Partha Pratim Guha Neogy

Comedy Classics

2.7  

Partha Pratim Guha Neogy

Comedy Classics

কাকার কীর্তি

কাকার কীর্তি

3 mins
1.3K


আমাদের পাড়ার আমার আপনার সবার কাকা পিন্টু কাকা। হেব্বি চালু মাল। মানুষকে কিভাবে ঠকাতে হয়, সেদিক দিয়ে ওর ডক্টরেট করা আছে। শুধুমাত্র মানুষকে ঠকানোই নয়, মানুষকে এমনভাবে জব্দ করবে যে, সেই মানুষটিই হাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে।কিন্তু কাকাকে দেখলে মনে হবে না যে এই লোকের এই সব কীর্তিকলাপ। চেহারার মধ্যে একটি অসম্ভব ভদ্রলোকের ছাপ - সুন্দর চেহারা। আর সবচেয়ে দেখার মত হল তার ব্যবহার। খুবই আস্তে ধীরে কথা বলেন। অহেতুক বেশী কথা বলেন না - ঠিক যতটুকু দরকার তার বাইরে একটি বাক্য অযথা ব্যয় করেন না। ওনার সব কথাই থাকে যুক্তি নির্ভর - তাই যারা ওনার শ্রোতা হিসাবে থাকেন বা যারা আলাপচারিতায় থাকেন তারা ওনার কথায় মুগ্ধ হয়ে যান। ওনার এই বাকি পটুতা লোকেদের মনে ওনার জন্য একটা আলাদা জায়গা তৈরী করে দেন। ওনার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটালেও লোকে বিরক্ত বা একঘেয়ে অনুভব করেন না। ফলে নিজেদের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক তৈরী হয়ে যায় - আর এটাই পিন্টু কাকার USP। আর এর জোরেই পিন্টু কাকার এত প্রতিপত্তি - আর এর জোরেই উনি এত কিছু করে বেড়ান।


 কাকার ছেলেটাও হয়েছে তেমনি - যেমন বাপ তেমনই বেটা।


এই তো সেদিন এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দুইজনে হেঁটে হেঁটে বাড়িতে ফিরছিল। রাস্তায় পিন্টু কাকার ব্যাটার পেয়ে গেল সুসু। এদিকে কাকাও এগিয়ে চলছে, আর পিছনে ব্যাটা হালকা হচ্ছে। ব্যাটা হালকা হওয়ার পর দেখল, তার বাবাকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রাস্তায় অনেক লোক, এক জায়গায় আবার লোকের জটলা দেখা যাচ্ছে কিন্তু তার বাবাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।


বাবা গেল কোথায়, এই চিন্তা করতে করতে ছেলে চেঁচিয়ে উঠল- “পিন্টু , আরে এই পিন্টু । গেলি কোথায় রে? আরে এই পিন্টু । এদিকে আয় আমি এহানে আছি।”


ছেলেকে নিজের নাম ধরে ডাকতে শুনে পিন্টু কাকা বেজায় ক্ষেপে গেলেন। ছেলের কাছে দৌড়ে এসে বললেন- “হ্যাঁ রে তোর কি একটুও আক্কেল জ্ঞান নাই রে। তোর বাবার নাম ধরে তুই বাবাকেই ডাকছিস! আমি তোর বাপ নাকি তোর বন্ধু, যে নাম ধরে ডাকছিস?”


এটি শুনে কাকার ছেলে বলল- “বাবা রাগছো কেন, তুমিই তো সবসময় বলতে উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করতে। তাই আমিও তাইই করেছি। এই যে দেখ রাস্তায় এত লোক হাঁটাহাঁটি করছে, ওই খানে আবার একটা জটলাও দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি যদি ‘বাবা’ বলে চেঁচিয়ে উঠি সেই লোকগুলি সবাই আমার দিকে দেখবে। কারণ সবাই ভাববে তাদের বাচ্চা ডাকছে বুঝি, তাই আমি ভাবলাম তোমার নাম ধরেই ডাকি, তাহলে তুমিই আসবে, আর বাকিরাও দেখবে না। তাই বাবা না পিন্টু বলেই ডাকলাম। আমার অনেক বুদ্ধি আছে তাই না বলো পিন্টু, I mean বাবা!“

এত গেল পিন্টু কাকার ছেলের কীর্তি,

এবারে পিন্টু কাকার একটি ঘটনা বলি,


দুই বছর আগে কাকা এক মহাজনের কাছ থেকে ১০০১ টাকা ধার নিয়েছিলেন। এই সব দক্ষিণার মত ১০০১ টাঁকা কে ধার নেয় ভাই, কিন্তু কাকার নাকি ১০০১ টাকাই চাই। সে যাই হোক মহাজন বাবাজী ১০০১ টাকা দিয়েছেনও বটে। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেলেও পিন্টু কাকার টাকা পরিশোধ করার কোনো নাম গন্ধ নেই। ওদিকে আবার মহাজনও ভেবে বসে আছেন, কয়েকদিন যাক, ব্যাটার কাছ থেকে সুদেআসলে সব হাসিল করে নেব। এতো গেল বছর দুয়েক আগের কথা।


সেদিন বাজারে মহাজন চিন্টু কাকাকে দেখে টাকা ফেরত দিতে বললেন। কিন্তু কাকা বললেন- “আরে মশাই, আপনার টাকা খেয়ে আমি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি। আপনি তো বড্ড বেয়াদব মশাই। প্রতিদিন শুধু টাকা চান।


প্রতিদিন কোথায়, আজকেই তো শুধু চাইলেম।

উম্মম বললেই হল। কাল বাজারে দেখা করবেন।


পরের দিন আবার বাজারে মহাজনের সাথে কাকার দেখা। কিন্তু সেদিনও কাকা টাকা দিলেন না। এদিকে মহাজন প্রচুর রেগে গেলেন। তিনি ভেবে রাখলেন এবার পিন্টুকে পেলে এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন।


দিন দুয়েক পর , আবার বাজারে দুইজনের দেখা হয়। মহাজন কাকাকে দেখেই কলার চেপে ধরলেন। কাকা বাড়িতে আসতে বললেন। পরের দিন মহাজন বাড়ি আসলেন। এদিকে চিন্টু কাকা, একটি ঝুলিতে গোটা কয়েক আমের আটি তার হাঁতে দিয়ে বললেন। জানেনই তো সবুরে মেওয়া ফলে। এই আটি গুলিকে বাড়িতে গিয়ে পুঁতে দিন, আর মাত্র ১০ টা বছর অপেক্ষা করুন, আপনার টাঁকা আপনি ১০ বছরের সুদে আসলে ফেরত পেয়ে যাবেন। তাছাড়াও আম গাছের ভালো তক্তাও হবে।


কি হলো? কি বুঝলেন কাকার কীর্তি?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy