সংক্রান্তির আমেজ
সংক্রান্তির আমেজ
সংক্রান্তির আমেজ
সঞ্চয়িতা রায় চৌধুরী
কাশীপুর গ্রামের ঠিক উত্তর দিকে অবস্থিত রয়েছে এক বিশাল আকৃতির বটগাছ। বট গাছটির বয়স আনুমানিক একশো বছর। আর এই বুড়ো বটগাছেই বাস রয়েছে গ্রামের দুই ভূতের মেঁছো এবং মাম্দর।
কুয়াশার চাদরে ঢাকা গভীর রাতের অন্ধকারে মাম্দ গালে হাত রেখে বসে রয়েছে বটগাছের এক ডালে।
পিছন থেকে মেঁছো এসে বলল,"কিঁই রেঁ মাঁম্দ এঁভাবে মুঁখ শুঁকনো কঁরে বঁসে আঁছিস কেঁন রেঁ?"
মেঁছো বলল,"কিছুঁ ভাঁলো লাঁগছে নাঁ রেঁ । কঁত বঁছর হঁয়ে গেঁল কেঁউ এঁই চঁত্বর দিঁয়ে মাঁছের মুঁখে দঁড়ি বেঁধে নিঁয়ে যাঁয় নাঁ। কঁতদিন মাঁছের স্বাঁদ নিঁইনি। মুঁখে কোঁনো স্বাঁদ নেঁই।"
মাম্দ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,"সঁত্যিই আঁমিও কঁতবছর হঁল ঘাঁড় মঁটকাই নিঁই কাঁরোর। শেঁষবার ওঁই দাঁস বাঁড়ির ছোঁট ছেঁলে পঁটল, ওঁর ঘাঁড় মঁটকাবো বঁলে গেঁছি । ওহ্ বাঁবাঁ! ওঁর হাঁতে থাঁকা যঁন্তরটা থেঁকে এঁকটা জোঁড়ালো সাঁদা আঁলোয় চোঁখ এঁকেবারে ধাঁধিয়ে গেঁল রেঁ । অঁমনি আঁমি ছিঁটকে পঁড়লাম।"
মেঁছো বলল,"তোঁমাকে কঁতবার বঁলেছি ওঁটা যঁন্তর নঁয়। ওঁটার এঁকটা নাঁম আঁছে মোঁবাইল ।"
মাম্দো মাথা চুলকে বলল," ওঁই হঁলো গিঁয়ে এঁকটা কিঁছু হবে । তঁবে এঁই কুঁয়াশা চাঁদরের মঁধ্যে মাঁনুষ খুঁজেঁ বেঁর কঁরাও দুঁষ্কর।"
মেঁছো বলল ,"আঁর খুঁজেও বেঁর কঁরতে হঁবে নাঁ ।গ্রাঁম শুঁদ্ধ সঁবাই জেঁনে গেঁছে এঁইখানে আঁমরা বঁসবাস কঁরি। এঁখন তোঁ আঁমাদের এঁখানকার অঁস্তিত্ব নিঁয়েও সংকঁটঁ হঁচ্ছে আঁস্তে আঁস্তে মঁনে হঁচ্ছে আঁমাদের পাঁত্তারি গোঁটাতে হঁবে। আঁধুনিকতার ছাঁপে সঁব ফ্ল্যাঁট মাঁথাচাড়া দিঁয়ে উঁঠছে। কোঁথাও খোঁলা মাঁঠ নেঁই কোঁথাও ফাঁকা জাঁয়গা নেঁই গাঁছ নেঁই কিঁচ্ছু নেঁই সঁব আঁধুনিক কঁরে ফেঁলছে এঁই সঁমস্ত কিঁছুর বিঁলুপ্তি ঘঁটিয়ে
।"
মাম্দো বলল," ঠিঁকই বঁলেছিস। কিঁন্তু তোঁকে এঁকটা খঁবর দেঁওয়ার ছিঁল আঁজকে মুঁখুজ্যেবাবু সঁকালে এঁখান দিঁয়ে যাঁওয়ার সঁময় দাঁসবাবুকে বঁলছিলো রাঁয়দের বাঁড়িতে নাঁকি আঁজকে পৌঁষ পাঁর্বণের আঁসর বঁসবে।"
মেঁছো বলল,"তাঁই নাঁকি ! কঁত বঁছর পিঁঠে খাঁওয়া হঁয়না । আঁগে এঁই পৌঁষ পাঁর্বণের দিঁনে কঁত ঘুঁড়ি উঁড়িয়েছি। নঁতুন ফঁসল কেঁটেছি। সঁন্ধ্যাবেলায় গাঁনের আঁসর তোঁ ছিঁলই। আঁর এঁখন কোঁথায় সঁব? কঁত রঁকমের পিঁঠে হঁত চঁন্দ্রপুলিঁ, সঁরাপিঠেঁ, পাঁটি স্যাঁপটাঁ, চিঁতইপিঠেঁ, রঁসবড়াঁ, গোঁকুলপিঠেঁ আঁরও কঁত কিঁ ।"
মাম্দো বলল,"সেঁটাই। আঁমার মঁনে পঁড়ে আঁমাদের গ্রাঁমের বাঁড়িতে গোঁবর দিঁয়ে আঁজকে ধোঁয়ানো হঁত। তুঁলসি মঁঞ্চে চাঁলের গুঁড়ো দিঁয়ে বিঁভিন্ন নঁকশা কঁরা হঁত। তাঁরপর ঢেঁকিতে সিঁদুর মাঁখানো হঁত। ঢেঁকি ঘঁরের সাঁমনে পিঁটুলির গোঁলা (এক বিশেষ ধরনের গাছের আঠা) দিঁয়ে আঁলপনা দেঁওয়া হঁত। তুঁলসি মঁঞ্চের সাঁমনে রাঁখা হঁত নাঁনাঁরকমেরঁ পিঁঠেঁ।"
মেঁছো বলল,"সঁত্যি সেঁকথা মঁনে পঁড়লে চোঁখে জঁল আঁসেরে মাঁম্দো।"
এরইমধ্যে বাতাসে পায়েসের ঘ্রাণ নিয়ে মেঁছো বলল,"হ্যাঁ রেঁ মাঁম্দো নঁলেন গুঁড়ের পাঁয়েসের গঁন্ধ পাঁচ্ছিস?"
মাম্দো বলল,"হ্যাঁ রেঁ। ওঁই তোঁ দূঁর থেঁকে এঁকটা গাঁনের আঁওয়াজওঁ আঁসছেঁ।"
মেঁছো বলল,"নাঁ আঁর থাঁকা যাঁয় নাঁ যেঁ এঁবার খুঁব ক্ষিঁদে লাঁগছে। এঁই সংক্রাঁন্তিঁরঁ আঁমেজ উঁপভোগ নাঁ কঁরলেই নঁয়। চঁল রাঁয়দের বাঁড়ি যাঁই।"
মাম্দো বলল,"আঁমিও আঁর থাঁকতে পাঁরছি নাঁ যেঁ চঁল।"
রায় বাড়ি থেকে তখন ভেসে আসছে,"পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আ য় আ য় আয়।
ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে, মরি হায় হায় হায়॥"
________________