STORYMIRROR

Jeet Guha Thakurta

Classics Fantasy Inspirational

4  

Jeet Guha Thakurta

Classics Fantasy Inspirational

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণে

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণে

3 mins
435


"হীরক রাজার দেশে" সবাই এখন শোকস্তব্ধ। "এক হিন্দুস্থানী সিপাহী"র অকাল প্রয়াণ হলো আজ। থেমে গেলো তাঁর বিজয় "অভিযান"। ফিল্ম দুনিয়ার "ঘরে-বাইরে" যিনি ছিলেন "অগ্নিভ্রমর", যিনি ছিলেন সকলের "গণদেবতা", তিনি আজ আমাদের ছেড়ে "নদী থেকে সাগরে" মিশে গেলেন। বাংলা সিনেমা কোন "লাঠি"কে এখন থেকে "অবলম্বন" করে হাঁটবে ?


"অশনি সংকেত" দেখা দিয়েছিলো কিছুদিন আগেই, যখন এই মারণ "অসুখ" প্রথম ধরা পড়েছিলো, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এক অজানা "আতঙ্ক" আমাদের সবার মনকেই গ্রাস করেছিলো তখন। "সংসার সীমান্তে" দাঁড়িয়ে সবাই জোড় হাতে প্রার্থনা করছিলাম আমরা - "জয় বাবা ফেলুনাথ", তুমিই রক্ষা কোরো।


বিফলে যায়নি সেই প্রার্থনা। "নতুন দিনের আলো" দেখা দিয়েছিলো শীঘ্রই। কোভিড রিপোর্ট একসময় নেগেটিভও আসে তাঁর। কিন্তু তখন "যদি জানতেম" যে সেই আলো "আলেয়ার আলো" ছিলো মাত্র! কঠিন "বাস্তব" এরপর আঘাত করলো সহসা। "অতল জলের আহ্বান" উপেক্ষা করতে পারলেন না প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা। "হঠাৎ দেখা" গেলো একদিন "বাক্স বদল" করে "স্ত্রী"-পুত্র-কন্যাকে রেখে "অপুর সংসার" থেকে চিরবিদায় নিলেন তিনি।


ষাটের দশকে সেই যে "কিনু গোয়ালার গলি" থেকে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে উঠে এলেন ফেলুদা, "প্রস্তর স্বাক্ষর" আছে তখন থেকেই বাংলা সিনেমা যেন "সাত পাকে বাঁধা" পড়ে গেলো এই "কাঁচ কাটা হীরে"র সাথে। বোধমূলক বাংলা চলচ্চিত্রের "প্রতিনিধি" হয়ে উঠলেন তিনি। "জোড়াদীঘির চৌধুরী পরিবার" থেকে শুরু করে সাউথ সিটির "চারুলতা"রা, তাঁর "বর্ণালী" ছটায় মুগ্ধ তখন আপামর বাঙালী। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ছিলো "গুরু-শিষ্য" সম্পর্ক। নিজের তৈরী অধিকাংশ সিনেমায় তাঁকেই "পদ্মগোলাপ" করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। শুধু চলচ্চিত্রই নয়, নাটক-আবৃত্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও নিজের "শাখা-প্রশাখা" ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। যেদিকেই "পদক্ষেপ" করেছেন, কোনো-না কোনো এক "সোনার কেল্লা" তৈরী করে গেছেন।


ঠিক সেই সময় দেশ জুড়ে চলছিলো ভয়ানক এক "ক্রান্তিকাল"। রাজনৈতিক পালাবদলের "দ্বন্দ্ব"। সেই "অরণ্যের দিন-রাত্রি" দেখে নিজেকে "কাপুরুষ" এর মতো "ঝিন্দের বন্দী" করে রাখতে পারেননি বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। হয়ে উঠেছিলেন "ক্ষুদিত পাষাণ"। নিজের কবিতার মাধ্যমে, নাটকের মাধ্যমে "গণশত্রু"দের বিরুদ্ধে বারবার সোচ্চার হয়েছেন তিনি। আর তারই "সমান্তরালে" অভিনয় করে গেছেন অসংখ্য সিনেমায়। সিনেমাই চিরজীবন "সঙ্গিনী" ছিলো তাঁর। "বেলা শেষে" যখন তিনি ক্লান্ত, তখনও "ছুটির ফাঁদে" পা দেননি "বরুণ বাবুর বন্ধু" এই মানুষটি। তার পরিবর্তে পেয়েছেন সকলের ভালোবাসার অমূল্য "মনিহার"।


সেই "সাঁঝবাতি" নিভে গেছে আজ। পড়ে আছে নাটকের "শূন্য অঙ্ক"। কোথায় গেলেন সবার প্রিয় মানুষটি - মেলে না সেই "গোলকধাম রহস্যে"র কোনো উত্তর। আসতে-যেতে "হেমলক সোসাইটি"তেও তাঁকে আর দেখতে পাই না। "অংশুমানের ছবি"তেও তিনি নেই। বৃথাই তাঁকে "খুঁজে বেড়াই" আমরা। তাহলে কি শেষপর্যন্ত সত্যিই "কাকাবাবু হেরে গেলেন ?"


না, "শেষের গল্প" এখনো হয়নি শেষ। বাঙালী যতদিন ডাল-ভাত আর "পোস্ত" খেয়ে সুখে থাকবে, ততদিন ভুলবে না বাংলা সিনেমার এই "ময়ূরাক্ষী" নদীটিকে। ভুলতে পারবে না বাঙালির "দেবদাস"কে। তাঁরই সিনেমার গানকে "স্বরলিপি" করে আমাদের সবার জীবনের "প্রথম কদম ফুল" ফুটেছে একদিন। তাই আজ তাঁর "শেষ চিঠি" পেয়ে বাংলা সিনেমার উজ্জ্বল "পাঁচ অধ্যায়" শেষ হলেও, আমরা কিন্তু "বসন্ত বিলাপ" করবো না। তিনি আছেন, তিনি থাকবেন আমাদের সাথে, এই "তিন ভুবনের পারে"।


"পুনশ্চ": লেখা হয়তো নিষ্প্রয়োজন, কিন্তু তবু বলি, অভিনেতা "সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের" মহাপ্রয়াণে তাঁরই ৭০টি বিখ্যাত সিনেমার নাম সাজিয়ে তৈরী করলাম এই "মাল্যদান" খানি। গঙ্গাজলে যেমন হয় গঙ্গাপুজো, সরস্বতী "দেবী"র এই বরপুত্রকেও তেমনি তাঁরই সৃষ্টির মাধ্যমে স্মরণ করে হোক আজ আমাদের "নিশিমৃগয়া।"


~


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics