STORYMIRROR

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

4  

Sanchaita Roy Chowdhury

Romance Inspirational Others

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

9 mins
49


অন্যরকম ভালোবাসা 

পর্ব-৪৬


আর্যর প্লেনে উঠে মনে পড়ল অদৃতের সাথে তার জীবনের প্রথম প্লেন যাত্রার কথা। কত আনন্দ হয়েছিল । সে ভয় পাচ্ছিল দেখে অদৃত তার সাথে কত কথা বলেছিল, তারা একে অপরে কত খুনসুটি করেছিল। এইসব ভাবতে ভাবতে তার ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি মনে হতেই নিমেষের মধ্যে সেই হাসি যেন কোথায় মিলিয়ে গেল। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে তার বাবা তমাল সেন তাকে নিয়ে রওনা হল বাড়ির উদ্দেশ্যে । বাড়ি ফেরার পথে তাদের গাড়িটি বাবুঘাটের রাস্তা দিয়ে আসছিল । বাবুঘাটের রাস্তাটা দেখেই তার মনে পড়তে লাগলো তার সাথে অদৃতের এই কলকাতা শহরে প্রথম ঘুরতে বেড়ানোর কথা। কত মজা হয়েছিল, কত কথা হয়েছিল, কত ভাব বিনিময় হয়েছিল কিন্তু এখন সেসব কোথায়? সবটাই যে চোখের নিমেষে মিলিয়ে গেছে। এইসব ভাবতে ভাবতে আর্যর চোখ ঝাপসা হয়, ভরে ওঠে জলে। তাদের গাড়িটা টালিগঞ্জের কাছে আসতেই তার মনে পড়ল অদৃতের ফ্ল্যাটের কথা তার অদৃতের সাথে কাটানো সবথেকে ভালো মুহূর্ত মনে হয় এই ফ্ল্যাটেই রয়েছে।

অদৃত তাকে একদম আষ্টেপিষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল এখন সে কিভাবে এই বাঁধন থেকে মুক্তি পাবে সে নিজেও জানে না । মানুষকে ছেড়ে চলে আসা সহজ কিন্তু মানুষের সাথে জড়িয়ে থাকা সেই স্মৃতিগুলোকে ছেড়ে দেওয়া বড্ড কঠিন এবং যন্ত্রণাদায়ক আজ তা ভালো বুঝতে পারছে আর্য। সে কখনো ভাবেনি অদৃতকে ছেড়ে চলে আসার পর তাকে জীবনে এতটা কষ্ট পেতে হবে।










বাড়িতে গাড়ি এসে থামলে আর্য গাড়ি থেকে নেমে সোজাসুজি তার ঘরের দিকে গেল, যাওয়ার পথে দেখলো মিয়াঙ্কা এবং তার মা কোথাও বেরোচ্ছিলেন। আর্যকে ঢুকতে দেখে তারা মুখটা একটু বিকৃতি করল, এরূপ আচরণ দেখে আর্যর কোথাও যেন খুব খারাপ লাগলো । আর্য সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ভাবলো,' আমার তো খারাপ লাগার কথা নয় আমি তো এগুলোর সাথেই অভ্যস্ত তাহলে আজ এতো খারাপ লাগছে কেন? এটাই তো আমার ভাগ্য। এক বছর আগেও তো আমি এখানে এভাবেই ছিলাম তাহলে আজ আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন ? '

সে আবার ভাবলো,'আসলে মানুষের জীবনে হঠাৎ করে আসা জিনিসগুলো খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়। যে সুখের কখনো মুখ দেখেনি সে একবার হঠাৎ করে আসা সুখের হদিস পেলেই তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, সেটাকে ঘিরেই সে বাঁচতে চায় । আমারও তেমনটাই হয়েছিল । আমারও লোভ হয়েছিল সুখে বাঁচার, সুখে থাকার কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার স্থান সুখে সীমাবদ্ধ নয় দুঃখে সীমাবদ্ধ ।' 

আর্য ঘরে ঢুকে দেখলো, তার ঘরটি এক বছর আগে সে যেরকম দেখে গিয়েছিলে সেরকম এখন আর নেই । ঘরটির মধ্যে গুমোট ভাব আরো বেড়েছে।

আবার সেই চেনা গুমোট দমবন্ধ হয়ে যাওয়া পরিবেশ যেখানে সে বড্ড একা, এখানে তার সঙ্গ দেওয়ার কেউ নেই । এখানে সে নিজেই নিজের একমাত্র সঙ্গী । ঘরে ঢুকে তার বড্ড অস্বস্তি হল। সে ভাবলো এটাই তার আসল জগত তাহলে আজ তার কেন মানিয়ে নিতে এত অসুবিধা হচ্ছে ? 

রাতে শুয়ে তার ঘুম এলো না। ঘরের সিলিং এর উপর তাকিয়ে থাকতে থাকতে কত কথা ভাবলো; অদৃতের সাথে কাটানো ভালো মুহূর্ত, খারাপ মুহূর্ত আরো কতকিছু । কখনো ভাবেনি তার ভালোবাসার মানুষকে সে এভাবে ছেড়ে চলে আসবে সে জানে না অদৃত এখন কি করছে? কেমন আছে? খেয়েছে কি না?







সে শুয়ে ভাবলো,' হয়তো তুমি এখন অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত । হয়তো বা আন্টি আঙ্কেল তোমাকে জোর করে পত্রলেখার সাথে ডেটে পাঠিয়েছে। তুমি আবারও কথা ফেলতে পারোনি , হয়তো তুমি পত্রলেখার সাথে ডেটে ব্যস্ত অথবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত, নয়তো বা অফিসের কোনো মিটিং নিয়ে ব্যস্ত।

কি করছো অদৃত? আমার কথা তোমার মনে পড়ছে ? তুমি আমাকে মিস করছো না তো? আমাকে ছেড়ে তুমি ভালো আছো অদৃত? আমি ভালো নেই জানো। কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে । '

তার চোখের সামনে সিলিং ক্রমশ ঝাপসা হয়, জল গড়িয়ে পড়ে চোখ দিয়ে। সে বুঝতে পারে না সে কিভাবে থাকবে এবার? এতদিন অদৃতের সাথে থাকতে থাকতে কখনো ভাবতেই পারিনি এমন কোনো সময় আসতে পারে যখন অদৃতকে ছেড়ে তার থাকতে হতে পারে । আসলে এটা তার কল্পনার বাইরে ছিল। ভালোবাসাটা হয় এরকমই কিছু না ভেবেই আমরা প্রেমে পড়ি আমরা বুঝি না তা ভেঙ্গে গেলে আমাদের কতটা কষ্ট হবে বা কতটা যন্ত্রণা হবে।

আর্য ভাবলো ,'আমার কপালে সত্যিই হয়তো সুখ লেখা নেই,ভালো থাকা লেখা নেই।খারাপ থাকাটাই চিরস্থায়ী।'








পরের দিন আর্য রাজদীপকে ফোন করল।

ফোন ধরে রাজদীপ বলল,'কী রে ভাই তোর তো কোনো খবরই নেই। কি ব্যাপার? জমিয়ে প্রেম করছিস বল। আমাদের কথাতো মনেই পড়েনা তোর!'

আর্য শান্ত গলায় বলল,'তুই দেখা করতে পারবি আজকে?'

রাজদীপ ঘাবড়ে গিয়ে বলল,'আজকে মানে ? তুই কোথায়?'

আর্য বলল,'কলকাতায় । নিজের বাড়িতে।'

রাজদীপ বলল,'কি বলছিস? কবে এলি? আমাকে আগে বলিস নি কেন? আঙ্কেল তো তোকে বের করে দিয়েছিলেন। তাহলে? আর অদৃত ? অদৃত আসেনি?'

আর্য বলল,'দেখা কর সব বলবো।'

রাজদীপ বলল,'আসলে আজকে একটা কাজ ছিল।'

আর্য বলল,'খুব দরকার দেখা করনা এরপর আবার কবে দেখা হবে জানি না ।'

রাজদীপ বলল,'মানে? তুইতো এখানেই আছিস আমিও তো এখন এখানেই আছি তবে?'

আর্য বলল,'বললাম তো একবার দেখা কর আমি সবটা বলবো।'

রাজদীপ বলল,'ঠিক আছে।'









রাজদীপের গাড়িতে উঠে আর্য বলল,' অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলিস?'

রাজদীপ বলল,'না এই কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। কিন্তু তোকে এরকম লাগছে কেন? তুই ঠিক আছিস?'

আর্য বলল,' কি রকম লাগছে?'

রাজদীপ বলল,' কেমন চোখ মুখ বসে গেছে মুখটাও কেমন শুকনো লাগছে। কি হয়েছে? আর অদৃতই বা কোথায়?'

আর্য বলল ,'বলবো সব তোকে। এখন চল।'

রাজদীপ বলল,'হ্যাঁ, ঠিক আছে কিন্তু এখন আমরা কোথায় যাবো?'

আর্য বলল,' কলেজ স্ট্রিট। '

রাজদীপ ভুরু কুঁচকে বলল,' কলেজ স্ট্রিট?'

আর্য বলল,' হ্যাঁ , কলেজ স্ট্রিট ।'

রাজদীপ বলল,' কি করতে যাবি তুই সেখানে?' আর্য বলল ,'বই কিনতে।'









কলেজ স্ট্রিটের বিভিন্ন বইয়ের দোকান ঘুরতে ঘুরতে রাজদীপ আর্যকে জিজ্ঞাসা করল ,'কি ব্যাপার বলতো তোর? তুই তো জন্মেও কখনো নিজে বই কিনে দেখিস নি আর কেনা তো দূরের কথা তোর তো বই পড়তে সেরকম ভালোও লাগে না। তাহলে? এমনি সময় বই পড়ার হলে আমার থেকে নয়তো প্রীতির থেকে নিয়ে পড়তিস । তাহলে আজ তোর কি হল বলতো যে, আজ তুই নিজে বই কিনতে আসছিস?'

আর্য স্বল্প হাসলো।

রাজদীপ বলল,' আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না হঠাৎ করে তুই এখানে চলে এলি কেন? তারপর আবার এইসব বই টই কিনছিস, কি ব্যাপার বলতো?'

আর্য বলল,'বললাম তো বলবো। এখন আগে বইটা কিনি তারপর কথা হবে। '

রাজদীপ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,' ঠিক আছে তোর যেটা ভালো মনে হয় সেটাই কর।'









আর্য একটা দোকান থেকে জেমস প্যাটারসনের লেখা "হোপ টু ডাই" বইটি কিনলো । 

রাজদীপ আবারও প্রশ্ন করল,' এ কিরে তুই ইংরেজি বই কিনছিস ! তুই আর ইংরেজি বই এটা মানা যাচ্ছে না। এটা জাস্ট মানা যাচ্ছে না।'

আর্য বলল,'এটা আমি নিজের জন্য কিনছি ন

া।' রাজদীপ অবাক হয়ে বলল ,'কি?'

আর্য বলল,' আমি এই বইটা নিজের জন্য কিনছি না ।'

রাজদীপ বলল,' তাহলে কার জন্য ? আমি তো ইংরেজি বই অত ভালোবাসি না তাহলে তুই কার জন্য কিনছিস?'

আর্য বলল ,'অদৃতের জন্য।'

রাজদীপ বলল ,'অদৃতের জন্য ?'

আর্য বলল ,' হ্যাঁ।'

রাজদীপ বলল,'তাহলে তুই কেন অদৃতকে সঙ্গে করে নিয়ে এলি না ? বেকার আমাকে কেন নিয়ে এলি? '

আর্য একটু ক্ষুব্ধ হয়ে বলল ,'তোর কি কোনো অসুবিধা আছে?'

রাজদীপ একটু ভয় পেয়ে বলল,' না না অসুবিধা কেন থাকবে? অসুবিধা নেই । কিন্তু তুই এতো রাগ করছিস কেন?'

আর্য চুপ করে রইলো ।

রাজদীপ বলল,' ঠিক আছে...চল এবার কিছু খাওয়া যাক। অনেকক্ষণ ধরে পেটে ছুঁচো দৌড়াদৌড়ি করছে।'

আর্য বলল ,'হ্যাঁ । চল।'








দুইজনে মিলে কফি হাউসে গিয়ে বসলো। খাবার অর্ডার করলো, তারপর আর্য রাজদীপকে বলল,' রাজদীপ আমার একটা কাজ করে দিতে পারবি?' রাজদীপ বলল,' এভাবে বলছিস কেন? বল রাজদীপ তোকে আমি একটা কাজ দেবো সেই কাজটা তোকে করতেই হবে। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কাজ দেবে আর আমি সেটা করবো না , মুখের ওপর না বলে দেবো সেই ক্ষমতা আমার নেই। '

আর্য হেসে বলল,' জানি। আজ পর্যন্ত তোকে আমি যা করতে বলেছি তুই আমাকে করে দিয়েছিস।'

রাজদীপ হেসে বলল,' কি কাজ ?'

আর্য বলল,' এই বইটা একটু ক্যুরিয়ার সার্ভিস করে দিতে পারবি ?'

রাজদীপ অবাক হয়ে বলল ,'ক্যুরিয়ার করতে হবে?' আর্য বলল,' হুম্ ।'

রাজদীপ বলল,'ঠিক আছে । ঠিকানাটা বল ?'

আর্য ঠিকানাটা বলল। ঠিকানাটা লিখতে গিয়ে রাজদীপের ঠিকানাটা ভীষণ চেনা লাগলো।

রাজদীপ বলে উঠলো,' এটাতো অদৃত রায়ের বাড়ির ঠিকানা । তুই হঠাৎ করে ওদের বাড়িতে ক্যুরিয়ার কেন পাঠাতে যাবি ? আর অদৃতই বা কোথায় ও তোর সাথে কলকাতায় আসেনি?'

আর্য চুপ করে রইলো।

রাজদীপ বিরক্ত হয়ে বলল,' তুই প্লিজ একটু বলবি স্পষ্ট করে কি হয়েছে ? তখন থেকে বলে যাচ্ছিস বলবো বলবো বলবো কখন বলবি ? কি হয়েছে? আমার সত্যিই এবার খুব চিন্তা হচ্ছে।'

এরপর আর্য রাজদীপকে সব ঘটনা জানালো।







সব ঘটনা শোনার পর রাজদীপ বলল,' তুই একজনকে ভালোবেসে শুধুমাত্র তার বাবা -মা'র জন্য তাকে ছেড়ে চলে এলি একবারও সেই মানুষটার কথা ভাবলি না?'

আর্য বলল,' আমি ওর কথা ভেবেই এখানে এসেছি। আমি যদি ওখানে আরো বেশিদিন থাকতাম ওখানকার পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হত। এমনিতেই একটা অস্বস্তিকর জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল আমি চাইনি আমার জন্য অদৃত বা অদৃতের বাবা-মা কেউ কষ্ট পাক। '

রাজদীপ বলল,' তুই চাসনি অদৃত কষ্ট পাক অথচ তুই তাকেই ছেড়ে চলে এলি ছেলেটা তোকে ভালবাসে। আর তুইও তো ওকে খুব ভালোবাসিস।তাহলে?'

আর্য কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল,'সবসময় নিজের কথা চিন্তা করলেই হয় না। অনেক সময় অন্যদের কথাও ভাবতে হয়। আর তুই যাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসিস, তার ভালোর জন্য তাকে মুক্ত করা যায় । আর আমার মনে হয়েছে এই সম্পর্কটা ওর জন্য ক্ষতিকারক এতে ওর খারাপই হত। তার থেকে এটাই ভালো হয়েছে । এমনিতেও ওর মা- বাবা ওকে যথেষ্ট ভালোবাসে আর অদৃতও ওর মা- বাবাকে যথেষ্ট ভালোবাসে আমি চাইনা আমার জন্য ওর মা-বাবার সাথে ওর কোনো ভুল বোঝাবুঝি হোক। আর আমার মনে হয় আন্টি আঙ্কেল যা চাইছেন ওর ভালোর জন্যই চাইছেন। আমি যদি ওখানে থাকতাম ওর আরো বেশি করে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হত।'

রাজদীপ বলল,' তোর কি মনে হয় তুই চলে এলেই ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ পারবে। '

রাজদীপ কিছু বলল না।








রাজদীপ বলল,' তাহলে কি ঠিক করলি এখন এখানেই থাকবি আর অদৃতের সাথে যোগাযোগ করবি না তাইতো? '

আর্য বলল,' হ্যাঁ অদৃতের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করব না। কিন্তু আমি এখানে থাকবো না।'

রাজদীপ বলল,' মানে?'

আর্য বলল,' আমি বাইরে পড়াশোনার জন্য যাচ্ছি।' রাজদীপ বলল ,'বাইরে পড়াশোনা করার জন্য যাচ্ছিস মানে কোথায়? অদৃত জানে?'

আর্য বলল,' না। আসলে আমি কোনদিনই চাইনি ওর থেকে দূরে গিয়ে থাকতে কারণ আমি ভেবেছিলাম আমি যদি দূরে চলে যাই ওর থেকে তাহলে আমি প্রতিটা মুহূর্তে ওকে মিস করবো আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না আর অদৃতও হয়তো মিস.....

কিন্তু দেখ যেখানে ভয় সেখানেই সমস্ত কিছু ঘটে। সেটাই হলো তাই আমার মনে হয় আমার দূরে চলে যাওয়াটাই ভালো কারণ আমি চাইনা এখানে থেকে অদৃতের স্মৃতিগুলো নিয়ে কুরে কুরে মরতে।'

রাজদীপ বলল ,'মানে ?'

আর্য বলল,'এই শহর, এই শহরের প্রতিটা অলিগলি প্রতিটা স্থানে ও আমার সাথে ওর স্মৃতি রেখে গেছে। এখানে থাকলে আমায় ওর সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো বারবার মনে পড়বে । এখানে থাকলে আমার সবসময় ওর কথা মনে পড়বে। প্রত্যেকটা দিন প্রত্যেকটা রাত আমি ওকে নিয়েই ভাববো । আর আমি চাই না ওকে নিয়ে ভাবতে। আমি চাই ও খুশি থাকুক আর আমিও খুশি থাকি।'

রাজদীপ বলল ,'তুই সত্যি দূরে গিয়ে খুশি থাকতে পারবি তো?' 

আর্য ঢোক গিলে বলল,' নিশ্চয়ই খুশি থাকবো।'

রাজদীপ ভাবলো,'আমার আর্যর কথা শুনে কেন মনে হচ্ছে ও অভিমান করে চলে এসেছে?'

রাজদীপ বলল ,'আমি নিশ্চিত অদৃত খুশিতে নেই। বরং ও ওর জীবনে আরও দুঃখেই আছে।'

আর্য বলল,'জানি না । আশা করছি ভবিষ্যতে ও খুশিতেই থাকবে।'

রাজদীপ জিজ্ঞাসা করল,' কোথায় যাচ্ছিস তুই?'

আর্য বলল,' ইতালিতে। কিন্তু আমাকে কথা দে এই কথাটা তুই কখনও কোনদিনও কাউকে বলবি না।'

রাজদীপ বলল,' কেন ?'

আর্য বলল,' আমি চাইনা অদৃত আর আমার সাথে কোনো রকমের যোগাযোগ রাখুক বা ও আমার খোঁজ করুক কারণ আমি চাই ও খুশি হোক ও সুখে থাকুক পত্রলেখার সাথে । আমি চাইনা ও আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখুক অতীতকে নিয়ে টানাটানি হোক।'

রাজদীপ বলল ,'হঠাৎ এরকম সিদ্ধান্ত নিলি কেন?' আর্য বলল,' বললাম যে আমি সবকিছু থেকে দূরে চলে যেতে চাই ওর থেকে, ওর সাথে কাটানো মুহূর্ত স্মৃতিগুলোর থেকে সবকিছুর থেকে এই শহরে আনাচে কানাচে ওর সাথে আমার বিভিন্ন স্মৃতি রয়েছে আমি সেই সবকিছু থেকে দূরে চলে যেতে চাই।'

রাজদীপ বলল,' তুই এই সবকিছুর থেকে দূরে চলে গেলে তুই নিশ্চিত যে তুই ভালো থাকবি? অদৃতও ভালো থাকবে? তোর আর অদৃতের কথা মনে পড়বে না? তোর এই স্মৃতিগুলোর কথা মনে পরবে না ? অদৃতের সাথে কাটানো তোর ভালো-খারাপ, সুখ-দুঃখ এগুলোর কোন স্মৃতিই মনে পড়বে না?' আর্য বিরক্ত হয়ে বলল,' এক কথা কেন বারবার জিজ্ঞাসা করছিস। বলছি তো মনে পড়বে না পড়বে না , পড়বে না ।'

রাজদীপ বলল,' ঠিক আছে শান্ত হও। তবে একটা কথা বলি তোকে, আমি মানছি তুই চাসনি ও দোটানায় থাকুক বা যন্ত্রনায় থাকুক কিন্তু তুই ছেড়ে চলে আসাতে ওর যন্ত্রণা বাড়বে বই কমবে না । জানি অদৃত যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেটা খুব খারাপ একটা পরিস্থিতি। কিন্তু তাও বলবো তোর এইভাবে ছেড়ে চলে আসাটা ঠিক হয়নি।'

একটু চুপ করে থাকার পর রাজদীপ বলল,' কিছু অভিমান বড্ড খারাপ যা আমাদের জীবনে বহু বছর ধরে গড়ে ওঠা ভালো সম্পর্কগুলোকে তিলে তিলে শেষ করে দেয় । ' 

কথাটা আর্যর কানে পৌঁছতেই সে রাজদীপের দিকে তাকালো ।

রাজদীপ বলল,' ঠিক আছে আমি কথা দিলাম আমি কোনোদিনও কাউকে বলবো না যে তুই ইতালিতে চলে গেছিস এমনকি অদৃতকেও না।'









To be continued..................


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance