STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Romance

3  

Manab Mondal

Abstract Drama Romance

সেকেন্ড চান্স

সেকেন্ড চান্স

6 mins
12

নীলাঞ্জনা আর ফিরেবে না। ও বিয়ে করে নিয়েছে সেকেন্ড চান্স আর আমার নেই। আমার বিয়েটা ভাঙার অনেক কারণ আছে। মূল কারণ অর্থনৈতিক অবস্থা। পৃথিবীতে কোন শাশুড়ির সাথে  বৌ এর সম্পর্ক ভালো হয় না। একবার মায়ের সাথে অশান্তি হয়েছিল ছোট খাটো। আসলে আমি মাকে কোন দোষ দিতে পারি না। নীলাঞ্জনারা উচ্চ বংশীয় ব্রাহ্মণ।  ওর বাবা আত্মীয় স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিলো। আমাদের যখন বিয়ে হলো তখন ওদের বেশি ভাগ আত্মীয় উপহার পাঠিয়ে ছিলো কিন্তু বিয়েতে আসে নি। তাই মা সেই সব উপহার গুলো গ্রহণ  করেন নি ফিরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমার মা এবং বাবা পশ্চিম বঙ্গের আদি বাসিন্দা । মামা বাড়ি অবস্থা খুবই ভালো। বাবাদের অবস্থা ভালো ছিলো। ঠাকুর দাদা ভালো চাকরি করতেন জমি জায়গা ছিলো ভালোই। হঠাৎই তিনি মারা যান, ঠাকুর মা অশিক্ষিত ছিলেন, জ্ঞাতির লোকজনরা সবকিছু দখল করে নিলো। আমার এক পিসি জ্বর মারা যায় বিনা চিকিৎসায়। খাদ্য আন্দোলনের কথা মনে আছে আপনার। ১৯৬৬ সালের গোড়ায়  কথা  বামপন্থীদের খাদ্য আন্দোলনে সাড়া দিয়ে পথে নামে ছিলো বহু মানুষ। ৪ মার্চ ছাত্র ধর্মঘটে  কৃষ্ণনগরের বিশাল মিছিলে পুলিশ গুলিও চালিয়ে ছিলো। ক্ষোভ তাতে  উস্কে ওঠে স্টেশনে, মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিলো।  চারদিকে তখন প্রচণ্ড খাবারের আকাল। কোথাও চাল মিলছে না। ভুট্টা আর মাইলো খেয়ে থাকতে হচ্ছিলো । সেটাও জুটছে না সকলের। তখন বাবা এই শহরের চলে আসে এ শহরে। কিছু চাল চুলহীন। আমার ছোট মাসীর বিয়ে দেবার জন্য একটা জমি বিক্রি করতে চাইছিলেন দাদু সেটা কিনতে গেছিলো বাবা। সেই সময় বাবার জীবন সংগ্রামের গল্পটা শোনায় এক আত্মীয় দাদুকে। সমাজের নিয়ম অনুযায়ী বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েই ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে হয়। তাই মায়ের বিয়ে আগে দিতে হবে। হোক না গরীব কিন্তু পাত্র যে সৎ এবং পরিশ্রমী উন্নতি ঠিক করবেই এই দৃঢ়  বিশ্বাস নিয়ে দাদু মায়ের সাথে বাবার সাথে। চালচুলোহীন মানুষটা সংসার মা সামলেছেন মা দূর্গার মতো। দুই ননদের বিয়ে, দেওবর বিয়ে ব্যবসা করে দেওয়া সব কর্তব্য, আত্মীয়ত্বা বজায় রেখে ও। তিনি কোলকাতা শহরে বুকে দুটি বাড়ি করেছেন।আবার কিছু ভুসম্পত্তি করেছেন। তাই আমার মা কিছুটা অহংকারী। নীলাঞ্জনা ঠাকুরদা ছিলো ব্রির্টিশ আমলে পুলিশ অফিসার। অনেক সম্পত্তি মালিক হলেও ওরা সেই প্রত্তিপত্তা ধরে রাখতে পারে নি। ওর বাবারা পাঁচ ভাই বিছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পরেছিল শহরের চারদিকে। নীলাঞ্জনা বিয়ে উপলক্ষে আর প্রথম ওরা চার ভাই এক জায়গায় হলেও। ওর জ্যাঠা মহাশয় এলেন না বিবাহ অনুষ্ঠানে। একটা টিভি আর কিছু নগদ পাঠিয়ে দিলেন। ওর জ্যাঠা মহাশয় অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল ছিলেন। তাই ওর জ্যাঠার অনুপস্থিতটা মা ভালো চোখে দেখে নি।  বিয়ে পর ওর সব আত্মীয়রা আমাদের নিমন্ত্রণ করেছিলো। আমরা গিয়েছিলামও। ওর জ্যাঠা মশাই লোক মারফত নিমন্ত্রণ করলেন ওনার বিবাহ বার্ষিকীতে। তাও ওনার প্রতিনিধি আমাদের বাড়িতে পা রাখলেন না। আমাদের প্রেমের বিয়ে। আমি জাতে পোদ, এ নিয়ে ওর এক পিসি আর এই জ্যাঠা মশাই আপত্তি করেছিলেন। আমাদের বাড়িতে উনার প্রতিনিধি পা না রাখাটা আমার মায়ের কাছে ছিলো অপমানের। ওর জ্যাঠা কোন দিন ওদের সাথে সম্পর্ক রাখে নি। নীলাঞ্জনা কোন দিন ওর জ্যাঠা জ্যাঠিমাকে দেখেনি। কিন্তু বছর বছর ওকে উপহার পাঠাতো। আসলে নাকি ওর বাবার সাথেই ওর জ্যাঠার ঝামালা। কিন্তু নীলাঞ্জনাকে নাকি মানুষটা ভালোবাসে। তাই এই নিমন্ত্রণটা ওর কাছে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ওকে মা বললো " তুমি বন্ধু বান্ধবদের সাথে হুট হাট ঘুরতে যাও, কখনো এই বন্ধু জন্মদিন ওই বন্ধুর বিয়ে,  অফিস পার্টি আছে বলে, মধ্যে রাত্রিতে বাড়ি ফেরো আমি শাশুড়ি হিসেবে কোন দিন কি বাধা দিয়েছি। এটা বাড়ির সম্মানের ব্যাপার। তাই আপত্তি করছি। তোমার ব্যাক্তি স্বাধীনতায় আমি কোন হস্তক্ষেপ করবো না। তবে তুমি গেলে যেতে পারো কিন্তু আমি বুবাইকে যেতে দেবো না।" ও ভেবেছিলো আমি ওর সাথে যাবো। কিন্তু আমি গেলাম না। ও নিজের বাড়ি চলে গেছিলো। ও বলেছিল একটা বাড়ি ভাড়া করলে। ও আলু সিদ্ধ ভাত খেয়েও কাটিয়ে দেবে। কিন্তু আমার মায়ের মতো অহঙ্কারী মানুষের সাথে থাকবে না। আমি ওকে বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম। আমাদের নতুন চাকরি আমাদের পক্ষে হুট করে নতুন সংসার পাতা সম্ভব নয়। তবে এক সপ্তাহ শেষ হতে না হতে।মা নাকি ওর বাড়ি  চলে গেলো। কথায় কথায় নীলাজ্ঞানাই বলতো মা নাকি সে দিন ওর পায় ধরে ক্ষমা চেয়ে , ওকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিলো। কিন্তু ও আমাদের কোন দিন ক্ষমা করে নি। ও চাকরী ছেড়ে এমে পড়লো। আর একটা ভালো চাকুরী জোগাড় করলো, একটা ভালো বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করলো। আমার বাড়ি ছাড়লো। আমার শশুর শাশড়ি আমাকে খুব ভালো বাসতে। ওর এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারলো না। ও বললো " ও ওর মায়ের আচল ধরা ছেলে । জীবনে কোন দিন উন্নতি করতে পরবে না। তাই ও অনেক প্রতিভা থাকলেও ও চিরকাল একটা ভ্যাগাবন্ড মতো জীবন কাটাবে। ও যেহেতু আমার জন্য অনেক কিছু করেছে তাই আমি কোন দিন ওর থেকে খড়পোস হিসাবে কিছু দাবি করবো না কিন্তু আর আমি ওর সাথে থাকবো না। " আমার শশুর শাশড়ি আমাকে বোঝালো একটা ভালো চাকরি জোগাড় করতে। ওদের কথায় নীলাঞ্জনা প্রদীপ বলে ছেলেটার সাথে বেশি দিন থাকতে পারবে না। ওরা বললো "তুমি ওকে ডিভোর্স দিও না। একটা ভালো চাকরি করো। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক একটা সেকেন্ড চান্স পাবে। " কলকাতায় আমার ক্যারিয়ার নেই। মুম্বাই গেলাম ওখানে কিছু করতে পারলাম না।  বিদেশে পারি দিলাম।  টাকা পয়সা যথেষ্ট করলাম। এ দিকে প্রদীপ ওকে মুখের ওপর বলে দিলো। লাভি ইন থাকতে রাজী আছে ও। কিন্তু ও বিয়ে করবে ওর বাবা মায়ের দেখা মেয়েকে কারণ নয়তো ওর বাবা মা ওকে ওদের ব্যবসা থেকে বেড় করে দেবে।এমনকি নীলাঞ্জনার চাকরিটাও থাকবে না। নীলাঞ্জনা কোন কথা না বাড়িয়ে চাকরি ছেড়ে, নতুন চাকরি নিলো। আমার কাছে একটা সেকেন্ড চান্স এলো। আমি তারাহুড়া করে একটা বাড়ি সহ জমি বায়না করলাম।  খবরটা ওর কানে পৌছে দিলাম। ও আমাকে কিছু বললো না। আমার আর ওর একটা জয়েন্ট একাউন্ট ছিলো। সেইখানে একটা দরখাস্ত করলো ঐ একাউন্ট থেকে ওর নাম সরিয়ে দিতে।  সেখানে ও জানিয়ে দিলো ও, আমি কোন সই না দিলেও।আইনের সাহায্য নিয়ে আমার থেকে ঠিক ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। ও ভালো মেয়ে। ওর আত্মসম্মান ও বেশি। ও আমাদের কমন ফ্রেডদের জানিয়ে দিলো। ও আমাকে সেকেন্ড চান্স দিতে পারবে না। কারণ আমি যখন অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল ছিলাম তখন ও আমাকে ছেড়ে গিয়ে ছিলো।  আজ আমি অর্থনৈতিক ভাবে সফল তাই ও আমাকে কখনোই বিয়ে করতে পারবে না। কারণ তাতে লোকজন ওকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। ওকে লোভী ভাববে। ও মাত্র এক মাসের মধ্যে ওর এক পূর্ব পরিচিত বন্ধুকে বিয়ে করে নিলো। কার্ল জুঙ্গের কথা জানেন?? জুঙ্গ-এর দর্শন, শুধু মনোবিজ্ঞানকেই নয় , বরং সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রেকেও গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছে । তার ধারণাগুলি মানুষকে তাদের নিজস্ব মনস্তত্ত্ব বুঝতে এবং জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। আমি তাঁর দ্বারা প্রভাববিত। জং ফ্রয়েডের মতো যৌনতা ভুমিকাকে বেশি দেয়নি কখনো।জংয়ের সংজ্ঞা অনুসারে,অচেতন ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত অচেতনতা এবং তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করে । জুঙ্গ-এর মতে, আর্কিটাইপ হল মানুষের সম্মিলিত অবচেতনের অংশ, যা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বাইরেও বিদ্যমান এবং এটি সমস্ত মানুষের মধ্যে সাধারণ। তার মতে  আত্মা মন কি ?  মানুষের মানসিক কাঠামোর কেন্দ্র হলো মন। যা সম্পূর্ণতা এবং একীকরণের দিকে পরিচালিত করে। পার্সোনা বা বক্তিত্ব্য কি? সমাজের সামনে নিজেদের উপস্থাপন করার জন্য ব্যবহৃত একটি মুখোশ বা সামাজিক পরিচয়। ছায়া নামে একটি স্তরে কথা বলেছেন তিনি যেখানে  বলেছেন, আমারা আমাদের ব্যক্তিত্বের সেই অংশ যা আমরা অস্বীকার করি বা প্রকাশ করতে চাই না  সেটা। অ্যানিমা/অ্যানিমাস স্তরের কথাও তিনি বলেছেন।এটি হলো বিপরীত লিঙ্গের প্রতিরূপ। 'অ্যানিমা' হলো পুরুষের মধ্যেকার নারীসুলভ দিক এবং 'অ্যানিমাস' হলো নারীর মধ্যেকার পুরুষসুলভ দিক।  নীলাঞ্জনা মধ্যে এটা কাজ করতো। ও  পুরুষ মতো নিজেকে প্রমান করতে চেয়েছে বারবার। যেমন ও বারবার বলতো। " ও লেখালেখি করুক আমি চাকরি করে, ওর সব কিছু দায়িত্ব নেবো। " আমি আবার একটা অসহায় নারী মতো ওকে আকড়ে বাঁচাতে চাইতাম। তাই সমাজের কাছে নিজের কিছু করার ক্ষমতা আছে , সেটা প্রমানে তাগিদ ছিলো ভীষণ ভাবে আমার মধ্যে। এদিকে ভালো ভাবে কাগজ পত্র পরীক্ষা না করে জমিটা কেনার ফলে, আমি আমার সব সঞ্চিত অর্থ  নষ্ট করলাম। প্রায় সর্বস্বান্ত  হয়ে গেলাম। তাই জীবনে ঘুরে দাড়ানোর সেকেন্ড চান্স পাবো কিনা জানি না। তাই আবার নতুন কাউকে বিয়ে করে , ওকে দেখিয়ে দিতেও পারলাম না " হাম কিসি সে কম নেহি। " একটা পরাজিত সৈনিক মতো হারিয়ে গেলো আমার গল্প জীবনের অন্ধকারে।     


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract