পথে হলো দেরি
পথে হলো দেরি
ইমিগ্রেশনের জন্য তো একটু টাইম লাগবে। তাই বারবার নীলুকে ফোন করছে অভি । ভালোবাসার মানুষগুলো কখনো এই সমাজে ঠিক স্কীকৃতি পায় না তাই আজ নীলু আর অভি এদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে চির কালের মতো। স্বঅভিমানী নীলু তাই এতো দেরি হলো। দুবাইয়ে গিয়ে অভির ওপর নির্ভর শীল থাকবে না। একটা চাকুরি জোগাড় করেছে , মানে অভি জাগাড় করে দিয়েছে একটা হাসপাতালে। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা মিলন বেলায় ভাসবে তারা খুশির সুরে।
উচ্চ মাধ্যমিক পর মানব জোর করেই ওকে ই টি আই ভর্তি করেছিলো। সেখানে ই অভি ওকে প্রথম প্রোপজ করে। মানব তখন নীলুর জীবনে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ও তাই অভিকে গুরুত্ব দেয় নি । মানব সম্পর্কটা সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কটর পরিশ্রম করছিলো। তাছাড়া নীলুদের ঘরের খরচ , ওর পড়াশোনার খরচ, হাতখরচ সব যোগান দিতো তাই ও যা তা দিতে পারলেও ঠিক সময় দিতে পারতো না। তাই অভি ওর ভালোলাগার জায়গায় নিয়ে নিলো সহজে। ওদের বিয়ের মাস খানেক আগে, অভিকে নীলু বলেছিলো " আমি তোকে ভালবাসে ফেলেছি , চল কোথাও পালিয়ে যাই।"
অভি বাস্তববাদী তাই ওর আবেগটাকে মুল্য দেয় নি। মানবের সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেলো। কিন্তু সময় ওদের আবার সুযোগ দিয়ে দিলো। মানব এর দূর্ঘটনার হবার পর ওর জুনিয়র কলিগ হিসাবে আসতে শুরু করলো । যদিও নীলুর ভালো বন্ধু হিসেবে এ বাড়ির দরজা খোলা ছিলো সব সময়। সাথে আবার ঘনিষ্ঠ হলো।
আর কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা মিলন বেলার তারপর সামাজিকতা লৌকিকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ও চলে যাবে ওর ভালো লাগার মানুষটার কাছে। মানব তো ওর ভালো লাগার মানুষ ছিলো এক সময়, কিন্তু এখন তো ও একটু অসহায় , ওকে ছেড়ে যাওয়া মানবিকতার কাজ হবে। নীলু মা হওয়াতে অসুবিধ
া আছে এ কথাটা জেনেও মানব সবার অমতে বিয়ে করেছিলো ওকে। ওর সব বিপদেই ওর পাশে থেকে ছিলো। ওটা হয়তো মানবের কর্তব্য ছিলো। কিন্তু আজ কি নীলুর কর্তব্য নেই মানবের পাশে থাকার?
এতো সাতপাঁচ ভাবণার সময় নেই, একদিকে এক প্রতিবন্ধী স্বামী, অন্যদিকে ওর ভালোলাগা সাথে বিদেশে মোটা মাইনের চাকরি। ওকে এসব নিয়ে ভাবতে দিতে চাইছেই না। আবেগের কোন মূল্য নেই এই শহুরে সংস্কৃতিতে।
হঠাৎ what app একটা মেসেজ তাও মানবের। কি লিখেছে দেখতেই হয় " মিলন বেলায় তোমাকে অনেক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন নতুন জীবন শুরু মুহূর্তে। অবাক হলে বুঝি। আমি সব জানি, অভি ভাবছে ও তোমার চাকরীটা জাগার করেছে তোমার জন্য। কিন্তু ও নিজেই চাকুরী করছেতো আমার রেফারেন্সে। যাইহোক, তোমার ফাইলে একটা খইরি খাম ঢুকিয়ে দিয়েছি তোমার অবর্তমানে। ওটা তোমার নতুন জীবনের সুচনাতে আমার উপহার। ডিভোর্স সার্টিফিকেট, আর আমাদের বাড়ির দলিল টা। ও বাড়িটাতো আমি তোমার জন্য করেছিলাম। এ মাসটা তুমি খুব ব্যস্ত ছিলে। তাই আমার ঘরে আসার সুযোগ পাও নি। তাই তোমাকে বলা হয়নি, আমি আগের মতো হাঁটতে পারছি। তাই আমি আমার মতো চললাম নতুন ঠিকানায়। টাকা পায়সা গাড়ি বাড়ি সব রইলো তোমার অপেক্ষায়। সাবধানে যাও, কান্ত হয়ে গেলে ফিরে এসো তুমি তোমার ঠিকানায়। তোমার সাজানো ঘর বাগান সব থাকবে তোমার অপেক্ষায় ।"
নীলু ডাইভার কে বললো " এয়ারপোর্ট গিয়ে কাজ নেই, তুই গাড়িটা হাওয়া স্টেশানে চলল তাড়াতাড়ি, তোর দাদাবাবুর অভিমান হয়েছে। দেখি ফিরিয়ে আনতে পারি কিনা।"
নীলু মানবকে ভালোবাসে কিনা জানে না, কিন্তু ভালো ভাবে চেনে। তাই জানে ও কোথায় যেতে পারে , তাই সময়ের শুধু অপেক্ষা । ওকে আটকে দেবে আবার ভালোবাসার বন্ধনে।