সোম প্রসুপ্ত

Romance Classics Inspirational

4.0  

সোম প্রসুপ্ত

Romance Classics Inspirational

অচ্ছুৎ শারদ সংখ্যা

অচ্ছুৎ শারদ সংখ্যা

16 mins
2.6K



ঢং ঢং করে চার্চের ঘড়িতে ছটা ঘণ্টা পড়লো। ইটের লাল রাস্তার পাশের টাইম কল টা পিচকারীর মত দু - একবার জল ছিটিয়ে, চুইয়ে চুইয়ে জল পড়া শুরু হলো। গোয়ালার দুধের খালি ড্রাম দুটো সাইকেলের দুপাশে বাঁধা, ইটের এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় চাকা গুলো ওঠা নামায় ক্রমাগত ঝনাৎ ঝনাৎ শব্দ করে চলে যায়। বিশু দোকান খুলেছে। মোড়ের মাথায় বটগাছ টার নীচে ছোটো চায়ের দোকান ওর। তিনদিক বাঁশের ব্যাড়া দিয়ে ঘেরা, সামনে টা গেলো বছর ইটের প্লাস্টার করেছে।বিশুর বয়স ওই তেত্রিশ মত হবে। ওর শরীরের বহর খুব বেশি নয়। ওদের জাতের মদ্দ দের যেমন হয় আরকি, ছোটো থেকে মুট বয়ে বয়ে বেশি বাড়েনি। মাথায় খাড়া কালো চুলগুলো, ওর উচ্চতার সাথে মানায়, মুখে গোঁফ জোড়া স্পষ্ট। কালো শক্ত হাত দুটো দিয়ে ভালো করে দোকানের সামনে টা ভালো করে ধুয়ে, অবশিষ্ট জল টুকু ছিটিয়ে দেয় রাস্তার উপর। জোরে জোরে শ্বাস টেনে ফুঁ দিয়ে গুলের আগুন টা বাড়ানোর চেষ্টা করে দু - একবার। ধোঁয়ায় বটতলাটা একেবারে অন্ধকার হয়ে যায়। পাশের দোকানী, আন্না বৌদি চেঁচিয়ে বলে, " কেরোসিন ঢাল রে বিশু, চোক জ্বলতিছে..."

- " হ্যাঁ বৌদি, ধরে গিয়েচে..."

আন্না বৌদির মুদির দোকান। টিনের ঝাঁপি টা তুলে বাঁশে বাঁধিয়ে রেখে, ঝাঁটা দিয়ে বটের পাতা সরাতে থাকে দোকানের সামনে থেকে। মন্দিরের সামনেটা ও রোজ ঝাঁট দেয় আন্না। ওর দোকানের উল্টো দিকেই বুড়ো শিবের মন্দির। একটু বেলা হলে ঠাকুর মশাই এসে পুজো দিয়ে যাবে আর চা খেয়ে যাবে বিশুর দোকান থেকে। আন্না বৌদির দোকানের সামনে কৌটো ভর্তি করে সব সাজানো। লজেন্স, গজা, চার রকমের ডাল, তিন রকমের চানাচুর। চিপস এর প্যাকেট গুলো বার করে সামনের টিনের সাথে বাঁধা দড়িতে ঝুলিয়ে দেয়। বিশু কাচের গ্লাস গুলো জল বুলিয়ে উপুড় করে সাজিয়ে রাখে সামনে, তারপর দুধের ডেচকি টা রাখে উনুনের উপর। বেশ ভালোই চলে ওর দোকান টা। সকালে পঞ্চাশ কাপ আর সন্ধ্যেতে তো কোনো কোনো দিন সত্তর কাপ ও ছড়িয়ে যায়। এবার একটা কালার টিভি নিতে হবে, খবর চালিয়ে রেখে দিলেই আরো লোক এসে বসবে। কাগজ ওয়ালা আসে। তিন রকমের কাগজ নিতেই হয়। "আনন্দ বাজার", "এই সময়" আর "বর্তমান"। সবাই তো আর সব পড়ে না। বিশু কোনোটাই পড়তে পারে না। মাঝে মাঝে দুপুরের দিকে দোকান যখন ফাঁকা থাকে তখন পাতা উল্টে উল্টে ছবি দেখে। "পোষেন জিত", "সারোক খান" আরো কত লোকের ছবি বেরোচ্ছে রোজ কাগজে, অত নাম কি ও জানে! জেনেও লাভ কী ওর!


গত অগ্রহায়ণেই টিভিটা নেওয়া হতো, কিন্তু ওই যে বিয়ে করলো। তিনশো লোককে রুই মাছ - ভাত খাওয়ানো কি মুখের কথা! বাগদী হলেও কেউ ওকে ছোটো করে দেখেনা। সবাই ওর ভীষণ প্রিয়, কাকে বাদ দিয়ে কাকে বলবে, গ্রামের ছোটো বড়ো সব জাতের ওঠা বসা ওর দোকানে। বলতে বলতে তিনশো হয়ে গেলো।

বিশুর বেশ বয়স করেই বিয়ে হয়েছে। ওর বাপ ঠাকুরদা কেউ পঁচিশ পেরিয়ে বিয়ে করেনি, সেখানে ওর বত্রিশ। বউ অবশ্য ঠিক আছে পনেরো, পাশের গ্রামেই বাড়ি। শ্যামলা, রোগা ফিনফিনে, চুলগুলো হাঁটু ছোঁয় ছোঁয়। প্রথম বার দেখতে গিয়েই একশো টাকার এক খানা নোট হাতের মধ্যে গুঁজে দিয়ে এসেছিলো। বিশুর দিকে একবার চোখ তুলে দেখে নিয়েই আবার মুখ নামিয়ে নিয়েছিলো পাত্রী।

- "কী নাম তোমার?"

মেয়ে মাথা নীচু করেই মিনমিন করে উত্তর দেয়, "অষ্টমী মুন্ডা। "

- "দুগ্গা পুজুতে হৈছিলে নাকি?"

ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায় অষ্টমী।

- "জন্মেই মা ডা মোলো, আমরাই বুকি পিটি করি মানুষ করিচি, সব কাজ কর তি পারে। ওই টুকুন মেইর রান্নায় যে কী স্বাদ! কী বল বো..." বিশুর বাবাকে মাথা নেড়ে নেড়ে বলে অষ্টমীর এক পাড়া তুতো জেঠিমা। মুখ থেকে পানের পিক ফেলে আবার শুরু করেন, " হাতে করি মানুষ করলাম। কুনোদিন খারাপ কিচু দেকিনি। বড় নক্কি মেয়ি "

বিশুর বাবার প্রথম দিকে একটু আপত্তি ছিলো। - "আমরা বাগদি উরা মুন্ডা। উরা ইন্দুরও ও খায়..."

কিন্তু, পরে বিশুর অসুস্থ মায়ের কথা ভেবে বিয়ে আর পেছালো না।


অবনিশ বাবু রোজকার মত আজও সবার আগে চলে এলেন চায়ের দোকানে।

- "কি রে বিশু... তোর গুরু কী বলছে আজ? নাকি শুধু দিদিই বলে চলেছেন! দেখি পেপার টা..." , বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন আবনিশ বাবু। বিশু এতদিনে এই সব মস্করার মানে বুঝে গেছে। গুরু মানে হলো মোদী।


- " গোঁফের সাথে দাড়ি টা... ব্যাস আমাদের বিশুও পুরো গুরুর মত চা বানাবে..."


লজ্জায় খিলিখিলিয়ে ওঠে বিশু, গোঁফের নীচ থেকে উচু নিচু দাঁত গুলো বেরিয়ে আসে, ওপরের ঠোঁট চেপে ঢাকার চেষ্টা করে। যত বেলা যায় চায়ের দোকানের আড্ডা জমে ওঠে। কত রকমের আড্ডা! আগেকার মতন দিন না ফিরে পাওয়ার আক্ষেপ, কখনও নেতা, কখনও অভিনেতা যে যেমন খুশি বলে, মাঝে মাঝে ঝগড়ার উপক্রম ও হয় বটে। বিশুর কানে সব আসে, কিন্তু মন দিয়ে শোনে খুব কম। ওর মনে চলে কটা লিকার, কটা দুধ, কোনটায় চিনি বেশি আর কোনটায় চিনি দেয়া বরণ। কারও কারও আবার চীনামাটির আলাদা কাপ রাখা আছে; সে সবই মনে থাকে ওর।


দুপুরে বাড়ি থেকে আনা ভাত খেয়ে নেয়। অষ্টমী ভোরে উঠে রান্না করে দেয়। মাঝে মাঝে মেয়েটাকে দেখে মায়া হয় ওর। কতই বা বয়স, এই ভাবে বুকে পড়ে ঘর সামলানো কী যা তা ব্যাপার! তিন চালা ঘর দুদিন অন্তর গোবর দিয়ে নিকানো, মা এখন আর উঠতে পারে না, খাওয়ানো, স্নান করানো, এমনকি পাইখানা প্রস্রাব ও পরিষ্কার করা। সব টা মুখ বুজে করে যায়। বিয়ের পর তো কোনো দিন কল টা টেনেও স্নান করে না বিশু। কতবার বলেছে ও নিজেই করে নিতে পারবে...কিন্তু অষ্টমী কোনো কথাই শোনে না..."আমি মরলি তকুন কোরো..."। বিশু আর কিছু বলে না। অষ্টমীর কথা ভেবেই ওর মন ভালো হয়ে যায়।


আজ সাড়ে তিনশো টাকা হয়েছে। রাত্রিবেলা দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে যায় বিশু। আন্না বৌদিও রোজ দোকান বন্ধ করে বিশুর সাথেই। আন্না বৌদির বাড়ি দোকানের পিছনেই। ওর এক ছেলে ফটিক, ক্লাস সেভেনে পড়ে। স্বামী নেই ওর। মানে আছে, কিন্তু ওর সাথে থাকে না। ছেলে পেটে আসার কদিন পরেই নতুন একটা অল্প বয়সি মেয়ে নিয়ে ওঠে ঘরে। অনেক সাহস নিয়ে থানা পুলিশ করে, জমিটুকু পেয়েছিলো।


- " আমার কেই ছেলো না। কেরুর দরকারও নেই। এই বাচ্চা নিয়িই থাকপো", কোর্টে সবার সামনে মুখ উঁচু করে বলেছিলো, ওর চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়েছিলো।

-" আসি গো বৌদি...", সাইকেলে উঠে বাঁ হাত উচু করে আন্না কে উদ্দেশ্য করে বলে বিশু।

- - " হ্যাঁ আয়... আমিও দেকি সে ফটিক ঘুমুলো নাকি!"


উঠোনে সাইকেলের শব্দ শুনে মা জড়ানো কণ্ঠে বলে - "বিশু এয়েচে বউ, দরজা টা খুলি দে..."

- "যাচ্চি...", রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে এসে বেড়ার দরজা টা ফাঁকা করে ধরে অষ্টমী। চার্চে নটা ঘণ্টা পড়ে।

বারান্দায় আসনে বসে খাচ্ছে বিশু আর ওর বাবা। অষ্টমী থালায় সাজিয়ে দেয় কচুর শাক, থোর ভাজা, তেলাপিয়া মাছের ঝোল। "

-"রাতে শাগ খাতি নেই! কত বার বলিচি তোর..." মুখে অসস্তি নিয়ে বলে বিশু।

- "দিদিমণি খাতি বলিচে, তুমি না খালি রেকি দেও আমি খাবানি..." বলে হাতা দিয়ে আর একটু ভাত দেয় শ্বশুরের পাতে।


রাত সাড়ে নটা। বিশু বিছানা তে শুয়ে। অষ্টমী মশারী টাঙিয়ে খাটে উঠে বিশুর মাথার কাছে গিয়ে বসলো। চালে টালির ফাঁক থেকে একটু একটু আলো ঘরে যেনো লুকোচুরি খেলে বেড়াচ্ছে। তাতে দুজনের দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলে একটু একটু ওদের মুখ বোঝা যায়। অষ্টমী বিশুর ডান হাত টা শক্ত করে ধরে নিজের পেটের কাছে নিয়ে এসে রাখে। বিশুর চোখে মুখে এক মুহূর্তের জন্যে যেনো বিদ্যুৎ খেলে যায়। ও উঠে বসে, মুখে একটা অদ্ভুৎ জয়ের উৎফুল্লতা।

- " কবে টের পালি?"

- " আজ তিনবার বমি হয়েচে। দিদিমণির বাড়ি গিইচিলাম বিকাল বেলা।"

- " কী বৈল্লো? ছেলি না মেয়ী?"

- " ওষুধ দিয়িচে শুধু, ওইসপ একোন বলা যায় না। আর হাসপাতালে যাতি বোলিচে।"

এবার বিশু ওর মাথা টাকে আস্তে আস্তে অষ্টমীর কোলের কাছে নিয়ে আসে। বাচ্চা ছেলের মতো অষ্টমীর কোমর জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। অষ্টমী ওর সরু আঙ্গুল গুলো বিশুর চুলের মধ্যে দিয়ে বোলাতে থাকে।


আজ সকাল থেকেই বিশুর সারা মনটা জুড়ে একটা অন্য রকম অনুভুতি। এ অনুভূতি যেনো প্রথম বার দাড়ি কাটা, বা প্রথম বার রাস্তা থেকে বিড়ির অবশিষ্ট কুড়িয়ে মুখে ভরে, টানার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি আনন্দের। ঠাকুর মশাই এলে, অষ্টমীর নামে একটু পুজো দিয়ে দিতে বলবে একুশ টাকা দিয়ে। আন্না বৌদি তো খুব খুশি। আনন্দে কাঁচের বয়েম থেকে একটা লাড্ডু বার করেই ওর মুখে ভরে দিলো

-"আরে কি কৈর্চ টা কি.. বৌনি হয় নি তো..."

অন্নার চোখে যেনো জল।

-"না হোক গে... অষ্টমী কে এগদিন নিয়ে আসিস তো। আর একুণ বেশি কাজ করতি বারণ করবি। সকালে তুই উটোন ঝাঁড় দিবি। দুপুরি দুকান খুলা রকতি হবে না, বাড়ি যেয়ী খেয়ী আসপি..."

বিশু বাধ্য ছাত্রের মতো মাথা নেড়ে সায় দেয়। আন্না বৌদিকে ও ভীষণ শ্রদ্ধা করে।

পরদিন ভোরে অষ্টমী ঘুম থেকে উঠতে যাবে, এমন সময় আঁচল টেনে থামালো বিশু। "তুকে আর এত সকালে উটি রাইন্তে হবে না।"

- "সে কি! তালি কিডা রানবে ? মেয়ী হৈচি, বিয়ি করিচি, পুয়াতি তো হতি ই হবে। তাই বলি ঘরে বসি থাকলি, হাত মুকি ওটপে কী করি?"

-"আমি করবো সপ..."

-"আমি কি মরে গিইচি ..কী জ্বালা... পুয়াতী আর দেশের লোকে হয় না! তুমি বেশি বেশি করচো... আঁচল ছাড়ো দেকি।"

- "বিয়ির আগে তো আমি করতাম..."

- "তা করোগে, একুন আর হবে না।" জোর করে উঠে যায় অষ্টমী।

বিশু আর একটু গড়া গড়ি করে উঠে যায়।

- "বলচি শোনো আজগে ইট্টু কবেরাজ বাড়ি নে যাবা?"

- "দুকুরি আস্পানি।"

বিশু স্নান করে, ভাতের টিফিন কৌটো টা ব্যাগ এ ভরে, সাইকেল এ বাঁধিয়ে, ঝনাৎ ঝনাৎ শব্দ করতে করতে চলে যায়। অষ্টমী ওর মত কাজ করে।


এক সপ্তাহ হয়ে গেছে অষ্টমীর শরীর টা ভালো যাচ্ছে না। সেদিন কলতলায় মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। তারপর থেকে তো জ্বর ই সারছে না। নিবারণ বাগদি এসেছিলো একবার। ভয় টয় পেলে ওর কবজে কাজ করে। ও এসে তো দুটো তাবিজ দিয়ে যায়। একটা অষ্টমীর, আর একটা ছেলের জন্য। হ্যাঁ "হাত চালান" দিয়ে দেখেছে নিবারণ ছেলেই হবে। তারপর, একটু জ্বর কমেছিলো কিন্তু আবার ঘুরে ঘুরে জ্বর আসছে। এই অবস্থাতেও রোজ দুবার রান্না করছে।

- " তুর মা থাকলি তুকে ওকেনে রেকে আসতাম। কাজ তো করতি হতো না এতো।"

অষ্টমীর একটু খারাপ লাগে, অনেক খানি ভালোও লাগে।


অষ্টমী ছোটো থেকেই পুরুষ জাতি টাকে দেখে আসছে... বিশু তো ওদের মত নয়। ও তো সম্পূর্ণ আলাদা। এত আগলে রাখা কি পুরুষের স্বভাব নাকি? ওরা তো শেকল ছাড়া, বেঁধে রাখার ক্ষমতা একটা নারীর পক্ষে কোনো কালে কি আদৌ সম্ভব! বাবাকেই দেখেছে রোজ চোলাই খেতে। তরকারিতে নুন বেশি হলেও কেমন হিংস্র হয়ে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়তো। পাড়ার ছেলে গুলো কেও দেখেছে, ভীষণ হিংস্র ভাবে বড়ো হতে। ওরই বয়সে কত হিংস্র ওরা। কত ক্ষিদে ওদের পেটে, ওদের চোখ যেনো জ্বলন্ত কয়লা। ভাদু কাকা কেও দেখেছে, হিংস্র হতে। ভাযেনি কখনও। গরমকালে রাতে যখন বাদুড় ধরতে যেতো সবাই মিলে, ভাদু কাকা, ওকে কাঁধে করে নিয়ে যেতো। মুখে সবাই চি চি করে শব্দ করতো, অষ্টমী ও চেষ্টা করতো। অল্প পারতো, কিন্তু অত দম রাখতে পারত না। সেই ভাদু কাকাকে বাস্তু পুজোর মেলাতে, অমন ভাবে হিংস্র হতে দেখবে, সে তো স্বপ্নেও কল্পনা করে নি অষ্টমী। ভয়ে কাউকে বলে নি সে কথা । বাবাকে বললেও যে মারতো। মাঝে মাঝে তাই ওর বিশু কে ও ভয় লাগে। কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই। ও জানে পৃথিবীতে যে মানুষ টা ওকে সবথেকে ভালোবাসে যে ওর জন্য একটু ভাবে সে বিশুই। এমন স্বামী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। ছোটো থেকে শিবরাত্রির উপোস না করলে কি আর এমন ভাগ্য হয় কারো।


হাসপাতালে গুটি সুটি মেরে বসে আছে অষ্টমী। চার মাস হয়ে গেছে। ওর শরীর এখন বেশ ভালো র দিকে। পেট টা মোটা হয়েছে বেশ। বাড়ির কাজ সামলে, দোকান সামলে বিশুর শরীর টা খারাপ করেছে। বিশুর এখন প্রায় ই জ্বর হচ্ছে। ঔ ভাবছে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নেবে।


-"অনেক গুলো রক্তের রিপোর্ট করতে হবে। এত দিন আসেন নি কেনো? অনেক আগেই তো প্রেগনেন্সি হয়েছে তাহলে! বাড়িতে বসে থাকেন কেনো বলুন তো আপনারা? এখন তো সবই ফ্রী..." আরও অনেক কথা বলতে বলতে, চুই চুই করে দু সিরিঞ্জ রক্ত টেনে নেয় অষ্টমীর সরু হাত টা থেকে। অষ্টমী বিশুর দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে থাকে। বিশু ওর বাম হাত টা অষ্টমীর মাথার উপর রাখে তারপর ডান হাত দিয়ে তুলো টা নিয়ে শক্ত করে ধরে।

- "পরশু এসে রিপোর্ট নিয়ে যাবেন। আর এই ওষুধ গুলো চলবে। ওইদিন আর একবার ডাক্তার বাবু কে দেখিয়ে নেবেন। সকাল সকাল আসবেন নাহলে ডাক্তার বাবু চলে যেতে পারেন। "


চার্চের ঘড়িতে তিন টের ঘণ্টা পড়লো। আজ বিশু দোকান খোলেনি। জানেনা আর দোকান খুললেও কেউ আসবে কিনা। অষ্টমী দাওয়া তে বাঁশের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। ওর হাতে একটা ফাইল। সারা মুখ জলে ভরে আছে। চোখে একটা অদ্ভুত রকমের ভয় কাজ করছে যেনো। বিশু সেই যে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে আর খোলেনি। বিশুর মা শুয়ে শুয়ে মাঝে মধ্যে ভুল বকার মত বিড়বিড় করছে..." ও বউ কী হয়েচে? দাকতার কী বললো?"

কেউ কোনো উত্তর দেয় না, মা আবার চুপ করে যায়। বিশু হঠাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে সাইকেল নিয়ে কোথায় যেনো চলে যায়। অষ্টমী একবার আটকানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ও যেনো আর সাহস পাচ্ছে না, গায়ে আর বল নেই। ও এবার হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে।


একটু পরে দিদিমণি আসেন বাড়িতে। ওকে দেখে অষ্টমী উঠে দাঁড়িয়ে আরো জোরে জোরে কেঁদে ওঠে।


- " বাচ্চা টা রাখা সম্ভব না বুঝতে পারছো তো। এইচ আই ভি পজিটিভ। শুনলেই তো সব। এরকম অবস্থায় বাচ্চা হলে আরো সমস্যা।"


অষ্টমী এবার দিদিমণির পায়ের কাছে পড়ে যায় "ও ভগমান কী পাপ করিচি আমি! ও ভাগমান..." অষ্টমীর চিৎকার শুনে আশে পাশের লোকজন এসে সবাই কৌতূহলী ভঙ্গিতে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো।

দিদিমণি অষ্টমীর হাত ধরে উপরে তুললেন। বড্ড মায়া হলো ওর মুখ টা দেখে।


অষ্টমী ভীষণ ভাবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। দিদিমণির হাতে ভর দিয়ে বিলাপের মত বলতে লাগলো, "জন্মের কদিন পর মাডা মরিছিলো। সারা জীবন ধরে সুদু কষ্ট ছাড়া আর কিচু এই কপালে জুটিনি। এত সুন্দর ঘর - সংসার , স্বামী তোর কপালে সোলো না ভগমাণ। ও ভগোমান....আমি একুন কী করবো!!"

হঠাৎ করে অষ্টমী জ্ঞান হারালো। ওকে ধরা ধরি করে রান্না ঘরের দাওয়াতে শুইয়ে দিলেন দিদিমণি। পাশের বাড়ির মন্টুর মা জিজ্ঞেস করলো "কী হইচে ও দিদিমণি?"


দিদিমণি দাওয়াই রাখা রিপোর্ট এর দিকে তাকিয়ে, একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেন "না, কিছু না। জল আনো দেখি একটু।"

মন্টুর মা কল থেকে এক বালতি জল এনে দেয়।



দুমাস হয়ে গেছে অষ্টমী ওর বাপের বাড়ি, পেট টা আর মোটা নেই। আরো রোগা হয়ে গেছে, চোখের নীচে কে যেনো ধেবরে কাজল লেপে দিয়েছে। আয়নার সামনে আর বেশি যেতে ইচ্ছে করে না। বাড়ি থেকে বের ও হয় না তেমন, কেউ তো আর বাড়িতেও আসে না। কিভাবে যেনো সবাই জেনে গেলো ব্যাপার টা। সপ্তা খানেকের মধ্যে বিশুর চায়ের দোকান বন্ধ করালো সবাই মিলে, ওর হাতে খেলে নাকি সবার এই রোগ হবে, ওকে ছোঁয়াও বারণ। কত কথা শুনিয়েছি লো সবাই,

-"তুই তো বাগদি, আমরা তো কখনও তোদের কে নীচু করে দেখিনি। কিন্তু এই সব মেনে নেওয়া যায় না। চা খাওয়ার জন্যে তো তাই বলে মরা যাবে না। আসলে জাতের স্বভাব কি আর ছুঁলেই যায়! অচ্ছুৎ কে অচ্ছুৎ করে রাখায় ভালো। আসলে আমরা তো বেশি এগিয়ে গেছি, সভ্যতার চোটে অসভ্যদের সংস্কৃতি শেখাচ্ছি, আগে সভ্যতা টা তো শিখুক !"


বাচ্চা টা নষ্ট করে আসার দিনই, অষ্টমী কে চুলের মুঠি ধরে, কাঁচা কঞ্চি দিয়ে মেরেছিলো, বিশুর বাবা। বিশু দাওয়ায় বসে সব দেখে ছিলো। যখন গুংড়াতে গুংড়াতে অজ্ঞান হলো তারপর চোখ খুলে বাপের বাড়ির টালির চাল দেখেতে পেয়েছিলো। উঠেই কেমন যেনো তাজ্জব মেরে গিয়েছিলো, কাঁদতেও বড্ড কষ্ট হচ্ছিলো ওর, গলা কেমন যেনো বন্ধ হয়ে আসছে। একবার মনে হয়েছিলো জোরে চিৎকার করে পুরো পৃথিবীকে ওর সব দুঃখের পাথর দিয়ে একটা মস্ত পাহাড় বানিয়ে উপহার দেয়, একবার মনে হয়েছিলো গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই কিন্তু তখন দিদিমণির কথা গুলো মনে পড়ে, "কত মানুষের কত রোগ হয়, তোমাদেরও হয়েছে, চিকিৎসা করো। মন শক্ত করে লড়াই করো। জীবনে লড়াই না থাকলে বাঁচা টাকে উপভোগ করবে কী করে। এত বছর তো জানতে না। এখন জেনেছো, ভালো কথা ওসব ভুলে গিয়ে ভালো করে বাঁচো, একে অন্যের জন্য বাঁচো, নিজের জন্য বাঁচো। "


অষ্টমীর বার বার নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছিলো। এমন রোগ ওরই কেনো হলো, ওই কী দায়ী। বিশু তো রিপোর্ট দেওয়ার পর থেকে কোনো কথাই বলেনি ওর সাথে। বিশু তো ওকে বুঝতে পারতো। একবার বলতে পারতো "অষ্টমী তুই চিন্তা করিস নে, আমি তো আচি। আমরা একে অন্যের জন্যি বাচপো। " যেমন ভাবে হাসপাতালে দিদিমনিদের সামনে ওরা একে অপরকে বলেছিলো। ওদের পর পর কদিন হাসপাতালে যেতে হয়েছিলো। সেখানে অনেক আসতেন, ওদের বোঝানোর জন্য। কত কিছু বলেছিলো, কিভাবে এইডস হয়, হলে কী করা উচিৎ এই সব। আর আওড়াতে হয়েছিলো, একে অন্যের উপর ভরসা করে বলা অজস্র প্রতিশ্রুতি। বিশু কী শুধু বলার জন্যেই বললো। একবারও মন থেকে বলে নি?


চোখের কোনা থেকে জল গড়িয়ে বলিস ভিজে যায়। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। অষ্টমী বিছানা ছেড়ে ওঠে। বাবা বাড়ি ফেরে। গা থেকে ভীষণ ঝাঁঝাঁলো একটা গন্ধ বেরুচ্ছে, এ গন্ধ অষ্টমীর চেনা। কাঁচা চোলাই এর গন্ধ। ওর বাবা হঠাৎ ওর মুখের সামনে এসে দাঁড়ায়। অষ্টমী ভয়ে গুটিসুটি মেরে যায়। অষ্টমীর বাবা হাত বাগিয়ে একটা চড় কষে ওর মুখে। চুল গুলো মুখের সাথে লেগে আছে, বরাবরের মতন নিশব্দে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে বাবার দিকে। তারপর, বাবা হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে। সে এক বিরাট আর্তনাদ। বাবা তো কখন ও এভাবে কাঁদেনি, মা মরে গেলেও না। অষ্টমীর বুকের ভেতর টা চিনচিন করে ওঠে। ঔ কেঁদে ফেলে।


বিশু এখন মাঠে খাটে। অন্য কাজে কে নেবে ওকে! ওর খুব কষ্ট হয়, কোন ছোটো বেলায় মাঠে কাজ করা ছেড়েছে। এখন আর পেরে ওঠে না। ওর শরীরের গঠনেও ভাঙন ধরেছে। একসময় কত দম ওর মধ্যে, সেবার যখন উত্তর পাড়ায় বাঘরোলের খবর পাওয়া গেলো, ওরা মোটে তিনজনই গেছিলো। গিয়ে দেখে, ওই গ্রামের একদল সাঁওতাল আগেই পৌঁছেছে। এ তো ওদের গ্রামের জিনিস ওরাই নেবে। বাঁধলো তুমুল মারপিট। হাতে যা ছিলো তাই চলতে থাকলো, গর্তের মুখে জ্বালানো আগুন থেকে একটা জ্বলন্ত কাঠ তুলে নিয়ে, একাই তুলোধোনা করলো পাঁচ জন কে। সেসব দিন কি আর আছে ওর!


তখন তো ওর ফুটন্ত যৌবন। সপ্তায় যা আয়, তার অর্ধেক সূরা আর বাকিটা নারী। বিয়ে থাওয়া তে ওর অরুচি ধরেছিলো ওর বাপ - মাকে দেখে। রোজই তো ঝগড়া মারামারি, খিস্তি কী দরকার। ওর উড়ু উড়ু স্বভাব দেখে চায়ের দোকান খুলে দিলো বাবা। সেখানে বছর দশেকে কত রকমের লোকের সাথে ওঠা বসা। ওর মানসিকতা পাল্টে গেলো। তারপর মা অসুস্থ হলে তো বিয়ে করতেই হলো। দুপুরে খাওয়ার সময় ওর বড্ড কষ্ট হয় এখন। অষ্টমী কী করছে কে জানে? কখনও বউ এর গায়ে হাত তোলেনি বিশু। এই সব রোগ কেনো হয়েছে ওদের! তবে কি ওরই দোষ! কেনো বিয়ে করলো অষ্টমী কে? একটা ফুটফুটে মেয়ের জীবনকে নষ্ট করার কোনো অধিকার তো ওর নেই! ওর এক একবার মনে হয় অষ্টমীর পা দুটো জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায়। সবাই তো ওকেই দোষ দিচ্ছে। ওইটুকু মেয়ে কি দোষ করতে পারে! ওর খুব ভয় ও করে। এত কম বায়সেই মরে যাবে। কিন্তু হাসপাতালে তো বলতো মরবে না। কত লোকের ছবিও দেখিয়ে ছিলো ওরা, তারা তো দিব্য বেঁচে আছে। তাহলে ওর চায়ের দোকানের লোকেরা অমন বললো কেনো? ওর মনে হয়েছিলো ওর চায়ের দোকান টা একদিন খোলা রেখে হাসপাতালের ডাক্তার গুলোকে ডেকে ওদের কে বোঝাতে বলে, যে এইসব রোগ ছোয়াঁচে নয়। চিন্তার সমুদ্রে হারিয়ে যায় বিশু।


বেশ শীত পড়ছে। বাইরে এখনও আলো ফোটেনি। চারটে ঘন্টার শব্দ কানে আসে, চার্চের থেকে। ভোরে আযানের শব্দটাও ভালোই শোনা যায় ওর বাড়ি থেকে। বিশু বিছানা ছেড়ে ওঠে। সাইকেল টা চেপে অনেক দিন পর আজ একটু বটতলার মোড়ের দিকে এলো। ওর দোকান এর ঝাপ টা ইটের গুড়ো তে লালচে লাগছে, নাকি সূর্যের লাল আলো এসে পড়ছে কে জানে। রাস্তায় জল ছেটাতে ছেটাতে বিশুর মুখটা আবছা ভাবে চোখে পড়লো আন্না বৌদির। বিশু ও একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকেই। হঠাৎ হাউ হাউ করে কেঁদে আন্নার পায়ের কাছে এসে পড়লো বিশু। আন্না নীচু হয়ে বিশুর হাত দুটো ধরে তোলে।

-"আমি মরি জাতি চাই বৌদি আর বাঁচতি চাই নে আমি।"

আন্না দুহাত দিয়ে বিশুর চোখ মোছে।

- "আমার দিকি তাগা। তুই না মদ্দো মানুষ, এই কতা তোর মুকি মানায়! আমি কী করি বেচি রইচি? সুদু ছেলিডার মুকির দিগি তাগিয়ে... আমি একলা যদি বাঁচতি পারি তুই উ পারবি, তুরা তো দুজুন"

-" সবাই আমদের আলেদা করি দিইচে। রাস্তা দিয়ী যাওয়ার সুমায় কারুর পাশ দিই ও যদি যায় তালি পাশ কেটি সরি যায়। রাস্তার কুকুরেরও মনে হয় লোকে ওরাম দুচ্ছাই করে না।" কাঁদতে কাঁদতে বলে বিশু।

আঁচল দিয়ে চোখ মোছে আন্না। তারপর ধরা গলায় জিজ্ঞেস করে, "অষ্টমী কনে?"

- "সেদিন বাবা মাইরলো, মা উঠতি পারে না তাও কী না কী করে অবিশাপ কৈরলো...আমি তো আমার পছন্দই বিয়ী করিলাম। আমি ওর বাপের বাড়ি রেকি আসলাম।" চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে বিশুর শুধু। দুহাত দিয়ে মুখ টা মুছে নিয়ে আবার বলতে শুরু করে "রোগ তো আমারু হইচে। কার দোষ দোবো... মড়লি তো আমরাই মরবানে। তকুণ কেউ আসপে! সপি আমার কপালে ছিলো! "

আন্না দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

অনেক কিছু ভেবে চিন্তে কিছু একটা যেনো বের করে। দোকানের টাকার ড্রয়ারে একটা ছোটো খাতা রাখা, সেখান থেকে একটা পাতা ছিড়ে বিশুর হাতে দেয়। "এই নম্বর ডা রাক। আগের বছর পুজোর সুমাই আমার ননদ নিয়ে এইলো। ফটিকির বাবার নম্বর । কলকাতায় থাকে। ওকেনে ওর ভাতের হোটেল আচে। আমি কুনোদিন ফোন করিনি। তুই অষ্টমীর নিয়ী ওকেনে চলি যা। তোকে না বলতি পারবে না। দুজন মিলি কাজ করবি আর খাবি। "

বিশুর চোখে মুখে যেনো আলাদা আভা। ও নম্বর টা নিয়ে নেয়। বুড়ো শিব মন্দির টার দিকে একবার প্রণাম করে। তারপর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়। অষ্টমী উঠোন ঝাঁট দিচ্ছিলো সাইকেল এর শব্দ শুনে পেছন ঘুরে দেখে বিশু। ও কী বলবে বুঝে পায় না। বিশু ও না। অষ্টমী দৌড়ে গিয়ে বিশুকে জড়িয়ে ধরে। বিশু এক হাতে সাইকেল ধরে অন্য হাত অষ্টমীর মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে।


চার্চের ঘড়িতে ঢং ঢং করে ছটা ঘণ্টা পড়লো। রাস্তার পাশের টাইম কলটা দু একবার পিচকারীর মত জল ছিটিয়ে চুইয়ে চুইয়ে জল পড়তে লাগলো। একটু দূরের মাঠের রাস্তার দুপাশে খেজুর গাছে সবে সবে কেটে, ভাঁড় পাতা হয়েছে। টিপ টিপ করে রস পড়ছে। কুয়াশায় এখনও সূর্য ওঠেনি ঠিক করে। মাঝখানে ইটের রাস্তা ধরে, সাইকেলের কুচকাচ আওয়াজ করতে করতে চলেছে বিশু, ওর সামনে বসে আছে অষ্টমী। কোলকাতা তো অনেক দূর, অষ্টমী চেনে না। চিনতে চায় ও না ও। কী দরকার সবাইকে চেনার! একজন কে ভালো করে চিনলেই তো হয়, যে ওকেও চিনবে আর হাতে হাত রেখে বলবে "আমি আচি তো, আমি বাঁচপো, তুমার জন্যি বাঁচপো। আমরা বাঁচপো, নিজিদির জন্যি বাঁচপো..."


Rate this content
Log in

More bengali story from সোম প্রসুপ্ত

Similar bengali story from Romance