ফেরা
ফেরা
জীবনটা বড়ই অদ্ভুত রোমাঞ্চকর বিষয়ে ভরা। ভালোবাসার মানুষকে জীবনে পাওয়া যে কোন মানুষের জীবনে এক অপার অনাবিল আনন্দ এনে দেয় যেমন, তেমন ভাবে হঠাৎ কোন ভালোবাসার মানুষের প্রস্থান ঠিক ততটাই দুঃখের ও বেদনার। কিন্তু তবু কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা বুক ভরা অপত্য স্নেহ দিয়ে সেই আহত আঘাতে জর্জরিত বিধ্বস্ত মনকে এই কঠিন পৃথিবীর বাস্তবতা থেকে রক্ষা করে সতেজ এবং সবুজ রাখার প্রয়াস করে।
আজকের দিনটিও আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতই, তবুও পিয়ার কাছে আজকের দিনটি একটা উল্লেখযোগ্য দিন।
এই যে, আমার মহারাণী, তাড়াতাড়ি ওঠ, ইতিমধ্যে ৫ টা বেজে গেছে, তোর না ৭.৩০ এ ট্রেন!
উফফ মনি! উঠছি তো, আর দশটা মিনিট একটু বিছানার সাথে কাঁটাতে দাও প্লিজ।
দশ মিনিট কেন, পুরোটা জীবনই কাটিয়ে, দাও। যখন ইচ্ছে উঠো, আমি চল্লুম তোমার টিফিন বানাতে, টিফিন বানিয়ে ব্যাগে দিয়ে দিব। দেরী হলে আমাকে যেন না বল আবার!
চলো, বাবা আমি একদম রেডি। বের হয়ে যাই তাড়াতাড়ি। মনি, অনেক মিস করব তোমায়। আমি জানিনা কিভাবে তোমাকে ছাড়া পুরোটা ম্যানেজ করব। কিন্তু কি আর করব বল। যেতে যে হবেই।
পাগলী টা আমার! সব হয়ে যাবে। না হলে, আমি তো আছিই। সাবধানে থাকিস মা।
ভারাক্রান্ত মুখে বেরিয়ে যায় পিয়া আর সুজন দাস এবং তার স্ত্রী ভারতী। পিয়া যাচ্ছে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায়। সেখানে সে চাকরির প্রস্তুতি নিবে। নিজের স্বপ্নের ঘুড়ির লাটাইটাকে একটু শক্ত করে ধরবে। যদিও এখানে থেকেও সেই প্রস্তুতি করা যেত, কিন্তু এখানেই তার কিছুতেই মন টিকছে না। আসলে অতীতের কিছু স্মৃতি তাকে বারংবার পিছনে টানছে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে, যদি স্বস্তি মেলে!
কলকাতায় পৌঁছনোর পর পিয়া তার নিজের স্বপ্ন সার্থক করার জন্য ব্যস্ত, সারাদিন তার অক্লান্ত পরিশ্রম করে কেটে যায় তার ভবিষ্যত জীবনের স্বপ্নে - তাকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে সম্মানের সাথে জীবনটা কাটাতে হবে।
-পূজা তাড়াতাড়ি পা চালা, ক্লাস মনে হয় শুরু হয়ে গেল।
-আরে দাঁড়া , একটু দেরীতে গেলেও কিছু হবে না।
-ইসসস তোকে নিয়ে আর পারি না, এত ধীরে হাঁটিস কেন রে তুই?
-এই দাঁড়া দাঁড়া, বাবা ফোন করেছেন।
-হ্যাঁ বাবা বল।
-কি করছিস রে মা?
-এই তো বাবা কিছু না, ক্লাসে যাচ্ছি।
-কেন, বাবা তোমার গলা এমন লাগছে কেন? কিছু হয়েছে কি তোমার? শরীর ঠিক আছে তো তোমার?
-হ্যাঁ রে মা, আমার শরীর ঠিক আছে, কিন্তু তোর মামনির, শরীরটা একদম ভালো নেই রে।
-তুমি এখন বলছ আমাকে। (বলতে বলতেই পিয়ার চোখ দিয়ে জল চলে আসে) বলবেই বা কেন, আমি কি তোমাদের কেউ?
-এই সব কথার জন্যই তোকে বলতে চাই নি।
-আমি আজ রাতেই বাড়ি ফিরছি।
-না না রাতে আসার দরকার নেই। তুই আসলে বরং কাল সকালে আয়।
-না একদম কথা বাড়াবে না, আমি আজ যাব মানে যাবই।
এরপর পিয়া রাত আটটার ট্রেনে চেপে বসে। সে ভেবেছিল, ট্রেন বুঝি অনেক ভিড় হবে। কিন্তু ট্রেন প্রায় ফাঁকা। যাক ভালোই হল। অপরিচিতদের সাথে কথা না বলে তাদের এড়িয়ে যেতে পিয়ার বেশ সুবিধাই হবে বইকি! পিয়া তার ব্যাগ থেকে Who will cry when you die? বইটা বের করে চোখ বোলাচ্ছে। তার মনে হল কেউ যেন তার ঠিক সামনের সিটে বসল। তার হাতে একটি গীটার রয়েছে। পিয়া যখন মুখ তুলে ছেলেটার দিকে দেখল, সে দেখে ছেলেটা হাঁ করে পিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
-হাই, হ্যালো।
পিয়া– মনে মনে- (কে রে বাবা এই মডেল , কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেই চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে।)
হাইইই, আমি রাজীব। কোথায় যাচ্ছ তুমি। ইসস! সরি সরি, তুমি বলে ফেললাম। আসলে আপনি কথাটার সাথে আমি তেমন ভাবে পরিচিত নই তো তাই, মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।
আরে এ কেমন মেয়ে রে বাবা, কথা বলতে পারে না। এই যে হ্যালো ম্যাম, আমি আপনাকেই বলছি। কিছু তো বলুন। আচ্ছা কিছু না বলেন, অন্তত নামটা তো বলুন।
একদমে এত কথা বলার পর কোন প্রত্যুত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে, কিছুক্ষন চুপ করে রইলো।
এরপর রাজীব গান শুরু করে দেয়- “ইয়ে রাতে ইয়ে মৌসম, ইয়ে নদী কা কিনারা….”
গানটা শুরু করার পর, পিয়া কয়েক মুহূর্ত রাজীবের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর পিয়া উঠে চলে যায়।
রাজীব ( আপনমনে) – ইসস, আচ্ছা পাগল মেয়ে তো!
এবার রাজীব উঠে পিয়ার পিছন পিছন গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ায়।
পিয়া– (কেঁদে) সবকিছু ভুলে গিয়েও কেন ভুলতে পারছি না আমি। মনিকে তো কথা দিয়েছিলাম আমি আর কাঁদব না। কিন্তু আমার চোখে জল চলে আসছে কেন? আমি আমি সব ভুলে যেতে চাই।
রাজীব– excuse me. তোমাকে আঘাত করার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিল না। প্লিজ সরি।
পিয়া– আপনাকে গান করতে কে বলেছিল? আমি কি আপনাকে গান গাইতে বলেছি? একজন কে হার্ট করতে খুব খুব ভালো লাগে না আপনাদের? এই গানটাই কেন? তুমি জানো আমি এই তিনটে বছর কোনো গান শুনিনি। আমি যে শুধু তোমার গলাতেই গান শুনতে চাই সোম !
রাজীব– সোম!
এবার পিয়ার যেন, চেতনা ফিরে আসে। সে বুঝতে পারে , সে আবার তার আগের দুশ্চিন্তায় ফিরে যাচ্ছিল। বুঝতেই পারেনি যে ও কখন ওর পুরোনো স্মৃতির জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল।
রাজীব- এসো, বস। শান্ত হও।
এরপর কিছুক্ষন বসে মন শান্ত করে, ঠান্ডা মাথায়
পিয়া তার বাবাকে ফোন করে, জানায় সে ট্রেনে আছে।
রাজীব– খিচুড়ি খাবে? খিচুড়ি?
পিয়া– না, ধন্যবাদ।
রাজীব– না খেলে মিস করবে কিন্তু, বলে দিলুম। আমার মায়ের হাতে বানানো খিচুড়ি। যে খেয়েছে সেই খিচুরির দিওয়ানা হয়ে গেছে। -এই বলে রাজীব খিচুড়ির টিফিন পিয়ার সামনে রাখে। সেখান থেকে কিছুটা নিয়ে পিয়া বলে- “হুম অনেক সুন্দর।“
দেখতে দেখতেই কয়েক সেকেন্ডেই পিয়া পুরো টিফিন শেষ করে দেয়।
রাজীব- আমি কি খাব এবার?
সিয়া– ইসস সরি সরি, আসলে খিদের জ্বালায় কখন যে পুরোটা শেষ করে দিয়েছি বুঝতেই পারিনি। সরি সরি।
রাজীব - হা হা হা।
-এই প্রথম বারের জন্য ট্রেনে কারও সাথে এমন behave করলাম।
রাজীব– কোনো ব্যাপার না। আচ্ছা, এবার তো বল, কোথায় নামবে তুমি।
পিয়া- NJP তে।
রাজীব- ওউউ, আমিও সেখানেই নামবো । সেখানে নামার পড় ফুলবাড়িতে মামা বাড়িতে যাব।
পিয়া– ও আচ্ছা। (এই বলে আবার বইটা খুলতে যায়।)
রাজীব- আচ্ছা, ডেঁপো মেয়ে তো, সামনে একজন এত সুন্দর ছেলে বসে আছে, আর বই খুলে বই পড়ছে!
পিয়া– এই যে, খিচুড়ি খেয়েছি, ভেবে আমাকে লাইন মারার চেষ্টা করবে না, কিন্তু।
রাজীব- হ্যাঁ, হ্যাঁ । আচ্ছা তুমি কোথায় যাচ্ছ?
পিয়া– আমার বাড়ি।
রাজীব এক দৃষ্টিতে পিয়ার দিকে তাকিয়েই থাকে। মাথায় চলতে থাকে নানান প্রশ্ন। এত সুন্দর মুখ। স্নিগ্ধতায় ভরা। নিষ্পাপ কথাবার্তা। কিন্তু ‘সোম ’ কে? এই ‘সোম’কে সে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায়।
রাজীব - বাইরে দেখ, আকাশে তারাগুলি কেমন যেন ফুলের মত মনে হচ্ছে। চাঁদটাও অনেকটা বড় হয়ে গেছে, মনে হচ্ছে আজ পূর্ণিমা।
পিয়া বাইরের আকাশ, তারা, চাঁদ দেখতে দেখতে ভীষণ আবেগপ্রবন হয়ে পড়ে। নিজের অজ্ঞাতেই
হঠাৎই পিয়া রাঘবের হাতে হাত রেখে বলে- জানো তো, আমার মনে আমি এক নিদারুন যন্ত্রণা সবসময়ের জন্য বয়ে নিয়ে বেড়াই। আমি চাই আমার কথা কেউ শুনুক, যদি একটু শান্তি পাই। আজ মনে হচ্ছে তোমাকে সব কিছু খুলে বলি। যদিও তুমি অচেনা। কিন্তু মন চাইছে তোমাকে সবকিছু জানিয়ে দিয়ে হালকা হয়ে যেতে। রাঘব পিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে, পিয়ার দুই চোখ দিয়ে জল উপচে পড়ছে।
রাজীব– অবশ্যই শুনব, যদি শোনাও।
পিয়া শুরু করে তার আত্মকথা - তখন আমি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়তাম। হঠাৎ
করেই আমাদের ইংরেজি শিক্ষক বদলি হলেন, তার জায়গায় এলেন একজন অন্য শিক্ষক। নাম সোমনাথ দাস। তাকে সবাই ‘সব মেয়ের ক্রাশ’ নামেই চিনত। কারণ স্যার দেখতে নাকি অনেক ভালো। যদিও আমার সেরকম কিছু মনে হয়নি।
একদিন বাড়ি ফিরে দেখি, তার মা আমার জন্য সম্বন্ধ নিয়ে হাজির। আমাদের বাড়ির সবাই রাজী। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না, যে কি হচ্ছে! মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। যেটা কখনো ভাবতে পারিনি, তাই হয়ে গেল। আমার বিয়ে হয়ে যায়। ভালো সম্বন্ধ, তাই বাড়ি থেকেও আমার কথা শোনেনি।
আমার চাওয়া- পাওয়া সব কিছুই পূর্ণ করে শুভ। নিজেকে যেন ধীরে ধীরে চিনতে শিখে গেলাম। ইচ্ছে ছিল, নাচ শেখার। সেটাও পূর্ণ হয়ে গেল। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভেবেছিলাম, ভগবান যা করেন মঙ্গলই করেন। কিন্তু আমার কপালে যে অন্য কিছু লেখা ছিল। একদিন নাচের ক্লাস থেকে বাড়ি ফিরতেই দেখি, রাস্তা জুড়ে গাড়ির পর গাড়ি। চারিদিকে রজনীগন্ধার সুবাস । কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না, আসলে ব্যাপারটা কি? কলেজে যাওয়ার পথে সোমের অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যায়, ও আর নেই! আমি বাইরে ছিলাম বলে আমাকে কেউ জানায়নি অপেক্ষা করছিল আমার বাড়ি ফেরার। সব শোনার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল ।
তারপর আর কিছুই মনে নেই। শুধু এটুকু মনে আছে যে, আমার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর যখন জ্ঞান ফিরে পাই, তখন দেখি আমাকে সবাই ঘিরে রেখেছে। আর জল নিয়ে আমার মাথায় ঢালছে।
এরপর কেটে যায় একটা বছর। কিন্তু নিজেকে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। নিজের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরে আসতে চেষ্টা করি। কিন্তু মন থেকে তাকে কখনোই ভুলতে পাড়ি না। আর যে গান টা তুমি করলে সেটিই ছিল তার প্রিয় গান। আমরা প্রতিদিন রাতে খোলা আকাশে ছাদে যেতাম। ও গান করত, আর আমি চুপটি করে তার গান শুনতাম।
রাজীব– জানিনা, আমি যেটা বলতে চাইছি, সেটা কতটা প্রাসঙ্গিক! তবুও বলছি। আমি কি, তোমার মন ভালো করার চেষ্টা করতে পারি?
পিয়া– না কক্ষনোই না। আমি নিশ্চয়ই পাপী। আমি সবার মাথার বোঝা । কেউই আমার সঙ্গে সুখে থাকতে পারে না।
রাজীব- বিশ্বাস করো, এই কয়েক ঘণ্টায়, তোমার অনেকটা কাছে চলে এসেছি আমি। আমি তোমার তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে চাই।
পিয়া চুপচাপ থাকে। কিছুক্ষণ পর ট্রেন NJP ষ্টেশনে থেমে যায়। পিয়া চোখের জল মুছে নেমে পড়ে। বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
বাড়ি ফিরে দেখে মনি বাড়ীর দরজায় বরণ ডালা নিয়ে পিয়ার প্রতীক্ষায়,
মনি মনি কোথায় তুমি! বরণ এর থালা নিয়ে।
এসেছিস মা!
পিয়া- বাবা তুমি ইচ্ছে করে এইসব করেছো।
বাবা - হাঁ হাঁ হাঁ।
পিয়া– উফফ, তোমরাও না সত্যি। উঃ। কেন করো তোমরা এমন বলতো?
ভারতী - শুভ জন্মদিন মা। তুই ছাড়া আর কে আছে মা! আচ্ছা শোনো কাল বিকেলে তৈরি থেকো। তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাব।
পরের দিন বিকেলে, তারা এক বাড়িতে যায়। সেখানে পরিচয় পর্ব চলতে থাকে।
ও হল আমার বন্ধু সুজন দাস। আর ও হল পিয়া।
আর আমাদের পরিচয়টাও দিয়ে দিই- আমি সৃজিত চৌধুরী। আর আমার স্ত্রী রমলা। আমার দুই পরম আদুরে মেয়ে রাই আর সই।
রমলা– বা কি মিষ্টি মেয়ে গো তুমি।
পিয়া– প্রনাম।
সই– আর একজনের সাথে কিন্তু পরিচয়টা হল না। সে তো উড়ে বেড়াচ্ছে। রমলার তাড়া খেয়ে সই চুপ করে যায়।
সবাই কথা বললেও পিয়া কিছু না বলেই মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। তার মনে হল কেউ একজন ঘরে ঢুকল।
আয় আয় ও ভেতরে আয়। এই যে এ হল আমার ভাগ্নে।
ভারতী – বসো বাবা। তা তুমি কি করো যেন?
রাজীব- এই তো একটা ব্যাঙ্কে আছি, আর গান-বাজনা এই নিয়েই চলে আমার।
রাজীবের কথা শুনে সুজন দাস এবং ভারতীর মুখে মলিনতা নেমে আসল।
পিয়া (মনে মনে)- গলাটা অনেকটা পরিচিত মনে হচ্ছে।
সুজন – হুম অনেক তো কথা হল কিন্তু বাবা তোমার নামটা জানা হল না।
রাজীব– (গলা ঝেড়ে) আজ্ঞে রাজীব।
পিয়া চমকে উঠে। রাজীব ! তার সাথে তো ট্রেনে দেখা হয়েছিল।
বা বেশ বেশ।
তাহলে আজ আসি। পড়ে কথা হবে।
এরপর পিয়ারা বাড়ি ফিরে আসে।
ভারতী – হ্যাঁ রে মা, কেমন লাগল রে রাজীব কে?
পিয়া- কেন? ভালই। কিন্তু আমাকে এই সব জিজ্ঞেস করছ কেন?
ভারতী – তোর জন্যই দেখতে দিয়েছিলাম।
পিয়া– তোমার মাথা ঠিক আছে তো? না না না আমি কিছুতেই শুনব না।
ভারতী - আর কত দিন এভাব থাকবি বল মা! এই বুড়ি টাকেও একটু শান্তি দে। তোর চিন্তায় আমি যে মরেও শান্তি পাব না।
পিয়া– তুমি আবার শুরু করলে?
সুজন – না বলিস না রে মা। প্লিজ।
এরপর সবাই পিয়াকে রুমে রেখে চলে যায়। কিছুক্ষণ পড় পিয়ার ফোন বেজে উঠে।
-হাই, চিনতে পাড়লে?
-হ্যাঁ,
-দেখেছো, ভগবানও চায় আমাদের মধ্যে সম্পর্ক হোক।
-কিন্তু আমি চাই না, আমি চাই না আর কাউকে জড়াতে।
-তা কি করে হয় ম্যাম, আমি তো জড়িয়ে গেছি।
-প্লিজ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো।
-উঁহু আর কোনো কথা হবে না, আমি বাড়িতে বলে ফেলেছি, মেয়ে আমার খুউউব পছন্দ।
এরপরই রাজীব ফোন কেটে দেয়। এবার পিয়ার মনে হল, সে যেন না চাইতেও রাজীবের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে নানান জোয়ারভাটার মধ্য দিয়ে তাদের বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়।
এরপর বিয়ের বাজার শুরু হয়। পিয়া নিজেই বেনারসি পছন্দ করে। তবে বেনারসির রং কালো। এতে অবশ্য রমলা দেবীর ঘোর আপত্তি ছিল। কিন্তু ভারতী দেবী বলেন- অত শত নিয়ম করে কি হবে। আগের বার মেয়েকে লাল বেনারসিতে সাজিয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচ মাসেই সে তার ভালোবাসাকে হারালো। এবার বিয়েটা নাহয় একটু অনিয়মেই হোক। এরপর আর কেউ কোনো আপত্তি জানায়নি।
এরপর সেজে উঠে দাস বাড়ি নতুন এক আনন্দে। চারিদিকে ফুলের গন্ধে ভেসে যেতে থাকে বাতাস। খুব ধূমধামে বিয়ে হয়ে যায় পিয়া আর রাজীবের।
ভারতী দেবী, তার ছেলের ফটোর সামনে বসে কাঁদতে থাকে- দেখ বাবা তোর পিয়ার মুখে আবার হাসি ফোটাতে পেরেছি। তুই চলে যাওয়ার পড় থেকে মেয়েটা একদম ভেঙ্গে পড়েছিল। তুই ওকে আশীর্বাদ কর বাবা।
পিয়া- মনি আমি জানি তুমি এখন মন খারাপ করছো । এই বাড়িতে আসার পর থেকে তুমিই আমার মা এর ভালোবাসা পূর্ণ করেছো। তোমার ছেলে আমাকে একা করে দিলেও তুমি আর বাবা সবসময় আমার পাশে থেকেছো। এই বলে পিয়া ভারতীকে জড়িয়ে ধরে, কাঁদতে থাকে।
ভারতী – আরে পাগলী, কাঁদে নাকি। তুই আমাদের মেয়ের মতন।
হঠাৎ রাজীব সেখানে চলে আসে-
রাজীব– আর আমি?
- তুমিও তো আমাদের ছেলেই।
আজ পিয়া-রাজীবের বিয়ের পাঁচটা বছর কেটে গেছে। ওদের সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে আছে- নাম রেখেছে সোমলতা । হয়ত সোমের স্মৃতিকে মনে করেই এমন নামকরণ ।