সমাজের দুর্গা
সমাজের দুর্গা
প্রথম পর্ব (আবাহন থেকে আগমনী)
‘খৃষ্টে আর কৃষ্ণে কিছু ভিন্ন নাই রে ভাই,
শুধু নামের ফেরে মানুষ ফেরে একথা শুনি নাই...
আমার খোদা যে হিন্দুর হরি সে,
ওই দেখো দাঁড়িয়ে আছে...
আমার খোদা যে হিন্দুর হরি সে।
যদি পাই রাঙা চরণ…
চ্যালা।। অ গুরু, কই গেলে গা, আরে এবার কি পালাগানের বায়না এইছে?
গুরু।। (তাঁবু থেকে দাড়িআলা এক বুড়ো বেড়িয়ে আসে, পরনে জোব্বা) উফফফ, শান্তিতে এক ছিলিম টানতে নেহি দেগা কেয়া... ক্যায় হুয়া...
চ্যালা।। আরে বাবা আশ্বিন মাস শুরু হয়ে গেল আর তোমার এইদিকে... এবার কি কোন বায়না ধরবে না?
গুরু।। অনেকদিন বসে বসে গায়ে-গতরে মরছে ধরি গিলা রে (আলমোড়া ভেঙে) ঠিক আছে চল, গোছা বাক্স-প্যাঁটরা... এবার জমিয়ে আসর বসবে ক্ষীর নদীর কুলে।
চ্যালা।। হ, উঠল বাই তো কটক যাই... যাবে কোথায় সেটা ঠিক করেছো?
গুরু।। (পকেট থেকে ফোন বের করে) ইটা কি জানিস?
চ্যালা।। মুঠোফোন!!! বাপরে বাপ সি তো অনেক দাম গা কর্তা!!!
গুরু।। আরে থাম, যাবো অন্য পুরুষের দ্যাশ... সে এক রূপকথারই দেশ!!!
চ্যালা।। তা সেইখানে কি এইসব বাস-টেরাম যায়?
গুরু।। না না, পক্ষীরাজ করে যাবো...
চ্যালা।। এটা সকাল থেকে দু ছিলিম টানার জন্য হয়েছে...
গুরু।। এই এই আমি কি মাতাল নাকি??? ভুলভাল বকছি??? বলছি এবারের দুগগা পুজোতে আসরের বায়না এসেছে... চল চল কলকাতা।
চ্যালা।। উরি বাবা, কলকাতা তো অনেক দূর... সেখানে তো শিক্ষিত মানুষের বাস গা? তারা কি আমাদের মতন মুক্ষুদের পালা দিখবে?
গুরু।। দিখবে দিখবে, ভালা ভালা গল্প কইবি, গান-নাচ করবি, পয়সা দিবে, পালা ভি দিখবে।
চ্যালা।। সিখানে কি দিখাবে ঠিক কুরছো?
গুরু।। হ!!! এবারকার পালাগানের নাম ‘সমাজের দুর্গা’
চ্যালা।। সেটা আবার কি?
গুরু।। আমাদের সমাজের চারপাশের থাকা ‘অন্য দুর্গার’ গল্প।
চ্যালা।। বড় কঠিন বিষয়...
গুরু।। আরে বাবা, এটা চারজনের গল্প কিংবা আটজনের, আবার আট লাখ... যা খুশী।
চ্যালা।। মানে সবার??? কেমনে?
গুরু।। আরে বাবা, সব গল্প এখানে বলে দিলে আসরে লোক হবে? নে নে তাড়াতাড়ি কর... এই বাজনা রেডি কর, গান ধর... আসর চালু...
মঞ্চের মধ্যে বিচিত্র আলোর সাথে নানান বাদ্যযন্ত্র বেজে ওঠে...
আরে শোনেন শোনেন বাবুমশাই, শোনেন দিয়া মন
চার মনুষ্যের গল্প শোনে এখানে এখন,
নাচ আছে, গান আছে, আছে পেরেম পিরিতি
গল্প শুরু এই এখানে কলকাতাতে হইবে ইতি...
আরে ভোলে বাবা পার করেগা
টাকা নয়ত বউদি দেগা...
আস্তে আস্তে গানের দল মিলিয়ে যায়...
গুরু।। নমস্কার সবাইকে, শুরু করছি এবারের পালাগান ‘সমাজের দুর্গা’। আরে আরে পালাগানে দেরী করে এসে সামনের চেয়ার কি খালি থাকে দিদিমণি? এই এই বাদামআলা, পিছনে যা ওইদিকে... আরে আরে পালা শুরু হয়ে গেলো আর আপনারা শান্ত, চুপটি করে না বসলে কাহানী শোনাব কিভাবে... আরে ও শাম্ভা...
চ্যালা।। জি সর্দার?
গুরু।। কিতনে আদমি থে রে?
চ্যালা।। চার সর্দার...
গুরু।। শোলে পিকচার মে তো দো থা রে পাগলা?
চ্যালা।। হ্যাঁ সর্দার, লেকিন ইয়ে কাহানিমে চার হ্যায়...
গুরু।। হা তো বাবুমশাইরা, এটা চারজনের গল্প বলতে পারেন আবার চার জোড়া ভালোবাসার অমরকথা ভি কইতে পারেন, ইচ্ছে করলে আবার সেখানে পরিবার, সমাজ... এককথায় চটকে চটকপুর...
চ্যালা।। মানে এটা সবার গল্প...
গুরু।। আরে এই গল্পে চমক আছে, নামীদামি স্টার আছে... তা পেত্থম গল্পে আলাদা করে কোন হিরো নেই, এখানে দোয়েল মাসীই সব... আরে অনারকলি, চম্পাকলি কিংবা ফুলকলির হতে পারে...
চ্যালা।। হ্যাঁ হ্যাঁ সর্দার বলো বলো...
গুরু।। দোয়েল মাসীর আশ্রমে আপনারা যাদের ঘেন্না করে সেইসব হিজরেদের আস্তানা... এই গল্প তাদের নিয়ে...
চ্যালা।। ওই গাছের তলাতে দেখলাম একটা বিহারী মেয়ে আর একটা জিন্স পড়া মেয়ে আছে। তারা কারা?
গুরু।। একজন শান্তি আর অন্যজন হলো তিতলি... পরের গল্প ওদের নিয়ে...
চ্যালা।। দারুন ওস্তাদ।। আর বাকি দুটো?
গুরু।। একটা গল্প অরিত্র আর প্রতীকের...
চ্যালা।। উরি বাবা!!! দুটো ছেলের মধ্যে ভালোবাসার গল্প?
গুরু।। আরে বাবা সমস্যা কোথায়? ভালোবাসা কি জাতপাত, ধর্ম, লিঙ্গ দেখে হয় পাগল...
চ্যালা।। ঠিক কথা... আর শেষ গল্পটা?
গুরু।। এটাই চমক...
চ্যালা।। মানে!!! এটা ভুতের গল্প নাকি!!! আমার ভীষণ ভুতের ভয়!!!
গুরু।। আরে ধ্যুর বোকা... এটাও দুটো ছেলের গল্প কিন্তু এখানে হলিউডের হিরো আছে...
চ্যালা।। মানে বিদেশী???
গুরু।। হ্যাঁ রে পাগল হ্যাঁ... আলাদা করে আনা হয়েছে ইস্পেশাল এই গল্পের জন্য...
চ্যালা।। আচ্ছে ওস্তাদ... এই গল্পটা কার থেকে ঝেড়েছ?
গুরু।। আরে আস্তে আস্তে... আগের বছর ‘অন্য পুরুষের গল্প’ পেজে সামজীদের একটা ছিলো না?
চ্যালা।। হ্যাঁ, আমার দুর্গা...
গুরু।। কাউকে বলিস না, এটা ওইটা থেকে ঝেড়ে দিয়েছি কিন্তু পয়সা দিই নি...
চ্যালা।। আমাকে ছিলিমটা দিয়ে শুরু করো...
গুরু।। বাহরে জমুরে... এটা ভাল ঘুস... নে নে চল চল এবার সরাসরি যাই সেই সুদূর ভিন দেশ...
চ্যালা।। সেটা আবার কোথায়?
গুরু।। আরে বলদ, বিদেশ মানে ফ্রান্স... এই নে ভূগোল বই... তুই ফ্রান্স খোঁজ আর পাবলিক বায়োস্কোপ দেখুক...
রোমের একটা ফ্ল্যাট
(গল্পের খাতিরে আমি ইংরাজি কিংবা ভাঙা ভাঙা ইংরাজিতে কথোপকথন লিখলাম। দোষ-ত্রুটি মার্জনীয়)
“হেই ডিক, আর ইউ সিরিয়াস!!!”
“একদম ড্যালি। আমার এখানে দুরবস্থার শেষ নেই...”
“কেন মাই সান?”
“পশ্চিমবঙ্গের এক ব্রাক্ষ্মন জমিদার পরিবারের সন্তান কিনা বিদেশী বিভূঁইতে এসে দ্বীপশুভ্র চ্যাটার্জী থেকে ডিক...”
“মাই লাভ... ওয়েট ওয়েট ডিক... হামি তুমাকে খুব ভালো বাসী...”
“বিদ্যাসাগর আজ ধন্য হলেন... আজ একজন ইটালিয়ান তোমার শেখানো বুলি আওয়াচ্ছে...”
“ইনি কে?”
“আঙ্কেল, আন্টি... বিদ্যাসাগর হলেন আমাদের ভাষা আই মিন বাংলা ভাষার বর্ণ মানে ওয়ার্ডের জনক...”
“দারুণ!!!”
“কি ডিসাইদ করলে?”
“লুক মাই সান... সেম সেক্স ম্যারেজ তোমাদের দেশে হয় না আর সেখানে...???”
“জানি। সংবিধান শুধু সম্পর্কের শিলমোহর দিয়েছে কিন্তু আমাকে আজ না হোক কাল আমার পরিবার বলুন কিংবা এই সমাজের সামনে দাঁড়াতেই হবে...”
“এটা কি সঠিক সময়?”
“আঙ্কেল। দুর্গাপুজোতে পরিবারের সবাই থাকে আর সেখানে বললে একটা কিছু হবেই... মানে আমাকে ত্যাজ্যপুত্র কিংবা... দিল্লী পৌঁছে আমাকে প্লিজ কল করবে ড্যালি...”
“তুমাকে ছাড়া এতো দিন...”
“উলি বাবা আমার বিদেশী সোনামণির চোখে জল...”
“গেট রেডি কারণ ফ্লাইট ইন টাইম... বাই দ্য ওয়ে... এটা তো লন্ডন হয়ে যাবে?”
“হ্যাঁ আঙ্কেল... তিন বছর বাদে আমার দেশ, আমার সোনার বাংলা, আমার বাড়িতে ফিরব... আই অ্যাম এক্সাইটেড...”
ক্যামেরার সামনে ড্যালি...
ড্যালি।। নমস্কার দাদারা-দিদিরা এবং অন্য পুরুষেরা। কাল বাদে পরশু মহালয়া, তাই আগাম শারদ শুভেচ্ছা জানাই সুদূর রোম থেকে। আমিও আসছি কলকাতার পুজোতে। মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর দেখব সারারাত, ধুনুচি নাচব আর দেখব কলকাতার কার্নিভ্যাল। আমার সঙ্গে আমি কলকাতাতে নিয়ে আসব ড্যালি-ডিকের গল্প, মানে পশ্চিমবঙ্গের এক জমিদারের সন্তান এই দ্বীপের সমপ্রেমের গল্প। হ্যাঁ আমরা গর্বিত সমপ্রেমী।
দ্বীপ বেড়িয়ে যায় সঙ্গে গান চলে...
“অন্তরে যার লুকিয়ে রাজে
অরুণ-বীণায় সে সুর বাজে
সেই আনন্দ’যজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ।
মাতলো রে ভুবন,
বাজলো তোমার আলোর বেণু...”
মুম্বাইয়ের কোন একটা হাসপাতাল
“আজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের অতীত নিয়ে ভাবতে ভাবতে অজান্তে চোখ দিয়ে জল পড়ছে আমার। পরশু মহালয়া, মানে দেবীপক্ষের শুরু। মহাদেব, বিষ্ণু এবং অন্যান্য দেবতাদের দেহ নিঃসৃত তেজ্যপিন্ড কিংবা জ্যোতি থেকে দেবীর সৃষ্টি। নারীর সৃষ্টি হলে আমাদের এই সমাজ কালো মেঘে ঢেকে যায় কারণ আমাদের সমাজে নারী হলো পুরুষের শক্তির আধার...
নাহ আবোলতাবোল কথা বলে চলেছি। আমি আত্রেয়ী। অবশ্য খাতায় কলমে নাম অরিত্র। দেবীপক্ষের মধ্যেই আমার নতুন জীবনের শুরু। নতুন আখ্যান, নতুন সত্তা, নতুন জীবন...”
“গুড মর্নিং ইয়াং লেডি... শরীর ঠিক লাগছে তো?”
“নিজেকে আয়নাতে দেখতে পেলে...”
“অবশ্য, আমি নার্সকে বলছি... কাল বাদে পরশু রিলিজ করে দেবো... একটা কথা আপাতত কোন মানসিক চাপ নেবে না, কোন কাজ নয়। এটা শুধু একটা অপারেশান নয়, এটা মানুষের আসল সত্তার প্রকাশ।”
“জানি ডাক্তার... আমার সবার আগে নিজের সাথে মোকাবিলা করতে হবে...”
“একদম আর সেখানে নিজের প্রিয়জন পাশে থাকলে চিন্তা কিসের?”
“সেটাই আমাকে এতোটা পথ আসতে সাহায্য করেছে...”
“তোমরা গল্প করো আমি রাউন্ডে যাই... টেক কেয়ার...”
ডাক্তার বেড়িয়ে যাবার পরে কেবিনের পর্দা সরিয়ে ঢোকে প্রতীক আমার স্বপ্নের রাজপুত্র।
“শুভ সকাল। আমার অ্যাঞ্জেল কি ঘুমিয়েছিলো?”
“না হলে কি করবে শুনি?”
“নীলকণ্ঠ পাখীকে পাঠাব আমার আগমনীর বার্তা পৌঁছে দেবে...”
“প্রতীক... সব সময়ে...”
“আত্রেয়ী, আমি যদি বিহঙ্গ হতাম, তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতাম দিকশূন্যপুরে...”
“সকাল সকাল শুরু হলো প্রেমের ভাব...”
“বাদ দাও। রেস্ট নাও... ডাক্তার কাল ছেড়ে দিলে এখান থেকে সান্তাক্রুজ আর তারপরে কলকাতাতে তোমার বাড়ি... ঠাকুরদালান তোমাকে ডাকছে আত্রেয়ী...”
নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে জল পড়ে...
আত্রেয়ী।। একটা তথ্য আপনাদের দিতে চাই... প্রায় সবদেশের জনসংখ্যার ১০% মতন সমকামী এবং সেইসঙ্গে রুপান্তরকামী ও হিজড়ে... এইসব আপনাদের কাছে একটা ভয় বলুন কিংবা ভীতি... আচ্ছা আমাদের দেশে সংবিধানে সমানাধিকার আছে... তাহলে একজন সমকামী পুরুষ কিংবা মহিলাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিভাবে বিপরিত লিঙ্গের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়... এটা কি অপরাধ নয়?
নমস্কার, আমার নাম অরিত্র না না আত্রেয়ী... চমকে উঠলেন তো বিষমকামী সমাজের এঁড়ে মানুষেরা... কি জানেন আমার না আপনাদের প্রাণ খুলে গালাগাল দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারি না... আসলে নারী-পুরুষ সম্পর্কের বাইরে অন্য কোন কিছু ‘কেমন একটা’ তকমা পায়... আপনারা তথাকথিত বুলি কপচানো এমনকি সমকামী গে টপদের কাছে মেয়েলি ছেলে বা বটমগুলো বিছানায় মস্তির... বিয়ে একটা সম্পর্কের পরিণতি মাত্র আর কিছু নয় কিন্তু...হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি আমার আর প্রতীকের গল্প আপনাদের শোনাব... মাসীমা-দিদিমা, এটা রুপান্তরিতার মনের কথা...
“আজ সমীরণ আলোয় পাগল
নবীনও সুরেরও লীলায়,
আজ শরতে আকাশবীণায়
গানের মালা বিলায়।
তোমায় হারা জীবনও মম
তোমারই আলোয় নিরুপম
ভোরেরও পাখি ওঠে গাহি
তোমারই বন্দন।
মাতলো রে ভুবন,
বাজলো তোমার আলোর বেণু
বাজলো, তোমার, আলোর বেণু...”
পাঞ্জাবের একটা জায়গা
দক্ষিণ কলকাতার বড়লোকের ডাকাবুকো মেয়ে তিতলির সাথে মায়ের হাত ধরে বাড়িতে কাজে আসা বিহারি শান্তির মধ্যে বয়সের ফারাক প্রায় ৭ বছর কিন্তু সেটা দুইজনের কাছে আসা থেকে সম্পর্ক এবং হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবার পরে দুটো শরৎকাল পাড় হয়ে আবার একটা মায়ের আগমনের বার্তা আকাশে-বাতাসে। চন্ডিগরের ছোট্ট দুই কামরার একটা ফ্ল্যাট আর স্পোর্টস কোটাতে পাওয়া তিতিলির চাকরি তাদের সম্বল।
তিতলি।। নমস্কার সবাইকে। আরে আমি তিতলি আর উরিষ্যার তথা ভারতের গর্ব পদকজয়ী দ্যুতি চান্দের আদলে আমার চরিত্র গড়া হয়েছে। আমাদের এই পোড়া দেশে ধর্ষকরা বুক চিতিয়ে ঘোরে কিন্তু আমরা মানে সমলিঙ্গের সম্পর্কে থাকা সবাই কুঁকড়ে থাকি অনেকটা ভাড়াটিয়ার মতন। বাদ দিন, এবার আমার সময় হয়েছে সমাজের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মানে আপনাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার। আরে হ্যাঁ, পুজোর সময় বাড়ি যাবো... বাকিটা ভাগ্য নয় বরং আমাদের হাতেই। এই শান্তি তেরা প্যাকিং খতম হুয়ি?
শান্তি।। মেরেকো ডর লাগ রাহা হ্যায়...
তিতলি।। কথা না বলে প্যাকিং করো নইলে চেপে ধরে কিন্তু কিস করে দেবো...
শান্তি।। আরে ধ্যুর ঝুটি... যাও আগে দাঁত বেরাশ করে এসো...
তিতলি।। এই আমাদের দুইজনের জগত। অনেক কষ্টে ওকে একটু পড়াশুনা করাচ্ছি... বাকি গল্প পরে হবে আমি আগে ফ্রেশ হয়ে নিই নাহলে সকালে চা পাবো না... বাব্বা গিন্নির কড়া হুকুম... যাই মেরি মা...
গুরু।। বলেন বাবুমশাইয়েরা, এই হলো তিনটে গল্প মানে, একদিকে মাছে-ভাতে বাঙালী বাবু পিরিত করে সাদা চামড়ার লগে, অন্যদিকে দুটি মাইয়া করে আলগাআলগি... কি চাই বলুন? আগে থিক্কা কইয়া দিলাম, এই কাহানীতে ক্যাবারে কিংবা অন্য কিছু পাবেন না তাই আগেভাগে টিকিটের টাকা মিটিয়ে দিয়ে কেটে পড়ুন... ও ভাইরা-বোনেরা তোমরা পেলে দেশী ছোকরার বিদেশী স্বামী আবার পেলে দুষ্টু-মিষ্টি দুটো মেয়ের কাহানী... আর একটা গল্প তো হিরো থেকে হিরোইন হবার ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান মানে একটা ছিলিমে টান চাই চাই আমার... আমি ছিলিমে টান দিই আর আপনে লোগ ততোক্ষণ যান দেখুন গিয়া কি হচ্ছে মাসীর আশ্রমে...
“আপনারা কি বলছেন বাবু মশাইরা!!!”
“আপনার কি আপত্তি আছে মাসী?”
“না আসলে আমাদের মতন অপাক্তেয় মানুষের দরবারে কোনদিন কোন ভালো খবর তো আর আসে না।”
“দেখুন, এতো দিনের ভুলের না হয় আমরা কয়েকটা শহরতলীর পুজো কমিটি করলাম।”
“মাসী সেই জন্যেই এবার পুজোর সব আয়োজনের দায়িত্ব আপনাদের করতে হবে।”
“হ্যাঁ কিন্তু শাস্ত্রমতে আমরা কি মায়ের ভোগ করতে পারব?”
“মাসী, ঈশ্বর সর্বত্র আর স্বামীজী বলেছিলেন জীবে প্রেম করে যেই জন সেই সব সেবিছে ঈশ্বর। আমরা সবাই তার সন্তান তাই অধিকার সবার সমান...”
“ও মাসী কাঁদছ কেন?”
“ওরে চামেলি, সুমনা তোরা সবাই তাড়াতাড়ি জিনিসপত্র গোছা আর বুড়ো পুরুতের থেকে আশীর্বাদ নিয়ে আয় যাতে ঠিকমতন দেবীবন্দনা করতে পারি।”
“আপনারাই সমাজের আসল দুর্গা!!!”
“বাজলো তোমার আলোর বেণু,
মাতলো রে ভুবন
বাজলো তোমার আলোর বেণু
আজ প্রভাতে,
সে সুরও শুনে খুলে দিনু মন।
বাজলো, বাজলো
বাজলো তোমার আলোর বেণু...”
গুরু।। বাবুমশাইয়েরা কি হলো, পেলেন তো টম-ডিক আর হ্যারির গল্প মানে শেক্সপিয়ার থেকে রবি ঠাকুর... দেখলেন তো আমরা যারা পালাগান বাঁধি, রাস্তাঘাটে কয়েকটা ট্যাকার জন্য সঙ সেজে খেলা দেখাই তারাও কিছু জানি...
চ্যালা।। ওস্তাদ মানে এই গল্পে ডিকি বাবু ফিরছে দেশের বাড়ি মানে জমিদার বাড়ির পুজোতে... মানে বনেদী পুজোর আয়োজন?
গুরু।। আর সেখানে প্রতীকদের বাড়ি পুরনো পুজো... মানে ঘরোয়া ব্যাপার... আবার সেইসঙ্গে আছে সমাজের অপাক্তেয় বৃহন্নলাদের পুজো...
চ্যালা।। আরে ওস্তাদ তিতলিরা আসছে মানে বাড়ি তো যাবে?
গুরু।। সেটা কি এখনই শুনবি নাকি দেখবি দ্বীপের কি হলো, রাত পোহালে মহালয়া আর সে কই গেলো...
লন্ডন হিথোরো ইন্টার ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট...
“আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর ॥
মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,
বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে॥”
ডিক বা দ্বীপ।। আসলে কি জানেন গাছের পাতা যেমন ঝরে যায় ঠিক তেমনই জীবনও ঝরা পাতার কথকথা এবং একইভাবে নদী পেরিয়ে গেলে নতুন দ্বীপ... আসলে কি বলুন তো নিজেকে অনেকটা দিন বাদে এই পুজোর সময় নিজের জন্মভূমিতে... অনেকটা ‘তাসের দেশের’ রাজপুত্রের মত্ন ফিলিংস আসছে... মানে ওই চলো নিয়মমতে ইত্যাদি ইত্যাদি... কিংবা তাতাবাবু বা সুকুমার রায়ের ‘একুশে আইনের’ সমাজ। হ্যাঁ, আই.আই.টি পাশ করে বিদেশে চাকরি সেখান থেকে ড্যালির সাথে পরিচয় এবং আমরা সম্পর্কে আবদ্ধ। আমার বাড়ি কিংবা সমাজ আমাদের দুইজনকে না মেনে নিলেও আমি কেয়ার করি না কারণ আমার ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত আমি নিজে নেবো আর সেখানে কোন গতানুগতিকতার দোহাই শুনব না। পুজোর সময়ে ড্যালি ও তার বাবা-মা কলকাতাতে আসবে মানে আমাদের জমিদার বাড়ির পুজোয়... ড্যালির বাবা একজন কিউরেটার। আমি ওনার কাছেই মাইকেল অ্যাঞ্জেলেওর ‘ডেভিডের’ প্রতিকৃতি দেখেছি। ড্যালি আমাকে দেখিয়েছিলো লন্ডনের সেই কারাগার যেখানে অস্কার ওয়াইল্ড ছিলেন। আমরা ঠিক করেছি আমাদের বিয়ের এনগেজমেন্ট করব গ্রিসের লেসবু দ্বীপে... উপায় থাকলে আপনাদের সবাইকে ডাকতাম যদি আমার শ্বশুর স্টিভ জোভস হতো। আমার দিল্লী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট হিসেব অনুসারে প্রায় ৭ ঘণ্টা লেট ফলে আমি কলকাতা ঢুকছি সম্ভবত দ্বিতীয়া রাতে... আর হ্যাঁ আমি লোকাল ট্রেনে বাড়ি ফিরব... ওয়াও!!! ওখানকার বন্ধুদের ফোনে বলেছি পুজোর আগে একটা ফুটবল ম্যাচ হতেই হবে। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে তাই বাই...”
“গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রুত বেগে
করিছে পান, করিছে স্নান, অক্ষয় কিরণে॥”
মুম্বাই এয়ারপোর্ট...
“মানে, পুজোতে কেউ আসবে না আর সেটা আমার জন্য?”
“তুমি নিজেকে কেন কাঠগড়াতে দাঁড় করাচ্ছো আত্রেয়ী? মানসিকতা বদলাচ্ছে আর সেটা সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয় কি? বাদ দাও, এয়ারপোর্টের স্পিকারে রবীন্দ্রনাথ শোন।
“আমরা এই সমাজের বুকে প্রাইড ফ্ল্যাগ তুললাম আর আমরাই কিনা... ঠিক আছে প্রতীক, বাবা-মা নিশ্চয়ই কিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
“হ্যাঁ, অবশ্যই।”
“কিন্তু এতো আয়োজন?”
“ভাই আছে, সীমা আছে, তাছাড়া রহিমচাচা, খালেদ মিয়াঁ ওইদিকে আমার অফিসের কলিগরা, বন্ধুরা... মা আমাকে ছবি পাঠিয়েছে... এই দেখো। লাইট, তোরণ সব রেডি।”
“এটা তোমাদের বাড়ির পুজোর ৭৫ বছর না?”
“হ্যাঁ, শেষ বয়সে বুড়ো দাদু শুরু করেছিলে আর সেই থেকে চলছে।”
“এটা একটা পারিবারিক মিলনোৎসব হতে পারত কিন্তু...”
“আত্রেয়ী, দেবী দুর্গা সবার ভালো চান আর নিশ্চয় তিনি কিছু ভেবে রেখেছেন। এবার স্পেশাল শঙ্খ প্রতিযোগিতা আর ধুনুচি নাচ...”
“বাহ।”
“ধরণী'পরে ঝরে নির্ঝর, মোহন মধু শোভা
ফুলপল্লব-গীতবন্ধ-সুন্দর-বরনে॥”
“মাসী, ও মাসী...”
“দাঁড়া আগে তর্পন সেরে নিই...”
“তুমি এখানেও তোমার তুলসিতলা তুলে এনেছো?”
“আরে পোড়ামুখি, উনি আমার আরাধ্য কারন সকালে সুর্যদেবের দিকে মুখ করে গাছের গোড়াতে জল দিলে মন পবিত্র হয়।”
“আমরা তো অপাক্তেয়, ব্রাত্য...”
“হ্যাঁ কিন্তু সেটা কিছু মানুষের সঙ্কির্ণতা ঝিলিক...”
“যুগযুগ ধরে চলে আসা প্রথাকে জেদের বশে না মানা...”
“দেবীর প্রতিমার প্রথম মাটি নেওয়া হয় বারবনিতার দুয়ার থেকে কিন্তু সেই একই দুর্গার মন্ডপের চৌকাঠ পেরোনোর অধিকার ওই একই বারবনিতাকে দেয় না এই সমাজ, এই মানুষরা...”
“এটা তো দ্বিচারিতা মাসী...”
“এটা ওদের মানসিকতা... অবশ্য আইন বদলাচ্ছে, মানুষের মনও বদলাচ্ছে ধীরে ধীরে... তোরা এখন স্কুল, কলেজে যেতে পারবি, চাকরি করতে পারবি...”
“হ্যাঁ, আগামীকে বাঁচার রসদ দেওয়া...”
“বহে জীবন রজনীদিন চিরনূতনধারা,
করুণা তব অবিশ্রাম জনমে মরণে॥”
নিউদিল্লী স্টেশান...
“ওরে ওই শান্তি। চুপ করে বস এখানে। আমি গিয়ে বাইরে থেকে একটু গাঁজা বানিয়ে আনি কারণ ট্রেনে তো বানাতে পারব না।”
“তুমি আবার খাবে?”
“এই কয়েকদিন খাবো রে পাগলি আর এক টানেই যেমন তেমন হবে...”
“আমিও খাবো...”
“খাবি!!! এই বিজয়ার দিন সিদ্ধি খাবো...”
“বাড়ি যাবে না তুমি?”
“কলকাতাতে নেমে একবার দেখা করব... তারপরে চলে যাবো কোন দূরের পুজোতে...”
“তুমাহারা জো মর্জি...”
“স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তি কোমল করে প্রাণ,
কত সান্ত্বন করো বর্ষণ সন্তাপহরণে॥”
গুরু।। আসলে কি জানেন, এদের গল্প সমাজের আনাচকানাচে ছড়িয়ে আছে আর আমি শুধু সেইগুলো খুঁজে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আসলে অলিম্পিকে টিম ড্যালি কিংবা দ্যুতি চান্দ অথবা বিহারের দুটো দলিত মেয়ে অথবা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা বাঙালি-ইউরোপীয় জুটি অথবা সম্ববত ২০২০ বা ২০১৯ সালের একটা পুজোর দায়িত্ব নেওয়া তথাকথিত ‘হিজরেরা’ সংবাদ শিরোনামে এসেছিলো আর আমি সেইগুলো দিয়েই সাজিয়েছি এই গল্প। এরা সবাই আমাদের মাঝেই আছে আর তারা সহানুভূতি চায় না, চায় শুধু সমানাধিকার আর বেঁচে থাকার জায়গাটা। এদের কারোর প্রেম অমর নয় কারণ এরকা রক্তমাংসের মানুষ আর পাঁচজনের মতনই এদের জীবন। তাই আসুন শুনি এদের গল্প।”
“জগতে তব কী মহোৎসব, বন্দন করে বিশ্ব
শ্রীসম্পদ ভূমাস্পদ নির্ভয়শরণে॥”
চ্যালা।। এটা কি হলো? পালা চলছে আর তুমি ছিলিম টেনে ঝিম মেরে পড়ে আছো?
গুরু।। আবে বিষ্ণুর ৬৫ তম অবতার, এবার পালা সাতদিনে মানে ওয়েব সিরিজের মতন... আরে বাবা, নেটফ্লিক্স, জি ৫। হইচইয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে হইবে নাকি? না হলে কেউ কাটবে তর টিকিট?
গল্প নেবে গো গল্প...
আমার এই ছোট্ট কথা, এতে প্রেম-কাম সবই আছে
দেখে যা নিজের চোখে ভালোবাসা কেমন নাচে।
এমন বিবেক পাবে না আর, বল ভাই কি দাম দেবে...
কবিতা নেবে গো কবিতা...
বাবুমশাইরা, আজ এই অবধি আবার গাল এই পালাগানের দ্বিতীয় এপিসোড, এখানেই আর একই সময়ে... আমি ততোক্ষণ আমার চম্পাকলিকে একটু আদর করি, আরে চিনলেন না, এই প্রশান্ত মানে এই পালাতে আমার চ্যালার ভূমিকায়। আমিও আপনাদের মতন সাতরঙা ক্যানভাসে ছবি আঁকি আর স্বপ্ন দেখি দুই চোখ জোড়া...
চলবে
সমাজের দুর্গা
রাজা অঙ্কুর
দ্বিতীয় পর্ব (জীবনের কথকথা)
#সমাজেরদুর্গা #সমাজের_দুর্গা (সহযোগিতায় প্রশান্ত এবং অন্য পুরুষের গল্প পেজের সবাই)
(নমস্কার সবাইকে এবং সবাইকে পুজোর আগাম শুভকামনা জানিয়ে শুরু করছি পুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ ধারাবাহিক ‘সমাজের দুর্গা। একটা অনুরোধ, দয়া করে ধর্মের জিগির তুলে কলুষিত করবেন না কারন আমি কাউকে অবমাননা করছি না এবং সবকিছুর উর্ধে উঠতে চাইছি বলেই সমাজের কথা বলছি। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানান কারন এই দুই বছর আপনাদের সাহায্যেই আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি এবং আগামিদিনেও আপনাদের হাত আমাদের দরকার)
“হে হে ড্যালি, আই অ্যাম ইন মাই মাদারল্যান্ড। সিটি অফ জয়,আমার কলকাতা।”
“এই তুমি কান্ট্রি সাইডে যাবে কখন?”
“এই বিদেশী হুমদো, শালা সম্রাট নিরোর না মনে পড়া বংশধর। ইউরোপ আর ভারতের কান্ট্রিসাইড আলাদা। আমাদের দেশের বাড়ি জাস্ট ফাটাফাটি। তুই আয় তোকে পানাপুকুরে চোবাবো।”
“কি করব?”
“কচুরিপানার ঘণ্ট খাওয়াবো আমার শ্বশুরকে। শালা আমাকে প্রায়সই সিদ্ধ স্পাগেটি আর হ্যাম খাওয়ায়। এই সাদা চামড়া ভাঁড়ে চা খবি?”
“হেই ওয়াটস দ্যট?”
“দিস ইস... ধ্যুর শালা। ফুচকা, ডালের বড়া কিংবা ভাঁড়ের চায়ের ইংরাজি কি?”
“হেই ডিক...”
“তুই এখন হিথোরো এয়ারপোর্টে টয়লেট টিস্যু পেপার মোছ না মানে টিস্যুতে টয়লেট পেপার মোছ...”
“কি ভুলভাল বলছো ডিক?”
“বাদ দে, আমি এখন কুমারটুলি যাবো সেখান থেকে কলেজ স্ট্রিট অ্যাণ্ড দেন টু মাই হোম সুইট হোম...”
“বাই অ্যান্ড টেক কেয়ার।”
“এটা কে দাদাবাবু?”
“এটা হলো দেশী পাত্রের বিদেশী হাজবেন্ড। বাদ দাও... আমাকে কয়েক প্যাকেট কড়া বিড়ি দাও দেখি...”
গুরু।। হে হে, ছিঃ ছিঃ, শেষমেশ বিদেশ ফেরত ইঞ্জিনিয়ার কিনা বিড়ি!!! মাফ চাইছি বাবমশাই এটা হামার ইসস্ট্রিপ্টে ছেলো না... এই হারামি পোলা, পালাগানে বাই ডায়লগ কিসের রে?”
দ্বীপ।। এই রাজা বুড়ো... সাইডে চেপে বস তুই... আমাদের গল্প এখন আমরা নিজের ইচ্ছে মতন বলব...
গুরু।। সেটা কি করে হবে? জাদুকাঠি হামার কাছে বাছুয়া...
দ্বীপ।। তোমার ওই কাঠির করোনা হইছে যাও যাও... দাঁড়াও বহুত হুসু পেয়েছে, কলকাতার পাবলিক টয়লেটে খুচরো কই পাবো... ধ্যুর বাল, আমি কোথায় ডলারে ছুঁচাই... মুখের ভাষার জন্য মাফি চাইছি বাবুমশাইয়েরা... একটু ডিসকাউন্ট করুন ওই ওইপাশের বুড়ো লেখককে... বয়স হয়েছে তাই কবে পটল তুলবে...
গুরু।। এই হারামির পোলা, আমার গুণগান গাইছিস না নাকি ভারি বাজার মে মেরা ইজ্জত কা ৪৬৪ বানা রাহা?
দ্বীপ।। তোমার গুণের ১০৮বার... এটা এই সিনের শেষ খিস্তি... বাই অ্যান্ড লাভ ইউ অল... উফফফ আবার কনডমও কিনতে হবে...
চোখ টিপে অভিনেতা বেড়িয়ে যায়...
গুরু।। বাচ্চাদের ক্ষমা কইরেন বাবুরা... নাদান হ্যায়। আসলে কনট্র্যাক্টের সময়ে বলেছিলাম চোলাই খেয়ে পোদ উলটে পড়ে থাকার একটা সিন দেবো কিন্তু ওই সম্মানের কথা ভেবে সিন ঘ্যাচাং ফু... নাইলে আবার সামজীদ বহুত ক্যালাবে বলেছে... বাদ দিন, তাইলে এই ডিক মানে দ্বীপশুভ্র চ্যাটার্জী কলকাতার চক্কর কেটে যাবে নিজের দেশ মানে সেই গ্রামের মেঠো রাস্তা, চারপাশে কাশবন এই বাংলার কুসুমপুর। জমিদারবাড়ির পুজোর ভোগে আপনারাও আইসেন... জমিয়ে খেতে খেতে আর পুজো দেখতে দেখতে গপ্প কইরব।
হোমোফোবিক দৌড়ে যাবি শিখবি সহবতপিডিয়া
হাবিজাবি গুলে খাবি টপ-বটম আইডিয়া
ফেসবুকে একসাথে কুমিল্লা থেকে সাইবেরিয়া
সম্পর্ক খুবই কম, খুবই সস্তা দাম
হেই শান্তি হেই শান্তি প্লেস খালি আলুর দম...
কলকাতা শহরতলীর পুজো সেজে উঠছে বৃহন্নলা সাজে। আশেপাশের বেশ কিছু খোলের মাসী অ সবাইকে নিয়ে কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়েছে দোয়েল মাসী। আসলে কি বলুন তো, মা দুর্গা সবার মানে আমার, আপনার থেকে শুরু করে সব মানুষের মানে ২০১৯ সাল চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে সমকামী তকমা লেগে আত্মহত্যা করে বিনীত কিংবা কৃষ্ণনগর সরকারী কলেজের প্রাক্তক অধ্যক্ষা থেকে সবার, তাই দয়া করে এটাকে ধর্মের অবমাননা বলে কুমন্তব্য করবেন না। আসুন না সবাই মিলে হাত লাগাই আর বলি #হোককলরব #সমাজেরদুর্গা
“বুঝলি দোয়েল হাঁপ ধরে যাচ্ছে...”
“এই কমলিকা, এই তিন্নি এদিকে আয় তোদের বুড়ি অনু মাসীকে বসার চেয়ার দে। এবার পুজোর আগে ডাক্তার দেখিয়ে নাও, এই তো এখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত বলেছে কাল ভ্যাকসিন ক্যাম্প আর সবাইকে ডাক্তার দেখবে...”
“জানিস নিজের আজকের এই ভাগ্যকে হিংসা হয়...”
“কেন?”
“আমাদের কপালে কি সুখ সইবে?”
“সেটা জানি না দিদি, কিন্তু এই মেয়েরা হাত লাগিয়ে প্যান্ডেল বাঁধছে, উড়িয়া ঠাকুরদের হেঁসেলে সাহায্য করছে আবার অনেকেই গ্রামে টোন্না খুঁজতে বেড়িয়েছে ... করুক না কটা দিন মনের আনন্দ, দেখুক দুনিয়াদারী...”
“হ্যা আবার তো সেই অবহেলা, বঞ্চনা আর কষ্ট...”
“দেবী দুর্গার চরণে অর্ঘ্য দিয়ে জিজ্ঞেস করব, কোথায় পাবো বেঁচে থাকার সামান্য অধিকার...”
মাঝরাতে সত্তার চিপায় খুড়োর কল
গ্রাইন্ডারে একক্লিকে খ্যামটা চল
গাঁজা টেনে মাদল তালে সবাই বল
প্রেমে ছ্যাকা, স্ট্যাটাস বোকা সবই কম কম
আমি তুমি কমদামী পম পম...
হেভি সেক্সি...
“আমার শহর কলকাতা...”
“আমার ডর লাগছে দিদি...”
“শোন সোজা বুক করা হোটেলে চেকইন করে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে সবার জন্য জামাকাপড় কিনব। ঠাকুরের প্রণামী ইত্যাদি... চল চল চল...”
“আমিও পুজোতে তোমাকে দিবো তিতু...”
“উলি বাবা আমার অশান্তি রে... আরে তোর জন্য স্পেশাল কেনা আছে আর সেটা এবারের পুজোর চমক...”
“চা খেয়ে নিই কারন ক্যাব আসতে আরো ১৫ মিনিট...”
“তাই দেখাচ্ছে... তুই চা বিস্কুট নে আর আমি ফোনে অফিসে বলে দিই পৌঁছে গিয়েছি...”
হাড়হাভাতে বুক পকেটে প্লেসের তাস
বয়ফ্রেন্ডের টাইমলাইন টাইমপাস
পাটের ক্ষেতে কিংবা ডেটে
তুই যা চাস
সাইজ মেপে ভালোবেসে হলুদ কম
কাক-চিল তোরা বুঝেশুনে চিল্লা কম
“সাবধানে গাড়িতে ওঠো অরিদা...”
“এই বউদি ডাক...”
“এই শোন, তোকে দাদা ডাকি না তাই বউদির পজিশনের ভ্যাকেন্সি থাকবে কিন্তু অরিদা আমার অরিদাই থাকবে। হাজার হোক আমি দেওর বলে কথা...”
“আরে তুমি ছাড়াও না...”
“হ্যা আমি তো অন্য কেউ...”
“আরে সীমা আয় আয়, আজ থেকে জায়ে জায়ে কুটকচালি শুরু...”
“আমার কিন্তু পরনিন্দার অনলাইন ক্লাস করা আছে অরিদা...”
“আচ্ছা কেউ কি আমার বউকে বউদি ডাকবে না?”
“চান্স কম... তাড়াতাড়ি বাড়ি চলো, ওইদিকে অনেক অনেক সারপ্রাইজ আছে...”
“এই কি করেছিস তরা সুদীপ?”
“সামান্য কিছু আয়োজন... বাকিটা তুমি যেমন বলবে সেইরকম হবে আর এটা বাবার কড়া হুকুম...”
“হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো...”
কালো দাড়ি দোয়াত খালি স্পিকটি নট
নেট দুনিয়া সবাই শুনি লাটের বাট
বাজার গরম
লজ্জা শরম রুমে চল
এক ক্লিকে কেল্লা ফতে সত্য কম
“ড্যালি এই দেখ, সপরিবারে মায়ের মণ্ডপে মণ্ডপে যাবার প্রস্তুতি চলছে।”
“ওয়াহ!!! আমি এক্সাইটেড ডিক। বাট ওয়াই বেয়ার্ড?”
“এইসব প্রতিমার সাজসজ্জা সব মণ্ডপে কিংবা ঠাকুরদালানে হয় আর বোধনের আগে অস্ত্র সাজানো হয়... আই উইল এক্সপ্লেইন ইউ এভরিথিং...”
“আল রিচুয়াল, এজ ওল্ড ট্র্যাডিশান...”
“হ্যাঁ রে সাদা চামরার ভুত...”
হাতিবাগানের বাজার
“সবার সব হলো, দুইহাতে আর জায়গা নেই।”
“তুমি তো নিজের জন্য কিছুই কিনলে না তিতু?”
“শান্তি, তুই আমার সাথে থাকা মানেই সব পাওয়া।”
ক্যামেরার মুখোমুখি তিতলি...
তিতলি।। আচ্ছা আমাদের সমাজে কেন নারীরা পুরুষকে নিয়ে কবিতার ডালি সাজাবে না... পুরুষরাই নারীদের নিয়ে কবিতা-গল্প-উপন্যাস লিখবে কিংবা ছবি আঁকবে... একটা নারীর কি নগ্ন নারীর ছবি আঁকার বা দেখার অধিকার নেই? তাহলে কিসের আধুনিকতা কিসের সমানাধিকার?
সেলুকাসের বিচিত্র এই দেশে পুরুষ দেহ দেবে আর সে ভোগ করবে নারী দেহ-প্রাণ। একটা নারী যদি কল্পনায়-বাস্তবে নারী দেহ কামনা করে তাহলে সে ব্রাত্য। একটা পরিবার-সংসার নারী-পুরুষ উভয়ের, তাহলে সেটা কেন একজন নারী সাজাবে? কেন দুটি নারীর ভালোবাসা-আকাঙ্খায় একটা সুখের নীড় গড়ে উঠবে না...যে গর্ভে একটা পুরুষের জন্ম সেই একই গর্ভজাত সন্তান এক নারী... অথচ কি বৈষম্য এক বিশাল বৈপরীত্য...”
এইযে বোকা ভোদাপাকা আসল-নকল চিৎপটাং
লকরবকর চলল সবাই সামনে তুলে তৃতীয় ঠ্যাং
গেলো ভোগে সেক্সের রোগে সমকামের বখরা কম
জুক্কু কাকু গুগুলদাদু হ্যান্ডিক্যাম
ভোলে বাবা পাড় করেগা
টাকা নয়ত কাউকে দেগা...
গুরু।। আসলে বাবুমশাইয়েরা আমরা সেই বচপন সে মানে ছোটবেলা থেকেই জানি কারন সেটাই শেখানো হয়েছে, দুইয়ের সাথে দুই যোগ করলে যোগফল চার হবেই। অন্যকিছু হলেই ব্যাস!!! আচ্ছা সমলিঙ্গের সম্পর্ক নিয়ে এতোই যখন ছুঁচিবাই তাহলে সেইসব মানুষদের থেকে সাহায্য নেবেন না। ব্যাস মিটে গেল। সুবিধা আদায় করে নেবো আর অধিকারের কথা উঠলেই নিয়ম-নীতি ইত্যাদির দোহাই... বাহরে মহান সভ্যতা। আসলে কি জানেন তো আমাদের মানবিকতা বোধে মরচে ধরেছে আর তাই রামু বাড়ির চাকরই থাকবে কিন্তু সে আর পরিবারের অঙ্গ হবে না। দেখুন না আমদের মধ্যে কেমন দ্বিচারিতা। মারা যাবার পরে আমরাই উল্লাসে রবীন্দ্রনাথের দাড়ি উপড়ে নিয়েছিলাম, আমরাই তাকে বুর্জোয়া, নেতাজীকে তোজোর কুকুরে ভূষিত করেছিলাম আর আজ তাদের জন্মদিনে সকালে পতাকা তুলে, দুপুরে মাংস-ভাত খেয়ে উঠে ওয়েব সিরিজ দেখছি... রেস্টুরেন্টে টিপস দেবো কিন্তু গরিব সবজীওয়ালার থেকে দরদাম করে কিনব। বাদ দিন, আপাতত এই গল্পে সবাই পুজো উপলক্ষ্যে কল্লোলিনী তিলোত্তমাতে হাজির। দেখাই যাক না কোথাকার জল কোথায় গড়ায়...”
ভবানিপুর যগুবাবুর বাজারে নেমে গলিতে ঢুকোতে গিয়ে দুই পা পিছিয়ে আসে তিতলি, ভালো নাম অদ্রিজা। প্রায় ৩ বছর আগে বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দেবার এক সপ্তাহের মধ্যে পালিয়ে এই শান্তির হাত ধরে পাঞ্জাব মুলুক। কলজের জোরে আজ সে সরকারী চাকরি করে।
“কি হলো দাঁড়িয়ে গেলে কেন? কেয়া হুয়ি?”
“কিছু নারে চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই রাত...”
“আসলে কি বলুন তো বাবুমশাইরা, শ্বশুরবাড়ি থেকে সেই রাতে পালানোর সময় মনের ভয় ছিলো না কারন হয়ত সেইদিন মরতে চাইনি। আজ পা কাঁপছে কেন আমার... চল শান্তি।
“জানেন দিদিভাইয়েরা, সেদিন বস্তির এই গরিব মাইনসেকে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে শিখিয়েছিল সেইদিনের এই দিদি, আজ অবশ্য আমার সোহাগী। হ্যাঁ হ্যাঁ পালিয়েছিলাম এই সমাজের বুকে আমরা দুটো মেয়ে। আজ আবার আপনাদের সামনে দাঁড়াতে এসেছি কারন চোখের দিকে চোখ তাকিয়ে কথা বলার অধিকার দিয়েছে এই দেশের সংবিধান। মনে পড়ছে সেইদিনের কথা...”
ফ্ল্যাশব্যাক...
“কি বলছো তিতলিদি!!!”
“শান্তি, আমি তোকে ভালোবাসি আর ভালোবাসার কোনদিন কোন মেরুকরণ হয়না বলেই আমি চুম্বনের কবিতা লিখতে চাই তোর এই ঠোঁটে। তোর শারীরিক আকর্ষন, লাল লিপস্টিকের লালাতে আমি মাতাল হতে চাই, নেলপালিশ লাগানো নখ গোপন অঙ্গে ঢুকিয়ে... গোলাপি স্তনবৃন্তে কিংবা যোনিপথে জিভের ছোঁয়া দিয়ে পেতে চাই রসাস্বাদন... এটা যৌনতা নয়, এটা ভালোবাসা, কাছে চাওয়া, কাছে পাওয়া শান্তি।”
“আমার লজ্জা করে...”
“জানেন বাবুমশাইয়েরা সেদিনের সেই লাজুক শান্তি আজকের দজ্জাল গিন্নিমা। একহাতে কারখানার কাজ আর অন্যদিকে সংসার সামলায়। আমার দুর্গা এই শান্তি কিংবা শান্তির মতন লাখ লাখ নারী আর দেবী দুর্গা তো নারী শক্তির প্রতীক তাই না?
গুরু।। এই ফ্রিজ, এই তুই চালু কর...
দ্বীপ।। হালকা চাপদাড়ির সাথে চোখে রিমলেস চশমা মানে সোনায় সোহাগা। কৃষ্ণের মতন গায়ের রঙ, ডেনিম কালারের শার্টের জামার হাতা গোটানো... উফফফ!!! ফাটাফাটি!!! কিন্তু আমার পোড়া কপাল। জুটল একটা ধপধপে সাদা চামড়ার মাখনের মতন ছেলে এই ড্যালি। ৪ বছর আগে ফ্রান্সে যাবার আগে কি জানতাম ছাই আমার জীবনে ড্যালি আসছে। ড্যালি একজন স্পোর্টিস এক্সপার্ট, কমেন্টেটার, সাইকোলজিস্ট আর খুব সুন্দর সংসার করে, মানে এই বোহেমিয়াম পোলাকে সামলে রাখে।
গুরু।। এই ফ্রিজ... কি বলুন তো কাকিকারা, সেই আদিম কালের আদম এবং ইভের গল্পের মাঝে একটা আপেল মানে এই আদমের সাথে আদমের পিরিত, ম্লেচ্ছ, মানসিক বিকার ইত্যাদি ইত্যাদি... আমি আর প্রশান্তকেও অনেকেই অনেক কিছু বলেছিলো...
চ্যালা।। এই এটা কি নিজের গল্প শোনাবার বাহান নাকি? নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে পেরেম কেচ্ছা শুনিয়ে বাজার গরম করা? এক্টো দেখব...
“জানেন আপনারা, আপনাদের এই পঞ্চায়েত আমাদের মতন আবর্জনাকে জায়গা দিয়ে অনেক কিছু করেছেন আর তাই সাহস নিয়ে সপ্তমী, অষ্টমী আর নবমীতে আশেপাশের কোন গ্রামে হেঁসেল চলবে না... মানে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া, ও দিম্মা, কি ঠিক আছে তো?”
“সেক্সি...”
“সপ্তমী লুচি, বেগুন ভাজা, আলুর দম আর শেষ পাতে বোঁদে।”
“ও দোয়েল মাসী, অষ্টমীতে কিছু গরম গরম খিচুড়ি, সঙ্গে লাবড়া, আলু কপি ভাজা... বাজারহাটের দায়িত্ব কিন্তু কচি টোন্নার দল তোমাদের?”
“আমরা রেডি...”
“হ্যাঁ সঙ্গে কচি আমাদের কাউকে ঝুলিয়ে নিও...”
লজ্জাতে গ্রামের ছেলেরা মুখ লুকায়...
“ও ঠানদিদা, কি গো হিজরা নাত বউ চলবে নাকি...”
“আমার তো ঝিলিককে খুব পছন্দ হয়েছে, একদম লক্ষ্মীমন্ত... তোর মতন...”
“দোয়েল থাক না এই গ্রামে আমার সতীন হয়ে...”
“আমার তেনাকে খবর পাঠিয়েছি... দেখি...”
“ও মাসী!!! তোমার পারিখ?”
“হ্যাঁরে, আমিও এক সময়ে কারোর ছাইয়া ছাইয়া ছিলাম নাকি?”
গুরু।। বাবুমশাইয়েরা, এই পালাগান ভালা লাগিলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার কইরে এই রূপকথার দ্যাশ, এই ‘অন্য পুরুষের গল্পের’ সাথে থাইকেন আপ লোগ। হ্যাঁ, তা গল্পে যা যা দেখলেন মানে হামার এই জাদু কাঠি যা দেখাল, সেটা হলো বাঙালী বাবু দ্বীপ ঢুকছে তার গ্রামের বাড়ি আবার অন্যদিকে তিতলি দেখা করতে এসেছে তার ফেলে আসা পরিবারের সাথে। আত্রেয়ী ঢুকছে নিজের বাড়ি আর মাসীরা তো খুব ব্যাস্ত। আসলে কি বলুন তো, ভালো থাকাটা খুঁজে নিতে হয়, আদায় করতে হয়। কেউ ভালোথাকা খোঁজে দুইজনের ভালোবাসায়, কেউ বন্ধুত্ব, কেউ আবার একাকীত্বে আর আমরা যারা পালাগান বাঁধি, আমরা ভালো থাকা খুঁজে পাই আপনাদের হাসি, আনন্দের মাঝে। বিশ্বাস করুন দাদার-দিদিরা, কেউ চাই না পালার শেষে আপনাদের চোখে জল আসুক কিংবা যদি আসে সেটা যেন আনন্দের হয়… এই সামান্য খুশী, ভালো এটাই তো জীবনে বেঁচে থাকার রসদ। তাইলে আর দেরী না করে দেখা যাক কোথায় কি হচ্ছে…
কুসুমপুরের জমিদারবাড়ি
“এতদিনে মায়ের কথা মনে পড়ল বাবু?”
“মা আসলে, ছুটি পাওয়া… বাদ দাও, জম্পেশ খিদে পেয়েছে…”
“তুই ফ্রেস হয়ে নিয়ে নীচে আয়, লুচি রেডি…”
“লাভ ইউ মাম্মি…”
ভবানিপুরে তিতলির বাড়ি
“তারমানে ভুল আমরা বাবা?”
“অহন, ভুল আমরা সেদিন করেছিলাম যেদিন আমি বাবা হয়ে নিজের মেয়ের চাহিদা, ইচ্ছে না জেনে বিয়ে দিয়েছিলাম… তিতলি ঠিক নাকি ভুল সেটা তো ভবিষ্যত সময় বলবে…”
“এই অনাসৃষ্টি মেনে নেওয়া যায় না…”
“আচ্ছা দাদা, তোদের মধ্যে প্রায় রাতে কি নিয়ে ঝামেলা হয় রে?”
“অকারণ অন্য প্রসঙ্গ তুলে কি লাভ?”
“বউদি, দাদার পরকীয়া যদি ঠিক হয় তাহলে একই সুপ্রিম কোর্টের মতে সমলিঙ্গের সম্পর্ক বৈধ, তাই নয়কি?”
“তিতলি!!!”
“দাদা, অফিস কলিগের বিধবা বউয়ের সাথে পিরিতকে কিভাবে ব্যাখ্যা দিবি তুই?”
“তোরা থাম।
বৃহন্নলাদের পুজো
“আপনি যদি বলেন এটা ভুল তাহলে আমরা চলে যাবো। এতো বছর মায়ের চরণ পাইনি, না হয় বাকি জীবন সেভাবেই কাটিয়ে দেবো…”
“ভুল-ঠিকের ব্যাখ্যা কোথাও নেই কিন্তু এই বয়সে এসে চিরাচরিত জিনিসের অন্যথা মন থেকে মেনে নিতে পারছি না তাই…”
“পণ্ডিতমশাই, আমাদের সবার বয়স কম, আমরা এইসব নিয়ম-নীতি জানি না কিন্তু একটাই কথা জানি, আমরাও সৃষ্টিকর্তার সন্তান… তাই প্রশ্ন থেকেই যায়।”
“তর্কালঙ্কার মশাই, কি ঠিক করলেন এই মেয়েগুলোর মুখের মুখের দিকে তাকিয়ে?”
“আমাকে সময় দাও তোমরা… একবার নিজের সাথে যুদ্ধ করা দরকার।”
প্রতীকদের বাড়ি
বাড়ির চৌকাঠে রাখা ঘট পেড়িয়ে, আলতা পায়ে উথলে ওঠা দুধ, জ্যান্ত মাছ সহ বধু বরণের সব আচার পালন করে নিজের ঘরে বিস্রাম নিচ্ছে আত্রেয়ী।
“আরে মামী!!! তুমি???”
“আরে, আজ তোর জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন আর আমি না এসে পারি। কই দেখি, সোনা বউয়ের চাঁদ মুখখানা দেখি। এই নাও, এটা আমাকে আমার শাশুড়ি বিয়ের পর দিয়েছিলেন আর আজ সেই ৮২ বছরের বুড়ির ইচ্ছাতে সেটা আমি তোমাকে দিলাম...”
“মামী খাটের ওপর বসো না... প্রণাম করব।”
“অ্যাঁরে পাগল, আয় বুকে আয় মা... তোর স্থান বুকে... এই সংসার আলো করে রাখ।”
“কি হে আমার শালার বউ, কেমন হয়েছে বউমা আমার?”
“জামাইবাবু, মাংসভাত এবার স্পেশাল রাঁধব, নবমীতে...”
“এলেন ঘটি বউ...”
“আমাদের বাড়ি অবশ্য বাঙাল তাই অষ্টমীতে মাংস।”
গুরু।। তাইলে বাবুরা, কেমন লাগছে গল্প? দেখুন বৃহন্নলাদের পুজোর ওপর সমাজের কালো মেঘ কিন্তু তিতলির বাবা-মা তিতলির পদক্ষেপ মেনে নিয়েছে আবার দ্বীপ তো বাড়িতে এখনও কিছুই বলেনি আর আজ ড্যালি হাজির কলকাতা। প্রতীকদের বাড়ির পুজোতে প্রতীকের বাবা সব আত্মীয়দের প্রতীক-আত্রেয়ীর সম্পর্কের ব্যাপারে বলেছে ফলে কেউ আসবে কিনা সেটা প্রশ্নের... আজ চতুর্থি, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি আর চলুন সেই সুদূর ফ্রান্স... এই রে একটা বিরাট মিসিটেক হইছে মানে পালাগানের কোথাও বলা হচ্ছে ড্যালি ফ্রেঞ্চ আবার থাকে সুদূর রোম শহরে... না মানে ওইটা পাছার ভুল... এই থুক্কু ছাপার ভুল, ক্ষমাঘেন্না কইরে দেবেন নিজ গুণে... এক কাজ করা যাক, বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যে আর পুজোর আগে একটু আসর না জমলে কি হয়? আসর মানে গ্রামের নদীর পাড়ের ঠেক আবার ওইদিকে বৃহন্নলারা মিলে করছে গানের আসর, তিতলি হাজির একটা রেস্টুরেন্টে... মানে তিনদিকে আলাদা আলাদা তিনটে গল্প...
কুসুমপুরের নদীর পাড়...
“হেই ডিক, এটা কি?”
“এটা বাংলা মানে কান্ট্রি লিকার... এটা অবশ্য জাতের নাহলে ধেনো কিংবা চোলাই দেবার ইচ্ছে ছিলো...”\
“এই দিপু... এদিকে শোন...”
কাট টু গানের আসর
“এই একটা জমাটি গান ধর দেখি...”
“ভ্রমর কইয়ো গিয়া,
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে,
ভ্রমর কইয়ো গিয়া।।”
“দোয়েল মাসীর হাতে তৈরি ঝিলিক জানো পোলা...”
কাট টু রেস্টুরেন্ট
“তুমি!!!”
“হ্যাঁ, হাতিবাগানে দেখেও সামনে যাইনি দ্বিজা...”
“আসলে, সুতীর্থ...”
“দ্বিজা, আমার অপরাধটা কি ছিলো? আমাকে কিংবা আমার পরিবারকে বললে কি হতো?”
“দেখো তীর্থ, ভুল আমার ছিলো... আমি তোমাকে বোঝাতে পারিনি...”
“তা এই কি আমার সতীন?”
“”ইনি কে?”
“আরে আলাপ করিয়ে দিই, শান্তি ইনি সুতীর্থ মানে যার সাথে আমি সাতদিন সংসার করেছি...”
“আরে শুধু সংসার, খাতায় কলমে আমার স্ত্রী... একটা অনুরোধ রাখবে আমার?”
কাট টু গানের আসর
“ভ্রমর রে, কইয়ো কইয়ো কইয়োরে ভ্রমর,
কৃষ্ণরে বুঝাইয়া মুই রাধা মইরা যাইমু
কৃষ্ণ হারা হইয়ারে, ভ্রমর কইয়ো গিয়া।।
ভ্রমর রে, আগে যদি জানতামরে ভ্রমর, যাইবারে ছাড়িয়া
মাথার কেশও দুইভাগ করি
রাখিতাম বান্ধিয়ারে, ভ্রমর কইয়ো গিয়া।।”
“কি গা, অমন করে কি দেখো?”
“প্রথমদিন থেকে আজ পর্যন্ত যত দেখি মোহিত হচ্ছি জানো... কিন্তু ঝিলিক কি মানবে?”
“সুযোগ দেখে মনের কথা বলে ফেলো... তাছাড়া তোমার দিদা বা বাড়ির লোকের তো পছন্দ...”
“বাবা ভয় পাচ্ছে আত্মীয়দের কথা ভেবে... বাড়িতে সালিশি সভা বসেছে। জানি না কি লেখা আছে আমার কপালে?”
কাট টু কুসুমপুর
“দিপু, তোর বাবা কি মেনে নেবেন?”
“দেখ তাতান, আমি ড্যালি কিংবা ড্যালির পরিবারের সাথে এমনভাবে মানসিকভাবে জড়িয়ে পড়েছি...”
“হ্যাঁ সেটাই... খুব সহজসরল, প্রাণবন্ত ছেলে। কি সুন্দর গ্রামের পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে।”
“পুজোর সময় স্পেশাল ড্রেস কোড মানে অষ্টমীতে ধুতি-পাঞ্জাবী...”
“ফাটাফাটি...”
“আমি আমার হিমুকে সাজিয়ে তুলব আমার মতন...”
কাট টু
প্রতীকের বাড়ি
“বৌমা...”
“হ্যাঁ বাবা, বলুন...”
“এই নিয়ে আয় দেখি...”
প্রতীকের বোন কলে একটা ফুটফুটে মেয়ে নিয়ে ঢোকে...
“নাও কোলে নাও...”
“বাবা!!!”
“এই দুধের শিশু অনাথ, আর তোমরাই পারবে তাকে সমাজে পরিচিতি দিতে। এটা আমার অনুরোধ নয় এটা আদেশ।”
“আমি কি পারব বাবা দায়িত্ব নিতে...”
“বৌমা, আমরা সবাই আছি, চিন্তা কিসের?”
কাট টু গানের আসর
“ভ্রমর রে, ভাইবে রাধারমণ বলে শোনরে কালিয়া
নিভা ছিলো মনের আগুন
কে দিলা জ্বালাইয়ারে, ভ্রমর কইয়ো গিয়া।।”
গুরু।। তাইলে বাবুমশাইয়েরা আজকের মতন বিদায় নিলাম, আবার ফেরত আসব আগামীকাল ঠিক এই সময়ে, এই অন্য পুরুষদের মানে সমাজের দুর্গা নিয়ে সকালবেলা... ভালো থাকবেন।
চলবে
সমাজের দুর্গা
রাজা অঙ্কুর
তৃতীয় পর্ব (জীবন ও সমাজের কথকথা)
#সমাজেরদুর্গা #সমাজের_দুর্গা (সহযোগিতায় প্রশান্ত এবং অন্য পুরুষের গল্প পেজের সবাই)
(নমস্কার সবাইকে এবং সবাইকে পুজোর আগাম শুভকামনা জানিয়ে শুরু করছি পুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ ধারাবাহিক ‘সমাজের দুর্গা। একটা অনুরোধ, দয়া করে ধর্মের জিগির তুলে কলুষিত করবেন না কারন আমি কাউকে অবমাননা করছি না এবং সবকিছুর উর্ধে উঠতে চাইছি বলেই সমাজের কথা বলছি। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানান কারন এই দুই বছর আপনাদের সাহায্যেই আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি এবং আগামিদিনেও আপনাদের হাত আমাদের দরকার)
চ্যালা। ও গুরু... চারটে গল্প তো চার রকম হইতেছে।
গুরু।।
চ্যালা।। তাইলে কি সব একই রকমের হবে নাকি রে বলদ? দ্যাখ, কোন গল্প হিসেবের বাইরে হইল সেটা একবার ক টু দেহি। হিজরেরা পুজো করবে সেই খবর এখন কানেকানে আর তাই সেখানে মিডিয়া হাজির। অন্যদিকে সুতীর্থর কথায় তিতলি এসেছে শ্বশুরবাড়ি মানে ওখানকার ক্লাব, ওইদিকে জমিদারবাড়িতে আয়োজন তুঙ্গে আর আত্রেয়ী আজ পঞ্চমীর দিন হাত লাগাচ্ছে বাড়ির আয়োজনে। সময় সকালবেলা। এখন টস করে আপনারা ডিসিড করুন, এই না মানে ডিসাইড করুন কোন গল্প আগে শুনবেন?
দর্শকাশন থেকে বিভিন্ন গলা ভেসে আসে, একটা চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা...
গুরু।। তাইলে বাবুমশাইয়েরা, পেত্থমে চলুন ওই কেলাবে, মানে কি হচ্ছে একবার গিয়ে দেখি...
সুতীর্থের পাড়ার ক্লাব...
“আসলে কি জানেন, আমি বড় হবার সাথে সাথে নিজের চাহিদা, অনুভূতি, কামনা মানে আপনারা যাকে সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশান বলেন... সেটা বুঝতে পারার সাথে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়, আর সেটা হলো আমরা এই সমাজে একঘরে। কিন্তু কেন বলতে পারেন? আমাদের দোষ কিংবা ভুল কোথায়? হ্যাঁ আমি সুতীর্থের পরিবার কিংবা আমার পরিবারের চোখে এমনকি আপনাদের চোখেও অপরাধী। আচ্ছা, কাগজে শুধুই পাত্র-পাত্রী বিজ্ঞাপন কেন? পাত্র-পাত্র কিংবা পাত্রী-পাত্রী কেন নয়? বিয়ে একটা বন্ধন ছাড়া আর কি? আর সেখানে একই লিঙ্গের দুটো মানুষ সুখী থাকলে বাকিদের আপত্তি কোথায়? আমি নাস্তিক কিন্তু আমি আমার ধর্মকে অস্বীকার করি না, আর একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমি শুধু এইটুকু জানি, আমার ধর্মে কোথাও বারন করা নেই, আর তাছাড়া সংবিধান তো দিচ্ছে আমাদের অধিকার...”
কাট টু
বৃহন্নলাদের পুজো...
“আসলে কি বলুন তো, আপনারা হলেন গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ, আর আপনারা এখানে এসেছে আমাদের খবর করতে, সাহায্য করতে না।”
“দেখুন, এইদিকেই একটা প্রতিবাদ মিছিল আসছে আর আজ বাদে কাল পুজো।।”
“এইখানে পণ্ডিতমশাই আছেন, আমরা ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু উনি মানা কিংবা বারণ আছে সেটা কোথাও দেখাতে পারেন নি। আপনারাই বলুন তাহলে আপত্তি কোথায়।”
“আপনারা কি সবার আপত্তি সত্ত্বেও...”
“দেখুন, পুজোর কাজে আমরা থাকলে তাতে যদি সবদিক থেকে এই গ্রামের মানুষগুলোর অসুবিধা হয়, আর্থিক-সামাজিকভাবে তাহলে আমরা থাকব না... আমাদের সারা বছর অবহেলার মধ্যে দিয়ে কাটে আর আমরা জানতাম আমরা এগিয়ে এলেই শিক্ষিত মানুষদের গা জ্বালা দিয়ে উঠবে। ওপরওয়ালা সব দেখছেন আর তিনি সঠিক বিচার করবেন। তুলসীতলায় রোজ সকালে সুর্য প্রণাম করে জল দিয়ে যদি কোন অপরাধ না করে থাকি তাহলে ভাগ্যদেবতা ঠিক বিহিত করবে।”
কাট টু তিতলির শ্বশুরবাড়ি
“তিতলি মা, আসলে কি বলো তো ভুল না তোমার, কিংবা তোমার বাড়ির অথবা আমাদের। আসলে কি বলো তো, গলদ আমাদের ধ্যনধারনা, আমাদের দেখার চোখে।”
“না বাবা মানে কাকু...”
“বাবা বললে কি মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে?”
“আসলে আমি সুতীর্থকে বলতে গিয়েও পারিনি, কেন পারিনি জানিনা... আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, সেইদিন কেন পালিয়েছিলাম সেটাও বলতে পারব না।”
“আসলে তোমার সেইদিন কিছু হারানোর ভয় ছিলো আর ছিলো নিজেকে নিজের মতন করে পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা...”
“জানো সুতীর্থ, আমরা দুইজন আমাদের পরিসর নিজেরা বানিয়েছি আর সেটা নিজেদের মতন করে। সেই ভিত হয়ত খুব মজবুত এখনও নয় কিন্তু পলকাও নয়। লাস্ট ৩ বছর নিজেকে সব কিছুর মধ্যেও অসহায় লাগত কারন আমাদের বেড়ে ওঠা এই সমাজের বুকে তাহলে কিসের ভয়? কেন দূরে পালিয়ে পালিয়ে থাকব?
----------এই মুহুর্তের সব থেকে বড় খবর----------
-----------শহরতলীর কয়েকটা গ্রাম মিলিয়ে আয়োজিত দুর্গাপুজোর দায়িত্বে থাকা বৃহন্নলাদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মানুষের মিছিল---------------
------------------ঘটনাস্থলে প্রচুর পুলিশ উপস্থিত--------------------
“আস্তে আস্তে ওঠো...”
“বারণ করেছিলাম বৌমা, এই শরীরে কি দরকার ছিলো?”
“ইচ্ছের কাছে শারীরিক অসুস্থতা হার মানবে মা... একটু চেয়ারে বসি...”
“এই অরিদা, এই নাও তোমার লিকার চা, বাবা আপনাকে এখানে দেবো চা...”
“হ্যাঁ সকাল থেকে কাজের মাঝে চা না খেলে চলে।”
কাট টু কুসুমপুর
“আরে গুড মর্নিং মিঃ টমসন।”
“শুভ সকাল, চারপাশের জাওয়া, ওয়েদার এক্সেলেন্ট...”
“হ্যাঁ, এই শরতকাল মানে অটমে চারপাশে কাশ ফুলের সাথে একটা হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া দেয়।”
“ইয়েস ইয়েস গরম কম...”
“আপনার ছেলে স্পোর্টসম্যান ছিল মানে এতো কমবয়সে?”
“অ্যাকচুয়ালি, হাঁটু মানে ইনজুরির কারণে ও শিফট করে এইদিকে... ডাক্তারি তো পড়ছিল তাই...”
“ভালো ভালো...”
“লুক ডিক, কিভাবে দুজনে কথা বলছে...”
“তুই ওদের ছাড় না, ওইদিকে পাটক্ষেতে চল না ড্যালি...”
“কোথায়?”
“আরে মুর্খ, এখানে কান্ট্রি সাইডে প্লেস হি প্লেস... অনেকদিন তোর ঠোঁট কামড়াই নি...”
“দুষ্টু পোলা...”
কাট টু সুতীর্থদের বাড়ি...
“কি ঠিক করলে? সেই পাঞ্জাব নাকি এই কলকাতাতে চলে আসবে...”
“ভাবছি পাঞ্জাবেই থেকে যাবো।”
“কেন?”
“সুতীর্থ, এখন কিছু মানুষ আড়ালে কথা বলবে, আর পাকাপাকি থাকলে কান পাতা দায় হবে...”
“মানে তোমার পাড়া কিংবা আত্মীয় সবাই তুমি চলে গেলে চুপ করে যাবে? সমস্যা হলো সমকামিতা এখনও সমাজের চোখে নোংরামি আর তাই কেচ্ছা, গসিপের সুযোগ ছাড়ে এই বাঙালী?”
“সেটাই...”
“আমি সাইন করে দিয়েছি, তুমিও করে দাও। ছুটির পড়ে কোর্ট খুললে কিছু ফর্মালিটি...”
“তুমি আবার বিয়ে করবে না কেন?”
“কেন জানি না, হয়ত মন সায় দিচ্ছে না কিংবা সাহস।”
“তিতু, তোমরা তো ভালো বন্ধু হতে পারো আমি তাহলে জ্যাম্বো ডাকব...”
তিনজনে হাসে...
আমার দুর্গা
আমার দুর্গা ত্রিশূল ধারক স্বর্গে আর মর্ত্যে
আমার দুর্গা
লাঞ্ছিত-লজ্জিত আজকের ধরিত্রীতে...
“সমস্যা কোথায়? আমরা কি আইন ভেঙেছি?”
“দেখুন, এই মিছিল চড়াও হলে... কি দরকার জেদ করে?”
“মানে, কিছু মানুষের ভিল জেদের কাছে হার মেনে চলে যাবো? একইভাবে রাতে তো শহর আর শহরতলীর সব হিজরেদের নিয়ে মিছিল করি তখন?”
“অকারণ কেন ঝামেলা করছেন?”
“বাহ!!! কি বিচার আপনার? দেখুন অফিসার, আমরা কেউ কোথাও যাবো না। আপনি চাইলে আমাদের গ্রেপ্তার করতে পারেন।”
“মাসী, সব ভেঙে দেবো আমরা...”
“যদি মা দুর্গার প্যান্ডেল, প্রতিমা ভাঙলে ধর্মে বাধা না থাকে তাহলে ভাঙো আর আমরাও সেই ভিডিও তুলি... এই চামেলি ফোন করেছিস?”
“হ্যাঁ মাসী, বেড়িয়ে গিয়েছে...”
আমার দুর্গা কখনও ঘরোয়া কখনও আগুণ বহ্নি,
আমার দুর্গা মেধা পাটেকর, তিস্তা শীতল বাধেরা,
আমার দুর্গা মোম হয়ে জ্বলে, অমাবস্যার আঁধারে,
আমার দুর্গা মনিপুর জুড়ে নগ্ন মিছিলে হাঁটে,
আমার দুর্গা কাস্তে হাতুড়ি, আউস ধানের মাঠে।
“সোনা কাকু।”
“আরে টিনটিন তুই!!!”
“আমরাও আছি ব্রাদার...”
“আরে আয় আয়, মা-বাবা দেখে যাও, তোমার সুপুত্তুর মিঠুন এসেছে...”
“বউদি একবার ঘরে চলো তো...”
“যাও যাও, আমার মামাতো দাদা-বউদি...”
“কিরে অমন করে কি দেখুস। দেখ ভাই, তোর বউদি আর আমি পিসেমশাই বলবার পড়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, জানলাম অনেক কিছু...”
“কি জানলি?”
“ভালোবাসাকে জাওতাপাত-ধর্ম-লিঙ্গের বিচারে বিভেদ করা ঠিক নয়। বিজ্ঞান অনুসারে প্রত্যেক পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরনের মতন স্ত্রী হরমোনও থাকে মানে শরীরে পুরুষ কিন্তু মননে নারী কোন ত্রুটি নয় বরং স্বাভাবিক।”
“মানে তুই এখন শিক্ষিত হোমোফোবিক!!!”
সবাই হেসে ওঠে...
“ডিক, ইউ আর ড্যাম অ্যা হার্ড ফাকার...”
“কি করব ড্যালি, তুমি এতো সেক্সি...”
গুরু।। এই ছোঁরা... এদিকে আয়... পাট ক্ষেতের সিন কার অনুমতি নিয়ে ঢোকালি তুই?
দ্বীপ।। আরে ওস্তাদ। ওই দেখো সেক্সের সিন থেকে কেমন সবার লালা ঝরছে মানে পাবলিক গোগ্রাসে গিলছে।
গুরু।। হ্যাঁ আর ওইদিকে সামজীদ খুঁজছে আমাকে?
ড্যালি।। কেন?
গুরু।। ক্যালাবে তাই...
বাইপাসের একটা শপিং মলে সুতীর্থ, তিতলি আর শান্তি...
“এইযে সতীন ম্যাডাম, সামান্য ড্রেস পছন্দ করতে দিন কাবার...”
“এই তীর্থ ওই সলমান-ঐস্বর্য রাই আর অজয় দেবগানের সিনেমার অজয় দেবগন মনে হচ্ছে না?”
“ধ্যাত...”
“সেখানেও স্বামী তার স্ত্রীয়ের ভালোবাসার কাছে নিয়ে গিয়েছিলো আর এখানে তোমার স্যাক্রিফাস, মানে দর্শকদের চোখে জল...”
“মানে চেটেপুটে চমচম?”
“এই নাও তোমার জন্য আমি পছন্দ করেছি...”
“আর এটা আমি দিলাম জ্যাম্বু...”
“বাপরে বাপ, কয়েকদিন বাদে ডিভোর্স হবে যে বউয়ের সাথে সে আমাকে পুজো উপলক্ষ্যে গিফট দিচ্ছে?”
“নিজেও তো দিচ্ছো তার বেলাতে?”
“এবার চলো, পেমেন্ট করে সোজা রেস্টুরেন্ট, পেটে ছুঁচো ডন মারছে...”
“বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশি দেখিনা তোমায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।
বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশি দেখিনা তোমায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।”
“একমিনিট অফিসার...”
“আপনি!!!”
“হ্যাঁ, আমি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী, এই আমার কার্ড আর এই কোর্ট অর্ডার...”
“এটা কি???”
“এই পুজো যাতে কোন ঝামেলা ছাড়া হয় তার আদেশ... ফলে এই অকারণ ভিড় করা পাবলিক সরিয়ে কাজ করুন।”
“আমাকে অর্ডারের কপি দিন, আমাকে এক্সট্রা ফোর্স আনতে হবে।”
“পুজো ঠিক ভাবে করানোটা এখন আপনার থানার দায় অফিসার। বেস্ট অফ লাক।”
“এ শহরে এসছো তুমি কবে কোন রাজ্য থেকে
এ শহরে এসছো তুমি কবে কোন রাজ্য থেকে।
তোমাদের দেশে বুঝি সব মানুষই বাঁশি শেখে!
আমাদের স্কুল-কলেজে শেখে লোকে লেখা-পড়া
আমাদের স্কুল-কলেজে শেখে লোকে লেখা-পড়া।
প্রাণে গান নাই মিছে তাই – রবিঠাকুর মুর্তি গড়া।”
কুসুমপুর গ্রামের জমিদারবাড়ি
“ওয়াট ইজ দিস। ভেরি টেস্টি...”
“গাছ পাঁঠা... এঁচোড়।”
“ওয়াট!!!”
“আরে মিনসে এটা ভেজিটেরিয়ান মিট, আরে ধ্যুর না জেনে খা না।”
“আচ্ছা ফেস্টিভেলের দিন ননভেজ হয়না।”
“অনেক বাড়িতে হলেও আমাদের পুজোতে কোনদিন হয়নি কারন আমাদের বংশ পশু বলি সমর্থন করে না। দেয়ার আর স্লটার হাউজ। আমাদের পার্বনের দিন নিরামিষ।”
“মানে যে যার মতন পালন করে?”
“কিছুটা।”
তোমার ঐ দেহাতী গান.........
তোমার ঐ দেহাতী গান দোলে যখন বাঁশির মুখে,
আমাদের নকল-ভন্ড কৃষ্টি চালায় করাত বুকে
বুকে আর গলায় আমার শহর কলকাতায়।
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।
বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশি দেখিনা তোমায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।”
প্রতীকদের বাড়ি
“বুড়োর কথা শোনো দিদি-জামাইবাবু।”
“অমৃত বরাবর এই রকম, মানে আমি বিয়ের পর থেকে দেখছি সেটাই।”
“আসলে জামাইবাবু, এই বিষয়টা আমার জানা ছিলো না তাই... ছেলে কি সব ঘেঁটে বলব ঠিক আছে, ব্যাস দিলাম রওনা। তিরিশ বছর আসছি, তাই আর কি... এসে শুনলাম এবার নবমীতে স্পেশাল আয়োজন।”
“একদম মামা, আপাতত তুমি জিরা রাইস আর পনীরে মনোনিবেশ করো, শেষ পাতে ভীমনাগের রসমালাই আছে।”
“খিদে বাড়িয়ে দিলি ভাগ্নে।”
“এই তোমরা কি খাবার পড়ে তাস নিয়ে বসবে নাকি?”
“সে আর বলতে!!! গিন্নি মামা-ভাগ্নে ভার্সেস বিপক্ষ। ফুঁ...”
“ঠেলা ভ্যান চালাও তুমি...
ঠেলা ভ্যান চালাও তুমি কিংবা ভাড়া গাড়ির ক্লিনার
ক’বছরে একবার যাও তোমার দেশের নদীর কিনার।
ফাঁক পেলে বাঁশি বাজাও...
ফাঁক পেলে বাঁশি বাজাও ফেলে আসা ঘরের ডাকে
হেসে গিয়া এমন সুরে হয়ত ডাকো কোলকাতাকে।
ফিরে এসে উদাম খাটো...
ফিরে এসে উদাম খাটো গায় গতরে ব্যস্ত হাতে
মজুরিতে ভাগ বসাচ্ছে কারা তোমার কোলকাতাতে।
তাদেরই গাইয়ে আমি সাজানো জলসায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।”
“জানো ঝিলিক... তোমাকে আমি আমার কাছে সারা জীবন রাখতে চাই।”
“হ্যাঁ কিন্তু আমার ভয় করে কারণ আমি তো তোমাকে সন্তান দিতে পারব না।”
“ঝিলিক, কতো মানুষের শারীরিক কারণে সন্তান হয় না, কতো মানুষ দত্তক নেয়। অবশ্য তোমার আমাকে পছন্দ না হলে আলাদা কথা।”
“না, তারক। তোমাদের বাড়ি অনেক ভালো, শিক্ষিত, চাকরি করে...”
“তুমিও প্রাইভেটে পড়বে আর চাইলে চাকরি করবে ঝিলিক। এখন তো আইন হয়েছে। আমাকে ফিরিয়ে দিও না।”
“হিজরেকে সংসারের স্বপ্ন দেখিও না তারক।”
“আমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিচ্ছি। আমার তোমার শরীর নয় বরং তোমাকে চাই। কারণ সংসার চলে একজন নারীর গুণে।”
“বাঁশুরিয়া...
বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশি দেখিনা তোমায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।”
গুরু।। তাইলে কি বুঝলেন বাবুরা? বিদেশীরা এঁচোড় খাচ্ছে তৃপ্তি করে আবার ওইদিকে কোর্টের আদেশে পুজো হবে। এদিকে তিতলি আর শান্তি হাত লাগিয়েছে ক্লাবের পুজোতে আর প্রতীকের বাড়িতে বসেছে তাসের আড্ডা। দলের সবার খুব খিদে পেয়েছে তাই দুপুরে পেট ভরে খেয়ে আবার ফেরত আসছি।”
চলবে
সমাজের দুর্গা
রাজা অঙ্কুর
চতুর্থ পর্ব (পঞ্চমী তিথি)
#সমাজেরদুর্গা #সমাজের_দুর্গা (সহযোগিতায় প্রশান্ত এবং অন্য পুরুষের গল্প পেজের সবাই)
(নমস্কার সবাইকে এবং সবাইকে পুজোর আগাম শুভকামনা জানিয়ে শুরু করছি পুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ ধারাবাহিক ‘সমাজের দুর্গা। একটা অনুরোধ, দয়া করে ধর্মের জিগির তুলে কলুষিত করবেন না কারন আমি কাউকে অবমাননা করছি না এবং সবকিছুর উর্ধে উঠতে চাইছি বলেই সমাজের কথা বলছি। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানান কারন এই দুই বছর আপনাদের সাহায্যেই আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি এবং আগামিদিনেও আপনাদের হাত আমাদের দরকার)
গুরু।। শুভ পঞ্চমীর সন্ধ্যে সবাইকে। কাল দেবীর বোধন। এদিকে প্রতীকদের বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড, চলুন একবার আমার সাথে...
“তুই কি ভেবেছিলি দাদা, সম্পরক শেষ তাই তোরা কেউ আসিস না।”
“জানো বউদি, সেদিন দাদার ফোন পাওয়া থেকে সবার মন খারাপ, উনি তো ঠাকুরপো ওইদিকে ননদকে ফোন করল। সবাই এসে পড়ল বলে।”
“না আসল...”
“দাঁড়া, দাদা তুই কি ভেবেছিলি? তুই যখন অরিত্রকে নিজের বাড়ির বউ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিস সেখানে আমরা কি আপত্তি করব নাকি অন্য কিছু? না না আমরা কি অশিক্ষিত নাকি?
“ভাই শোন...”
“আগে তুই দিদির কথা শোন...”
“কেলো করেছে!!!”
“দাদা এবার বাবার বিপদ বাড়ল...”
“বুড়ো বয়সে কি বোকা খাবো নাকি?”
“ভুল করলে ৪ বছরের বড় দিদি হিসেবে কান মুলে দেবো। শুনলাম আমার ভাগের আলপনা নাকি বৌমা দিয়েছে... দেখি দেখি কেমন এঁকেছে...”
“ও দিদি, এখানে বসো, এতোটা রাস্তা এসেছো, এসেই চিৎকার করো না।”
“শোন মায়া, আমি দজ্জাল ননদ। ছেড়ে কথা কইব নি বাপু। আর হ্যাঁ, পিতু, পাঁঠা যেন কচি হয়। বউমার হাটের রান্না বলে কথা।”
“তুমি আমিষ খাবে পিসি!!!”
“ভাবছি, তোর লক্ষ্মীমন্ত বউয়ের হাতের মাংসভাত খেয়ে বিদ্যাসাগর মশাইয়ের বিধান মেনে একটা বিয়ে করব...”
“মানে!!!”
“এই বড়দা, পিসির মাথা খারাপ হয়েছে...”
“বাদ দে, এটা এখন নতুন চলছে... আস্তে আস্তে ঝুলি থেকে কতো কিছু বেরোবে।”
“এই, বউকে সাজিয়ে বসাও দেখি, সবাই মিলে আশীর্বাদ সেরে নিই, কাল থেকে তো করা যাবে না। আর এই হতচ্ছারার দল, ভালো ঢাকি নিয়ে আয়... বড়দার থেকে টাকা যা লাগে নিয়ে নিবি...”
চ্যালা।। তাইলে তুমি ডরাইছিলে ক্যান?
গুরু।। আরে ঘর পোড়া গরু বলেই সিঁদুরে মেঘ দেখলে… বাদ দে, বাবুমশাইয়েরা এখন মুড়ি-তেলেভাজার সাথে গরমাগরম চা নিয়ে দেখতে বসিছে… তাইলে চলুন একবার দিক্ষে আসি কি করে তিতলি অ্যান্ড কোম্পানি…
“ঢাকের তালে কোমর দোলে
খুশীতে নাচে মন
আজ বাজা কাঁসর জমা আসর
থাকবে মা আর কতক্ষন।”
“ও দিদি, এদিকের আলপনা ঠিক আছে?”
“আরে আর একটু বাড়িয়ে দে, ওইদিকটা ন্যাড়া লাগছে।”
“ফুলের অর্ডারের টাকা দিয়ে এসেছি।”
“আর রিহার্সাল কেমন চলছে?”
“ফাটিয়ে চলছে।”
“হাতে আর সময় নেই কারণ রাত পোহালেই দেবীর বোধন।”
একইসাথে সুতীর্থদের বাড়িতে
“আর কি বেয়াই-বেয়ান ডাকতে পারব?”
“কেন নিজের মেয়েকে অপরাধী করছেন? দেখুন, পরিচয়ের খাতিরে চারহাত এক করা হয়েছিলো। এখন তারা যখন আলাদা আলাদা পথ চলবে এক-অন্যের খুশীতে তখন আমরা অকারণ নিজেদের সম্পর্ক খারাপ করব?”
“হ্যাঁ গো, শপিং করে এলো, রেস্টুরেন্টে খেয়ে এলো।”
“তাহলে আসুন বোতল খুলী।”
“মানে ওগো বধু সুন্দরীর এই আমাদের দুইজনের বউ মানে লোলা আর লুলুর সামনে এই তো জীবন?”
“একদম।”
ক্লাবের মডপে
“দেখি সরো সরো, পুজোর জোগাড়পাতির কি হাল দেখি…”
“আপনারা!!!”
“আমরা এই পাড়ার জাঁদরেল কাকিমা-জ্যেঠিমারা, তুমি স্লগ ওভারে বাজিমাত করবে আর আমরা সামাজিকতার ধুয়ো তুলে ব্যাক বেঞ্চে বসে থাকব সেটা হচ্ছে না, তাই আমরাও সামিল… পুজোর আয়োজনের সব দায়িত্ব এবারো আমাদের…”
“হ্যাঁ, আসলে যুগ-যুগ ধরে চলে আসা প্রথা আমরা সব ঠিক জানি না…”
“দেখ, দেবী মাকে তুই তোর ক্ষমতায় যা দিবি, তিনি সেটাই গ্রহণ করবেন আর এইসব নিয়ম তো আমাদের নিজেদের বানানো ফলে সব চলতা হ্যায়…”
“না তাই বলে কি ১০৮ পদ্ম না দিলে হয়?”
“কোন একটা বছর যদি পদ্ম কম ফোটে তাহলে কি পুজো হবে না নাকি?”
“মানে!!!”
“মানে কারখানার শ্রমিকদের মতন ওরাও যদি হরতাল ডাকে?”
“সব নিয়ে ইয়ার্কি…”
গুরু। তাহলে এই দুটো জায়গাতে সব ঠিক মতন চলছে মানে প্রতীকের মামা-মামী, কাকারা-পিসি হাজির দলবল সমেত আবার তিতলির সাথে হাত মিলিয়েছে পাড়ার মা-কাকীমা থেকে মেয়ে-বউরা, আর চলছে জমিয়ে ফাংশানের তালিম... তাহলে এবার যাওয়া যাক বৃহন্নলাদের পুজোতে কারণ সেখানে একদিকে চলছে পুজোর আয়োজন আর অন্যপাশে খেলা জমছে ঝিলিক আর তারকের... আর একটা চমক আছে সেটা ভি দিখাবে কিন্তু তার আগে বাবুমশাইয়েরা, আমরা গরিব মানুষ তাই মাচার সামনে রাখা গামছাতে নিজের ইচ্ছে মতন ট্যাকা দিয়ে যাবেন যাতে বাড়ি ফিরে মুলুকে বাচ্চার মুখে ভাত দিতে পারি...
“মায়ের রুপে মন ভরে যায়
প্রনাম জানা ঐ রাঙা পায়
ওরে ধুনচি দু’হাতে নাচরে এখন
ঢাকের তালে কোমর দোলে
খুশিতে নাচে মন
আজ বাজা কাঁসর জমা আসর
থাকবে মা আর কতক্ষন
বল দূর্গা মায় কি - জয়..”
“এই তুমি না ভীষণ দুষ্টু...”
“সেকি আমি আবার কি করলাম ঝিলিক?”
“দেখো, সবাই জিজ্ঞেস করলে কি বলবো?”
“বলবে ঠোঁটে পুরুষ কাঠপিঁপড়ে কেটেছে।”
“ইশ!!!”
তারক আরো জোরে জড়িয়ে ধরে তার প্রাণের ঝিলিককে, অন্যদিকে পুজোর মণ্ডপের বাইরে একটা গ্রামের দাওয়াতে দোয়েল মাসী সাথে অনু মাসী
“এই দোয়েল, খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছে কি লাভ?”
“অনুদি, ওকে জিজ্ঞেস করো এতো বছর আমাকে কেন ধম্মের নামে ছেড়ে দিয়েছিলো?”
“আমার কথাটা বিশ্বাস করো দোলন...”
“কি শুনব? বাড়ি মানেনি, আত্মীয়রা...”
“না দোলন না, আমার মা সেইদিন আচমকা মারা যান, তারপরে কাকারা বাড়ি নিয়ে ঝামেলা শুরু করে, আমি খড়কুটোর মতন ভেসে গিয়েছিলাম। নেহাত পড়াশুনাতে ভালো ছিলাম তাই আজ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কাকাদের থেকে সব কিছু কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিয়েছি।”
“আমার কি হাল হয়েছিলো সে সময়ে জানো?”
“আমি তোমাকে খুঁজেছিলাম কিন্তু তোমাকে পাইনি, চারপাশে চেনা পরিচিত সব মাসীদের দুয়ারে তোমার মুখ দেখব বলে ছুটে গিয়েছি কিন্তু নাহ... কাগজে ছবি দেখে প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও ঠিক করি কোর্ট থেকে আদেশ এনে তোমাকে বউ করে নিয়ে যাবো।”
“দ্যাখ দোয়েল, দেখে শেষ। এই মানুষটা শুধুমাত্র তোকে পাবে বলে এতগুলো বছর খুঁজেছে, বিয়ে না করে অপেক্ষাতে ছিলো আর তুই... ওরে এটা দেবী মায়ের আশীর্বাদ দে, আজ তোর আঙিনা খুশীতে ভরিতে দিয়েছে। ওইদিকে দেখ কাছের কিছু অঙ্গনওয়ারিতে কেউ কেউ কাজ পাবে, পড়তে পারবে...”
“একটা সুখবর আছে আর সেটা পুজোর সময় প্রকাশ্য...”
আইনজীবী মিঃ রক্ষিত একটা কাগজ এগিয়ে দেয় দোয়েল মাসীর দিকে আর অন্যদিকে গাছের আড়ালে ঝিলিক ও তারক...
“কেমন লাগছে পারিখের বুকে আটকে থাকতে? ওরে পাগলি, সারা জীবন এইভাবে জাপটে থাকব...”
“খুব খুব অসভ্য তুমি? কাজ কাম নেই, সারাদিনআমার পেছনে পেছনে...”
“ওরে সিনেমাতে দেখিস না, প্রথমদিকে নায়ক-নায়িকা কেমন জাপটাজাপটি করে...”
“হ্যাঁ কিন্তু গুরুর কড়া আদেশ, চুম্মাচাটি চলবে না...”
“আরে ওই হাঁটুতে অপারেশান হওয়া বুড়োকে কে ভয় পায়, একটা এক মিনিটের কিস সিন চলবে কিরে দৌড়বে...”
ক্রমশ দূরত্ব কমে আসে দুইজনের মধ্যে... কাগজ নিয়ে চমকে ওঠে দোয়েল মাসী...
“এটা!!!”
“বিয়ে করবে আমাকে দোলন?”
মিঃ রক্ষিত হাঁটু মুড়ে হাতে এনগেজমেন্ট রিং এগিয়ে দেয়...
“আরে মাসীর পারিখ একঘর রে...”
গুরু।। খেলা বেশ জমে উঠেছে। পুরনো প্রেমিক ফিরে আসাটা ছেলো সিকেন্ড চমক, পেত্থমটা তো বিদেশী হিরো...
চ্যালা।। এই গুরু, আর কি কি চমক আছে বল না।
গুরু।। শালা কুত্তা, আগে থিক্কা কইয়া দিলে মজা আসবেক লাই। তাই বাবুমশাইয়েরা, একটু অপেক্ষা করুন, আজ চার নম্বর এপেসোড মানে বাকি আর তিনটে... উরি বাবা, কতো কিছু দেখানোর আছে, চমক আছে... এই চল চল পুজোর দিনের গল্প বেঁধে ফেলি আর এদিকে বাবুরা বায়োস্কোপে দেখুক সবার কাহানী...
চ্যালা।। মানে এবার পর পর চারটে জায়গাতে গল্প দিখাবে?
গুরু।। আগে গান তারপরে চারটে গল্প...
আসবে আবার মা বছর পরে
দু’চোখ তবু হায় জলে ভরে
আসবে মা লক্ষ্মী ক’দিন পরে
মন যে তবু হায় কেমন করে
আমি জানাবো মাকে জানাবো
আজ আমার এ মনের আশা
যেন এ মনে, এই জীবনে
থাকে এমনই ভালোবাসা
মায়ের ভাসান হবে রে আজ
চলছে বরন আরতি নাচ
ঢাই কুরা কুর, ঢ্যাং কুরা কুর
তোলরে মাতন
ঢাকের তালে কোমর দোলে
খুশিতে নাচে মন
আজ বাজা কাঁসর জমা আসর
থাকবে মা আর কতক্ষন”
রেস্টুরেন্টে তিতলিরা
“একটা কথা ভাবছি দ্বিজা...”
“কি কথা?”
“ভাবছি, সরকারী চাকরি তাহলে আমিও দিল্লিতে বা তোমরা কলকাতাতে চলে এসো। একসাথে থাকা যাবে, আড্ডা দেওয়া, ইচ্ছে করলে ঘোরা...”
“হ্যাঁ, পাশে বসে রেস্টুরেন্টে খাওয়া, মানে এই বিহারী দেহাতিকে সাইড রোলে ঠেলে দেওয়া?”
“আরে না শান্তি না, এক ফুল দো মালী...”
“সেটা করাই যায়। আসলে আমার ভুলে বাবাদের এতদিনের বন্ধুত্ব ভাঙতে বসেছিলো...”
“তাই আজ খুশীতে দুই বুড়ো মাতাল হবে...”
কাট টু প্রতীকদের বাড়ির ছাদে...
“মানে তোমরা দুইজন ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিলে?”
“আরে তোকে বলেছিলাম ভুলে গিয়েছিস...”
“আরে হ্যাঁ, গাছ সাফ করে পেয়ারা পাড়া কিংবা আচারের শিশি শেষ করে আবার যথাস্থানে রেখে দেওয়া...”
“স্কুল থেকে ফেরার পথে অন্যের বাড়ির কলিংবেল বাজিয়ে পালানো...”
“আমাদের কেউ কেউ বলত রাম-লক্ষ্মণের জুটি...”
“আবার কেউ বলত টম অ্যান্ড জেরি।”
কাট টু জমিদার বাড়ি
“ড্যালি কাল দেবীকে সাজানো হবে...”
“কিন্তু একটা কথা ডিক...”
“কি?”
“আজ সারা বিশ্বে টেররিজম কিংবা অ্যান্টি ওয়ার ক্যাম্পেন চলছে সেখানে...”
“দেখো একদিকে দেবী এই অস্ত্র ধারণ করেছিলেন অশুভ শক্তির নাশ মানে ফাইট এগেন্সট এভিল আর অন্যদিকে আজ অনেক মণ্ডপে দেবীর হাতে পদ্ম দেওয়া হয় কারণ মানুষ আজ শান্তি চায় চারপাশে...”
কাট টু বৃহন্নলাদের পুজো
“অনুদিদি, আমার গাড়িতে সবার পুজোর জামাকাপড় আছে... এই গাড়ি মানে ম্যাটাডর...”
“পাগল নাকি!!!”
“এটা সামান্য দোলন। বেশকিছু এন.জি.ও কাল সকালে এসে কাজে হাত লাগাবে আর পুজোর খাওয়ার খরচ তাদের মানে তিনদিন নয়, এবার পাট পেড়ে ভুরিভোজ পাঁচ দিন...”
“স্বপ্ন দেখছি না তো দোয়েল...”
“অনুদি আর আছে... মানে আপাতত মোটামুটি পড়াশুনা জানে এমন যারা আছে তাদের সবাইকে হাতের কাজ শিখিয়ে স্বনির্ভর করা, আর বাকিদের স্কুলে ভর্তি করা...”
“দোয়েল জানি না, দেবী আজ আমাদের দিকে সব আনন্দের ডালি উপুড় ক্রে দিয়েছে কেন?”
“কারণ, সমাজের পাপ, ভুল মিটিয়ে সবাইকে আপন করার জন্যেই তো মায়ের আগমন, তাই না?”
“আমি জানিনা, কেন জানিনা
আজ নিজেকে নতুন লাগে
মন সেজেছে, রং লেগেছে
এত খুশী দেখেনি আগে
আমি পেয়েছি, ফিরে পেয়েছি
কত দিনের পরে এই হাসি
তাই মনে হয়, শুধু মনে হয়
যেন এভাবে সুখে ভাসি”
“আসলে ড্যালি, সিদ্ধিদাতা গণেশ সব থেকে বেশী বুদ্ধিমান...”
“ইয়েস ইয়েস আই নো দ্য স্টোরি...”
“হ্যাঁ আজকাল ইউ টিউবে তো সব আছে... যাকগে সেই কারণেই সব পুজোর আগে মানে শুরু হয় গণেশ বন্দনা দিয়ে...”
“আচ্ছা ডিক, এইযে আইডলের হাতে আলাদা আলাদা ওয়েপন... এটা কেন?”
“কারণ সব দেবতারা তাদের শক্তি দেবীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর প্রত্যেকটা অস্ত্রের আলাদা আলাদা মিনিং আছে...”
“আই মিন কোন হ্যান্ডে কোন অস্ত্র?”
“ইয়েস মাই লাভ...”
“এইযে অনেকক্ষণ ধরে গলার আওয়াজ আর সাথে চুম্মার উম্মাহ শুনতে পাচ্ছি...”
“আয় তাতান আয়... মানে আড়াল থেকে প্রেমের সিনে কাবাব মে হাড্ডি তুই...”
“হ্যাঁ রে ভাই... কি করব সমপ্রেমি হলে তোকে নিয়ে পালাতাম কিন্তু এখন তো তুই অন্য কারোর...”
“আর ইউ অ্যা গে?”
“একদম নয় কিন্তু আমার মনের সমর্থন আছে সবার প্রতি কারণ ইউ পিউপিল নট ডুইং এনিথিং রং ড্যালি...”
কাট টু
প্রতীকদের বাড়ি
“দেখুন, আপনাদের আওব যুক্তি শুনলাম কিন্তু একটাই প্রশ্নের উত্তর দিলেন না কিংবা মিথ্যে বলতে হবে জেনে হয়ত এড়িয়ে গেলেন।”
“শুনুন, এই পুজো অনাসৃষ্টি, এটা মানা যায় না।”
“কিছু মুসলিম পরিবার জড়িত বলে নাকি আমার পুত্রবধূর কারণে?”
“সব মিলিয়ে এটা ধর্মে সইবে না।”
“মানে আপনাদের মতে শাস্ত্র বা কোথাও এটা লেখা আছে যে একজন নারী...”
“যৌনাঙ্গ বদলালে সে নারী হয় না...”
“এক মিনিট, আপনি একজন আইনের লোক হয়ে এটা বললেন কিভাবে? মানে মানহানির মামলা করলে যুক্তি দিতে পারবেন তো?”
“শোন ছোকরা, তোমার কাছে আইন শিখব না আমি...”
“এইখানে বসে আপনি উকিলবাবু কিংবা আপনি কিংবা আপনারা সবাই এতক্ষণ যা যা বললেন সব ফেসবুক লাইভে ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে, ফলে আপনারা চাইলে পুজো ভণ্ডুল সহ যা ইচ্ছে করতে পারেন নিজ দায়িত্ব...”
“ভয় দেখাচ্ছো...”
“এই উকিলবাবু হ্যাঁ, ইতিমধ্যে এই লাইভ প্রায় ১০০০-র বেশী শেয়ার হয়েছে বহু গ্রুপে আর টাইমলাইনে...”
“আপনি যা যা বলেছেন সব কোর্টে উত্তর দেবেন নাকি?”
“দাঁড়া প্রতীক। শুনুন, আমার ঠাকুরদা যখন এইখানে পুজো শুরু করে তখন ৪-৫ ঘর হিন্দু আর খান বিশ মুসলিম পরিবার ছিলো আর সবাই সেইদিন থেকেই পুজোর সব আয়োজন করে। এতো বছর এই নিয়ে কারোর মাথা ব্যথা ছিল না এমনকি আপনারাও কারণ আমি ১৯৪৭ সালে শুরু হওয়া পুজোর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফ তুলে পোস্ট করেছেন...”
“মানে নাম কামাবেন আবার বদনাম করবেন... এটা কেমন বলুন...”
“আপনি চাইলে বাড়ির বাইরে আবর্জনা ফেলতে পারেন, জলের লাইন কিংবা ইলেক্ট্রিক লাইনেও সমস্যা করতে পারেন কিন্তু সব করবেন নিজ দায়িত্ব...”
“বাবা, মানে হলো এখন এই পুজো ভালোয় ভালোয় উতরে দেওয়া উকিলবাবুর দায়িত্ব।”
“আমি এর বদলা নেবো...”
“অবশ্যই...আসবেন ভোগ খেয়ে যাবেন প্রত্যেক বছরের মতন সস্ত্রীক... শুভ রাত্রি।”
“বরন শেষে সিঁদুর খেলা
থাকবে মনে বিদায় বেলা
আজ সিঁদুরে সোহাগে রাঙা জীবন
ঢাকের তালে কোমর দোলে
খুশিতে নাচে মন
আজ বাজা কাঁসর জমা আসর
থাকবে মা আর কতক্ষন
বল দূর্গা মায় কি - জয়..”
গুরু।। বাবুমশাইয়েরা আজ এই পর্যন্ত রাত পোহালেই দেবীর বোধন। (আচমকা পকেটের মোবাইল বেজে ওঠে আর গুরু চমকে যায়)... এই কে কে এতো রাতে? কি... বলছেন কি!!! সর্বনাশ!!! এখন!!!
গুরু দৌড়ে বেড়িয়ে যায়...
চ্যালা।। আরে ওই ওস্তাদ, কই দৌড় লাগালে... কি হয়েছে? কোন দূর্ঘটনা... বলেন তো বাবুরা, এখন ওস্তাদ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা...
চলবে
সমাজের দুর্গা
রাজা অঙ্কুর
পঞ্চম পর্ব (দেবীর বোধন থেকে মহাসপ্তমী)
#সমাজেরদুর্গা #সমাজের_দুর্গা (সহযোগিতায় প্রশান্ত এবং অন্য পুরুষের গল্প পেজের সবাই)
(নমস্কার সবাইকে এবং সবাইকে পুজোর আগাম শুভকামনা জানিয়ে শুরু করছি পুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ ধারাবাহিক ‘সমাজের দুর্গা। একটা অনুরোধ, দয়া করে ধর্মের জিগির তুলে কলুষিত করবেন না কারন আমি কাউকে অবমাননা করছি না এবং সবকিছুর উর্ধে উঠতে চাইছি বলেই সমাজের কথা বলছি। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানান কারন এই দুই বছর আপনাদের সাহায্যেই আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি এবং আগামিদিনেও আপনাদের হাত আমাদের দরকার)
“ওয়াট আর ইউ সেইং ডিক? সেম আইডল কিন্তু আলাদা আলাদা নাম?”
“ইয়েস বেবি। কন্যাকুমারীতে তিনি ‘অম্বিকা’, কোথাও ‘জয় দুর্গা’ আবার কোথাও ‘হিংলাজ’।
চ্যালা।। আচ্ছা ফ্যাসাদে পড়েছি বুঝলেন বাবুরা... না মানে আসলে সব কিছুই ওস্তাদ করে আর কাল রাতে ওই মুঠো ফোন বাজল আর সে ঘাটের মড়া কাউকে কিছু না কয়ে বেপাত্তা। জানি না কিভাবে পালা চালিয়ে যাবো... যাকগে সকাল সকাল চলছে দেবী আচার মানে জমিদার বাড়িতে একজন প্রেমিক অন্যজনকে বোঝাচ্ছে অন্যদিকে বাড়ির পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত অরিত্র সব সবাই। বাড়ির বাকি সব আত্মীয় ভোর রাত থেকে হাজির হচ্ছে সবাই এক-এক করে আর সবাই বাড়ির নতুন বউ দেখে আপ্লুত...
“জানি আমি, মাম্মা বলেছে দেবাদিদেব মহাদেব ত্রিশূল দিয়েছে দুর্গাকে...”
“তাহলে এটা কি জানো তোমরা চিল্লার পার্টি...”
“কি???”
সব বাচ্চা একসাথে চিৎকার করে ওঠে আর দূরে চেয়ারে বসে বাড়ির বড়রা
“জানিস দাদা, তোর পুত্রবধূকে দেখে হিংসে হয়।”
“একদম ঠিক বলেছে আমার ছোট শালা। রূপে লক্ষ্মী আর গুণে স্বরস্বতী।’
“সত্যি, কি সুন্দর কাজ করার সাথে বাচ্চাগুলোকে এক জায়গাতে চুপটি করে বসিয়ে রেখেছে।”
“নাহলে দক্ষযজ্ঞ বেঁধে যেত।”
জমিদার বাড়িতে দ্বীপ ড্যালিকে বোঝাচ্ছে আর মন দিয়ে শুনছে তার বাবা-মা।
“যমরাজ দিলেন কালদন্ড কিংবা গদা... ইয়েস ইয়েস দ্যাট ওয়ান।”
“আই নো দ্যট কিং অফ গড ইন্দ্র দিয়েছিলেন দিস ওয়ান, ওয়াট ইটস কল...”
“ব্রক্ষাস্ত্র...”
প্রতীকদের বাড়িতে...
“এই এই ওই হাতে ব্রক্ষ্মার দেওয়া পদ্ম।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ এই হাতে বরুনদেবের দেওয়া শঙ্খ...”
জমিদার বাড়িতে
“ইন্টারেস্টিং থিং... আফটার অল দেবতা?”
“হ্যাঁ, অসুরের তেজ আই মিন পাওয়ারকে কমানোর জন্য ঐরাবত দেয় এই ঘন্টা...”
“এভরি ওয়েপন... মানে সবার একটা ভেতরের মানে আছে?”
“একদম... অফ অ্যাবাউট সায়েন্স। মানে সেই সময়েও মানুষ কতো গভীরে ভাবত?”
প্রতীকদের বাড়ি
“বুঝলি দাদা, বউদি না চাইলেও এই সময়ে মাধবীলতা।”
“কিন্তু প্রতীক তাকে তার মতন করে গ্রহণ করেছে...”
“এইযে সব ঠাকুরপোরা এখানে তোমরা গজল্লা করছো আর ওইদিকে বাবা-কাকারা। পুজোর কাজ শুধুই মেয়েরা করবে নাকি?”
“আসলে বৌমা না মানে আত্রেয়ী, আসলে এটাই এই বাড়ির...”
“আমি বাবাকে বলে দিয়েছি, ওইগুলো ইতিহাস বলে খাতায় লিখে রাখতে। এবারের পুজো থেকে সবাইকে হাতে হাতে কাজ করতে হবে।”
“এইবার নতুন বউয়ের হাতে সব ঠাকুরপো আর ভাসুরের জব্দ। চলো গাত্রত্থান করো হুজুরের দল।”
“ওইদিকে অফিসে খেকুরে বস আর এইদিকে...”
“বলে ফেল দাদা, পেটে চেপে রাখিস না...”
“না না লক্ষ্মীমন্ত বউ... দায়িত্ব ভাগ করে দাও...”
সুতীর্থদের ক্লাবে...
“দ্বিজা, চুলের কালার কিন্তু ভালো লাগছে না আমার সতীনের...”
“দুপুরের পর থেকে সাজবে বাঙালী বউ হিসেবে। আলাদা আলাদা শাড়ি।”
“তাহলে কপালে বড় টিপ, চোখে কাজল...”
“এই তীর্থ নজর দিচ্ছো আমার ডার্লিংকে?”
“খোঁপাতে ফুলের মালা, দুইপাশে কানের সাইডে চুল ঝুলছে।”
“আমাকে এই রকম দেখতে ইচ্ছে করেছিলো?”
“হয়ত হ্যাঁ... জানি না দ্বিজা...”
“দূর্গে দূর্গে দূর্গতিনাশিনী
মহিষাসুরমর্দিনী জয় মা দূর্গে,
দেবী দূর্গে জগত জননী
তুমি মা মঙ্গলকারিনী
দেবী দূর্গে জগত জননী
তুমি মা মঙ্গলকারিনী
দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী
মহিষাসুর মর্দিনী জয় মা দুর্গে।”
জমিদার বাড়ি
“কাম ড্যালি, এবার মায়ের মুখ খোলা হবে।”
“রিচুয়াল?”
“একদম। আমি তোমাকে দুর্গা ষষ্টীর মানেও বলে দেবো...”
“ডিক, কি সুন্দর লাগছে দুর্গা মাকে”
“অ্যামেজিং বিউটি!!! একইসাথে পাওয়ার, লাভ অ্যান্ড কেয়ারিং...”
“একদম আঙ্কেল। হ্যাঁ আন্টি, দেবী হলেন বিশ্ব জননী আর তাই সব মায়েরা আজ সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন।”
কাট টু প্রতীকদের বাড়ি
“আমাদের ক্ষমা করবি না অরি?”
“আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেই ছুটে এসেছি আজ দেবীর বোধনে তোর মঙ্গল কামনায় পুজো দেবো বলে।”
“আসুন বেয়াই মশাই, বেয়ান আসুন আসুন। উপোষ করে এতো দূর এসেছেন। এই সীমা ওনাদের একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দাও।”
“না না, আমরাও পুজোর কাজে আপনাদের সাথে হাত লাগাতে চাই।”
“বাবা!!!”
“দেবীকে পুজো দিয়ে নাতনীর মুখ দেখব মা।”
“দশভূজা দশ-শস্ত্র-শালিনী
মধুকৈটভ সংহারিনী,
অদ্বিতীয়া তুমি অনন্যা
ভবানী মা দুঃখহারিনী।
দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী,
মহিষাসুর মর্দিনী জয় মা দুর্গে।”
“সমস্যা নেই দোলন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সব রেডি। হোক না সামিয়ানার নীচে দেবী বন্দনা। কল্পারম্ভ শুরু হয়েছে।”
“দোয়েল। দেবীর কাছে মার্জনা চেয়ে একটু না হয় দেরী করে অর্চনা শুরু করলাম।”
“আমি বাইরে যাচ্ছি। তুমি উপোষ করে আছো তার মধ্যে সারারাত ধকল গিয়েছে, একটু হেলান দিয়ে বিশ্রাম নাও অনুরোধ করছি, এই সরবত মুখে দাও...”
“পুজো শুরু হয়েছে?”
“হ্যাঁ রে দোয়েল।”
বাইরে আসতেই সাংবাদিকরা ঘিরে ধরে...
“পুজোর আগের রাতে এই হামলা?”
“কারা জড়িত বলে সন্দেহ?”
“পুলিশ কি ব্যবস্থা নিয়েছে?”
“এক মিনিট। দেখুন, ইতিমধ্যেই কিছু মানুষের ওপর সন্দেহ আছে কারণ তারাই এই পুজোতে বাধা দেবার চেষ্টা করেছিলো। এফ.আই.আর করা হয়েছে আর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আইনের ওপর আমাদের পুর্ণ আস্থা আছে। পুজো শুরু হয়েছে ফলে এখন আর এই নিয়ে কথা বলে লাভ নেই...”
চ্যালা।। রাতের অন্ধকারে হামলা...
গুরু।। হামলা মানে রীতিমত ঝামেলা। আরে বাবা পাপ কখনও চাপা থাকে না। সবার সাহায্যে রক্ষা পেয়েছে।
চ্যালা।। কিন্তু এইসব আয়োজন?
গুরু।। উকিলবাবুর তৎপরতা আর কলকাতার সব বড় পুজো কমিটি সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় মানে টাকা-লোকবল সব কিছু... বানা বানা তাড়াতাড়ি ছিলিম বানা... উফফফ যা গেলো সারারাত...
চ্যালা।। আজ পালাগানে কি হবে?
গুরু।। পুজো, মানে চারদিকে চারটে পুজোতে কি হচ্ছে সেটা... আজ ষষ্টী আর কাল সপ্তমী...
চ্যালা।। মানে পুজোর আচার, অঞ্জলি, খাওয়াদাওয়া।
গুরু।। দুর্গা পুজো মানেই ঠাকুরের ভোগ আর পাট পেড়ে খাওয়া, সঙ্গে ফাংশান আছে...
চ্যালা।। আচ্ছা চমক চমক কি বলছিলে?
গুরু।। পেত্থম ছিলো বিদেশী হিরো, তারপরে ছিলো প্রতীকদের বাড়ির সমস্যা, সেখানে আবার আত্রেয়ীর বাবা-মা এসে আপাতত ঠিকঠাক...
চ্যালা।। কাল রাতের হামলা একটা চমক ছিল?
গুরু।। কিছুটা... এখন জমিদার বাড়ির চমক মানে দ্বীপ কখন সবাইকে বলবে আর কি করে বলবে সেটাই পরের চমক... অবশ্য পিকচার তাও বাকি থাকবে বোকা ছেলে...
চ্যালা।। মানে!!!
গুরু।। ধীরে বৎস ধীরে...
“শুম্ভ-নিশুম্ভ দানব-দলনী
ভক্তি মুক্তি-দায়িনী,
জগ-প্রসবিনী মহাযোগিনী
চণ্ডীকে মা শিবানী।
দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী,
মহিষাসুর মর্দিনী জয় মা দুর্গে।”
“এসো এসো বৌমা, এবারের পুজোর বোধনের দায়িত্ব তোমার। তুমি দেবী মাকে আহবান করলে আমরা শুরু করব সব...”
“বাবা!!!”
কাট টু জমিদার বাড়ি
“এটা কি হচ্ছে ডিক?”
“বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে এটা সুর্যের দক্ষিণায়ন আই মিন রাত...”
“বাট???”
“দাঁড়া না বিদেশী মুক্ষু... দেবতারা ঘুমাচ্ছে বলে রাম রাবণ বধের জন্য দেবীকে আহ্বান করেছিলো বলেই এই আচার...”
“মানে ওয়েক আপ অ্যালার্ম?”
“একদম, দেবীর জাগরণ এবং অধিবাস।”
কাট টু সুতীর্থদের ক্লাব
“তিতু, এটা কেন করা হয়?”
“ঘটের চারপাশে তীরকাঠিতে লাল সুতো বাঁধা হলো আমন্ত্রণ করা দেবীকে।”
কাট টু বৃহন্নলাদের পুজো
“কি বলছো তুমি?”
“তুমি আমার সংসারের লক্ষ্মী হবে দোলন?”
“কিন্তু...”
“ওরে দোয়েল, এটা আমাদের ভাগ্য। মেনে নে...”
“হ্যাঁ কিন্তু কন্যাদান দিদি?”
“ঝিলিক তো আমারও সন্তান, তাই নয় কি?”
“উকিলবাবু ঠিক বলেছেন দোয়েল। চল চল মণ্ডপে চল।”
“দোলন, আজ এই শাড়িটা পরো। আমি সেইদিন দেবো বলে ঠিক করেছিলামকিন্তু পারিনি তখন। আজ এটা পড়ে তুমি আমার দুর্গা হয়ে ওঠো...”
দোয়েল মাসী সহ সব বৃহন্নলাদের চোখে জল...
“এই যে এখানে চোখের জল না ফেলে সবাই এসো, অঞ্জলির সময় হয়ে গিয়েছে...”
“শতগুনে মহা-সরস্বতী
রজোগুণে মহালক্ষ্মী রূপিনী,
তম-গুণে মহাদুর্গা তুমি
তম-গুণে মহাদুর্গা তুমি
মহামায়া গো সনাতনী
দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী,
মহিষাসুর মর্দিনী জয় মা দুর্গে
দেবী দুর্গে জগত জননী,
তুমি মা মঙ্গলকারিনী
দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী
মহিষাসুর মর্দিনী জয় মা দুর্গে
দেবী দুর্গে জগত জননী
তুমি মা মঙ্গলকারিনী
মহাসরস্বতী, মহালক্ষ্মীরূপিনী
মহাদুর্গা তুমি, প্রণাম নে মা।”
“কি বিউটিফুল ইভনিং... চার্মিং।”
“হ্যাঁ, আয় না কাছে, উম্মা চুম্মা করি...”
“ডিক, তুমি মাঝে মাঝে এইরকম করো কেন? দিস ইজ পারভারশান...”
“১০৮ বার... উফফফ!!! এইসব নিরামিষ সিন দিলে পাবলিক উঠে চলে যাবে। একটাও হট প্যান্ট কিংবা অন্য কিছুই নেই...”
“এই অয়াজাইরা পোলা। এই গল্প দুর্গা পুজো নিয়ে আর সেখানে তুই বাড়িতে না থেকে এই ক্ষেতের মধ্যে কি উৎপাটিত করতে এসেছিস?”
“সময় এবং সুযোগের নাম চরিত্র আর সেটাই এখন প্রমাণ করব। অনেকদিন একটা বিদেশী চাইছিলাম... যাও তো তুমি ওদিকে আমার দশ মিনিট লাগবে...”
ভোরের আলোর সাথে সব মণ্ডপে মহাসপ্তমীর আচার শুরু হয়...
গুরু।। সবাইকে জানাই মহাসপ্তমীর শুভ কামনা। আজ একটু ঘুরু ঘুরু আরে বাবুমশাইয়েরা কলকাতার পুজো পরিক্রমা। আরে আপনাদের আসতে বলিনি। উফফফ!!! আপনারা থাকেন নিজের জায়গাতে। কয়েকটা টাকা অ্যাক্টো দেখার টিকিট কেটে পুজোতে ঠাকুর দেখার ধান্দা। শখ দেখো। কিছু সংগঠনের উদ্যোগে বৃহন্নতাদের নিয়ে সকাল সকাল অঞ্জলি দিয়ে রওনা হবে নয় নয় করে ১০-১১টা বাস। উদ্দেশ্য নামকরা বারোয়ারী পুজো। অন্যদিকে ডিক-ড্যালি ইন গালা কার্নিভাল। ডিক উত্তর কলকাতার বনেদী ও বারোয়ারী পুজো দেখাবে ড্যালিকে। শান্তি-তিতলি বেড়িয়েছে নিজের মতন এই দক্ষিণের কিছু মণ্ডপ, বেশীক্ষণ ঘুরবে না কারণ সন্ধ্যবেলা আবার ফাংশান।
চ্যালা।। এই ওস্তাদ... একটা কথা বুলব?
গুরু।। হ্যাঁ আমি দেখেছি কাল থেকে ময়নার পেছনে ঘুরঘুর চলছে...
চ্যালা।। এই না না, কি সব বলছো...
গুরু।। দূর হ তুই মুখের সামনে থেকে... এই এই কিছু টাকা নিয়ে যা যদি লাগে (চোখ টেপে আর চ্যালার এক মুখ হাসি)
“ওয়াও এক্সেলেন্ট।”
“ইয়েস ড্যালি। বাগবাজারের দেবীর চোখের দিকে তাকালে মনে একটা বল-ভরসা পাওয়া যায়। বাগবাজার চিরাচরিত একচালা আই মিন একটা একান্নবর্তী পরিবার কনসেপ্ট মেনে চলে এবং দেবীর গায়ের রঙ অতসী।”
কাট টু প্রতীকদের বাড়ি
“ঠিক বলেছো বৌমা।”
“আসলে বাবা, আমরা দুর্গা কোথাও পুজো করি মহিষমর্দিনী আবার কোথাও তিনি ঘোটক বাহিনী।”
“কিন্তু ওই পারিবারিক ব্যাপারটা আমাদের যোগ করা।”
“হ্যাঁ কারণ আশ্বিন মাসে অকালবোধন এবং সেখানে ছিলেন দুই সখী জয়া ও বিজয়া। তাই না কাকাই।”
“একদম, কিন্তু যুগের নিয়ম মেনেই একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে নিউক্লিয়ার ফ্ল্যামিলি আর সেখানে দেবীর একচালা ভেঙে আলাদা আলাদা হলো।”
“এটা ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ থেকে ঝাড়লে?”
“সোশ্যাল মিডিয়াতে এটা অনেক আগে থেকেই আছে, কেউ বলে না।”
কাট টু শোভাবাজার রাজবাড়ী
“এই এই সবাই লাইন দিয়ে নামো। উফফফ নিজে ছিলিম টানছে আর আমার ঘাড়ে...”
“কি হলো মিনসে কাকে গাল পারো?”
“তোর ভাতারকে... চল ওইদিকে।”
“আউচ...”
“এই ময়না কি হলো তোমার?”
“আঘাত লেগেছে... এইখানে (চোখ টেপে)”
কাট টু দক্ষিণ কলকাতা
“জানিস শান্তি, কাল বা পরশু একটু রাতের দিকে ম্যাডক্স স্কোয়ারে আসব। ম্যাডক্স স্কোয়ার মানেই রাতভোর আড্ডা।”
“জ্যাম্বু আসবে তো?”
“না আসলে কুচ পরোয়া নেহি। চল চল রাস্তা পেড়িয়ে একডালিয়া ঢুকি। গরিয়াহাটের দুইপাশে একডালিয়া আর সিঙ্ঘীপার্ক এবং দুটোই ৭৫ পেরিয়েছে...”
কাট টু শোভাবাজার রাজবাড়ী
“হেই ডিক লুক, কতো কমন জেন্ডার পিউপিল।”
“কোন সংগঠন থেকে অহ... না না এইবার একটা পুজোর পুরো দায়িত্ব বৃহন্নলারা নিয়েছে আর এরা তারা। আমি তোমাকে নিউজ দেখিয়েছিলাম না?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে আছে।”
“এদেরও তো ইচ্ছে করে। চলো চলো এখান থেকে আমরা অনাথাশ্রমে যাবো।”
“হ্যাঁ, আমার খুব ইচ্ছে ওদের হেল্প করবার।”
“ড্যালি, আমরা দুইজন মিলে আমাদের প্রত্যেক মাসে এক সপ্তাহের স্যালারি উইল ডোনেট... এটা আমার সিদ্ধন্ত।”
“আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ মাই লাভ...”
শোভাবাজার রাজবাড়ির বাইরে দুইজন চুম্বনরত যুবকএ দেখে আচমকা সপ্তমীর সকালের কলকাতা থমকে গেলো।
চলবে
সমাজের দুর্গা
রাজা অঙ্কুর
ষষ্ঠ পর্ব (অঞ্জলি থেকে সন্ধিক্ষণ)
#সমাজেরদুর্গা #সমাজের_দুর্গা (সহযোগিতায় প্রশান্ত এবং অন্য পুরুষের গল্প পেজের সবাই)
(নমস্কার সবাইকে এবং সবাইকে পুজোর আগাম শুভকামনা জানিয়ে শুরু করছি পুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ ধারাবাহিক ‘সমাজের দুর্গা। একটা অনুরোধ, দয়া করে ধর্মের জিগির তুলে কলুষিত করবেন না কারন আমি কাউকে অবমাননা করছি না এবং সবকিছুর উর্ধে উঠতে চাইছি বলেই সমাজের কথা বলছি। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানান কারন এই দুই বছর আপনাদের সাহায্যেই আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি এবং আগামিদিনেও আপনাদের হাত আমাদের দরকার)
“আত্রেয়ী, তোমাকে এই সাজে স্বয়ং দেবী মা লাগছে আর তাছাড়া তো দেবী নারী শক্তির প্রতীক।”
“বুঝলাম, এখন রাস্তা ছাড়ও কারণ সকাল সকাল পিরিত চোদানোর... (জিভ কাটে)... এই এই রাজাদা সরি, স্লিপ অফ টাঙ্গ...”
গুরু।। সমস্যা নেই, শুধু একটাই ভয়...
আত্রেয়ী।। কিসের?
গুরু।। পাবলিক ঠিক কতোটা ক্যালাবে আর কোথায় কোথায়?
প্রতীক।। বাবুমশাইয়েরা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন ভাষার জন্য। বাদ দিন আসুন আমার সাথে দেখি অঞ্জলি শুরু হয়েছে কিনা...
প্রতীক ও আত্রেয়ী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
“এবার একবার দেখি আমার বিদেশী জার্সি গরুকে... একদম পারফেক্ট বাঙালী বাবু লাগছে...”
“এইসব কি পরিয়েছো ডিক!!! আমার কেমন হচ্ছে খুলে গেলে।”
“আরে ড্যালি ভেতরে তো বারমুডা আছে...”
“কাম অন...”
“আরে ড্যালি, আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো তোমাকে আমি ধুতি-পাঞ্জাবীতে ‘হিমু’ সাজাবো। আমি আর আমার ‘হিমু’ একই ফুল ছিঁড়ে মায়ের পায়ে অঞ্জলি দেবো, একসাথে জল-মিস্টি খেয়ে উপোষ ভাঙব কিন্তু আজ তো পারমাণবিক বোমা পড়বে এই কুসুমপুরে।”
“নিউক্লিয়ার বোম্ব!!! এখানে!!!”
“হ্যাঁরে পাগল, আমি আজ আমাদের রিলেশানের ব্যাপারে সবাইকে জানাবো কারণ আজ সবাই আছে এবং অঞ্জলির সময়ে এক জায়গাতে থাকবে…”
“মাই সান…”
“ইয়েস আঙ্কেল?”
“আমরা লাস্ট লাইটে সব প্যাকিং করে রেখেছি…”
“এই এই রাজাদা, এটা কি কমেডি সিন নাকি? একটা ড্রামাটিক বিষয়ে কি দেখাবে? একপাশে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে এরা দাঁড়িয়ে আছে?”
গুরু।। একদম কারণ সেটাই চলবে… এই চল চল বাকি কে কি করছে দেখি গিয়ে
আমরা আজকাল ভালো আছি
ভালোবাসার মানুষ ছাড়া রাতগুলো রঙিন হয়ে আছে,
আমি আজকাল ভালো আছি সেই রাতের নগ্নতায়...
“জানো তারক, আজ কি চাইলাম দেবীর কাছে...”
“কি ঝিলিক?”
“চাইলাম সমানাধিকার, ভালোবাসার অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার।”
কাট টু সুতীর্থদের ক্লাব
“দেবী মাকে প্রণাম করে মনের মধ্যে একটা অপার শান্তি পাই জানো।”
“একদম শান্তি... আজ তোর জ্যাম্বুকে কিন্তু একদম চকোলেট হিরো লাগছে... তাই না?’
“আমার কপাল পুড়ল... ইসিকা মতলব...”
“এইযে দুই পায়রা, এখানে দাঁড়িয়ে কি গুজুরফুসুর করছো?”
“জ্যাম্বু, আমি একাই ফেরত যাবো কারণ তোমাকে এই ড্রেসে দেখে তোমার বিয়ে করা বউ ফিদা হো গায়ি...”
দরদাম উঠা-নামা
সমাজকে চিন্তিত করে কি আর?
আলপনা সাতরং রঙ চিনে নিতে
শিখে গেছি আমরা এবার,
নতজানু হয়ে কেউ বসে নেই কোথাও
ফিরে গেছি সবকিছু ফেলে,
ভালোবাসার মেয়াদ শত সহস্র বছর
ওই দেখ, লেখা আছে টাইমলাইনে
“তোমার মনে আছে প্রবীর সেইদিনটাও মহাষ্টমী ছিলো?”
“আজো একই তিথি দোলন। বদলেছে শুধু মাঝের সময়, মানুষ, মানসিকতা সব কিছু?”
“ভালোবাসার চাহিদা কি সময়ের সাথে বদলায়?’
“ভালোবাসা পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে একই আছে, হয়ত তার ওপর মেদ জমেছে...”
“তোমার আমার মাঝে সেদিন দেওয়াল তুলে দাঁড়িয়েছিল এই সময় আর আজ দেখো ঝিলিকের সামনে সুযোগ করে দিচ্ছে সেই একই সময়।”
“হ্যাঁ, কারণ কখন ঠিক কি কি হওয়া দরকার তার উত্তর সময়ের কাছে আছে দোলন। পুজো মিটে গেলে প্রচুর কাজ কিন্তু... তুমি এখনও দেওয়ালের রং বললে না কিন্তু...”
“আসমানি!!!” .
“আমি আজকাল ভালো আছি
তোকে ছাড়া রাতগুলো আলো হয়ে আছে,
আমি আজকাল ভালো আছি।”
“জানো বাবা, কাকাই, পিসি... দুঃখ, কষ্ট, বেদনাগুলো খুব যত্নে-আদরে আগলে রাখতে কি দারুণ লাগে। এই সমাজের বুকে মানুষেরা কিংবা গতানুগতিকতা যখন সমপ্রেমকে দরজার বাইরে রেখে দেয় তখন চিৎকার করে কাঁদতে নয় বরং প্রানখুলে হাসতে মন চায়। জানিস দাদাই, সন্ধ্যেবেলা ছাদে বসে সমপ্রেমিকের নেশা মদের মধ্যে থেকে দামী কারণ সমপ্রেম আমাকে গভীর খাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে... আসলে মা, এই ভালোবাসাকে আগলে রাখার থেকে এক লহমাতে নিজেকে শেষ করে দেওয়া অনেক অনেক সহজ। সমাজ, মিডিয়া তকমা দেবে ‘নষ্ট ছেলে’ কিংবা অন্য কিছু। সারারাতের পরেও এই চোখে জেগে থাকে সেই প্রেমিক আমার ‘টিম ড্যালি’ কিন্তু হারিয়ে যাওয়া কি নিশ্চিত এই সময়ের গহ্বরে?”
কুসুমুপুরের জমিদার বাড়িতে অঞ্জলির শেষে একটা অখণ্ড নীরবতা
“এইরে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস মিলছে...”
“আরে হ্যাঁ, বউদি আকাশের কোণাতে কালো মেঘ...”
“এই প্রতীক, ডেকরেটারকে বলো সামিয়ানা বাড়িয়ে দিয়ে নাহলে ভিজে যাবে সব।”
“আমি ফোন করে বলে দিয়েছি আত্রেয়ী।”
“একলাফে সিগনাল পেরোতে
পা আঁকড়ে ধরে না
অজস্র কালবৈশাখী আর আছড়ে পড়ে না,
শোন অভ্যেস বলে কিছু হয় না এ পৃথিবী তে
পালটে ফেলাই বেঁচে থাকা,
আর একশো বছর আমি বাঁঁচবোই
জেনে রাখ, হোক না এ পথ ঘাট ফাঁকা
আ হা..”
“এক মিনিট দাদুভাই... ওনাদের নিয়ে হল ঘরে আয়... সবাই এসো আমার কিছু বলার আছে...”
“বাবা!!!”
সপ্তমীর রাত থেকেই একটা নাটকের অংশ কমিউনিটির নানান গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে আর সকাল থেকে সেটা ঘুরতে শুরু করেছে আরো অন্যান্য গ্রুপে...
কর্ণ।। পুণ্য জাহ্নবীর তীরে সন্ধ্যাসবিতার
বন্দনায় আছি রত। কর্ণ নাম যার
অধিরথসূতপুত্র, রাধাগর্ভজাত
সেই আমি-- কহো মোরে তুমি কে গো মাতঃ!
কুন্তি।। বৎস, তোর জীবনের প্রথম প্রভাতে
পরিচয় করায়েছি তোরে বিশ্ব-সাথে
সেই আমি, আসিয়াছি ছাড়ি সর্ব লাজ
তোরে দিতে আপনার পরিচয় আজ।
“জাস্ট ফাটাফাটি। কর্ণের চরিত্রে এই কমন জেন্ডারের অ্যাক্টিং ওয়াও...”
“ঋতুপর্ণ ঘোষ বেঁচে থাকলে সত্যি খুশী হতেন...”
কর্ণ।। দেবী, তব নতনেত্রকিরণসম্পাতে
চিত্ত বিগলিত মোর, সূর্যকরঘাতে
শৈলতুষারের মতো। তব কণ্ঠস্বর
যেন পূর্বজন্ম হতে পশি কর্ণ-'পর
জাগাইছে অপূর্ব বেদনা। কহো মোরে
জন্ম মোর বাঁধা আছে কী রহস্য-ডোরে
তোমা সাথে হে অপরিচিতা!
কুন্তি।।ধৈর্য ধর্,
ওরে বৎস, ক্ষণকাল। দেব দিবাকর
আগে যাক অস্তাচলে। সন্ধ্যার তিমির
আসুক নিবিড় হয়ে।-- কহি তোরে বীর,
কুন্তি আমি।
কর্ণ।। তুমি কুন্তী! অর্জুনজননী!
“তুমি কি বলছো বাবা!!!”
“দেখ, এই সংসারের মাথাতে এখনও আমি আছি, বেঁচে আছি এবং সব ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
“এখানকার মানুষ, সমাজ, আত্মীয়, চেনাপরিচিত... সব জায়গাতে অপমানিত হতে হবে আমাদের বাবা?”
“কারণ কি দ্বীপের এই সম্পর্ক?”
“অবশ্যই।”
“আচ্ছা বড় খোকা, তোর ছেলে যদি কাউকে কিছু না জানিয়ে সব কিছু করে বিদেশ থেকে শুধু একটা খবর দিয়ে দিতো? কি করতিস? ত্যাজ্য পুত্র? সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত?”
“মেনে নিতাম কি বাবা?”
“তোরা মানবি কি মানবি না সেটা তোদের বিষয় আর আমি সেই নিয়ে কিছুই বলব না। আমি আমার নাতির এই সিদ্ধান্তের সাথে সহমত এবং... এবং সে আমার উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তির ভাগ পেয়ে যাবে আর কাগজ সেই মতন আমি বানিয়ে রেখেছি।”
“বাবা!!!”
“দাদুভাই, তুমি তোমার হিসেব বুঝে তোমার মনের মানুষের সাথে চলে যাও, এই পোড়ার দেশে আসার কি দরকার?”
“গ্র্যান্ডপা... আমি ইন্ডিয়ান, কালচারড ফ্যামিলি এই প্রথম দেখলাম আর আমি সেটা হারাতে চাই না।”
“কিন্তু বাছা, সেটা কিভাবে সম্ভব?”
“ফ্যামিলি না মেনে নিলে আমি ডিককে সবার থেকে আলাদা করব না কারণ ফ্যামিলি রুট ইস ইমপরতেন্ট দ্যান আমাদের সম্পর্ক। মেবি জা না হলে ইন ফিউচার।”
“দ্যাখ তোরা। কি উদারতা, এই মানসিকতা পোষণ করতে পারবি। এই স্পোর্টসম্যানের ফ্যামিলি প্রথমে মানে নি কিন্তু এখন তারা ডাক্তারের সাথে কথা বলে, ইন্টারনেট দেখে সব জেনে রাজি আর আমিও সেটাই করেছি।”
কুন্তি।। অর্জুনজননী বটে! তাই মনে গণি
দ্বেষ করিয়ো না বৎস। আজো মনে পড়ে
অস্ত্রপরীক্ষার দিন হস্তিনানগরে
তুমি ধীরে প্রবেশিলে তরুণকুমার
রঙ্গস্থলে, নক্ষত্রখচিত পূর্বাশার
প্রান্তদেশে নবোদিত অরুণের মতো।
যবনিকা-অন্তরালে নারী ছিল যত
তার মধ্যে বাক্যহীনা কে সে অভাগিনী
অতৃপ্ত স্নেহক্ষুধার সহস্র নাগিনী
জাগায়ে জর্জর বক্ষে-- কাহার নয়ন
তোমার সর্বাঙ্গে দিল আশিস্-চুম্বন।
অর্জুনজননী সে যে। যবে কৃপ আসি
তোমারে পিতার নাম শুধালেন হাসি,
কহিলেন "রাজকুলে জন্ম নহে যার
অর্জুনের সাথে যুদ্ধে নাহি অধিকার'--
আরক্ত আনত মুখে না রহিল বাণী,
দাঁড়ায়ে রহিলে, সেই লজ্জা-আভাখানি
দহিল যাহার বক্ষ অগ্নিসম তেজে
কে সে অভাগিনী। অর্জুনজননী সে যে।
পুত্র দুর্যোধন ধন্য, তখনি তোমারে
অঙ্গরাজ্যে কৈল অভিষেক। ধন্য তারে।
মোর দুই নেত্র হতে অশ্রুবারিরাশি
উদ্দেশে তোমারি শিরে উচ্ছ্বসিল আসি
অভিষেক-সাথে। হেনকালে করি পথ
রঙ্গমাঝে পশিলেন সূত অধিরথ
আনন্দবিহ্বল। তখনি সে রাজসাজে
চারি দিকে কুতূহলী জনতার মাঝে
অভিষেকসিক্ত শির লুটায়ে চরণে
সূতবৃদ্ধে প্রণমিলে পিতৃসম্ভাষণে।
ক্রূর হাস্যে পাণ্ডবের বন্ধুগণ সবে
ধিক্কারিল; সেইক্ষণে পরম গরবে
বীর বলি যে তোমারে ওগো বীরমণি
আশিসিল, আমি সেই অর্জুনজননী।
অষ্টমীর রাতের কলকাতার বুক চিরে চলে যায় একটা এ্যাম্বুলেন্স আর সঙ্গে পুলিশের জিপ।
“আমি আজকাল ভালো আছি
তোকে ছাড়া রাতগুলো আলো হয়ে আছে,
আমি আজকাল ভালো আছি।”
“নমস্কার, কলকাতা শহরের বুকে একটা অনাথাশ্রমের ছেলেমেয়েদের সাথে এই ব্যবহার, এই অত্যাচারের প্রতিবাদে আসুন না সবাই গর্জে উঠি। হ্যাঁ আমার নাম দ্বীপশুভ্র চ্যাটার্জী। আমি একজন গর্বিত সমপ্রেমী এবং একজন মানবতার পূজারী। আমি এবং আমার পার্টনার টিম ড্যালি ইতিমদরা শুরু করেছি একটা ক্যাম্পেন, #মানবতার-বিচার_চাই, সঙ্গে আমার প্রোফাইল থেকে সেইসব নির্যাতিতার ছবিও দিয়ে ছড়িয়ে দিন সবার কাছে।”
“এই তোরা সবাই খবর দে সবাইকে, চেনা পারিখ, খোলের মেয়েদের...”
“হ্যাঁ হ্যাঁ মাসী...”
“নমস্কার, আমার নাম ঝিলিক, আর আমি একজন গর্বিত হিজরে। আমাদের মাসী প্রত্যেকমাসে অনাথাশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমে অনেক সাহায্য করে। আমরা মানবতার পূজারী। আসুন না হাতেহাত ধরে প্রতিবাদ জানাই সেইসব নপুংসকদের বিরুদ্ধে...”
“একটা স্পষ্ট কথা, অপরাধীর জাতপাত-ধর্ম কিংবা কে সেটা দেখবেন না। আমি রেজাল্ট চাই।”
“ইয়েস ম্যাডাম...”
গুরু।। বাবুমশাইয়েরা, সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। অষ্টমীর রাতে কলকাতার লাগোয়া একটা অনাথাশ্রম থেকে পাঁচিল টপকে একজন বাচ্চা পালায়। তার শরীরে আঘাত, অত্যাচারের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ সেই বাচ্চাকে হাহপাতালে ভর্তি করে সেই অনাথাশ্রমে আরো বাচ্চাদের উদ্ধার করেছে এবং মালিক ও দায়িত্বে থাকা লোকদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে... সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ চ্যানেলে শুধুই এই খবর। প্রশাসন দোষীকে শাস্তি দিতে বদ্ধ পরিকর... আসনে বাবুরা কাল #হোককলরব... নির্ভয়া থেকে হাথরস, আসুন দেখিয়ে দিই আমরা সাধারণ মানুষের নীরব প্রতিবাদ। গর্জে উঠুক নেতাজী, বিদ্যাসাগর, রামমোহন, স্বামীজি, কবিগুরুর বাংলা...”
চলবে
সমাজের দুর্গা
রাজা অঙ্কুর
সপ্তম/অন্তিম পর্ব (বিজয়া থেকে উত্তরণ)
#সমাজেরদুর্গা #সমাজের_দুর্গা (সহযোগিতায় প্রশান্ত এবং অন্য পুরুষের গল্প পেজের সবাই)
(নমস্কার সবাইকে এবং সবাইকে পুজোর আগাম শুভকামনা জানিয়ে শুরু করছি পুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ ধারাবাহিক ‘সমাজের দুর্গা। একটা অনুরোধ, দয়া করে ধর্মের জিগির তুলে কলুষিত করবেন না কারন আমি কাউকে অবমাননা করছি না এবং সবকিছুর উর্ধে উঠতে চাইছি বলেই সমাজের কথা বলছি। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানান কারন এই দুই বছর আপনাদের সাহায্যেই আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি এবং আগামিদিনেও আপনাদের হাত আমাদের দরকার)
“যদি হল যাবার ক্ষণ
তবে যাও দিয়ে যাও শেষের পরশন॥
বারে বারে যেথায় আপন গানে স্বপন ভাসাই দূরের পানে
মাঝে মাঝে দেখে যেয়ো শূন্য বাতায়ন--
সে মোর শূন্য বাতায়ন॥
বনের প্রান্তে ওই মালতীলতা
করুণ গন্ধে কয় কী গোপন কথা।”
গুরু।। দাদারা-দিদিরা, আপনারা লাইন করে দাঁড়ান, মিছিল শুরু হবে। আসলে কি বলুন তো আমরা হলাম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ আর আজ আমরা রাস্তাতে নামলাম মানবিকতার খাতিরে। পেছনে ফিরে দেখব না কতোজন আছেন কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখব লক্ষ্য কতো দূরে।
আসলে দশমীর কলকাতা আজ একটু অন্য রকম। অনাথাশ্রমের শিশুদের ওপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদে এই মুহুর্তে রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন জমিদার বাড়ি কুসুমপুরের চ্যাটার্জী বাড়ির সবাই দেবীর মুর্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিয়ালদহ স্টেশানের বাইরে। বাড়ির মহিলারা লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ে বিজয়ার সব আচার পালন করছেন শুধু সিঁদুর খেলা ছাড়া কারণ সেটা আজ তাদের প্রতিবাদ এই জঘন্য এবং নারকীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। চ্যাটার্জী বাড়ির সব পুরুষেরা শ্রাদ্ধের পোশাকে এবং আমরা কথা বলে নেব পরিবারের একজন সদস্যের সাথে।
“আচ্ছা আপনাদের দাবী কি?”
“দেখুন আমার বয়স ৮৫ এবং আজ আমি এই অশীতিপর শরীরে সামিল হলাম ওই দুধের শিশুদের ওপর হওয়া অত্যাচার, অবহেলার প্রতিবাদে। এই অমানবিকতার বিচার চাই, দোষীদের শাস্তি চাই। আপনারাও আসুন না।”
“আপনাদের সাথে কারা আছেন?”
“আমার পরিবার এবং আমাদের কুসুমপুরের সব সাধারণ মানুষ আছেন এবং সেটা জাতপাত-ধর্ম নির্বিশেষে।”
“ঢাকের আওয়াজ এখনও বাজে,
দুই কানে সারাক্ষন,
বিদায় বেলায় আজকে মা’গো ,
বিষাদে ভরে মন।”
“দর্শকরা, আপনারা দেখছেন এই মুহুর্তে চ্যাটার্জী বাড়ির প্রতিমার পেছনে পেছনে সেই মিছিলে সামিল হয়েছে শহরতলীর সেই বৃহন্নলাদের পুজো সাথে আছেন অসংখ্য বৃহন্নলা এবং প্রচুর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা।”
“দর্শকবন্ধুরা, এই মুহুর্তে পুলিশের সর্বোচ্চ দপ্তর এবং প্রশাসনিক মহলে উচ্চ পর্যায়ের মিটিং চলছে এবং প্রশাসন দোষীদের শাস্তি দিতে তৎপর।”
“আমার নাম দোয়েল আর হ্যাঁ আমি আর পাঁচজন হিজরের মতন আপনাদের সমাজে অপাক্তেয় কিন্তু আজ যখন মানবতা লজ্জিত এবং লাঞ্ছিত তখন রাস্তাতে নামলাম এবং হ্যাঁ একটা কথা আজ আমাদের চেনাজানা সব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা এই প্রতিবাদে সামিল, যারা যারা কলকাতাতে আসতে পেরেছেন তারা মিছিলে হাঁটছেন এবং বাকিরা নিজের নিজের জায়গাতে প্রতিবাদে সামিল।”
“আপনারা কি করবেন? সরকারের সাথে কথা বলবেন?”
“প্রশাসনের ওপর আমাদের পুরো আস্থা আছে এবং আমরা দেবীকে বিসর্জনের আগে শেষ বিদায় জানাব এই সমাজের অসুরদের।”
“মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায়,
মাটি রাঙিয়ে যাবে,
আসছে বছর আবার মা’গো,
সবাই তোমার দেখা পাবে।”
“নমস্কার দর্শকদের। আজ কলকাতা দ্য সিটি অফ জয় দেখছে এক অভিনব প্রতিবাদ। স্বামীজি, রামমোহন,নেতাজী, বিদ্যাসাগরের কলকাতা আজ সামিল মানবিকতার অবমাননার প্রতিবাদে। শিয়ালদন থেকে শুরু হওয়া মিছিলের লক্ষ্য বাবুঘাট।”
“দর্শকবন্ধুরা, আপনাদের নিয়ে যাবো উত্তর কলকাতার দিকে কারণ সেখানেও বেশ কিছু পুজো কমিটি এবং সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ শুরু করেছেন।
“একদম, শ্যামবাজার থেকে মিছিল রওনা দিয়েছে এবং সেখানে আছে অনেক পুজো কমিটি এবং সাধারণ মানুষ। এই সাধারণ মানুষ খেটে খাওয়া শ্রমিক, ব্যাঙ্ক কিংবা কোন স্কুলের শিক্ষকরা কিংবা বেসরকারি চাকুরে। সবাই মুখে কালো ব্যাজ পড়ে নীরব প্রতিবাদ করছেন।”
“বিসর্জনের এই দুঃখে,
দুই নয়নে আসে অশ্রুধারা,
আনন্দের জগতে রেখেছিলে মা’গো,
হব যে সবাই মাতৃহারা।”
“একদম, একদম... না না আপনারা দেখছেন কোন মানুষ ‘বলো দুররাগ মাইকি জয়’ কিংবা ‘আসছে বছর আবার হবে’ স্লোগান দিচ্ছে না এবং সবার হাতে একটাই প্ল্যাকারড়ড ‘এই অমানবিক পৃথিবীকে জঞ্জাল মুক্ত করে এসো উমা’।
“হ্যাঁ হ্যাঁ... দক্ষিণ কলকাতার দিক থেকেও একটা বিরাট মিছিল আসছে বাবুঘাটের দিক...”
“যাবি যখন ঠিক করেছিস,
কী আর বলি বল,
সারা বছর তোর আশীর্বাদে মা’গো
থাকি যেন সুস্থ ,সবল।”
গুরু।। বাবুমশাইয়েরা, আজ প্রতিবাদ আমার, আপনার, আমাদের সকলের... #হোককলরব #সমাজের_দুর্গা। আমরা সবাই নীরবে মানবিকতার ওপর আসা এই হামলার প্রতিবাদে সামিল। আসুন না পথে নামী সবাই... দেখিয়ে দিই এই বিশ্বকে... বাঙালী আজ যা ভাবে, যা করে সেটা বিশ্ব করে তারপরে... আসুন না পা মেলাই আমরা গর্বিত বাঙালী জয়ধ্বনিতে... আর হ্যাঁ, সমাজের দুর্গা কিন্তু আমাদের মধ্যেই আছে এবং থাকবে আর তাকে রক্ষার দায় ও দায়িত্ব আমাদের সবার।

