মা
মা
আচমকাই ঘুমটা ভেঙে গেল,জমাট অন্ধকারের মধ্যে ধড়মড় করে জেগে উঠলো সে। এরকম দুঃস্বপ্ন সে আগেও দেখেছে। সেই স্বপ্নে আততায়ীর চোখ, তাক করা বন্দুক , এইসব আসে, মিলিয়েও যায়।যখন ভয়ংকর-সুন্দর পৃথিবীর শব্দ-গন্ধ-স্পর্শে, ক্ষুধার্ত বাছাদের আওয়াজে তার সংবিৎ ফিরে আসে...কিন্তু কই, আজ সে-সব মিলিয়ে গেল না তো! হায় হায়, সেই কাল সকালের পর থেকে বাছারা খাবার পায়নি আর।
সকালে বেরিয়েই সে বাটিতে রাখা খাবার দেখেছিল... বাড়ির উঠোনে। কাছে যেতেই অন্ধকার। তারপর কেউ তাকে শক্তহাতে ধরে , একটা গরাদঘেরা ছোটো কুঠরিতে রেখে দিল। গরাদে মাথা ঠুকে ঠুকে তার রক্ত বেরিয়ে গেল, কিন্তু বেরোতে পারল না।
এখন সেই জমাট অন্ধকারে নীলের ছোপ। অনেক উঁচু টালির চাল চুঁইয়ে আসছে দিন। শেষ চেষ্টায় মরিয়া হয়ে সে ধাক্কা দিতে থাকে গরাদে, সে ধাক্কায় কাত হয়ে পড়া তার কারাগারের আংটার দরজা খুলে যায়, সে বেরিয়ে আসে, দুর্বল পাখা আর অজেয় মনোবলের ভরসায় উড়াল দেয় ঘরের চাল আর দেওয়ালের মাঝের ফাঁকটুকু দিয়ে। আঃ।
গড়িয়ে পড়া খাঁচার ধাক্কায় আগুনের তাওয়াটা উল্টে পড়ে ডাঁই করা রাখা শুকনো কাঠ-পাতার ওপর। গ্রামের প্রান্তে, নদীর পাকদণ্ডী পথের রাস্তায় মা আর ছেলের আস্তানা। নদী থেকে জল আনতে যাওয়ার পথে মা ভাবছে, ছেলেটা ঘুম থেকে উঠলে তাকে আজ বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পাখিটাকে ছেড়ে দিতে বলবে। এখানে চিতার খুব উপদ্রব, তাই ঘরের দোর বাইরে থেকে বন্ধ করে এসেছে সে।