নেইও। বারবার বলতে থাকে সে ফিসফিস করে, আর বিছানায় ছটফট করতে থাকে সুরমা, অথবা অন্য সুরমা। অবশেষে, কতক্ষণ পরে কে জানে, অন্য সুরমা বা সুরমা কেউ একজন এসে দাঁড়ায় সামনে। যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসে তার গলা, যাবো কিন্তু কি করে যাবো? এই সুরমা অন্য সুরমাকে বলে, চেষ্টা করো, ঠিক পারবে। খুব চেষ্টা করো, সুরমা। অন্য সুরমা চোখ বন্ধ করে আরশিনগরে বন্দিনী সুরমার গায়ে মমতাময়ী স্পর্শন করতে থাকে, তারপরে একসময় তার হাত নেমে আসে সুরমার দেহ থেকে, পাশেই একটা অদৃশ্যপ্রায় বাধাকে ঠেলে সে সরিয়ে দেয়। তারপরে অন্য সুরমা এই সুরমা কোনটা কে সব গোলমাল হয়ে যায়।


হঠাৎ চমকে বিছানায় উঠে বসে সুরমা। দরজায় দুমদুম ধাক্কার আওয়াজ হচ্ছে। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রনা। কোনরকমে উঠে দরজা খোলে সুরমা। কাজের মেয়ে মঞ্জু খুব উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার বেডরুমের বাইরে। সুরমাকে দেখতে পেয়েই ফিসফিস করে বলে, পুলিশ এসেছে গো বৌদিমণি। বলতেছে, দাদাবাবু নাকি অ্যারেস্ট হয়েছে গো।


শান্ত স্বরে মঞ্জুকে বলে সুরমা, ওদের বসিয়ে জল খেতে দে, আমি যাচ্ছি। দু মিনিট পরেই বসার ঘরে প্রবেশ করে ক্রন্দনরতা সুরমা, প্রশ্ন করে, অনিমেষের কি হয়েছে অফিসার, ওকে অ্যারেস্ট করেছেন কেন?


অনিমেষের জেল হলে সুরমা অ্যাডাল্টারির অভিযোগে একতরফা ডিভোর্স পেয়ে গেলো ছমাসের মধ্যে। ফ্ল্যাট থেকে শুধু আয়না আর পেন্টিংটা খুলে নিয়ে ও চলে যায় বাবার বাড়িতে। তারপরে সেখানে ও প্রতীক্ষা করতে থাকে অন্য সুরমার হাতছানির। সেই হাতছানি কখনো আসে, কখনো বা আসে না। আরশিনগরের দরজা কখনো খোলে, কখনো বা খোলে না। যে সুরমা আরশিনগরে ঢোকে, সেই আবার ফেরত আসে কিনা সেটাও বলা খুব মুশকিল।


যাই হোক, সুরমারা এখন বেশ ভালোই আছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract