Partha Pratim Guha Neogy

Classics

3.8  

Partha Pratim Guha Neogy

Classics

দিদির ওষুধ

দিদির ওষুধ

2 mins
1.5K


গতকাল থেকে দিদির জন্য মনটা ভীষণ খারাপ। আবার রাত থেকে মনে হচ্ছে অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে সূর্য । তীব্র যন্ত্রণা – আর তার সঙ্গে নিঃশ্বাসের কষ্ট। শ্বাস যেন যাচ্ছে না শরীরে – হাঁ করে সজোরে নিতে হচ্ছে, আর হাপরের মতো ওঠা নামা করছে বুকটা। মাঝে মাঝে কাতরে উঠছে। 


বউ সন্ধ্যা কাণ্ডকারখানা দেখে ঘাবড়ে গেছে। বেচারি নতুন বউ – সবে তিনমাস হলো বিয়ে হয়েছে। দুজনের নতুন সংসার। ভয়ে ভয়ে জিগ্যেস করলো “একবার পাশের হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাক ?” 


“ডাক্তার ?” মুখ কুঁচকোলো রোহিত। “ডাক্তার কি করবে? দিদির থেকে বড়ো ডাক্তার কি আছে নাকি? দিদিকে ফোন করেছিলে ?” 


“হ্যাঁ, তোমার সামনেই করলাম তো।” বললো সন্ধ্যা। 


“কোন ফ্লাইটে আসছে দিদি ? জিজ্ঞেস করেছো ? উঃ, আমি মরে যাচ্ছি …পারছি নাআআআ।“ 


“সে কথা কিছু বললো না দিদি। সব শুনে লাইনটা কেটে দিলো – নাকি নিজের থেকেই লাইন কেটে গেলো কে জানে। কিন্তু দিদি এতো তাড়াতাড়ি কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোর কি করে পৌঁছবে? সময় লাগবে তো অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা।” 


“তুমি আবার ফোন করো।” 


“আচ্ছা করছি, তুমি একটু শান্ত হও গো।” 


বেল বেজে উঠলো। সন্ধ্যা দরজা খুলতে গেলো। 


“ওই তো দিদি এসেছে। দিদি, দিদি – ও দিদি, তাড়াতাড়ি এসো…” 


সন্ধ্যা ফিরে এলো। “দিদি নয়। নীচের ওষুধের দোকান থেকে এই ওষুধটা দিয়ে গেলো…” 


“ওষুধ ? কিসের ওষুধ ? তুমি আবার কি ওষুধ আনালে? বলেছি না দিদির সঙ্গে কথা না বলে…দাও ফোন দাও। দিদিকে ফোন করছি আমি…” রোহিত মোবাইলের দিকে হাত বাড়ালো। 


“ও দিদি, তুমি কখন আসছো ? আমি আর পারছি না যে…” 


দিদির গলার সুরে শান্তির প্রলেপ। দিদির গলায় ভরসার আগল। দিদির গলায় মা-মা গন্ধ। 


“অতো ছটফট করছিস কেন বল দিকি।“ 


“তুমি কোন ফ্লাইটে আসছো ?” 


“ভাইয়া, আমি আসছি না ।“ 


“মাআআনে। তুমি আসছো না মানে? উঃ দিদি, তুমি আর বোধহয় আমাকে দেখতে পেলে না গো…” সূর্য আর্তনাদ করে উঠলো। 


“ন্যাকামো কোরো না, সূর্য ।” 


দিদির গলায় বজ্রপাত। দিদির গলায় চাবুকের সপাং। 


“এমন কিচ্ছু হয় নি তোর। অ্যালার্জি আছে জেনেও কে বলেছিলো তোকে চিংড়িমাছ খেতে? তোর বাড়ির নীচের ওষুধের দোকানে ফোন করে দিয়েছি; ওষুধ দিয়ে যাবে। ওটা খেয়ে শুয়ে থাক। ঘণ্টা তিনেক অন্তত লাগবে। সন্ধ্যাকে দে, আমি ওকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। “ 


ফোন ছেড়ে দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো সূর্য । ব্যথাটা কমছে মনে হচ্ছে। মানে দিদির ওষুধ কাজ দিচ্ছে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics