না পাওয়া
না পাওয়া


-"ছি ছি দিদি, আমার তো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। বাজারে, দোকানে যেখানেই আমি আর ছোটু যাচ্ছি, সবার মুখে একটাই কথা, 'তোমার দিদি নাকি বিয়ে করছে এই বয়সে!!' মুখ দেখাতে পারছি না ঘরে বাইরে!! পিঙ্কি, পিকুর স্কুল,আমার অফিস এসব জায়গায় কি বলব বল তো!! এতই যদি ইচ্ছে তো বয়সকালে কেন করলি না দিদি!!"
বড়ভাই সোমকের অভিযোগ শুনে বিষণ্ণ হাসলেন বছর পঞ্চাশের শ্রীতমা। ভাইয়ের বউদের তেরছা দৃষ্টি, আত্মীয় স্বজন, পাড়া পড়শির গুজগুজ ফুসফুস আলোচনা সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে স্থির রইলেন তিনি। কিন্তু দিদির এই নির্লজ্জতা দেখে অবাক হয়ে গেছে দুজনেই। একেবারে ব্যাগ গুছিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে!!
মৃদু হেসে মাথাটা তুলে শ্রীতমা বললেন,
-"তুই তখন উচ্চমাধ্যমিক দিলি সমু, আর ছোটু ক্লাস নাইন। আমি সবে কল সেন্টারের চাকরিটা পেয়েছি। বাবা চলে গেলেন। মা এতটাই ভেঙে পড়ল যে সংসারের দিকে আর তাকিয়েই দেখল না। বড় দিদি হিসেবে তোদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলাম আমি।
অভি তখন থেকেই বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগল। আমি বারবার ওকে ফিরিয়ে দিলাম। পারলাম না স্বার্থপরের মত তোদের দুজনকে অসুস্থ মায়ের ভরসায় রেখে সুখের সংসার সাজাতে।
আজ তোরা বড় হয়েছিস, ভালো চাকরি করছিস, বিয়ে হয়েছে।এখন তো আমি নিজের জন্য ভাবতেই পারি।"
ভাইদের আর উত্তরের সুযোগ না দিয়ে ব্যাগটা নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ির চৌকাঠ পেরোলেন শ্রীতমা।