STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

মায়ার সংসার

মায়ার সংসার

6 mins
22

অনেক্ষণ থেকে খাতা পেন নিয়ে বসে আছি। কিছুতেই লেখা আসছে না। কাল বই পাড়ার একটা বড় ম্যাগাজিন দপ্তরের গিয়েছিলাম। টাকার দরকার ছিলো। ওখানে সম্পাদক আমার বন্ধু, পূজার একটা উপন্যাস লিখবো বলে কথা দিয়েছি আমি। তাই কিছু টাকা অগ্রীম চাইতে গেলাম ওখানে অনেক আসা নিয়ে। আমার দূর্ভাগ্য মালিক উপস্থিত ছিলো ওখানে।
আমাকে দেখে উনি ডাকলেন ওনার কেবিনে। চা কফি না বলে আমার আর ওনার জন্য আনারস নিয়ে আসতে বলেন ওনার পিয়ন শ্যামলদাকে। তারপর তিনি আনারস খেতে খেতে বলেন" মশাই আনারস খান। আর আপনার গল্পে একটু রস নিয়ে আসুন। আপনার লেখা ভালো কিন্তু ওই একই দুঃখ কষ্টের গল্প কি করে লোক জন পড়বে?? একটু টক মিষ্টি এই আনারস মতো রসালো গল্প লিখুন। বুঝলেন। "
অনেক কথাই হলো। বুঝতে পারলাম, এ বইমেলায় আমার যে বইটা বেড়ানোর কথা ছিলো সেটাও বেড়াবে না। তাই অগ্রীম পাওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। সত্যই তো চারিদিকে এতো দুঃখ কষ্ট। সবাই তো বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। গল্প তো একটা বিনোদন, কষ্ট করে কষ্টের গল্প পড়ে আরো কষ্ট পাবেন কেন পাঠক। তাছাড়া আমার গল্পের চরিত্ররা যে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। সেই সমাজের মানুষের নুন আনতে পান্তা ফোরায়, ওরা বই কিনে পড়বে কেন??
আজ কিছু একটা লিখবোই বলে এ ঘরে একা বসে আছি। রাইটার্স ব্লক কাটানোর ভালো উপায় শুধু লিখে যাও। কিছু কাগজ নষ্ট হবে কিন্তু একটা সময় ঠিক লেখা বেড়িয়ে আসবে। কিন্তু লেখায় মন দিতে পারছি কোথায়। পাশের ঘরে রেবা মাসিমা এসেছেন। ঐ মহিলাকে একদম পচ্ছন্দ নয় আমার। কিন্তু মায়ার কাস্টমার তাই ওনার আসাটা বন্ধ করতে পারি না। কিন্তু কান খাড়া করে শুনি ওনার কথা গুলো।

শুনলাম রেবা মাসিমা মায়াকে বলছে, " তুই কতো সুন্দরী, তোর গানের গলা কি সুন্দর, কত সুন্দর আবৃত্তি করিস। এখন মেয়েরা দেখ রিল টিল করছে   কত আয় করছে। তুই একটু ফেসবুক টুক কর। দেখবি অবস্থা বদলে যাবে তোর ও। "

মায়া বললো ' মাসিমা সেইদিন কর্মী সভায় পর, ওখানে বসে না খেয়ে বাড়িতে খাবার নিয়ে এলাম কেন যেনো??আমার উনি মাংস খেতে খুব ভালো বাসেন। অথচ গত দুই মাস বাড়িতে আঁশ ধোকে নি। মোবাইল কেনার টাকা পাবো কোথায়? "

রেবা মাসিমা বললো " ইচ্ছে  থাকলে উপায় হয়। বিশ্বজিৎ দার জন্মদিন সামনের রবিবার। তিনবারে কাউন্সিলার, এবার এ মে লের টিকিট উনি চায়। তাই বড় বড় নেতাদের ডেকেছেন। সারারাত পার্টি হবে। দাদা কতটা মানবিক তুই জানিস। তোর ফোন নেই শুনে দাদা বলছিলো। দাদা তোকে আইফোন 17 কিনে দেবে বলছে। দাদা চায়,ঐদিন রাতে একটু গান গাইতে যা দাদার গেস্ট হাউজে। আমার মেয়েও যাবে। "

মায়া বললো "  দিদি বাবুদার থেকে ঠোঙা না নিয়ে, তুমি  তোমার মুদি দোকানের জন্য আমার বাড়ি থেকে ঠোঙা নিয়ে যাও কেজি পিছু দুই টাকা বাঁচাতে। অথচ সেইদিন পার্টি অফিসে আলোচনা হচ্ছিলো তোমার মেয়েকে নিয়ে। আমি জানি তোমার মেয়ে খুব ভালো নাচে । কিন্তু জানো ওরা ওর নাচ দেখে না। তোমার মেয়ে বুকে কটা তিল, পেটে কতটা তিল সেই নিয়েই বাজি ধর ছিলো ওরা। দিদি রিল টিল করে কোটিপতি হওয়া যায় না। ও সব বড়ো লোকদের ফাঁদ। তোমার ঘরে মেয়ে আমার ঘরে মেয়েকে ওরা ব্যেশ্যা বানতে চায়। তুমি ভালো করেই জানো লাখ টাকার আইফোন নিশ্চয়ই আমাকে গান গাওয়া জন্য দেবে না বিশুদা।  ওর জন্য আমাকে কাপড় খুলতে হবে কোন না কোন দিন। তোমাকে আমি মায়ের মতো দেখি তাই এরকম কথা কোন দিন বললো না আমায়, আর নিজের মেয়েটাকে ও একটু সামলে রাখুন।"
রেবা মাসিমা ফোস করে উঠলো। " অস্থানে তুলসী,
অপাত্রে রূপসী ।  ভালো জন্য বললাম, মাকুদের মতো ভাষন শুনিয়ে দিলি।  সি পি এম শুন্য হয়ে গেছে তবুও তোদের মতো আঁতেল গুলো শেষ হলো না। "
খেয়ে দেয়ে শুয়েছি। আর ভাবছি, মায়াকে বিয়ে করাটা কি আমার ভুল ছিলো?? একটা রাষ্ট্র সব সময় গরিব মানুষের চাহিদা, অধিকার গুলো থেকে বঞ্চিত করে। গরীব মানুষ গুলোর প্রতিবাদ গুলো যাতে ঐক্যবদ্ধ না হতে ,পারে তাই ভাষা ,ধর্ম, জাতপাত দিয়ে ভাগ করে  গরীব মানুষদের। আমরা স্বাধীনতা লড়াই করে পাইনি। ইংরেজরা ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে শুধু, দেশটা ভাগ হলো। কাটাতারের বেড়া ওপারে দেশটা হলো মুসলিমদের দেশ। কিছু দিন পর ওরা স্বাধীনতা হলো কারণ পূর্ব পাকিস্তানের আয়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলতো। ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করলো নতুন বাংলাদেশ।

প্রথমে সবকিছু ঠিক ছিলো।  কিছুদিন পর আবার দেশেটায় মানুষের মনে জমা হলো অভাব অভিযোগ ক্ষোভ বিক্ষোভ।  এই বিক্ষোভকে বিপথে চালোনা করেছে কিছু সুবিধাবাদী মানুষ। স্লোগান হিন্দুদের দেশ ছাড়া করো নয়তো ইসলাম কবুল করাও। একাত্তরের পরে যে সব হিন্দুরা ওদেশে রেয়ে গেছিলো জানবেন তাদের ট্যাকে জোর ছিলো। নয়তো এ দেশে পালিয়ে আসতো আগেই।

মায়ার বাবার অবস্থা ভালোছিলো।  কিন্তু মায়ার দিদি  জয়াকে জোর করেই ওখানকার এক নেতা বিয়ে করে নিলো। এরপর সেই মানুষটি আবার মায়াকে বিয়ে করতে চাইলো তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে। ধর্ম নিয়ে মাথা ব্যাথা ছিলোনা মায়া বাবার। উনি ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে চাইছে ওরা।
মায়ার মায়ের চিকিৎসা করার নাম করে এ দেশে এসেই আমার সাথে হুট করে ওর বিয়ে দিয়ে দিলেন। আসলে যে কটা পসসা আনতে পেরেছিলেন তা দিয়ে ওনি একটা মুদির দোকান আর একটা ছোট বাড়ি কিনতে পেরেছিলেন এ দেশে। তাই আমার মতো অযোগ্য পাত্রে হাতে মেয়েকে তুলে দিতে গিয়ে ধর্ম রক্ষার বাহানা দিয়েছিলেন।
ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলো, " কি লেখক লেখক মশাই আপনার রাইটার্স ব্লক কাটালো? "
আমি বললাম " না। এবার দেখি ওই স্যালম্যানের চাকরিটা নিয়ে নেবো। "
মায়া বললো " লেখক মশাই, তুমি সমাজকে নতুন আশার পথ দেখাবে তুমি হেরে যাচ্ছো। এই নয় এইগুলো   পড়ো। রাইটার্স ব্লক কাটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পড়ো। ভালো লিখতে হলে পড়তে হবে। একটুও তো পড়াশোনা করো না আজকাল। "
আমি অবাক হলাম " এতো ভালো ভালো বই তুমি কোথা থেকে পেলে। পুরনো হলেও এতো অনেক দাম। "
ও বললো " না মসাই কেউ একজন পুরনো কাগজ ওয়ালার কাজ, পুরাতন কাগজের দরে বেঢে গেছে। আমিও তার থেকে পাঁচ টাকা কেজি দরেই কিনেছি। ম্যাক্সিম গোর্কি কে সেটা কি ঐ ফেরিওয়ালা জানে। ওটা ঝালমুড়ি ঠোঙা বানানোর জন্য আমাকে কাগজ হিসেবে ওগুলো বেচেছে..."
আমি বললাম " আবার তো বাজারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হতে শুরু করেছে। জল দুষণ, মাটি দুষণ, নিকাশি ব্যাবস্থা বেহাল হবে, যে এই পলিথিন ব্যাগ ব্যাবহার জন্য। সে কথা মাথায় নেই কারো। তোমার ঠোঙা তৈরি ব্যবসা আর কতদিন টিকবে ঠিক নেই।"
ও বললো " ঠিক আছে অত চিন্তা করছো কেন?
সব ঠিক হয়ে যাবে। '
আমি বললাম " না তুমি না হয় রেবা দির কথা মতো গান গাইতে যাও। আমি চেষ্টা করছি কোন কলকারখানার চাকরি জোগাড় করতে। "
ও খুব রেগে গিয়ে বললো।  " গলায় হাড়ি কলসি নিয়ে ডুব দেবো তবুও পার্টি থেকে  কোন সুবিধা নেবো, না বাবা মায়ের আধার কার্ড জন্য পার্টি করেছি। আর না। কারণ একটা দল দাস হলে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবো না। "

ও রেগে গেছে দেখে তারাতারি ওর এম ভর্তি কাগজ বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম " রবিবার  করে ক্লাস হবে। এবার এমটা করে নাও। "

ও খুব খুশি হলো, আমাকে জরিয়ে ধরে বললো
" আমি তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার আছে। মানিকদার কাছে ডি টি পির  কাজ শিখে নিয়েছি। ছোট খাটো একটা প্রকাশনা চাকরি নেবো। তারপর নিজেরাই ছাপানো কাজ জোগাড় করবো, বাড়িতে একটা ইউনিট খুলে। তুমি  বই পাড়ায় রোজা যাতাহাত করলে অনেক বেশি সুযোগ পাবে লেখা লেখির। যত লেখা লেখি করবে তত লেখালেখি ভালো হবে তোমার।"
আরো কিছু কথা বার্তার পর ও ঘুমিয়ে পরলো। সেকালের লোকজন ছেলে মেয়েদের নাম রাখতো ঠাকুর দেবতাদের নামে। ওর নাম ওর বাবা রেখেছিলেন মহামায়া। মহামায়া মানে দূর্গা। ও সত্য সংসার সামলায় দশ হাতে।

  ,,,, 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract