STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

ভাড়াটে

ভাড়াটে

4 mins
4

‘পই পই করে বলেছিলাম ভাড়া দিও না। নিজেদেরই জায়গা কুলোয় না।  নাঃ ভাড়া না দিলে আর চলছিল না। যদিও বা দিলে তা ছেলে যে সেখানে ছুতোয় নাতায় যাচ্ছ সেদিকে খেয়াল আছে? মনে রেখো জামাই ছেলে হয় না, বউ মেয়ে হয় না আর ভাড়াটে কোনদিন আপন হয় না।"


টুবাই ফোরোন কেটে বললো। "কিন্তু ভাড়াটে মেয়ে বৌ মা হতে পারে। "


মা রেগে গিয়ে বললো, " তোকে বলেছি না বড়দের মুখে মুখে বলিবি না একদম। বলি তোমাকে কি তুকতা করল নাকি! তুমিতো এমনটি ছিলে না। ছেলেটা দিকে খেয়াল রাখো একটু। "


একনাগাড়ে কথাগুলো আমাকে নিয়ে  বলা হলেও, গামছায় হাত মুছতে আমি ঘরে ঢুকে  আর যাকে উদ্দেশ্য করে এই কথার বৃষ্টিপাত সে কিন্তু ভিজেছে বলে মনে হ’ল না। বক্স জানালায় বসে উদাস হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখছে। আর এই ঔদাসীনতা  মকে যেন আরও তাতিয়ে তুলল।


মা বললো " কি বললছো না যে, কথাগুলো কি কানে যাচ্ছে না। বধির না কি! বিয়ে হওয়া থেকে  এই এক জ্বালায় আমি জ্বলছি। বাবা যে কি দেখেছিল এই পাথরে! কালা হলেও নয় বুঝতুম। ভাড়াটের ঘরে যেতে বলতে হয় না। দাঁড়াও আমি দেখাচ্ছি মজা। পয়সা আমার দরকার নেই। হায় ভগবান দুটো পয়সার মুখ দেখতে গিয়ে শেষে কি ছেলেটা বেহাত হয়ে যাবে নাকি।"


বাবা এবার উওর দিলো " বলছি অফিস থেকে তো অনেকক্ষণ এসেছি একটু  চা হবে না? "


মা বললো  "না  সেটাও  তোমার ভাড়াটের ঘরে সারে এসো। তোমার তো আবার ওদের সব জিনিস ভালো লাগে। "


হঠাৎ মা কথায় ব্রেক কসলো। সিড়ি তে পায়ের শব্দ আর মিষ্টি চুরি শব্দে। শ্রাবন্তী এসেছে বুঝতে পারলাম।  ও বললো "  মামিমা চাবিটা একটু রাখবে। আমি দিদিদাকে আনতে যাচ্ছি। "


ওকে দেখে মা গিরগিটির মতো রঙ বদলে বললো। "সিড়িতে থেকে চলে যাইবি তোর সাহস বেড়ে গেছে তো খুব। আয় বেগুনি ডেজেছি খেয়ে যাবি। "


শ্রাবন্তী বললো" না না দেড়ি  হয়ে যাবে। "


মা বললো " বেশি পাকামি না। গরম গরম খেয়ে যা। বুবাই তোর সাথে যাবে তোর দিদা মাকে আনতে। রিকশা ভাড়া খরচ করবি কেন। '


বাবা বললো " রাধা মাধব রক্ষা করো। তোমার লীলা বোঝা দায়। "


মায়ের চোখের শাসনে বাবা চুপ করে গেলো। মা ডাকলো " বুবাই শ্রাবন্তী সাথে বাস স্যান্ড অবধি একটু যা। "


আমি তো এ কথাটার অপেক্ষায় ছিলাম। মা যত গজ গজ করুক, শ্রাবন্তী কে দেখলেই শান্ত হয়ে যায়। তবে আজকের সকালের ঘটনাটার জন্য বোধহয় মা একটু বেশি প্রতিক্রিয়া করছে।


দেয়াল স্লেফ থেকে বই নামাতে শ্রাবন্তী টুলের ওপর দাড়িয়ে ছিলো। আমি নিচে থাকে ধরে ছিলাম। ওপর টপটা একটু উঠে যেতেই, ওর ফর্সা পেট উকি মারলো। আমি সেই সুযোগে একটা চুমু খেলাম। আর সেটা নিয়ে একটু খুনসুটি করছিলাম দুই জনে। সেই সময় মা ওর জন্য কিছু তরকারি নিয়ে গেছিলো। আমার চোখে কিছু না পরলেও। একা দুই জন এক ঘরে মা জিনিসটা ভালো চোখে দেখে নি।


শ্রাবন্তী আর আমি যে রিলেশন আছি সেটা সবাই জানে। কিন্তু দুই বাড়ি থেকে কোন আপত্তি নেই। তবে পাড়াপড়শির ঘুম নেই বিষয়টা নিয়ে। মাঝে মাঝে আওয়াজ ওঠে। ভারাটে হয়ে ঢুকে বাড়ির মালিক হয়ে যাচ্ছে, ব্যানার্জীরা। অথচ দেখতে কি সহজ সরল ওরা।


শ্রাবন্তীদের অবস্থা ভালো ছিলো আগে। আমাদের দুটো বাড়ির পর ওর ছোট একটা বাড়িও কিনে ছিলো। কিন্তু মায়া মাসির বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় ও প্রথমে হার্ট এটাক, তারপর পাগল হয়ে গেলো। তখন চিকিৎসা জন্য বাড়িটা বেঁচে দিলো জলের দরে ওর চিকিৎসার জন্য। ওদের দেশে আমাদের দেশ আমাদের দেশ এক জায়গায়। তাই শ্রাবন্তী পড়াশোনা যাতে নষ্ট না হয়। তাই বাবা ওদের ভাড়া দিলো দুই টো ঘর।


তবে আরো দুটো ভাড়াটে আছে আমাদের। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো হলেও। শ্রাবন্তীরা আমাদের ঘরের লোকের মতো এই জিনিসটাই লোকজনের কাছে হিংসার বিষয়। আসলে ভাড়াটে বাড়িওয়ালা সম্পর্ক মানে মানুষ চায়,মাসের প্রথমে মিষ্টি হাসি, মাসের শেষে সামান্য টেনশন!ভাড়াটে ভার্সেস বাড়িওয়ালা - চলমান এক বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই! কখন জল নিয়ে, ইলেকট্রিক বিল নিয়ে ঝামেলা চাই। নয়তো পাড়া পড়শিদের পেটের ভাত হজম হতে চায় না।


সকাল বেলায় দিদি ওপরে এসছিলো। আমি আবার ওনাকে নিমিয়ে দিয়ে এলাম।  ওপরে উঠে দেখলাম মা কাঁদছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়ছে। ভাই বললো। শ্রাবন্তী এমএ পরীক্ষা শেষ তাই ওরা এ মাসে ওঠে যাবে। বয়কা সব ভাড়া মিটিয়ে গেলো।


মাকে কিছু বলতে যাবো। মা চোখ মুছতে মুছতে বললো। " তোর একটা ভালো চাকরি থাকলে। শ্রাবন্তীকে কোন দিন যেতে দিতাম না এ বাড়ি থেকে। "



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract