STORYMIRROR

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

3  

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

7 mins
199


অন্যরকম ভালোবাসা 

পর্ব-৪৭


রাজদীপ গাড়িতে উঠে আর্যকে জিজ্ঞাসা করল,' কবে যাবি ইতালিতে?'

আর্য বলল,' পরশুদিন।'

রাজদীপ বলল,' পরশুদিন মানে যেদিনকে অদৃতের আশীর্বাদ সেই দিন ?'

আর্য বলল,' হুম।'

রাজদীপ বলল,' আর্য আমি আবারও বলছি তুই শেষ দিনের ঘটনাটা নিয়ে অভিমান করে থাকিস না।'

আর্য বলল,' আমি সত্যিই অভিমান করে নেই ।' রাজদীপ বলল,' আর্য আমি তোকে এখন থেকে দেখছি না অনেক ছোট থেকে তোকে দেখছি। আমি না তোকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালো করে চিনি। আর সেই তুই কি না আমাকে বলছিস যে তুই অভিমান করে নেই।

কিন্তু আর্য তোর চোখমুখ তো অন্যরকম কথা বলছে সে বারবার বলে দিচ্ছে যে তুই অভিমান করেছিস।'

আর্য চুপ করে থাকলো।

রাজদীপ বলল ,'আমি জানি এই বিষয় নিয়ে একটা বন্ধু হয়ে আমার এতো কথা বলা সাজেনা তাও বলছি।'

আর্য বলল ,'তোর যদি কথা বলা নাই সাজতো আমি তোকে এতগুলো কথা বলতাম না। আমি তোকে বিশ্বাস করি তাই সমস্ত কথাগুলো বললাম। আর তুই এখন এই কথা বলছিস?'

রাজদীপ বলল,'না রে আমি ওইভাবে বলিনি। আমি শুধু বলছিলাম অভিমান করে ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে চলে এলি। যতইহোক অদৃত তোকে ভালোবাসে ।'

আর্য বলল ,'সেই দিনের ঘটনাটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না সকালবেলাটা তো যেতেই পারতো বল। যাই হোক যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে তবে হ্যাঁ কিছু সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হওয়াটা ভালো, দূরত্ব দিয়ে কিছু সম্পর্ক বোঝা যায়।'

রাজদীপ বলল,' যদি কখনো অদৃত এসে তোর কাছে বলে সে আবার নতুন করে শুরু করতে চায়, তুই অভিমান ভুলে শুরু করতে পারবি নতুনভাবে?'

আর্য স্বল্প হেসে বলল,'জীবনে এমন অনেক মানুষ থাকে যাদের জন্য গোটা জীবনভর অপেক্ষা করা যায়। সেই অপেক্ষায় কোন ক্লান্তি থাকে না, না থাকে কোন অধৈর্য্য। আমার কাছে ঠিক সেরকমই একজন মানুষ হলো অদৃত । ও যদি আমার কাছে অনেক বছর পরেও আসে না তখনও আমার মনের দরজা ওর জন্য সারা জীবন খোলা থাকবে।'

রাজদীপ বলল,' এত ভালবাসিস তারপরেও সবকিছু ছেড়ে চলে এলি ?'

আর্য বাঁকা হাসি হেসে বলল ,'ওই যে বললাম না সম্পর্কেও দূরত্বের প্রয়োজন হয় কিছু সময়। দূরত্ব দিয়ে অনেক কিছু বোঝা যায়। দূরে গেলেই তো বোঝা যায় একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। '







আর্য বলল ,'তুই কিন্তু বইটা ঠিক করে ক্যুরিয়ার করে দিস কেমন । '

রাজদীপ বলল,'কোন চিন্তা করিস না আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি ঠিক করে দেব । আর আরেকবার ভেবে দেখিস কারণ সেইদিন অদৃত কিন্তু একজিবিশন শেষ হয়ে গেলেও এসেছিলো। ওর কাছে তোর গুরুত্ব আছে বলেই কিন্তু এসেছিলো সেদিন। ওতো জানতো বল একজিবিশন শেষ হয়ে গেছে ওতো নাও যেতে পারতো কোনো একটা অজুহাত তো দেখাতেই পারতো। ও কিন্তু তা করেনি। ও গিয়েছিল সেখানে । শুধুমাত্র তোকে ভালোবাসে বলেই কিন্তু সেদিন ও গিয়েছিল। '

আর্য বলল,' আমার কাছে আর ভাবার সময় নেই। অনেক ভেবেই এই সিদ্ধান্তটা আমি নিয়েছি। '

রাজদীপ বলল,' যোগাযোগে থাকিস।'

আর্য বলল,'হ্যাঁ ।'

আর্যকে রাজদীপ আর্যর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিল।














রাত্রিবেলা আর্য যখন তার নিজের ঘরে ব্যাগ গোছাচ্ছিল তখন তমাল সেন তার ঘরে এলো। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,'ভেতরে আসতে পারি ?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ এসো।'

তমাল সেন বলল,'কালকে সকাল এগারোটা বেজে ছয় মিনিটে তোমার ফ্লাইট । আর এই যে তোমার নতুন সিম কার্ড।

তুমি নিশ্চিত যে তুমি ইতালিতে একা থাকতে পারবে? ওখানেই সেটেল হবে?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ।'

তমাল সেন বলল,'না আসলে তুমি একা থাকবে বলে বলছিলাম।'

আর্য বলল,' কেন? এমন তো নয় আমি এখানে সবার সাথে থাকি। হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমি এই বাড়িতে থাকি কিন্তু এই বাড়িতে আমি সবার সাথে থেকেও বড্ড একা।'

তমাল সেন বলল,' সবার সাথে থেকে একা হওয়া আর একা একা থাকার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ আছে। সেখানে তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকবে না।'

আর্য বলল,'এমন তো নয় আমাকে এই বাড়িতে সকলে সঙ্গ দেয়। আমি তো নিজেই নিজেকে সঙ্গ দিই এখানে । আমার নিজেকে সঙ্গ দেওয়ার অভ্যাস আছে। তাই আমার খুব একটা অসুবিধা হবে না।'

তমাল সেন বলল,'তোমাকে যাই-ই বলি তুমি উল্টো বোঝো।

এখানে অনেক লোক আছে কিন্তু ওখানে তা নেই।'

আর্য বলল ,'কথাটা ঠিক। হতে পারে এই বাড়িতে অনেক লোক আছে কিন্তু আমার সাথে কথা বলার কেউ নেই। আমার মাঝে সাঝে মনে হয় আমি যেন এই বাড়িতে অদৃশ্যের মতোন বসবাস করি ।

সবার মাঝে একা থাকার কষ্টটা সেই বোঝে যার সাথে এটা হয় , তার থেকে তার পক্ষে একা একা থাকাটা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি আনন্দদায়ক এবং শান্তিদায়ক হয়।'

তমাল সেন বলল,' আমি শুধু বললাম। এবার তুমি তা কিভাবে নেবে সেটা তোমার বিষয় । যাইহোক অনেক রাত হয়ে গেছে শুয়ে পড়ো কালকে তোমায় যেতে হবে । '








তমাল সেন বেরোতে যাবে এমন সময় আর্য ডেকে উঠলো,' বাবা।'

তমাল সেন বলল,' আবার কি?'

আর্য বলল,' আমার তোমাকে কিছু দেওয়ার ছিল।' তমাল সেন বলল,' তুমি? তাও আবার আমাকে কিছু দেবে?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ ।'

তমাল সেন বলল,' কি দেবে?'

আর্য তার বিছানার উপর রাখা একটি ছোট ব্যাগ তুলে তমাল

সেনের হাতে দিলো।

তমাল সেন বলল,' এটা কি ?'

আর্য বলল ,'এটাতে তোমার জন্য একটা ছোট্ট উপহার আছে । হয়তো এটার মূল্য তোমার কাছে খুব কম কিন্তু এটা আমার জীবনের উপার্জন করা টাকায় কেনা। আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমার জীবনের প্রথম উপার্জন করা টাকাটা আমার প্রিয়জনের পেছনে খরচ করবো। আমি কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছি আর আমার তো মা নেই তাইআমার মা-বাবা বলতে তুমি আছো। আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো না । আমি তোমার মনের মতন নই আমি তোমাকে জীবনে সেরকম কিছুই দিতে পারিনি। তাই শুধু একটা চেষ্টা করলাম । যদি পছন্দ হয় তবে রেখে দিও আর যদি পছন্দ না হয় তবে ফেলে দিও ।'

তমাল সেন বলল,' তুমি উপার্জন করেছো? কি বলছো হাসাচ্ছো তুমি আমাকে।'

আর্য বলল ,'আমি দিল্লিতে অদৃতের একটা বন্ধুর আর্ট গ্যালারিতে ছবি আঁকতাম সেখানেই আমার ছবি বিক্রি হলে যা টাকা পেতাম সেটাই দিয়ে আমি নিজের হাত খরচ চালাতাম। সত্যি বলতে আমার হাত খরচ সেরকম ছিল না দিল্লিতে কারণ সবটাই অদৃত এবং তার মা - বাবা আমাকে দিতেন । তবে হ্যাঁ একটা কথা ঠিক আমি অদৃতের বাড়িতে আমার নিজের বাড়ি থেকে অনেক বেশি ভালো ছিলাম সেখানে অন্তত আমি প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম , হাসতে পারতাম, সবার সাথে গল্প করতে পারতাম ।আমার সেখানে কখনো গুমোট লাগেনি জানো বাবা। সেখানে আমার সাথে কথা বলার মানুষের অভাব ছিল না। সেখানে আমাকে ওরা সমস্ত কিছু প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দিয়েছিল কখনো বা পরিমাণ মতোই দিত কিন্তু সেই সব কিছুতেই খুব ভালোবাসা মিশ্রিত ছিল। প্রত্যেকটা জিনিসের মধ্যে একটা অনুভূতি জড়িয়ে থাকতো।'

কথাগুলো শুনে তমাল সেন ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হাসলো।








তমাল সেন ব্যাগটির ভেতরে থাকা জিনিসটি বের করে দেখলো একটি হাতঘড়ি ব্যাগটিতে রাখা রয়েছে।

তমাল সেন বলল,' হাতঘড়ি?'

আর্য বলল,' হ্যাঁ । আমার এইটুকু সমর্থ্য ছিল তাই তোমাকে এইটুকুই দিতে পারলাম। পছন্দ হলে নিজের কাছে রেখো অথবা পোড়ো । আর না পছন্দ হলে ফেলে দিতে পারো শুধু একটাই অনুরোধ কাউকে দিয়ে দিও না। কারণ এটা আমি তোমার জন্যই কিনেছি।'

তমাল সেন কথাটা শুনে উপহারটি নিজের সঙ্গে করে নিয়ে চলে গেল ।







রাতে আর্য শুলো ঠিকই কিন্তু তার কিছুতেই ঘুম আসলো না । সে জানে না নতুন শহরে সে কি করে একা থাকবে , কি করে সমস্ত কিছুর সাথে মানিয়ে নেবে, সে জানে না কিভাবে নতুন করে আবার সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে শুরু করবে । হয়তো তার পক্ষে কোন কিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় হয়তো পুরনো স্মৃতি আগলে রেখেই বাঁচতে হবে তাকে।







পরদিন সকালে সে ঘুম থেকে উঠে বাদবাকি যা জিনিস নেওয়ার ছিল তা সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিল। ফোনটা শেষবার একবার ভালো করে দেখে নিল অদৃতের কাছ থেকে ফোন এসেছে কিনা ? গতকাল রাত পর্যন্ত অনেক ফোন এসেছে। কিন্তু আজ আর  নতুন করে অদৃতের কাছ থেকে কোনো ফোন আসেনি। হয়তো সত্যিই সে সময় চায় নয়তো সে আজ তার আশীর্বাদ নিয়ে খুব ব্যস্ত । সে তার ফোনে নতুন সিম কার্ড ভরে নিল।

কিছুমুহূর্ত পর সে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হল। তাদের বাড়ির ড্রাইভার তাকে বিমানবন্দরে ছাড়তে গেল।

গাড়িতে যাওয়ার পথে আর্য রাজদীপকে ফোন করল।

ফোন ধরতেই রাজদীপ বলল,'হ্যালো 

কে বলছেন?'

আর্য বলল,'আমি আর্য ।'

রাজদীপ বলল ,'ও তুই!

বেরিয়ে পড়েছিস?'

আর্য বলল,' হ্যাঁ রাস্তায় আছি ।'

রাজদীপ বলল ,'এটাই নতুন নাম্বার তো?'

আর্য বলল,' হ্যাঁ ।'

রাজদীপ বলল,'সাবধানে যাস । যোগাযোগ রাখিস।' 

আর্য বলল,'হ্যাঁ ।

আর তোকে যেই কাজটা করতে বলেছিলাম তুই করে দিয়েছিস তো ?'

রাজদীপ বলল,' হ্যাঁ। এতক্ষণে হয়তো হাতে বইটা পেয়েও গেছে ।'

আর্য বলল ,'ঠিক আছে।'

আর্য বলল,'আর তোকে যে কথাটা রাখতে বলেছি দয়া করে রাখিস। '

রাজদীপ বলল,' আমি যখন তোকে কথা দিয়েছি অবশ্যই সেটা রাখবো তুই চিন্তা করিস না।'









আর্য প্লেনে উঠে ভাবলো, এতক্ষণে হয়তো অদৃতের আশীর্বাদ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। হয়তো পত্রলেখা খুব খুশি, আঙ্কেল-আন্টি ও ভীষণ খুশি। আর খুশি তো হওয়ারই কথা সবাই তো এটাই চেয়েছিলো। 

সে ভাবলো,' একদিন অদৃত তোমার জন্যই আমি এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাইনি। আমি কখনো তোমার চোখের আড়াল হতে চাইনি, না চেয়েছি তুমি আমার চোখের আড়াল হও। আমি কখনো চাইনি তোমাকে ছেড়ে থাকতে । কিন্তু তা স্বপ্নই থেকে গেল । আজকে সেই তোমার ভালোর থাকার জন্যই আমি অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। শুধুমাত্র তোমার ভালোর জন্য। তুমি ভালো থেকো অদৃত ।

আমি সবসময় চাই তুমি ভালো থাকো, আনন্দে থাকো, খুশিতে থাকো।'

কিছুমূহূর্ত পর আবার সে ভাবলো,'আচ্ছা আমি ঠিক করছি তো ? অদৃত খুশি থাকবে তো?

হ্যাঁ, আমি যা করছি ঠিক করছি। আমি তো ওর খুশির জন্যই করছি সবকিছু । ও চায় ওর মা- বাবা খুশি হোক তাতেই ও খুশি । আর আশা করছি এতে আঙ্কেল আন্টি খুশি হবেন হয়তো অদৃতও খুশি হবে । যা হচ্ছে সব ঠিক হচ্ছে। আমার ভালো থাকা, খারাপ থাকায় কার কি যায় আসে?

তুমি ভালো থেকো অদৃত। তুমি ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো।'









To be continued.....................


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance