Riya Roy

Abstract Classics

4  

Riya Roy

Abstract Classics

সংসারে জটিলতা

সংসারে জটিলতা

17 mins
500


প্রভা সুধীর কে বললো, "এই বাবু র বিয়েটাও আমার অমতে তোমরা ঠিক করে নিলে ।"

সুধীর --"মেয়েটা তো ভালো, লেখা পড়া জানে চাকরি করে, বেলা শীলা রা ও তো বললো এই বাড়ির জন্য যোগ্য।"

প্রভা--" আমার ছেলের বিয়ে আমি নিজে দেখে পছন্দ করবো ভেবে ছিলাম, সেই ছোট থেকে ওর সব ব্যপারটা শুধু তোমারই করলে আমি ওর মা আমার কথার কোনো দাম নেই!!"


সুধীর --"কি সব বাজে কথা বলছো? দীপজ র কোনটা তোমার অজানা তাছাড়া ওরা তো একে অপরকে পছন্দ করেছে, আমরা শুধু একটু ওদের বিষয়টা এগিয়ে দিলাম।।"


প্রভা-- "আমার পছন্দ হয়নি, বাবুকে তোমরা আমার মনের মতন করে মানুষ করতে দাওনি তাই এই দিন দেখতে হলো ওই মেয়ে আমার বাবুকে আমার থেকে কেড়ে নেবে ঠিক।।"


সুধীর -- "চুপ করো, মা আছে এসব তার কানে গেলে খুব খারাপ হবে।"


প্রভা-- "হ্যাঁ তোমার মা আর বোনের রা ই তো বাবুকে তাদের মতন করে...

আমি যে বিশাখার সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম তার কোনো মূল্য নেই।। আমার বান্ধবী মিনতি কে যে কথা দিয়েছিলাম তার কি হবে এটা আমার অপমান নয়।?। মিনতির হাসবেন্ড ওদের বাড়ির সবাই একরকম ভেবেই নিয়েছিল,বাবু ই ওদের বাড়ির জামাই হবে।।তাছাড়া একবার তো বিশাখাকে তোমরা পছন্দ করেছিলে, আর বাবুও ছোট থেকে বিশাখা র সঙ্গে ভালোই কথা বলতো ।।"


সুধীর -- "দেখো ছোটবেলায় তুমি আর মিনতি এটা ঠিক করেছিলে আমরা ও রাজি ছিলাম কিন্তু দীপজ এখন বড়ো হয়েছে তার ভাবনা চিন্তা আলাদা হয়েছে।। মাঝখানে তো বিশাখার সাথে দীপজ র কোনো যোগাযোগ ই ছিল না।। তাই দীপজ বর্তমান এ যে মেয়েটি কে ভালোবেসেছে তাকেই বিয়ে করতে চাইলে আমরা আর কি বলতে পারি!"

প্রভা-- "বিশাখা কিন্তু মনে মনে ভেবেছিলো বাবু তাকেই বিয়ে করবে তাছাড়া ওদের পরিবারের সবাই তাই ভেবেছিলো।"


সুধীর -- "ওদের কে বুঝিয়ে বলতে হবে। ছোট বেলায় দেওয়া কথা টা কি খুব মূল্যবান যে আজ তুমি নিজের ছেলের পছন্দ অপছন্দের কোনো কথা না ভেবে শুধু মান অপমান নিয়ে ভাবছো?"


এই ভাবে কথা কাটাকাটি চলতে থাকলো

।।


তারপর একদিন ....


বসু বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান...

 

আর আজ বউভাত ,পুরো বাড়িটাই ঝলমল করছে।।


 বসু বাড়ির ছেলে দীপজ এর বিয়ে হয়েছে।। দীপজ এর বাবা সুধীর , মা প্রভা দুজনেই চাকুরী করতো এখন রিটায়ার্ড।। 


দীপজ, এর ঠাকুমার বয়স আশি ছুঁই ছুঁই কিন্তু দিব্যি স্ট্রং নাতির বিয়ে নিয়ে খুব খুশি।। 


এছাড়াও দীপজ , এর তিন পিসি ।


 বড় পিসি শীলা ,স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হয়নি তাই এই বাড়িতে ই থাকে।।


 মেজপিসি বেলা ,অল্পবয়সে প্রেম ভেঙে যায় তারপর আর বিয়েই করেন নি।। 


ছোট পিসি এলা, বিবাহিত এলার খুব ভালো সংসার, এলার ছেলে লোলিত দীপজ এর থেকে কয়েক বছরের ছোট।।


 দীপজ বড় কম্পানি তে চাকরি করে।। 


দীপজএর সঙ্গে বিয়ে হলো তিতলি র , সে বর্ধমানের মেয়ে ।।  


এক বন্ধুর বিয়েতে কলকাতায় এসে দীপজ এর সঙ্গে আলাপ তারপর বাড়ির সকলের মতে বিয়েটা হলো।। 


 কিন্তু প্রভা একেবারেই মানতে রাজি নন।। সে তার বান্ধবী মিনতি র মেয়ে বিশাখার সঙ্গে দিতে চেয়েছিলো। ছোটবেলায় বিশাখা দীপজ বেশ বন্ধুত্ব ছিলো কিন্তু তার পর বহুদিন যোগাযোগ ছিল না পরে দীপজ তিতলি কে পছন্দ করে। কিন্তু এদিকে মিনতি প্রভা এমনকি বিশাখা ও মনে মনে ভেবে ফেলেছিল তার সঙ্গে ই দীপজ এর বিয়ে হবে।


প্রভা কথা দিয়ে কথা রাখেনি এমন অভিযোগে মিনতি ও রাগারাগি করে প্রভার সঙ্গে কথা বলে না।।

প্রভা এখন বেশ বিরক্তি প্রকাশ করছে।


বিয়ের সময় সময় থেকে ই প্রভা র আচরনে র একটু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।। 


বাড়িতে সবাই খেয়াল করছে কিন্তু সেভাবে বিষয়টাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি।। প্রভা ইদানিং বেশ অসুস্থ হচ্ছে।। 


এদিকে 

সানাই এর আওয়াজ এ চারিদিকে কোলাহল বসু বাড়িতে।।


 বেলা বলে উঠল," বড়দি বউদিকে বল এবার কিছু একটা শাড়ি পরে নিতে। লোকজন তো এসে গেছে ।। নতুন বউকে ও বসিয়ে দিয়েছে।।"


 শীলা বললো," এলা কোথায়?"


 বেলা-- "এলা তো মাকে নিয়ে গেলো নতুন বউ এর ওখানে বসাতে।।"


 শীলা--" আর দাদা কোথায় ?"


, বেলা -- "দাদা গেস্ট দের সামলাচ্ছে।। দীপজ তো ওর অফিসের বন্ধুদের সঙ্গে আছে।। সব আত্মীরা জিগ্গেস করছে প্রভা কই?"


শীলা-- "বউদি বলে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকে বললো, কীগো আজ তোমার ছেলের বউভাত আর তুমি ঘর অন্ধকার করে বসে আছো।।

বেলা আলো জ্বালা বউদিকে সাজিয়ে দি।।"


প্রভা--" আমার একদম ভালো লাগছে না মাথা ধরেছে! তোমরা যাও আনন্দ করো।।"


শীলা-- "তাই বললে হয় সবাই খুঁজছে তোমাকে ।"


প্রভা-- "আমাকে খুঁজছে? আজ তো সবাই নতুন বউ দেখতে এসেছে আমাকে খুঁজবে কেন? আমি তো পুরনো।"


বেলা-- "দেখেছিস দিদি আবার কেমন ভুল ভাল বকছে।

এই ওঠো তো তুমি দাঁড়াও বলেই আলমারি থেকে শাড়ি বার করে প্রভাকে পরাতে শুরু করলো।"


শীলা--" নাও তুমি শাশুড়ি হয়েছো কিন্তু কোনো হুস তাল নেই তোমার?"


প্রভা-- "আমি কি মা র মতো শাশুড়ি হতে পারবো শীলা ?"


শীলা-- "কেন পারবে না তুমি আমাদের বাড়িতে গর্ব ছিলে একদিন , সবাইকে মা বলতো আমার বউমা চাকরি করে।"


বেলা -- "এখন তুমিও বলবে ? তিতলি ও চাকরি করে।"


প্রভা-- "আচ্ছা বেলা ওই নতুন বউ কি আমার মনের মতন হতে পারবে ।"


বেলা-- "অত তো জানি না পারবে হয়তো চলতো এবার চলো সকলের মাঝে বসবে চলো ,আর আবোল তাবোল কথা বন্ধ করতো , তিতলি তো তোমার ছেলের বউ মেয়ে মতো একি কম্পিটিশন হচ্ছে যে ভালো মন্দ এর বিচার হবে।"


প্রভা-- "মা কি আমায় কোনোদিন মেয়ে ভেবেছিল। "


শীলা--" বউদি একথা টা তুমি আজ বলতে পারলে মা চিরকাল বেলা আমি এলা র মতো করেই তোমাকে দেখেছে সংসারে থাকলে টুকটাক অশান্তি হয়েই থাকে তাই বলে সেই সব কি বড় হলো কত ভালো সময় আমরা কাটিয়েছি বলতো। "


বেলা ফিসফিস করে ,"দিদি ওই সেই আবোল তাবোল , বিশাখা র সাথে বিয়ে দিতে পারে নি বলে, মাথা টাই যেন খারাপ হয়ে গেছে।তুই নিয়ে চল এবার আর ওর সাথে সাথে থাকিস কোথায় কি বলবে এই তো চলছে কদিন ধরে ।"

 আমি ওই দিকে যাচ্ছি দেখি । তুই নিয়ে আয়।"


শীলা টিপটা প্রভাকে পরিয়ে নিয়ে আসছে।

আসতেই সামনে ছোট মাসিমা র সঙ্গে দেখা মানে প্রভার মাসি শাশুড়ি।


ছোট মাসিমা-- "কিগো কেমন আছো ?ছেলের বউ তো খুব সুন্দর হয়েছে।" 


প্রভা-- "শুধু মুখ দেখেই কি বোঝা যায়!! এই এখন কি ভিতরে আছে , কটা দিন যাক তখন বোঝা যাবে কে সুন্দর আর কে..."


পাশ থেকে প্রভার কাকী শাশুড়ি বলে উঠল -- "এসব কি কথা বউমা এত সুন্দর গুনী মেয়ে চাকরি করে তাও , আজকের দিনে এসব কথা বললে বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন এমন কথা বলো না।। তোমারা তো দেখেই এনেছো তাহলে আবার...

 তাছাড়া নতুন বউয়ের কানে এমন কথা গেলে তার খারাপ লাগবে তে।"


শীলা-- "দেখো না কাকীমা কত কি আবোল তাবোল বলে চলেছে।"


প্রভা-- "আমি দেখে আনিনি কাকিমা, যারা এনেছে তারাই ভালো জানবে। বলেই প্রভা এগিয়ে গেলো।" 


কাকীমা--"এই শীলা,,, প্রভা র কি মত ছিল না বিয়েতে, এসব কি কথা।

শীলা কথা এড়িয়ে চলে গেলো।



বিয়ের অনুষ্ঠান এগিয়ে চললো, ধীরে ধীরে রাত বাড়ছে আত্মীয়-স্বজন একে একে সব প্রায় চলে গেলো।।


 এবার ফুলশয্যার ঘরে তিতলির কে নিয়ে আসা হলো।। 


সঙ্গে শীলা, এলা ও ছিলো।। 

ওদিকে দীপজ এলো প্রভাও এলো।।


এলার ছেলে বলে উঠলো, --" যত সব সেকেলে নিয়ম এখন পা ধুয়ে দিতে হবে।"


এলা-- "আমি তো সেই জন্যই মেজদিকে বলেছি শুধু মিষ্টি খাওয়ার নিয়মটাই করতে ও শুধু মিষ্টি নিয়ে আসবে।"


প্রভা--" লোলিত না হয় ছেলেমানুষ কিন্তু তুমি তো সব জানো বসু বাড়িতে নতুন বউয়ের নিয়ম গুলো।। আমি যখন বউ হয়ে এসেছিলাম তখন সব নিয়ম কানুন মেনে তাহলে ও কেন পারবে না।"


লোলিত-- "আচ্ছা মামীমা তুমি সেই কবে ...আর তিতলি বউদি এখনকার মেয়ে।"


প্রভা-- "বড়রা যখন কথা বলে তখন চুপ থাকতে হয় ।"


শীলা-- "তুমি শুধু শুধু রাগ করছো বউদি লোলিত তো ঠিকই বলছে তাছাড়া কত রাত হয়েছে দেখেছো।। দীপজ তিতলি ওদের মুখ গুলো শুকিয়ে গেছে।। এবার ওদের ছেড়ে দেওয়াই ভালো।"


এলা-- "হ্যাঁ তাই তো মা ও দিকে জেগে বসে আছে , তোমার ও তো শরীরটা ভালো নয় , অনেক নিয়ম হয়েছে এবার ছাড় ও।"


বেলা এলো মিষ্টি হাতে নিয়ে তিতলি আর দীপজকে বললো একে অপরকে খাইয়ে দিতে, লোলিত একটু ইয়ার্কি করলো তারপর মোবাইল এ ছবি তুললো।। 


প্রভা-- "দীপজ র গায়ে হাত দিয়ে কিরে বাবু তুই মায়ের কথা শুনলি না , নিয়ম টা ঠিক ঠাক করলি না তুই বদলে গেলি।"


দীপজ প্রভাকে ধরে আচ্ছা মা পিসি রা তো বললো কিছু হবে না তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো।।


প্রভা-- "এখন তুই আমার কোনো কথাই শুনবি না জানি, নইলে কি এই বিয়েটাও।"

এলা সঙ্গে সঙ্গে বউদিকে থমিয়ে দিলো।



 বাকিরা সবাই একে একে বেরিয়ে গেল।।

আর দীপজকে বললো, তুই চিন্তা করিস না বউদিকে আমার বোঝাবো।।


দীপজ ঘরের দরজা টা বন্ধ করে দিল ।।

তারপর তিতলি কে বললো, "তুমি প্লিজ মায়ের কথায় কিছু মনে করো না।"


তিতলি -- "না না মা রা একটু এরকমই হন নিয়ম কানুন মেনে চলেন।। তবে পিসিমনিরা খুব ভালো বেশ মর্ডান।"


দীপজ--" হাঁ আমি তো ছোট বেলায় পিসিদের কাছেই বড় হয়েছি ,মা তো চাকরি করতো তাই বেশি সময় পিসি আর ঠাম্মার কাছে ছিলাম।"


তিতলি দীপজ নিজেদের মধ্যে কথা বলছে কিছুক্ষণ পর এ দরজা ঠাক্কা, দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে তারপর দীপজ দরজা খুলতেই 


লোলিত-- "দাদা তাড়াতাড়ি চল ওদিকে মামী খুব অসুস্থ মা রা ওঘরে আছে আমি ডকতে এলাম।"


দীপজ-- "কি বলছিস,মার আবার কিহলো?"


লোলিত -- "বলছে মাথা ব্যাথা করছে বুক ধড়ফড় করছে।"


তিতলি -- "সিরিয়াস কিছু হলে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে কি?"


লোলিত -- "কি জানি কিছুই তো বুঝতে পারলাম না খালি বলছে বাবুকে ডাকোও..ও"


দীপজ --" আচ্ছা চল"

তিতলি--" আমি যাবো।'


দীপজ-- "এসো..."

।।



দীপজ যেতেই প্রভা তাকে ধরে বারবার বলছে আমি আর বাঁচবো না রে বাবু.. তারপর সারারাত দীপজ প্রভার মাথা টিপে দিলো।। বাকিরা যে যার ঘরে।। 


তিতলি একা তার ঘরে রাতটা পেরিয়ে গেলো।।


লোলিত শুধু মনে মনে ভাবলো, মামী শুধু দাদাকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করছিল কেন? কেস টা কি।।

বেচারা দাদা র ফুলশয্যার রাতে সব ঘ্যাটে এ ঘ।।


 লোলিত বলে ওঠে বেলার দিকে তাকিয়ে-- "আচ্ছা মেজমাসি এই মামীর ব্যাপার কি বলোতো বৌদির কি যে হবে।"


বেলা--" কি জানি কিছুই বুঝতে পারলাম না। বউদি তো বিয়েটাই মানছে না। "


দেখতে দেখতে দিন এগোচ্ছে

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিতলি দীপজ দুজনে অফিস জয়েন করলো।।


বাড়িতে তিতলি যে সময়টা থাকছে প্রভার নানান কথা তাকে শুনতেই হচ্ছে।। 

যত চেষ্টাই করুক না কেন কিছুতেই প্রভার মন জয় করতে পারছে না।। 


এদিকে দীপজর ঠাকুমার আবার তিতলি কে খুব পছন্দ তার হাতের চা খেতে প্রায় রোজই আবদার করে।।


বসু বাড়িতে রান্নার কাজ করার জন্য একটি মহিলা আছে নাম মৃদুলা।।

প্রভার কথা হলো এতবছর মৃদুলা তো সব করতো এখন হঠাৎ তিতলি করছে তোমার মা কেন এত আশকারা দিচ্ছে তিতলি কে? সুধীর কে এই কথা বলার পর সুধীর বললো, "আচ্ছা তুমি এত খুঁত ধরছো কেন?

মা র ওকে ভালো লেগেছে এটা তো ভালো কথা ।"


প্রভা--" কই তোমার মা র তো এত বছরে আমার করা রান্না র কোনো প্রশংসা করেনি।"

 

সুধীর -- "বদনাম ও তো করেনি।। তিতলি তোমার ছেলের বউ ওর সঙ্গে এই তুলনা তোমার চলে না।"


এভাবে কাটছে বসু বাড়িতে চাপা অশান্তি।।


তিতলি দীপজ অস্টমঙ্গলায় গেলো।।

দীপজ র থাকার কথা ছিল হঠাৎ ফোন গেলো।।

প্রভা অসুস্থ বাধ্য হয় এ দীপজ তিতলি কে নিয়ে ই চলে এলো।।


কিছু দিন পর দীপজ জানালো ওরা হানিমুনে ঘুরতে যাবে।।

শীলা বলে উঠল, "কোথায় যাবি ঠিক হয়েছে কিছু।"


সুধীর-- "দূরে কোথাও নাকি কাছেই"


প্রভা-- "তোরা একা একা যাচ্ছিস।"

শীলা-- "তা হানিমুনে ওরা একা যাবে না তো কি?"

প্রভা-- "কেন শীলা আমি আর তোমার দাদা যখন গেছিলাম তখন তো তোমরা সবাই গেছিলে মনে নেই।"



দীপজর ঠাকুমা--" বউমা এসব পুরোনো কথা কেন বলছো এখন যুগ বদলেছে।। তখন যা হয়েছে সে সব কিছু হয়তো ঠিক ছিলো না কিন্তু সেই কথা টেনে রোজই তুমি অশান্তি করছো। কেন বলতো?"


তিতলি রোজই দেখছে কোনো প্রতিবাদ না করলেও বিরক্তি একটা থেকেই যাচ্ছে।।


সেদিন অফিস থেকে দীপজ ফোন করলো তিতলি কে বললো, "চলো আজ বাইরে থেকে খেয়ে ফিরি। আর সামনে সপ্তাহে তো আমরা ঘুরতে যাচ্ছি যদি কিছু সপিং করার থাকে দরকারি, করতে হবে তো।।"


তিতলি--" হ্যাঁ কিছু জিনিস কিনতেই হবে।। আমি অফিস থেকে সাড়ে পাঁচ টায় বেরবো।। আকাশ টা মেঘ করছে যদি বৃষ্টি হয় আবার।"


দীপজ-- "রোজই তো করছে হচ্ছে না, ঠিকাছে বেরনোর সময় আমি ফোন করে নেবো।" 


দুজনেই অফিস থেকে বেরিয়ে তারপর সপিং, ফুচকা শেষে রেস্টুরেন্ট এ বসে ভালো মুহূর্ত ।। বাড়িতে দম বন্ধ লাগছিলো এতদিন তিতলির আজ অনেক টা ভালো লাগছে।। 


ওদিকে বাড়ীতে ওদের ফিরতে দেরি দেখে সুধীর বেলা কে জিজ্ঞেস করলে বেলা তাকে বলে দীপজ নাকি ফোনে জানিয়েছে ওরা রাতের ডিনার করে ফিরবে‌।


প্রভা একথা শুনে ভীষন রেগে গেলো-- বললো," বাবু টা কত বদলে গেছে বাইরের ডিনার করে ফিরবে ।সব ওই মেয়ের জন্য , বাড়ির কথা খেয়াল নেই।"


বেলা বললো, "বউদি ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে একটু এদিক ওদিক তো যাবে ওদের মতো করে সময় কাটাতে দাও।"


প্রভা-- "বা বা ...আমি আর তোমার দাদা একবার সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরতে রাত হয়েছিল বলে তোমাদের বাবা বলেছিলেন বসু পরিবারের বউ মেয়েরা এত রাতে বাড়ি ফেরে না"


বেলা-- "এখন তো নিয়ম কানুন অনেক শিথিল হয়েছে আর যুগ ও বদলেছে। তাছাড়া বাবা সেকেলে ধ্যান ধারনায় চললেও দাদা তোমায় যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছিল।" 


প্রভা-- "বেলা দ্যাখ ও ছেলে তো আমার আমি জানি আমার মনে কত চিন্তা হয় তুমি বুঝবে না।"


সুধীর বলে উঠল, "কি সব বলছো, তাছাড়া বেলা শীলা ওরা কি দীপজকে নিজের ছেলেই তো ভাবে।"


প্রভা--" হ্যাঁ সেই তো আমি অফিস যেতাম ওরাই দেখতো দীপজকে তাই তো এমন তৈরি হয়েছে, আমার প্রতি বাবুর , টান কত কম । তাই বিয়েটা বিশাখা কে করতে পারলো না, মায়ের অপমান চোখে পড়লো না।

ছোট থেকে তোমার বোনেরা ওকে আমার থেকে প্রায় কেড়েই নিয়েছে , তাইতো আমার কথাই শুনলো না, মিনতি আজ ও কথা বলে না আমার সাথে, ।"


ঝগড়া কথাকাটাকাটি শুনে দীপজ র ঠাকুমা আর শীলা, ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।।

ঠাকুমা বললো, "এই বয়সে আমার আর এসব 

শুনতে ভালো লাগছে না।। বউমা আমার মেয়েরা হয়তো সংসার করেনি তাই এই সংসারে ছিলো তোমার হয়তো সেটা ভালো লাগেনি , কিন্তু ওরা তোমার জন্য কিনা করছে তুমি অফিসে যেতে দীপজকে ওরা দেখতো।। তাই বলে তোমার থেকে তোমার ছেলেকে আলাদা করে দিয়েছে এই কথা টা বলতে পারলে বউমা।। ছেলে তোমার বড় হয়েছে এখন ওকে ওর মতো করে সংসার করতে দাও নিত্য এই অশান্তি করো না।। বিশাখা র সাথে বিয়ে দিতে পারোনি বলে রোজই তুমি অশান্তি করছো , দাদু ভাই তো বিশাখা কে ভালোবাসেনি, জোর করে তো বিয়ে হয় না, সেই সাধারণ ব্যাপার টা কেন তুমি বুঝতে পারছ না।"


শীলা-- মা তুমি ঘরে চলো তোমার শরীর খারাপ হবে, বউদি কিছুতেই বুঝবে না সেই একই জেদ।"


সুধীর -- "প্রভা এবার থামো।"


প্রভা-- "আমি কি ভুল বলছি, তোমার মা কত কথা শোনাচ্ছে।। সেটা দেখতে পাচ্ছনা।"


সুধীর --" কি হয়েছে তোমার আজকাল এমন আচরণ কেন করছো।"


প্রভা-- "অনেক আগেই আমার বলা উচিৎ ছিল তোমার বাবা করা হাজার নিয়ম মানতে হতো। তোমার মা কত কি না শেখাতো যেন আমার বাপের বাড়ি থেকে কিছু আমি শিখে আসিনি আর তোমার বোনে রা সমস্ত ব্যাপারে থাকা চাই আর বাবুর সব ব্যপারে ওরা আমি যেন কেউ নয়।"


বেলা-- "আমরা তো ভেবেছিলাম তোমার অফিসের চাপ তাই দীপজ র ব্যপার তুমি ওত ও সময় দিতে পারতে না তাই তো আমরা ওর স্কুল পড়া শোনা এমনকি স্কুলে মিটিং গুলোতে অনুষ্ঠানে আমরাই ছিলাম তুমি কখন ও না ও করো নি কিন্তু তোমার মনে এত রাগ ছিল ।"


শীলা -- "সত্যি বউদি তোমার আজকের এই আচরণ খুব অদ্ভুত লাগলো।। আগে টুকটাক হয়তো হয়েছে হতো সব সংসারেই হয় কিন্তু.."



এসব চলছিল ...


এরপর তিতলি দীপজ দুজনে ঢুকলো বাইরে বৃষ্টি র জন্য দুজনে ভিজে ফিরেছে।


প্রভা-- "বাবু তুই ভিজে ফিরলি, কার পরামর্শ এ এসব করছিস আজকাল বুঝতে পারছি।। দেরিতে ফেরা, বাইরে খাওয়া।"


তিতলি-- "না মা আসলে আমাদের ঘুরতে যাওয়ার জন্য সপিং ছিল তাই দেরি হয়ে গেলো।।

আর আজই বৃষ্টি হলো তো তাই ভিজে গেলাম।"


প্রভা-- "ও তাহলে তোরা ঘুরতে যাচ্ছিস ,ঠিক ভাবে জানালি ও না।"

সুধীর এর দিকে তাকিয়ে দেখো তোমার ছেলে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।


দীপজ -- "কেন মা আমারা তে ঘুরতে যাব এটা তো সেদিন ই কথা হলো।। আমি ভেতরে যাচ্ছি।"

বলে ভিতরে চলে গেলো।।


বেলা-- "তিতলি যাও ভিজে অবস্থায় আর থেকো না।"




কিছু দিন পরে.....


 তিতলি ও দীপজ দের বেড়াতে যাওয়ার দিন চলে আসে বিকেলে স্টেশানে যাবে তৈরি হচ্ছে।


ঠিক সেই সময় প্রভা অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে খবর দেয় বেলা।


এরপর ওদের যাওয়াটা বন্ধ হয়ে যায়।।

প্রভা অসুস্থ হয় নি ইচ্ছে করে পুরো অভিনয় করছিলো।


প্রভা ধীরে ধীরে যেন মানসিক রুগীতে পরিনত হয়ে যাচ্ছিল।


 তাঁর মনে তিতলি কে নিয়ে শুধু খারাপ চিন্তা, তিতলি যেন তার ছেলের জন্য ঠিক নয় তার থেকে দূরে করেছ ।বিশাখা হলে ঠিক হতো, মিনতি এত অপমান করেছে সেটাও মেনে নিতে পারে না। 



তিতলি দিনের পর দিন প্রভার আচরণ এ বিরক্তি তে ভুগছিল। দীপজ সাথে কোনো ভালো সময় সে আর কাটাতেই পারতো না

তিতলি হতাশায় ভুগছিল, একেবারে সুখী ছিলো না ।


 অফিস এর এক কলিগ এর সঙ্গে পরামর্শ করে সে একদিন দীপজকে বলে সে এই বাড়িতে আর থাকতে চায় না দীপজ কে বলে একটা ফ্ল্যাট নাও তুমি আর আমি থাকবো এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।



দীপজ--" এসব কি বলছো আমাদের ফ্যামিলি তে কেউ কখনো আলাদা থাকেনি আর আমি তো ভাবতেই পারছিনা

হ্যাঁ তোমার সঙ্গে মা এর একটু এডজাস্ট কম হচ্ছে কিন্তু কোন সংসারে এগুলো হয় না তাই বলে ফ্ল্যাট?"


তিতলি--" তাহলে তুমি তোমার মা কে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাও, উনি আমাকে মেনে নিতেই চায় না আর নয়তো মেনে নিতে পারেনি, তাছাড়া ও উনি সবসময় তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিতে চায় আমার মনে হয়েছে। আমি তো লোলিতে র কাছে একবার শুনেছিলাম তোমার মা তার বান্ধবীর মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলো, তুমি তাকে ই বিয়ে করতে পারতে তাহলে আর এত অশান্তি হতো না।"


দীপজ তিতলি র কাছাকাছি এসে আমাদের কে আলাদা করবে ?

মা একটু বেশিই আমাকে নিয়ে চিন্তা করে তাই মাঝে মাঝে এরকম আচরণ করে, আস্তেআস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

মা কে আমাদের আলাদা করতে চাইবে দূর যত বাজে ভাবনা তোমার।"

এভাবে দীপজ তিতলি কে বুঝিয়ে নিলো।।

তিতলি ও আর ফ্ল্যাটের কথা তুললো না।।


কিছু দিন পর..


প্রভার আচরনে তিতলি এবার সত্যি একাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।।

দীপজ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আলাদা থাকবে।। একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলো তাড়াহুড়ো করে তারপর দীপজ বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো।।


শীলা বেলা সবাই প্রভাকে দোষারোপ করতে শুরু করলো।। প্রভা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেল।। কোনো কথাই প্রায় বলছে না সুধীর চিন্তিত।‌ বাড়িতে আলোচনা করছে।


বাড়িতে পরিবেশ খুব নিশ্চুপ, এলা এলো সেদিন।


এলা-- "সবাই মিলে বসে একবার বউদি তিতলি দীপজ সবাইকে নিয়ে আলোচনা করলে হয় না , এতদূর সব ঘটে গেলো তোমরা আমায় জানালে না।"


দীপজ এর ঠাকুমার --" কি আর জানবে তোকে রোজ ঝামেলা বউমা এ কেন মেনে নিতে পারলো না জানি না, "


বেলা-- "আসলে বউদি মনে একটা অতৃপ্তি ছিলো ছেলে কে আমরা নাকি মানুষ করছি তারপর বিয়েটা ভেবেছিলো নিজের পছন্দের দেবে হয়নি বলেই হয়তো এরকম করছে।"


শীলা-- "ঠিক আছে কিন্তু তিতলি তো ভালো মেয়ে তারপর ও কি এত সমস্যা.."


এলা-- "কি জানি বউদির হয়তো ভালো লাগে নি ।"


সুধীর --" প্রভার মনে তে এত অসন্তোষ তাই তো আমি ও বুঝতে পারিনি।"

দীপজর ঠাকুমা, -- "তুই বরং বউমাকে নিয়ে কোথায় ও একটা থেকে ঘুরে আয় তাহলে ওর মনটা হালকা হবে।"


এলা--" এ কথাটা মা ঠিকই বলেছ ।"


কয়েক দিন পর..


হঠাৎ একদিন প্রভাকে কোথা ও পাওয়া যাচ্ছে না।। সব জায়গায় খুঁজে ও পাওয়া যায় না।


 শেষ পর্যন্ত খবরটা শুনে আবার এলা লোলিত এলো । ওদিকে দীপজ তিতলি ও এলো কিন্তু, 


প্রভা কোথায়? সেই খোঁজ চলছে।।


তিতলি -- "এবার কিন্তু থানা যাওয়া উচিত অনেক টা সময় তো হলো।"


দীপজ -- "আচ্ছা বাবা... মা মাসির বাড়ি গেছে কিনা জানো কিছু কি বলে ছিলো।"

 

শীলা-- "দাদাতো ফোন করলো ওদের কে কিন্তু ওরা তো কিছু জানে না।"


সুধীর -- "কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেতে পারে তাই তো বুঝলাম না।"


ঠাকুমা-- "সারাদিন তো দাদুভাইকে নিয়েই চিন্তা করতো তোরা চলে যাওয়ার পর কেমন যেন একটা হয়ে গেছিল।"


বেলা-- "হ্যাঁ বউদি একটু বেশি চুপচাপ হয়ে ছিল।"


এলা-- "দেখ দীপজ তোর বাড়াটা ছেড়ে যাওয়া উচিত হয়নি আর তিতলি তুমি ও এভাবে না গেলেই পারতে।"



লোলিত --" তিতলি বউদি তো মামীর ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে চলে গেছিল।"


দীপজ তিতলি র দিকে তাকিয়ে --" তুমি যদি একটু এডজ্যাস্ট করতে মায়ের কাছে তাহলে এই দিন দেখতে হতো না।"


তিতলি--" ও এখন সব দোষ আমার হয়ে গেল, তোমার মায়ের পছন্দ করা মেয়ে কে বিয়ে তুমি করনি তাই এই অশান্তি এই রকম জানলে আমি কোনো দিন এই বিয়ে করতাম না, তোমার মা মানসিক রুগীতে পরিনত হয়েছেন, আমাকে সহ্য করতে পারতো না, বিয়ে র রাত থেকে উনি অভিনয় করেছেন প্রতিবার অসুস্থ হয়ে গিয়েছে নাটক করেছে, এভাবে আমি কত সহ্য করতাম"


দীপজ--" মা মোটেও অসুস্থ হয়ে নাটক করে নি হ্যাঁ মা এই বিয়ে মত দেয় নি কিন্তু তাই বলে নাটক তিতলি এসব তুমি কি বলছো?? তোমার জন্য আমি মাকে কষ্ট দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম এখন মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুমি কত বাজে কথা বলছো।


সুধীর -- "তোমারা চুপ করো নিজেদের মধ্যে 


অশান্তি করো না ।।"



দীপজর ঠাকুমা -- বউমা একটু বেশি অদ্ভুত আচরণ করছে দাদুভাই... নাত বউ ঠিক কথাই বলছে।। মাঝে মাঝেই হয়তো অসুস্থ হয়ে যাওয়াটা সত্যি ছিল না।। ওর বান্ধবী 

 মিনতির করা অপমান টা বউমা মেনে নিতেই পারেনি। 


কিছুক্ষন পর...


 কয়েকটা পাড়ার ছেলেরা এসে প্রভাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলো।

প্রভার গায়ে একটা পুরনো নাইটি ।

 চুল গুলো এলোমেলো, দীপজ যখন প্রভার কাছে মা বলে ছুটে গেল সবাই ভেবেছিল সব কিছু ঠিকঠাক।। 


কিন্তু প্রভা হঠাৎ বললো, "কি রে বাবু স্কুলে যেতে হবে তো এখন ও তৈরি হলি না, তারপর বললো," একি শীলা তুমি রান্না করোনি এখন তোমার দাদা আমি বেরোবো, অফিসে দেরি হয়ে যাবে তো।।"


সবাই বুঝতে পারলো প্রভা এবার সত্যি অসুস্থ ভুলভাল কথা বলছে।।


এলা চেয়ারে বসে হতাশ হয়ে বলে উঠলো, -- "বউদির মাথা তাহলে একেবারে খারাপ হলো কি হবে এখন?


দীপজর ঠাকুমা প্রভা কে জোরে ডাকলো-- "বউমা.. ভালো করে তাকিয়ে দেখো দীপজ আর ছোট নেই বড় হয়েছে। ও চাকরি করে, বিয়ে হয়েছে ওই যে তোমার ছেলের বউ।


বেলা -- "বউদি তোমার কি কিছু মনে পড়ছে না।" 


প্রভা নিজের খেয়ালে বলে চললো--" একি বেলা তুমি দীপজকে তৈরি করে দিচ্ছো না কেন ??ওর দেরি হয়ে যাবে স্কুলে যেতে।"


দীপজ প্রভার অবস্থা দেখে হতাশায় ভেঙে পড়লো।


লোলিত দীপজ কে শান্তনা দিয়ে বললো-- "এত চিন্তা করিস না এখন অনেক ভালো চিকিৎসা আছে মামী সুস্থ হয়ে উঠবে।"


তিতলি সুধীর এর দিকে তাকিয়ে -- "আজই একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর সঙ্গে কথা বলতে হবে বাবা।"


দীপজ তিতলি কে বলে উঠলো," তুমি যদি না চলে যেতে তাহলে এটা হতো না।।"



তিতলি--" তোমার মা আগেই মানসিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করে ছিল যখন তুমি তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করনি।"



এদিকে কথা কাটাকাটি চলেছে।।


 পরিবারের অন্য সদস্যদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে ব্যস্ত হঠাৎ দেখা গেলো প্রভা ভিতর থেকে শাড়ি পরে ব্যাগ নিয়ে এসেছে অফিস যাবে বলে তারপর সবাই যখন দেখছে অবাক হয়ে তখন প্রভা তিতলির দিকে গিয়ে বললো," তুমি কখন এলে?"

সবাই খুব আশা নিয়ে ভাবলো হয়তো প্রভার মনে পড়ছে।

তিতলি ও খুব উৎসাহ নিয়ে মা আপনার সব মনে পড়ে গেলো দেখ দীপজ মা ..


প্রভা বলে উঠলো," এই বেলা ওকে বলেছো বাড়ির সব নিয়ম, শোনো ... এখানে পেনগেস্ট থাকতে হলে ঠিক ভাবে থাকতে হবে। বেশী রাত করে বাড়ি ফেরা চলবে না। তুমি কোন কলেজে ভর্তি হয়েছো?"


সুধীর তখন বললো, "বাড়িতে একসময় পেনগেস্ট ছিলো নৃপা বলে একটি মেয়ে তোমার মনে আছে মা,...।" 


দীপজর ঠাকুমা,---" হ্যাঁ বউমাকে সে খুব ভালোবাসতো, বউমাও খুব পছন্দ করতো তাকে, সেই মেয়েটার কথাও মনে আছে অথচ আজকের কথা কিছুই মনে নেই।।"


এলা-- "বউদির পুরোনো দিনে ফিরে গেছে। 

কি হবে কিছু ঠিক কর দাদা।"


শীলা--"বউদির একটা ভালো চিকিৎসা না হলে সুস্থ হবে না।। "


বেলা --"বার বার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেও তো মুস্কিল, তাহলে.."


দীপজ-- "মা কি তাহলে সুস্থ হবে না।। আমার জন্য আজ মায়ের এরকম হলো।


এলা--" দীপজ শুধু শুধু নিজেকে দোষ দিস না এখানে কেউ দোষী নয় ।"


বেলা--" বউদি মেনে নিতে পারেনি তাইতো এরকম একটা.."


সুধীর ঠিক করলো প্রভাকে মেন্টাল অ্যাসাইলেমে রেখে চিকিৎসা করবে।।


পরের দিন প্রভা কে পাঠানো হল চিকিৎসার জন্য।।


দেখতে দেখতে কাটলো...


প্রায় আট নয় বছর....



বসু পরিবারের অনেক কিছুই বদলেছে আজ 


দীপজর ঠাকুমা এখন বেঁচে আছেন কিন্তু শয্যাশায়ী, 


বাকি দেরও বয়স বাড়ছে।


দীপজর তিতলি এখন ও নিজেদের মধ্যে অশান্তি করে প্রভার বিষয়টা নিয়ে ।

ওদের ছেলে টুলু ওদের থামিয়ে দেয় আর বলে ওঠে ঠাম্মা কোথায় আছে কবে আসবে??


 এভাবে দিন এগিয়ে চলছে।


আজ প্রভা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসছে।।

 

সুধীর নিয়ে এলো প্রভা এসে দাঁড়ালো।


প্রভাকে দীপজ জড়িয়ে ধরলো বললো," মা তোমার সব মনে পড়ে গেছে।"


প্রভা বললো, -- "হ্যাঁরে বাবু সব মনে পড়ে গেছে।"


টুলু এসে তিতলি কে বললো, "ওই টা ঠাম্মা আমি কি যাবো ??"


তিতলি কি বলবে বুঝতে পারছিল না।।

এরপর প্রভা জিগ্গেস করলো সবাই কে টুলু র কথা তারপর যখন জানতে পারল টুলু তার নাতি তখন তাকে কোলে নিলো।। 


এরপর তিতলি র সঙ্গে সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হলো প্রভার।


প্রভা এখন টুলুকে নিয়েই সময় কাটায়।।


বসু পরিবারে টুলু র হাত ধরে সব ঠিকঠাক হয়ে গেল।।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract