Sanchaita Roy Chowdhury

Abstract Romance Others

4.5  

Sanchaita Roy Chowdhury

Abstract Romance Others

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

22 mins
285


অন্যরকম ভালোবাসা 

পর্ব - ৫০

অন্তিম পর্ব


আর্য অদৃতকে জিজ্ঞাসা করল,'পত্রলেখা আসেনি?' 

অদৃত আর্যর দিকে তাকিয়ে বলল,' না । '

আর্য বলল,'ও বিজনেস ট্রিপ বলে আসেনি তাইতো?' 

অদৃত চামচটা প্লেটে রেখে বলল,'ও কেন আসতে যাবে?'

আর্য ভাবলো,' তাহলে কি ওদের মধ্যে বিবাহিত জীবনে কোনো অশান্তি চলছে? এরকমভাবে কেন বলছে?'

অদৃত অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল,' আর্য আমি বিয়েটা করিনি।'

আর্য কথাটা শুনে হতবাক হয়ে বলল,'কি?? তোমাদের তো আশীর্বাদ হয়ে গিয়েছিল। '

অদৃত বলল,'আমি পত্রলেখার সাথে বিয়েটা করিনি। হ্যাঁ আমাদের আশীর্বাদ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু বিয়েটা হয়নি ।'

আর্য বলল ,'কিন্তু কেন?'

অদৃত গম্ভীর গলায় বলল,' আমি ওর সাথে বিয়েটা করে অন্যায় করতে পারতাম না। '

আর্য বলল,' কিসের অন্যায় ?'

অদৃত বলল,'আজ আমি যদি ওকে বিয়েটা করতাম তাহলে আমি দু - দু'জনের সাথে অন্যায় করতাম প্রথমটা তোমার সাথে এবং দ্বিতীয়টা পত্রলেখার সাথে। আমরা বিয়ের পর কেউ ভালো থাকতে পারতাম না ।'

আর্য বলল,' কিন্তু পত্রলেখা তোমাকে যে ভালবাসতো।'

অদৃত চুপ করে রইলো ।









অদৃতের মনে পড়ল আট বছর আগে আশীর্বাদের দিনের ঘটনার কথা। সে পত্রলেখাকে নিয়ে তার ঘরে এলো।

পত্রলেখা বলল,'কি বলবে ?'

অদৃত বলল,'বোসো। আমার তোমাকে কিছু কথা বলার আছে ।'

পত্রলেখা বলল,'হ্যাঁ বলো।'

অদৃত শান্ত গলায় বলল,' পত্রলেখা আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না।'

কথাটা শুনে পত্রলেখা চমকে উঠলো, 

সে বলল,' কি বলছো তুমি এইসব? তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না অদৃত?'

অদৃত বলল,' না পত্রলেখা আমি তোমার সাথে কোন প্রকার কোন মজা করছি না ।'

পত্রলেখা বলল,'এইসবের মানেটা কি? তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো? বাড়ি ভর্তি লোকজন আজকে আমাদের আশীর্বাদ হল, বিয়ের অর্ধেক কেনাকাটা হয়ে গেছে,সবাই আমাদের বিয়ের বিষয়ে সবকিছু জেনে গেছে আর তুমি এখন একথা বলছো? আমি কিছু বুঝতে পারছি না তুমি কি বলছো? কেন বলছো এসব ? 

তুমি প্রথম থেকেই তো এই বিয়েতে রাজি ছিলে। তাহলে এখন কেন এইসব বলছো?'

অদৃত পত্রলেখাকে বলল,' তুমি প্লিজ একটু শান্ত হও।'

পত্রলেখা বিরক্ত হয়ে বলল,'এইসব কথা শোনার পরও তুমি বলছো আমাকে শান্ত হতে !'

অদৃত বলল,' প্লিজ একটু শান্ত। আমার কথাটা একটু শোনো।

আমি কি তোমাকে কখনো বলেছি আমি এই বিয়েটা করতে চাই ? হ্যাঁ আমি মানছি আমি এই বিয়ে নিয়ে তোমার সাথে কখনো কোন কথা বলিনি কারণ আমার মা- বাবা আমাকে জোর করেছিলেন এই বিয়েতে রাজি হতে। আমি মন থেকে কোনোদিনই এই বিয়েতে রাজি হইনি।'

পত্রলেখা বলল,' কি বললে ? তুমি শুধুমাত্র আন্টি আঙ্কেলের কথায় এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলে?' অদৃত বলল,'হ্যাঁ। '

পত্রলেখা বলল,'তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসোনি?'

অদৃত বলল,'না।'

পত্রলেখা বলল,'না? কিন্তু কেন ?

দ্যাখো অদৃত আমার মনে হয় এখন আমাদের বিয়েটা করে নেওয়া উচিত। একসাথে থাকতে থাকতে ঠিক অভ্যাস হয়ে যাবে।'

অদৃত পত্রলেখাকে বলল ,'পত্রলেখা বিয়েটা অভ্যাসের বিষয় নয় , বিয়েটা দুটো মনের বিষয়। মনের মিল থাকতে হয় , বোঝাপড়া থাকতে হয়।'

পত্রলেখা বলল,'আমার আর তোমার তো মনের মিল আছে , বোঝাপড়াও আছে অদৃত ।'

অদৃত বলল,' না নেই ।'

পত্রলেখা চোখে জল নিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল,'তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো না অদৃত? '

অদৃত বলল,'না আমি তোমাকে ভালোবাসি না।'

পত্রলেখা বলল,'কিন্তু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

আচ্ছা তোমার আমার প্রতি এই যত্ন, খেয়াল রাখা এইসবই কি মিথ্যে ছিল?'

অদৃত বলল,'না যত্ন,খেয়াল রাখা এগুলো মিথ্যে ছিল না । আমি সেই ছোট থেকে আমার সবথেকে ভালো বন্ধু হিসেবেই তোমাকে দেখেছি । আমি আমার অন্য বন্ধুদের মতোন তোমারও যত্ন করেছি খেয়াল রেখেছি । আর ভবিষ্যতেও আমি সেটার কোনোরূপ পরিবর্তন করতে চাই না। আর তার থেকেও সবচেয়ে বড় বিষয় হল আমি একজনকে ভালোবাসি ।'

পত্রলেখা বলল,'ভালোবাসো?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ ।'








পত্রলেখা বলল ,'তাহলে তুমি এতোদিন কেন বলোনি যে তুমি অন্য একজনকে ভালোবাসো।'

অদৃত বলল,'আমি অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম,এমনকি আমার জন্মদিনের দিনই তোমাকে সবটা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়েই আমি তোমাকে কথাগুলো বলতে পারিনি। বাবা-মা বলেছিল চেষ্টা করলে ঠিক হয়ে যাবে । আমি চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমি পারিনি, আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমাকে ক্ষমা কোরো। দ্যাখো পত্রলেখা এখনো দেরি হয়নি, আমরা বিয়েটা এখানে থামিয়ে দিতে পারি। '

পত্রলেখা রেগে গিয়ে বলল,' আজকে আশীর্বাদ হয়ে গেল আর তুমি এখন বলছো বিয়েটা আমরা এখানে থামিয়ে দিতে পারি ? আমরা এই বিয়েটা আর থামাতে পারি না । তোমার কাছে এটা মজার বিষয় হলেও আমার কাছে এটা অত্যন্ত সিরিয়াস একটা বিষয় ।'

অদৃত বলল,'আমার কাছে এটা সিরিয়াস বিষয় বলেই তোমাকে সবটা বলছি। আমি তো চাইলে তোমাকে এইসব কথা নাও বলতে পারতাম,নিজের মধ্যে রেখে বিয়েটা করতে পারতাম । তারপর কি হত? পরে এই বিষয়টা জানাজানি হলে আমরা কেউ সুখী হতে পারতাম না । পত্রলেখা আশীর্বাদ হয়ে যাওয়া মানে কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়া নয়।' 

এবার পত্রলেখা কেঁদে ফেলল। 

সে কাঁদতে কাঁদতে বলল ,'অদৃত তুমি কেন আমার সাথে এরকম করলে? আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। সেই ছোট্ট থেকে আমি তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি আর আজ তুমি......। '

অদৃত বলল ,'কিন্তু আমি এই বিয়েটা সত্যিই করতে পারবো না কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমি সত্যিই অন্য একজনকে ভালোবাসি।' পত্রলেখা জিজ্ঞাসা করল,'কাকে ভালোবাসো তুমি?'

অদৃত বলল,'আর্যকে।'

পত্রলেখা স্তম্ভিত হয়ে বলল ,'আর...আর....আর্যকে!

আর্যকে ভালোবাসো ?

কি বলছো তুমি এইসব? তোমার মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে? ও একটা ছেলে।'

অদৃত বলল,' হ্যাঁ পত্রলেখা আমি আর্যকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার মা - বাবা কেউই আমাদের সম্পর্কটাকে মেনে নিতে পারেনি । যদিও এখন বাবা মেনে নিয়েছে কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে । তবে মা এখনো মানতে পারেনি । 

আর আজ যদি আমি অন্য কাউকে ভালোবেসে তোমাকে বিয়ে করি তাহলে সেটা তোমার প্রতি আমার অন্যায় করা হবে আর অন্যায় করা হবে আর্যর প্রতিও। আমার মতে একজনকে ভালোবেসে অন্য আর একজনকে বিয়ে করাটা অন্যায়,বিশ্বাসঘাতকতা করা।

আমি সত্যিই জানতাম না তুমি আমাকে ভালোবাসো পরে যখন জানতে পেরেছিলাম তখন আমার খুব খারাপ লেগেছিল তখন ভেবেছিলাম আমার প্রথমেই তোমাকে সব কথা বলাটা উচিত ছিল। তার জন্য আবারো আমি ক্ষমা চাইছি।

সত্যিই আমি পরিস্থিতির চাপে পড়ে বলতে পারিনি।'







পত্রলেখা বলল,' তুমি আগে যখন বলোনি তাহলে আজকে কেন এই কথাগুলো বলছো? আজকে কেন এ কথাগুলো উঠে আসছে?'

অদৃত বলল ,'কারণ আমি চাইনা তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে। আর এটাও চাইনা তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্কটা তিক্ত হোক । আমরা যদি এই বিয়েটা করি তাহলে আমরা দু'জনের একজনও সুখী হতে পারবো না।'

পত্রলেখা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,'আমি খুব চেষ্টা করবো। আমরা সত্যিই হ্যাপি হব তুমি দেখে নিও।' অদৃত বলল,' এটা বলে তুমি তোমার মনকে সন্তুষ্ট করছো। তুমি যখন দেখবে দিনের পর দিন তোমার সাথে আমি থাকার পরেও অন্য কারোর কথা ভাবছি তোমার খারাপ লাগবে তুমি বিষয়টাকে মেনে নিতে পারবে না । তখন সেখানে নিজে না হতে পারবে এইসব কথা ভেবে সন্তুষ্ট আর না দিতে পারবে নিজেকে সান্ত্বনা । আমি জানি পত্রলেখা একতরফা ভালোবাসা কতটা কষ্টদায়ক। আমি সমস্ত দিক ভেবে চিন্তেই কথাগুলো বলছি।'

পত্রলেখা চোখের জল মুছে গম্ভীর গলায় বলল,' আমার মনে হয় তুমি ওকে বন্ধুর মতন দেখো। তাই তুমি আজ এই কথাগুলো বলছো কে তুমি ওকে ভালবাসো। আরে তুমি অদৃত রায়। তুমি কি করে একটা ছেলেকে ভালোবাসবে?'

অদৃত বলল,'আমি অদৃত রায় বলে কি একটা ছেলেকে ভালবাসতে পারি না ? আমার কি মন থাকতে পারে না ? '

পত্রলেখা বলল,' আমি সে কথা বলিনি । আমি বলেছি একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলেকে ভালোবাসা যায় না। আর তুমি এটা নও । মানে আমি বলতে চাইছি তুমি ওকে বন্ধু ভাবো এর থেকে আর বেশি কিছু নয়। তুমি ভাবছো না যে তুমি ওকে ভালোবাসো এটা তোমার মতিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয় ।'

অদৃত বলল,' আচ্ছা আমার থেকে কি তুমি আমাকে বেশি ভালো চিনবে পত্রলেখা? ওকে আমি বন্ধু ভাবি না অন্যকিছু ভাবি সেটাও কি এবার তুমি ঠিক করে দেবে?'

অদৃত গাম্ভীর্য সহকারে বলল,'পত্রলেখা আমি ওকে আমার ভালোবাসার মানুষ হিসেবে দেখি। আমি ওকে ভালোবাসি । একটা ছেলে যেভাবে একটা মেয়েকে ভালোবাসে আমিও সেইভাবেই ওকে ভালোবাসি । আর এটা কি কথা একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে ভালোবাসতে পারবে না একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে ভালোবাসতে পারবে না। আমি তো জানি ভালোবাসা যে কোনো লিঙ্গের মধ্যেই হয় মানে আমি তো ছোট থেকে তাই-ই জেনে এসেছি।'

পত্রলেখা বলল,'দ্যাখো আমরা মনে হয় বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে । আমরা বেকার কথা বলে সময় নষ্ট করছি। আমরা অনেক চেষ্টা করবো দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার মনে হয় তোমার মেন্টাল ট্রিটমেন্ট করালেই ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু ।'

অদৃত একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,' তুমি একটু আগেই বলছিলে না আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া আছে। আমি বলেছিলাম নেই। আমি যে ঠিক কতটা ঠিক বলেছিলাম এই কথাটাই তার প্রমাণ । তোমার মনে হয় সমকামী বা উভোকামী যারা হয় তারা মানসিক রোগী? তবে সেক্ষেত্রে তুমিও আমার কাছে মানসিক রোগী । শুনেছি আমরা মানুষরা কোনভাবেই কোনদিনই নতুন কোনো নতুন বিষয়কে বরণ করে নিতে পারি না আজ তা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করলাম। আর রইল বাকি চেষ্টার কথা পত্রলেখা জীবনে এমন অনেক জিনিস থাকে যেগুলো চেষ্টার পরেও ব্যর্থ হয় । আর অনুভূতি হল তাদের মধ্যে একটা । অনুভূতি , ভালোবাসা এগুলো না চেষ্টা করে কারোর প্রতি আনা যায় না দু'দিকের বোঝাপড়াটা থাকতে হয় আর আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে সেই বোঝাপড়াটাই নেই পত্রলেখা।'

পত্রলেখা মাথায় হাত দিয়ে বলল ,'আই অ্যাম ভেরি ভেরি সরি! আমি ওইভাবে বলতে চাইনি কথাগুলো আসলে আমার মাথা কাজ করছে না । সমস্ত কিছু ফিক্সড হয়ে গেছে আর তুমি এখন এরকম বলছো। তুমি একবারও বুঝতে পারছো আমার কষ্টটা? আমি কি করবো ? আমি লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারবো কিনা ? বিয়ে ভেঙ্গে গেলে একটা মেয়ের যে ঠিক কতটা কষ্ট হয় সেটা একটা মেয়ে ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না। '

অদৃত বলল,' হ্যাঁ মানছি কথাটা ঠিক কিন্তু পত্রলেখা আজকে যদি বিয়েটা হয়ে ভেঙ্গে যায় তাতে কিন্তু তোমার সম্মানহানি অনেক বেশি হবে। তুমি বলছো যে আজকে বিয়েটা হওয়ার আগে ভেঙে যাচ্ছে বলে তোমার সম্মানহানি হবে কিন্তু একবার ঠিক করে ভেবে দেখো বিয়েটা হওয়ার পর যখন বিয়েটা ভেঙে যাবে , আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে তখন আমাদের সম্মানহানিটা তার বহুগুণ বেশি হবে।

পত্রলেখা আমি তোমার মতন ভালো মেয়ের জন্য উপযুক্ত নই। আমার মনে হয় তোমার জন্য অন্য কোন ভালো উপযুক্ত মানুষ রয়েছে এটা আমার বিশ্বাস , আর সে তোমায় খুব ভালোবাসবে। আমার মনে হয় তুমি তোমার মা -বাবাকে বুঝিয়ে বলতে পারবে এই ভরসাটুকু আমার তোমার উপর আছে।' পত্রলেখা চোখের জল ফেলে বলল ,'আমি কি তোমাকে একবার শেষবারের মতন জড়িয়ে ধরতে পারি? ধরে নাও বন্ধুত্বের খাতিরে তোমার কথা অনুযায়ী।'

অদৃত বলল,'না থাক্। আমাকে জড়িয়ে ধরলে তোমার খারাপ লাগতে পারে। '

পত্রলেখা বলল,'এতে খারাপ লাগার কি আছে?আমিই তো বললাম। আমি আবারও সরি বলছি। আর আরেকটা কথা তোমাকে হয়তো এটা নিয়ে অনেক কথা শুনতে হবে। অনেকে তোমাকে গে বলবে আবার কেউ বলবে তোমরা তোমাদের বংশকে সন্তান উপহার দিতে পারবে না।'

অদৃত বলল,'চিন্তা কোরো না আমি এই সমস্তকিছু সামলে নিতে পারবো। সবারই তো সেক্সুয়ালিটি ভাগ করা আছে আমাকে যে গে বলে ডাকবে আমি তাকে স্ট্রেট বলে সম্বোধন করবো। আর রইলো বাকি সন্তানের কথা তাহলে বলবো গে মানুষেরা মানে আমরা সেইসমস্ত বাচ্চাদের দত্তক নেবো যাদের স্ট্রেট মানুষেরা জন্মের পর অনাথ আশ্রমে,রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায় । যারা তাদের সন্তানের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। সেই সমস্ত সন্তান আমাদের পরিচয় বাঁচবে । তাই চিন্তা কোরোনা।'

পত্রলেখা ঘাড় নেড়ে বলল,' আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না । তবুও জেনে রেখো তোমাকে একদিন কেউ পাগলের মতোন ভালবেসে ছিল । যদি আর্য কখনো তোমাকে ছেড়ে চলে যায় তুমি জেনে রেখো তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করবে আর সেই মানুষটি হবো আমি । খুব ভালো থেকো অদৃত আর্যর সাথে।' 

অদৃত বলল,'তা আর হচ্ছে কই ।'

পত্রলেখা বলল,' কেন?'

অদৃত বলল,' আর্য চলে গেছে ।'

পত্রলেখা বলল,'তাহলে তুমি ওর কলকাতার বাড়িতে যাও, ওখানে গিয়ে ওকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করো। আমি এদিকটা সামলে নেব।'

পরে অদৃত কলকাতায় গেলে জানতে পারে ,আর্য এই দেশ ছেড়ে চলে গেছে। রাজদীপের কাছেও সে গিয়েছিলো কিন্তু তার থেকে আর্যর কোনো কথাই সে জানতে পারেনি।







এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অদৃতের কানে এলো আর্যর গলার স্বর ,' অদৃত ! অদৃত!'

অদৃত খানিক চমকে উঠে বলল,'হ্যাঁ? কি হয়েছে?'

আর্য বলল,'তখন থেকে দেখছি একমনে কিছু ভেবে চলেছো। কি হয়েছে?'

অদৃত বলল,'না কিছু না।'

আর্য মাথা নীচু করে বলল,' তুমি আঙ্কেল-আন্টিকে কেন কষ্ট দিলে এভাবে?'

অদৃত বলল,' হ্যাঁ প্রথমে তারা কষ্ট পেয়েছিল ঠিকই কিন্তু এখন তারা এই বিষয়টা নিয়ে কষ্ট পায় না হ্যাঁ তারা কষ্ট পায় তোমার চলে যাওয়াটাকে নিয়ে। তারা এখন অনুশোচনা করে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কোনদিনও ভাবিনি তোমাকে এই শহরে এসে খুঁজে পাবো তোমাকে কত খুঁজেছি তুমি জানো?কোথাও পায়নি। রাজদীপের কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু ও বলেনি। কতবার ফোনে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পাইনি।'

আর্য বলল,'ওহ্! আসলে আমি ওকে বলতে মানা করেছিলাম । '

তারপর আর্য বলল ,' তোমাদের বাড়ি থেকে চলে আসার পর আমি এখানেই থাকি। আমি তোমার বাড়ি থেকে চলে আসার সময় বাবাকে দুটো শর্ত দিয়েছিলাম প্রথম শর্ত ছিল তোমাকে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আর দ্বিতীয় শর্ত ছিল আমাকে ইতালিতে আমার চিত্রশিল্প নিয়ে পড়তে পাঠানোর । তোমার আশীর্বাদের দিন আমি চলে আসি এখানে । সেই দিন ফোনে ইনস্টাগ্রামে দেখেছিলাম পত্রলেখা আর তোমার ছবি। কোথাও গিয়ে বাচ্চাদের মতোন খুব হিংসা হয়েছিল, অভিমান হয়েছিল, খারাপ লাগা ছিল সমস্ত কিছু মিলেমিশে তোমার আর খবর নিইনি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি ভালো থাকবে পত্রলেখার সাথে বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু বুঝতে পারিনি আমার একার চাওয়াতে সব কিছু ঠিক হবে না। আমি বোকা ছিলাম। আমি অভিমান করে চলে এসেছিলাম। এখানে এসে অনেকবার ভেবেছিলাম তোমার খবর নেব কিন্তু একটা ইগোর দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমি তোমার খবর নিতে পারিনি বা চাইনি ।

আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি ভালো আছো পত্রলেখার সাথে, তোমার মা - বাবার সাথে । হয়তো তুমি এখন একজন সন্তানের বাবাও হয়ে গেছো ।'

অদৃত বাঁকা হাসি হাসলো এবং ভাবলো,' আমার ভালোবাসার জায়গার সবটা জুড়ে শুধু তুমি রয়েছো সেখানে অন্ততপক্ষে কারোর জায়গা নেওয়া সম্ভব নয়।'

অদৃত কোল্ড ড্রিঙ্কের গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে বলল,' তুমি এত বছর হল এখানে আছো, কাউকে পছন্দ হয়নি?'

আর্য মাথা নীচু করে হাসতে হাসতে বলল,'সেটা এখনও সম্ভব হয়নি ।'

দু'জনেই কথাটা শুনে হেসে ফেলল।







রেস্তোরাঁ থেকে তারা যখন বেরালো তখন ইতালির আকাশ গভীর মেঘে আচ্ছন্ন ,মাঝেমধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে আর সাথে সামান্য ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে । তারা দুইজনে বেরিয়ে সোজা রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করল । রোমের রাস্তার চারপাশটা খুব শান্ত, নিরিবিলি। রাস্তার বেশিরভাগ অংশই সোনালী আলোর দ্বারা পরিবেষ্টিত। তারা দু'জন নির্জন রাস্তায় স্যাম্পিট্রিনীর ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছে। রোমের রাস্তার চারপাশটা খুব সুন্দর। বাড়িগুলোর গায়ে কি সুন্দর লোহার বেড়া দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট ফুল গাছ লাগানো রয়েছে, তাতে কি সুন্দর রঙিন ফুল ফুটে রয়েছে। রাতের সোনালী আলোয় আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ফুলগুলোর সৌন্দর্য্য । তারা দুইজনে পাশাপাশি হাঁটছে।









আর্য বলল,'এতোকিছুর পর পত্রলেখা ঠিক আছে?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ ঠিক আছে। প্রথমে মানতে অসুবিধা হয়েছিল ওর। পরে মেনে নিয়েছে। তিন বছর হল একজন ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে হয়েছে ওর।'

খানিকক্ষণ পর অদৃত বলল,' আর্য তুমি এখানে কোথায় থাকো?'

আর্য বলল,' কলকাতা থেকে এসে এখানে পড়াশোনা করার সময় আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতাম। তারপর এখানকার একটা ক্যাফেতে কাজ করে কিছু টাকা রোজগার করতাম এমনিতে বাবাও টাকা পাঠাতো। তারপর এখানকার একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। তারপর আস্তে আস্তে যখন নিজে সমস্তটা গুছিয়ে নিতে শিখলাম, নিজে রোজগার করতে শিখলাম তখন এখানে একটা বাড়ি কিনেছিলাম এখন সেই বাড়িতেই থাকি।'

অদৃত শুনে খুব খুশি হলো, সে বলল,' বাহ্!

তুমি তো তাহলে সত্যিই নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছো। আমি খুব চেয়েছিলাম জানো তুমি যেন তোমার বাবার কাছে নিজেকে প্রমাণ করে দাও। তুমি শুধু তোমার বাবার কাছেই নিজেকে প্রমাণ করোনি তার সাথে সাথে যারা তোমাকে অবহেলা করতো ; তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো তুমি তাদের কাছেও নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছো।সত্যি বলতে তুমি গোটা পৃথিবীর কাছেই নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছো। আমার সত্যিই খুব গর্ব হচ্ছে ।'

আর্য মৃদু হাসলো ।

অদৃত বলল,'যাই হোক তোমার বাবা এখানে আসেন?'

আর্য বলল,'না এখানে আসেন না ।

হ্যাঁ বাবার সাথে বছরে হয়তো দু-তিনবার ফোনে কথা হয়। বাদ বাকি সমস্তটাই কর্তব্য। আমি এখানে আসার পর থেকে বাবা কখনো এখানে আসেনি। আমি কলকাতা থেকে আসার পর বাবা কখনো এখানে এসে দেখেননি আমি কেমন আছি? ঠিক আছি কিনা? যা দরকার হয়েছে ফোনে জিজ্ঞাসা করেছে বলে দিয়েছি আবার আমার দরকার হলে জিজ্ঞাসা করলে বাবা বলে দিয়েছে এইভাবেই চলছে। বলতে পারো স্বার্থ বিজড়িত সম্পর্ক আমার আর বাবার।'

অদৃত বলল,' তাহলে তোমার সাথে তমাল সেনের সম্পর্কটা আর ঠিক হবে না কখনো?'

আর্য বলল,' মনে হয় না। কারণ যদি ঠিক হওয়ার থাকতো তবে তা এতোদিনে ঠিক হয়ে যেত। আমি আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে বাবার জন্য একটা ঘড়ি কিনেছিলাম এবং তোমার জন্য একটা বই যেটা তোমাকে আশীর্বাদে উপহার স্বরূপ পাঠিয়েছিলাম।' কথাটা শুনে অদৃত আর্যর দিকে তাকালো।

আর্য বলল,' বাবাকে ঘড়িটা দেওয়ার পর বাবা সেটাকে নিজের কাছে রেখেছিল ঠিকই। কিন্তু পরে সেই ঘড়িটা কখনো সে পড়ে দেখেনি। আমার ঘড়িটা নিয়েছিল দেখে খুব আনন্দ হয়েছিল ভেবেছিলাম এবার হয়তো সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম আমি বুঝতে পারিনি যা ঠিক হওয়ার নয় তা কখনোই ঠিক হবে না, বাবা কখনোই আমাকে মানতে পারবে না। তাই যেটা হওয়ার নয় সেটা নিয়ে আর আমি বেকার চেষ্টা করতে চাই না। শুনেছি নাকি সব কঠোরভাবে করা চেষ্টার ভালো ফল থাকে । হ্যাঁ ফল থাকে কিন্তু সব কঠোর চেষ্টার ফল ইতিবাচক হয় না । কিছু কঠোর চেষ্টায় যেমন ইতিবাচক ফল থাকে আবার কিছু কঠোর চেষ্টায় ঠিক তেমনই নেতিবাচক ফল থাকে । আমার ক্ষেত্রে না হয় নেতিবাচক ফল হল। এই নেতিবাচকটাকে আমি মন থেকে মেনে নিয়েছি।'







আর্য অদৃতকে জিজ্ঞাসা করল,' যাইহোক তুমি কোথায় উঠেছো এখানে ?'

অদৃত বলল,'এই সামনের একটা হোটেলে। এই বাম হাতের রাস্তা দিয়ে গেলেই পড়বে।'

আর্য বলল,' ওহ্ আমার বাড়িটা এই ডানদিকের রাস্তায় । '

অদৃত ভাবলো,'একবার বলব আমাকে ওর সাথে করে ওর বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা? কিন্তু খারাপ ভাববে না তো ? না খারাপ হয়তো ভাববে না। কিন্তু তাও বলাটা কি ঠিক হবে? আমি চাইনা আবার আমাদের রাস্তাটা আলাদা হোক। এতো বছর অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য । এখান থেকে পিছিয়ে আসতে পারবো না আমি ।'

আর্য ভাবলো,'একবার বলবো অদৃতকে আমার সাথে আমার বাড়িতে যেতে। হয়তো খারাপ ভাববে নয়তো থাক বলার দরকার নেই। নাকি একবার বলেই দেখবো? আমি চাইনা আমার আর তোমার রাস্তাটা আবারও আলাদা হোক।'

এইসব ভেবে দু'জনেই ভারি মুশকিলে পড়লো। অদৃত নিজমুখে তার বাড়িতে যাওয়ার কথা বলতে একটু লজ্জাই পেল ।

অদৃত এবং আর্য একসাথে বলল,' যদি কিছু না মনে করো একটা কথা বলবো তোমাকে।'

কথাটা বলে দু'জনেই হেসে ফেলল।

আর্য বলল ,'তাহলে তুমি আগে বলো।' 

অদৃত বলল,' আমি কি তোমার বাড়িতে যেতে পারি? না মানে যদি তোমার আপত্তি থাকে....... তাহলে আলাদা....... মানে তুমি যদি বলো তাহলে....'

আর্য হাসতে হাসতে বলল,' আমি এক্ষুনি ভাবছিলাম তোমাকে এই প্রস্তাবটাই দেবো ।'

অদৃত একটা স্বস্তির হাসি হেসে বলল ,'ওহ্।'।

আর্য বলল,'তবে এগানো যাক্ ।'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ ।'








তাদের দু'জনকে দেখে মনে হচ্ছে তাদের মনের মধ্যে এখনো অনেক না বলা কথা জমে রয়েছে । হাঁটার সময় কেউ সেভাবে আর কথা বলল না, কেবলই একে অপরের দিকে তাকিয়ে স্বল্প হাসে।






আর্য অদৃতকে তার বাড়িতে নিয়ে গেল। বাড়িতে ঢুকে অদৃতকে আর্য বসার ঘরে প্রথমে বসতে বলল। অদৃত সোফায় বসে দেখলো বাড়িটা খুব একটা বড়ো না হলেও, অত্যন্ত সুন্দর করে সাজানো । বসার ঘরটিতে রয়েছে একটি বড়ো সোফা, ঘরটির মাঝখানে রয়েছে একটি ছোট টেবিল, টেবিলের মাঝখানে ছোট টবে একটি ছোট বাক্সআস বনসাই গাছ বসানো এবং তার পাশে রাখা মাঝারি ধরনের অর্ধ নিদ্রিত নয়নের বুদ্ধমূর্তি । ঘরটির ওপরে ঝুলছে একটি মাঝারি মাপের ঝাড়বাতি যার সোনালি আলোয় ঘরটিতে এক মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে । সোফার বাঁদিকে রয়েছে একটি ক্যাম্প ফায়ার। আর তার ঠিক পাশেই রয়েছে একটি সিঁড়ি ।

আর্য দু'কাপ কফি করে নিয়ে এসে বলল,'এরকম আবহাওয়ায় একটু কফি না হলে জমে না। এসো তোমাকে বাড়িটা দেখাই।'

অদৃত কফি কাপ হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথম ঘরটিতে রাখা আছে আর্যর আঁকা বিভিন্ন ছবি,বলা যায় ঘরটি আর্যর আঁকা ছবি দিয়েই সাজানো। আর তার পাশের ঘরটি হল আর্যর বেডরুম। বেডরুমটা ছোট হলেও দুই জন মানুষ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে। বিছানার পাশে রয়েছে বিছানা লাগোয়া একটা ড্রেসিং টেবিল। তার ঠিক পাশেই রয়েছে একটা দরজা। দরজাটা খুললেই রয়েছে একটা ছোট বারান্দা । বারান্দার চারপাশটা ছোট্ট ছোট্ট ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো । গাছগুলোর মধ্যে ফুটে রয়েছে অজস্র ছোট্ট ছোট্ট রঙিন ফুল । বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে অদৃতের নাকে এলো ফুলগুলোর হালকা সুমধুর গন্ধ।

অদৃত কফি কাপে চুমুক দিয়ে বলল,'তুমি গোটা বাড়িটায় একা থাকো?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ ।'

অদৃত বলল,'তোমার ভয় লাগেতো একা থাকতে।'

আর্য বলল,'হ্যাঁ আগে লাগতো । কিন্তু একটা সময়ের পর বিশেষত তোমার কাঁধ থেকে ভরসার হাতটা সরে গেলে আর ভয় লাগে না। এতোদিন সবার মাঝে ছিলাম তারপর তোমাকে পেয়েছিলাম একটা নিরাপদ স্থান অনুভব করতাম। কিন্তু সব যখন চলে গেল তখন বুঝলাম জীবনটাতো একার সেক্ষেত্রে আমাকে তো একাই চলতে হবে, একা থাকা অভ্যাস করতে হবে ভয় করে লাভ নেই। প্রথম প্রথম খুব অসুবিধা হত জানো তারপর ভেবে দেখলাম আমিতো ভয় পেতাম হারিয়ে যাওয়ার কিন্তু আমার কাছে যখন কিছুই নেই তখন ভয় পাওয়াটা অর্থহীন । কত বোকা ছিলাম না? আর একা থেকে অনেক কিছু নিজের সম্বন্ধে উপলব্ধি করেছি,অনেক কিছু বুঝতে পেরেছি। তাই এখন এই একাকিত্বটাকেই মেনে নিয়েছি।'

বাইরে তখন বজ্রপাতসহ প্রবল ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। 

আর্য বলল,'তুমি ফ্রেশ হবে তো?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ ।'

আর্য বলল,' ওইদিকে ওয়াশ রুম। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও ,এই যে তোমার জামাকাপড় ।'

অদৃত বলল,'চশমাটা কোথায় রাখবো?'

ইতিমধ্যে আর্যর ফোনে একটি ফোন এসে যাওয়ার দরুণ আর্য ব্যস্ত হয়ে বলল,'মমমম্....তুমি ওই ড্রয়ারটায় রেখে দাও।' কথাটা বলে আর্য ফোনটা ধরে নীচে কথা বলতে গেল।

অদৃত ড্রয়ারটা খুলে চশমা রাখতে গিয়ে দেখলো ড্রয়ারটির ভিতরে একটি ছবি রাখা , ছবিটি তার অত্যন্ত পরিচিত একটি ছবি । ছবিটিতে সে আর আর্য পাশাপাশি বসে আছে কলকাতার গঙ্গার ঘাটে । ছবিটা দেখে অদৃত আনমনে মৃদু হেসে উঠলো।

সে চশমাটা ড্রয়ারে রেখে ফ্রেশ হতে গেল।









আর্যর জামা অদৃতের গায়ে একটু টাইটই হয়েছে।

আর্য বলল,'এই জামাটা আমার গায়ে বড় হয় বলে দিয়েছিলাম কিন্তু ....'

অদৃত বলল,'ঠিক আছে। একটা রাতেরই তো ব্যাপার ।'

তারা দু'জনেই বিছানায় শুতে গেল। আজ অনেক বছর পর তারা আবার একসাথে একই ঘরে থাকছে,শুচ্ছে। প্রথমে তারা দু'জনেই একটু সংকোচ বোধ করল । 

তারপর অদৃত খাটের একটা কোণে গিয়ে বসলো ।  











হঠাৎই তার ফোনটা বেজে উঠলো । ফোন চেক করে দেখলো তার মা ভিডিও কল করছে।

ফোন ধরতেই তার মা জিজ্ঞাসা করল ,'তুই কোথায়? এটা তো তোর হোটেল নয়?'

অদৃত বলল,' মা আমি হোটেলে নেই।'

ইন্দ্রনীল শশব্যস্ত হয়ে বলল,'স্বরূপ কোথায় ?'

অদৃত বলল,'স্বরূপ হোটেলে।'

ইন্দ্রনীল বলল ,' তাহলে তুই এখানে কেন? এটা কোথায় ? আর বাইরে কি বৃষ্টি হচ্ছে? মেঘ ডাকার আওয়াজ পাচ্ছি।'

অদৃত বলল,'একটু শান্ত হও।

হ্যাঁ, বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।'

ইন্দ্রনীল এবং শ্রেয়সী এবার কিছুটা উদ্বিগ্ন মুখে বলল,' তাহলে তুই এই বৃষ্টির রাতে কোথায় একা একা আছিস? তুই তো ওখানের কিছু চিনিসও না।' অদৃত বলল,' একটু শান্ত হও তোমরা । আমি কোনো বাচ্চা ছেলে নই।

তোমাদের আমার একটা কথা বলার আছে।' ইন্দ্রনীল বলল,' হ্যাঁ বল ।'

অদৃত বলল,' বাবা - মা আমার আর্যর সাথে দেখা হয়েছে ।'

ইন্দ্রনীল এবং শ্রেয়সী কথাটা শুনে চমকে উঠে বলল,'কি বলছিস ? কোথায়?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ মা আমার আর্যর সাথে এখানে দেখা হয়েছে। আমি এখন ওর বাড়িতেই আছি।' শ্রেয়সী ফোনের ওপার থেকে হেসে বলল,' যাক ইন্দ্রনীল ঠাকুর আমাদের ছেলেটার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।' তাদের এই সমস্ত কথপোকথন আর্য খাটের একটা কোণায় বসে শুনলো।

শ্রেয়সী বলল,' আর্য কোথায়? কত বছর ওকে আমরা দেখিনি ।'

অদৃত বলল,' আর্য সামনেই আছে। জানো ও এখানকার একজন বিখ্যাত চিত্রকর।'

ইন্দ্রনীল এবং শ্রেয়সী বলল,'তাই!'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ। কথা বলবে তোমরা ওর সঙ্গে?'

শ্রেয়সী বলল ,'ইচ্ছা তো হচ্ছে কিন্তু আমাদের ওর সাথে কথা বলার মুখ নেই রে।'

অদৃত চুপ করে রইলো।








আর্য অদৃতের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল ,'আন্টি - আঙ্কেল তোমরা কেমন আছো?' শ্রেয়সী এবং ইন্দ্রনীল খুশি হয়ে বলে উঠলো,' আর্য তুমি কেমন আছো? আমরা সবাই খুব ভালো আছি।'

আর্য বলল,' আমিও ভালো আছি।'

ইন্দ্রনীল এবং শ্রেয়সী বলল,' কত বছর তোমায় দেখিনি কত বড় হয়ে গেছো তুমি। কি সুন্দর দেখতে হয়েছে তোমাকে।'

কথাটা শুনে আর্য মুচকি হাসলো।

ইন্দ্রনীল বলল,'আর্য সত্যি বলতে তোমার সাথে আমরা যা করেছি তারপর আর আমাদের তোমার সাথে কথা বলার কোনো মুখ নেই। তোমার সাথে আমরা যা করেছি তার জন্য আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমাদের ক্ষমা করে দিতে পারবে না আর্য?'

আর্য বলল,'আঙ্কল-আন্টি আপনারা আমার কাছে কেন ক্ষমা চাইছেন? আপনারা আমার গুরুজন হন আপনারা এরকম ভাবে বলবেন না। আর তাছাড়া আপনারা যা করেছিলেন আমাদের ভালোর জন্যই করেছিলেন।'

ইন্দ্রনীল বলল,'না আর্য আমরা ভুল করেছিলাম ।আমাদের এখন অনুশোচনা হয়।'

আর্য বলল ,'আঙ্কেল- আন্টি যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে পুরোনো কথা ভেবে অনুশোচনা করে ,দুঃখ- কষ্ট পেয়ে কি লাভ বলো? তার থেকে এখন যা আছে সেটা নিয়েই ভালো থাকা উচিত তাই না ?'

শ্রেয়সী বলল ,'ভালো আর থাকতে পারছি কই? নিজের চোখের সামনে দেখছি নিজের ছেলেটা দিনের পর দিন দুঃখে কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর্য তোমরা আবার নতুন করে শুরু করতে পারো না?' আর্য চুপ করে রইলো ।

ইন্দ্রনীল বলল,' দিনের পর দিন ছেলেটা গুমড়ে গুমড়ে মরছে জানো আর্য । আজকাল ওর রাতে ঘুমের ওষুধ না খেলে ঘুম আসে না। '

অদৃত পাশ থেকে বলল ,'বাবা প্লিজ চুপ করো।' ইন্দ্রনীল বলল ,'কেন চুপ করবো? আজ অন্তত তুই আমাকে থামাতে পারবি না। তুমি জানো ও তোমাকে কত খুঁজেছে? কোথাও খুঁজে পায়নি। তোমার বন্ধু রাজদীপ , ওর কাছেও গিয়েছিলো । কিন্তু সেই বন্ধুও বলেনি তুমি কোথায় আছো? এত অভিমান হয়েছিল তোমার? আর এই অভিমান হওয়াটা খুব স্বাভাবিক কারণ তোমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা ঘোরতর অন্যায়। তুমি চলে যাওয়ার পর ও দিনদিন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। অনেক পাল্টে গেছে ও। রাত্তিরে ঘুমাতো না ঠিক মতোন। ডিপ্রেশনে চলে গেছিলো। ডাক্তার দেখালে ডাক্তার ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়। মাঝে মাঝে ওর এমন দিনও গেছে ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুমাতে পারেনি।'










কথাগুলো শুনতে শুনতে আর্য ভাবলো,' তুমি আমার জন্য এত কষ্ট পেয়েছো অদৃত। তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসো। '

অদৃত আবার ওর বাবার কথার মাঝখানে বলে উঠলো,' তুমি এবার একটু চুপ করবে । এখন অনেক রাত হয়েছে এবার শুতে যাবো আমরা। '

শ্রেয়সী বলল,'দাঁড়া, আমি শুধু একটা কথা আর্যকে বলতে চাই ।'

আর্য বলল,' হ্যাঁ আন্টি বলো। '

শ্রেয়সী বলল,'আমি জানি তোমার মা নেই । যে আছেন সে তোমাকে কখনো সন্তান স্নেহ দেননি। আর্য তুমি জেনে রেখো তোমার এই পৃথিবীতে দু'জন মা-বাবা আছে একজন আমি আর একজন ইন্দ্রনীল। আমরা আজ থেকে তোমার কাছে অদৃতের মতোনই তোমার মা- বাবা। তুমি অদৃতের মতোই আমাদের আরেকটা সন্তান । আমাদের দরজা তোমার জন্য সব সময় খোলা। আর হ্যাঁ আমরা মন থেকে তোমাকে আমাদের অদৃতের লাইফ পার্টনার হিসেবে উপযুক্ত মনে করি। আমাদের মনে হয় তোমার থেকে উপযুক্ত জীবনসঙ্গী অদৃতের জন্য আর কেউ হতেই পারে না। আমরা দেখেছিলাম অদৃত তোমাকে পেয়ে ঠিক কতটা খুশি ছিল এরকম খুশি হতে আমরা ওকে এর আগে কখনো দেখিনি। আর একজন মা-বাবা হয়ে সন্তানের জন্য এর থেকে কি বেশি চাওয়ার থাকতে পারে । সন্তানের খুশি,সুখ,আনন্দ এগুলোই তো একটা মা-বাবার জন্য কাম্য আর আমার মনে হয় তোমরা পৃথিবীতে একে অপরের জন্যই জন্মেছো। তাই আমরা তোমাকে এই বাড়িতে আবার দেখতে চাই কিন্তু এবার অদৃতের বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই না অদৃতের জীবনসঙ্গী হিসেবে দেখতে চাই। আমরা কিন্তু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো আর্য  তোমাদের জন্য। আর আবারও বলছি আমাদের ক্ষমা করে দিও।'

অদৃত এবার ফোনটা আর্যর হাত থেকে টেনে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,'মা আমার মনে হয় এবার ফোনটা রাখা উচিত তোমাদের ।ওখানে এখন অনেকটাই রাত হয়ে গেছে তাই তোমরা শুয়ে পড়ো।'








ফোন রেখে অদৃত বলল,'ওদের কথায় কিছু মনে কোরোনা ওরা ওদের মতোন বলে গেল। জীবনটা তোমার তোমারই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তাই না?'

আর্য চুপ করে রইলো । আর্য কিছু বলছে না দেখে অদৃত বলল,'আমাদেরও শুয়ে পড়া উচিত ।'

আর্য শুয়ে পড়ল। অদৃত আর্যর দিকে ফিরে শুয়ে বলল,'আর্য আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।'

আর্য বলল,'হঠাৎ একথা কেন?'

অদৃত বলল,'না আমার তোমাকে আরো সময় দেওয়া উচিত ছিল । তোমার সাথে আরো সময় কাটানো উচিত ছিল। আমি তোমার মনের কোণে জমে থাকা অভিমানগুলো সেইভাবে লক্ষ্য করিনি।প্রত্যেকটা সম্পর্কে সময় দেওয়া উচিত, সময় না দিলে সম্পর্ক যে মজবুত হয় না। গাছের যেমন গড়ে ওঠার জন্য জল আর সূর্যের আলোর প্রয়োজন ঠিক তেমনই সম্পর্কও মজবুত করার জন্য প্রয়োজন সময় আর যত্নের। আমি হয়তো দুটোর একটাও দিতে পারিনি তোমাকে । '

আর্য বলল,'না তুমি আমাকে যত্ন করেছিলে, তোমার মতোন যত্ন কেউ করেনি আমাকে । তুমি আমাকে না চাইতেই অনেককিছু দিয়েছিলে। কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গেছে ।পুরোনো কথা ভেবে কষ্ট পেয়ে কি লাভ?'

অদৃত বলল,'আচ্ছা আমরা কি আবার নতুন করে শুরু করতে পারি না? 

আর একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না আমাকে?'

আর্য চুপ করে রইলো ।

অদৃত বলল,'কিছু তো বলো।'

আর্য তখনও চুপ করে রইলো ।

আর্য কিছু বলছে না দেখে অবশেষে অদৃত বলল,'আচ্ছা তুমি এতো বড়ো একজন চিত্রকর হয়ে গেছো তাও কেন কাউকে ভালোবাসোনি?'

আর্য বলল,'ভালোবাসার মতোন কাউকে পাইনি, তাই ভালোবাসিনি। সত্যি বলতে তোমার মতোন ভালোবাসার মানুষ কাউকে পাইনি জানো। অনেক খুঁজেছি কিন্তু কেউ তোমার মতোন করে আমাকে বুঝতে পারেনি,ভালোবাসতে পারেনি, যত্ন করতে পারেনি । যা পারবো না তা করে লাভ নেই । তাই এখন খোঁজার চেষ্টা থামিয়ে দিয়েছি। তোমার তুলনা কেবল তুমিই ।

তুমিও বা জীবনে কাউকে ভালোবাসোনি কেন? তুমি চাইলেই তো তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারতো। '

অদৃত বলল,'হ্যাঁ পারতো কিন্তু কেউ তোমার মতোন করে আমাকে ভালোবাসতে পারতো না । তাই অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য ।'কথাটা বলার সাথে সাথে অদৃতের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

আর্য হেসে বলল,'যদি আমি কাউকে খুঁজে নিতাম তখন?'

অদৃত বলল,'বিশ্বাস ছিল। 

তবুও আমি যদি দেখতাম তুমি তাতে ভালো আছো আমি সেটাতেই ভালো থাকতাম।অন্তত এইটুকু জানতাম যে তুমি ভালো আছো।'

আর্য বলল,'কিন্তু কেন?'

অদৃত বলল,'কারণ তোমার ভালো থাকাটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ।' 

আর্য বলল,'আর তোমার ভালো থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়?'

অদৃত চোখে জল নিয়ে বলল,'না।'

অদৃত বলল,'আমি জানি আর্য তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো আমি ড্রয়ারে দেখেছি আমার আর তোমার ছবি।

বলো না আর্য আমরা নতুন করে শুরু করতে পারি না ? আমি জানি অতীত পাল্টানো যায় না কিন্তু অতীতের থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং তা ব্যবহার করে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎটাতো ভালো করতেই পারি বলো?'

আর্য চোখ ভর্তি জল নিয়ে কাঁপা কন্ঠে বলল,'হ্যাঁ পারি।

কিন্তু তার আগে আমার একটা কথা আছে।'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ বলো।'

আর্য কাঁপা কন্ঠে বলল,'তোমার কাছে যেমন আমার ভালো থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ তেমনি আমার কাছেও তোমার ভালো থাকাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ । আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি তুমি আমার জন্য এতোটা কষ্ট পাবে। আই অ্যাম রিয়েলি ভেরী সরি!'

তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। তারা দু'জন দু'জনের এতোটাই কাছে আছে যে একে অপরের হৃদস্পন্দন পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছে ।

অদৃত বলল,'আমি আর তোমার অপহরণকারী হিসাবে থাকতে চাই না এবার জীবনসঙ্গী হিসাবে থাকতে চাই।'

কথাটা বলে অদৃত আলতো করে তার ঠোঁটটা আর্যর ঠোঁটের ওপর রেখে আদর করল।

অদৃত বলল,'জানো আর্য তোমার কোলে মাথা রেখে শোয়াটাও খুব মিস করেছি,তোমার মুখটা,হাসিটা ,গায়ের এই মিষ্টি গন্ধটাও মিস করেছি।'

আর্য বলল,'আমিও খুব মিস করেছি তোমাকে ।'

অদৃত বলল,'কথা দাও তুমি আর কোনোদিনও আমাকে ছেড়ে যাবে না।'

আর্য বলল,'কথা দিলাম ।'

আর্য অদৃতের কপাল,গাল, ঠোঁট আদরে ভরিয়ে তুলল।

আর্য বলল,'আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি অদৃত ।'

অদৃত বলল,'আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি আর্য ।'

অদৃত পুনরায় আর্যর ঠোঁটের ওপর ঠোঁট রেখে আদর করল এবং তারা একে অপরকে আদরে ভরিয়ে তুলল।







কিছুক্ষণ পর অদৃত আর্যকে আট বছর আগের সমস্ত ঘটনার কথা জানলো।

সব শুনে আর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ,' যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে আমরা আর পিছন ফিরে তাকাবো না। এখন আমাদের সামনে তাকানোর সময় ।'

অদৃত বলল,'হুম্ । আমি কথা দিচ্ছি আমরা আজ থেকে একে অপরের পাশে থাকবো।'

আর্য অদৃতের হাতের ওপর হাত রেখে বলল,'আমিও কথা দিলাম।'










পরদিন ইতালির আকাশে মেঘ কেটে ঝলমলে রোদ উঠেছে।

আর্য অদৃতের হাতের ওপর মাথা রেখে বলল,'তুমি কবে চলে যাবে?'

অদৃত বলল,'কালকে। কিন্তু তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না ।'

আর্য বলল,'তোমাকে একটা কথা বলার ছিল ।'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ বলোনা।' 

আর্য বলল,' ভাবছিলাম আমি ইন্ডিয়াতে ফিরে যাবো ওখানে একটা স্টুডিও খুলবো। ওখান থেকেই আমি কাজ করবো।'

অদৃত বলল ,'এটা তো ভালো খবর । তবে তুমি আমার সাথে ফিরবে?'

আর্য,'হুম।'

অদৃত বলল,'কিন্তু এই বাড়িটার কি হবে?'

আর্য বলল,'এটা যেরকম আছে থাকবে। আমরা মাঝেমধ্যে এখানে ঘুরতে আসবো।'

অদৃত বলল,'তবে আমার একটা অনুরোধ আছে।'

আর্য বলল,'কি অনুরোধ?'

অদৃত বলল,'তোমাকে আমার বাড়িতে থাকতে হবে।'

আর্য বলল,'আবার তোমার বাড়ি কেন? আমি ওখানে একটাবাড়ি ভাড়া.....'

অদৃত বলল,'খবরদার না। তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড আমি তোমাকে ভালোবাসি । আর তুমি তো আর আমার বয়ফ্রেন্ডের পরিচয় থাকবে না আমার বাড়িতে ।'

আর্য একটু অবাক হয়ে বলল,'তার মানে?'

অদৃত বলল,'তার মানে আবার কি এবার থেকে তুমি আমার বাড়িতে আমার জীবনসঙ্গীর পরিচয়ে থাকবে। ' 

আর্যর হাত ধরে অদৃত বলল,'অলরেডি জীবনের আটটা বছর আমরা অভিমান করে ,ভুলবোঝাবুঝি করে নষ্ট করেছি আমি আর দেরি করতে চাইনা এইবার ইন্ডিয়াতে ফিরে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি রাজী তো?'

আর্য হেসে বলল,'রাজী।'

অদৃত আর্যর হাতে ঠোঁট রেখে আদর করল ।

আর্য বলল,'আমরা হানিমুনে যাবো তো?'

অদৃত বলল,'অবশ্যই যাবো। কোথায় যাবো সেটা তুমি ঠিক করবে?'

আর্য মুখভর্তি হাসি নিয়ে বলল ,'হাওয়াই।'

অদৃত বলল,'এখনও মনে আছে আমার হাওয়াই যাওয়ার ইচ্ছার কথা।'

আর্য বলল,'যাকে ভালোবাসি তার ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা মনে রাখবো না এটা হয় নাকি।'

অদৃত হেসে আর্যকে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো এবং অদৃত আর্যর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে আদর করল ।





সমাপ্ত












Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract