হারানো সুর
হারানো সুর
পান পাতা সরানোর পর শুভ দৃষ্টি সময়ে দেখলাম, খুব সুন্দর চোখ দুটি জলে ভরা। আজ নগদ ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে উনাকে বিয়ে করেছি আমি। তাই একটা ধ-র্ষিতা মেয়ে হিসাবে হয়তো উনার কাছে এটা অপমানের। আসলে বিয়েটা নিজের ইচ্ছেমতো করিনি উনি জানেন, মায়ের জন্য করে। আমি খুব গরিব ঘরের ছেলে। মা হাসপাতালে ভর্তি মায়ের অ-পারেশন এর জন্য ১০ লাখ টাকার দরকার ছিলো। আমার অফিসের বস সুযোগ পেয়ে আমাকে এই শর্ত দিলেন আমাকে ওনার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে।
এ দেশে ধর্ষিত মেয়েদের ক্ষতি পুরুন দেওয়া হয় বোধায় এর জন্য। আমি শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছি!! ওনার মেয়ে আত্মহত্যা করা চেষ্টা করেছেন দুই একবার, সেটা আমি জানি। আমার মাকে বাঁচাতে চাই। উনি চায় ওনার মেয়েকে বাঁচাতে। ভাই বাবার আপত্তি ছিলো। আমি আর কিছুই ভাবতে চাই নি। আমি বসের সব শর্ত মেনে নিলাম!! আর বসের মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলাম। ঐ চোখ দুটো অনেক গল্প বলতে চাইছে। কিন্তু মনের দরজা খুলতে পারছে না সে। বোধায় চাবি গোছা হারিয়ে ফেলেছে।
আসলে মায়ের অপেরেশ ভালো ভালো কেটেছে।। আমি খুশি হবার কথা। আমি অতো পাক্কা অভিনতা না , তাই বিয়েটা খুব ধুমধামেই হলোও, আমি খুশি না সেটা হয়তো উনি বুঝতে পারছিলেন। তবে অন্য বিয়ে বাড়ির হাসি ঠাট্টা মাঝে , আমাদের চুক্তির বিয়ে নিরব গুনজন আরো বোধহয় আমাদের অস্বস্তিতে ফেলছিলো। আজ আমার বাসর রাত!! আমি বাইরে দাড়িয়ে ছিলাম!।বসের মেয়ে মানে আমার বউ রোমে আগে থেকে বসে ছিলো!! আমি প্রায় ১ ঘন্টা দেরি করে বাসর ঘরে ঢুকলাম। ঘরে দেখলাম মেয়েটা জানালার কাছে গিয়ে বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের আকাশ টা।
আমি মেয়েটা পিছনে গিয়ে একটু শব্দ করলাম। উনি আকাশটা দেখতে জিগাসা করলেন " উনি মা কেমন আছেন?? আমি বললাম "ভালো আছে। "
উনি বললেন "আপনি আপনার মাকে খুব ভালোবাসেন তাই না। "
আমি বললাম " হু, সবাই তো মাকে ভালোবেসে। আপনি আপনার মাকে ভালোবেসেন না"
উনি বললেন "সবাই তো আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়. আপনি খুব অসহায় হয়ে,আপনি আমাকে বিয়ে করে নিলেন, তাই জিজ্ঞাসা করলাম। আমার মা নেই অনেক ছোট বেলায় বাবাকে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। '
শুধু চুপ করে থেকে মাকে ফোন করলাম, তারপর উনার সাথে কথা বলতে বললাম। অনেকক্ষন কথা হলো ওদের।উনি মায়ের সাথে কথা বলে কিছুটা সাভাবিক হলো।
তারপর, আমি বললাম " যান আপনি শুয়ে পরুন। ধর্ষণ একটা মেয়ে জীবনে একটা দূর্ঘটনা ঘটছে মতো। সেটা একটা দুঃখ জনক স্মৃতি হিসাবে ভুলে যাও উচিত। আমি জানি কতো মেয়ে তো তাদের পুরুষ বন্ধু সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তারপর প্রতারিত হয়ে অন্য পুরুষ বিয়ে করে, কৈ তখন তো কোন প্রশ্ন চিহ্ন ওঠে না। আজ আমাদের বিয়ে হলো। আপনি আমাকে চেনেন না জানেন না। ভালোবেসেন কিন্তু সমাজিক ভাবে কিন্তু আজ থেকে রোজ ধর্ষণের অধিকার আমি পেলাম। তাই ওটা ভুলে যান আপনি। আর আমি চেষ্টা করবো আপনার বাবাকে দশ লাখ টাকা টা ফিরত দেবার তারপর আমি আপনাকে স্পর্শ করবো। "
আমি সোফায় শুয়ে পরলাম। উনি কিছু বলেন না। আমি লক্ষ্য করলাম উনি আমাকে দেখে যাচ্ছে। ঐ চোখ দুটো একটা খুশির ঝলক আমি আশ্রয় পেতে চাই ওখানে।খুব সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে পরলাম!! তখনি উনার মায়াবী মুখটা নজরে এলো!! তখন ঘুমিয়ে ছিলো!! কী সোন্দর লাগছে !চুল গুলো এলোমেলো ছিলো। দেখে মনে হচ্ছিলো একটুকরো চাঁদ যেন হাঁসছে!! আমি হাত দিয়ে চুলটা সরাতে হঠাৎ করে নীলা চোখ খোলে ফেললো! আর ও দেখে ফেললো যে আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমি এভাবে তাকিয়ে থাকলাম। উনি বললেন " কি দেখছেন"
উত্তর দিতে পারলাম না।
খাবার টেবিলে। মিস্টার বোস মানে আমার শশুর মশাই বলেন। "তোমাকে আজ থেকে কিছু দিন চাকরি যেতে হবে না। তুমি আমার মেয়েটাকে সময় দাও!! ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাও!"
আমি কিছু বলার আগে উনি বললো " বাপি আমি উনার সাথে হাসপাতালে উনার মাকে দেখতে যাবো! আমার গাড়িটা চাবিটা দাও! উনি পূজার সময় ছুটি নেবে। কাল থেকে আমিও অফিস জনেন করবো। পূজাতে আমরা হানিমুন যাবো কাশ্মীর।আমার খেয়াল আমি নিজে রাখতে পারবো। টেউকিউ বাপি। উনার মতো একটা মানুষকে স্বামী হিসেবে উপার দেবার জন্য।
হাসপাতালে মা ওর হাতে বাড়ির চাবি গোছা বেধে দিলেন। মা বললো " অফিস সাথে সাথে সংসার সামলাতে হবে। মেয়েরা মা দূগ্গা ," ও হাসলো।
মা আর ও অনেক গল্প করলো মনে হলো। ওরা দুজন একে অপরের খুব পরিচিত!! বুঝতে পারলাম, হারনো সেই চাবিটা খুজে পেয়েছে।উনি উনার মনের দরজাটা খুলে ফেলেছে।
ধর্ষণকে কি?? কেবল একটি শারীরিক সহিংসতা বা যৌন অপরাধ হিসেবে দেখবেন।বরং এটিকে ক্ষমতা, সম্মতি (কনসেন্ট), লিঙ্গভিত্তিক অসমতা এবং মানুষের আত্মপরিচয়ের ওপর গভীর আঘাত হিসেবে বিশ্লেষণ করা যেতে । বিশেষ করে নারীবাদী দর্শন (ফেমিনিস্ট ফিলোসফি) এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করলে দেখা যাবে। ধর্ষণ পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ । ধর্ষণ কেবল যৌন আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং পুরুষদের দ্বারা নারীদের ওপর আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি পদ্ধতি।ধর্ষণের ভীতি নারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের স্বাধীনতা সীমিত করে। ওর ngo টা বধূ করার জন্য ওকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
আর বাড়ির দিকে রওনা দিলাম!! মাঝ রাস্তায় এসে গাড়ি থামাতে বললাম! উনি জিজ্ঞেস করলো "কী বেপার এখানে গাড়ি থামাতে বলেন কেন??"?আমি বললাম "গাড়ি থেকে নামুন!! আগে "
তারপর আমি বললাম চলুন "ফুসকা খাবো, "উনি হাসলো। আমরা দুজনে ফুসকা খাওয়া পর একটু হেটে গিয়ে , ঝিলের পারে বসলাম। সূর্য টা ঘুমাতে যাওয়ার আগে মায়াবী একটা রোমান্টিক আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। সব ক্লান্তি মুছে যাচ্ছে ঐ আলোতে। উনি তবুও আমার কাধে মাথা রাখলো। আমি ওর হাতটা ধরলাম।

