Riya Roy

Drama Classics

3  

Riya Roy

Drama Classics

তোমার বাড়ির কর্ত্রী

তোমার বাড়ির কর্ত্রী

13 mins
264


তাপসী আর নীতা একই অফিসে চাকরি করে। তাপসী কাজ করছে হঠাৎ তার টেবিলে র কাছে এসে নীতা বললো।। এই তাপসী দি শোনো না ..."আমাদের পাড়ায় কয়েক টা বাড়ি পরেই থাকে। ওদের ছেলে র নাম শুভময়, ভালো চাকরি করে।। তার বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছে।। তোমার বড়ো মেয়ের জন্য ওদের বলবো।"

তাপসী বললো, "তোমাদের পাড়ায় কত দূরে বাড়ি তোমার সঙ্গে ওদের ভালো আলাপ আছে নাকি?"


নীতা বললো, " আমাদের বাড়ি তার চারটে পাঁচ টা বাড়ি পরেই ওদের।। ওই বাড়ি মাসিমা মেসেমশাই তো মর্নিং ওর্য়াক করে আমার সাথে রোজ দেখা হয়। তখন ই তো শুনলাম।"

তাপসী বললো," ও্,,,তা ছেলে কেমন ?পরিচয় আছে তোমার সাথে? কি চাকরি করে?"

নীতা বললো,"না ছেলের সাথে পরিচয় নেই ছেলে তো দিল্লীতে থাকে ওখানে চাকরি করে। হসপিটাল ম্যানজমেন্ট করে তারপর দিল্লীতে চাকরি পেয়েছে।"


তাপসী বললো, "দিল্লীতে... আচ্ছা.. কথা বলো, দ্যাখো কি হয়। বিয়ের পর তো কি দিল্লীতে, কাছাকাছি হলে ভালো হতো। যাইহোক তুমি কথা বলো ।"


নীতা বললো," ঠিকাছে আজ বিকেলে ই কথা বলবো তাপসী দি।"


তাপসী বলে উঠল, "এই জানো আমার ছোট মেয়ে তনিমা চেনো তো !!ও তো পড়াশোনা য় খুব ভালো। কলেজে তো দুর্দান্ত রেজাল্ট ও তো এবার বড় কম্পানি তে চাকরি পেয়েছে এই তো এক সপ্তাহ হতে যাচ্ছে চাকরি যাচ্ছে। সেই সল্টলেক । সকাল-সন্ধ্যা বেলা ঘুম থেকে উঠে...."


অফিসে র মধ্যে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল বিদিশা আর দীপা ।। ওই অফিসে ই চাকরি করে।। ওরা দূর থেকেই সব শুনতে পাচ্ছিলো তাপসী আর নীতার কথপোকথন ।। 


ওরা ও নিজেদের মধ্যে তাপসী র বড় মেয়ে র কথা আলোচনা করছিলো। 

তাছাড়া নীতা বিদিশা কে বলেছিল আগেই এই সমন্ধটার ব্যপারে । 


দীপা হঠাৎ বলে উঠল, "দ্যেখেও

 কেমন ছোট মেয়ের অ্যাডভর্টাইজ দিচ্ছে উঃ আর পারা যায় না।।

বিদিশা--" হ্যাঁ ওনারই একটা মেয়ে আছে আর তো পৃথিবীর কারো মেয়ে শিক্ষিত নয় বাকিরা কেউ কলেজ ইউনিভারসিটির মুখিই দেখেনি।"


দীপা হেসে বলেছে," বিরক্ত লাগে এই তো কয়েকটা দিন আগেই আমার ছোট আমার ছোট বলে কত্ত কথা বললো। আমার ও তো ছেলে ইনঞ্জিনিয়ার , ভালো জায়গায় চাকরি করে , ছোট টা ও তো এবার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পড়ছে কই আমি এমন করি না।"

বিদিশা বললো, "কি জানি তাপসী দি কেন যে এরকম করে ।"


পরের দিন...

নীতা এসে তাপসী কে বললো, "এই নিন ছেলের ছবি আর বায়োডাটা , আপনাদের মেয়ের বায়োডাটা টা পেলেই ওরা বলেছে আপনাদের কে ফোন করবে।"


তাপসী বললো," ঠিকাছে কাল আমি নিয়ে আসবো, আচ্ছা শোনা নীতা ছেলেটা ভালো হবে তো।


দীপা এসে বললো," কই ছবিটা ?


ছবি দেখে দীপা বিদিশা বললো, "বেশ লম্বা ,তাপসী দি আপনার বড় মেয়ে হাইট টা কত যেন।"


তাপসী দি--" ওই পাঁচ ফুট এর একটু কমই হবে। অদিতি একটু বেঁটে কিন্তু আমার ছোট তনিমা ও খুব ভালো লম্বা।। ওর ফিগার টা দারুন সব দিক থেকে ই...

তাপসী কথা শুনে

সবাই একে অপরের দিকে তাকালো তখন ই

বিদিশা বললো, "তা তে কি হয়েছে তাপসী দি অমিতাভ বচ্চন জয়া বচ্চন কে দেখেছেন তো!!"


সবাই হেসে উঠলো এক সাথে।


দেখাতে দেখতে বিয়ের কথা অনেক টাই এগোলো।


ছেলের বাড়ি থেকে ফোন এলো তাপসী র কাছে।

ছেলের বাবা দীনেশ বললো," নমস্কার! নীতার কাছ থেকে সব কিছু জেনে আপনার নাম্বার টা পেলাম ।

তাপসী--" ও হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন;


 নীতা বলেছিল ,আপনারা ফোন করবেন।


দীনেশ ---"আমাদের আপনার মেয়ের ছবি দেখে পছন্দ হয়েছে তাই একদিন আপনাদের বাড়িতে যাবার কথা ভাবছি আমি আমার মিসেস আর আমার বড় বউমা ।"


তাপসী--" নিশ্চয়ই আসুন ।

কবে আসবেন আপনারা?"


দীনেশ--" রবিবার ..এই রবিবার দিনটা অসুবিধা নেই তো আপনাদের,


তাপসী--" এ মা না না রবিবার তো ছুটির দিন খুব ই ভাল ঠিক আছে আসুন তাহলে।"


ফোন রেখে দেওয়ার পর বাড়িতে তাপসী তার বড় মেয়েকে ডাকলো অদিতি শোনো "রবিবার ওনারা আসবেন। নীতা র সমন্ধটা ওই ওনারা।। 

তুই সব বোনের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নিস কি পারবি, সাজগোজ, কথা কি বলবি কতটা বলবি সব কিছু আর বোন যা যা বলবে সে রকমই করবি।" 


অদিতি, --"এটা তুমি কি বলছো মা!! বোন বলবে তাই করতে হবে কেন?


তাপসী --"কারণ ও পড়াশোনা বুদ্ধি তে তোর থেকে কত এগিয়ে তা কি ভুলে যাস ,ওর বিবেচনাও বেশি তাছাড়া ওর রোজগার বেশি ওই এ বাড়ির কর্ত্রী এখন।"


অদিতি--" মা তুমি এসব কি বলছো!! হ্যাঁ মানছি ও পড়াশোনা য় ভালো ছিল।

 কিন্তু এ বাড়ির কর্ত্রী এটা অসম্ভব। আর যা বলবে তাই মানতে হবে কেন? এই তোমার আশকারা তেই কিন্তু ও আমার মুখে মুখে তর্ক করে ঝগড়া করে আমাকে পাত্তাই দেয় না। আমি তো দিদি হই ওর মিনিমাম একটা সম্মান তো করবে। আর বেশি রোজগার করে বলে তো কি হয়েছে ।তোমরা সবাই চাকরি তে বেরিয়ে যাও এই বাড়িটা গুছিয়ে আমি রাখি , তোমাদের জন্য রান্না আমি করে দি, সেটা কিছু নয় টাকা টাই সব।। 


এভাবে তাপসী র সঙ্গে অদিতি র ঝগড়া বেশ খানিকক্ষণ চলতে থাকলো।।


দেখতে দেখতে রবিবার চলে এলো...

 

শুভময় এর বাবা মা এবং বৌদি এলো অদিতি কে দেখতে।


তাপসী বর শক্তিপদ বসার ঘরে নিয়ে গেলো ওনাদের। 


তারপর কথাবার্তা শুরু হলো।

শক্তি পদ বললো--," আপনাদের বাড়ি চিনতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?"


দীনেশ--" নানা ওই মোড় থেকে রিক্সা নিলাম।

তাপসী শুভময়ের বৌদির দিকে তাকিয়ে--" এই বুঝি আপনাদের বড় বউমা?"


শুভময়ের মা মিনতি বলে উঠল--, "হ্যাঁ।


তাপসী --"আপনার বড় ছেলে কই এলো না?"


মিনতি--" না আমার নাতির আবার টিউশনে নিয়ে গেছে তাই ও আসতে পারলো না।"


দীনেশ বললো,--" এই বড় বউমাকে আমরা সমন্ধ করেই এনে ছিলাম।"


হঠাৎ তাপসীর ছোট মেয়ে তনিমা ঢুকলো হাতে চায়ের কাপ।


সবাই একটু বিচলিত হয়ে গেলো।


তাপসী--" এই আমার ছোট মেয়ে খুব ভালো কম্পানি তে চাকরি করে, পড়াশোনা য় দুর্দান্ত রেজাল্ট।


দীনেশ--" কিন্তু নীতা তো বলেছিল আপনারা বড় মেয়ে জন্য..."


শক্তিপদ বলে উঠল, --"হ্যা হ্যা বড় মেয়ে জন্য ই তো..।

 এই তনিমা যা গিয়ে দিদি কে এবার নিয়ে আয় কত দেরি করবি।"


তনিমা গিয়ে অদিতি কে ডেকে আনল ।


অদিতি শাড়ি পরে মাথায় ক্ষোপা ।


 এসে চেয়ারে বসলো।


দীনেশ কিছু ক্ষন পর মিনতি কে বললো," নাও তোমরা কি জিগ্গেশ করবে করো।"


মিনতি--" তুমি তো শুনেছি বি এ পাশ আজকাল তো সবাই চাকরি করতে চায় তোমার ইচ্ছে করে না। "


অদিতি --"না আসলে আমি মাঝারি স্টুডেন্ট ছিলাম। আর বাবা মা চেয়েছিলো তাছাড়া আমার ও সংসার করার বেশি ইচ্ছে। তাই.."


শুভময়ের বৌদির দিয়া বললো, "তোমার চুল টা তো বেশ বড় এখন কেউ এর বড় চুল রাখতেই চায় না তুমি সামলাতে পারো।"


অদিতি--- হ্যাঁ আমার ভালো লাগে আমি যত্নকরি চুলের।"


মিনতি --"রান্না করতে পারো?"


তনিমা বললো, " আমাদের বাড়ি তে তো দিদিই সব রান্না করে ।মা বেরোয় আমি বেরিয়ে যাই তাই ওই তো সব ঘর গুছিয়ে রাখে।"


দীনেশ --"কি ভালোবাসো তুমি খেতে?


অদিতি-- বিরিয়ানি খেতে ভালোবাসি


তনিমা বলে উঠল, আমিও খুব ভালো বাসি। আমাদের সবাই প্রায়।"


দিয়া --"বিরিয়ানি বানাতে পারো?"


এবার অদিতি -- "হ্যাঁ আমি বানাতে ও পারি।"


মিনতি--" তাহলে তোমার হাতের একদিন বিরিয়ানি খেতে হবে তো।"

তাপসী --" রান্না টা ও ভালো ই করে ।"


এভাবে কথা এগিয়ে চললো ... 


শেষে ওরা বললো বাড়িতে গিয়ে কয়েক টা দিন পর জানবে ।


দীনেশ রা বাড়িতে সকাল বেলা চায়ে কাপে চুমুক দিচ্ছে।


 নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলো। 


দিয়া বললো--" দেখুন আমার তো বেশ ভালোই লাগলো । কিন্তু ছোট মেয়ে টা একটু অদ্ভুত।


 দীনেশের বড় ছেলে মনোময় বললো," কেন ছোট মেয়ে কে নিয়ে কি হলো।"


মিনতি --" বউমা ঠিক কথাই বলছে ছোট মেয়ে টা যেন একটু বেশি আগবাড়িয়ে কথা বলে ।


দিয়া--" আর দেখেছেন মা ছোট মেয়ে কে নিয়ে বড্ড অহংকার ওদের।"


দীনেশ বললো, "তার যা বলেছ আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম ছোট মেয়েকেই দেখাবে যেভাবে বলছিল।"


মনোময়--" বাবা এদের পরিবার ভালো তো কি বুঝলে ভাইকে কি খবর দেবো।"


মিনতি--" হাঁ হঁ্যা তুই আসতে বলে দে শুভকেও এসে একবার দেখুক না তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এমনিতে মেয়েটাকে বেশ ভালোই লেগেছে কথাবার্তা বেশ শান্ত ভদ্র।"


শুভময় খবর পেয়ে দিল্লী থেকে চলে এলো।


দিয়া --" শোনো শুভ ফোটোটা দেখলে তো এবার বলো মেয়েটাকে কেমন লাগলো?"


শুভময়--" দ্যাখো বউদি ভালোই লেগেছে হোটাসঅ্যাপে ও তো ছবি দিয়েছিলে তখন ও ভালো বলেই মনে হয়েছিল কিন্তু ..


দিয়া--" তাহলে কিন্তু কি?"


শুভ ময়--" হাইটা বেশ কম তাই না!!"


দিয়া--" তোমার সঙ্গে খারাপ লাগবে না, কথা বলে বেশ ভালো লেগেছে আমাদের যদিও তোমার দাদা যেতে পারেনি এইবার তোমার সাথে যাবে।"


শুভময় --"মেয়েটা স্মার্ট তো!!" জানোই তো আমার একটু মর্ডান মেয়ে পছন্দ।"

 

দিয়া--" দ্যাখো সবাই নিয়ে চলতে পারবে এই মেয়ে টা। রান্না ভালো পারে আর কথাবার্তা ও বেশ মিষ্টি অতি আধুনিক মেয়ে নয় তবে তোমার ভালো লাগবে। দরকার হলে কদিন একটু ফোনে কথা বলে দ্যাখো কোথাও একটা মিট করো দুজনে । ভালো লাগলেই তো বিয়ে হয় না তাই না ।" 


পরের দিন সকালে....


মিনতি--- তা শুভ সাথে কথা বলেছো ?কি বুঝলে বউমা?


দিয়া--" চিন্তা করবেন না আগে যাক দেখুক তারপর এমনি পছন্দ।

 হাইট টা নিয়ে একটু বলছিলো। আর মর্ডান কিনা জিজ্ঞেস করছিল।"


মিনতি --"তাহলে বাবাকে বলে দাও ওদের বাড়ি শুভকে নিয়ে আমরা যাবো এই কালই এটাই যেন মেয়ের বাড়িতে জানিয়ে দেয়।"


দিয়া গিয়ে তার শ্বশুর দীনেশ কে বললো।

দীনেশ ও তাপসী দের ফোন করে জানিয়ে দিলো ।তারা এবার ছেলে কে নিয়ে দেখতে যাবে।


তাপসী এদিকে শক্তিপদ এর সঙ্গে কথা বলে দীনেশ দের দুপুরে র খাওয়াতে নেমন্তন্ন করলো।।


দীনেশ ফোন রেখে বললো," দ্যাখো ওনারা আমাদের দুপুর থেকে নেমন্তন্ন করলো।"

 

মিনতি বললো," তুমি না করলে না কেন !?বিকেলে চা টাই ঠিক ছিল ,এখনো তো কিছুই ঠিক হয়নি। এখুনি দুপুরে খাওয়া দাওয়া করাটা কি ঠিক হবে।"


দিয়া--" হ্যাঁ

বাবা আপনি দুপুরে র ব্যপারটা য় মত না দিলেই পারতেন।"

 

দীনেশ বললো, "আচ্ছা চলোই না দেখাই যাক কি আয়োজন করেন ওনারা।"



মিনতি --" বউমা তুমি শুভকে গিয়ে সবটা জানিয়ে দিও ।"


এদিকে তাপসী এই দুপুরে খেতে বলা কথা টা শুনে ই অদিতি বিরক্ত হয়ে গেলো। বললো, "আচ্ছা মা তোমাদের কি কোনো মাথার ঠিক আছে? এখন কেন দুপুর এ খাওয়া র কথা বললে !!"

। 

তাপসী --"তোর বাবাই তো বললো !!তাই তো আমি ও ভাবলাম।"


অদিতি--" এখন ও তো সবটা ঠিকিই হয়নি ,তাহলে আর এত কম সময়ের মধ্যে এত কিছু আয়োজন হবে কি ভাবে?


তাপসী --"কেন রে ছোট তো আছে , তো তুই এটা নিয়ে এত ভাবছিস কেন?


অদিতি বললো, " বোন কি করবে? এখানে সেই তো বাজার আমাকেই করতে হয় ।আর তুমি ঘটা করে বোনের নাম নাও সবার কাছে।"


তাপসী --"কি বলছিস তুই ?ওর বুদ্ধি বিবেচনা সবার চেয়ে বেশি ।চয়েজ ও ভালো পুজোতে সপিং এ ও তোর সঙ্গে থাকে না? কি রে?"


অদিতি --"এটা জামাকাপড় নয় মা! এটা বাজারে আলু পটল কিনতে হবে !তোমার ছোট মেয়ে গেছে কোনোদিন ?আমিই তো বাবার সাথে তাই...বলছি। "


তাপসী --"তুই তনিমা কে হিংসে করিস । সেটা আমি বুঝি।"


অদিতি --"মা..! আর কত ওর হয়ে কথা বলবে।"


শক্তি পদ এতক্ষণ চুপ ছিল ।এবার বললো, "তুমি যদি সবসময় ছোটকে এত তোল্লাই দাও তাহলে অদিতি র তো খারাপ লাগছে।"


তাপসী-- "তুমি আবার বড় মেয়ে হয়ে বলছো?। কোন কথাটা আমি ভুল বলেছি।"


অদিতি বললো, "আমার সন্দেহ হয় মা আমাকে তোমার নিজের মেয়ে তো ভাববই না। রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।"


শক্তি পদ তাপসী কে বলল---"এভাবে তুলনা টানাটা বন্ধ করো আর তনিমা কে বাড়ির কর্ত্রী বারবার বলে কি প্রমাণ করতে চাও কি জানি।"

তাপসী--"হ্যাঁ সেই তো ও বোন কে হিংসে করে। তাই এরকম করে তুমি বুঝতে পারছ না"


দেখতে দেখতে নির্দিষ্ট সময় চলে এলো

তাপসী দের বাড়িতে ওনারা চলে এলো।

তাপসীদে র আয়জন দেখে মিনতি, দীনেশ দুজন এই খুশি। কিন্তু মনময় আর দিয়া ততটা সন্তুষ্ট ছিল না।

 

তাপসীর আচরন ওদের ভালো লাগলো না । কারণ প্রতি নিয়ত অদিতি কে সামনে রেখে তনিমা কে নিয়ে অতিরিক্ত কথা বলে গেলো ।


এরপর..

শুভময় কে নিয়ে তনিমা ওদের ঘরে গেলো দিদির সঙ্গে যাতে কথা বলতে পারে। তাপসী বললো তনিমা কে ওদের ঘরে যেনো শুভময় কে নিয়ে যায়।


দিয়া বললো, "তনিমা ওদের কে ঘরে এগিয়ে দিয়ে তুমি চলে এসো।"

 

দিয়ার ঠিক তনিমা আর আচরণ পছন্দ হয় না।


কিন্তু দিয়ার কথা তনিমা শুনলো না।


 ঠিক শুভময় আর অদিতি র সাথে ঘরে রয়ে গেল।


শুভময় বললো, "এটা তাহলে তোমাদের ঘর বাহ্ বেশ গোছানো খুব সুন্দর।


তনিমা বলল "দিদি তো সব গুছিয়ে রাখে আমার তো সময়ই হয় না। 


শুভময় অদিতি র দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ,"আপনি খুব রান্না করতে ভালোবাসে ? !!তাই না!


অদিতি বলার আগেই তনিমা র উওর ওতো বাড়িতে রান্নাই করে কলেজটা পাশ করে ব্যাস তারপর থেকে।


শুভময় আবার প্রশ্ন করলো, অদিতি আপনার ঠান্ডার ধাত আছে দিল্লীতে কিন্তু প্রচুর ঠান্ডা পড়ে।


অদিতি--

"না সেরকম নেই "

শুভ ময় --"আপনি জিন্স পরেন, পার্টি হৈচৈ পছন্দ করেন আমার কিন্তু অনেক বন্ধু।

অদিতি--"পরি তবে অনুষ্ঠানে শাড়ি আর এমনি চুড়িদার ।খুব মর্ডান ড্রেস পরি না। আর বন্ধু আমার ও এখানে আছে কলেজের সিনেমা, পার্কে ঘুরতে যেতাম ।কিন্তু সেভাবে পার্টি করিনি তবে ঠিক আছে অসুবিধা নেই।।


তনিমা বলে উঠল, "আমি খুব জিন্স পরি । আর ওয়েস্টার্ন ও  আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করছি আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিলো? কখনো আপনি মদ , সিগারেট খান??


অদিতি বললো, "কি হচ্ছে তনিমা!!"


শুভময় ডাইনিং টেবিল থেকেই তনিমা কে লক্ষ্য করছে বিরক্ত ও হচ্ছে । তবে যদি ও তনিমার মতো স্মার্ট মেয়ে তার পছন্দ ।

তবু এখানে সমন্ধ হয়েছে অদিতির সঙ্গে সেখানে এই ছোট মেয়ে এত কথা কেন বলছে।


শুভময় মনে মনে আরো ও ভাবলো, আর এদের বাবা মা বা কেমন দিদির সঙ্গে কথা বলার সময় ও এখানে কেন রয়ে গেল। 


শুভময় বিভিন্ন কথা ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে হট করে বেরিয়ে এলো।


দিয়া এসে বললো, " কি শুভ কথা বললে।


শুভময়-- "হুম... বউদি।"


দিয়া--" তোমার ফোন নাম্বার টা অদিতি কে দিয়েছো? 


শুভময় অদিতি কে ফোন নাম্বার টা দিয়ে এলো বললো, " এটাতে ফোন করতে পারেন।।"


বাড়িতে ফেরার পথে

মনময় বললো, " শুভ !কিরে !কেমন লাগলো তোর।"

শুভ ময় কোন উত্তর দিল না।। গোটা রাস্তায়।।


বাড়ি ফিরে এলো ওরা সবাই...


পরের দিন ...


সকালে শুভময় কে দীনেশ জিগ্গেস করলো ,"শুভ বল !!তোর মতামত?


শুভময়--"দেখো বাবা মেয়েটাতো খুবই কম কথা বলে অতটা স্মার্ট বলে মনে হলো না ।তবে খুবই ভদ্র কিন্তু সবচেয়ে অস্বস্তি কর ওই ছোট মেয়েটা, বেশ স্মার্ট কাল তো ওই সব কথা বলল । মনে হয়েছিল বিয়েটা যেন ওর। প্রতি কথায় কথা বলেছে আমি অদিতি কে প্রশ্ন করলে সবসময় ও উওর দিচ্ছে।"


মিনতি --"এত অদ্ভুত ব্যাপার ওদের বাড়িতে ও তো ওই ছোট মেয়েটাকে নিয়ে বেশি কথা বলে ওর মা আমি ও দেখেছি, ভারি অদ্ভুত।"


দীনেশ---" আমি বরং নীতাকে একটা ফোন করি ।"


দিয়া বলে উঠল, " কি বলবেন বাবা নীতাকে?

দীনেশ --"বলবো শুভ বলছিল মেয়েটা কথা বলেনি। এরকম তো ঠিক না আর ছোট মেয়েটা বা ওদের মাঝে ছিল কেন? এটা শোভনীয় ব্যপার নয় তাই না।

এভাবে তো আর বেশি দিন ঝুলিয়ে রাখা ঠিক হবে না।"


নীতাকে দীনেশ এই কথা বলার পর নীতা তাপসী কে ফোন করে। জানানোর পর তাপসী এবার অদিতি কে এক গাদা কথা শোনায় বলে, 


"তুই একটু স্মার্ট হতে পারতিস বোন এর কাছ থেকে কিছু শেখ বুঝেছিস?


অদিতি বলে উঠল, "একটা অচেনা লোকের সাথে যতটুকু বলার তত টাই বলেছি তাছাড়া তনিমা ওখানে ছিল কেন ওর ওতো কথা বলার কি দরকার ছিল ? তুমি আমাকে স্মার্ট হতে বলছো আর ও যে অভদ্র সেটা তো বলছো না। ওতো সব কথা বলছে আমাকে কিছু বলার সুযোগই দেয় নি সেটাও তো নীতা আন্টির বললো সেটা বলছো না যে ।

আমি ওই শুভময় এখুনি ফোন করবো। ফোন নাম্বার তো দিয়েছে তাই ফোন করতেই পারি।"



অদিতি ফোন করলো ওদিক থেকে শুভময় ফোন ধরলো। 

অদিতি --কেমন আছেন?

ফোন নাম্বার টা দিয়ে ছিলেন তাই ভাবলাম করি ব্যস্ত ..?

শুভ ময় --"না না বলুন আপনি এখন এই সময় কি করেন এখন তো সন্ধ্যা

অদিতি--" একটু মোবাইল দেখি নয়তো টিভি।

আপনি কি করেন দিল্লীতে এই সময়।"


শুভ ময়--

"আমার ফিরতে রাত হয়ে যায়, কাজে থাকি এ সময়।"

অদিতি--

"কবে ফিরছেন?"


শুভ ময়--"এই ফিরে যাবো..!"

অদিতি বলে উঠল, "আপনি আমার নামে যেটা বলেছেন সেটা ঠিক করেননি।"


শুভময় বলে উঠল, 

কি বলেছি ?"

অদিতি বললো, 

"নীতা আন্টির তো বললো আপনি নাকি বলেছেন আমি স্মার্ট নয় ।"

শুভময় বললো, 

"হ্যাঁ মানে আপনি সেদিন খুব কম কথা বলেছিলেন,সব কথা তো তনিমা বলছিল সেইটা বলেছি ওভাবে কিছু বলিনি কিন্তু।"


 অদিতি বলে উঠল, "দেখুন আপনার কাছে যদি স্মার্ট হওয়া মানে জিন্স পরা হয়। তাহলে আমার কিছু বলার নেই ।আর একজন অচেনা মানুষ এর সঙ্গে কথা বলতে একটু তো সময় লাগে। নইলে তো হয়তো বলতেন আমি বেশি কথা বলি বাচাল। যাইহোক আপনি কিন্তু সত্যি কথা বলতে পারতেন।"


শুভ ময়-- "কোন সত্যি ?"

অদিতি --" এই যে আপনার তনিমা কে পছন্দ হয়েছে। মানে আমার ছোট বোনকে।

সেইটা জানাতে পারতেন এখন সবাই আমাকে ভুল বুঝলো।"

শুভময় বলে উঠল, 

"সেটা জানালে কি আপনার ভালোলাগতো? আপনাকে পছন্দ করতে এসে আপনার বোনকে পছন্দ হয়েছে এটা খুব খারাপ হতো সবাই জানলে।"


অদিতি--


"আপনি চাইলে আমি সবাইকে বলতে পারি। আমার কোনো অসুবিধা নেই কি হলো বলুন অনন্ত সবাই এটা বুঝতে পারবে যে আমার কম কথা বলার জন্য আপনি আমাকে অপছন্দ করেন নি। আমার পাশে আমার বোন ছিল যে কিনা বেশি কথা বলে তাকে নিয়ে আমার কমপ্যায়ার করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"

শুভময় --" বাবা আপনাকে দেখে বোঝাই যায় না আপনি এত ভালো সাইকোলজি বোঝেন অন্যদের মনের।

দেখুন অদিতি! বিয়েটা তো হচ্ছে না আর, তাই শুধু শুধু এসব ঝামেলার কি দরকার বলুন তো!

অদিতি বললো,"ঝামেলা তো আপনি করলেন মিথ্যে বলে। নীতা আন্টি ও ভুল বুঝলো আর তার থেকে এই কথা মায়ের সব কলিগ রা জানবে। এই টাই আমার বাজে লাগলো।"

এরপর 

ফোন রেখে দিলো অদিতি।


এরপর তাপসী বড়মেয়ে কে জিজ্ঞেস করল, কি রে কি বললো ছেলেটা?",  

অদিতি --"তুমি কি শুনতে চাও সেইটাই কিন্তু হয়েছে। তোমার বাড়ির কর্ত্রী কেই শুভময়ের পছন্দ করেছে কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারে নি তাই বানিয়ে মিথ্যা বলেছে। 

প্রতিবার তো সবাই ওকেই হয়তো পছন্দ করছে তাছাড়া তুমি তো ওকেই বেশি ভালোবাসো ওকে নিয়েই গর্ব করো তাই আমার মনে হয় ওর বিয়েটাই আগে দাও মা।"


তাপসী অবাক হয়ে বলল,

"শোন এটা তোর ভুল ধারনা আমি চাইনি এমনটা হোক ,

তাপসী চেয়ারে বসে পড়লো । তারপর বললো আমি ওকে নিয়ে গর্ব করেছি মাঝেমধ্যে বাড়ির কর্ত্রী ও বলেছি এটা ঠিক কথা তাই বলে ও যে এভাবে সেদিন তোদের মাঝে এত কথা বলবে এটা আমি চাইনি।


তনিমা হঠাৎ ঘরে ঢুকলো, এসে বললো "কি হয়েছে ?তোমরা এভাবে...সব।"

তাপসী একটা ঠাস করে চড় মারল তারপর বললো," ছিঃ তুই এভাবে দিদির বিয়েটা ভাঙলি। কর্তী বলেছিলাম বলে যা খুশি তাই করবি।" 


তনিমা-- "মা তুমি আমাকে চড় মারলে !চিরকাল আমার বুদ্ধি বেশি আমার রোজগার বেশি দিদির তুলনায় অনেক বেশি স্মার্ট এটা তো সত্যি তাই হয়তো শুভময়ের আমাকে পছন্দ হয়েছে।তাহলে আজ তুমি আমাকে দোষ দিচ্ছো।"

শক্তিপদ পাশের ঘরে থেকে সব শুনে ছুটে এসে বললো, "তোকে বাড়ির কর্ত্রী বলাই ভুল হয়েছে । তুই যোগ্য নস।কর্তী সে যেসব সামলে রাখতে পারে যাক তোদের মা দেরি হলেও বুঝেছে, তুই এত খারাপ মনের হলি কি ভাবে তাই ভাবছি। তোর রোজগার এর টাকা আমাদের চাই না।"


তাপসী বললো, অদিতি কে কাছে টেনে তুই চিন্তা করিস না আমি তোর খুব ভালো বিয়ে দেবো , এসব কথা ভুলে যা। 

অদিতি মনে আজ খুব শান্তি পেলো মনে মনে ভাবলো, তার মা অন্তত আজ ঠিক ভুল যাচাই করেছে ,এই বিয়েটা ভেঙে হয়তো ভালই হয়েছে। তনিমা এবার নিশ্চয়ই শুধরে যাবে।









 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama