Aniruddha Goswami

Romance Classics

4.8  

Aniruddha Goswami

Romance Classics

অদৃশ্য প্রজাপতি

অদৃশ্য প্রজাপতি

43 mins
959


অদৃশ্য প্রজাপতি 

অনিরুদ্ধ গোস্বামী 

ফোর্ট কোচি 

 

পড়ন্ত বিকেলের রোদ্দুর গাছটিকে আলোকিত করে রেখেছে ।একটু আগেই বেশ খানিক্ষন বৃষ্টি হয়ে গেল।

পেঁজা তুলোর মতন মেঘ এ যেন কালির ড্রপ পরে গেছে ।তার মধ্যেই সূর্য উঁকি দিচ্ছে।গাছটি সে হিসেবে তরুণ।বৃষ্টি তে ভিজে ঈষৎ ঝুকে আছে আর বৃষ্টির জল পাতা দিয়ে ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়ছে ।এই মন খারাপের বিকেলে দেখছি কিছু প্রজাপতি গাছের চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে কিছু ফুল ও ফুটে আছে। এই গরম এ বৃষ্টি একটু শান্তির অভ্যাস।

কেরালা তে একটু গরম পড়লেই অবশ্য বৃষ্টি হয়ে যায়. সবুজের সমারোহ ই চারিদিকে। এর্নাকুলাম থেকে ফোর্ট কোচি  যাচ্ছিলাম। হটাৎ বৃষ্টি তে এই পার্কে ঢুকে পড়েছি। পার্ক টা গড়ে উঠেছে ব্যাকওয়াটার এর পাশে। 

লক্ষ্য করলাম ঘাসের আড়াল থেকে খেলতে খেলতে একটি বিড়াল বেরিয়ে এলো । প্রজাপতি গুলো দানা মেলে উড়ছে তার আসে পাশে.বিড়ালটা প্রজাপতি গুলোকে ছোবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।একটা প্রজাপতি তো বিড়াল তার লেজে ওপর বসে গেল।খেলতে খেলতে বিড়ালটা ঝোপের আড়ালে চলে গেল.

বৃষ্টি একেই দেরি করিয়ে দিলো তাই বুলেট স্টার্ট করে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলাম ফোর্ট কোচির দিকে ।ফোর্ট কচি বা পুরানো কোচিন যেখানে পর্তুগিজ ,ডাচ দের ঐতিহাসিক মনুমেন্ট র অবস্থান। তার সাথে আছে সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ কাকে বলা হয় "ভাস্কো দা গামার " সমাধিস্থল ।

ফোর্ট কোচির ওয়াক ওয়ে দিয়ে হাটতে থাকলাম ,বাম দিকে ফ্রেশ ফিশ বিক্রি করছে | ডান দিকে ব্যাক ওয়াটার এর ওপর পাতা রয়েছে "চীনা ভালা " বা চাইনিজ ফিশিং নেট ।এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে ।বসলাম একটা বোল্ডার এর ওপর ।ঢেউ ভাঙছে বোল্ডার এর ওপর ।নোনতা জল এর ছিটে -সূর্যাস্ত -আর চাইনিজ ফিশিং নেট ,এক ভালো লাগা মন এর সৃষ্টি করেছে ।নাহঃ , সে এসে এখনো পৌঁছায় নি |

এখনই হয়তো আথিরা পেছনে এসে আমার কাঁধে আলতো করে হাত রাখবে আর প্রতিবার এর মতো আয়ত কাজল চোখে চেয়ে বলবে,

 সরি নীল ,ফর কীপ ইউ ওয়েটিং ।

আমি হেসে বলবো নাইস দেট ইউ হ্যাভ এপিআরড ,এটলিস্ট ।

আথিরা নিশ্চিন্ত হয়ে বসবে আর তার পাশে বসে তার মধ্যে আলোড়নের ঢেউ অনুভব করবো .

তারপর হয়তো হাতে হাত রেখে সূর্যাস্ত দেখবো .নীরবতা হবে কথা .আশঙ্কা পরিবর্তিত হবে নির্ভরতায়.

আথিরা বালাকৃষ্ণাণ ,কেমিস্ট্রি মাস্টার্স করছে কোচিন ইউনিভার্সিটি থেকে .কোল্লাম (কুইলনে) এর মেয়ে .হোস্টেল এ থেকে পড়াশোনা করছে .

৫:৩০ বাজে .তার দেখা নেই ফোন সুইচ অফ আসছে .কি হতে পারে ? প্রাকটিক্যাল ক্লাস ?হোস্টেল ও চিনি না ,চিনলেও কি বলে ঢুকবো .আর একটু দেখি....পশ্চিম এর আকাশ লাল থেকে কালো হতে শুরু করেছে .

 

 

উঠে পড়লাম একরাশ চিন্তা নিয়ে ।ফেরার পথে এম জি রোড এ "সাইলোন বেক হাউস" থেকে সিলোন পরোটা প্যাক করে এপার্টমেন্ট মুখে রওনা দিলাম.

ঢুকতেই দেখি "শিরি "জানান দিলো - ম্যানেজিং ডিরেক্টর এর মেসেজ "ক্যান ইউ প্লিজ সেন্ড মে টি কম্পিটিটিভ ডাটা ফর আওয়ার নিউ প্রোডাক্ট টু লঞ্চড "?

যদিও শনিবার তবু ল্যাপটপ খুলতেই হলো। সঙ্গে সঙ্গে মা এর ফোন...

মা : কিরে কিছু হয়ে ছে?কতবার ফোন করছি চিন্তা হয় না বল ।

(আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ই) জানি বলবি প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এর হেড এর দায়িত্ব অনেক, কিন্তু বাবা মা এখানে তো তোর মুখ চেয়ে বসে থাকে। সে চিন্তা কি আছে ?

নীল: আরে মা বুলেট চালালে কিছু শোনা যায় না। বলো কেমন আছো?

মা :এই নে তোর বাবা কি বলবে?

বাবা : দেখ আমি তো তোর সাথে বন্ধুর মতো মিশেছি , একটা কথা বলি এবার বিয়ে টা করে নে ,কয়েকটা সম্বন্ধে এসেছে ।বলিস তো মেইল করে দিচ্ছি প্রোফাইল গুলো।

নীল : বাবা জানো তো এখন এই নতুন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একটু ব্যাস্ত রয়েছি। আমাদের এই কোম্পানি , মিড্ সাইজ ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি ।কাজের একটু চাপ ও আছে।

বাবা :কি আসছে মার্কেট এ ?

নীল :একটা নিউরোট্রপিক ইনজেকশন , যেটা মাস পপুলেশন এর কাজে আসবে। অনেকগুলো ইন্ডিকেশন এ কাজ করবে। তার সাথে এটা কোম্পানির লাভ বাড়াতে সাহায্য করবে ।

বাবা : ঠিক আছে এরপর কিন্তু গাঁটছড়া নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। 

নীল আচ্ছা সে দেখা যাবে। 

বাড়ির সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে রাখার সাথে সাথে বিন্সি র মেসেজ ঢুকলো। 

 বিন্সি :বস এ .সি নিলসন ডাটা মেইলড টু ইউ ( তার সাথে একটি লাভ ইমোজি ) ।

ভাবলম্ স্যাটারডে নাইট ইফেক্ট হবে হয়তো |

নীল :থাঙ্কস বিন্সি ,গুড নাইট |

বিন্সি ভার্গিস আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোডাক্ট ম্যানেজার আমরা এই প্রজেক্টে পাঁচ মাস কাজ করছি ।আমাকে রিপোর্ট করে বিন্সি ।কিন্তু কাজের বাইরে একটু অন্যরকম 

বেপরোয়া ও খোলামেলা- বিন্স ।


প্রতিটি স্বপ্নের একটা প্রবেশপথ থাকে |ইটস জাস্ট লাইক এ বাবলস |বুদ্বুদ সৃষ্টি আর তার মধ্যে প্রবেশ .পার্থিব জগৎ আর স্বপ্নের জগৎ একটা সমান্তরাল দুনিয়া চলে |বুদ্বুদে ঢুকে পড়া আমি কে দেখতে থাকে আর এর আমি ,দ্রষ্টা আমি |

সে রাতে ও স্বপ্ন এলো |একটা বুদ্বুদ এ ঢুকে ভাসছি | অন্য একটি বুদ্বুদে আথিরা কে দেখছি |বুদ্বুদ দুটো কাছাকাছি এলো | আথিরা হাত রাখলো বুদ্বুদ এর দেওয়ালে আমিও ছুতে চেয়েও পারলাম না |আমার ঘেরাটোপ ছুঁয়ে ভাসতে ভাসতে বুদ্বুদ চলে যাচ্ছে |আমার কোনো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না সেও আস্তে চাইছে কিন্তু বুদ্বুদ উড়ে উড়ে দূরে চলে যাচ্ছে আর এক সময়  তা ভ্যানিশ হয়ে গেল|


*আথিরা *

রবিবার ঘুম থেকে উঠে মনে হচ্ছে একটা কিছু নেই .মন ভালো নেই .ডাইনিং প্লেস এ জানলার পর্দার সরাতে উজ্বল সকালের আলো লাফিয়ে পড়লো . ব্যালকনি তে এসে দাঁড়ালাম. সামনে যত দূর দেখা যায় পুরোটাই ব্যাক ওয়াটার ল্যান্ডস্ক্যাপ ।

"ফোন নাম্বার ইস নোট রিচেবল " আথিরা নট রিচেবল। 

মনে পরে গেল কিভাবে প্রথম দেখা হয়েছিল .সেটা ছিল এইরকম ই এক রবিবার.গেছিলাম "এর্নাকুলাথাপ্পান টেম্পলে " । মন্দির টি ১৮৪০ এ তৈরী একটি প্রাচীন শিবের মন্দির .অনেকটা জায়গা জুড়ে শহরের মধ্যেই অবস্থিত .রোববার এর জন্য ভিড় বেশি .ছেলেদের আর মেয়েদের লাইন পাশাপাশি কিন্তু ঢিমে তালে এগোচ্ছে.প্রবেশদ্বার এর কাছে পৌঁছেছি আর পুরোহিত আটকালো.মালায়ালম এ কিছু বলতে লাগলো আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না !পাস থেকে মহিলাদের সারি থেকে কেউ একজন বলে উঠলো "দে আর সয়িং তো পুট অফ ইওর শার্টস এন্ড এন্টার"।

ইটস টি রিচুয়াল হিয়ার। 

তড়িঘড়ি জামা খুলেই ঢুকলাম. লাইন এগোতে থাকলো ।সেও পাশে পশে চলছে ।জিজ্ঞাসা করলো " ডোন্ট য়ু নো মালায়ালম"?

কথায় কথায় জানতে পারলাম তার নাম আথিরা বালাকৃষ্ণান ।

সাজের আতিশয্য নেই ,কেরালিয়ান ঘিয়ে সাদা সারি তাতে সোনালী পাড়আর তার সাথে একই কালার এর ব্লাউস .ব্লাউসে এর হাতায় একই সোনালী কাজ .কপালে ছোট্ট কালো টিপ্ তার উপর চন্দন এর সাদা ফোটা একটু সমান্তরাল এ টানা.আয়তকার চোখে টানা কাজল.খোলা কোঁকড়ানো কেশ রাশি ঢেউ খেলে নাকে গেছে. দু গাছি করে ছোট্ট বিনুনি বাকি কেশ রাশি কে বেঁধে রেখেছে .হাতে দুটি সোনার চুড়ি আর ছোট চেন গলায় .


গর্ভগৃহে দর্শন করে বাইরে এসে মন্দির  প্রদক্ষিণ করলাম| বেরোনোর সময় ছোট কলাপাতায় কিছু ফুল আর  চন্দন দিছিলো | আথিরা ইশারা করে বললো নিয়ে নিতে| ইতঃস্তত করছি কি করবো এগুলো নিয়ে আথিরাই সমাধান করে দিলো | বেলি ফুলের মালা গুলো খোঁপায় নিয়ে নিলো চন্দন একটু মধ্যম আঙ্গুল দিয়ে কপালে আর বুকের কাছে লাগিয়ে নিলো|

আমিও কপালে একটু ছুঁয়ে , শার্ট পরে মন্দিরের বাইরে বেরিয়ে এলাম.

 

আথিরা :(মৃদু হেসে বললো) হোপ নাউ ইউ টি টেম্পল রিচুয়ালস অফ কেরালা ।

নীল : ইআঃ ,এন্ড থ্যাংক ইউ ফর টি হেল্প । 

আথিরা: আর ইউ স্টেয়িং এট এর্নাকুলাম ।

নীল : ইআঃ ফর লাস্ট ফাইভ মান্থস । নিয়ার মেরিন ড্রাইভ ।

আথিরা :হাউ  ডু ইউ ম্যানেজ ?

নীল l:টি ওয়ে এ ব্যাচেলর মানাজেস দ্য হোল থিংস। ইউ নো ।

আথিরা :(তার বড় বড় দুষ্টউ  মিষ্টি চোখে ) ওহাই  ডোন্ট ইউ ফাইন্ড এ "পার্বতী "ফর ইউ?বলেই আরদাঁড়ালো না .

কি বলে গেল ? দেখি সে আর নেই .ভিড়ে মিশে গেল.


*আথিরা *

আথিরা কে সেই দিন দেখার পর কাজের চাপ এ প্রায় ভুলে গেছিলাম। এমন তো কত কি ঘটে । ঠিক তার সাত দিন পর স্পাইস মার্কেট যাচ্ছিলাম মাত্তানচেরি তে। এখানে এ হেন মসলা নেই যে পাওয়া যায় না। আজ রবিবার এ বিরিয়ানির বানাবো, তার মসলা জোগাড় করতে বেরোনো। 

সবকিছু নিয়ে স্ট্যান্ড এ আমার বুলেট এর দিকে যাচ্ছি ,দেখি একটি মেয়ে স্ক্যুটি স্টার্ট দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্টার্ট আর নিচ্ছে না। নিজে থেকে হেল্প করা ঠিক হবে কিনা ?আমি এগিয়ে গিয়ে আমার বুলেট এ চেপে বসছি। পিছন থেকে মেয়েটির গলা কানে এলো.ক্যান ইউ হেল্প মে প্লিজ নীল?

নিজের নাম শুনে দেখি অরে এ যে সেই "টেম্পল গার্ল " । বললো ইটস নট স্টার্টিং ।

মুখে উদ্বেগের ছাপ ,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ,কোঁকড়ানো চুল ভিজে ।কপালে চন্দন এর ফোটা ধেবড়ে গেছে ।আজ সাদা কুর্তির সাথে নীল লেগ্গিংস । কিছুক্ষন স্টার্ট করার চেষ্টা করে বুঝলাম এ আমার দ্বারা হবে না ।

নীল: ডোন্ট ওরি এই নো এ মেকানিক হিয়ার।লেটস গো দেয়ার।

মেকানিক বললো বিকালে দেবে .

আথিরা কে বললাম; উইল ইউ মাইন্ড ইফ আই ইনভিটে ইউ ফর লাঞ্চ উইথ মি ? আই স্টে নিয়ারবাই এন্ড প্ল্যানিং তো প্রিপেয়ার এ ডেলিসিয়াস বিরিয়ানি । 

আথিরা :নো নো আই ডোন্ট ওয়ান্ট তো পুট ইউ ইন ট্রাবল নীল। এই শ্যাল বইটি হিয়ার । 

 নীল :এনি রিলেটিভ ওর ফ্রেন্ড 'স হাউস নিয়ার বাই ? 

আথিরা : নো .

নীল : ওকে ,দেন নো মোর ডিসকাশন। লেটস গো টু মাই প্লেস এন্ড হ্যাভ লাঞ্চ উইথ মি ,প্লিজ ।

আথিরা :(দ্বিধাগ্রস্ত ) :ওকে ,লেটস গো দেন। 

বুলেট এর পিছনে একটু দূরত্ব রেখে বসলো।হেলমেট পড়ার সময় রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে দেখলাম সুন্দর স্বেত কপালে কালো ছোট টিপটা জ্বল জ্বল করছে ।মুখে হালকা প্রশান্থি ছড়িয়ে আছে ।

মেরিন ড্রাইভ ধরে এসে এপার্টমেন্ট এ ঢুকলাম .

বললাম মেক ওয়ারসেল্ফ কম্ফোর্টেবল 

ফ্রিজ থেকে অরেঞ্জ জুস নিলাম তাকে একটা গ্লাস এ দিয়ে নিজে নিয়ে ।ভেবেছিলাম আথিরা খুবই অস্বস্তি বোধ করবে এই বাড়িতে।

জুস এর গ্লাস নিয়ে সোজা চলে গেল ব্যালকনি তে ।

ব্যালকনি থেকে ব্যাক ওয়াটার এর দিকে চেয়ে আথিরা বললো 

ওয়াও নীল ,ইউ লাইভ ইন হেভেন ,ড্যাম বিউটিফুল ! 

নীল :আফটার অল ইটস "গডস ওন কান্ট্রি " এন্ড দেয়ার লিভড আথিরা ।

আথিরার দুধ সাদা গালে হালকা গোলাপি আবিরের রং চলে এলো .

আথিরা :সো হোয়াটসদ্য মেনু টুডে ?

নীল :ইটস সিম্পল চিকেন বিরিয়ানি ।

আথিরা :দেটস ডেলিসিয়াস ।উইল ইউ মাইন্ড ইফ এই কুক ইট ,বুট ইট বিল যে মালাবার বিরিয়ানি ?

নীল :ইটস অবসোলুটলি পারফেক্ট ।টেল মি হোয়াট ডু ইউ নিড ? 

আথিরা :লেট্ মে চেক । (একবার চোখ বুলিয়ে নিলো আমার সেল্ফ এ) ইটস এ ওয়েল ম্যানেজড শেলফ ।ই এনভি ইউ ,নীল । চোখে বিস্ময়,গালে টোল,দুটো গজ দাঁত -ডেডলি কম্বিনেশন ।

আথিরা :অল আর ওকে ।আই নিড সাম "ডালডা" বুট ক্যান যে মানাজেবল উইথ ঘী । এই নো ইউ নর্থ ইন্ডিয়ান পিপল প্রেফেস দেট ।  (বলে রাখা ভালো, সাউথইন্ডিয়া তে সবাই ভাবে আমাদের ভারত দুই ভাগে বিভক্ত , সাউথইন্ডিয়া আর বাকিটা নর্থইন্ডিয়া)। 

সুন্দর সময় জাস্ট উড়ে গেল । একসাথে রান্না করাতেও যে এতো আনন্দ তা তো জানতাম না ।

নীল : আথিরা,আই লাইক টু থ্যাঙ্ক ইউ ফর একোম্প্যানিং মি টুডে ,ওদের ওআইস ইটস টি সেম লাঞ্চ ,আই উসড টু হ্যাভ উইথ ময় সলিটারি লাইফ । 

আথিরা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল.

লাঞ্চ এর পর স্কুটি খোঁজ নিয়ে জানলাম আরো ঘন্টাখানেক লাগবে।

আমি আর আথিরা মেরিনে ড্রাইভ এ চলে এলাম . একটা বেঞ্চেবসে দেখতে লাগলাম বোট এর আনাগোনা .কিছুক্ষন পর মেকানিক ফোন করলো.

আথিরা স্কুটি তে বসে স্টার্ট দিয়ে বয়ে বলে এগিয়ে গেল. কিছুদূর গিয়ে ডাকলো নীই ই ল ..

এগিয়ে গেলাম.আথিরা আমার হাত এর ওপর আল্টো করে হাত রেখে বললো :"নিরবধি ন্যান্ড্রি " নীল।

হোপ মাই স্কুটি গিভ ইউ ট্রাবল সুন ।এবার আর দাঁড়ালো না.

সেলস হেড Mr Kutty 

 

প্রোডাক্ট লঞ্চ এরআর মাস ৪ দেরি । আজ সেলস হেড কে পুরো প্ল্যান এর একটা ধারণা দিতে হবে এবং সেলস টীম এর কাছে কি কি সাপোর্ট লাগবে আর কি সাপোর্ট দিতে পারবো তার একটা ডিসকাশন হবে। সকালে সাধারণত ফোন দেখিনা। সাধারণত সকাল ৫:৫০ এ আমার অ্যালার্ম বাজে। ঘুম থেকে উঠে মেরিন ড্রাইভ এ জগিং ,বাড়ি এসে এম. এস শুভলক্ষ্মীর "সুপ্রভাতম " মিউসিক সিস্টেম এ চলতে থাকে ।এতে মনে এক সুন্দর স্বর্গীয় আবেশের সৃষ্টি হয় ।সকালের এই শক্তি পুরোটা দিন কাজ করতে থাকে। টি বা কফি নিয়ে ব্যালকনি তে বসে মনে মনে দিনটা কে সাজিয়ে নি I আই প্যাড এ নিউস পেপার টা খোলা। আথিরা র মেসেজ ঢুকলো "বেস্ট বিশেষ ফর দ্য টুডে 'স প্রেসেন্টেশন "।

মার্কেটিং আর সেলস নদীর দুই পারে মতো।একসাথে না চললে যত ভালো স্ট্র্যাটেজি থাক না কোনো ,কোনো কাজে আসবে না। আমাদের সেলস হেড কুটটি একটু পুরানো ধাঁচের লোক। এই কোম্পানি তে অনেকদিন আছেন আর নিচের থেকে ওপরে উঠেছেন। অভিজ্ঞতা আর সম্মান দুটোই অর্জন করেছেন। একটাই অসুবিধা নতুন আইডিয়া সহজে মেনে নিতে পারেন না। 

বিন্সি কে বললাম ডাটা ঠিক রাখতে আর একবার চেক করে নিতে ।আমিও পুরো প্রজেক্ট প্ল্যান টা একবার চোখ বলিয়ে নিলাম ।

বিন্সির প্রেসেন্টেশন র পর কুটটি জী বললেন " ডেটা ইস ওকে। হোয়াট আই ফীল দ্যাট মার্কেট অপর্চুনিটিস আর হিউজ এন্ড উই উইল বি দ্য ফার্স্ট প্লেয়ার ।ওয়ান অফ আওয়ার কম্পেটিটর অল্সো ওয়ার্কিং ওন ইট। বাট হোয়াট ইস টি স্ট্রাটেজি ?হোয়াট সাপোর্ট সেলস টীম ক্যান এক্সপেক্ট ? 

নীল:(কুটটি অল্প হিন্দি বোঝে ) থোড়া ধীরজ রাখিয়ে কুটটি জী । ও ভি আয়েগা । প্লিজ হ্যাভ এ লুক ওন মাই প্রেসেন্টেশন ফার্স্ট।

আমার প্রেসেন্টেশন এর শেষে কুটটির কিছু সাজেশন নোট করে নিলাম। কয়েকটা নতুন ইনফরমেশন জানা গেল কুটটির থেকে। আমাদের প্রতিযোগী কোম্পানি টি ত্রিভান্দ্রাম থেকে অপারেট করে ।কিছু ডাক্তার এই কোম্পানি টি র শেয়ার হোল্ডার। তারা বিশেষ কিছু জায়গায় তাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে তাদের ওষুধ বিক্রি করে ,বলা যাই "পকেট সেল " করে। তার সাথে তারা দেয় স্পেশাল প্রোডাক্ট অফার ও ডক্টর সার্ভিস। .

কুটটি প্রমিস করলো যে ফুল সাপোর্ট দেবে এই প্রজেক্ট এ .

যেগুলো শেয়ার করলাম না সেগুলো হলো আমাদের প্রোডাক্ট টির কিছু বিশেস্বত্ব যেমন ফটো সেনসিটিভ প্রোডাক্ট প্যাকেজিং ,প্রাইসিং আর ট্রেড অফার । ম্যানেজিং ডিরেক্টর এর র ইন্সট্রাকশন।

ওভারঅল ভালো ভাবে উৎরে গেল .

বিন্সি: বস ইট সীমস দেট ইউ হ্যাভ সাকসেসফুলই কনভিন্সড মিস্টার কুটটি । 

নীল: ইয়েস ,বাট ইটস উই ।থ্যাংক্স ফর ইওর সাপোর্ট। 

বিন্সি :অনলি এ ড্রাই "থ্যাংক ইউ" !নিড এ পার্টি বস ।

নীল :ইআঃ শিওর ।বাট ইটস এ ট্রাডিশনাল সিটি এন্ড নো নাইট ক্লাব।সো ইস ইট ওকে ইফ হ্যাভ ডিনার এট "ওক এন্ড মংক "?  

বিন্সি :ওয়াও ...বস ..ব্যাং অন

 



বিন্সি ভার্গিস

 

বিন্সি ই প্ল্যান করলো  প্রথমে এডাপাল্লি  তে  সেন্ট জর্জ ফোরানো সিরো মালাবার চার্চ যাবে প্রাথর্না করতে তারপর লুলু মল । আজকাল বস আর অধস্তন এমপ্লয়ী রিলেশনশিপ অনেকটাই চেঞ্জ হয়েছে বিশেষ  করে কর্পোরেট দুনিয়া তে ।"বিশ্বাস" হচ্ছে কোনো টীম ওয়ার্ক এর মূলমন্ত্র ।

তাই এখানে সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম বিন্সি কে সাথ দেবার জন্য.দুজনেই অফিস থেকেই বেরোলাম প্রায় বিকেল ৪ টায়.বিন্সি হোয়াইট শার্ট কালো প্যান্ট ছাইরঙের প্যান্ট সাথে ম্যাচিং ফর্মাল জুতো .সাথে ছাই রঙের ব্লেজার ।হাথে সিকো  ব্র্যান্ড এর ঘড়ি আর গলায় সরু চেন ।চেন এ একটি সোনার পেন্ডেন্ট ক্রস দুটি কলার  বোনের মাঝে চক চক করছে . 

একটু আগে এর পশলা বৃষ্টি হয়ে যাবার জন্য একটা আরামদায়ক আবহাওয়া রয়েছে ।না গরম না ঠান্ডা.বুলেট এর পিছনে বসার আগে শার্ট একটু ঢিলা করে নিল।এই চার্চ  টি অনেকটা জায়গার নিয়ে তৈরী.বলা হয় এশিয়া র বৃহত্তম  সেন্ট জর্জ  চার্চ।

বুলেট  স্ট্যান্ড করে ভেতরে গেলাম। বিন্সি ফুলের তোড়া আর মোমবাতি নিয়ে প্রাথর্না হল এর দিকে গেল.আমি বসে রইলাম বাইরে.সূর্যাস্তের সময় চার্চ এর  শোভা আরো কয়েকগুন বেড়ে গেছে। 

মোবাইল এ একটা মেসেজ ঢুকলো .

আথিরা জানতে চেয়েছে মিটিং কেমন হলো. আর বললো সে নাকি সেই শিবের মন্দিরে প্রাথর্না করেছে এই প্রজেক্ট এ যেন আমি খুব ই সফলতা পাই.

বিন্সি বেরিয়ে এসে এলো বললো:ডু ইউ নো হোয়াট আই প্রেইড ফর ?

নীল: নো আইডিয়া বিন্সি 

বিন্সি: আই  প্রেইড ফর আওয়ার সাকসেস এন্ড স্পেশালি ফর ইউ ।

আর কিছু বললাম না.অনেক সময় একটু নীরব  থেকেও কারো ভাল দোয়া কে সম্মান জানানো যায়। 

কিছুক্ষনের মধ্যে লুলু  ইন্টারন্যাশনাল শপিং  মল এ ঢুকলাম .এশিয়া র বড় মল গুলোর মধ্যে একটি। 

কি নেই সেখানে,কার পার্কিং ,কনভেনশন সেন্টারে ,হোটেল, মাল্টিপ্লেক্স ওর অনেক কিছু..

বিন্সি প্রথমেই ফিমেল গার্মেন্টস এ ঢুকলো , বললো ওর সাথে যেতে।  এড়িয়ে গেলাম,বললাম পাশে বই এর স্টোরে আছি  ।একটু পরে পিঠে হাত পড়তে ঘুরে দেখি বিন্সি। 

বিন্সি একটু রাগত স্বরে :আই আস্কড ইউ সো মেনি টাইমস তো কাম উইথ মি  এন্ড ইউ হ্যাভ এভোইডেড । একচুয়ালি ইউ বেঙ্গালিস ক্যান্ট কাম আউট অফ ট্রাডিশনাল বসিসম I 

নীল : (শান্ত স্বরে )ইটস নোট লাইক দেট বিন্সি। এস ইউ আর ইন লঞ্জেরি সেকশন ,আই ফীল আনকমফোর্টেবলে।  I

বিন্সি :ইউ অনলি প্রিচ দেট আউটসাইড ওয়ার্ক নো বস নো সাবর্ডিনেট।  

নীল :হেসে বললাম ইআঃ ।দেটস ট্রু এন্ড ফলোইং হনেস্টলি । 

বিন্সি :ইউ উইন উইথ ইওর বেনেভোলেন্ট স্মাইল। ওকে লেটস গো ওক এন্ড মংক এস ইউ প্রমিসড।  

ওক এন্ড মংক এ  আমাদের একটা স্পেশাল টেবিল দিলো .সন্দেহ  নাই আসল চাইনিজ  খাবার এবং পরিবেশ দুটোই  রাতের ডিনার খুব ই জমিয়ে দিলো. তার সাথে বিন্সি র উচ্ছলতা মনের কোথাও ভেসে যাবার আহ্বান জানায়.

ফেরার সময় বিন্সি পিছনে অন্য ভাবে বসলো.আসার সময় দুই পা একদিকে ছিল .

দুহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললো ,উড ইউ মাইন্ড ,বস ?

আমি ফার্স্ট গিয়ার্ এ দিয়ে বললাম ,নট এট অল ,সেফটি ফার্স্ট ।হাই রোড দিয়ে বুলেট ছুটলো।

বাড়ির কাছে বিন্সি কে ড্রপ করে দিলাম.

বিন্সি :মাই জেন্টলম্যান নীল বস ,আ বিগ থ্যাংক ইউ ফর দি ডিনার ।

নীল : বাই , ডোন্ট ফরগেট দ্য টুমরো মিটিং উইথ ম্যানেজিং ডিরেক্টর অন প্রজেক্টস প্রোগ্রেশন। 

বিন্সি (আদুরে গলায় ):ফর ইওর ইনফরমেশন ,ইউ আর অলওয়েজ অন রাইট স্ট্রিং। বাট নাউ দ্য মোমেন্ট ইস রং।  

 

বাইক  ঘুরিয়ে স্টার্ট দিতে বিন্সি কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বললো "গুড নাইট নীল" আর তার সাথে আমার গালে  দিয়ে গেল তার ভিজে ঠোঁটের ছোয়া .

কিছু বলার আগেই ছুটে বাড়িতে ঢুকে গেল.

 

আথিরা 

প্রোডাক্ট লঞ্চ এর দুই মাস আগে।

 আথিরা আর নেই .না কোনো সূত্র , না কোনো মেসেজ ,না কোনো ফোন কল। এটাকে এইভাবে বলা যায় সে ভ্যানিশ হয়ে গেল ।মন উত্তর চাই কোনো ?এবং এটা তখন আরো বেশি করে হয় যখন একে অপরকে জানে মন থেকে .সেই জানা এমনি এমনি হয় না , বেশ কিছু ঘটনা পরম্পরা ,তার সাথে জড়িয়ে থাকা আচরণ আর ছোট ছোট ইঙ্গিত ,অনেক বার্তা বহন করে আনে।

আথিরা র কথা মনে পড়লে তার সেই ছোট ছোট আচরণ মনের ধারণা কে আরো শক্ত করে দেয় যে সেও একই টান অনুভব করে ।তবুও সে আজ নেই ।

সকাল এ উঠে কফি করে এনে ব্যালকনি তে দাঁড়ালাম ।সব ঠিকঠাক চলছে সূর্যের আলো ব্যাক ওয়াটার এরওপর প্রতিফলিত হয়ে আমার চোখে লাগছে । মনে তার চেহারা ভাসছে ।এবং লক্ষ্য করলাম মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি বিরাজ করছে ।তার পরেই উতলা হচ্ছে একটা ফোন ও কেন এলো না।

আমার কাছে খোঁজ করার কোনো রাস্তা নেই.না জানি তার হোস্টেলএর ঠিকানা বা তার বাড়ির ঠিকানা।আর সেখানে গেলেই বা কি বলে খোঁজ করবো? ভিন রাজ্যে কোনো মেয়ের খোঁজ করা সমীচীন নয়।

উঠে পড়লাম ,বসে থাকা যাবে না আর বেশি দিন নেই নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ এর ট্রেড অফার এর সিদ্ধান্ত একটা ঠিক করেছি কিন্তু সেটা এখনই সার্কুলার দেব না।এটা এবং আরো কয়েকটি সিদ্ধান্ত একদম শেষ মুহূর্তে ডিস্ট্রিবিউটের ও সেলস টীম কে জানাবো.ম্যানেজিং ডিরেক্টৰ এর কাছে কাল রাতে ভিডিও কনফারেন্সিং এ কথা বলে সব অনুমোদন আনিয়ে নিয়েছি.ডিরেক্টর যেভাবে এগোচ্ছি ,তাতে খুশি।

বিকেলে একবার কোচিন ইউনিভার্সিটি যাবো ভাবলাম,পরে ভেবে দেখলাম যে যখন এসেছিলো তখন তো তো জানতে চাইনি কেন এসেছিলো , গ্রহন করেছিলাম . চলে যাওয়া কেন মেনে নিতে পারছি না ....মন কে বললাম "ব্লিস ইস ইন একসেপ্টেন্স "

বাড়ির দিকে ফিরলাম।

 

নীল

বাড়ি ঢুকতেই বিন্সি র ফোন এলো .

বিন্সি :হেই নীল এনিথিং হেপেনড টু ইউ ? য়াই ফীল সামথিং ইস নট ওকে । হোয়াট হাপ্পেনেড ?

নীল : নাথিং বিন্সি । থাঙ্কস ফর ইওর কল .

বিন্সি :ইউ নো বস মাই মম উসড টু সে মি "নাথিং মিন্স সামথিং " হোয়েন আই আনসার্ড দি সেম লাইক ইউ ফর এনি অফ মাই মমস কোয়েরি ।এন্ড টু গ্রেট এক্সটেন্ট -মাই মাদার ইস কারেক্ট ।

নীল :উইল টেল ইউ ইফ ইটস এনিথিং। .......ডোন্ট ওরি ।আই এম ফাইন । 

বিন্সি : গ্রেট (মুআহ্হ ) -গুড নাইট নীল ।

আজ রাতে ঘুমোবার জন্য ট্রাংকুলাইজার দরকার ।ক্লাসিকাল সংগীতের থেকে ভালো আর কি হতে পারে।পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার চন্দ্রাকোষ রাগের ওপর একটি ৪০ মিনিট এর পারফরমেন্স সিলেক্ট করলাম ।রাগ চন্দ্রাকোষ কাফি ঠাট ওপর তৈরী.. ...। শোনার প্রকৃত সময় রাত ৯-১২। পাঁচটি সুর এতে লাগছে সা গা মা ধা নি ।পুরানো ফরমেট এ ,গা আর নি কোমল কিন্তু নতুন ফরমেট এ গা আর ধা কোমল.নি শুদ্ধ থাকার জন্য সুরের উত্তেজনা কে চরম পর্যায় এ নিয়ে যায়.তাতে রাগ টি তে বাড়তি এক কোমলতার সৃষ্টি করে।এ যেন উত্তেজনার চরম মূহ্র্তের পরে প্রশান্তি. ধীরে ধীরে ঘুম এলো চোখে।

 

 স্বপ্ন সচেতন মনে ওপর একটি পর্দা ফেলে দেয় |Sমনের এ এক অন্য স্তর |একটা সমান্তরাল দুনিয়া অবচেতন চিন্তার প্রকাশ|

সে রাতে ও স্বপ্ন এলো | স্বপ্নে দেখ্লাম আথিরা কোনো এক পর্দার আড়াল থেকে বাঁচানোর জন্য আমার নাম ধরে ডাকছে বলছে ...সেভ মি .....নীল ..সেভ মি , আর কেঁদে চলেছে ।তার হাত দুটো প্রানপনে আমার বামহাত টা ধরে আছে ,তার নখ আমার হাতে বসে যাচ্ছে ... ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরছে আমার হাত থেকে,সে বাঁচতে চাইছে ,কি করবো বুঝতে পারছি না ..জেগে উঠতে চাইছি কিন্তু উঠতে পারছি না. হাতে মনে হচ্ছে পিন ফুটছে ..মরিয়া হয়ে আথিরা কে পিঠের দিক থেকে তুলে এনে ফেললাম |আর সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের জাল কেটে বেরিয়ে এলাম| মনে হলো একটা নীলাভ আস্তরণ ঢাকা ছিল আমার ওপর । সেটা চিরে বেরিয়ে এলাম।উঠে দেখি ঘেমে গেছি আর মাথা ঝিম ঝিম করছে ।কি হলো আথিরার ?

 ঘরে নীল লাইট ল্যাম্প জ্বলছে ।ব্যালকনি তে এসে দাঁড়ালাম ।ব্যাক ওয়াটার এর দিক থেকে ঠান্ডা তাজা হাওয়া আসছে ।ভালো লাগছে ।প্রায় ৪ টা বাজে ।বিন ব্যাগ সোফা র ওপর শরীর টা ছেড়ে দিলাম।পা দুটো সামনে বালিশে রেখে একটা চাদর জড়িয়ে । সূর্যের আলো দেখতেই হবে ।

দেখবো কি?

 

নীল

নিঃসঙ্গ থেকে জীবন ভালোই কাটে বিশেষ করে অবিবাহিত হলে,কিন্তু কয়েক দিনের জন্য জীবন এ কেউ এসে তারপর চলে গেলে ,মন তাকে বয়ে নিয়ে চলে। আর এই নিঃসঙ্গতা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠ। ভালোই ছিলাম নিজের পেশা ,পেশাগত উচ্চাকাঙ্খা ,আর তার জন্য নিজেকে তৈরী করা নিয়ে. আথিরা এসে সব এলোমেলো করে দিলো . আজ রবিবার আরো বিশেষ করে মনে পড়ছে তার কথা |

নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ এর আর আড়াই মাস দেরি আছে |খুবই ব্যাস্ততার মধ্যে দিন কাটছে| প্রোডাক্ট এর প্যাকেজিং একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক.|নতুন এই ইনজেকশন টি ফটোসেনসিটিভ মানে সূর্যের আলোতে এটার কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। তাই এর এম্পুল টি তৈরী হবে বিশেষ এক প্রকার এর এম্বার কালার এর |এছাড়া কালো পিভিসি ফয়েল সাত টি এম্পুল এর প্যাকেজিং কে দ্বিগুন রক্ষা করবে সূর্যের আলো থেকে |এই বিশেষ ভাবে তৈরির নির্দেশ আমার পরিকল্পনা ,সাথে অবশ্যই এম.ডি র এপ্প্রুভল তো আছেই. কিন্তু আমার কোনো প্রেসেন্টেশন এ এটি প্রকাশ করিনি| সেই অনুযায়ী ম্যানুফ্যাকচারিং ও চলছে|

শনিবার আথিরার সাথে দেখা করেছিলাম ফোর্ট কোচি তে|

নীল :আথিরা লাস্ট ফিউ দেশ আই এম ওয়ার্কিং ডে এন্ড নাইট ফর মাই প্রজেক্ট ।সো নিড আ ব্রেক ।ক্যান উই প্ল্যান টুমোরো ফর এ আউটিং ,ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ? 

আথিরা : (খুব উত্তেজিত হয়ে )রিয়েলি ,উই উইল স্পেন্ড ফুল ডে টুগেদার ?বাট ওহের ?

নীল : আই থট অফ চেরাই বিচ I হোয়াট ডু ইউ সে ?

আথিরা :ইটস পারফেক্ট নীল । দেন উই উইল টেস্ট লোকাল ফুড টু ।কেরালীয়ান ফিশ কারি মিল ।হোয়াট ড ইউ সে ?ইস ইট ওকে নীল ?

নীল :ইন কেরালা ,বি কেরালিয়ান ।এন্ড ইফ আথিরা ইস উইথ মি দেন আই ক্যান টেক পয়সন টু ,ব্লাইন্ড লি । 

কথাটা শুনে আথিরা অবাক হয়ে চেয়ে থাকলো আমার মুখের দিকে এক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে এলো আর আমার হাত টি শক্ত করে ধরে রইলো .

আমি একদিকে সাক্ষী হয়ে রইলাম আরেক টি দামি সূর্যাস্তের.

এর্নাকুলাম থেকে ২৫ km দূরে ভাইপিন দ্বীপ এ চেরাই বিচ |১০ km লম্বা এই বিচ এর মেজাজ খুবই নরম |প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি |

সকাল ৮ টায় আথিরা চলে এলো তার স্ক্যুটি করে | সঙ্গে ঢুকলো একমুঠো জুঁই ফুলের সুবাস। প্রসাধন নেই বিশেষ |ট্রাডিশনাল পোশাকে - গাঢ় সবুজ ব্লাউস লম্বা হাতা আর কাঁচা হলুদ রঙের ঘাগড়া .ঘাগড়া তে চওড়া সবুজ পাড় ও তাতে সুন্দর কারুকার্য্য |সবুজ পাতলা ওড়না কোমর কে বেষ্টন করে ডান হাতের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের ওপর ক্লিপ দিয়ে আটকানো | চুলের একটা অংশ টেনে পেছনে বাঁধা বাকি টা পিঠের ওপর পরিপাটি করে বিন্যস্ত |সাদা জুঁই ফুলের মালা কালো চুলে এক সুন্দর বৈপরীত্ব তৈরী করেছে। কপালে কালো টিপ্ আর তার ওপর চন্দনের ফোঁটা |একটা ফোঁটা গলাতেও |কালো দুল আর গলায় কালো হার |আর হাতে দু গাছি করে সরু সোনার চুড়ি|এই আগুন রূপ এ কাকে পোড়াবে কে জানে?

 

এসেই প্রসাদম দিলো মানে কলাপাতায় ফুল আর চন্দন। আর বললো "মে অল ইওর উইশ বি ফুলফিলড "। আর একটু চন্দন আমার কপালে দিতে এসে দেখে আমি তৈরী হইনি । ল্যাপটপ খোলা আছ। 

আথিরা রেগে তাড়া লাগলো "স্টিল উইথ ল্যাপটপ গেট রেডি ,হারি উপ প্লিজ "

উপায় নেই দেখে ল্যাপটপ সেই অবস্থায় রেখে বাথরুম এ ঢুকলাম। কুড়ি মিনিটে বেরোলাম । ল্যাপটপ টা বন্ধ করা হয়নি তখন । দেখি আথিরা বন্ধ করে পরিপাটি করে ঘুছিয়ে রেখে দিয়েছে। 

আজ বুলেট না নিয়ে হোন্ডা সিভিক টা নিয়ে বেরোলাম। কেরালা তেই কিনেছি এক গাড়ীর ডিলার এর কাছে। সেকেন্ড হ্যান্ড হলেও খুব ভালো অবস্থায় পেয়ে গেছিলাম,দুধ সাদা রং । গাড়িতে ওঠার আগে আথিরা চন্দনের টিকা আমার কপালে আর গাড়ীর বনেট এ এঁকে দিলো 

চেরাই যাবার পথ খুবই সুন্দর। চেরাই ঢোকার কিছু আগে দু পাশে ব্যাকওয়াটার আর তার মাঝে দিয়ে রাস্তা চলে গাছে। সত্যি "ভগবানের নিজের দেশ "। 

 সমুদ্র বা পাহাড় বা প্রকৃতির সুন্দরতা মানুষের মনে এক অনাবিল আনন্দ এনে দেয় । এইসময় মন বলে বস্তুটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকেনা কিছু মুহূর্ত। এক দ্রষ্টা দেখছে তার স্রষ্টা কে। 

এটাই হয়। আথিরা একেবারে বাচ্চা হয়ে গেছে। গাড়ী থেকে নেমেই গাঘড়া টা দুহাতে গোড়ালির উপর তুলে ছুট দিলো সমুদ্রের দিকে। কাছে গিয়ে দেখি একটু এগোচ্ছে আবার ধু আসলে পিছিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র এখানে খুবই নমনীয়। এবার পা টা একটু ভিজতে সূর্যের আলোতে গোড়ালির ওপর নুপুর ঝিলিক দিল। ক্রমাগত আমাকে ডেকে যাচ্ছ। "কামঅন নীল ,ফাস্ট... "

এ এক অদম্য প্রাণের হাতছানি, এড়ানো দুঃসাধ্য। আথিরা কাছে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল 

আর পেছল না একটা ঢেউ এসে দুজনকেই ভিজিয়ে দিলো। 

সমুদ্রের পার বরাবর দুজনে হাত ধরে হাটতে থাকলাম। মাঝে মাঝে ঢেউ এসে পা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা গাইছে আথিরা আর আমার হাত টা নিয়ে দোলাচ্ছে। জানতে চাইলাম কি গান এটা?

আথিরা:ইটস টাফ ফর মে টু ট্রান্সলেট এক্সাক্টলি ।ইটস এ সং ফ্রম টি মালায়ালম ফিল্ম "প্রেমম "।ইট গোস লাইক থিস "থেলিমনাম মারহাবিলিন নিরামনিয়ুম নীড়ম .......মালারে।  

যদিও মালাৰে টাই শুধু বুঝতে পারছি।  গুন্ গুন্ করতে আমার বাম হাত টা দুহাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখল। 

সূর্যের তাপ একেবারে নেই বাম দিক সমুদ্রের থেকে হালকা হাওয়া দিচ্ছে। তার নরম কোঁকড়ানো কেশরাশি আমার মুখের ওপর পড়ছে। হালকা একটা সুগন্ধ আসছে। স্বর্গ কি অন্য কোথাও আমার জানা নেই। কি একটা হলো তার হাত দুটো ধরে বললাম (কবি নির্মলেন্দু গুন্ এর থেকে নিয়ে )

       শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,

     ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন।

       শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,

     অহংকারে মুছে যাবে সকল দীনতা।

       শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,

     স্পর্শসুখে লিখা হবে অজস্র কবিতা।

       শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,

    শুধু একবার পেতে চাই অমৃত আস্বাদ।

       শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,

     অমরত্ব বন্দী হবে হাতের মুঠোয়।

       শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,

     তারপর হব ইতিহাস।

আথিরা কি বুঝলো কে জানে !বোধহয় হৃদয় যখন হৃদয়ের সাথে কথা বলে তখন বাইরের শব্দ গুলো নিঃশব্দ হয়ে যোগাযোগ স্থাপন করে। আথিরা আমারদুটো শোর কাছে এগিয়ে এলো আর মুখটা আমার মুখের কাছে তুলে ধরল। চোখ দুটো বন্ধ আর ঠোঁট দুটো ঈষৎ খোলা। সূর্যের আলো 

 কপালের ঘামে ঠিকরাছে। মনে হচ্ছে দেহের সব রক্ত মুখে ছুটে  এসে জমা হয়েচে। লাল একটা আভা। দুহাত দিয়ে আলতো করে মুখটা তুলে ধরলাম। আমার ঠোঁট ছুলো তার কপাল আর আয়ত দুটি চোখের পাতাকে । আমাকে জড়িয়ে ধরে বিকে মাথা রাখলো পরম নির্ভরতায়। 

 আথিরা ,আই ফাউন্ড মাই "পার্বতী "। 

 

 

 

এরপর আথিরা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেলো। কিছু যেন গভীর ভাবে ভাবছে। লাঞ্চ এ যথারীতি কেরালীয়ান ফিশ কারি মিল নিলাম । কলাপাতায় পরিবেশন করলো। কলা ভাজা , বাঁধাকপি -গাজর কালো জীরে দিয়ে ভাজা সেদ্ধ , আভিয়াল  চেরায়াম পরিপ্পু ,কেরালা সাম্বার ,থাক্কালি কারি ,কারি মিন ফ্রাই। ফিশ কারি (সব ই নারকেল তেল দিয়ে তৈরী) । তার সাথে "কারিঙালি ভেল্লাম"(হার্ব মেশানো পানীয় জল,হালকা লাল রং )। 

আথিরা খুব ভালো করে খেলো না। যতই চেষ্টা করুক মনের মধ্যে কিছু একটা ঝড় চলছে যেটা চাপা দিতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না । অবশ্য মেয়েদের মনের তল কেই বা জানতে পারে !

জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে ?কিছু না বললে শুধু চেয়ে রইলো আমার দিকে সনয়নে। হাত তা শুধু ধরে রইলো সবসময়। 

ফেরার সময় হালকা একটা স্যাক্সোফোন জ্যাজ মিউজিক চালিয়ে দিলাম। পাশে সিট তা নামিয়ে আথিরা ঘুমিয়ে পড়লো। হাত গুলো বুকের কাছে জড়ো করে  পা গুটিয়ে শুয়ে আছে। মাথা টা বাম দিকে হেলানো।ঘাগড়ার ধার গুলো এখনো ভিজে তাতে বালি লেগে আছে ,সোনার নুপুর ধব ধবে সাদা পায়ে গোড়ালির কাছে ঝুলে আছে ।গাড়ি টা পাশে দাঁড় করলাম। সিট বেল্ট টা ঠিক আছে কিনা দেখে নিয়ে একটা বালিশ মাথার কাছে দিয়ে দিলাম। পেছনের সিট থেকে পাতলা একটা চাদর এনে ঢেকে দিলাম। 

আমার এপার্টমেন্ট এ ফিরে আথিরা ফ্রেশ হয়ে নিলো। তার নীরবতা দেখে থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম " আথিরা ডিড আই হার্ট ইউ ?

আথিরা : নো নীল । আবার নীরব। কিছু একটা বলতে গিয়ে যেন থেমে গেল। আর বললো " আই বিল কাম সুন নীল "গলাটা তার কেঁপে গেল কি। দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজার নব টা ঘুরিয়ে আবারো থেমে গেল। আর পারলো না। নীল ....বলে ছুটে এসে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ রেখেছে । পিঠটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমার বুকে তার চোখের উষ্ণ প্রস্রবণ। একটু সামলে নিয়ে মুখ তুলে বললো "প্রমিস মি নীল ইউ বিল নেভার লিভ মি "।

চোখের জল মুছিয়ে দিলাম। সে আমার ঠোঁট স্পর্শ করলো । আমরা স্থাণুবৎ হয়ে রইলাম। 

সময় কি স্থির এখন !আশ্চর্য রকমের শান্ত আমার মন। দরজা খুলে আথিরা চলে গেল।

জানতেও পারলাম না এই দেখা শেষ দেখা। 


প্রোডাক্ট লঞ্চ মিটিং 

অফিস এ ঢুকতেই বিন্সি জানালো সেলস টীম কে ব্রিফ করার জন্য একদিনের মিটিং থাকছে পরের সোমবার, KTDC , WATERSCAPES । কমিউনিকেশন টীম এইমাত্র কন্ফার্ম করেছে। আমি নিজেও চাইছিলাম একটু প্রকৃতির মধ্যে কিছু সময় কাটিয়ে আসতে। আথিরার সাথে কোনো ভাবেই আর যোগাযোগ করতে পারিনি। সে যেন আমার জীবনে কোনোদিন ছিল না শুধু একটা স্বপ্ন -ভোর রাতের। 

ঠিক করলাম শনিবার নিজের খরচে ওই হোটেল এ থেকে যাবো। রবিবার হাউস বোট এ ঘন্টাখানেক সময় কাটানো যাবে। একদম একা । চমক ভাঙলো বিন্সি র ডাকে। 

বিন্সি :হোয়াট্স ইওর প্ল্যান বস ?

নীল : এস উসুয়াল। মে বি উই ক্যান চেক-ইন ও সানডে উইথ সেলস টীম। 

বিন্সি :বস লাস্ট ফিউ ডেস ইউ আর ডিস্টার্বড ,আই হ্যাভ অবসার্ভড। দো ইউ অরে নট শেয়ারিং এনিথিং পার্সোনাল উইথ মে ,বাট ইউ নো (একটু থেমে ) ইউ আর ফরগেটটিং আই এম এন ওমেন টু.

নীল : ডোন্ট ওরি বিন্সি ,নাথিং সিরিয়াস। অনলি ঠিক প্রজেক্ট শুড বি কমপ্লিটেড সাকসেস্ফুললি। 

     উল্টে আমি জিজ্ঞাসা করলাম " ডু ইউ হ্যাভ এনি ডিফারেন্ট প্ল্যান ?হাউ উদ ইউ লাভ টু রিচ থেয়ার ? 

বিন্সি : নীল ,উইথ ইউ ,এ ডে বিফোর। 

     এইরকম সোজাসুজি উত্তর আসা করিনি। বিন্সি ই পারে মন আর মুখ এক রাখতে। 

নীল :হোয়াই মি ?

বিন্সি :ইউ আর এ গ্রেট বস ,উইথ আটমোস্ট প্রফেশনালিজম ,গুড ফ্রেন্ড এন্ড উইথ ইউ আই ফাইন্ড মাই ট্র্রু সেলফ। আই ফীল সো এস্টেটিক। 

নীল :ওকে ডান …..হ্যাপি ?

ভেবে দেখলাম আগে গেলে সব ব্যবস্থা দেখে নেওয়া যাব। সেলস টীম এর সাথে এই লঞ্চ মিটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো প্ল্যান তাদের ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারলে আর তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে আমাদের জয় অবধারিত। তারাই তো প্রোডাক্ট টা উপস্থিত করবে ডাক্তার দের কাছে। 

নির্ধারিত দিন এ ৯ টার সময় বিন্সি কে গাড়ি তে তুলে নেবার জন্য টার বাড়িতে গেলাম । আজ তাকে নীল জিন্স আর সাদা টপ এ আরো উজ্জ্বল লাগছে। 

এর্নাকুলাম থেকে কুমারকম যেতে সময় লাগবে ঘন্টাখানেক। রাস্তায় থেকে প্রাতরাশ করে নিলাম। আমি নিলাম "পুট্টু আর কাদালাকারী । চাল গুঁড়ো আর নারকেল পাইপ আকৃতির পাত্রের মধ্যে ভরে জল দিয়ে সেদ্ধ করা হয় । চানা সেদ্ধ করে মসলাদার তরকারি হলো কাদালাকারী। বিন্সি নিলো পরোটা আর বীফ ফ্র্যাই। সঙ্গে কফি। কেরালার এই ব্রেকফাস্ট টি অনেকটাই আলাদা হলেও খুবই প্রচলিত এখানে। 

গাড়ি তে ওঠার আগে বিন্সি বললো " য়ু নো বস জার্নি ইস বিউটিফুল ইফ পার্টনার ইস আইডিয়াল "।

আমি বললাম "উই আর এ গুড টিম "

বাকি রাস্তা টা সে ই বকবক করে গেল আর আমি স্যাক্সোফোন জ্যাজ চালিয়ে দিয়ে রাস্তায় মন দিলাম। 

KTDC ওয়াটার স্ক্যাপ ভেমনাদ লেকের ওপর ব্যাক ওয়াটার রিসর্ট । কুমারকম বার্ড সংক্চুয়ারির মধ্যে এটি অবস্থিত। সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখিরা প্রতিবছর এখানে আসে। দুটো কটেজ বুক করা ছিল । চেক ইন করলাম। নামেই কটেজ । আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহযোগে স্যুট রুম।

লাঞ্চ এর জন্য বিন্সি র পরিকল্পনা মতো গেলাম একটা "টোডি শপে"। কেরালার স্থানীয় কুটির শিল্প বলা যেতে পারে। 

জিজ্ঞাসা করলাম “টোডি ” কি ভাবে তৈরী করে?

বিন্সি ই জানালো “টোডি ইস প্রিপেয়ারড আউট অফ ফার্মেন্টেশন অফ পাম ওর কোকোনাট ওয়াটার । ইট কনটেন্স ৪-৬% এলকোহল ।ইট শুড বি টেকেন উইথ স্পাইসি নন ভাগ আইটেম  

আমরা ঢুকলাম "পল্লীপাদাম "টোডি শপ এ। গ্রামের পরিবেশ এ তৈরী হোটেল। লম্বা প্যাসেজ ,তার দুপাশে কাঠের তৈরী কেবিন। একদম শেষে রান্না ঘর। 

এখানে পাওয়া যায় চিংড়ি ,কাকঁড়া ,নানা রকম সামুদ্রিক ও ব্যাক ওয়াটার ফিস। এমনকি ডাক ,টার্কি ,বীফ,পর্ক,আর খরগোশের মাংস। 

বিন্সি নিলো এক গ্লাস টোডি আর ডাক রোস্ট। আমি নিলাম টাপিওকা ,কলাপাতায় মশলা দিয়ে সেদ্ধ কারিমীন ,পাল আপ্পালাম ,তারাভু কারি (মসলাদার হাঁসের মাংস)। 

হোটেল এ ফিরে এসে বিন্সি টোডি র গুনে একটু বেসামাল হতে লাগলো। কথা একটু জড়িয়ে যাচ্ছে "থিস ইস দি মোস্ট হাপিয়েস্ট মোমেন্ট ,স্পেন্ডিং উইথ ইউ নীল "। বেগতিক দেখে তাকে রুমে দিয়ে চলে আসতে চাইলাম। বিন্সি অনুরোধ করলো আমাকে থাকতে। তাকে আমি রেস্ট নিতে বলে বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসলাম। আথিরা কে ফোন করার বৃথা চেষ্টা করলাম "নাম্বার ডাস নোট এক্সিস্ট "।

 

 

~KTDC waterscape~


 পাখির কলরব এ ঘুম ভাঙলো। চেয়ার এ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সামনের চেয়ার এ দেখি বিন্সি বসে। "নীল ,ইউ অরে লুকিং সো কিউট বহিলে স্লিপিং " । উঠে পরে বললাম "লেটস গো ফর এ ওয়াক "। বিন্সি কে ফ্রেশ লাগছে ,মনে হয় ভালোই ঘুমিয়েছে। উঠে চেঞ্জ ও করে নিয়েছে। হালকা নীল সালোয়ার স্যুট এ দিব্বি মানিয়েছে। চুল গুলো পিছনে টেনে বেঁধে নিল। আমরা বীথি র মধ্যে দিয়ে চলে এলাম ব্যাক ওয়াটার এর দিকে চেয়ার নিয়ে বসে কফি নিলাম। লাল হলুদ রঙের আকাশ এ সন্ধ্যে নামছে। নুইয়ে পড়া নারকেল গাছের মধ্যে দিয়ে সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে। সন্ধ্যে নেমে গেলে একই রাস্তা ধরে হাটতে লাগলাম। আধো অন্ধকার। কিছু দূর দূর আলোর ব্যবস্থা আছে। হটাৎ বিন্সি "হোয়াট্স ডেট ?" বলে চেঁচিয়ে উঠে আমার হাত দুটো জড়িয়ে ধরলো। ভালো করে দেখি একটা কচ্ছপ রাস্তা তা পার হচ্ছে। মনে হয় ব্যাক ওয়াটার এর যে নালা টা সামনে আছে সে দিকে যাচ্ছ। 

বিন্সি সি ইটস এ টার্টল অনলি । হাতে করে অন্য রাস্তার অন্য দিকে রেখে দিলাম। 

বিন্সি: (ভীত স্বর এ ) ক্যান ই হোল্ড ইওর হ্যান্ড নীল ? আমাকে কিছু বলার না সুযোগ দিয়ে হাত ধরে রইলো। 

আর একটু পরেই ধাতস্ত হয়ে গান ধরলো স্টিভ ওয়ান্ডার এর…

 "No New Year's Day to celebrate

No chocolate covered candy hearts to give away

No first of spring, no song to sing

In fact, here's just another ordinary day

No April rain, no flowers bloom

No wedding Saturday within the month of June

But what it is, is something true

Made up of these three words that I must say to you

I just called to say I love you

I just called to say how much I care

I just called to say I love you

And I mean it from the bottom of my heart

No summer's high, no warm July

No harvest moon to light one tender August night

No autumn breeze, no falling leaves

Not even time for birds to fly to southern skies

No Libra sun, no Halloween

No giving thanks to all the Christmas joy you bring

But what it is, though old, so new

To fill your heart like no…

আমার কটেজ এ ডিনার টা আনিয়ে নিলাম। ডিনার এর পর বিন্সি বললো সে ভয় পাবে একা। 

বিন্সি :নীল আই ফিয়ার তো স্পেন্ড দি নাইট অ্যালোন ইন ময় কটেজ ।ইটস উইথিন জঙ্গল ।ক্যান ই স্লিপ হেয়াৰ ?

নীল :দেন ওহের ডু আই স্লীপ ?এত ইওর কটেজ ?

বিন্সি :হেসে, আই ক্যান স্লীপ বিসাইড ইউ উইথআউট এনি সিঙ্গেল থট অফ হেজিটেশন ! 

নীল :(ফার্মলি সেড ) নো .আই শ্যাল ড্রপ ইউ টু ইওর কটেজ ।লক ইনসাইড প্রপারলি ।কল মি ইন কেস অফ ট্রাবল ,এনি টাইম । 

    তাকে তার কটেজ এ দিয়ে চলে আসছি ,বিন্সি বললো 

বিন্সি:নীল দো যু আর মাই বস ,বাট আই ডোন্ট নো ওহাই ইওর আলুফনেস ড্রস মোর টুওয়ার্ডস ইউ !

বলে ঘনিষ্ট ভাবে বাম হাত দিয়ে আমার কোমরে জড়িয়ে ধরে ডান হাত মাথার পেছনে চুলে হাত দিয়ে তার দিকে টেনে নিলো। দ্রুত নিঃস্বাস চলছে। মাদকতা গ্রাস করছে। 

তার কাঁধে হাত রাখলাম আর শান্ত ভাবে বললাম "বিন্সি আই নিড সাম টাইম। গুড নাইট "।

ভালো ভাবে লক করতে বলে দরজা টা টেনে বেরিয়ে এলাম


প্রতিদিনের মতো ঠিক সকাল ৫:৫০ এ "SIRI " জানান দিলো বিছানা ছাড়তে হবে। বাইরে এখনো অন্ধকার। বেরিয়ে এসে ডেক  চেয়ার এ বসলাম।শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে সুন্দর এক নাম জানা ফুলের গন্ধে জায়গা তা ভোরে আছে। সূক্ষ অথচ স্পষ্ট। "ফয়েজ আহমদ ফয়েজ " এর বিখ্যাত কবিতা "হাম দেখেঙ্গে" র কয়েকটি লাইন মনে এলো 

                     .....বাস নাম রহেগা আল্লাহ কা

                        যো গায়েব ভি হয় হাজির ভি 

                        জো মানসার ভি হয় নাজির ভি .....

 

হোটেল স্টাফ রা যাতায়াত শুরু করেছ। জঙ্গলের মধ্যেই দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে পৌঁছে গেলাম ব্যাক ওয়াটার এর দিকে। যতদূর দেখা যাই জল আর তার মাঝে ভেসে আছে চর। চরের ঘাস এর রং লাল ডিঙি নৌকা দিয়ে জেলেরা মাছ ধরছে। ব্যাক ওয়াটার এর দিক টা খুব ই নীরব যেন সিম্ফনি শুরুর আগের মুহূর্ত। বসে পড়লাম আর শান্ত জলের দিকে চেয়ে রইলাম। 

একটু পরেই আকাশ লাল করে সূর্য উঠে পড়লো আর পাখির কাকলি তে জায়গাটা ভরে উঠলো। 

বিন্সি আজ আর ওঠেনি। ব্রেকফাস্ট টেবিলে দেখলাম না। চিন্তা হচ্ছে। কালকের ঘটনা টা কতটা প্রভাব ফেলবে জানিনা। প্যাকেজে হাউস বোট সেলিং নেওয়া আছে। ৬ ঘন্টা ঘোরা হবে ,সঙ্গে থাকবে লাঞ্চ। বিন্সি র দরজায় নক করলাম। দেখি চোখ ফুলে আছে। জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে? সব ঠিক আছে কিনা। 

বিন্সি :ইটস ওকে বস ।

নীল : দ্যাটস গুড। লেটস মুভ এট হাউস বোট। 

বিন্সি :আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু গো বস। আই এম রিয়েলি নট ইন রাইট মাইন্ড । 

নীল : বিন্সি নো মোর ডিসকাশন। উই কেম টুগেদার এন্ড উইল সেইল টুগেদার।  

এরপর বিন্সি আর বেশি কিছু না বলে তৈরী হতে চলে গেল। একসাথেই উঠলাম। কিছুক্ষন পরে সব যাত্রীরা উঠে গেলে যাত্রা শুরু হলো। বোট টা একবার ঘুরে ছাদে বসার ডেক চেয়ার নিয়ে বসলাম। বিন্সি পাশেই বসল।। সাদা শার্ট প্যান্ট আর কালো চশমা সঙ্গে সাদা স্নীকার। পাশের ডেক চেয়ার এ বসে রোদ চশমা তা মাথায় তুলে নিলো ।

খুব ই চুপচাপ। কেউ নীরব থাকতে চাইলে তাকে থাকতে দেওয়া উচিত। 

আকাশের দিকে মেঘের আনাগোনা দেখতে দেখতে আর নৌকার জল কেটে এগোনোর শব্দ শুনতে শুনতে চোখ লেগে গেছিল। 

বিন্সি কিছু ভেবে আস্তে আস্তে বললো :বস আই এম সরি ফর দি ইস্টার্ডে নাইট ।

নীল :ডোন্ট বি। ইউ হ্যাভ বেষ্টওড মি টি প্রেসিয়াস গিফট -ইওর হার্ট ! কোশ্চেন ইস "এম আই রেডি ফর দেট ওর নট" ।

    মেঘ এর আড়াল থেকে সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে। 

    বিন্সি আমার হাতের ওপর হাত রাখলো আর বললো---

বিন্সি : নীল .....উইল ওয়েট ফর ইউ, এভার .....

বিন্স আগের মতোই সহজ হচ্ছে।

আমি রবিবারের চেরাই এ বালিয়াড়ি তে মন দিয়েছি , এই ব্যাক ওয়াটার তো সত্যিই শান্ত।

কটেজ এ ফেরার সময় বিন্সি জিজ্ঞাসা করলো :হু ইস ইওর ক্লোসেস্ট ফ্রেন্ড ?

মুহূর্ত চিন্তা না করে বললাম :মাই ফাদার । 

বিন্সি :সারপ্রাইসড ..নীল আই উড সে ইউ গট এ গ্রেট ফ্রেন্ড ?

নীল :ডিউরিং ময় টিনস ডেস হি প্রোএকটিভলি ডিসকাসড এন্ড ক্লিয়ারিং মেনি কিউরিওসিটি এন্ড ডাউট অফ দোস ডেস ...ইউ নো ..এবাউট গার্লস ,সেক্স এন্ড রেলশনশিপস ,হরমোনাল চেঞ্জেস । এভেনচুয়ালি আই অল্সো শেয়ার্ড মেনি থিংস এস ময় ট্রাস্টেড এডভাইসর ।

বিন্সি :দ্যাটস হোয়াই ইউ হ্যাভ লিমিটেড ফ্রেন্ডস ।


আজ রবিবার ,বাড়িতে ফোন করার দিন। বিন্সি কে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম ।আথিরার ব্যাপার টা বাবার সাথেই শুধু আলোচনা করা যেতে পারে । আথিরা একটা আবিষ্কার -নিজেকে খোঁজার। সে না আসলে জীবনের একটা দিক হয়তো অজানা থেকে যেত। 

রাতে একথা সেকথার পর বাবাই জিজ্ঞাসা করলো " কিরে তোর সেই টেম্পল গার্ল এর কি খবর "?

নীল: কোনো খবর নেই বাবা। চেরাই এই শেষ দেখা। এরপর যেন উবে গেছে পৃথিবী থেকে ?

বাবা : সে কি রে , কোনো সমস্যায় পরে নি তো?

নীল: কোনো যোগাযোগ তারপর করতে পারিনি। ডেড সাইলেন্স ফ্রম হার। 

বাবা: দেখ তোর এপার্টমেন্ট থেকে যেভাবে বিদায় নিয়েছিল ,মনে হয় কোনো মানসিক টানাপোড়েন এ আছে। সে যেটা চায় আর যেটা করছে তার মন হয়তো সাথ দিচ্ছে ন। 

ধৈর্য ধর , অপেক্ষায় একমাত্র সমাধান। 

মনে রাখিস " লাভ এন্ড পার্সিভারেন্স ইস সিনোনিমাস "

 

ভালো লাগছে কোনো এক কারণে বাবার সাথে কথা বলে । 

 

ভালোবেসে ভালো কাঁদালে। 

ভালো ভালোবাসা জানালে।। 

কাঁদালে ,,কাঁদালে......

যদি মজিতে না মন ছিল। 

ওগো, তবে কোনো মন মজালে।। 

 

রামকুমার চট্টোপাধ্যায় এর টপ্পা সুর তুললো "এপপেল মিউজিক " এ।



সোমবার :প্রোডাক্ট লঞ্চ মিটিং 

 

রবিবার রাতে সেলস টীম হেড কুটটি চলে এসেছিলো। কমিউনিকেশন টীম এর স্টেজ তৈরী আর অন্য ব্যবস্থা দেখে নিয়েছিলাম। সব ঠিক আছে প্ল্যান মাফিক। যদি সেলস টীম ঠিক ভাবে আমার পরিকল্পনা ঠিক ভাবে বুঝে যায় আর তা ঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করে মার্কেট এ ,সাফল্য অবধারিত। 

ঠিক সাড়ে নয় টায় আমাদের সম্মেলন শুরু। বড় ডিজিটাল স্ক্রিন আর আলোর প্রয়োগ স্টেজ টি কে অন্য এক মাত্রা দিয়েছে। থিয়েটার এর মতন বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় দুশো জন সেলস টীম এর সদস্য রা বসতে পারবে। হল এর দুই পাশের যাতায়াত করার জায়গায় আরো চার টি ডিজিটাল স্ক্রিন স্থাপন করা আছে যাতে পেছন থেকে দেখতে সুবিধা হয়। হল ঘরে ঢোকার আগে ও হোটেল লবি তে স্ট্যান্ডি লাগানো আছে , যাতে নতুন প্রোডাক্ট এর গুনাগুন দেওয়া আছে। 

 ফিমেল সেলস কলিগ রা প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্বোধন করলো। ম্যানেজিং ডিরেক্টর আস্তে পারেনি অন্য মিটিং থাকার জন্য। ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে তিনি তার বক্তব্য রাখলেন। তার সাথে এই প্রজেক্ট কি এক্সপেকটেশন সেলস টীম এর কাছে তাও তুলে ধরলেন। 

মার্কেটিং টীম এর আমাদের প্রেসেন্টেশন এর মাধ্যমে তুলে ধরলাম যে এই ইনজেকশন এর মার্কেট কত বড় ,কোন কোন স্পেশালিটির ডাক্তার কে ফোকাস করতে হবে,কি হবে আমাদের কমিউনিকেশন। আরো বললাম কোন কোন সাইন্টিফিক লিটারেচার আমরা কিভাবে তুলে ধরবো,ডাক্তার দেড় লঞ্চ করবো কি ভাবে ,লঞ্চ গিফট কি হবে ?ডিস্ট্রিবিউটার দের কখন বিলিং হবে ইত্যাদি। এক কথায় তাদের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে প্রজেক্ট তা তুলে ধরলাম। 

সেলস টীম খুবই উৎসাহ দেখালো যখন দেখলাম কিভাবে তাদের নিজস্ব এরিয়া তে প্রথম ৫০ টি ডাক্তার কে লঞ্চ করবে। বিশেষ ভাবে তৈরী একটি কেক এর আদলে তৈরী ত্রিমাত্রিক ইলেকট্রনিক কেক। ডাক্তার যখন বিশেষ ভাবে তৈরী ইলেকট্রনিক লাইটার দিয়ে কেক এর মোমবাতি তে আগুন স্পর্শ করাবে ,সঙ্গে সঙ্গে ফুলের পাপড়ির মত ওপরের অংশ টি খুলে যাবে আর তার থেকে উদ্ভাসিত হবে একটি প্রোডাক্ট এর নামাঙ্কিত একটি এম্পুল। 

কুটটি খুশি এই প্ল্যান এ। ৫ টায় মিটিং সম্পূর্ণ হল। রাতে এ গালা ডিনার এর আয়োজন আছে। 

রাতের পার্টি তে থিম কেরালা ট্রাডিশনাল ড্রেস। 

একটু আগেই চলে এলাম পার্টি হল এ। উদ্দেশ্য সেলস টীম এর ছেলেদের সাথে মিশে একটু ফিডব্যাক নেওয়া। কিছু টীম এর ছেলেরা এসে গেছে মুন্ডু (ধুতি) আর শার্ট পরে। বেশিরভাগ সাদা শার্ট। সুন্দর আড্ডা জমে উঠেছে। ছেলেরা তাদের প্রশ্ন করছে। আমিও উত্তর দিচ্ছি। জবরদস্ত সেলস এর প্রতিশ্রুতি দিলো। এটাই দরকার ছিল আমার। 

পিঠে হাত পড়তে পিছন ফিরে দেখি কুটটি আর বিন্সি। কূটটি র পরনে সাদা মুন্ডু আর শার্ট সঙ্গে সাদা স্লীপার। বিন্সি সাদা ঘাঘরা , সোনালী পাড় সাথে ডিসাইনার ব্লাউস । নাভি তে ছোট একটি নথ,ছোট স্টোন টি জ্বল জ্বল করছে। বিন্স সব পোশাকেই স্বছন্দ। 

কুটটি : নীল বস সারপ্রাইজড টু সি দেট মার্কেটিঙ এন্ড সেলস আর টুগেদার! রেয়ার অকেশন  

বিন্সি : নীল ক্যান মিঙ্গলস ইসিলি উইথ এনিওয়ান ।

নীল :ইউ নো কুটটি ,থিস ইনফরমাল ইন্টারঅ্যাকশনস আর ভেরি এফেক্টিভ ঠন্ ফর্মাল ওয়ান । 

কুটটির হাতে ড্রিঙ্কস চলে এসেছে। কেরালার মদের প্রতি ভালোবাসা সর্বজনবিদিত। কোট্যাম(কেরালার র একটি স্থান ) এ বলা হয় সন্ধের পর চক এর গান্ধী মূর্তি ছাড়া সব কিছু হেলতে থাকে। 

এর পর শুরু হলো কারাওকে মিউজিক এর আসর। ছেলেরা যে যেমন পারলো গাইলো। কুটটি ও কম গেল না। মোহনলাল এর সিনেমার একটা গান গেয়ে দিল। বিন্সি গাইলো "নো নিউ ইয়ার্স ডে তো সেলিব্রেট .... বিন্সি র গানের সবাই খুব ই প্রশংসা করলো।

 

অবধারিত ভাবেই সবাই আমাকে ধরলো গান গাইবার জন্য। ছেলেরা উল্লাস করে বলতে লাগলো "কাম অন নীল বস ....অরু বেঙ্গলি সং প্লিস " 

প্রথম এ একটু কিন্তু কিন্তু বোধ হলো । বেঙ্গলি গান এর কিছু বুঝবে কি না ?

স্টেজ এ উঠে ভাবলাম কোন গান গাওয়া যায় !চোখ বন্ধ করে নিলাম। স্টেজ এ ফোকাস আমার ওপর, ডার্ক ব্লু জিন্স আর সাদা শার্ট । সবাই চুপ দেখতে চাইছে কি আসে আমার দিক থেকে। 

 ফিরে গেলাম আথিরার সাথে চেরাই এ। সে এই গান টা গাইছিলো আমার হাত ধরে। 

কারাওকে ট্র্যাক চালিয়ে দিলাম। পিয়ানো তে প্রিলুড মিউজিক টা বাজতেই ছেলেরা হৈ হৈ করতে লাগলো। ভাষা না জানলেও ইংলিশ সাব টাইটেল দেখে গাইতে লাগলাম "প্রেমম " সিনেমার গান টি "থেলিমনাম মারহাবিলিন নিরামনিয়ুম নীড়ম .......মালারে। " সবাই গলা মেলালো 

শেষ হলে কুটটি ছুতে এসে জিজ্ঞাসা করলো " নীল ,হাউ ডিড ইউ ম্যানেজ দা সং দেট অল্সো ইন মালায়ালম "?

আমি বললাম "সামওয়ান মেক মি লার্ন দিস বিউটিফুল সং "

লক্ষ্য করলাম বিন্সি র চোখে যেন ১০০০ watt বাল্বের ঔজ্বল্য .....

 

প্রোডাক্ট লঞ্চ এর ১৫ দিন বাকি 

পরের দিন সকালে কুমারকম থেকে এর্নাকুলাম ফিরলাম। আগের তিনটে দিন বিন্সি র জীবনে সবচেয়ে সুখী দিন সে জানাতে ভোলেনি। 

বুধবার সকাল। " সিরি " জানান দিলো "কুটটি কলিং ....."

তুলতে যা বললো তাতে আমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। আমি বুঝলাম ঝড় আসছে , খুব বড় একটা। সোমবার দিন আমাদের প্রতিযোগী কোম্পানি টি যেটার হেড অফিস ত্রিবান্দ্রাম এ তারা এই একই প্রোডাক্ট লঞ্চ করে দিয়েছে। ডাক্তার দের নিয়ে বড় একটা লঞ্চ পার্টি দিয়েছে "ভারকালা" বিচ এ। আমাদের প্রোডাক্ট এর সাথে কোনো তফাৎ নেই। কুটটি এই তথ্য গুলো আমাদের এক ডিস্ট্রিবিউটর এর কাছে পেয়েছে যারা সেই কোম্পানির ও একজন প্রধানতম ডিস্ট্রিবিউটর ।সেও নিমন্ত্রিত ছিল সেই পার্টি তে। কুটটি জি কে ওই ডিস্ট্রিবিউটের সাথে ব্রেকফাস্ট অথবা লাঞ্চ এর জন্য এপয়েন্টমেন্ট করতে বললাম ,আবাদ প্লাজা তে সেটা আজই। আরো বললাম একটা স্ট্রিপ (১০ টি এম্পুলে এর) ওই ডিস্ট্রিবিউটার এর কাছ থেকে নিয়ে আসতে।

আমি জানতাম যে ত্রিবান্দ্রাম এর কোম্পানি টির প্ল্যান আছে লঞ্চ করার কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি করবার ভাবিনি। তাদের সেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই।  

সাড়ে এগারো টা নাগাদ আবাদ প্লাজা র রেস্টুরেন্ট এ আমি ,কুটটি আর জিনু। জিনু আমাদের অনেকদিনের ডিস্ট্রিবিউটর। তার কাছে জানলাম ত্রিবান্দ্রাম এর কোম্পানি টির মালিক একজন ডাক্তার ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু ডাক্তার। কোম্পানি টি বিসনেস করে বিশেষ কয়েকটি জায়গায় মানে "পকেট সেল"। আর পুরোটা চলে ডাক্তার দের কন্টাক্ট এর ওপর। সেলস ফোর্স এর কাজ যোগাযোগ টি ঠিক রাখা বিভিন্ন সার্ভিস এর মাধ্যমে। কোম্পানির অ্যানুয়াল রিপোর্ট এ খুব ভালো নেই, প্রফিট এ চলছে না। এই প্রোডাক্ট টি তুরুপের তাস। এবং এটি ঠিক না দাঁড়ালে কোম্পানি খুব সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে না। 

লাঞ্চ এর পর আমি আর কুটটি অফিস এ গেলাম। তাদের আর আমাদের প্রোডাক্ট টি পাশাপাশি রেখে তুলনা করে দেখলাম হুবহু এক। একটা তালিকা করলাম প্রথমে। কুটটি বললো "নীল আপনি লিখুন আমি বলে যাচ্ছি"

১]১০ টি করে ভায়াল একটি স্ট্রিপ এ 

২ ]৫০ টাকা পুরো স্ট্রিপ মানে ৫ টাকা একটি ভায়াল 

৩]এম্বার রং এর ভায়াল। 

৪] প্যাকিঙ একই রকম 

৫]দশ টি ভায়ালএ একটি ফ্রি (১০% ট্রেড অফার)। 

মানে আমাদের বিসনেস প্ল্যান পুরো নকল করা হয়েছে। কিছু ইনফরমেশন যেমন Amber রঙের ভায়াল , ফটো সেনসিটিভ প্যাকেজিং, দাম এবং ট্রেড অফার যা কেবল আমি আর ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানতাম। আর কিছুটা বিন্সি। এরা জানলো কি ভাবে? 

পুরো ব্যাপারটা ৩৬০ ডিগ্রী চিন্তা করতে হবে ও একটা SWOT-সট (স্ট্রেংথ,উইকনেস ,অপর্চুনিটি ,থ্রেট ) এনালাইসিস করতে হবে। 

এই এনালাইসিস মার্কেটিং এর এক কার্যকর পদ্ধতি। এই অবস্থায় কি করণীয় আমাকে একটা দিশা পেতে হবে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে-কর্পোরেট ওয়ার । টিকে থাকা আর জেতার লড়াই। 

কুটটি জি কে বললাম কাল আমি বসবো তার সাথে আর সিদ্ধান্ত নেবো কি কি করণীয়। বিন্সি কে ডেকে নিলাম চেম্বার এ।

 

"পেইন ইস ইনভিটেবল বাট সাফারিং ইস অপশনাল " -যন্ত্রনা অবশ্যম্ভাবী ,কিন্তু তার থেকে কষ্ট পাওয়া টা নিজের ওপর-- আমার প্রিয় এক লেখকের কথা । যদিও কথাটা স্পোর্টস এর ওপর বলা কিন্তু জীবনের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতে অবিচল রাখতে খুব ই সাহায্যও করে। বিন্সি র সাথে বসে আমরা ঠিক করলাম আমাদের এই প্রজেক্ট এ ভালো কি কি আছে আমাদের হাতে মানে স্ট্রেংথ কি কি ?

বিন্সি নোট করে বললো আমাদের প্রোডাক্ট কোয়ালিটি , ভালো গুণগত এম্বার রঙের ভায়াল ,যেখানে তাদের ভায়াল গুলি ভালো মানের নয়। আমাদের সক্ষম সেলস ফোর্স ,প্রশস্ত প্রেসক্রাইবার বেস। আমাদের গুণগত প্যাকেজিং। 

আমি বললাম দুর্বলতা একটাই আমরা প্রোডাক্ট লঞ্চার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থান এ। কারণ আমরা জানতাম না তারা এতো তাড়াতাড়ি মার্কেট এ লঞ্চ করে দেবে। 

বিন্সি -কিন্তু তারা ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ পিছিয়ে কিভাবে তাড়াতাড়ি জাস্ট আমাদের প্ল্যান কপি পেস্ট করে দিলো। ইটস এ কেস অফ সাবোটাজ-অন্তর্ঘাত!

নীল -বিন্সি এটা আমি খুঁজে বার করবোই তার আগে প্রজেক্ট টা কে জেতাতে হবেই। ইটস এ চ্যালেঞ্জ "এই উইল শো ইট ইন সেলস ফিগার " । 

সুযোগ আমাদের রয়েছে। আমরা ডাক্তার দের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবো আমাদের গুণগত মান ,সায়েন্টিফিক ডাটা আর পেশেন্ট দের সুবিধার জন্য আমরা কি করছি । ডাক্তার রা তখনি খুশি হন যখন তাদের পেশেন্ট রা সুস্থ আর খুশি থাকে। দুটোই আমরা দেব। 

বিন্সি : বস কোয়ালিটি প্রোডাক্ট তো আমরা দিচ্ছি। কিন্তু প্রতিটি ভায়াল এর দল ১০ টাকা বেশি। পেশেন্ট খুশি হবে কি ভাবে ?

নীল : প্রাইস আমি কম করবো না। প্রিমিয়াম প্রাইস ই থাকবে। 

বিন্সি :তাহলে ট্রেড অফার কি বাড়িয়ে দেবার কথা ভাবছো?

নীল: না তা ভাবছি না ,কারণ তাতে কোম্পানির প্রফিট মার্জিন কমে যাবে।

কি করবো জানি না। এটা নিয়ে আজ একটু চিন্তা করি। কাল সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবো। 

বিন্সি:থ্রেট একটাই তাদের প্রাইসিং আর বিশেষ পরিষেবা কিছু ডাক্তার আর ডিস্ট্রিবিউটের দের প্রতি। 

নীল :বিন্সি ,আমার মনে হয় আমাদের কন্ট্রোল এ আছে আমাদের স্ট্রেংথ এর দিক গুলি। সেটার ওপর কাজ করা যাক। আর সুযোগ এর জায়গাটা একটু দেখা যাক ভালো ভাবে। 

বিন্সি: নীল আমরা আমাদের ডাক্তার বেস এ জেনারেল ফিজিসিয়ান এবং RMP দের (Registered Medical Practitioner ) নিতে পারি। 

নীল :ব্রাইট আইডিয়া বিন্সি। এটাই চাইছিলাম তোমার কাছে। 

বিন্সির ব্লাশ করা চোখ এড়ালো না আমার। আলোর একটা রেখা দেখতে পাচ্ছি। মিটিং শেষ হতে বিন্সি বললো নীল এবার চলো কফি শপ এ যাই। দুজনে বেরোলাম "ইন্ডিয়ান কফি হাউস " এর দিকে।

আথিরার একটা কথা হটাৎ মনে পড়লো ,বলেছিলো " আই হ্যাভ ময় স্ট্রং বিলিফ অন ইওর ইন্টেলিজেন্স এন্ড ইউ ক্যান টার্ন অ্যারাউন্ড এনি এডভার্স সিচুয়েশন "I 

কখন বলেছিলো মনে পড়লো না ...জানতে হবে। বাড়ি ফিরে এই উত্তর গুলো খুঁজবো ঠিক করলাম। 

 

 

স্টেট অফ মাইন্ড 

"ডার্কনেস ইস রিলাক্সেশন ,টোটাল রিলাক্সেশন,"

অন্ধকারেই শান্তি কারণ অন্ধকার শাশ্বত। আলো তো আসে আর যায়,অন্ধকার থেকে যায়। 

বাড়ি ফিরে মিউজিক সিস্টেম এ স্যাক্সোফোন এ হালকা জ্যাজ চালিয়ে দিলাম। ফ্রিজ থেকে কোক নিয়ে পুরো ঘর এর আলো বন্ধ করে ব্যালকনি তে বসলাম। ব্যাক ওয়াটার এর দিক থেকে ঠান্ডা হাওয়া মনকে শান্ত করতে পারছে না । ব্যাক ওয়াটার এর জল কালো জল কি সত্যিই শান্ত না কালো রং টাই শান্ত ভাব। কালো কে আমরা ভয় পাই । চোখ বন্ধ করে নিজের ভেতরে যাবার চেষ্টা করতে থাকলাম। যত এগোতে থাকলাম তত যেন এক ভয় গ্রাস করতে লাগলে ,একা হবার ভয়। কিছক্ষন পর মন সত্যি আর থাকলো না বা শান্ত হতে শুরু করলো।

কতক্ষন বসে ছিলাম জানি না। রাত তখন একটা।কি করতে হবে এই প্রজেক্ট এ আমার এ নিয়ে আর কোনো সংশয় আর থাকলো না। এক অদ্ভুত ভাবে মন আমার শান্ত। ভেতরেই সমাধান (ওশো)। ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম আর আমার সিদ্ধান্ত গুলো নোট করে নিলাম। 

১ ]আমরা মার্কেট এ লঞ্চ এর দিন এগিয়ে এনে পরের সপ্তাহে বুধবার করবো । হাতে আর সাত দিন সময় আছে। 

২] কোনো ট্রেড অফার মার্কেট এ দেব না। 

3] প্রতিটি এম্পুলের এর দাম অপরবর্তনীয় রাখা হবে

৪] প্রতিটি এম্পুলের এর সাথে ইনজেকশন সিরিঞ্জ ফ্রি দেওয়া হবে। 

পরের তিন দিন ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক কি ভাবে কাজ করলে কোম্পানি থেকে ডিস্ট্রিবিউটার আর ওষুধের দোকানে প্রোডাক্ট পৌঁছে যাবে তার একটা রূপরেখা তৈরী করে নিলাম। সেলস টীম এর ভালো সাপোর্ট চাই। সে মতো কুটটি র কে জানিয়ে একটা মেইল করে দিলাম। 

পুরো ব্যাপার তা সম্পূর্ণ করার পর মনে হলো চারিদিকে কোলাহলের মাঝে ভেতরেই শান্তি আর সমাধান। 

সকালে ভিডিও কনফারেন্স এ প্রজেক্ট প্রোগ্রেশন নিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টর এর সাথে কথা হল। একটাই কমেন্ট করলেন "নীল ইওর ফ্রি সিরিঞ্জ কনসেপ্ট উইল ক্রাশ দি কম্পিটিটর "

সিরিঞ্জ এর পুরোটা আসবে আমাদের কোম্পানির অন্য একটি ডিভিশন এর থেকে। এতে আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন এর কোনো সমস্যা থাকবে না। ফ্রি সিরিঞ্জ প্রোডাক্ট এর সাথেই পৌঁছে যাবে। 

পুরো দিন টা গেল সেলস হেড ,ডিস্ট্রিবিউশন,স্টকিস্ট এর সাথে মিটিং এ। সেলস হেড পুরো ব্যাপার টা সেলস টীম কে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্রিফ করল। আমি জোর দিলাম দুটো ব্যাপার এ 

এক ডিস্ট্রিবিউটের আর ওষুধের দোকানে শনিবার এর মধ্যে যেন আমাদের প্রোডাক্ট টি পৌঁছে যায় ফ্রি সিরিঞ্জ সহ। বিন্সি সিরিঞ্জ এর প্রয়োজন কতটা হবে তার একটা প্রজেকশন এর মধ্যে তৈরী করে হেড অফিস এ জানিয়ে দিলো। 

ব্যস্ত তম দিনের শেষে কুটটি, আমি আর বিন্সি ডিনার এ বেরোলাম " আরাবিয়ান নাইটস " রেস্টুরেন্ট এর উদ্দেশে। কালুর - কাদাবানথার রোড এর কাছে এটার স্পেশালিটি হচ্ছে মিডল ইস্ট এর খাবার , তার সাথে সি ফুড। ডিসপ্লে তে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ রাখা থাকে। যেটা অর্ডার করা হবে সেটা সুন্দর ভাবে গ্রিল করে সার্ভ করবে। আফগানী চিকেন এখানকার বিশেষ মেনু। 

ডিনার টেবিল এ কুটটি জিজ্ঞাসা করলো " নীল বস কি ভাবে এই আইডিয়া টা আনলেন"

বিন্সি যোগ করলো আর কোনো কম্প্রোমাইসে না করে এবং প্রফিটেবিলিটি বেশি রেখে। 

ছোট্ট উত্তর দিলাম " এমং ডার্কনেস ( অন্ধকারের মধ্যে থেকে) 

© অনিরুদ্ধ



জগিং এর অনেক বেনিফিটের মধ্যে একটা হলো মনসংযোগ ঠিক রাখা। হার্ট রেট বাড়ে আর মনের এদিক ওদিক ছোটা কমে যায় । সকালে মেরিন ড্রাইভ এর ওয়াক ওয়ে তে জগিং এর সময় সমুদ্রের তাজা বাতাস অনেক তরতাজা করে দেয়। আমি এক্স্টাটিক মুহূর্ত তখন ফীল করি যখন বিন্দু বিন্দু ঘাম পেছনের চুল বেয়ে উষ্ণ ঘাড়ে পড়তে থাকে। ঠিক এই রকম একটি মুহূর্তে পাশে একটি স্কুটি কে দাঁড় করানো দেখতে পেলাম। আথিরার স্কুটি টাও একই রকম দেখতে ছিল । একদম নতুন। সামনে "এ "লেখা থাকতো । আথিরার স্কুটির নম্বর ছিল KL ******। নম্বর টাও অজান্তে মুখস্ত হয়ে গেছে ।

মনে পড়লো বিন্সি র এর আত্মীয় RTO অফিস এ কাজ করেন। আমার হোন্ডা সিভিক কেনার সময় খুবই সাহায্য করেছিলেন।   আজ অফিস বিন্সি কে নম্বর তা দিয়ে ডিটেলস টা দিতে অনুরোধ করলাম। কয়েকদিন এর মধ্যে জানাবে বললো। 

বুধবার লঞ্চ এর জন্য সব কাজ পরিকল্পনা মতো ঠিক ঠাক এগোচ্ছে। ডাক্তার দের সাথে কিভাবে কথা বলবে ,আমাদের প্রোডাক্ট এর গুনাগুন ঠিকমতো ডিটেল করছে কিনা , তার প্র্যাকটিস কেমন চলছে তার একটা রিপোর্ট নিয়ে নিলাম কুটটি জির কাছে। যদিও এতটা না জড়ালেও চলে। কিন্তু এই প্রজেক্ট এ একটা প্রচ্ছন্ন চ্যালেঞ্জ আছে। তাই ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। 

 

রবিবার গুলো যেন আজকাল আর কাটতেই চায় না। আথিরার নম্বর টা আর কোনোদিন বেজে উঠবে না মন যে কিছুতেই মানতে চায় না। সকাল ১০ টা নাগাদ ডোর বেল বাজলো। আথিরা আসতো তখন ,ভাবলাম সেই নয়তো ?দরজা খুলে দেখি বিন্সি। একটু অবাক হলাম না জানিয়ে চলে এসেছে দেখে।

বিন্সি :বস ,ভেতরে আসতেও বলবেনা ? অবাক হলে নিশ্চয়। 

নীল :আরে বিন্সি ,ওলোয়েস ওয়েলকাম। ফীল ফ্রি এস ইওর হোম। 

ভেতরে আসতে ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বার করে বললো " তুমি যে স্ক্যুটি র ডিটেলস টা চেয়েছিলে সেটা দিতে এলাম। ভাবলাম না জানিয়ে গিয়ে অবাক করে দি। 

খুলে দেখলাম নাম লেখা আছে আথিরা বালাকৃষ্ণান ,ঠিকানা -থিরুভানানথাপুরাম (ত্রিভান্দ্রাম )

একটা হার্ট বীট মিস হলো আমার মনে হয়। 

বিন্সি : নীল এড্রেস টা দেখো আমাদের রাইভাল কোম্পানির হেড অফিস ত্রিভান্দ্রাম এর। একে  চিনলে কিভাবে। 

মনের কথা মুখে আস্তে না দেওয়া আমাদের মতো কর্পোরেট মানুষদের অন্যতম স্কিল। 

জানতাম এই প্রশ্ন টা আসতে পারে। বললাম ,জানিনা স্ক্যুটি টা কে অফিস এর আসে পাশে কয়েকদিন দেখেছি। 

কথা ঘোরাবার জন্য বললাম লিভ ইট বিন্সি । প্রথমবার এলে আমার ফ্লাট এ বল কি খাবে। 

বিন্সি তার স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে বললো যদি বলি একসাথে লাঞ্চ করতে চাই তাউ তোমার হাতে বানানো তা হলে কি খুব বেশি চাওয়া হবে। নাকি বলবে " আই এম নট প্রিপেয়ারড !"

নীল:বিন্সি ,লাঞ্চে তুমি খাবে বললে যখন তখন স্পেশাল কিছু ভাবতে হবে। তৈরী করা যেতে পারে কেরালা ঘি রাইস আর কুঁদাপুর ঘি রোস্ট চিংড়ি। চলবে ?

বিন্সি: ইয়া বস দৌড়াবে বলে লাফিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরলো। 

বললাম :হেল্প উরসেল্ফ উইথ জুস এন্ড এনজয় দি ভিউ ফ্রম ব্যালকনি । বিন্সি আজ একটু বেশি মাত্রায় চঞ্চল।

 ঘি রোস্ট এর মসলা টা তৈরী করে নিলাম তারই মধ্যে। মন পরে আছে কাগজের ওই ঠিকানা তার দিকে। আথিরার সাথে কি সম্পর্ক ওই কোম্পানির। কর্পোরেট espionage এর ব্যাপার নয় তো ?

এইসব ভাবছি ঘি এর মধ্যে প্রন্স আর মশলা মেশাতে মেশাতে। সুন্দর ঘি আর রোস্ট করা মশলার গন্ধে চারিদিকে ম ম করছে। বিন্সি পিছন থেকে এসে বললো সুন্দর একটা গন্ধ ছড়িয়েছে। টেস্ট করতে পারি। বলে নিজেই তুলে নিয়ে একটা প্রন মুখে পুরে দিল। গরম টা জিভে লাগতেই উঃ আঃ করে লাফাতে লাগলো। সেই অবস্থায় খোলা মুখে ফু দিতে একটু ধাতস্ত হলো। আমার ঠোঁট তার মুখের খুবই কাছে। এক পলক আমার চোখের চোখ রাখলো ...গলার স্বর যেন একটু অন্যরকম ... ডেলিসিয়াস নীল বলে নিজের ঠোঁট দিয়ে আমার জড়িয়ে রাখলো আবেশে। তার জিভ আর অন্য এক স্বাদের সন্ধান করে চলেছে আমার মুখের মধ্যে। তার একটা হাত ঘর্মাক্ত আমার বুক বেয়ে গলার কাছে আলতো করে স্পর্শ করে রইলো। সে অপর দিক থেকে সাড়া পেলো না । 

বললো :নীল আমার সমর্পনের কি ঘাটতি থেকে গেল ?

আমি তার হাত ধরে বললাম বিন্সি আমি যে সমর্পিত। হাত ছাড়িয়ে চলে গেল। সব প্রেম মনে 

হয় মানুষ কে একা করে দেয়। 


প্রোডাক্ট লঞ্চ 

বুধ বার যথারীতি সেলস টীম এবং আমরা মার্কেটিং টীম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ডাক্তার প্রমোশন এ নেমে পড়লাম। বিশেষ কিছু ডাক্তার যাদের মতামত অন্যেরা গুরুত্ব দিয়ে শোনেন তাদের নিয়ে 

সাইন্টিফিক মিটিং করা হলো সন্ধ্যে বেলায়। সেটার লাইভ ভিডিও কনফারেন্সিং অন্য সব হেডকোয়ার্টার এ দেখানো হল। বেশ কিছু সাফল্যর খবর ও আসতে শুরু করলো। ডাক্তার রা ফ্রি সিরিঞ্জ এর কনসেপ্ট টা খুবই ভালো ভাবে নিয়েছেন। পরের দশ দিন বিভিন্ন জায়গায় টুর রাখলাম। সেখানকার প্রধান ডাক্তার দের সাথে দেখা করে আমাদের প্রোডাক্ট টা আলোচনা করলাম। আমাদের মিলিত প্রচেষ্টা অচিরেই ফল দিতে শুরু করলো। সেলস এর গ্রাফ উর্ধমুখী।


তিন মাস পরের কথা 

যেকোনো নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ এর প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে বোঝা যাবে যে এটি মার্কেট এ দাঁড়াবে কি না ?

নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ ক্যাটাগরি তে আমরা একদম উপরে। যা আমরা আশা করেছিলাম তার থেকে অনেক গুন্ বেশি আমরা ব্যবসা করছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমাদের প্রতিযোগী কোম্পানির সেল নেমে তলে এসে ঠেকেছে। ডিসকাউন্ট বাড়িয়ে দিয়েও ঠেকাতে পারছে না। সাইন্টিফিক ডিসকাশন আর আমাদের মার্কেটিং এর প্ল্যান ডাক্তার রা খুবই প্রশংসা করেছেন। 

ম্যানেজিং ডিরেক্টর খুব ই খুশি। আমাকে প্রমোশন দিয়ে "AMA " (এশিয়া ,মিডল ইস্ট ,আফ্রিকা )রিজিওন এর মার্কেটিং হেড করে পাঠাতে চান।কয়েকদিন আগে নিজে টেলিফোন করে আমাকে তৈরী থাকতে বলেছেন 

খবর টা নিয়ে বিন্সি এলো বললো বস "অভিনন্দন" আপনি কবে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর। মেইল এসেছে। আমাকে কপি মার্ক করা আছে। 

নীল : তাই ,মেইল এসেছে নাকি ,তুমি খুশি হওনি ?এই সাফল্যে সমান ভাগিদার তুমিও। 

বিন্সি : হা বস আমি খুশি , চোখে জলকণা চিক চিক করছে। কিছুক্ষন চেয়ে রইলো চোখের দিকে আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। আর সে দাঁড়ালো না ডাকলাম তাকে তবু ও !

আথিরা কে জানানো যেত যদি। 

রাতে ব্যালকনি অনেক রাত অব্দি বসে রইলাম। কেরালা তে তো আর কয়েকদিন। মিস করবো অনেক কে আর কিছু এইরকম মুহূর্ত আর আমার এই ব্যালকনি- একাকিত্বকে আর ব্যাক ওয়াটার কে। হয়তো সবাই থাকবে হারিয়ে যাবে এই মুহূর্ত গুলো। 


‘আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন- কতদিন আমিও তোমাকে

খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু- একই আলো পৃথিবীর পারে

আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,

প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,

হয় নাকি?

(জীবনানন্দ দাশ)


© অনিরুদ্ধ


লুপ ক্লোজার 

প্রমোশন এর মেইল টা পেয়ে বাড়িতে ফোন করে খবর টা জানালাম। তারা তো আনন্দে আত্মহারা। এরপর বাবা বললো সব ঠিক আছে ,কিন্তু আথিরার কিছু খবর আছে?

নীল:না ,বাবা ,কিন্তু স্ক্যুটি টার সূত্র ধরে কি খোঁজ পেয়েছি সেটা তো তোমাকে বলেছি। যদি আমাদের রাইভাল কোম্পানির কেউ হয় তো চাকরি তে সমস্যা হতে পারে। 

বাবা: কেন প্রেম কি কেউ করে না। শোন আমার মনে হয় ত্রিভান্দ্রাম গিয়ে তোর একবার খোঁজ নিয়ে আসা উচিত। কারণ টা জানা দরকার। কেরালা থেকে চলে যাবার আগে এটা তুই যদি পরিষ্কার না হয়ে যায় তা হলে সারা জীবন এই প্রশ্ন তোকে তাড়া করে বেড়াবে। কেন সে এটা করলো ...ইত্যাদি। তুই এটা সারা জীবন বয়ে বেড়াবি,শান্তি পাবি না । তোকে এগোতে দেবেনা অন্য কোনো রিলেসন এর ক্ষেত্রেও। আর যখন একটা ঠিকানা পাওয়া গেছে তখন তোর যাওয়া জরুরি। 

নীল :কিন্তু, দুদিনের আলাপ বই তো নয় !

বাবা:দেখ সারাজীবন একসাথে থেকেও মনের দিক থেকে অনেকে অনেক দূরে থাকে,একদিন বা দুদিন ম্যাটার করে না যেটা বিবেচ্য সেটা হলো প্রেম বা ভালোবাসা বাকি সব পরে। 

নীল কোনো কিন্তু নয় তুই যুদ্ধ করতে যাচ্ছিস না ,আর এটা জরুরি ,লুপ ক্লোসার করা অবশই দরকার। 

তিনদিনের ছুটি নিয়ে পরেরদিন বিকেল ৫ টায় ত্রিভান্দ্রাম গামী  ট্রেন ধরলাম এর্নাকুলাম টাউন স্টেশন থেকে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা লাগবে ,AC চেয়ার কার এ। যাবার পথে পুরানো স্মৃতি গুলো ফিরে আসছিলো। প্রায় ৫ মাস এর উপর আথিরার কোনো খোঁজ পাইনি। আথিরা যে কোনো তথ্য চুরির কাজে লিপ্ত থাকতে পারে মন কিছুতেই মানতে চাইছিলো না। রাত দশ টা নাগাদ হোটেল এ চেক ইন করলাম। ডিনার করে বিছানায় শুয়ে এটাই মনে হচ্ছে হয়তো কয়েক কিলোমিটার এর মধ্যে তার বাড়ি ,তার শহরে রয়েছি। কি করছে এখন সে ,ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো শান্তি তে। 

বাবা কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম। বাবা বললো লক্ষ্য -একটাই সত্য কে জানা। 

রাতে ঠিক ঘুম হলো না। সত্যি যদি হয় যে সে ভালোবাসেনি শুধু ব্যাবহার করে গেছে ,দেখাই হয়তো করলো না ,বা ঠিকানা তে কেউ থাকে না অথবা যা ভাবছি সবটাই ভুল -সি জাস্ট ভ্যানিশড। 

পরের দিন সকাল ন টা নাগাদ একটা অটো নিয়ে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম। ত্রিভান্দ্রাম এর অভিজাত এলাকায় অনেকটা জায়গা জুড়ে এটা একটা অফিস কাম রেসিডেন্স ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি টির। উঁচু পাঁচিল দিয়ে পুরো টা ঘেরা। বাইরে থেকে দেখলাম বাড়ি টি অনেকটা জায়গা জুড়ে প্রসারিত । সাদা রং তার সাথে টালি রঙের ছাদ। 

দারোয়ান কে আমার কার্ড দিয়ে বললাম আমি নীল ,আথিরা বালাকৃষ্ণান এর সাথে দেখা করতে চাই। কার্ড টা নিয়ে আমার নাম টা শুনে চমকে উঠলো ,যেন সে আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। বললো "dayavāyi akattu vannāluṁ " ( ভেতরে আসুন অনুগ্রহ করে )। 

ইন্টারকম এ খবর পেয়ে ভেতর থেকে এক বয়স্ক ভদ্রলোক হন্তদন্ত ছুতে এলেন,সাদা ধুতি আর শার্ট কপালে তিলক ,ধব ধবে পরিষ্কার গায়ের রং,পৈতা দেখা যাচ্ছে ,মাথার চুল সিল্কি সাদা ,বললেন প্লিজ কাম ইন ,আই এম আথিরা'স আঙ্কেল। আথিরা যেমনটি বলেছিলো ঠিক তেমনটি আপনি ,নীল। আসুন। 

মনে একটা চাপা উত্তেজনা আর তার সাথে রাগ হচ্ছে। এক তো কোনো যোগাযোগ নেই তার উপর খবর পেয়ে বাইরে এলোই না ...এ কেমন হেঁয়ালি ...কোনো ফাঁদ নয়তো ...

ভদ্রলোক বললেন আথিরা ভেতরে, আসুন কোনো ভয় নেই। পিচ বাঁধানো রাস্তা ধরে এগোতে লাগলাম। পুরো বাড়িটা কয়েকটি অংশে বিভক্ত। থাম বসানো কেরালা ট্রেডিশন এর বাড়ি। 

হল ঘর এর মতো জায়গায় এসে পৌঁছালাম। বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন ছিলেন অভ্যর্থনার জন্য। নমস্কার আর প্রতিনমস্কার এর পালা সঙ্গে হলে বললাম আথিরা কোথায় ?

আমার চোখের উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করে বললেন লেটস গো টু হার পোরশন এন্ড রুম। লম্বা একটা প্যাসেজ এর মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেলাম। রোদ এসে পড়েছে। এই পোরশন টা তে আধুনিকতার সাথে আদি গঠন শৈলীর মিশ্রণ। 

যত এগোচ্ছি মনে হচ্ছে সে কি একবার ছুটে এসে দাঁড়াতে পারতো না। লক্ষ্য করলাম আমার হাতের তালু ঘামছে। তাকে কি ভাবে দেখবো ,শেষবার যেমন দেখেছিলাম -বড় টানা টানা কাজল চোখে আমায় দেখবে আর বলবে দু হাত প্রসারিত করে কাছে এস নীল ...

সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসলাম। একটা বড় ব্যালকনি। ব্যালকনির প্রান্তে বসার জায়গা ,কাঠের তৈরী। মাঝে একটা দোলনা ঝুলছে। ভদ্রলোক বললেন এর পোরশন পুরো টায় আথিরার। তার প্ল্যান এ তৈরী। সামনে একটি দরজা দেখিয়ে বললেন "মাই সন সি ইস ইনসাইড ,ইউ ক্যান গো ,আই এম কামিং শর্টলি "

কি দেখবো ভেতরে ?আশ্চর্য্য ,লক্ষ্য করে দেখলে দরজার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব সব উধাও ।


কি ভাবে দেখবো আথিরা কে ভেতরে ?মুহূর্ত চিন্তা করে একটু গম্ভীর হয়ে নিলাম। খুঁজে খুঁজে এতদূর এসে এতদিন ,ভ্যানিশ হয়ে থাকার জন্য দু চার কথা তো শোনাতেই হবে।তাতে একটা বেশ মজা হবে। নক করলাম দুবার ,দরজার নব হাত দিয়ে ডান দিকে ঘোরাতে হালকা একটা শব্দ হলো লক খোলার। উৎকণ্ঠা নিয়ে হালকা করে ডাকলাম "আথিরা" ,কয়েক মুহূর্ত কাটলো। রসবোধ আছে বলতে হবে ,কে কাকে চমকায় দেখা যাক। 

আথিরা- বলে আলতো করে দরজাটা খুলে ঢুকলাম। দেখি আথিরা চেয়ে আছে তার কাজল পরা বড় টানা টানা চোখ নিয়ে আমার দিকে ,মুখে অনাবিল হাসি ,ফটো তে , আর তাতে সাদা মালা দেওয়া। 

 

আর নিজেকে ধরে রাখা গেল না। ওখানেই বসে পড়লাম। অন্ত :স্থল থেকে উৎসারিত বেদনার ঢেউ এসে যেন গলায় এসে আটকে রইলো, আর তা চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। একটু সামলে নিতে বুঝলাম যে "ছেলেদের ও ব্যাথা লাগে ও সেটা খুব ভেতরে । কেন কিভাবে ?প্রশ্নের ঝড় উঠছে মনে। বয়স্ক ভদ্রলোক সহানুভূতি নিয়ে কাঁধে হাত রাখলেন ,বললেন " সন উই আর রিয়েলি সরি হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ইউ ...এন্ড দি কাইন্ড অফ পেন ইউ আর গোয়িং থ্রু।  

আরো জানালেন "এই ফার্মা বিসনেস আমাদের বহুদিনের পারিবারিক ব্যবসা। বর্তমানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আর অন্যান্য লোকাল কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতায় আমাদের অবস্থা ভালো যাচ্ছিলো না। আথিরার বাবা আমার বড় ভাই ,আর তার মা অনেকদিন আগে মারা গেছেন। আথিরা ছিল এই কোম্পানির একজন অংশীদার ও ডিসিশন মেকার। যখন আমরা শুনলাম তোমাদের কোম্পানি নতুন এই প্রোডাক্ট টি বাজারে আনবে আর তার ভবিষৎ খুবই ভালো তখন ই সে নিজে উদ্যোগ নিয়ে এর খুঁটিনাটি জোগাড় করতে নেমে পরে। উদ্দেশ্য একটাই ছিল কোম্পানি কে আবার লাভের মুখ দেখাবে। এর্নাকুলাম গিয়ে সে ঠিক করলো সব খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় করে আনব। এই করতে গিয়ে বুঝিনি সে এতটা ঝুঁকি নিয়ে নিয়েছে। সেখানেই তোমার সাথে দেখা করে। প্রথমে ভেবেছিলো বেসিক কিছু ইনফরমেশন নিয়ে চলে আসবে ,কিন্তু তোমার সাথে যত পরিচিত হতে থাকে সে আরও তোমার জীবনের সাথে জড়িয়ে পরে। চলে আস্তে পারেনি কারণ সেও যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। " 

নীল: এটা ঠিক যে এই কর্পোরেট একটিভিটি কোনো ওয়ার এর থেকে কম নয় ,মার্কেট দখলের লড়াই। 

উনি আরো বললেন "সে হয়তো গিয়েছিলো তোমাকে ফাঁকি দিয়ে ইনফরমেশন নিয়ে চলে আসতে  কিন্তু ফিরে এসেছিলো তোমার ভালোবাসাকে জড়িয়ে নিয়ে। আর নিজের সত্তা তোমাকে সম্পূর্ণ রূপে সমর্পন করে দিয়ে । আর আজ দেখলাম সে ভুল করেনি। "

নীল : আমি কতবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি।... সে যেন একেবারে এ উবে গেছিলো। আমাকে তো একবার সব বলতে পারতো ...

উনি বললেন "সে বুঝতে পারে এ ভাবে বেশি দিন লুকিয়ে রাখতে পারবে না এবং না পেরে সব হয়তো তোমাকে বলে ফেলবে ,কিন্তু শুনে তাকে তুমি কি চোখে দেখবে ?আথিরা তোমাকে হারানোর খুব ভয় পেতো আর তোমার চোখে ছোট হয়ে যাবার ভয় পেতো ,তাই সে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তোমার থেকে। 

চেরাই থেকে আসার পর থেকে অপরাধ বোধ গ্রাস করতে থাকে। এখানে এসে তার ইনফরমেশন অনুসারে আমরা কাজ ও শুরু করি। আর সে ক্রমাগত নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে। আমাকে বলতো সব। আর কথা দিইয়ে নিয়েছিল যে আমিও যেন নিজে থেকে তোমাকে না যোগাযোগ করি। নিজেকে বিশ্বাসঘাতক ভাবতো আর বলতো ভগবান ও ক্ষমা করবে না হয়তো, ক্রনিক ডিপ্রেশন এ ভুগতে থাকলো ডাক্তার অনেক দেখানো হলো কিন্তু ডাক্তার কি করবে যদি রোগী না চায় সেরে উঠতে। দিন কে দিন অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগলো। সারা দিন তোমার আর তার ফটো র দিকে চেয়ে থাকতো আর জল গড়াতো চোখ দিয়ে। বাঁচার ইচ্ছাটাই আর ছিল না তোমাকে ছাড়া ,আবার হারাবার ভয় যদি সব তোমার কাছে স্বীকার করে আর তুমি দূরে সরিয়ে দাও। 

একদিন তার একটা ওষুধ ওভারডোজ নিয়ে নিয়েছিল সবার অজান্তে। অবস্থা খুবই খারাপ 

এর দিকে যেতে থাকে ,কিম্স হাসপাতাল এ ভর্তি করেছিলাম,কিন্তু বাঁচানো গেল না। 

এই নাও তার জার্নাল যা তোমাকেই দিয়ে যেতে বলেছিলো। 

নীল :আমি কিছুক্ষন কি এই ঘরে একা থাকতে পারি। 

উনি চলে গেলেন দরজা টা ভেজিয়ে দিয়ে। 

সকাল সাড়ে দশটা এখন।রোদ আসছে জানলার ওপর সাদা পর্দা ভেদ করে। ৬০০ স্কয়ারে ফিট এর ঘরে মাঝ বরাবর কিং সাইজ এর একটি বেড। সাদা ধবধবে বিছানা র ওপর তার একটা ফটো গ্রাফ এ মালা দেওয়া। ডান দিকে কফি রঙের ওয়ার্ডরোব মেঝেতে সাদা কালো স্কয়ারে এর ডিসাইন করা কার্পেট পাতা। বেড এর পাশে টেবিল ল্যাম্প আর তার নিচে আমাদের এর একটা ফটো,চেরাই এ তোলা। আথিরার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে এই ঘরে। কিছুদিন আগেও এই সব আসবাবপত্র তার স্পর্শ পেত। ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম তাদের। বেড টেবিল এ আলতো করে স্পর্শ করলাম। এক অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল। পাগলের মতো এলোমেলো ভাবে সব কিছু ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম। স্পর্শ, গন্ধের মাধ্যমে তাকে ছুতে চাইলাম মনে হলে এইতো সে আছে কিন্তু যখন ই তার ফটোটা চোখের জল আর বাধা মানলো না। 

জার্নাল টা খুলে দেখলাম। আথিরা এটা আমাকে দিয়ে গেছে ,এ যে এক অনন্য সম্পদ। তার মনের কথা।ডেট দেওয়া আছে কয়েকটি পাতায়। আমাদের কিছু সুন্দর মুহূর্তের ফটো। পাতা ওল্টাতে শেষ দিকে একটি পাতায় একটা খাম আটকানো দেখলাম। ভেতরে একটা চিঠি ,আথিরার লেখা। 

"নীল যখন এই চিঠি তুমি পড়বে তখন হয়তো আমি আর থাকবো না আবার এটাও ঠিক তুমি এই চিঠি পড়ছো মানে তুমি আমার কাছে পৌঁছে গেছ। নীল গেছিলাম তোমার কাছে কিছু ইনফরমেশন নিয়ে চলে আসতে কিন্তু তোমাকে যত জানলাম ,দেখলাম, তোমাকে তত ভালোবাসলাম। কেন জানিনা মন আর পারছিলো না এই দোটানার মধ্যে থাকতে। দেখলাম ভালোবাসার শক্তি অনেক । 

ভয় ছিল সব সত্যি বলে যদি তোমাকে হারাই। 

ফিরে এসে আমরা প্রোডাক্ট লঞ্চ করলেও জানতাম বেশিদিন মার্কেটে বেশিদিন টিকতে পারবো না। 

আরো একটা বোধ কাজ করছে ভগবান এর থেকে ভয় আর অপরাধ বোধ। সব নিয়ে একসাথে এক ডিপ্রেশন আসছে। বাড়ির লোক সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে কনসাল্ট করেছে কিন্তু আমি তো জানি আমার মনের কথা। কেউ বুঝবে না এ যার হয় সে জানে। তাই আমার পুরো সত্তাতেই তুমি চেয়ে আছো নীল।তোমার অনুপস্থিতি আরো কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে দিন দিন। প্রেম ,ভালোবাসা দুঃখ রাগ এই আবেগ গুলো শক্তি র ই গতিময় রূপ। পার্থিব শরীরও 

 শক্তির একটা রূপ। কিছু ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রা যে সেই শক্তির সাথে মিলিয়ে দিতে পারবে নীল। পার্বতী তো শিবের শক্তিতেই মিলে যায় .......

ওনার কাকা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে বললেন ,মাই সন প্রমিস মি ইউ উইল ভিসিট হিয়ার এভরি নাউ এন্ড দেন ,কারণ তোমার মধ্যে যে আথিরা কে অনুভব করতে পারবো। 

হোটেল ফিরে দেখলাম একদম একা হয়ে গেছি।একটা আনচান ভাব মনে । সব থেকেও কিছু একটা নেই। এইতো বেশ ছিল মন বুঝত সে কোথাও না কোথাও আছে। সত্যিই সে আজ ভ্যানিশ হয়ে গেল।

তারা অনেক করে থেকে যেতে বলেছিলো। যোগসূত্র যে বিচ্ছিন্ন। 

আথিরার যে শক্তির সন্ধান পেয়ে গেছে। কোনো কি যোগসূত্র আছে এই দুই দুনিয়ার ?এইসব ভাবতে দেখি তার জার্নাল টা । যাতে আছে তার ভাবনা ,তার অস্তিত্ব ,আর তার ছোয়া । সেটাকেই জড়িয়ে ধরলাম। 

ত্রিভান্দ্রাম স্টেশন এ বসে আছি। বিকেল ৫ টা ৫ মিনিট এ ট্রেন। আথিরার স্মৃতি বিজড়িত এই ত্রিভান্দ্রাম এ জানিনা আর কোনোদিন ফিরে আসা হবে কিনা। কিছুতেই ঘোর কাটছে না। 

এভাবে চললে নিজের ওপরই নিয়ন্ত্রণ হারাবো। সমতা ফিরে আসছে না কিছুতেই। 

প্লাটফর্ম এর বেঞ্চে বসে আছি। যাত্রী ,চা বিক্রেতারা ব্যাস্ত ভাবে ছুটোছুটি করছে। জীবন তো বহমান। 

"SIRI " জানান দিলো " বিন্সি কলিং "

ক্লান্ত ও বিষাদ মেশানো গলায় "হ্যালো "বললাম ,নিজের গলা নিজেই যে চিনতে পারছি না । 

 ওপাশ থেকে উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো নীল তুমি কোথায় ,অফিস এ ছুটি নিয়েছো ,ফোন ও তোমার সুইচড অফ, আই এম রিয়েলি টেন্সড। একটা ট্রেন ঢুকতে কোলাহল বেড়ে গেল ,বিন্সি গলা শোনা যাচ্ছে না আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসছে। স্যাটেলাইট যোগাযোগের এই ব্রিজ এর মধ্যে দিয়ে প্রানপনে চাইছি প্রাণ এর মধ্যে ফিরতে। কানে কানে কেউ যেন বললো "থেকে যাও না এখানে" । স্থবির হয়ে বসে আছি। সামনে ১ নম্বর প্লাটফর্ম এ দেখছি এর্নাকুলাম যাবার ট্রেনটা ঢুকছে। 

সমাপ্ত

 

© অনিরুদ্ধ

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance