Manab Mondal

Abstract Tragedy

4  

Manab Mondal

Abstract Tragedy

২২ ফেব্রুয়ারি

২২ ফেব্রুয়ারি

6 mins
44


করনার সময় আমার যখন চাকরি চলে যায় তখন নীলাঞ্জনা হন্যে হয়ে টিউশনি খুঁজতে শুরু করে ।চাকরি যাওয়ার পর থেকে আমি কেমন যেনো হয়ে গেছিলাম।ওর মধ্যে ও একটি পরিবর্তন এসেছে। আমার ও সাথে ঠিক করে কথাও বলে না। অথচ বাসা থেকে একদিন সাথে পালাবে বলে ঠিক করেছিলো,সেদিন ও আর আমি প্রমিস করেছিলাম খারাপ সময় গুলো দুজন মিলেই মোকাবিলা করবো। কিন্তু ও আজ আমাকে অবহেলা করছে।


যদিও ওর সম্পূর্ণ দোষ নয়। আমাদের দুই ফ্যামিলির থেকে আমাদের বিয়েটা মেনে নিয়েছে। তবে বিয়ের পর দিন থেকে ওকে লোকজন খোটা দেয় ওরা গরীব বলে। অথচ আমার নিজস্ব আর্থিক অবস্থা ভালো হলো না কখনোই। বাবা মায়ের পাঠানো টাকাতেই সংসার চলে আমাদের। অথচ আমার নিজস্ব আয় ভালোই হচ্ছিল কয়েক দিন আগে পর্যন্ত। আমি নিজে একটা ব্যবসা করতে শুরু করেছিলাম। অনলাইনে টিকিট কেটে দেওয়ার ব্যবসা। আপনার জুরুরী দরকার কোথায় যাবার। তৎকাল টিকিট দরকার কিন্তু আপনি লাইন দিয়ে পাবেন কিনা নিশ্চিত নয়। ফোন করুন আমাকে ঠিক টিকিট কেটে দেবো। বিনিময়ে আপনাকে দিতে হবে সার্ভিস চার্জ। তাছাড়া বিমানের টিকিট, ভিসা, পাসপোর্টের আবেদন, এসব পরিসেবা দিয়ে ভালো টাকাই আসছিলো। তাই চাকুরীটা দুম করে ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেটাই ওর রাগ। বিয়ে পরে থেকে আমি খালি চাকুরী ছেড়েছি।

আমি কলেজ লাইফ থেকে লেখা লেখি করি। তাই লেখা লেখি সুত্র চাকুরী পেয়ে গেছিলাম প্রথমেই। কিন্তু সেই চাকুরীটা গেলো সারদা কান্ডের পর। পশ্চিমবাংলায় পুঁজি অভাব আছে ঠিকই, কিন্তু ক্ষুদ সঞ্জয় এর একটা বড়ো বাজার আছে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু বানিজ্য প্রতিষ্ঠান বাজারে থেকে মূলধন তুলছিল বাজার থেকে। কিন্তু তাদের টাকা পয়সা তোলার পদ্ধতি সঠিক ছিলো না। তাই রাজনৈতিক নেতাদের ঘরে অনেক টাকাই তাদের ঢোকাতে হচ্ছিল। ফলে মূলধন অভাব ঠিক মিটলো না। তাই জনগণের টাকা পয়সা ফিরত দেবার সম্ভবনা কম গেলো। আর এই জনগণের টাকা পয়সা উদ্ধার করতে যখন আশ্ররে নামলো আইন, তখন সব কম্পানি গুলো গনেশ উল্টালো। ব্যবসা বাণিজ্য না থাকলে মিডিয়া শিল্প চলতে পারে না। আমার নিউজ পেপার টাও বন্ধ হয়ে গেলো।

বুদ্ধিজীবী থেকে শ্রমজীবী মানুষ হওয়াটা অত সহজ নয়। তাই চাকুরী ছাড়তে হলো আমাকে বারবার।

ও আজ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো।


আমি এক কাপ গরম কফি বানিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।ওর চোখে মুখে হতাশার ছাপ।হাতে হাত রেখে বললাম, ' আমি তোমার টিউশনি খুঁজছি পেয়ে যাবো হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই। Online class নেবো দুইজনে, সজল একটা application কথা বলছিলো। এখন সবকিছু online হয়ে যাবে জানোতো।'


নীলু

আমার হাত সরিয়ে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।

কফি নিয়ে আবার ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,-- 'এমন কিন্তু কথা ছিলো না।এতোদিন তো তোমার ভরসাতেই ছিলাম।এবার একটু আমার উপর ভরসা রাখো।'

আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে কফি খাওয়ায় মন দিলো।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো " ভরসা করে আজি তো এতো বছর ধরে।"

বন্ধুদের

দুদিন পরে কয়েকটা টিউশনির খোঁজ পেলাম।ও নতুন চাকরির জন্য অনবরত ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।হতাশা ওকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে।


এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর ওর ইন্টারভিউয়ের ডাক পড়লো।চাকরিও হলো।কিন্তু কেনো জানি খুশি হতে পারলাম না।সেটাও আমি ওকে বুঝতে দিতে চাইলাম।না আপনারা যেটা ভাবছেন সেটা নয় , বউয়ের টাকায় বর চলবে ব্যাপারটা আমি কিছুতেই মানতে পারবো না এমনটা নয়। আসলে চাকরিটা ও পেলো মিস্টার আগরবালে অফিসে। আগরবালে আমার লেখা গল্পের প্রযোজকের ছিলেন উনি। ও ছবির পরিচালক ছিলো আমার বন্ধু অভি। অভি যদিও নীলাঞ্জনা বেশি কাছের বন্ধু। সবচেয়ে বড় কথা নীলাঞ্জনা ও প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলো।অভি আগরবালে অফিসে কাজ করে। আমি নীলাঞ্জনাকে বিশ্বাস করি। কিন্তু আগরবাল তো নীলাঞ্জনা একবার কু প্রস্তাব দিয়েছিলো। তার প্রতিবাদে আমি ওদের সাথে চুক্তিভঙ্গ করি। আর তারপর থেকে স্টুডিও পাড়ায় কোন দিন পা রাখি নি অথচ ও ওদের কাছে চাকরি করবে??


.


আমি যা ভেবেছিলাম তাই হলো। ওর সাথে আমার দূরত্ব বেড়ে গেছে অনেকটাই ।সেদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছিলো, সকালে হম্বিতম্বি করে ব্রেকফাস্ট ওর পছন্দের বানিয়ে দিলাম আমি। ও না খেয়ে আয়না সামনে দাড়িয়ে সাজাতে ব্যাস্ত থাকলো।ও ভুলেই গিয়েছিলো ওটা যে আমাদের বিয়ে বার্ষিকী দিন। রুমে এসে আমার অনবরত কাশি, হচ্ছিলো।কাশির সাথে রক্ত পরছিলো। কিন্তু ও দেখেও দেখলো না। কার সাথে যেনো কথা বলতে ব্যস্ত।অমিত ভিডিও ইডিটিং করতে বাড়ি এসেছিলো।জোর করে ও ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম।টেস্টের পরে রিপোর্ট বের হলো। আমি অমিত বললাম কাউকে কিছু না জানাতে। তবু ও জানালো সবাইকে।

দিনে দিনে আমার শরীরটা খারাপ আরো হচ্ছে।

ডক্টর যখন বলছেন " ক্যান্সার প্রথম স্টেজ তাই আমি সুস্থ হয়ে যাবো কিন্তু ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা করালে ভালো।"

মা বাবা ও কথা জানায় নি। আমার পায়ের তলা থেকে একটু একটু করে মাটি সরে যাচ্ছে।আমার চারপাশ কেমন যেনো অন্ধকার হয়ে আসছে। আমার জমানো ব্যাঙ্কের টাকা সব শেষর পথে।মনে হচ্ছে এসব কিছু দুঃস্বপ্ন।ঘুম ভেঙ্গে জাগলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না কিচ্ছু ঠিক হলো না। তবু ওর হাসিটা দেখে প্রান জুড়িয়ে যায়।


ডক্টর য বলল," আর এই মাসের মধ্যে আমাকে ভেলোরে নিয়ে যেতে হবে।"


আমি ওকে

'এবার ছেড়ে দাও আমায়।এই একমাস ট্রিটমেন্ট করেও কি কিছু হবে!! টাকা জোগার করতে হিমসিম খাচ্ছো তুমি যেটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না।'

ও মিচকি হেসে বলেছিলো" আমি আছি তো"


এক বছর ধরে একা লড়ে যাচ্ছে ও । আমার কোন

কথা পাত্তা না দিয়ে, ফোনে কার কাছে টাকা ধার চাইতে থাকলো । মনে হলো রাজী হয়ে গেলো সে।

ওর মুখে একটা চওড়া জয়ের হাসি। 

জড়িয়ে ধরে বললো " শুভ বিবাহ বার্ষিকী বর মশাই। I love you 💗 সো মাচ ".


আমি

আবার ওকে জিজ্ঞেস করলাম


-- 'আচ্ছা এভাবে আর কতদিন ভালোবাসতে পারবে আমাকে?'


ও বললো

"যত বছর,যত মাস,যত দিন,যত ঘন্টা,যত মিনিট,যত সেকেন্ড তুমি বাঁচবে।'


ইতোমধ্যেই অভির ফোন এলো।হয়তো টাকার জোগার হয়েছে।ও তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলাম।


.


টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে ও হয়তো আমায় আর দেখতে পাবে না। হুঁ আমি সু'ইসা'ইড পথ বেছে নিলাম।আমি স্তব্ধ হয়ে ঝুলে আছি , পায়ের নিচে সেই খয়রী খামটা , যাতে বন্দী ছিলো নীলাঞ্জনার মুক্তি পাওয়ার আবেদন পত্র।আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।চারপাশ থেকে কালো আঁধার আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে।ওই খামে বন্দী ছিলো নীলাঞ্জনার হাতের লেখা কাগজ একটা কাগজের টুকরো যাতে লেখা -


❝❝


" কথাটা অনেকেই দিন ধরে বললবো ভাবছি। কিন্তু বলতে পারছিনা।

তুমি মুক্তি দাও আমাকে এই সম্পর্ক থেকে।আমি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারছিলি ।বিশ্বাস করো‌ এই সম্পর্ক টা আর বইতে পারছি না। আমার কিছু স্বপ্ন ছিলো। সেগুলো কে নিজের হাতে মেরে ফেলছি আমি। আজ আমি স্বনির্ভর বলে ভেবো না , সম্পর্কটা ভাঙতে চাইছি। আসলে আমরা বোধহয় কোন দিন নিজেদের ভালোবাসি নি। সাময়িকী মোহে আমরা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলাম। কমবয়সী ছেলে মেয়েদের ভুল ছিলো আমাদের ভালোবাসা। তাই আমাদের স্বপ্ন গুলোর শুধু মৃত্যু হয় নি মৃত্যু হয়েছে আমাদের ভালোবাসার অনুভূতির। তাই এই কাগজে সই করে আমাকে মুক্তি দাও। তুমি যদি সই না করো অভি বলছে, অন্য পথ খোলা আছে আমাদের। কিন্তু লোক জানাজানি হলে তোমাদের বংশের মুখে চুনকালি পরবে আমার কিছু হারাবার নেই জেনে রেখো।

যানে নিজের শারীরিক কষ্টের চেয়েও দিগুণ কষ্ট হতো যখন ওকে আমার জন্য অসহায়ের মতো মানুষের কাছে হাত পাততে হতো।ভেবে নিও একটা লম্বা দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি করতে হবে এমন ভাবে। সেইদিন ও আমার কাছে থেকে মুক্তি পেতে চাইছিলো। আজ কেন জানি না আমাকে নিয়ে বাঁচতে চাইছে। হয়তো এটাই নারীর রহস্যময়ী চরিত্র।

আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী তাই বই খাঁজে লুকিয়ে রাখা টাকা খোঁজ করতে গিয়েই ওই খাম পেলাম , খাম খুলেতেই পেয়ে গেলাম ওর মুক্তির কাতর আবেদন।


আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী। ওর প্রিয় টিউলিপ ফুল কিনে উপহার দেবো ভেবেছিলাম ওকে। কিন্তু আজ আমি ভীষন খুশী, তারচেয়ে বড় উপহার দিতে পারব আমি নীলাঞ্জনাকে। চিরতরে মুক্তি দেবো ওকে। এক সাথে অনেকটা পথ হেঁটেছি আমরা। আজ পথ আলাদা হয়ে গেলো, এক অজানা গন্তব্যে হেঁটে চলেছি আমি। নীলাঞ্জনা মুক্ত আজ থেকে তুমিও। মুক্ত আমিও বার বার হেরে যাওয়ার হতাশা থেকে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract