প্রানের সোনা পাওয়া
প্রানের সোনা পাওয়া
কি বিরক্তিকর কান্ড দ্যাখো !! বলেই বসে পড়লো সোফায়, হিরেন ।
পপিতা বললো, "কি হয়েছে ?এত বিরক্তি দেখাচ্ছো, হয়েছে টা কি??
হিরেন -- "ব্যাগ টা একবার দেখো তাহলে বুঝতে পারবে কোনো মানে হয় এসব এর।"
পপিতা -- "ব্যাগটা খুলে দেখলো তারপর একটু অবাক হয়ে বললো তুমি অফিস থেকে আসছো যখন এই কাজ তারমানে অফিসের কেউ করেছে।"
হিরেন -- "না আমি অফিস থেকে আসছিনা তো !!"
পপিতা-- "মানে তুমি তো সকালবেলা অফিস ই গেছিলে তাহলে আজকাল কোথায় যাও শুনি?"
হিরেন --" উহঃ তুমি ও যেমন, অফিসই গেছিলাম ।"
পপিতা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো ," এই তো বললে যাওনি তারপর আবার বলছো গেছো তুমি তারমানে মিথ্যে ও বলছো!!"
হিরেন --- "আরে আমাকে তো বলতেই দিচ্ছো না তুমি !! আশ্চর্য তো !! তাহলে ভাবো যা খুশি।"
পপিতা-- "আচ্ছা সরি বলো কি হয়েছে।"
হিরেন --- "অনেক দিন ধরে লোলিত বলেছিল ওদের বাড়ি যেতে তো ওদের বাড়ি গেছিলাম ওখানে সমীক ও এসেছিল। আসলে সেই জন্য ই ভাবছি কে করলো।।"
পপিতা -- "তারমানে কে বোঝাই মুস্কিল।। আচ্ছা লোলিত দার বাড়িতে যখন গেছিলে ওখানে তো লোলিত দার বউ ও আছে?"
হিরেন -- "না না বউদির বাপের বাড়ি গেছে তাইতো লোলিত গল্প করার জন্য বললো বাড়িতে একা আছি চলে আয়।। তারপর সমীক এলো , খানিকটা সময় গল্প করলাম, বউদি মোমো বানিয়ে রেখে গেছিল সেই খেলাম আমরা তারপর..."
পপিতা --" তারপর? তোমার ব্যাগটা কেউ হয়তো নিয়েছিল তুমি খেয়াল করোনি দ্যাখো অফিসে এ ও হতে পারে আবার লোলিত দা র ও হতে পারে।। এত বোঝাই মুস্কিল।"
হিরেন -- "আমাদের বাড়িতে এসব কখনো দেখিনি, দাদার বিয়ের পর ও কখনো তাছাড়া বউদি তো কত মর্ডান দেখেছো তো ।
মা চাকরি করতো এসব নিয়ে তেমন বাড়াবাড়ি এ বাড়িতে হয় না।"
পপিতা--" এখন কি করবে তাহলে? আমি একবার ছোট বেলায় দেখেছিলাম , আমার মেজ কাকার বাড়িতে হয়েছিল। ওদের বাড়িতে খুব রাগারাগি হয়েছিল।"
হিরেন -- "আমার তো খুবই অস্বস্তি হচ্ছে, কি হবে জানিনা, বাড়িতে ব্যাপার টা কি চেপে যাবো? তুমি কি বলো!!"
পপিতা-- "বিষয়টা যদি আড়াল করি আর পরে যদি সমস্যা হয় , ওই মেজ কাকাদের তো হলই না , জানো!!
আমার মনে হয় আশীর্বাদ অভিশাপ এর ব্যাপার আছে।"
হিরেন --" তুমি কোন যুগে বাস করছো বলতো, যত সব সেকেলে ব্যপার, তাছাড়া আমার বাড়িতে এসব দেখিনি কখনো। "
পপিতা-- "কিন্তু মেজো কাকুর ব্যপার টা তার জন্য পরে ঠাকুমা বলেছিলো, আশীর্বাদ না পেলে ওমন হয়। আমাদের ও যদি এরকম হয়।"
হিরেন -- যত সব বাজে কথা, এরকম আবার হয় নাকি কত লোকে জানেই না।। তাদের .. আজব সব কথা .."
পপিতা-- "কিন্তু যারা জেনে গেলো , "
ঘরের বাইরে দরজা টা একটু আলতো করে ঠেলা ছিল, সেখানে ফাঁক দিয়ে হিরেনের বোন অশমিতা বলে উঠলো, "কি রে ঢুকবো ?"
অশমিতা র গলা শুনে পপিতা হিরেন ব্যাগটা লুকিয়ে ফেললো তড়িঘড়ি।
অশমিতা দেখলো যে ওরা কিছু লুকাচ্ছে ওমনি সন্দেহ শুরু।
অশমিতা ঢুকেই বললো, "তোরা কি করছিস বলতো, মা কখন থেকে চা খাবে বলে অপেক্ষা করছে, বড়দা বউদি সবাই এসে গেছে অফিস থেকে, বসার ঘরে। "
হিরেন -- "একটু প্রাইভেট কথা বলবো তার কোনো উপায় নেই তোকে নাক গলাতেই হবে।"
অশমিতা হেসে বললো-- "তা শুধু কথা নাকি অন্য কিছু ও চলছিল!! "
হিরেন -- "দিন দিন তুই একটা ফিচেল তৈরি হচ্ছিস। "
পপিতা হেসে বললো---" তুমি না অশমিতা সত্যি, আমি যাচ্ছিলাম এখুনি , আসলে তোমার ছোড়দা অফিস থেকে এলো তাই এটা ওটা কথায় কথায় দেরি হয়ে গেলো এই যা..!! "
এরপর পপিতা ঘর থেকে বেরোলো তারপর হিরেন বললো যাই আমি ফ্রেশ হই।
অশমিতা হিরেন দের ঘরে একা ওমনি গোয়েন্দা গিরি করে ব্যাগ খুলে সব দেখে সবটা বের করে বসার ঘরে সবার সামনে হাজির তারপর শুরু করলো অশমিতা র নানান ভনিতা।বললো , "আমার কাছে একটা গোপন খবর আছে।"
অশমিতা র বড়বউদি তুলিকা বললো, "কি খবর গো !!"
অশমিতার বড়দা সৌমেন বললো, "ছাড়তো অসমিতাকে চেনো না বরাবর ফিচেল, শুধু বাজে বকে।।"
ওদিকে অশমিতাদের বাবা ভবতোষ বসে খুব আস্তে করে টিভি দেখছিল।। আর ওদের মা সুভাষিনী বসে উল বুনছিল, বলে উঠলো কি হয়েছে আশমি এত চিৎকার করে কি খবর এনেছিস।।
অশমিতা -- "দাঁড়া ও মা ..আগে তোমার ছোট ছেলে আর পপি বউদ
িকে আসতে দাও।"
পপিতা চা বিস্কুট, সন্ধ্যাএর টিফিন বানিয়ে আনলো সবার জন্য।।
তুলিকা বললো, "ওই তো পপিতা এসে গেছে।।"
আর তারপর হিরেন ও ঢুকলো।
সৌমেন -- "হ্যাঁ রে হিরেন তুই কিছু জানিস অশমিতা কি বলবে।"
হিরেন মাথা নাড়লো।
তুলিকা -- "কি হয়েছে হিরেন তোমাকে আজ কেমন টেনসড লাগছে।"
অশমিতা -- "সেইতো ছোড়দা পপি বউদি দুজনেই টেন্সড কেন জানো কারণ হলো এই কাগজ.."
হিরেন পপিতা একে অপরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে।
তুলিকা-- "এটা কিসের কাগজ?"
সুভাষিনী-- "ভনিতা না করে একটু তাড়াতাড়ি তুই বলবি কি হলো অশমি , উহঃ .."
তারপর আশমিতা পড়তে শুরু করলো
কাগজ টা খুলে ,
কাগজে লেখা
"To পাপা,
পাপা পাপা
ব্যাগটা খোলো, চোখটা মেলো
আমি তোমার মিষ্টি খোকা
দাঁড়িয়ে আছি একলা একা।
পেরিয়ে এলাম অন্ধকারের কালো
এবার তোমার ঘর করবো আলো।।
বাইরে হিম পড়ছে
আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে
ও বাবা তুমি সোনা বলে
কখন আমায় নেবে তুলে..
from খোকার কাকুরা।""
সবাই এবার একে অপরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে
তারপর আশমিতা বের করলো ঠাকুরের মূর্তি টা যেটা ছোড়দা র ব্যাগে ওই চিঠির সাথে সে পেয়েছিল।।
ভবতোষ মৃদু হেসে বললো, "আরে এতো কার্তিক ঠাকুর।কে দিলো রে হিরেন ? তোকে!"
হিরেন -- "কি জানি বাবা ! বুঝতে পারছি না ব্যাগ খুলে আজ সন্ধ্যেতে দেখছি , কি বিরক্তিকর কান্ড।"
সুভাষিনী-- "তোর অফিসের কেউ হয়তো করছে।"
তুলিকা হেসে বললো, "যেই করুক খুব ভালো করেছে , এবার তাহলে মা পুজোর আয়োজন টা তো করতে হবে।। "
হিরেন -- "বউদি তুমি এসব এ ইন্টারেস্ট রাখো আমি তো ভাবতেই পারছি না তাছাড়া মা ওতো পুজোর ব্যপারে তেমন একটা ইন্টারেস্ট দেখাত না , ছোট থেকে ই দেখেছি।"
সুভাষিনী-- " সেটা হয়তো আমাদের বাড়ি কমই হতো, আমি চাকরি তে যেতাম, তোদের বাবার অফিস, তোদের স্কুল এসব কিছু সামলাতে হিমসিম,তাই পুজো নিয়ে ওতো কখনো করে উঠতে পারিনি, তবে একটা মঙ্গল অমঙ্গল বলে ব্যাপার আছে তো !! কার্তিক ঠাকুর যখন এসেছে আমাদের বাড়িতে তার পুজো তো করতেই হবে।।"
তুলিকা -- "সত্যি আমার খুব মজা হচ্ছে।। পপিতা এবার কিন্তু তোমরা এটা সোনা এনেই ফেলো। চারবছর ধরে তোমাদের প্রেম তারপর তোমাদের বিয়ে এই দু বছর হতে যাচ্ছে, এবার একটা প্ল্যান করেই ফেলো।।
পপিতা র মুখ নীচু লজ্জায়। হিরেন তাকিয়ে পপিতার দিকে।।
সুভাষিনী-- " হ্যাঁ তুলিকা ঠিকই বলছে এবার এটা তোমরা ভেবো।।
ওদিকে তুলিকা ও সৌমেন এর মেয়ে ক্লাস টুতে পড়ে রিমি।
হঠাৎ বলে উঠল সোনা কিভাবে কামমা আনবে ওটা তো দোকানে থাকে তাই না !!"
সবাই ওমনি হেসে উঠলো।।
তুলিকা -- " এই সোনা হলো তোমার খেলার সাথী হবে বুঝেছো।।
রিমি বলে উঠলো, " কি মজা কি মজা !!"
ভবতোষ -- "এই পুজো র বাজারে কি কি লাগে ? "
সৌমেন -- "বাবা বামন ঠাকুর কে ফোন করে জেনে নিলেই তো হয়।"
সুভাষিনী-- "হ্যাঁ ওনাকে ফোন করে ডাকো।"
তুলিকা -- "পুজোটা তো এ সপ্তাতেই ভাবে কার্তিক মাস শেষ হচ্ছে।"
পরিবারের সবাই কার্তিক পুজো নিয়ে ব্যস্ত হলো।।
শেষে পুজোটা হয়ে গেল।।
সন্ধ্যা বেলা ছাদে দাঁড়িয়ে হিরেন আর পপিতা
হিমেল হাওয়া দিচ্ছে।
হিরেন বললো-- "এবার মনে হচ্ছে শীতটা এসেই গেল।"
পপিতা --" সত্যি কেমন একটা হাওয়া দিচ্ছে।।"
পপিতা আবার বললো, " তুমি জানতে পারলে কে দিয়েছিল ওই ছড়াটা আর কার্তিক ঠাকুর।।"
হিরেন -- "জানি না তবে প্রথম এ বিরক্তি লাগলেও এখন ভালোই লাগছে।।"
পপিতা হেসে হিরেন এর হাতে হাত রাখলো
পপিতা হিরেন হাতে হাত দিয়ে কিছু সময় আর একে অপরের দিকে তাকিয়ে দিন গোনা শুরু করলো সেই অমূল্য প্রানের সোনা পাওয়ার আশায়।।