Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Jeet Guha Thakurta

Classics Comedy

4.9  

Jeet Guha Thakurta

Classics Comedy

রম্যকথা: অমল শৈশব

রম্যকথা: অমল শৈশব

6 mins
1.1K


হাসি কান্না হীরা পান্না : অমল শৈশব


সেই বহুকাল আগে ফেলে আসা শৈশবের কথা মনে পরে। আমাদের সেই শৈশবে ছোটা ভীমও ছিলো না, হ্যারিপটারও ছিলো না। হাঁদা-ভোঁদা ছিলো, বাঁটুল টি গ্রেট ছিলো। আর ছিলো আম-জাম-লিচুর গাছ। সারাদিন সেইসব গাছের তলায় দৌড়ঝাঁপ, লাফালাফি আর খেলাধুলো চলতো। আক্ষরিক অর্থেই ধুলোবালিতে খেলতাম আমরা। ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার তখনও জন্ম হয়নি হয়তো। জন্মে থাকলেও তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করতো না। খেলতে গিয়ে কেটে-ছড়ে গেলে ডেটল নয়, জার্মানি পাতা হাতে ডলে তার রস লাগিয়ে দিতাম। তেষ্টা পেলে রাস্তার পাশের টিউবয়েল থেকে জল খেয়ে নিতাম। হেমা মালিনী তখন রুপোলি পর্দায় অভিনয় করছেন, ওয়াটার পিউরিফায়ারের বিজ্ঞাপন দিতে তখনো শুরু করেননি। তাই আমরাও ওসব জিনিসের অস্তিত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম না।


আমাদের সেই শৈশব ছিলো ভীষণ সহজ-সরল। একটা পাঁচমিশালি বাড়ির কোনো একটা ছোট্ট ঘরে ভাড়া থাকতাম আমরা। আমাদের নিজেদের কোনো বাড়ি ছিলো না, কোনো গাছ ছিলো না। কিন্তু সম্পূর্ণ পৃথিবীটাই ছিলো আমাদের খেলাঘর। কার বাগান বা কাদের গাছ, সেসবের কোনো খোঁজ রাখার দরকারই হতো না। ইচ্ছামতো যেকোনো গাছ থেকে কতো আম-লিচু-খেজুর পেড়ে খেয়েছি। কেউ কোনোদিন নিষেধ করেনি। আমাদের দস্যিপনা দেখে কখনো কেউ হাঁক মারলেও, তার মধ্যে একটা প্রশ্রয়ের সুর প্রচ্ছন্ন থাকতো। এখনের এই ভাগ-বাঁটোয়ারার যুগে ভাবাও যায় না হয়তো সেই কথা। কিন্তু তখন ছোটদের দুনিয়া আমার-তোমার বলে ভাগ হয়ে যায়নি। যায়নি বলেই হয়তো আমাদের সেই সাদামাটা শৈশব খুব সুন্দর ছিলো। অমল ছিলো সেই শৈশব।


অবশ্য অমল শব্দটা শুনলে যতটা নিষ্পাপ বলে মনে হয়, ততোটা সুবোধ বালক আমরা মোটেও ছিলাম না। তখন আগানে-বাগানে প্রচুর ফড়িং উড়ে বেড়াতো। তো অনেক সময় আমরা একটা ফড়িং ধরে ওটাকে কচুপাতার রস খাওয়াতাম। কচুর রস খেলে ওদের মাথা চক্কর দিতো, নেশা হয়ে যেত। ওরা তখন হেলতে দুলতে এগোতো, মাতালের মতো টলতো। আর লজ্জাবতী গাছ দেখলেই তাদের পাতাগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে সব পাতা গুটিয়ে দিতাম। আবার কালীপুজোর সময় চকোলেট বোমার মশলাগুলো বের করে নিয়ে মাটির নিচে গর্ত খুঁড়ে সব বারুদ সেখানে ঢেলে দেওয়া হতো। তারপর তাতে সলতে লাগিয়ে মাটি কাঁপানো বিস্ফোরণ তৈরী করা হতো।


এই সবই ছিলো আমাদের দুষ্টু বুদ্ধি। আমরা আর যাই হোক, ছোটবেলায় খুব একটা চালাক-চতুর ছিলাম না। এখনো যে খুব তুখোড় বুদ্ধি হয়েছে, এমন কথা হলফ করে বলা যায় না। বরং বুদ্ধিতে এখনের বাচ্চারা আমাদের চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে। একটা গল্প বলা যাক এই নিয়ে।


এক ভদ্রলোক অফিস যাননি একদিন। অফিসেও কিছু জানাননি। অফিসের বস রীতিমতো চিন্তিত ও অসন্তুষ্ট। অনেক দরকারী কাজ পড়ে আছে। তাই এগারোটা বেজে যাওয়ার পর তিনি ফোন করলেন ভদ্রলোককে। একবার রিং হতেই ফোনটা ওপাশ থেকে তুললো কেউ একজন। কোনো এক বাচ্চার কণ্ঠ শোনা গেলো। সে চাপা গলায় বললো, "হ্যালো -"।


বস বললেন, "মিস্টার ভৌমিক আছেন ?"


বাচ্চা গলা বললো, "উনি এখন খুব ব্যস্ত।"


"আচ্ছা, ওনাকে বলো মিস্টার বোস ফোন করেছেন।"


"আরে, আপনাকে বললাম না বাবা এখন ভীষণ ব্যস্ত।"


"আচ্ছা, তোমার মা আছেন ? ওনাকে ফোনটা দাও।"


বাচ্চাটি আবার চাপাস্বরে বললো, "না না। মা-ও তো ব্যস্ত। মা কথা বলছে বাবার সাথে।"


খুব বিরক্ত হলেন অফিসের বস। বয়োজ্যেষ্ঠ কারুর সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে তিনি এবার বললেন, "আচ্ছা, তোমার বাড়িতে বড়োরা কেউ আছেন ? বড়ো কেউ থাকলে তাকে দাও ফোনটা।"


"আরে আছে তো, ঠাম্মা আছে। কিন্তু ঠাম্মা সেই সকাল থেকে ঠাকুরের কাছে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে আছে।"


এবারে একটু প্রমাদ গুনলেন বস। কোনো বিপদ-আপদ হলো নাকি ? তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "বাড়িতে কিছু ঘটেছে নাকি ?"


ফিসফিস করে বাচ্চাটি বললো, "হ্যাঁ, ঘটেছে বলেই তো পুলিশ এসেছে বাড়িতে।"


"পুলিশ ? সেকী!"


এমন সময় ফোনে একদল শিকারী কুকুরের আওয়াজ শুনলেন বস। তিনি আবার ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "হচ্ছেটা কী ওখানে ? কী করছে সবাই ?"


বাচ্চাটা ফিচফিচ করে হেসে নিচু স্বরেই বললো, "ওরা সবাই মিলে আসলে আমাকে খুঁজছে।"


কিন্তু এর চাইতেও মারাত্মক ঘটনা আমি জানি। দুই যমজ বোন তিন্নি আর বিন্নিকে নিয়ে।


তিন্নি-বিন্নির মা একদিন সন্ধ্যেবেলা বাজার থেকে ফিরেছে। বাজারে ভিড় ছিল, তাই বাড়ি ফিরতে একটু দেরীই হয়েছে। রান্নাঘরে বাজার নামিয়ে রেখে দেখে ড্রয়িং রুমে বিন্নি তাদের পোষা কুকুর টমির পিঠের ওপর চেপে একটা খাতা নিয়ে কী লিখছে। তিন্নি শোবার ঘরে বাবার বুকের উপর চেপে বসে আছে। তাদের বাবা চুপচাপ মোবাইলে কিছু একটা দেখছে। অন্য কোনোদিকে কোনো হুঁশই নেই।


"একটা সন্ধ্যে বাড়িতে ছিলাম না, পড়াশুনো সব গোল্লায় গেছে।" চিৎকার করলো তিন্নি-বিন্নির মা।


বিন্নি লেখা থেকে মুখ তুলে বললো, "আরে আমি তো পড়াই লিখছি। স্কুলের পড়া।"


"স্কুলের পড়া লিখছো তো ওইখানে ওরকম টমির পিঠে চেপে কেন ?"


ছোট্ট বিন্নির উত্তর, "বাহ্ রে, স্কুলে তো পড়া দিয়েছে যে তোমার প্রিয় পশুর উপর একটা রচনা লেখো। তাই তো আমি টমির পিঠের ওপর বসে লিখছি। আর ওই ঘরে তিন্নি বাবার বুকের উপর বসেছে।"


ছোটবেলায় সত্যি কতো অবুঝ ছিলাম আমরা। বাবা টিউশনি পড়িয়ে বাড়ি ফেরার সময় সন্দেশ নিয়ে আসতো রোজ দুটো। একটা আমার জন্য, একটা দিদির জন্য। কিন্তু আমার সবসময় বড়ো সন্দেশটাই চাই। তাতে সমস্যা নেই, দিদি নিঃস্বার্থ হয়ে আমাকেই দিয়ে দিতো বড়োটা। কিন্তু সমস্যা হলো, তার ওই নিঃস্বার্থতা আমাকে ভাবিয়ে তুলতো, আমি ভুল করে ছোটটাই নিয়ে নিলাম না তো ? দুটো সন্দেশ মাপে মাপে বসিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নিরীক্ষণ করতাম, কোনটা এক চুল বড়ো। সেইটাই আমার চাই।


অবশেষে বাবা একদিন ছোট ছোট বাটি দিয়ে একটা ছোট্ট দাঁড়িপাল্লা আমাকে বানিয়ে দিলো। আমার আনন্দ আর ধরে না। এইবার আমি দুটো সন্দেশ দুইদিকে বসিয়ে মেপে নিতাম, কোনটা বড়ো, কোনটা ভারী বেশী।


এই দাঁড়িপাল্লার প্রসঙ্গে মনে পড়লো একটা গল্প। জামাইষষ্ঠীর দিন এক স্বর্ণ-ব্যবসায়ীর বাড়িতে মেয়ে-জামাই এসেছে। ভদ্রলোক বাজার থেকে ইয়া বড়ো ইলিশ মাছ আর তিন কেজি দই কিনে এনেছেন। বাড়িতে উৎসবের আবহাওয়া। সেই সুযোগে বল্টু পুরো দই চুরি করে মেরে দিয়েছে।


জামাইকে খেতে বসিয়ে আবিষ্কার হলো দই এর হাঁড়ি পুরো ফাঁকা। সবার সন্দেহ পড়লো বল্টুর উপরেই। বল্টুকে ডেকে তার বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, "দই কই রে হতভাগা ? পুরো দই খেয়ে নিয়েছিস ?"


বল্টু বুদ্ধি করে বললো, "না না, আমি কেন খাবো। দই তোমার সাধের বেড়াল খেয়েছে। আমি না।"


নিক্তি মেপে সোনার ব্যবসা করেন তিনি। এতো সহজে কি ছাড়বেন ? তিনি ঘরে রাখা দাঁড়িপাল্লায় রীতিমতন ওজন করে দেখলেন বেড়ালটিকে। দেখা গেলো ঠিক তিন কেজিই ওজন হয়েছে। তখন তিনি চোখ পাকিয়ে বললেন বল্টুকে, "এটা যদি বিড়াল হয়, তাহলে দই কোথায় গেলো ? আর এটাই যদি দই হয়, তাহলে বেড়ালটা কোথায় গেলো রে হারামজাদা ?"


শৈশবের সারল্যের সাথে সাথেই আসে ভূতের কথা। শৈশবে কোনোদিন ভূতের ভয় পায়নি, এমন মানুষ বিরল। আমাদের ছোটবেলা কেটেছে হ্যারিকেন ও মোমবাতির আলোয়। তখন সদাসর্বদা লোডশেডিং হতো। রাত্রে লোডশেডিং হলে অনেক সময় চাঁদের আলোয় বসে থাকা হতো। আর ভূতের গল্প শোনা হতো। ভূতের গল্পে ভয় পেলে মায়ের কোলে সেঁধিয়ে যেতাম। মায়ের কোলটিই ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আজও, এই এতো বছর বয়সে এসেও, হঠাৎ রাত্রে ঘুম ভেঙে গেলে হাতড়ে হাতড়ে মাকেই পাশে খুঁজি।


আজকের দিনের বাচ্চারা দেখি মায়েদেরকে ততোটা কাছে পায় না। বাবা-মা দুজনেই এখন চাকরি করে অধিকাংশ পরিবারে। বাচ্চাদের জন্য ছোট্ট ছোট্ট স্কুল হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন, টোডলার ইত্যাদি। দুই-আড়াই বছর বয়স হতে না-হতেই বাচ্চারা এখন প্লে-স্কুলে যাচ্ছে। যার পোশাকি নাম ডে-কেয়ার।


তো এরকমই এক বাচ্চার বাবা অফিস যাবার পথে বাচ্চাকে ডে-কেয়ারে নামিয়ে দিয়ে গেছে। তারপর অফিসে গিয়ে নানান কাজের চাপে সেসব কথা বেমালুম ভুলে গেছে। সন্ধ্যেবেলা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ফিরেছে অফিস থেকে। বাচ্চা নেই। এবং সেই ব্যাপারে স্বামীটির কোনো হেলদোলও নেই দেখে বউ তো রীতিমতো ক্ষেপে গেলো। ভাবলো, "বলবো না আমি। দেখি কখন আজ মনে পড়ে।"


সন্ধ্যে পার হলো। বউ চুপচাপ গোঁজ মেরে আছে। অবশেষে রাত্রে ডিনারের টেবিলে বসে তখনও স্বামীর কোনো হুঁশ নেই দেখে বউটি আর স্থির থাকতে পারলো না। ঝড়ের আগে বাতাস যেমন থমথমে হয়ে থাকে, তেমনি হিমশীতল কণ্ঠে সে বললো, "তোমার কি মনে হচ্ছে না যে তুমি কিছু ভুল করছো ?"


এই কথায় লোকটা প্রমাদ গুনলো। বউয়ের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে উঠে গিয়ে নিজের মানিব্যাগ থেকে চার হাজার টাকা বার করে টেবিলে এনে দিলো। "এই যে, দিয়ে দিলাম।"


"কী এটা ?" রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে তার বউ জিজ্ঞাসা করলো।


"আমি আর না বলে তোমার ব্যাগ থেকে টাকা সরাবো না। ভুল হয়ে গেছে আমার, আমি বুঝিনি যে তুমি ধরে ফেলবে।"


তারপরে কী হলো, সেই দাম্পত্য ভালোবাসার কাহিনীর মধ্যে ঢুকে আমাদের কাজ নেই। এই পর্ব শেষ করার আগে বরং একটি বিশেষ পরামর্শ দিই আমার সুধী পাঠকবর্গকে। বাচ্চাদের ব্যাপারে এটিই আমার চরম উপলব্ধি। সেটি হলো, ৩৫ এর পর মহিলাদের আর সন্তান ধারণ করা উচিত নয়।


জানি, শুনতে বড্ডো নিষ্ঠুর লাগে। অমানবিক লাগে। কিন্তু এটি খুব সত্যি কথা। সে আপনাকে কোনো ডাক্তার যাই বলুক, বা আপনাদের মা-দিদিমারা যাই শিখিয়ে থাক না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না। ৩৫ এর পর মেয়েদের সত্যিই আর বাচ্চা নেবার কথা ভাবা উচিত নয়। আপনি হয়তো ভাববেন, এটা তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, বা আজকের শহুরে জীবনযাত্রার সাথে বেমানান। হয়তো বলবেন যে শরীর সুস্থ থাকলে তো নিতেই পারে। না, নেওয়া উচিত নয়। আর এটা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। কোনো রাখঢাক না রেখেই বলছি, ৩৫ এর পর মেয়েদের আর বাচ্চা নেবার কথা ভাবা উচিত নয়।


কারণ, ৩৫ টা বাচ্চাই আমার মনে হয় যথেষ্ট।


~ সমাপ্ত


Rate this content
Log in