Sayandipa সায়নদীপা

Horror Comedy

1.9  

Sayandipa সায়নদীপা

Horror Comedy

প্রতিদ্বন্দ্বী

প্রতিদ্বন্দ্বী

4 mins
1.6K


“সোনা এতো আওয়াজ কোরো না, লোকটা জেগে যাবে যে!”


“তুমি থামবে? তখন থেকে কানের কাছে মিউ মিউ করে যাচ্ছ, বলি লোকটাকে আমার থেকে বেশি তুমি চেন নাকি? ওর ওই কুম্ভকর্ণের ঘুম এতো সহজে ভাঙবে না।”


“আহা সোনা রাগ করছো কেন! বলছি যে…”


“কিচ্ছু বলতে হবে না, যাও দিকি বাপু যাও এই বদ্ধ ঘরে তোমার ঐ গায়ের আঁশটে গন্ধ আর সহ্য করতে পারছিনা। উফফ!”


“রাগ কোরোনা গো, কি করবো বলো নিরামিষাশী পরিবারে জন্মেছিলাম বলে বেঁচে থাকতে তো মাছ কপালে জোটেনি তাই মরার পর…হেঁ হেঁ...”


“মরার পর মেছো ভুত হওয়ার শখ হয়েছে, যত্ত সব! যাও দিকি যাও ছাদে গিয়ে একটু হাওয়া লাগিয়ে এসো গায়ে, তাতে যদি গন্ধটা কিছুটা কমে।”


  প্রেমিকার হুকুম অগ্রাহ্য করা কি আর চাট্টিখানি কথা! তাই অগত্যা চন্ডিচরণ তাঁর সূক্ষ্ণ দেহ নিয়ে ছাদে চললেন গায়ে হাওয়া লাগাতে। এদিকে এই সবে এক সপ্তাহ ভুতত্ব প্রাপ্তি হওয়া মিনতি দেবী পাগলের মত খুঁজে চলেছেন তাঁর দোক্তার কৌটো, মরার পরেও নেশাটা কিছুতেই ছাড়তে পারছেননা। এই কুম্ভকর্ণটা কৌটোটা কোথায় রেখেছে কে জানে! ঘুমন্ত মোহিনীমোহনের দিকে একবার তাকিয়ে নিলেন মিনতি দেবী। আর কিছুদিন হলেই দাম্পত্য জীবনের হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলতেন দুজনে কিন্তু তার আগেই মিনতি দেবীর ওই জটিল রোগখানা ধরা পড়লো… যাইহোক এখন বেঁচে থাকলে কি হতো না হতো তার থেকেও দোক্তার কৌটো খোঁজাটা বেশী জরুরি।


  “টুকি”... দোক্তার কৌটো না পেয়ে বিরক্ত মুখে ছাদে যাচ্ছিলেন মিনতি দেবী, হঠাৎ কেউ পিঠে টোকা মারতেই চমকে উঠলেন তিনি। পেছন ফিরে দেখলেন তাঁর দোক্তার কৌটোটা হাতে নিয়ে হাওয়ায় ভাসছেন মোহিনীমোহন, শুধু ভাসছেনই না সেই সাথে বত্রিশপাটির অবশিষ্ট কখানি বের করে হাসছেনও তাঁর দিকে চেয়ে। 

“ত...তুমি!”


“হ্যাঁ গো গিন্নি আজ ঘুমের মধ্যেই পঞ্চত্ব প্রাপ্তি হয়ে গেল, তোমার অশৌচে ওই রোজ রোজ গায়া ঘিয়ে ভাজা লুচি সহ্য হলোনা আর এই বয়েসে। তাও ভালো তোমার মতো কষ্ট পেতে হয়নি আমাকে।”


“তুমিও তার মানে!”

“হুম আমিও তারমানে এখন তোমারই মতো...হাঃ হাঃ।

তা তোমার প্রেমিকটি কোথায় গেল?”


“আমার প্রেমিক!”


“হু হু আমি কি আর কিছুই দেখিনি ভেবেছো! অনেক্ষণ ধরেই দেখছিলাম তোমাদের পরকীয়া।”


“হে পরকীয়া কিসকো কাহা? ইয়ে হ্যা হামারা বিশুদ্ধ প্রেম, সমঝা?” 

কোথা থেকে যেন হঠাৎ করে উদয় হলেন চন্ডিচরণ। বেঁচে থাকতে হিন্দি সিনেমার নায়ক হওয়ার খুব শখ ছিল তাঁর, তাই যখন তখন হিন্দি বলা অভ্যাস করতেন। মরার পরেও মাঝে মাঝে সেই পুরোনো স্বভাবটা সুড়সুড়ি দিয়ে বসে।


“হিন্দি ঝাড়তা কিঁউ হ্যা মশাই? বাঙালির বাংলা বোলনে মে লজ্জা ক্যায়সা?” 

চন্ডীচরণকে টেক্কা দিতেই কিনা কে জানে মোহিনীমোহনও শুরু করলেন তাঁর বিখ্যাত হিন্দি।

এদিকে মোহিনীমোহনের হিন্দি শুনে নিজের অভ্যাসকেই অব্যাহতি দেওয়া সমীচীন মনে হলো চন্ডিচরণের, 

“আহ এসব ছাড়ুন, সোজা পয়েন্টে আসুন, বলুন পরকীয়া না কি যেন বলছিলেন?” 


 “হুহ পরকীয়া নয়তো কি শুনি? লোকের বউয়ের সাথে প্রেম করছেন আবার বলেন কিনা বিশুদ্ধ প্রেম!”


“শুনুন মশাই ওসব বউ ছিল মরার আগে, মরার পর এখন আর বউটউ নেই, মিনু ডার্লিং এখন শুধু আমার প্রেমিকা। বেঁচে থাকতে আমাদের বাবারা আমাদের বিয়ে দিলো না, এখন আবার মরার পরে আপনি এসেছেন হিটলারগিরি করতে! ভাগুন তো মশাই ওসব হবেনা। আমাদের শান্তিতে প্রেম করতে দিন।”


“হবেনা বললেই হলো? শান্তিতে প্রেম করবেন তো করুন না বাপু কে মানা করেছে, কিন্তু আমার বউকে নিয়ে টানাটানি কেন?”


“আপনার বউ হওয়ার আগে ও আমার প্রেমিকা ছিল। মরার পরও তাই আগে আমার প্রেমিকাই হবে।”


“মগের মুল্লুক নাকি! আমার বউ আমি কাউকে দেব না…” এই বলে প্রবল আক্রোশে মোহিনীমোহন ঝাঁপিয়ে পড়লেন চন্ডিচরণের ওপর। 


  মুহূর্তের মধ্যে মোহিনীমোহনের বাড়ির সুবিশাল ছাদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে শুরু হয়ে গেল তুমুল লড়াই। সাময়িক বাধা দেওয়ার একটু চেষ্টা করে একপাশে সরে এলেন মিনতি দেবী। আসলে মনে মনে বেশ পুলকিত হচ্ছেন তিনি, ডাকসাইটে সুন্দরী হওয়ার কারণে কিশোরীবেলা থেকে এরকম কতো প্রেমিক ছিলো তাঁর যারা তাঁকে পাওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে চুলোচুলি করতো কিন্তু মিনতি দেবী কাউকে পাত্তা দেননি, শুধু কি করে না জানি চন্ডিচরণ বাবুকে বড্ড মনে ধরে গিয়েছিল। তবে তাঁকে পাওয়ার জন্য এমন প্রকাশ্য লড়াইতে আজ অবধি কেউ নামেনি। নিজেকে আজ তাঁর শেরিডানের সেই সুন্দরী নায়িকা লিডিয়ার মতো মনে হচ্ছে বারবার।


   ছাদটা ক্রমশ ভর্তি হয়ে যাচ্ছে ভুত দর্শকে, ভুতলোকের সদস্যদের বলে আজ প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে একটাও এরকম চটপটা এন্টারটেইনিং ফাইট দেখতে না পেয়ে মনুষ্য ঘিলু গুলো পেটে ঠিক হজম হচ্ছিল না! তাই তারা আজ দারুণ খুশি। জোরে জোরে চিৎকার করে সবাই উৎসাহ দিচ্ছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে। এদিকে ভুতত্ব প্রাপ্তি হওয়ার পর থেকে একটু আগে অবধিও মিনতি দেবীর এমন করে এতো ভুতকে একসঙ্গে দেখার সুযোগ হয়নি তাই ফাইট ছেড়ে এখন লাট্টুর মতো তাঁর চোখদুটো ঘুরে ঘুরে দেখছে বিচিত্র সব ভুত দর্শকদের। 


  ভুত দর্শনে ব্যস্ত মিনতি দেবীর সামনে হঠাৎ ঝপ করে একটা ভুত এসে নামলো, “কি সুন্দরী চিনতে পারছো আমায়?” সত্যিই তো বড্ড চেনা চেনা ঠেকছে না এই ভুতটাকে! কোথায় যেন দেখেছেন! আরে এতো তাঁর বাপের বাড়ির পাড়ার রঘু মস্তান যে কিনা ক্লাস নাইনে পড়ার সময় তাঁকে প্রপোজ করেছিল। দামড়া হুমদোটা মরে গিয়ে এত্ত হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে! ওর থেকে চোখ ফেরাতেই ইচ্ছে করছে না মিনতি দেবীর। তাও কষ্ট করে একবার ঘুরে দেখে নিলেন লড়াইতে মত্ত চন্ডিচরণ আর মোহিনীমোহনকে, একটা রোগা লিকলিকে মেছো ভুত আর অন্যটা কুলোর মতো কান, মুলোর মতো খান দশেক দাঁত বিশিষ্ট একটা একানড়ি যেন। রঘু মস্তানের দিকে আবার ফিরলেন মিনতি দেবী, তাঁর স্পন্দনহীন হৃদয়টা ব্যাঙ বাচ্চার মতো লাফালাফি জুড়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। 

“সুন্দরী আমার সাথে যাবে নাকি তেঁতুল তলার মাঠে হাওয়া খেতে?”

“ওহ শিওর।” এই বলে একগাল হাসি নিয়ে রঘু মস্তানের বাড়ানো কনুইটা শক্ত করে ধরে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলেন মিনতি দেবী; পেছনে পড়ে রইল ডুয়েলরত তাঁর দুই পাণিপ্রার্থী।


‘ডেথ’ ইজ অল আবাউট চেঞ্জেস, মরার পরে ওইসব পুরোনো মেছো গেছোকে নিয়ে পড়ে থাকলে মৃত্যুটা এক ঘেঁয়েমি হয়ে যাবে না! সুতরাং, নতুন নতুন টেস্ট করনা তো বনতা হ্যা...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror