ভিজিটিং কার্ড
ভিজিটিং কার্ড
বিবাদী বাগে কলকাতার প্রায় সবকটি ব্যাংকের হেড অফিস অবস্থিত। সেখানেই একটি ব্যাংকের ম্যানেজার ইন্দুভূষণ দাসের সাথে দেখা করতে এসেছে প্রিয়রঞ্জন । পিয়ন তাকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে এক কাপ চা দিয়ে গেছে। ১০ মিনিট হয়ে গেলও চা টা ওভাবেই পরে আছে এবং ঠান্ডাও হয়ে গেছে। প্রিয়র মোটেও সেদিকে খেয়াল নেই বরং তার ভিতরে অসম্ভব অস্থিরতা ও উৎকন্ঠার ঝর বয়ে চলেছে। কোন পন্থায় সে ইন্দুবাবুর শক্ত মন পোক্ত ভাবে জয় করতে পারবে মনে মনে তার একটা পরিকল্পনাও এটে নিল।
ইন্দু বাবু হলেন ইরাবতীর বাবা। শুধু ইরার নয়!! একাধারে মোট তিনটি কন্যা সন্তান ও একটি পুত্র সন্তানের জনক তিনি। ইরা হল তার মেজো মেয়ে। তিন কন্যা সন্তানের পর জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান। অনেকটা ৩-১ গোলে জেতার মত ব্যাপার। তিনটি গোল খেয়েও হাল ছাড়েননি তিনি, বরং একটি পুত্র সন্তানের আশায় বুড়ো কালে ছক্কা হাকানোর মত এক ছক্কাতেই বেজায় খুশি। তাতে যদি কন্যাদের প্রতি তার এতটুকু টান কমতো বা অনীহা আসত তবে একটু স্বস্তি পেত প্রিয় ।
কেননা তাহলে তখন সে ইরা কে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করত এবং ইরার বাবা তাতে রাগ না করে বরং হাল ছেড়ে বাঁচত!! কিন্তু ছেলের পাশাপাশি মেয়েদের প্রতিও অগাধ ভালবাসা তার। আর সে জন্যই একটা বাবার বুকে ছুরিকাঘাত করে সেই রক্ত পান করে কোন প্রকারের সুখ আহরণ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ প্রিয় । আর তাই বিবেকের আদালতের রায় পালন করার জন্যই খোদ ইন্দু বাবুর সামনে তার অফিসেই এসে হানা দিয়েছে সে। উদ্দেশ্য- যেভাবেই হোক ইরার প্রতি তার ভালোবাসার কথা ওনাকে জানাতে হবে।
-“স্যার আপনারে ভিতরে যেতে বলেছে। সোজা গিয়ে ডান দিকের রুমটাই ম্যানেজার স্যারের” পিয়নের কথায় সেদিকে তাকাল প্রিয় এবং দুরুদুরু কাঁপা কাঁপা বুক নিয়ে ধীরে ধীরে এগুলো সে ইরার বাবার রুমের দিকে। কিন্তু এখনও সে ঠিক করেনি কিভাবে শুরু করবে সে, ইন্দু বাবু যদি বদ মেজাজী হন তবে তো আর রক্ষে নেই। তবে দুনিয়ার সব মেয়ের বাবারাই খুব রাগী হয় বলেই ধারণা তার। দরজার কাছে দাড়িয়ে বলল প্রিয় - “আসতে পারি?” প্রিয়র দিকে না তাকিয়েই ম্যানেজার সাহেব বললেন – “yes come in”
জড়োসড়ো হয়ে প্রিয় ঢুকলো রুমের ভিতরে। প্রিয় খেয়াল করলো ইন্দু বাবু কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব আনন্দিত, পা ঝাকাচ্ছেন মাঝে মাঝে, গুন গুন করে গানও গাইছেন এবং মুখ টিপে টিপে হাসছেন। কিছুদিন হল কোথাকার কোন বিলেত ফেরত ডাক্তারের সাথে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন তিনি। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন এবার মেজো মেয়ের পালা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ হওয়া সত্ত্বেও প্রিয়র কপাল ঘামছে। তবে কি প্রিয় প্রচন্ড ভয় পেয়েছে? কিন্তু ভয় পেলে তো চলবে না!! যদিও প্রচণ্ড দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিতে চলেছে সে। কিন্তু মনকে দুর্বল হতে দিলে তো চলবে না। এই মুহূর্তে তাকে ভীষণ শক্ত থাকতে হবে। আর সে জন্যই মনের ভয় কে দূর করার জন্য সামনে বসে থাকা হবু শ্বশুর কে নিয়ে একটা কবিতাও লিখে ফেলল মনে মনে–
“”মুখ টিপে ওই হাসি- তোমার, ভীষণ ভালোবাসি তোকে,
লাগছে একটা খাসি আমার, হাতে আছে রাশি আমি,
বাজাব তোর বাঁশি তাতেও, হবেনা মোর কাশি ওরে,
আমি যে এক চাষী গলায়, দিতেও পারি ফাঁসি আমার,
লাগছে ভীষণ হাসি,আমি একটা বিড়াল পুষি তার,
নাম রেখেছি পুসি তোকে, মারবো একটা ঘুসি মাথায়,
গজাবে তোর ঠুসি তাতেই, লাগবে আমার খুশি তোকে,
খাওয়াবো আজ ভুষি তাই, আঙ্গুলটা মোর চুসি।””
এরপর আর কোন লাইন মাথায় এলোনা। যদিও এতে টনিকের মত কাজ হয়েছে। সে তার বুকটা যথা সম্ভব টান টান করে গিয়ে দাঁড়ালো ইন্দু বাবুর সামনে। কিন্তু ইন্দু বাবু এখন সেদিকে না তাকিয়ে কয়েকটা ফাইল নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন-
-“বসুন। বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?”
ঘরটা এতটাই সুনসান ও নীরব যে ঘড়ির কাঁটার টুক টুক শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। প্রিয় সামনের একটা চেয়ার টেনে তাতে বসে পড়ল এবং বিনা ভূমিকায় নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল – -“আমি আপনার মেজো মেয়ে ইরা কে ভালোবাসি!! প্রচন্ড ভালোবাসি। ওকে বিয়ে করতে চাই!!”…!!!
ইন্দু বাবুর ব্যস্ততা থেমে গেল। গুন গুন গান এবং মুখ টিপে হাসিও মিলিয়ে গেলো, এমনকি নড়াচড়া পর্যন্ত থেমে গেল। সাথে সাথে ঘড়ির কাঁটার শব্দও মনে হচ্ছে থেমে গেছে। প্রিয় এখনও নির্বিকার!! স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইন্দু বাবুর দিকে। এবার ইন্দু বাবু ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকালেন সামনে বসে থাকা জন্তুটার দিকে। জন্তু বললাম এই জন্য যে, সাধারণত কোন ঘৃণ্য পশুর দিকে আমরা ঠিক এভাবেই তাকাই। কিন্তু হঠাৎ কি যেন হল প্রিয়র, নীরবতা ভেঙে ছটফট করার ভঙ্গিতে বলল –
-“প্লিজ আপনি আগেই উত্তেজিত হবেন না। দয়া করে আমার সম্পূর্ণ কথা শুনবেন এবং তারপর আমাকে যা খুশি বলবেন।”
ইন্দু বাবু ধীরে ধীরে চেয়ারে হেলান দিয়ে একই ভঙ্গিতে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে থাকলেন, কিন্তু মুখে একটি আওয়াজ পর্যন্ত করলেন না। যেন পাথর হয়ে গেছেন। তার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বলে দিচ্ছে কি ভয়ংকর রাগ তাকে চেপে ধরেছে। ফোঁস ফোঁস শব্দে কাল নাগিনী সাপের ফনার মত যখন তখন ছোবল বসাতে প্রস্তুত তিনি।
আচ্ছা পৃথিবীর সমস্ত কন্যার বাবারা এমন নিষ্ঠুর কেন? মেয়ের প্রেম কে কিছুতেই তারা মেনে নিতে চান না কেন? মেনে না নিক, কিন্তু মেয়ের পছন্দ কে একটু যাচাই বাছাই তো করতেই পারে!! কিন্তু নাহ!! মেয়ে যদি রাজ্যের রাজপুত্রকেও ধরে আনে তবুও বাবার কাছে সেই ছেলে মুচি, মেথরের সমতুল্য।
ইন্দু বাবু এই মুহূর্তে প্রিয়র দিকে অনেকটা সেই দৃষ্টি নিয়েই তাকিয়ে আছেন। ঠিক যেন একটা মেথর এই ভর দুপুরে ব্যাংকের ম্যানেজারের রুমে এসে বলছে,- “স্যার , আপনার বাড়ির ট্যাংক পরিষ্কার করতে হবে? লাগলে বলবেন, ভাবী শ্বশুর বলে আপনার কাজ ফ্রীতে করে দেব। এই নিন আমার কার্ড। এতে আমার নাম্বার দেয়া আছে। যখন ইচ্ছা ফোন করবেন”।
আচ্ছা মেথরদের কি ভিজিটিং কার্ড হয়? যদি হত তবে প্রিয়র কার্ড হত অনেক টা এমন “শ্রী প্রিয়রঞ্জন সরকার সভাপতি, কেন্দ্রীয় মেথর কমিটি, বিবাদী বাগ,কলকাতা। চলমান দূরভাষ : ৯৮৩০০-xxxxxx” এমন সময় হঠাৎ করে পিয়নের আগমন হল এবং খানিকটা বিচলিত ভঙ্গিতে বলল – -“স্যার, গ্রাহকদের টয়লেটের কমোড নষ্ট হইয়া গেছে গা। হাজার জল ঢেলেও কাজ হচ্ছে না!! উপরে ময়লা ভাসছে। মনে হয় মেথর ডাকতে হবে । আমি এখন কি করব স্যার?”
ইন্দু বাবু পিয়নের দিকে নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোমল সুরে বললেন – -“ময়লা গুলো একটা পিরিচে নিয়ে এসো, আমি বসে বসে খাই!! অনেক দিন ময়লা খাইনি !!”
পিয়নের মুখটা দপ করে নিভে গেল। ইন্দু বাবু হুংকার দিয়ে বললেন – -“Get Lost!!!”
সাথে সাথে পিয়ন দৌড়ে পালালো। এবং ইন্দু বাবু প্রিয়র দিকে পুনরায় আগের মূর্তি ধারণ করলেন এবং খানিকটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন –
-“তোমার নাম কি?”
-“প্রিপ্রি প্রিয় … প্রিয়রঞ্জন”।
-“শোন প্রিয়রঞ্জন , তোমাকে আমি ১০ মিনিটের সময় দিলাম,
এর ভিতরে যা কিছু বলার বলে বিদায় হও”। প্রিয় বেশ খুশি হল।
১০ মিনিট সময় তার জন্য অনেক। দিগ্বিদিক না ভেবে সে বলা শুরু করল –
“আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে ইরার সাথে আমার পরিচয় হয়। বলতে আপত্তি নেই, ইরার মত মেয়ে এ যুগে মেলা ভার। প্রথমে বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হলেও পরে ধীরে ধীরে তা ভালবাসায় রূপান্তরিত হয়। আর আজ সেই ভালবাসা এসে ঠেকেছে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া একটি মুহূর্তের জন্যও থাকতে পারিনা, হয়তো বাঁচতেও পারবনা একে অপরকে ছাড়া।
আমরা অনেক ভেবেচিন্তে দেখেছি We are made for each other. আপনি ভাবছেন নির্লজ্জের মত এসব কথা আপনাকে কেন বলতে এসেছি? আসলে আমার বাবা নেই!! সে বেঁচে থাকলে তিনিই আসতেন আপনাকে কথা গুলো বলতে। আমি আর ইরা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেননা ইরার ধারণা আপনি কোনদিনই আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবেন না। কিন্তু জানেন, ইরা আপনাকে কষ্ট দিতে চায়না।
প্রচন্ড ভালবাসে ও আপনাকে। আজ সন্ধ্যা ৬ টার ট্রেনে আমাদের পালিয়ে যাবার কথা। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বেশ কয়েকদিন ধরেই ও শুধু আপনার জন্য কাঁদে আর বলে ‘বাবাকে আমি এতবড় কষ্ট কিভাবে দেব?’। দেখুন আমাকে দেয়া ওর শেষ কয়টি এসএমএস, শুধু আপনাকে ঘিরে। ওর চোখের ভিতরে আমি আমার প্রতি ভালবাসা আর আপনার প্রতি অপরাধ বোধ চরমভাবে ভাবে লক্ষ্য করেছি। ইরা, না পারবে আমাকে ছেড়ে থাকতে, না পারবে আপনাকে কষ্ট দিতে। তবুও আমি ওকে ধৈর্য্য ধারন করতে বললে, ও জানায়, আপনি ওর বিয়ে ঠিক করেছেন অন্য কারো সাথে। আর তাই আজ আমাদের এই কঠোর সিদ্ধান্ত।
আমি জানি আমি ইরা কে নিয়ে পালালে হয়তো সুখী হবো, কিন্তু আপনার মনে কষ্ট দিলে সেই কষ্ট অভিশাপ হয়ে সারা জীবন দংশন করবে আমাদেরকে। আপনি হয়তো ভাবছেন তাহলে আপনাকে কেন এগুলো বলছি!! আমি শুনেছি আপনিও ভালোবেসেই বিয়ে করেছেন। তাই ভাবলাম প্রেমিক মনের আকুতি বোঝার ক্ষমতা হয়তো আপনার থাকবে, যেখানে আপনি নিজেই এক সময় প্রেমিক ছিলেন। এ ছাড়াও আপনি আমার বাবার মত। আপনি কষ্ট পাবেন এমন কিছু আমিও করতে চাইনা ‘বাবা’!!”
মনের অজান্তেই প্রিয় এখানে ইন্দু বাবুকে ‘বাবা’ সম্মোধন করে ফেলল। ইন্দু বাবু অবশ্য একইভাবে নির্বিকার ও নিরুত্তর দৃষ্টি নিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছেন। কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। শ্রোতার প্রতিক্রিয়া বুঝতে না পারলে বক্তার জন্য বক্তব্য পেশ করা খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তবুও প্রিয় বলে চলল –
“তাই ইরা কে না জানিয়েই সোজা চলে এসেছি আপনার কাছে, একটিবার সবকিছু খুলে বলতে। আমি জানি এগুলো শুনে আপনি হয়তো ইরার পায়ে শিকল বেঁধে দেবেন, জোর করে ওকে আপনার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইবেন। কিন্তু আমি শুধু এতটুকুই আপনাকে বলতে এসেছি যে, আমার দায়িত্ব আমি পালন করে গেলাম। কিন্তু আপনি ইরা কে আটকাতে পারবেন না।
কোন ভাবেই না। কারণ আমাদের ভিতরের বোঝাপড়া সম্পর্কে ভগবান ব্যতীত আপনার বা দুনিয়ার আর কারো কোন ধারণা নেই। আজ নাহয় কাল, কাল নাহয় পরশু আমার কাছে ও আসবেই। দুঃখ শুধু একটাই সবাই আমাকে আর ইরা কে খারাপ জানবে এবং সমাজে আপনার সম্মানহানি ঘটবে। যা আমি কখনই চাইনা, তাই আপনার কাছে বলে গেলাম”।
১০ মিনিটের আগেই শেষ হলো প্রিয়র বক্তব্য। তারপর ট্রেনের টিকিট দুটো ইন্দু বাবুর টেবিলের উপরে রেখে চোখের জল মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো এবং ইন্দু বাবুকে একটা প্রণাম করে বেরিয়ে আসতে চাইলো। কিন্তু পিছন থেকে ইন্দু বাবু ওকে থামালেন এবং চেয়ারে দোল খেতে খেতে বললেন –
-“টিকিট দুটো নিয়ে যাও। তোমরা আজ ৬ টার ট্রেনেই পালাবে এবং ওই ট্রেনের কোন এক বগিতে আমিও থাকবো!! তারপর তোমরা যেখানে গিয়ে বিয়ে করবে বা পালিয়ে থাকবে সেখানে আমিও থাকবো তোমাদের আশপাশে। দূর থেকে আমি আমার মেয়ের কান্না দেখবো। এবং যখন দেখবো ও সেই ছোট্ট খুকুর মত ‘বাবা বাবা’ বলে কাঁদছে ঠিক তখনই ওর সামনে গিয়ে হাজির হব!! ছোট বেলায় যেভাবে ওর কান্না থামাতাম ঠিক সেইভাবে বুকে জড়িয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওর কান্না থামাবো। কিন্তু খবরদার, আগে থেকে এগুলোর কিছুই যেন আমার মেয়ে জানতে না পারে। আমিই হবো পৃথিবীর প্রথম বাবা যে কিনা মেয়ের সাথে নিজেও পালিয়েছে”!!
বলে হো হো করে অট্টহাসি দিলেন ইন্দুভূষণ বাবু । এবং একটু গম্ভীর হয়ে একই সাথে বললেন-
-”সিনেমার গল্পের মত ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করে আমার মেয়েকে যদি কষ্ট দাও, বা কোনদিন যদি আমি তা টের পাই তবে খুন করে ফেলবো তোমাকে সেদিন।” প্রিয় হতবুদ্ধি হয়ে জড় বস্তুর মত দাঁড়িয়ে আছে। নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছে না। জীবন এত মধুর? এত মিষ্টি? সে স্বপ্ন দেখছে নাতো? কোন হাসি নেই, কান্না নেই, সুখ নেই, দুঃখ নেই, তবুও তার দুচোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। মানুষ কষ্ট পেলে চোখ দিয়ে জল পড়ে আবার সুখের খবর পেলেও চোখ দিয়ে জল পড়ে । তবে কিসের জল এটা? এত জল কোথায় ছিল? তবে কি সুখ ও দুঃখের বাইরেও অন্য কিছু আছে? হয়তো আছে, হয়তো নেই। প্রিয় তার ভাবী শ্বশুর কে বলল –
-“আপনি কাঁদছেন?” ইন্দু বাবু প্রিয়র এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে প্রিয়র কাঁধে হাত রেখে বলল –
-“অনেক বড় সাহসের পরিচয় দিয়েছ তুমি। I am proud of you. সব ছেলে এবং মেয়েরা তোমার মত হলে হয়তো অধিকাংশ বাবা মায়ের মুখে চুনকালি পরতো না”। বলে আবারও হো হো করে হেসে দিলেন তিনি। পুরো ঘটনাটার কিছুই জানেনা ইরা, এবং যেদিন জানবে সেদিন কি প্রতিক্রিয়া হবে তার, সেকথা ভেবে আরোও জোরে জোরে হাসলেন ইন্দু বাবু । এমন সময় আবারো পিয়নটা আবার দুম করে আসল এবং বলল –
-“স্যার, অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা ম্যাথরের ভিজিটিং কার্ড পেয়েছি। তাকে কি ফোন দিয়ে আসতে বলব?” এবার আর পিয়নের প্রতি তেমন কোন বিরক্তি প্রকাশ করলেন না ম্যানেজার সাহেব। বরং নরম সুরেই বললেন –
-“হ্যাঁ বলো”। কেন জানি প্রিয়র খুব ইচ্ছা হল পিয়নের কাছ থেকে ভিজিটিং কার্ড টা নিয়ে দেখতে!! মেথরটার নামও কি প্রিয়রঞ্জন ? নাকি অন্যকিছু? অন্যকিছুই হবে হয়তো। প্রিয় অনেক কষ্টে সেই ইচ্ছাটা দমন করলো, তবে এটা তো জানতে পারল যে – মেথরদেরও ভিজিটিং কার্ড হয়!!