জন্মদিনের উপহার
জন্মদিনের উপহার
শীতকালে ঘোরাঘুরি করতে সবার ভালো লাগে। বিশেষ করে খেজুর রস খেতে সবার ভালো লাগে। শীতের কুয়াশার অস্পষ্ট রাস্তা ঘাট, চেনা গ্রামটাকে অচেনা লাগে। কত রং ফুল , কত রঙের সবজি চাষ হয় আমার গ্রামের মাঠে গুলোতে। দীঘিতে কত ধরনের পরিযায়ী পাখি ভীর করে অথচ আমি বাড়ি গেলাম না।
আসলে আজ ওর জন্মদিন আমার সাথে ও সময় কাটাবে বলেছিলো। কাল রাতে ওর পাইপ বেয়ে ওতো কষ্ট করে ওদের ছাদে ওঠলাম, কেক কাটালাম। বিনিময়ে বলেছিলাম আজ প্রিন্সেপ ঘাটে সূর্য ডোবা দেখতে দেখতে ঘটি গরম ভাজা খাবো। কিন্তু ও এলো না। ওর বোন বলে ফেললো, ফোনে পাওয়া যাবে না ওকে আজ। কারণ ওকে অদ্রি আজ নাইট ক্লাবে নিয়ে গেছে। বাড়িতে জানে প্রমিলা দির বাড়ি গেছে ও। আমিতো অদ্রি থেকে কম যাই না।অদ্রি বড়লোক। কিন্তু আমিও পড়াশোনায় ভালো। ডিপ্লমা ইন্জিনায়ীং স্টুডেন্ট কি হয়েছে।কলেজটা শেষ করতে পাড়লেই ভালো চাকরি পেয়ে বসে আছি। ও ওর বাবার টাকায় ফুর্তি করে। আমি তো ওর জন্য যা করি সব কিছু নিজের টাকায়।ওর বোন ঠিক বলেছে, ওর মতো মেয়ে আমার যোগ্য নয়। আমি ওর কথা ভাববো না।সত্যি ওর সাথে ব্রেক আপ করে নিতে হবে। ও দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে। অদ্রির সাথে প্রতিযোগিতা করে আমি পারবো না। ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে আমার চাকুরীটা হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু ফাইনালে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। সবাই বলে তাছাড়া কলেজ শেষ রিয়া আমাকে ছেড়ে দেবে এমনিতেই। কারণ ওর ড্রয়ইং করে দেওয়া, নোট কপি করে দেওয়া জন্য নাকি ও আমার সাথে প্রেমের অভিনয়টা করে।
ভালো লাগছে না কিছু। চাকুরী পেয়েছি শুনে ছোট ভাই বলছিলো" এবার তাহলে আমাকে আঁকার স্কুলে ভর্তি করে দিবি তুই, আমার ছবি আঁকাতে খুব ভালো লাগে...."
আমার ভাই আমার চেয়ে ভালো পড়াশোনায়। কিন্তু আমাকে পড়ানোর খরচ সামলাতে ওকে ইংলিশ মিডিয়াম ছাড়িয়ে , বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করেছে মা বাবা। ওর আঁকার স্কুলটাও ছাড়িয়ে দিয়েছে। খুব আফসোস হচ্ছে। শহরে এসে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে, ছাত্র পড়িয়ে, সার্ভের কাজে গিয়ে, অনেক টাকাই রোজকার করছি। কিন্তু সব নষ্ট করেছি ওই রিয়া মতো একটি হৃদয়হীন মেয়েটার জন্য। আর ওর জন্য, কোন সময় , অর্থ কিছু নষ্ট করো না। আজ থেকে শুধু লড়াই করবো নিজের জন্য আর আমার পরিবারের জন্য।
তাপসের বাইকটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম রেপিডো খাটবো বলে। আরে সাবাস, দুই পা এগালেই ভাড়া। প্রিন্স আনরসআহ রোড রেলব্রীজ থেকে হাওড়া ব্রীজ।
ব্রিজ মাঝখানে যেতে কাউকে চোখে পড়লো তার পর একজন মেয়েকে ফোনে চ্যাচিয়ে চ্যাচিয়ে বলছে "আমি আজ ফিরো না, তোরা আমাকে ফোন করিস না প্লিজ,.. আমি ফোন রাখলাম"
আমার বাইক ওঠে পড়লেন উনি বেশ ভালই সাজে গুজে। কৌতূহল বলেই ফেললাম" ঘুরতে যাচ্ছেন বুঝি, কিন্তু লাগেজ ব্যাগ নেননি তো "
উনি বললো " মরতে যাচ্ছি, লাগেজ ব্যাগ নেবো কেন??"
আমি থতো মতো খেয়ে গেলাম, " মরতে মানে"
উনি বললেন" আমি মরতে চাই। মেট্রো স্টেশন গিয়ে ছিলাম কিন্তু ভাবলাম, ইলেকট্রনিক সকে আমার সুন্দর মুখটা নষ্ট হয়ে যাবে। তারপর এখানে এলাম, কিন্তু উচ্চ থেকে পড়ে আমার হাত পা ভাইংগা যাবে, দেখতে খারাপ লাগবে তাই হাওড়া ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দেবো। জলে পড়লে তো আমার মেকআপ হয়তো নষ্ট হবে কিন্তু দেখতে তো খারাপ হবো না,,,"
আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটির মাথার স্ক্রু ঢিলা আছে। আমি তাড়াতাড়ি বললাম " হাওড়া গিয়ে লাভ নেই। কারণ ওখানে আপনি মরতে পারবেন না। জল পুলিশ বাঁচিয়ে নেবে।"
মেয়েটা থত মত খেয়ে বললো" প্লিজ একটা এমন জায়গায় নিয়ে চলুন, যেটা মরা জন্য নিরাপদ। আপনার যত টাকা লাগবে তত দেবো।"
হঠাৎ মুখ ফোসকে বেড়িয়ে গেলো " এক বাক্স পেস্টেল কালার কিনে দিলেই হবে।"
তারপর আর কি উনি আমার জীবনের গল্পটা শুনলেন। আমি ও ওনার জীবনের গল্পটা শুনলাম। ওর বয়ফ্রেন্ড ফেসবুক অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করে, সেটা জেনেই উনি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নয়তো উনার জীবণ বিন্দাস।বোধহয় মরা ইচ্ছে টা হারিয়ে গেলো আমার সাথে শহর ময় ঘুরে। উনার আজ জন্মদিন ও মানে বারোটার পর আমি তাই উনাকে উপেনদার ফুচকা খাওয়াই প্রি বার্থ ডে সেলিব্রেট করলাম। বদলে অনুরোধ করছি বারোটার পর মরতে। যাতে উনার নতুন বন্ধু হিসেবে,উনাকে আমি প্রথম বার জন্মদিন উইস করতে পারি । উনি রাজি হয়ে গেলান। আরো কিছুক্ষন হাসাহাসি কথা বার্তা, আড্ডা হলো। বারোটা বাজতে একটা কাপ কেকের ওপর মোমবাতি জ্বালিয়ে ওনার জন্মদিন পালন করলাম আমরা।
এবার ওনার মরার পালা। আমি মনে করি দিলাম এবার মরুন তাহলে। উনি আমাকে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলেন " আচ্ছা, আপনি। মরার জন্য কেন এতো দূরে আপনার নিজের পাড়ায় নিয়ে এলেন??"
আমি বললাম " ঐ যে আগেই বললাম ,আপনি মরে পর আপনার গলার সোনর হার, আংটি খুলে নেবো, ও গুলো রিয়াকে দেবো। ও আমাকে অনেক ভালোবাসবে.."
উনি বললেন" তাহলে আমি মরবো না "
আমি বললাম" কেন??"
উনি বললেন" রিয়াকে ছাড়া কি অন্য কাউকে আপনি ভালো বাসতে পারবেন না??".
আমি বললাম" কাকে ভালোবাসাবো!!"
উনি বললো " আমাকে ভালোবাসুন না, আমাকে আই ফোন দিতে হবে না, কোন দামী গিফ্ট চাইবো না, শুধু ভালো বাসলেই হবে লয়েল থাকলেই হবে।"
আমি বললাম" কম দামী উপহার ও চাইবেন না তো"
জরিয়ে ধরে উনি বললেন " না, তবে খেজুরের রস খাওয়াতে হবে। আর পৌষ পার্বণের মেলা থেকে মাটির পুতুল কিনে দিতে হবে।"
আমি বললাম " কিন্তু আমি তো অন্য উপহার দেবো"
বলে কপালে একটা চুমু দিলাম। উনার মুখটা জোছনার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।আমাদের প্রেমের দৃশ্য দেখবেনা বলে চাঁদটাও মুখ লুকালো নারকেল গাছের ডালের আড়ালে।
,,,,