অন্যরকম ভালোবাসা
অন্যরকম ভালোবাসা
অন্যরকম ভালোবাসা
পর্ব-৪৫
অদৃত বলল,'কি??'
আর্য বলল,'হ্যাঁ ঠিকই বলছি তোমার এই বিয়েটা করা উচিত । একটা পরের ছেলের জন্য নিজের বাবা-মা'কে কষ্ট দেওয়ার কোনো দরকার নেই। আর তাছাড়া পত্রলেখা মেয়েটা ভালো । আমিও ভেবে দেখলাম ওর সাথে তোমাকে খুব ভালো মানাবে।'
অদৃত বলল,'আমি জানি আর্য তুমি এইসব কেন বলছো, কারণ তুমি আমার ওপর রাগ করেছো তাই না? বিশ্বাস করো আর্য আমি আগেই আসতাম কিন্তু হঠাৎ করে ওর দিদার শরীরটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তাই হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে শুনে আমি গিয়েছিলাম । আমি যদি খবরটা শুনে না যেতাম সেটা খারাপ হতো তাই গিয়েছিলাম।'
আর্য বলল,'আমি তো সেটা নিয়ে কিছু বলিনি আর আমি এই কথাগুলো রাগ করে বলছি না, যথেষ্ট ভেবে চিন্তেই বলছি।'
অদৃত বলল ,'তোমার মাথাটা কি এক্কেবারে গেছে? তুমি কি বলছো তুমি বুঝতে পারছো না?'
আর্য বলল,'হ্যাঁ আমি বুঝতে পারছি। ও নিজে প্রতিষ্ঠিত তুমিও প্রতিষ্ঠিত, তোমাদের দুইজনেরই যথেষ্ট নামডাক আছে। আর তার থেকেও বড়ো বিষয় হল পত্রলেখা তোমাকে ভালোবাসে।'
অদৃত বলল,'কিন্তু তাতে কি হয়েছে? আমি তো বাসি না। আমি তো ওকে ভালোবাসি না। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি আর্য । তাহলে?'
আর্য বলল,'আজ যদি আমি না আসতাম তখন?'
অদৃত বলল,'আমি তখনও এটাই বলতাম আমি ওকে বিয়ে করবো না কারণ আমি কখনোই ওকে ওইচোখে দেখিনা। আমি ওকে আমার একজন খুব ভালো বন্ধু ভাবি, এর থেকে আর বেশি কিছু নয়। তুমি বলোনা আর্য আমি কেন সবসময় ওর আবদার মেটাই? পত্রলেখা ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই চলে আসতো। আমরা একসাথে খেলা করতাম, খাওয়া- দাওয়া করতাম , খুব মজা করতাম । তার মানে এটা নয় আমি ওকে আমার গার্লেফ্রন্ড হিসাবে পছন্দ করি। সেই ছোট থেকেই আমি ওকে আমার ভালো বন্ধুর জায়গা দিয়েছি। তারপর বড়ো হওয়ার সাথে সাথে বন্ধুত্বটা আরো ভালো হয়েছে। আমার থেকে বয়সে ছোট বলে একটু স্নেহপরবশ হয়েই আমি ওর আবদারগুলো মেটাই ,তাছাড়া আর কিছু নয়। আমার কাছে ত্রিদিব,সৌনক,অলিভিয়া যেমন পত্রলেখাও তেমনই একজন,এর থেকে বেশি কিছু নয় ।'
আর্য বলল,'কিন্তু তুমি আন্টি - আঙ্কেলকে বলেছিলে তুমি তাদের পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করবে।'
অদৃত বলল,'হ্যাঁ বলেছিলাম দুই বছর আগে। দুই বছর আগে না আমি তোমাকে চিনতাম না আর না তুমি আমাকে চিন্তে আর না আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল। তাই তখন বলেছিলাম । কিন্তু এখন গোটা পরিস্থিতিটাই পাল্টেছে। আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি আর্য।'
আর্য বলল,'যদি সত্যিই তাই-ই হয় তাহলে তুমি কেন আমাকে নিয়ে অন্য শহরে গিয়ে থাকছো না? তোমার তো সেই ক্ষমতা আছে বলো? তুমি তো চাইলেই এমনটা করতে পারো। তাহলে এই বিয়েটা তোমাকে করতে হয় না ; আর আমরাও একসাথে থাকতে পারবো। তাই না বলো?'
অদৃত বলল,'তা হয় না আর্য । আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে এটা নয় আমি আমার বাবা-মা'কে কষ্ট দিয়ে তাদের ছেড়ে তোমার সাথে দূরে গিয়ে থাকবো। আর্য ওনারা আমার বাবা-মা হন , ওনাদের আমার কাছ থেকে কিছু চাওয়া পাওয়া থাকবে এটা স্বাভাবিক । আমি আর যাই করি আমি আমার বাবা-মা'কে কষ্ট দিতে পারবো না আর্য । এই বিষয়ে আমাকে ক্ষমা কোরো।'
আর্য ভাবলো ,'এটাই তো স্বাভাবিক । তাও আমি কেন ভাবছিলাম হয়তো রাজী হবে। কেন এতো কষ্ট হচ্ছে আমার । না আমি কষ্ট পাবো না ।'
অদৃত বলল,'আর্য আমি বাবা-মা'কে ছেড়ে বা বাবা-মা'কে কষ্ট দিয়ে কখনোই ভালো থাকতে পারবো না। অন্তত নিজের সুখের জন্য বাবা-মা'কে একা করে চলে যাওয়াটা কোনো সমাধান নয়। এটা করলে আমি স্বার্থপর হয়ে যাবো, নিজের চোখে অনেকটা নীচে নেমে যাবো । যে বাবা-মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ভালোর জন্য এতো কষ্ট করে গেছে তাদের আমি কখনো কষ্ট দিতে পারবো না, কিছুতেই না।'
আর্য বলল,'আর আমার কষ্টের কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে?'
অদৃত বলল,'কেন মূল্য থাকবে না? আমি তোমাকে ভালোবাসি । তুমি কষ্ট পেলেও আমি তা সহ্য করতে পারিনা । সত্যি বলছি আমি নিজেও জানি না আমার কি করা উচিত । আমি না চাই তোমাকে কষ্ট দিতে আর না চাই বাবা-মা'কে কষ্ট দিতে।'
আর্য ভাবলো,'না অদৃত তুমি সত্যিই খুব কষ্ট পাচ্ছো। আমি কখনোই চাইনি তুমি আমার জন্য এরকম দোটানায় পড়ে কষ্ট পাও।'
আর্য চোখের জল মুছে বলল,'অদৃত শুনেছি এক জীবনে মানুষ সবকিছু একসাথে পায় না । দ্যাখো এক্ষেত্রে তুমি যদি আঙ্কেল আন্টিকে খুশি করতে চাও ওনাদের কষ্ট দিতে না চাও তাহলে তোমাকে আমাকে ছাড়তে হবে । আর তুমি যদি আমাকে খুশি করতে চাও তাহলে আঙ্কেল-আন্টি কষ্ট পাবেন। আর এইভাবে দুই নৌকায় পা রেখে চলা যায় না। শুনেছি পৃথিবীতে একমাত্র মা-বাবাই এমন মানুষ হন যারা তার সন্তানের জন্য মন থেকে ভালো চায়, তারা যেভাবে আগলে রাখে এই পৃথিবীতে সেইভাবে না পারে কেউ ভালোবাসতে,আর না পারে কেউ আগলে রাখতে । বাবা-মা যা করেন সন্তানের মঙ্গলের জন্যই করেন। আমার ভাগ্যে সেই সুখ হয়নি। তাই আমি কক্ষনো চাইবো না আমি যেটা পাইনি তা অন্য কেউ যেন না পায় । আর তোমার ক্ষেত্রে তো একদমই নয়। আমিও চাইনা আন্টি- আঙ্কেল কষ্ট পান। তাই আমার মনে হয় আমার এই রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ানোটাই ভালো।'
অদৃত চমকে উঠে বলল,'মানে?'
আর্য অদৃতের গালে হাত দিয়ে বলল,'আমি জানি তুমি ভালো নেই। তোমার মনের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে।আমি তোমাকে এইভাবে দেখতে অভ্যস্ত নই। আমি তোমাকে খুশি দেখতে চাই আমি সেটাতেই অভ্যস্ত। অদৃত তুমি এক জীবনে সকলকে খুশি করতে পারবে না । এই জীবনে আমি না হয় অখুশি হলাম। আসলে জীবনে কারোর কারোর ভাগ্যে সুখ জিনিসটা অধরাই থেকে যায়। আমার জীবনেও তাই। কিন্তু চিন্তা কোরোনা আমি তোমার ওপর কখনোই রাগ করবো না আর না কখনো ভুল বুঝবো তোমাকে। আমি তোমাকে খুব বিশ্বাস করি নিজের থেকেও বেশি আর যাকে ভালোবাসি , বিশ্বাস করি তার প্রতি আর যাইহোক রাগ আর অবিশ্বাস করা যায় না । আমি চাইনা আমার সাথে থাকতে গিয়ে তুমি সারাজীবন আত্মগ্লানিতে ভোগো। তাই আমি তোমার জীবন থেকে সরে যেতে চাই। এরফলে তোমার সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধা হবে। দেখো তুমি ঠিক পত্রলেখার সাথে ভালো থাকবে।'
অদৃত ভীত কন্ঠে বলল,'সরে যাবে মানে কোথায় যাবে? আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না ।'
আর্য বলল ,'আমি কালকে কলকাতায় ফিরে যাচ্ছি। আমি ......'
অদৃত বলল,'দাঁড়াও,দাঁড়াও কলকাতায় ফিরে যাচ্ছি মানে? কে যেতে দেবে তোমাকে কলকাতায়? তুমি আমার সাথে মজা করছো না? আমি জানি তুমি ইচ্ছা করে বলছো এইসব।'
আর্য বলল,'আন্টি- আঙ্কেল তোমার ভালোর কথা চিন্তা করেই এই বিয়েটা ঠিক করেছেন। আমার বিশ্বাস পত্রলেখা তোমাকে খুব ভালো রাখবে । তুমি আর আপত্তি কোরো না। একটা কথাতো ঠিকই এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি। আমাদের সম্পর্ক কোনো ফল প্রদান করতে পারবে না। তাহলে? আমি বলছি তোমরা ভালো থাকবে।'
অদৃত ছলছল চোখে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,'মিথ্যে কথা বলছো তুমি । তুমি কার পারমিশন নিয়ে কলকাতায় যাচ্ছো??? আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না।'
আর্য চোখ ভর্তি জল নিয়ে বলল,'আমি সত্যি বলছি কালকে বাবা আমাকে নিতে আসবে।বাবা আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে সবটা জেনে গেছে।কালকে সকালের ফ্লাইটে আমরা কলকাতা ফিরবো ।'
অদৃত আর্যকে জড়িয়ে ধরে বলল,'আমি কিছুতেই তোমাকে যেতে দেবো না ।'
কথাটা বলে সে আর্যর হাত ধরে টেনে গাড়িতে তুলল। খুব জোরে গাড়ি চালাচ্ছে সে।
আর্য ভয়ে পেয়ে বলল,'অদৃত আস্তে চালাও।'
অদৃত বলল,'তুমি বলো এগুলো সব মিথ্যে কথা ।'
আর্য কথার কোনো উত্তর করল না ।
অদৃত বলল,'কি হল চুপ করে আছো কেন? বলো এগুলো সব মিথ্যে কথা ।
আমি কোথাও যেতে দেবো না তোমাকে। তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে তুমি কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যাবে না ।'
আর্য চোখে জল নিয়ে বলল,'মানুষ কথা দেয় তা ভাঙার জন্য । মানুষ সারাজীবন পাশে থাকার কথা দেয় ছেড়ে যাওয়ার জন্য । কেউ কথা রাখে না অদৃত। সব মানুষ বলে তারা ছেড়ে যাবে না কিন্তু সকলেই ছেড়ে যায়। আমরা তো নিজেরাই নিজেদের দেওয়া কথা রাখতে পারি না তাহলে অন্যকে দেওয়া কথা কিভাবে রাখবো!'
অদৃত ছলছল চোখে বলল,'তুমি স্বার্থপর আর্য । তুমি স্বার্থপর।
আমি থাকতে তুমি কখনোই আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না ।'
বাড়িতে ফিরে অদৃত আর্যকে টানতে টানতে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলো। সেই সময় শ্রেয়সী এবং ইন্দ্রনীল বসে অদৃত এবং পত্রলেখার আশীর্বাদের মেনু ঠিক করছিল
। তারা দুইজনে এই দৃশ্য দেখে অবাক ।
ইন্দ্রনীল চেঁচিয়ে বলল,'এগুলো কি হচ্ছে?'
অদৃত ভয়ে পেয়ে আর্যর হাতটা ছেড়ে দিলো।
অদৃত কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,'বা...বাবা...বাবা দ্যাখো না আর্য বলছে চলে যাবে। আমি.....'
আর্য বলল,'আমি আসছি।'
ইন্দ্রনীল অদৃতকে বলল,'ঠিক আছে । অসুবিধার তো কিছু নেই।'
অদৃত রেগে গিয়ে বলল,'অসুবিধার কিছু নেই মানে? বাবা ওকে আমি ভালোবাসি।'
ইন্দ্রনীল জোরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,'চুপ করো। আবার সেই বাজে কথা। তুই চাসনা আমরা ভালো থাকি? তুই চাসনা আমরা একটু শান্তিতে থাকি? যদি তুই না চাস তাহলে ওকে নিজের কাছে রাখ।'
শ্রেয়সী বলল,'তুমি একটু শান্ত হও। অদৃত তুই কি চাস একটু বলবি? ও আমাদের বাড়িতে কিছুদিনের জন্য এসেছিল এবার চলে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক। জীবনে যা হয় ভালোর জন্যই হয়।'
অদৃত কেঁদে কেঁদে বলল,'না মা জীবনে সবসময় সবকিছু ভালোর জন্য হয় না। এখন যা হচ্ছে তা আমাদের কারোর জন্যই ভালো হচ্ছে না। আমি সত্যি বলছি আমি ওকে খুব ভালোবাসি । '
পরদিন সকালে তমাল সেন অদৃতদের বাড়িতে এলো।
নিরঞ্জন আর্যর ঘরে গিয়ে বলল,'আর্যবাবা তোমার বাবা এসেছে।'
আর্য বলল,'ঠিক আছে আমি আসছি।'
নিরঞ্জন যেতে গিয়েও থেমে গেল, সে বলল,'আর্যবাবা তুমি ভালো থেকো। আমার তোমার কথা খুব মনে পড়বে।'
আর্য আলতো হাসি হেসে বলল,'তুমিও ভালো থেকো নিরঞ্জন কাকা। সাবধানে থেকো।'
নিরঞ্জন আর্যর ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে এমন সময় অদৃত আর্যর ঘরে ঢুকলো।
অদৃত বলল,'তোমার বাবা এসেছেন তোমাকে নিতে। তুমি ঠিকই করে নিয়েছো তুমি চলে যাবে?'
আর্য বলল,'হুম্।'
অদৃত বলল,'আরেকবার ভেবে দেখো।'
আর্য বলল,'এখানে ভেবে দেখার কিছু নেই।'
অদৃত রেগে গিয়ে বলল,'চলেই যখন যাবে তাহলে সেদিন আমার সাথে আসতে চেয়েছিলে কেন?'
আর্য বলল,'তখন বুঝতে পারিনি পরিস্থিতি এতোটা জটিল হয়ে উঠবে।'
অদৃত বলল,'যেও না আর্য প্লিজ!'
আর্য বলল,'আমরা দুইজনে একসাথে ভালো থাকতে চেয়েছিলাম । কিন্তু সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। কারণ আন্টি আঙ্কেল আমাদের সম্পর্কটা কখনোই মেনে নেবে না। আর আন্টি আঙ্কেল কষ্ট পেলে তুমিও কষ্ট পাবে। আর আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও।
আমি এখানে থাকলে তুমি ঠিক মতোন সিদ্ধান্তই নিতে পারবে না, আর না পারবে পত্রলেখার সাথে চেষ্টা করতে।'
অদৃত বলল,'আমি তোমাকে আগে ও বলেছি এখনও বলছি আমি পত্রলেখাকে ভালোবাসি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি ।'
আর্য বলল,'আমি তোমার কাছে অনেক ঋণী; তুমি আমাকে এরকম একটা পরিবার দিয়েছো,বাবা-মা দিয়েছো,নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছো। মানছি এটা আমার স্থায়ী হয়নি কিন্তু যেকটা দিন আমি এখানে থাকতে পেরেছি, সময় কাটিয়েছি তাতেই আমি খুশি। আমি তো এখানে না আসলে জানতেই পারতাম না পরিবার কি হয়? বাবা-মা কি হয়? অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।'
অদৃত ছল ছল চোখে বলল ,'তুমি যদি বলো আমি এক্ষুনি তোমার বাবাকে এখান থেকে চলে যেতে বলতে পারি সেই ক্ষমতা আমার আছে।'
আর্য বলল,'আমি জানি । কিন্তু আমি চাই না । আমি ভেবে দেখেছি আমি যদি তোমার সাথে দূরে কোথাও গিয়ে থাকিও না তাহলেও তুমি খুশি হবেনা কারণ তোমার বাবা-মায়ের কথা মনে পড়বে। এক্ষেত্রে ওনারা সবথেকে বেশি কষ্ট পাবে। আর এমনিতেও পত্রলেখা মেয়েটা ভীষণ ভালো দেখো থাকতে থাকতে সমস্তকিছু অভ্যাস হয়ে যাবে। মানুষ যে অভ্যাসের দাস। আন্টি আঙ্কেল নিশ্চই ভালো কিছু বুঝেছেন তাই এই বিয়েটা ঠিক করেছেন ।আঙ্কেল আন্টি তোমাকে খুব ভালো করে মানুষ করেছে, তারা পৃথিবীর শুধু ভালো জিনিস এবং শিক্ষাগুলোই তোমাকে দেয়নি দিয়েছেন সবথেকে সেরা জিনিস এবং শিক্ষাগুলো । তাই ওনারা যা করবেন তোমার ভালোর জন্যই করবেন , তোমার জন্য যেটা ভালো ও উপযুক্ত হবে সেটাই ওনারা করবেন । মা-বাবার থেকে তোমাকে এই পৃথিবীতে কেউ ভালো বুঝবে না , চিনবে না। আমি আগেও বলেছি মা-বাবাই একমাত্র মানুষ যারা তার সন্তানের ভালো চান। এটা তুমিও জানো, বিশ্বাস করো তাইজন্যই সবসময় আন্টি আঙ্কেলের কথা ভাবো, ওনাদের কথা শোনো । তাই তারা যখন আমাদের এই সম্পর্কটা চাননা সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় এই সম্পর্কটা না রাখাই ভালো । অন্তত যে সম্পর্কে বাবা-মায়ের চোখের জল পড়ে সে সম্পর্ক আর যাইহোক কখনো সুখের হয় না।'
ইন্দ্রনীল দরজার এক কোণায় দাঁড়িয়ে তাদের সমস্ত কথপোকথন শুনলো।কথাগুলো শুনে তার একটা অদ্ভূত খারাপ লাগা তৈরী হল। সে ভাবেনি আর্য এতটা ভালো এবং পরিণত মনস্ক ছেলে । সে কিছু বলল না সে নিঃশব্দে নীচে নেমে এলো।
অদৃত কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,'তুমি কোথায় যাবে? কোথায় থাকবে?'
আর্য হেসে বলল,'তুমি ভুলে যাচ্ছো আমার একটা বাড়ি আছে আমি সেখানেই থাকবো।'
আর্য বলল,'তুমি ভালো থেকো । আঙ্কেল আন্টির যত্ন নিও আর নিজেরও যত্ন নিও। বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থেকো না। আর নিজের খেয়াল রেখো । দু'দিন পর তোমাদের আশীর্বাদ আগামী জীবনের জন্য আমার তরফ থেকে অনেক শুভেচ্ছা রইল তোমাদের দুইজনের জন্য।'
অদৃত বলল,'আমার সাথে যোগাযোগ ......'
আর্য বলল,'আমার আর তোমার মধ্যে আজ থেকে কোনো যোগাযোগ থাকবে না। আমি চাই না তোমার আর আমার মধ্যে কোনো যোগাযোগ থাকুক।'
কথাগুলো শুনতে শুনতে অদৃতের মনের ভেতরটা যেন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল ।
আর্য নীচে নেমে এলে তমাল সেন মুখের মধ্যে একরাশ অনিচ্ছা নিয়ে একটা কোর্ট পেপার অদৃতের দিকে এগিয়ে দিলো।
অদৃত গম্ভীর মুখে বলল ,'এটা কি?'
তমাল সেন বলল,'কলকাতার জমির পেপারস। এইটা নিয়েই তো এতো অশান্তি।'
অদৃত বলল,'হঠাৎ এটা কেন?'
আর্য ভাবলো, ইন্দ্রনীল এবং শ্রেয়সীর বিবাহ বার্ষিকীর রাতে সে যখন তমাল সেনকে তার কলকাতায় ফিরে যাওয়ার কথা জানায় তখন সে বলেছিল ,'আমি কলকাতায় ফিরবো কিন্তু আমার দুটো শর্ত আছে।'
তমাল সেন বলেছিল,'শর্ত?'
আর্য বলেছিল,' হ্যাঁ শর্ত । তুমি যদি মেনে নাও তবেই আমি কলকাতায় ফিরবো নতুবা নয়।'
তমাল সেন বলেছিল,'আচ্ছা মুশকিলে পড়া গেল বলো কি শর্ত?'
আর্য বলেছিল,'এক যেই জমিটা নিয়ে তোমার আর অদৃতের মধ্যে অশান্তি সেই জমিটা তুমি অদৃত রায়কে দিয়ে দেবে আর দুই আমি ইতালিতে যাবো চিত্রশিল্প নিয়ে পড়াশোনার জন্য । এটায় তুমি কোনো হস্তক্ষেপ করবে না এবং এইকথা তুমি কোনোদিনও কাউকে বলবে না । রাজী?'
তমাল সেন বলল,'প্রথম শর্ত মেনে নেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব । তুমি কি পাগল হলে ওই জমিতে ওরা ব্যবসা করলে আমি মাঠে মারা যাবো। না না এ অসম্ভব ব্যাপার।'
আর্য বলল,'তাহলে আমার পক্ষেও যাওয়া সম্ভব নয় । তাহলে এটাই বরং ভালো হবে সবাই জানতে পারবে আমি একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলেকে ভালোবাসি । সবাই জেনে গেলে তুমি মেনে নিতে পারবে তো?'
তমাল সেন আঁতকে উঠে বলেছিল,'না আমার সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না।'
আর্য বলেছিল,'তবেই ভাবো সম্মান বড়ো না জমি বড়ো?'
তমাল সেন বলেছিল,'ঠিক আছে আমি রাজী।'
অদৃত বলল,'কি হল হঠাৎ এই জমিটা কেন দিচ্ছেন?'
আর্য বলল,'এই জমিটা ঘিরেই তো এতো অশান্তি শুরু হয়েছিল তাই আমাদের মনে হয় এটা তোমারই থাক। আর তাছাড়া এমনটাও হতে পারতো এই জমিটার অজুহাতে তুমি আবার আমাকে অপহর...' কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেল আর্য তারপর বলল,'মানে তুমি আবার আমার সাথে যোগাযোগ করতে । আমি চাইনা এরকম কিছু হোক।'
অদৃত বলল,'আমি এতটাও নীচ মানসিকতার নই আর্য ।'
ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়সী চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
তমাল সেন বলল,'এবার আমাদের বেড়াতে হবে আর্য ।'
অদৃত অভিমানী দৃষ্টিতে আর্যর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
আর্য বলল,'আমি আসছি।'
আর্য এবং তমাল সেন অদৃতদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল । অভিমানে , দুঃখে অদৃতের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল। তার আজ হাত - পা বাঁধা। সে পারল না আর্যকে নিজের কাছে আগলে রাখতে, পারল না তারা একসাথে থাকতে । ইন্দ্রনীল এবং শ্রেয়সী অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো অদৃতকে। অদৃত তখন পাথরের মূর্তির মতোন দাঁড়িয়ে , চোখ দিয়ে কেবলই জল গড়িয়ে পড়ছে তার । এমনভাবে তারা অদৃতকে কাঁদতে কখনো দেখেনি, এই অদৃত তাদের কাছে বড্ড অচেনা।
To be continued.................