দাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি
দাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি
ফার্স্ট ডিজার্ভ দেন হ্যাভ ইট -এমনিই এক উপদেশ এসেছিলো কলেজ এ পড়ার সময় ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি রাখতে গিয়ে । তখন ছিল কে.বি.সি - র যুগ। দাড়ির প্রতি আমার দুর্বলতা গোঁফ এর রেখা ওঠার সময় থেকেই। কতবার বাবা বলেছে ক্লিন সেভ কর,কিন্তু আমি সেই চে গুয়েভারা মার্কা দাড়ি রাখতাম।
যাই হোক চাকরি পেয়ে আর পায় কে সেই ফ্রেঞ্চ কাট রাখতে শুরু করেছিলাম। বলতে বাধা নেই এটা স্যুট ও করে গেছিলো। বস ও একদিন বলেই দিলো যে ইয়ে তুমহারা পহেচান হে ,ইস্কো ঠিক সে দেখভাল করো। কলিগ আর এক কাঠি উপরে যায় ,তার ভার্শন ছিল , য়ে তুমাহরী শান হে।
তো বস ইস অলওয়েজ রাইট ,বসের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছিলাম। ঠিক চলছিল আমি আর আমার দাড়ি । বাধ সাধলো বিয়ে ঠিক হতে ,আরে না না এরেঞ্জ ম্যারেজ ।সেই চিরাচরিত পেরেন্টস এর চাপ ,ক্লিন সেভ করে বিয়ে করতে হবে।তার সাথে যুক্ত হলো শাশুড়ি ও শশুর মশাই ও ।
তাদের সবাইকে ডজ করা গেলো। (কি করে -সে গল্প আরেকদিন).
কাট টু ১২ বছর পর-কিছু পাকা দাড়ি টিউব লাইট এর মতো জ্বল জ্বল করছে ।এই কিছু দিন আগে চুল ছোট করে ফেস বুক এ ফটো দেয়া তে আমার মা তো চিনতেই পারেনি আর মন্তব্য করলো তোর প্রোফাইল এর এই বুড়ো কিম্ভুতকিমাকার ছবিটা কার ?কি দিনকাল পড়লো!
শ্বশুর বাড়ি থেকে রেসিস্টেন্স সব থেকে বেশি হয়েছে আরো ।তারাও দাড়ি না রাখার পক্ষে ।
একটি ঘটনা এর জন্য দায়ী ।শ্বশুর শাশুড়ি আসছে আমার এখানে মাদুরাই তে ।সেদিন ছিল মাসের শেষ দিন সেলস ক্লোসিং এর দিন ।এমনিতেই টীম এর ছেলেদের দিয়ে টার্গেট করানো আর গরু চরানোর মধ্যে কোনো তফাৎ নেই । এই আপাত বিধ্বস্থ চেহারা নিয়ে ট্রেন এ উঠেছি রিসিভ করবো বলে ,এক সহযাত্রী ছোকরা বলে কিনা ওই দেখুন আপনাদের ড্রাইভার এসে গেছে.ব্যাস আর যাই কোথায় শাশু মা তো তাদের এই মারে .....এরপর যা হয় সব কোপ ওই দাড়ির ওপর । বাড়ি ফিরে তাদের মেয়েকে পার্টি বদলিয়ে ছাড়লো । সাধের দাড়ি আর রইলো না।মনের দুঃখে আমার চুলের স্টাইল টাই বদলে ফেললাম ।ক্লিন শেভ এন্ড ব্যাকব্রাশ ।পুরোদস্তুর কর্পোরেট লুক ।সবাই খুশি,আমি ছাড়া ।
কাট টু লকডাউন ,চেন্নাই ।
চুলের তো লোকডাউন নয়,তাই একটা ট্রিমার্ কিনে ফেললাম ।বৌ কে বললাম চুল টা কেটে দিতে ,সে তো এক কোপেই এক খাবলা তুলে ফেললো ।অগত্যা ব্রাহ্মণ সন্তান হয়েও মায়ের সামনে নেড়া হতে হলো সে এক আমার অন্ধকার দিন গেলো।
কিছুদিন পর ,চুল কিছুটা বেড়ে গেছে ।পুরো কদম ছাট। আবার দাড়ি রাখার সুষুপ্ত ইচ্ছাটা চাগার দিয়ে উঠেছে।
রাখতে শুরু করলাম ।এবার ছাগল দাড়ি দিয়ে শুরু করলাম ।থুতনিতে হালকা দাড়ি,ভালোই লাগছে আমার আর আমার ইগোর ।এক্সারসাইজ হচ্ছে বেস্ট মেডিসিন চল্লিশ এর পর । এক্সারসাইজ করে এক্সট্রা ফ্যাট ঝরিয়ে একেবারে ফিট এন্ড ফাইন সঙ্গে গোটি।
একচোট হয়ে গেলো এই দাড়ি রাখা নিয়ে বৌয়ের সাথে ,যেটা নাকি রাস্তার 420 মার্কা ছেলেদের মতন লাগছে ।
দুপুর এ শুয়ে একটা গান শুনছি -হাবিবি য়া নূর আল -ঐন্ ,এ এম আর দিয়াব এর । হটাৎ দেখি আমি এই গান টা গাইছি আমার শশুর বাড়ি ফ্ল্যাট এর সামনে ।কল্পনা করুন ফ্ল্যাট টা যেটা GT রোড এর ওপর ।দুপাশে ফ্ল্যাট আর দোকান ।লক ডাউন এ আমি এই চুল আর গোটি নিয়ে চেক লুঙ্গি আর স্নিকার্স পায়ে দিয়ে গান গাইছি.পাশে বড় সাউন্ড দুটো বক্স। এই ঈজিপ্টসিয়ান গানের মানেটা ভয়ঙ্কর
হাবিবি য়া নূর আল ঐন্ (মাই ডার্লিং ,গ্লোও ইন মাই আইস )
য়া সাকিন খায়ালি (হু লাইভস ইন মাই ফ্যান্টাসিস )
আশিক বাকিল সনীন (আই হ্যাভ এদরদ ইউ ফর ইয়ার্স )….
আমি গান করতে করতে নেচে যাচ্ছি সুর এ মোহিত হয়ে ।আর আমার মেয়ে আমাকে তাল দিয়ে যাচ্ছে একটি লাঠি নিয়ে ।পাশাপাশি ফ্ল্যাট এর লোকজন বেরিয়ে এসে এনজয় করছে ও চিয়ার করছে।
ব্যালকনি থেকে বৌ দেখছিলো ,দেখি দরজা বন্ধ হয়ে গেল.শ্বশুর মশাই জানলা র কাঁচ টেনে দিলো।
হটাৎ শুনি গুণ গুন্ আওয়াজ ,ভাবলাম হেলিকপ্টার থেকে আমার পারফরমেন্স এর জন্য ফুল ছড়াচ্ছে ।মৃদুমন্দ থুতনিতে টান পড়তে ঘুম টা ভেঙে গেল ।দেখি সেই ট্রিম্মার দিয়ে বৌ এক কোপে আমার সাধের ছাগল দাড়ি উড়িয়ে দিলো।