Manab Mondal

Abstract Inspirational

5  

Manab Mondal

Abstract Inspirational

অপেক্ষা

অপেক্ষা

6 mins
1.3K


নীর্জন সমুদ্র সৈকত ভিজে বালিতে পা ছড়িয়ে বসেছিলাম সমুদ্রের সোতের বলা না না গল্প শুনছি।।গোয়াতে না এসেলে সমুদ্র কে একা পাওয়া যায়না। প্রথম দিনটা জার্নির ক্লান্তিমোচন করতে হোটেলে ঘুমিয়েই কাটিয়েছি... তারপর দ্বিতীয় দিন সমুদ্রের তীরে বিস্তীর্ণ বালুচরে বসে সৈকত দর্শনার্থী আর সমুদ্র দেখে সময় কাটাতে খুব ভালো লাগছে। অনেকদিন পর মনটা ছুটি পেল আমার ।হঠাৎ ঘাড় ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখি বাচ্চাদের মতো ঝিনুক কুড়াছে একটা মেয়ে।দেখতে দেখতে চোখটা আটকে গেল । তার দূরে বালির ওপর দুদিকে হাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটা কি যেনো বললো। খুব চেনা চেনা লাগছে! 

গোয়া মানে পঞ্চাশটার ওপর সৈকতে আছে। আরোসি গ্রামের এই সমুদ্র সৈকতে জনসমাগম খুব একটা নেই। কিন্তু মেয়েটা? একটু ভালো করে খেয়াল করতেই মাথার মধ্যে স্মৃতির পাতাগুলো যেন দুলে উঠলো। সুপ্রান্তিকা না? কিন্তু ও এখানে? একা, এভাবে? এই ভঙ্গিতে কেন? ওকি একা এসেছে? একরাশ প্রশ্নের ঢল নামল মাথায়। উঠে দাঁড়ালাম। তারপর সমুদ্র স্রোত গুলোর মতো উৎসাহ নিয়ে। এগিয়ে গেল এক পা একপা করে ওর দিকে দিকে মাঝখানে অবশ্য আছে অনেক কটা বছর ।

জানি না ও আমায় চিনতে পারবে কিনা ? অনেক বদলে গেছি আমি। যদিও ও একই রকম আছে| একটু সামান্য মোটা হয়েছে বোধহয়। কাছে গিয়ে পিছন থেকে ডাকলাম " সু"।জ্যা-মুক্ত ধনুর মতো সোজা হয়ে দাড়ালো ঐ মেয়েটি ।সোজা-সুজি তাকাল আমার চোখে। পরিস্কার যেন মেয়েটির চোখের অবিশ্বাস আর বিস্ময়ের রেখাকে দেখতে পেলাম। সাথে মনে হলো অভিমানী চোখের জল।


মেয়েটি সহজ ভঙ্গিতে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল - "দেখুন, আপনার বোধ হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি কোন সু চপ্প কিছু না। অবশ্যই আপনার গলা শুনে মনে হলো আপনি চেনা কাউকে খুঁজছেন।তাঁর সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। তবে আমি আপনাকে চিনি। আমি তো এখন বিখ্যাত মানুষ। আপনার সাথে আলাপ হলে ভালো হতো। এতো দূরে একজন বাঙালি মানুষ বন্ধু হিসেবে পেলে। কিন্তু বিশ্বাস করুন এখানে আমি একা থাকতে এসেছি। তাই দয়া করে আপনি আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা ও করেন না।" 

স্পষ্ট একটি খোঁচা অনুভব করলো সুপ্রান্তিকা এর "ওহ! স্যরি"বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে আসলাম। আজো অভিমান কাটেনি ও? দীর্ঘ ষোলো বছরের উথ্থান-পতনের পড়েও! ষোলো বছর পিছিয়ে গেল মনটা । সেদিন কালীপূজা ছিল। পাড়ার কালীপূজায় ভোগ প্রসাদ নিতে আসা একটি বুদ্ধিমতী অথচ শান্ত, দীপ্ত চক্ষুর অধিকারীনি মেয়েটি নজর কেড়েছিল প্রসাদ বিলি করতে থাকা আমার তখন বি.এ. প্রথম বর্ষের ছাত্র আমি। মেয়েটি খালিহাতেই এসেছিল প্রতিমা দর্শন করতে । 

গরম খিচুড়ির পাতা হাতে নিয়ে এহাত-ওহাত করছিল। সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছিল আর দুটো একস্ট্রা শালপাতা আর রুমালটি‌। ভিড় ছিল না তেমন। রুমালে কিছু লেখা ছিলো সেটা দেখছিলো। 

তবে মেয়েটি দুটোই গ্রহন করে মুখে স্বস্তির হাসি দিয়ে বলেছিল -"আপনাকে রুমালটা আমি কাল দিয়ে যাব, শুনছি কাউকে নাকি রুমাল দিতে নেই.." 

উনিশ বছরের যৌবনে পা দেওয়া আমার মন উথাল পাতাল কেটেছিল সেই রাতটা।কী বলবে সে পরদিন? প্রথম ভালোবাসা বোধহয় এমন ই হয়| যথারীতি পরদিন বিকালে মেয়েটি এসেছিল তাকে রুমালটি ফেরত দিতে। একটি ধন্যবাদ এর সাথে ফেরত দিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমি পিছু ডেকেছিলাম শোনো! মেয়েটি ঘুরে দাঁড়াতেই বলেছিলাম "তোমার নামটা একটু বলবেন"

মৃদু হেসে শান্ত স্বরে উত্তর দিয়েছিল মেয়েটি "সুপ্রান্তিকা" 

আমাদের বাড়ির ছটা বাড়ি পরের ফ্ল্যাটে বাবা-মায়ের সাথে থাকে সে। পড়াশোনা করতো বি.এ.প্রথম বর্ষেই প্রথম পরিচয় এর পর প্রায়শই তার ছুটির সময় কলেজের সামনে আবিষ্কার করতে শুরু করলো সুপ্রান্তিকাকে। আমাকে ও পেয়ে যেতো ওর কলেজ কিংবা গানের স্কুলের সামনে। টুকটাক কথা হতো। সুপ্রান্তিকা প্রথম জিজ্ঞেস করতো হঠাৎ দেখা হাবার কারণ কি? উত্তরে প্রায়শই শুনতে পেত-"এইতো বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছিলাম পথে তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল ‌। ভালোই হলো।চলো একসাথেই ফেরা যাক।" 

ও আর যাই হোক,বোকা ছিল না । সে সবটাই বুঝত| বুঝেও প্রশ্রয়, হ্যাঁ একটু প্রশ্রয় ই দিত বইকী ধীরে ধীরে তার নামটা বদলে গেল সু বলে ডাকত শুরু করলাম তাকে| কত সুন্দর সেই দিনগুলি ছিল----!

এভাবেই আড়াই বছর কাটলো।হেসে খেলে, আনন্দ করে। শেষে একটা নিয়ে এসে হাজির হলো সেই দুঃসংবাদ । বাড়ি থেকে ওর বিয়ে ঠিক করেতে চাইলো। কোনো পছন্দ থাকলে সে নির্দ্বিধায় জানাতে পার বলেছিলো ওর বাবা মা। ও বাড়িতে জানানোর আগে আমার মতামত জানা জরুরী মনে করেছিল। ছুটে এসেছিল আমাদের বাড়িতে। আমি  তখনো বেকার যুবক । বাবা আমাকে বকা দিয়েছিলেন "গরীব হলেও আমার আত্মমর্যাদা থাকা উচিত।  তার বউএর দায়িত্ব নেবার মতো যোগ্যতা ছাড়া একটা মেয়ের সাথে প্রেম করা উচিত হয় নি তোমার। " 

ও কেমন যেনো ঠোট কাটা হয়ে গিয়েছিল" আমি বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে। আমার সব কিছু তো ওর । বাবার ব্যবসা ও যোগ দিলেই আর বেকার থাকবে কেন?"


মা দুম করে তখনই বলে বসলেন " বুঝছি, আমার ছেলের মাথাটা তুমিই চিবিয়েছো| এখন বুঝতে পারছিএ ওর রেজাল্ট খারাপ এর কারণ ও তুমি । তোমার তো দেখি অহংকার মাটিতে পা পরে না তোমাকে যেন আমি এইবাড়ির বা মানবের আশেপাশে না দেখি। যাও।"

একটা কথাও আর বলেনি সে দিন সুপ্রান্তিকা | একফোঁটা চোখের জলও ফেলেনি।শক্ত মুখে চলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমার সাথে আর দেখা করেনি। আমাদের মিউচুয়্যাল ফ্রেন্ড প্রিয়াকে দিয়ে অনেকবার শেষবারের মতো দেখা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম আমি।কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি।পরে শুনেছিলাম বিয়ের হয়ে গেছে ওর। কোন প্রবাসী বাঙালির সাথে।

অবাক কান্ড কাকতালীয় ভাবে জনি ভাইএর গেস্ট হাউসে ও উঠেছিলো। জনি ভাই আমার ভালো বন্ধু। ডিনার টেবিলে ওর সাথে আলাপ করিয়ে দিলো। বললো " মানব মিট এস রায়। সি ইজ এলসো এ বল্গ রাইটার লাইক ইউ..."

তবে অচেনা মানুষের মতো ই ও ব্যবহারটা করে গেলো।আমি শুনেছিলাম ওর একটা বোনিদী রক্ষণশীল পরিবারে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু মাথায় এক বিন্দু সিঁদুর নেই। গায়ে শাঁখা পলা দূরে থাক একটা গহনাও নেই। এস রায় মানে তো সুপ্রান্তিকা রায় আছে ও। জন ভাইএর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম। ও সিঙ্গেল , ইংরেজি প্রফেসর মুম্বাই। বুঝতে পারলাম বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে ওর।

সুপ্রান্তিকা একা একা সমুদ্রের পারে বসে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ও কিছু বললো না। আমি বললাম " আপানার ব্লগ পরলাম । আপানি একটা উপন্যাস লিখতে চাইছেন লিখেছেন। একটা সংক্ষিপ্ত গল্প বলি ওটা রঙ টং চরিয়ে লিখেন। একটা ছেলে একটা মেয়েকে খুব ভালো বাসতো। কিন্তু তার মনের কোন দিন সে মেয়েটিকে বলে উঠতে পারিনি কারণ মেয়েটা তার ভালোবাসার প্রস্তাব দেবার সুযোগটাই দিতে চায় নি। কিন্তু হঠাৎ মেয়েটির বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক হলো। মেয়েটা তখন জানালো সে ছেলেটিকে বিয়ে করতে চায় ‌। তাই ঘর সংসার বাঁধা জন্য যে প্রস্তুতির সময় লাগে। বিয়েটা তো মুখের কথা নয়। মেয়েটা তার বাবা মায়ের কথায় অভিমান করে ছেলেটির সাথে আর কোন দিন কথা বলেননি। অথচ ছেলেটির বাবা মা মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে কথা বলেছিলো সময় চেয়েছিলো। কিন্তু মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। ছেলেটি আজ সফল হয়েছে হয়তো। কিন্তু এখনো সে একা। সে অপেক্ষায় কাটিয়ে অনেক কটা বছর মেয়েটার অপেক্ষায়। তারপর একদিন দেখা হলো মেয়েটার সাথে তার। কিন্তু মেয়েটা তাকে ক্ষমা করলো না। তাই ছেলেটা নিজেকে সোপে দিলো সমুদ্রের কাছে।"

কথা গুলো শেষ করে আমি অন্ধকার উত্তাল সমুদ্রের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। ভয় করছিলো মনে মনে যদি ও অভিমান না ভাঙে তাহলে তো মরতে হবে ভার্জিন অবস্থায়। 

যাক এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। পিছনে থেকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ও আমাকে " এখনো সেই রকম পাগল আছো একটুও বদলাও নি। তোমার মা বাবা এসেছিলেন শুনেছি। কিন্তু ততদিনে সব ঠিক হয়ে গেছিলো আমার বাড়ি থেকে। কিন্তু পরে সংসারটা আমি করতে পরলাম না।আমিও তো তোমাকে খুঁজেছি কতো তুমি বিদেশে চাকরি করতে চলে গেছিলে। অনেক অপেক্ষা করছি , রাগ অভিমান অনেক ছিলো। হয়তো তখন পেলে খুন করে দিতাম। বাবা মায়ের ওপর একটা কথা বলার সাহস ছিলো না ,তোমার পরে ভাবলাম আমার উপরেও তো কোন দিন কোন কথা বলতে পারো নি তুমি। এমন কি বলতে পারো নি। আমি তোমাকে ভালবাসি। প্রিয়া সাথে কথা হলো তুমি নাকি এখনও বিয়ে করো নি । কার জন্যে তোমার এই অপেক্ষা?"

,,,,,,,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract