STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

দু কাপ চা আর হাফ টিকিট

দু কাপ চা আর হাফ টিকিট

4 mins
7

লোকের ধারণা বিদেশে চাকরি করা সিঙ্গেল পুরুষ মানুষ মানেই চরিত্র হীন। আমি আবার সিঙ্গেল নয়। আমি আবার ডিভোর্সী । মানে রক্তের সাধ পাওয়া বাঘ। ফলে মহিলা মহলের ধারণা আমার অনেক অবৈধ সম্পর্ক আছে। আমার হাফ গার্ল ফ্রেড পিউ যদিও সে কথা ভাবে। হাফ বলছি কেন??  আসলে একটি অনুষ্ঠানে নাচ দেখে আমি তাঁর প্রেমে পড়ি। বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।  প্রত্যাখ্যান করছে এমনটা নয়, সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় তারপর বিয়ে করবে বলেছিলো। 
মেয়েটা খুব ভালো। খোলামেলা পোশাক পরে। কিন্তু বহু বার চেষ্টা করেছি  আমি ঘনিষ্ঠ হবার। সুযোগ দেয় নি সে। বলছে বিয়ের পর সবকিছু। 
কথাটা ওর আমার কিছু কিছু বান্ধবী। জানে ওর এক বান্ধবী মাঝে সাঝে আমার সাথে ইঙ্গিত পূর্ণ কথা বার্তা বলেছে। এর মধ্যে আবার পিউ সাথে হঠাৎই করে আমার ব্রেক আপ। কারণ সে আমার পুরাতন স্ত্রী নিয়ে সব সময় খোটা দেয়। আমার স্ত্রীকে আমি প্রাক্তন বলি না। পুরাতন বলি। কারণ তার জন্য এখনও আমার মনের মধ্যে একটা জায়গা আছে। 
পিউর সাথে আমার সম্পর্ক সম্ভবত দুই বছরের। একটা সম্পর্কের পিছনে সময় আবেগ ইনভেস্টমেন্ট করে কিছু রিটার্ন জন্য। আমরা দুইজনেই কেউ কাউকে কিছু রিটার্ন দিই নি। বিশেষ করে আমদের সম্পর্কটা ভারচুয়াল  মানে ফোনে ফোনে। দেখা সাক্ষাৎ হয়না। সে খবরটা জেনে। ওর সেই বান্ধবী একটু হালকা পাতলা ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করেছে। মানে দুই একবার নাইট ক্লাবে গেছে। বিনিময়ে যখন মেয়েটি সাহায্য চেয়েছে। আমি তাকে সাহায্য করেছি। 
ভুলটা আমার হয়েছে।  মেয়েটির প্রশয় পেয়ে এবার কলকাতায় ফিরেই  কবে ফ্রি আছে জেনে আমি একজোড়া সিনামার তার টিকিট  কেটে নিলাম।  what app pic তুলে পাঠাতেই। তা নিয়ে লঙ্কা কান্ড বেধে গেলো। 
হঠাৎ কোথায় থেকে রাতারাতি, তার বয়ফ্রেন্ড জোগাড় হয়ে গেলো জানি না। তারা দুজন আমাকে সাঁড়াসি আক্রমণ করলো। ও বললো "নেশার ঘোরে দুই একবার হাগ করেছি, চুমু টুমু খেয়েছি, বলে আমাকে বাজারে সস্তা মেয়ে ভেবেছেন।  যে নাইট সো সিনেমা দেখতে চাইছেন আমাকে নিয়ে.." হুমিক দিলো এই কুপ্রস্তাবের কথা সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে আমার পেসটিজ পাংচার করে দেবে। যাইহোক কিছু টাকা পয়সার বিনিময়ে ব্যাপারটি ধামাচাপা দিলাম। 
আট বছর পর সিনেমা দেখবো বলে টিকিটটা খুব আশা করে কেটে ছিলাম। টিকিট প্রতি তাই মায়া পড়ে গেছে। হঠাৎ মনে পড়লো মা বাবা প্রতি বছর বিয়ে বার্ষিক সিনেমা দেখতে যেতো। আমরাও যেতাম মা বাবার সাথে।আমি তখন সেভেন পড়ি বোধহয় রাজা হিন্দুস্থানী টিকিট কেটে ছিলো বাবা মা।  পাশের বাড়ির জুই দি মাকে জানিয়ে দিলো ওখানে কিসিং সিন আছে অমনি সিনামা দেখতে যাওয়া কেনসেল। তারপর থেকে উনারা আর সিনেমা দেখতে যায় নি। 
আমি তাই ঠিক করলাম বাবা মাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবো। আমি একটি অডিনারি টিকিট কেটে নেবো। যাইহোক সেই মতো হলের এসে টিকিট কাটলাম। আজকাল তো সিনেমা হলে তেমন লোকজনের ভিড় হয় না। কিন্তু এই সিনেমাটা হাউসফুল হয়ছে।আমার কপালটা বেশ ভালো আমার টিকিটটা শেষ টিকিট ছিলো। আপনার কপাল ভালো হলেই অন্যের কপাল পুড়বে। আমার এক পূর্ব পরিচিতা মেয়ে আমার পিছনে লাইনে ছিলো সে টিকিট পেলো না। 
বললাম না মেয়েটি আমার পূর্ব পরিচিত। আমার স্ত্রীর পাড়ার মেয়ে। আমার সিনেমা দেখার ইচ্ছা ছিলো না। আমি গেছি বাবা পাহাদার বা ডাইভার হিসেবে। মেয়েটি চাকরি সুবাদে ব্যাঙ্গালোর থাকে আমি জানি। তাই আমি  তাকে প্রস্তাব দিলাম আমার টিকিট সিনেমা দেখতে। কারণ ব্যাঙ্গালোর তো আর বাঙলা সিনেমা দেখতে পাবে না। আর ইউটিউব দেখেতে পারবে না। তাই ও সিনেমা দেখুক। আমি বাইরে কফি সপে বসে কফি খাই আর আমার লেখা লেখির কাজ করি শান্তিতে। ও রাজী হয়ে গেলো। 

মেয়েটি ভালো আবৃত্তি করতো খুব রুচি শীল মেয়ে এবং মিশুকে। আমাদের পাশের পাড়ায় বাড়ি আমাকে ছোট বেলা থেকেই চেনে তাই সহজেই রাজী হয়েছিলো। কিন্তু  সিনেমা টা দেখতে ওর ভালো লাগলো না। ইন্টারভেলে  সময় মেয়েটি হাজির কফি সপ। টিকিট দামটা মেটাতে। হাফ সিনেমা দেখে টিকিট ফিরত দিচ্ছিলো। হাফ সিনেমাটা আমাকে দেখতে বলছিলো। আমি বললাম হাফ টিকিট দাম আমি নেবো না। যাইহোক কফি চুমুক দিতে দিতে  সিনেমা শো শেষ হয়ে গেলো। হাফ টিকিট দাম দিতে আমি ওকে আসতে বললাম হারুদার চায়ের দোকানে। 
ইট খোলায় হারুদার চায়ের দোকান। ইট খোলা নাম থেকে বুঝতে পারছেন এখানে ইট তৈরি হতো। মাটির প্রয়োজন এখানে খনন করা হয়েছিল অনেক পুকুর। যেগুলো এখনো আছে। চারিদিকে অনেক গাছ আছে। সকাল বেলায় এখানে হাটাতে আসে অনেক মানুষ আর শীতের সকালে হারুদার এলাচি চা, অথবা মসলা চা আমাদের অঞ্চলের সবার প্রিয়। তাই সেই বিখ্যাত চা খাইয়ে ঋণ শোধ করতে বললাম। 
আর চরিত্রে দোষ আছে। না না আমি চরিত্রহীন না। আমার বাজে স্বভাব আমি বেশি কথা বলি। ও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো শুধু "অতোবছর হলো বৌ চলে গেছে বিয়ে করেন নি কেন??  আপনি কি এখনো নীলাঞ্জনা দিকে ভুলতে পারেনি।" 
বললেই হতো "হ্যাঁ"..  তাহলে নীলাঞ্জনা কানে কথাটা পৌছাতো, আমি এখনো তাকে ভালোবাসি। শেষের দিকে ও তো ভুল বুঝেছিলো আমাকে ,  ভেবেছিলো আমি বাইরে কোথাও সম্পর্ক রেখেছি বলে ওকে ঠিক মতো হাতখরচ দিতে পারি না। ও বিশ্বাস করতো না আমার ব্যবসা লোকশানে চলেছে। ওর মনের মধ্যে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। ঐ ছোট " হ্যাঁ " শব্দটি হয়তো প্রমাণ করতে পারতো আমি অবিশ্বাসী নয়। 
কিন্তু আমার মুদ্রা দোষ বেশি কথা বলা। সেটাই করলাম। বললে ফেলাম সবাই ভাবে আমাকে চরিত্র হীন। তাই পয়সা বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলেও, স্থায়ী সম্পর্কে আসতে চায় না। আমি আবুধাবীর মতো শহর থাকি। দুবাই সোনা শুধু সস্তা নয় বিনোদন সস্তা তাই আমার এ দেশে কোন মহিলা সাথে সম্পর্ক করে লাভ কি আমার কাছে দরকারী একটা স্থায়ী সম্পর্ক। 
ও চা আডায় আসবে কি না তা নিয়ে বেশ সন্দেহ ছিলো। তাই শীত বেশ কাবু করছিলো আমায়। কিন্তু কুয়াশা কেটে আসতে আসতে যখন এলো। আমার মনের আকাশেও একটা সূর্য যেনো হেসে উঠলো। শীতের কুয়াশাময় অন্ধকার মুছে দিলো মুহুর্তে। 

,,,, 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract