পুরুষ দেহব্যবসা (পঞ্চম পর্ব)
পুরুষ দেহব্যবসা (পঞ্চম পর্ব)
“আসলে কি হয়েছে তোর জীবনে আমাকে বলবি ঝিলিক?”
“কি বলতো, সবাই জানলে কিংবা আবার সেই প্রোফাইল বানালে তোর মতন আমার নাম হতো ‘প্রিন্সেন’ বা অন্য কিছু। তুই যেমন এই কামুক সভ্যতার কাছে চাহিদা তেমন আমিও হতাম। আমি উর্বশী বা মেনকা বা রম্ভা কিন্তু আমি তো একজনের অঙ্গুলিলেহনে করি, সবার অলক্ষ্যে।”
“মানে!!!”
“সকালে সুর্য উঠলে রাতের তারারা অদৃশ্য কিংবা কতো অপ্রকাশিত লেখনী থেকে যায় এটাও তেমনি বুঝলি...”
“কিন্তু আমি ঠিক...”
“আমার স্বামী এই সমাজের নামকরা ব্যবসায়ী। টাকা-গাড়ি-বাড়ি-সম্মান সব আছে কিন্তু নেই মন বা মানসিকতা আর তাই বিজনেস ডিলের জন্য নিজের স্ত্রীকে কেউ বিলিয়ে দেয়। আমাকে ও ভালোবাসেনি। আমাকে বিয়ে করেছে শুধুই কাজ হাসিলের জন্য। আমার পাপের শাস্তি কি জানিস? আমি ভালোবাসোতে চেয়েও বারবার প্রতারিত হয়েছি।”
“তুই আমার সন্ধান কিভাবে পেলি।”
“একটা পার্টিতে তোকে এসকর্ট হিসেবে দেখে চমকে যাই। সাহস হয়নি বলে সামনে যাই না। আমি তারপরে তোর পলাশদার সাথে যোগাযোগ করে তোর ডিটেলস পাই। তখন নিশ্চিত হই এই ‘প্রিন্স’ তুই ছাড়া আর কেউ না। সেই কারণেই কয়েকবারের চেষ্টাতে আজ বেশী টাকার বিনিময়ে তোকে পেলাম। আমাকে তোর কাছে আসতেই হতো কারণ আমি তোর মাকে...”
“কি হলো ঝিলিক?”
গলার কাছে একটা কান্না জমাট বাঁধে ঝিলিকের।
“এই ঝিলিক। মায়ের কি? বল ঝিলিক তুই?মা কেমন আছে?”
“অনেকটা ওই শুকিয়ে যাওয়া গাছটার মতন...”
“বল ঝিলিক, বল তুই? মায়ের কিছু হয়নি তো...”
কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকে ঝিলিক।
আবেগ-অনুভূতি তুমি কি ভালোবাসোতে ভুলে গিয়েছো?
হ্যাঁ, এই শহরের স্পর্শে কতো বিচ্ছেদের হাতছানি!
কতো যোগ-বিয়োগের সাক্ষী তোমার বুক-পকেট!
তবুও, মেঘবালিকার অপেক্ষাতে এখনও ঘুমিয়ে যাওনি।
দামাল শব্দের উপত্যকাতে আমি এখনও জেগে আছি,
মরণের চেয়েও আপন কবিতার কাছাকাছি...
“তোদের উঠোনের পলাশ গাছটার শুকিয়ে যাবার মতন। চন্দ্রমল্লিকার শুকিয়ে যাওয়া ফুলের মতন তোর মা একদিন...”
“একদিন কি? কি ঝিলিক?”
“তোর মা চলে গিয়েছে রে...”
মন বলে
মানুষের মন এবং মৃত্যু
দুটোই রহস্যপুরী...
এখানে প্রবেশ করা সহজ
কিন্তু রহস্যভেদ করে
বেড়িয়ে আসা দুঃসাধ্য...
আহা জীবন
জীবন দিয়েও
মানুষের মন
আর মৃত্যুকে স্পর্শ করে
ফিরতে পারেনা অতীত বসন্তের দিনে...
সাত্ত্বিক আর ঝিলিকের মাঝে বিরাজ করে শতাব্দীর নিরবতা। ঝিলিক চোখ বন্ধ করে কেঁদে চলে। সাত্ত্বিক এলোমেলো পায়চারী করছে শূন্য দৃষ্টিতে। একটা সময় আসে যখন কষ্টকে আর কষ্ট বলে মনে হয় না কারণ সে দুঃখের বোঝা বইতে বইতে পাষাণ হৃদয় হয়ে গিয়েছে।
ঝিলিক সাত্ত্বিকের দিকে তাকাতে পারে না। সাত্ত্বিক হালকা কাঁপছে মানে ভেতর থেকে কাঁদছে।
“আমার একটা ছোট্ট ভুলের মাসুল দিচ্ছিস তোরা সবাই...”
“একদম চুপ...”
সাত্ত্বিকের থাপ্পড়ে বিছানাতে ছিটকে পড়ে ঝিলিক। সাত্ত্বিকের চোখে রাগের আগুণ।
“তোর এই শরীরের খারাপ খিদে, কামুক বাসনা মেটাতে গিয়ে সব শেষ আজ। আয় ঝিলিক আজ তোর এই শরীরের সব খিদে মেটাই। একজন মেল এসকর্ট নিশ্চয় তোর খিদে মেটাবে তাই তো ডেকেছিস আমাকে।”
“তোর মায়ের মরবার জন্য আমাকে যা শাস্তি দিবি আমি তাই মাথা পেতে নেবো।”
আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে যায় সাত্ত্বিক। ঝিলিক বোতল থেকে জলের ছিটে দেয়, ঘরের এসি বাড়িয়ে দেয়। কিছুক্ষণ বাদে জ্ঞান আসে সাত্ত্বিকের। সাত্ত্বিকের নিজেকে সামনের আয়নাতে দেখে অনেকটা পাগলের মতন লাগছে। আজ অবধি যে মায়ের জন্য সাত্ত্বিকের কোনদিন কোন কষ্ট বুঝতে কিংবা জানতে পারেনি আজ সেই মা না ফেরার দেশে। একমাত্র সম্বল ছিলো মা কিন্তু মাঝের এই কয়েকবছর উপায় থাকলেও ফিরে যায়নি সাত্ত্বিক। মা হয়ত ছেলের খবর না পেয়ে অনেক দুঃখ, অনেক দুশ্চিন্তায় মারা গিয়েছে। মা মারা যাবার সময় না পেয়েছে ছেলের হাতে জল না পেয়েছে মরবার পর ছেলের মুখাগ্নি। মা আজীবন সাত্ত্বিকের জন্য কষ্ট করে গেলেও সেটা সাত্ত্বিক আর আনন্দে বদলাতে পারল না।
“আর কি হবে টাকা? কেন করব রোজগার? রোজগার করছিলাম গ্রামের সেই অভাগিনীর জন্য আর সে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল কিন্তু বলে গেলো না। এবার তাকে রাখব সাতমহলে, কাকেই বা সাজাবো দামী শাড়িতে?”
পাগলের মতন চিৎকার করল সাত্ত্বিক।
কতো রিক্ততার সাক্ষী আজ আমি!
বুকের ক্ষতরা লিখল ইতিকথা!
নাহ, ফাউন্টেন পেনটা আজো থামেনি...
বিয়ের রোশনাইতে আজ সেজেছে মনের শহর,
প্রেমিকের জন্য কিনলাম একটা ফুলের তোড়া।
নীলচে যন্ত্রণা পায়নি আলোর দিশা
কঠিন সময়ের ভাঙন আঁকড়ে ধরে অমানিশ,
অবেগের মোহে গড়েছি আজ
এক অলিখিত কবিতা...
“আমি কাকিমার কাছে একদিন সবটা বললাম। কাকিমা কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে শুনে আপনমনে বিড়বিড় করতে থাকল ‘আমার সাত্ত্বিক দোষী না, আমার বাবুর কোন দোষ নেই, কেউ শুনল না, কেউ বুঝল না। ঈশ্বর কেউকে ক্ষমা করবে না...”
“মা!!!”
“আমার বাড়ির সবাই এমনকি গ্রামের লোকেরা কতো বোঝাল কিন্তু কাকিমা কেমন একটা পাগলের মতন হয়ে গেলো। একদিন খবর পেয়ে স্কুলের হেডমাস্টার এসে সবাই এমনকি আমাকে বকল তোর এই অবস্থার জন্য। স্যার সবাইকে বলল তোর স্বপ্ন উচ্চশিক্ষিত হয়ে এই গ্রামের অশিক্ষা আর কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করা। আসলে সাত্ত্বিক, তোর দূরদৃষ্টি আছে, তোর স্বপ্ন গ্রামের সবার জন্য জরুরী। ভালো রেজাল্টের জন্য তুই যা টাকা পেয়েছিলি সেটা কাকিমার হাতে স্যার দিলেও তোর মা ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে গিয়েছিলো হয়তবা মরবার জন্য দিন গুনছিলো কাকিমা। একদিন আমাকে বলল কাকিমা ঝিলিক তোর পাপের সাজা হলো আমার বাবুকে খুঁজে আমার কাছে আনা।”
“কি হয়ে গেলো ঝিলিক...”
“আমি সেইদিন কাকিমাকে কথা দিয়েছিলাম তোকে ফেরত আনব। সবাইকে কথা দিয়েছিলাম।”
“কিন্তু মা মারা গেলো কেন?”
“আসলে দিনের পর দিন না খেয়ে লিভারের সমস্যা। হাসপাতালে ভর্তি করলেও তিনদিনের মধ্যে সব শেষ।”
“আমি মায়ের মুখাগ্নি করতে পারিনি আমার কি মরেও শান্তি আছে।”
জানলার গ্রিলে মাথা ঠুকতে ঠুকতে কাঁদে সাত্ত্বিক। বাচ্চা ছেলের মতন কাঁদছে সে। বুকের ভেতরে কলিজাটা কেউ আজ টুকরো টুকরো করে দিয়েছে।
“কি পেলি ঝিলিক বল? কি পেলি এক অভাগী মায়ের কোল খালি করে? কি পেলি তুই একজন ছেলের স্বপ্ন মেরে তার সহায় তার মাকে কেড়ে নিয়ে? কি পেলি বল?”
ঝিলিক কিছু বলতে পারে না। কারণ আজ সে ভালোবাসা পায় না বরং তাকে রোজ আলাদা আলাদা কারোর সাথে রাত ভাগ করে নিতে হয়। এটা অবশ্যই তার পাপের শাস্তি।<
/p>
আমার জন্য একটা কবিতার মালা গেঁথো তুমি
যার মধ্যে নেই ব্যথাদের ঠিকানা
নেই সেথা মনকেমনের শ্লোগান-মিছিল...
অভিমানী প্রেমিক শব্দ খোঁজে বাদলবেলায়
উদাসী শ্রাবণ তাকে ছুঁয়ে যায় ইশারায়,
তুমি তার জন্য রেখে দিও একব্যাগ আশ্বাস...
এই শহর বোঝেনি অবসাদের তীব্রতা, দেখেনি বিষণ্ণতার রঙ!!!
কানাগলি জুড়ে কত বিরহের লেখালিখি,
তাই, এই শহর আমার ঠিকানা নয়।
তুমি আমার মনের অলিন্দে একটা আহ্লাদি সন্ধ্যে পাঠিও...
ডাকবাক্সের কোণায় প্রতীক্ষার প্রহর স্পষ্ট,
দেওয়াল ঘড়িতে অসময়ের আকুতি,
ঠিক তখন,
প্রেমিকের মননের ছাদে একটা বসন্ত নামিও,
আর তার ক্যানভাসে এঁকো এক পশলা আবেগ,
শুধুমাত্র আমার জন্য...
“আমাকে মেরে ফেলবি তুই। আমার সেটাই প্রাপ্য। কাকিমাকে দেখে আমার খুব কষ্ট হতো জানিস... আমার মাঝেমাঝে মনে হতো আমি যদি এই নাটকের চিত্রনাট্য লিখতাম তাহলে সব বাধাবিপত্তি পেড়িয়ে তোকে হাজির করতাম মায়ের চৌকাঠে।”
“আসলে কি বল তো ঝিলিক, বাস্তব আর গল্পের ফারাক অনেক। তোর মনে পড়ে আমাদের ছোটবেলায় আমরা কতজন কতো কিছু বলতাম। মা তোকে আর আমাকে বিশ্বাস করে শুধুই প্রেরণা যোগাত। সেইদিন বুঝিনি সেই সবের মূল্য এইভাবে দিবি তুই। মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিলো আমার চাকরি কিন্তু সেই চাকরি আমি পাই নি। আমার কি শাস্তি হবে? আজ আমি এই শরীর বিক্রি করেছি, নিষিদ্ধ হয়েছি শুধুই মায়ের হাতে সুখ তুলে দেবো, মায়ের মুখের হাসি দেখব বলে। আজ সেইজন্যে রাতের অন্ধকারে উচ্চবিত্তের বিছানাতে কামের অলিন্দে বিচরণ করি আমি, আমি পুরুষ পতিতা, আমি ‘প্রিন্স’। সেটাই আজ হলো না ঝিলিক।”
“বাবু, আমার কথা শোন। তুই প্লিজ ফেরত চল গ্রামে। আমি চাইনা বন্ধুত্বের অধিকার হারাতে। প্লিজ বাবু, এইটুকু কাজ আমাকে করতে দে তুই। তোর তো অনেক টাকা হয়েছে সেটা কি যথেষ্ট নয়?”
“কার জন্য আমার ওই গ্রামে ফেরত যাবো বলতে পারিস তুই?”
“সবার জন্য সাত্ত্বিক। চল না সবাইকে মুর্খতার অন্ধকার থেকে বাঁচাবি। তুই পারবি না বাবু? পারবি না কামিকার ইচ্ছে পূরণ করতে?”
“ঝিলিক আমি সেই গ্রামের সাত্ত্বিক বা মায়ের বাবু নই। আজ আমি শহর কলকাতার রাতের রাজপুত্র ‘প্রিন্স’। পলাশদার পারমিশান ছাড়া বোধহয় মরতেও পারব না। তাছাড়া নাড়ির টান তো ছিঁড়ে গিয়েছে ঝিলিক। কি করব গিয়ে? কে রান্না করে খাইয়ে দেবে? কে কোলে মাথা রেখে ঘুম পাড়িয়ে দেবে? আমি পারব না এই নষ্ট আমাকে নিয়ে যেতে...”
“কিন্তু শোন আমার কথা...”
“না ঝিলিক না। সম্ভব নয় এটা। আজ নয় বরং অনেকদিন বাদে আমার মুখের চামড়া ঝুলে যাবে, এই শরীরের ভাঁজ, খাঁজ আর সুখ দিতে পারবে না কামুক সভ্যতাকে, বাজারে এই বেশ্যা এই ‘প্রিন্সের’ কোন দাম দেবে না কেউ, কেউ ভালোবাসার কথা বলবে না সেইদিন... সেইদিন যাবো মায়ের কোলে।”
“এই বাবু শোন আমার কথা, প্লিজ...”
“শোন তুই। এই কিছু টাকা রাখ। পরেরবার যদি কোনদিন যাস গ্রামে তাহলে মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করিস। শোন ঝিলিক আমি তোকে আজো বন্ধু ভাবি আর তোকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। একটা কথা ঝিলিক...”
“বল।”
“কাউকে বলিস না আমার পুরুষ দেহব্যবসার কথা”
“মানে!!!”
“বলিস আমি শহর কলকাতা, কল্লোলিনীর রাতের রাজপুত্র। রাতের বাজারে আমার দাম ঠিক হয়। কি বলত অনেক টাকার ব্যাপার। সবাই বুঝতেও পারবে না, মাও জানে না এই পুরুষ এসকর্ট কি। মা খুশী হবে আমার রোজগারের কথা শুনে।”
ঝিলিক কিছুই বলতে পারে না। হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সাত্ত্বিক সামনে বসে বলে...
“ঝিলিক। ভালো থাকিস আর নিজেকে অপরাধী ভাবিস না। আমাদের আর হয়ত কোনদিন দেখা হবে না। আমার ললাট লিখন অনুসারে আমাকে অন্যের অঙ্গুলিলেহনে চলতে হবে। কিন্তু তুই পারলেই আগল ভেঙে বেড়তে পারবি। আগের ঝিলিক অনেক ভালো ছিলো, মুক্ত, স্বাধীন বিহঙ্গ।”
“সেই আগের বাবুও তো ছিলো ডানা মেলে ওড়া পাখী।”
“আজ সে পোষ মানা। সে খাঁচায় বন্দী। তুই সেই আগের ঝিলিক হয়ে যা। খুঁজলে ঠিক মনের মানুষ পাবি কিন্তু আমি চাইলেও আমার সমপ্রেমের হদিস পাবো না কারণ আমি তাকে পেয়েও হারিয়েছি।”
“তুই!!!”
“আরও ঘেন্না করবি আমাকে আজ থেকে। হ্যাঁ আমি গর্বিত সমপ্রেমী।”
“তুই কতোটা ভালো সেটা তুই জানিস না। আমি তোর কথা রাখব। তোদের উঠোনে যেখানে কাকিমার অস্থি পোঁতা সেখানে আমি একটা চন্দ্রমল্লিকা আর পলাশ গাছ লাগাব।”
“হ্যাঁ রে ঝিলিক...”
“আর একটা কথা সাত্ত্বিক।”
“বল।”
“আমিও আর এই মুখ তোর সামনে আনব না কিন্তু তোকে তোর স্বপ্নের জায়গাতে যেতেই হবে। অনেক অনেক ওপরে যেখানে কোন পাপ কোন কেউ তোকে ছুঁতে পারবে না।”
কোন কথা না বলে চোখের জল মুছে বেড়িয়ে আসে সাত্ত্বিক...
দুঃখ-বেদনার ঘন মেঘ ভেসে আসে যখন...
চারপাশ কোল অন্ধকারে ঢেকে যায় সবকিছু...
দুইচোখ সিক্ত হয় চোখের জলে...
যখন বিষণ্ণতায় হতবাক হয়ে যাই...
আমি তখন আমার মধ্যে থাকা অন্য মনটাকে শুধাই, ‘ওরে তুই কাঁদিস কেন পাগল?’
আমাদের জীবনে এমনই হয়।
চারপাশের গাড় নিস্তব্ধতা, এই দুনিয়ার সবার গভীরেই আছে।
কিছু ব্যথা-যন্ত্রণা নিয়ে আমাদের এই জীবন,
সামান্য আলোর দিশাতে ভরে যায় আমাদের মন,
অকারণেই কখনও ভিজে আসে নয়ন,
প্রত্যেক ক্ষণ যেন নতুন মৌসম
কেন এই মুহুর্তগুলো হারাবি?
ওরে মনন তুই কাঁদিস কেনো?
গাড়িতে উঠে সাত্ত্বিক কল করে...
“পলাশদা।”
“হ্যাঁ সেক্সি বল।”
“আমি কলকাতার বাইরে মানে বাইরের রাজ্যে কাজে যাবো। আমার অনেক টাকা চাই। আমি রাজী। কাল বা পরশু ব্যবস্থা করো।”
“কিন্তু কাল তোর বাড়ি যাবার কথা?”
“নাহ দাদা। আমি তোমার লাটাইয়ের ঘুড়ি হবো। আমার আর কোন রাগ কিছুই নেই। আমার কোন লাজ-লজ্জা কিছুই নেই কারণ সব করতাম মায়ের মুখ চেয়ে। আজ যখন মা নেই তখন আর কিছু ভেবে কি লাভ বলবে।”
ফোন কেটে জানলা দিয়ে রাতের কলকাতা দেখে সাত্ত্বিক। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝিলিকের সাথে কাটানো সময়...
মায়ের মুখটা মনে পড়ছিল। মা ওকে শেষবার দেখার জন্য কতো কাকুতিমিনতি করেছিলো। বিধাতার নিয়মে বাঁধা সাত্ত্বিক যেতে পারেনি চাইলেও।
সাত্ত্বিকের জীবনে নারী এসেছে নানান রুপে...
মাতৃরুপে সে তার অসহায় সন্তানকে লালনপালন করেছে, স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করেছে, আগলে রেখেছে।
বন্ধু রুপে ঝিলিক হয়ে সুবিধার জন্য সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে, সব কিছু শেষ করে তছনছ করে দিয়েছে সাত্ত্বিকের জীবন।
কাস্টমার হিসেবে নানানভাবে কষ্ট দিয়েছে, ভোগ করেছে, তৃপ্ত করেছে।
ক্রমশ