STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Inspirational Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Inspirational Others

থেরাপিস্ট

থেরাপিস্ট

4 mins
51

কখনও কখনও মানুষের মনে হয় জীবনটা যেন ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে না। আধুনিক জীবনের এই মানসিক চাপ সকলের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। কারণ নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে গেলে, জীবনের লড়াইটা লড়া আর সহজ হয়ে ওঠে না। ফলে তখন হতাশা মানুষটিকে শেষের পথে নিয়ে যায়।

সোহমের জীবনে হঠাৎই একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করে, ও ধীরে ধীরে হতাশায় ডুবে যায়। ওর মনে হতে শুরু করে ওর দ্বারা আর কিছু হবে না, ও নিঃশেষ হয়ে গেছে। এমনিতে সোহম ছিল ভীষণ আত্মমুখী, একজন মানুষ যে নিজের মধ্যেই সব আনন্দ খুঁজে পেতো। ফলে ওর মানসিক স্বাস্থ্য খুবই সংকটজনক জায়গায় চলে গেলো। অফিসের বস মানুষটি কাজকর্মের জন্য সোহমকে পছন্দ করতেন, হঠাৎই ওর এরকম মানসিক অবনতি দেখে উনি বুঝলেন যে দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছে সোহম । 

একদিন উনি সোহমকে বললেন , "সোহম , তুমি একটা থেরাপিস্টের কাছে যাচ্ছ না কেন? গেলে তোমাকে এই অসুস্থতার থেকে মুক্ত করে দেবে ।" উনি বুঝলেন একটা সামাজিক ট্যাবুর কারণে ও যেতে সাহস পাচ্ছে না - ওর ধারণা ওখানে গেলে লোকে ওকে পাগল ভাববে। তখন উনি বোঝালেন যে পরিশ্রমে যেমন শরীর দুর্বল হয় আর তখন তার চিকিৎসার প্রয়োজন। সেরকমই মানসিক পরিশ্রমে মনও দুর্বল হয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে তার আরোগ্য সম্ভব।


ওনার পরামর্শে সোহম গেল একজন থেরাপিস্টের কাছে। থেরাপিস্টের নাম ছিল শর্মী । প্রথমেই শর্মী সোহমকে বলল, "তোমার সমস্যাগুলো আমাকে বলো। আমি শুনছি।" সোহম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল। সে তার জীবনের সব কষ্ট, হতাশা, ব্যর্থতা খুলে বলল। শর্মী খুব মনোযোগ দিয়ে শুনল।


সোহমের থেরাপির প্রয়োজন খুবই গভীর এবং এটি খুব কঠিন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। সে সোহমকে বিভিন্ন ধরণের থেরাপি প্রস্তাব করল। তার থেরাপিস্ট, শর্মী , বেশ কয়েকটি ধাপে সোহমকে কে সাহায্য করেছিলেন।


প্রথমত, শর্মী সোহমকে কে তার অনুভূতিগুলো মুক্তভাবে প্রকাশ করতে দেন। এ সময় সোহম নিজের ভেতরের জমে থাকা কষ্টগুলো খুলে বলতে পারত। শর্মী তাকে উৎসাহিত করতেন যেন সে নির্দ্বিধায় কথা বলে। 


তারপর, শর্মী সোহমকে চিন্তা এবং অনুভূতির প্যাটার্নগুলো বুঝতে সাহায্য করেন। তিনি সোহমকে তার নেতিবাচক চিন্তাগুলো চিহ্নিত করতে বলেন এবং সেই চিন্তাগুলো কিভাবে তার জীবনে প্রভাব ফেলছে তা বিশ্লেষণ করেন। 


এরপর, শর্মী সোহমকে বিভিন্ন ধরনের কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) প্রয়োগ করেন। CBT একটি প্রমাণিত পদ্ধতি যা মানুষের চিন্তা এবং আচরণ পরিবর্তনে সহায়ক হয়। শর্মী সোহমকে শেখান কিভাবে নেতিবাচক চিন্তা পরিবর্তন করে ইতিবাচক চিন্তা করতে হয়। 


শর্মী সোহমকে মাইন্ডফুলনেস এবং রিলাক্সেশন টেকনিক শেখান। তিনি তাকে গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করেন। 


পরবর্তীতে, শর্মী সোহমকে কিছু সেলফ-হেল্প টেকনিক দেন যা সে থেরাপি সেশনের বাইরে প্র্যাকটিস করতে পারে। এগুলোর মধ্যে ছিল একটি জার্নাল রাখা যেখানে সে প্রতিদিন তার অনুভূতিগুলো লিখে রাখতে পারত এবং নিজের অগ্রগতি দেখতে পারত।


কিছু সেশন পর, সোহম বুঝতে পারল যে তার সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কমে আসছে। সে নিজের মধ্যে আবার আনন্দ খুঁজে পেতে লাগল।


একদিন সোহম থেরাপি সেশনে এসে শর্মীকে বলল, "আপনার জন্য আমার জীবনটা বদলে গেছে। আমি আবার নতুন করে বাঁচতে শিখেছি।" শর্মী হাসল এবং বলল, "এটা তোমার নিজেরই প্রাপ্তি, সোহম । তুমি নিজেই তোমার জীবনে পরিবর্তন এনেছো। আমি শুধু তোমাকে সেই পথটা দেখিয়েছি।"


সোহমের মনে হল, জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলো পার করার জন্য একজন ভালো শ্রোতা এবং গাইডের দরকার হয়। তার থেরাপিস্ট তাকে সেই পথটা দেখিয়েছিল। 


অবশেষে, শর্মী সোহমকে একটি শক্তিশালী সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে সাহায্য করেন। তিনি তাকে তার পরিবারের সাথে এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে পরামর্শ দেন। 


এই থেরাপির মাধ্যমে, সোহম বুঝতে পারে যে তার জীবনের সমস্যা গুলো অতিক্রম করা সম্ভব এবং তার ভেতরের শক্তি তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। শর্মীর সহায়তায়, সোহম একটি নতুন জীবন শুরু করার জন্য প্রস্তুত হয়।


শর্মী আর সোহমের সম্পর্কটি মূলত থেরাপিস্ট এবং ক্লায়েন্টের মধ্যে পেশাদারী সম্পর্ক। তবে, সময়ের সাথে সাথে এই সম্পর্কটি একটি গভীর আস্থা এবং সম্মানের সম্পর্কেও পরিণত হয়। সোহম তার থেরাপির সেশনগুলো শেষ করার পর, তাদের পেশাদারী সম্পর্কটি শেষ হলেও, শর্মীর পরামর্শ এবং শিক্ষাগুলো সোহমের জীবনে অমূল্য হয়ে থাকে।


সোহম থেরাপি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাগুলো ব্যবহার করে তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এবং আরও ইতিবাচক হয়ে ওঠে। শর্মী তাকে যেভাবে সাহায্য করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতাটি তার জীবনের অংশ হয়ে থাকে। সে জানে যে শর্মীর পরামর্শ এবং টেকনিকগুলো প্রয়োগ করেই সে তার জীবনে কোনোও সমস্যা আসলে তা মোকাবিলা করতে পারবে।


শর্মী , অন্যদিকে, তার থেরাপি সেশনগুলোর সময় সোহমের উন্নতি দেখে সন্তুষ্ট হন এবং জানেন যে তিনি একজন মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পেরেছেন। থেরাপিস্ট হিসেবে তিনি তার কাজটি সফলভাবে করেছেন। শর্মী এবং সোহমের পেশাদারী সম্পর্কটি শেষ হলেও, তাদের মধ্যে একটি সম্মানের সম্পর্ক থেকে যায়।


তাদের ভবিষ্যত যোগাযোগ সম্ভবত পেশাদারী এবং সীমিত থাকবে, কারণ থেরাপিস্ট-ক্লায়েন্ট সম্পর্কটি পেশাদারী সীমাবদ্ধতার মধ্যেই থাকতে হয়। তবে, শর্মী সোহমের সাফল্যে গর্বিত হবে এবং সোহম তার জীবনে শর্মীর গুরুত্ব কখনও ভুলবে না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract