Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

ঝাল মুড়ি

ঝাল মুড়ি

3 mins
112



ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। ওরা জোর করলো বলেই এবার আমি নাটকটা করছি। ছুটকি বোধহয় আজ আসবে না রিহার্সালে। কাল যখন ওকে কথা গুলো বলছিলাম ওর চোখটা প্রায় ভিজে এসেছিল। ছটফটে সারাক্ষণ অকারনে হেসে যাওয়া, হালকা চরিত্রের মেয়ে ও। গম্ভীর নিরব হয়ে চুপচাপ কথা শোনার মেয়ে ও নয়। কিন্তু কাল সব কথা শুনলো , কোন বকবক করলো। বুঝতে পারছি অনেক কষ্ট হয়তো ও পেয়েছে। ওকে আমি আঘাত করতে চাইনি। কিন্তু আমি কতটা অসহায় সেটা ও কি করে বুঝবে। 

খবর কাগজ হেডলাইন হয় ১০০০ দিন অবস্থান বিক্ষোভের খবর। কিন্তু ১০০০ দিন মানে যে তিনটে বছর কেটে গেলো সে হিসাব কি কেউ রাখে। কলেজ জীবনে আমার , বন্ধু বান্ধবরা যখন সিনামা দেখে প্রেম করে বেড়াছিলো, আড্ডা মরে জীবন টা উপভোগ করছিলো, তখন আমি লাইব্রেরীতে মুখ গুঁজে G.k বই পড়েছি। পূজার হাতখরচ বাঁচিয়ে সরকারি চাকুরী পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা মুলক পরীক্ষার প্রশ্ন উত্তর বই কিনেছি। কিন্তু অনেক গুলো পরীক্ষা অকৃতকার্য হয়েও হাল না ছেড়ে শেষ স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাশ করলাম। বাড়িতে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ছুটকি ও খুশি হয়েছিলো খুব। মজা করে বলছিলো " তাহলে সত্যি সত্যি তুমি ষাঁড় হয়ে গেল।"

হুঁ ও আমাকে ষাঁড় বলে ডাকে আসলে এর পিছনে একটা গল্প আছে। 

মা মরা মেয়ে ছুটকি। ও ওর বাবার দিদার আদরে বাদর। ওর দিদি পড়াশোনা জন্য চ্যাচমেচি করতো। তাই আমাদের বাড়িতে বেশি পড়ে থাকতো। ওর দিদির বিয়ের পর , ওর পড়াশোনার দায়িত্ব কিছুটা আমাদের ওপরে। তাই এক সময় দাদুর হুকুমে ওকে অঙ্ক শেখানোর দায়িত্ব আমার ওপর পরলো। সমীকরণ অঙ্ক।  গরু মহিষ কেনা বেচার অঙ্ক। ও উত্তর বেড় করলো। আরাই খানা গরু মহিষ সেড় তেরোটা। গাট্টা মারতে যাবো তখন যুক্তি দিয়েছিলো। দুইটো গরু একটা বাছুর। সবাই হেসে লুটিয়ে পড়েছিলো ওর উত্তরে। 

আমি বলছিলাম " হ্যা ঠিক একটা তুই একটা তোর বর আর একটা তোর বাচ্চা।"ওকে গরু বলেছি তাই ও আমাকে ষাঁড় বলতে শুরু করল।

হুঁ ছোট বেলায় থেকেই ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি অসহায়। সরকারি চাকুরী পরীক্ষা পাশ করেও চাকুরীটা জুটলো না। যদিও পাড়ার মন্টু বাবু বলেছিলেন , দুই লাখ টাকা দিলে, ভিতরে থাকে একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু আমার এতো কষ্ট, এতো ত্যাগ, মেধার কি কোন মূল্য নেই। ১০০০ দিন অবস্থান বিক্ষোভের পর আমি খুব হতাশ হয়ে পরলাম।

আজ তাই বদলে ফেললাম জীবন। কাঁচা আর সেদ্ধ ছোলা , একটু চানাচুর, একসাথে একটু মশলা দিয়ে, পেঁয়াজ আর গন্ধরাজ লেবু দিয়ে মাখা। তার উপরে মুচমুচে ঝুরি ভাজা ছড়িয়ে , সেটা বাড়িয়ে দাও খদ্দেরের হাত। যাত্রীদের জিভে স্বর্গসুখ দেওয়াই আমার রোজকার  জীবনের গল্প। স্বপ্নের মৃত্যু থাকলেও খিদেরও মরণ নাই। 

তাই ওকে অপমান করলাম অতো। যাতে ও সরে যায় আমার জীবন থেকে। ওর বাবা সেইদিন বলছিলো। ঘটক ওর জন্য একটা ভালো ছেলের খবর এনেছে। ছেলে বিদেশে ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানিতে চিপ স্টুয়ার্ড কাজ করে। মাইনে অনেক।ক্লাবে ঘরে ঢুকে দেখি , ছুটকি এসে গেছে। ওর যেন কিছুই হয় নি।আমার সাথে ঠাট্টা তামাশাও করলো।


রিয়াহসাল শেষ হতে। একসাথে বাড়ির ফেরা পথে , ও আমার হাত ধরলো আগের মতো করে। যেনো কিছুই হয় নি।আমতা আমতা করে আমি বললাম " I am Sorry.. কালকে খুব বাজে ব্যবহার করে ফেলিছি তোর সাথে।"

ও বলল " তাই বুঝি, কিন্তু শুকনো কথায় চিড়া ভিজবে না। শাস্তি পেতে হবে।"

আমি বললাম " শাস্তি, কি শাস্তি পেতে হবে শুনি.."

ও বললো "কাল সন্ধ্যায় প্রিন্সেপ ঘাটে দেখা করতে হবে। সাথে খাওয়াতে হবে তোমার হাতের ঝাল মুড়ি।"

ঝাল মুড়ি কথা শুনেই আমি থমকে দাঁড়ালাম। আমি ঝাল মুড়ি বেঁচি সাটা কেউ জানে না। নদীয়া, রানাঘাট, কল্যানী, উত্তর ২৪পরগনার লোকাল ট্রেনে গুলোতে বেঁচি ঝাল মুড়ি। কেউ জানার কথা নয় । ও জানলো কি করে?

ও বললো " আমার খবর তো তুমি কিছুই রাখো না। আমি তোমার সব খবর রাখি। আমি এ ম তে ভর্তি হয়ছি কল্যানী ইউনিভার্সিটিতে। ট্রেনে যেতে গিয়ে তোমাকে দেখেছি। তুমি কষ্ট আছো। তাই আমাকে অতো কথা শুনিয়েছো জানি। শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিত মানুষ মতো কাজ। হতাশা সময় বৌ পেটানো পুরুষ মানুষ। কিন্তু অসময়ে তোমাকে ছেড়ে যাবো তুমি ভাবলে কি করে? যে মানুষ ভালোবাসে সে আজীবনের জন্য ভালো বাসে, সুখে দুঃখ সব সময় পাশে থাকে। তাছাড়া তুমি যা কৃপণ ঐ ঝালমুড়ি, ফুচকা খাওয়ানো ভয় বোধহয় প্রেম করলে না আমার সাথে কোন দিন। যাই হউক এখন ঝালমুড়ি খেতে খেতে প্রেম করবো দুই জনে।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract