Aniruddha Goswami

Romance Fantasy Horror

4.0  

Aniruddha Goswami

Romance Fantasy Horror

একটি কবিতা ,প্রেম ও শূন্যতা

একটি কবিতা ,প্রেম ও শূন্যতা

8 mins
209


বাম দিকে ত্রিবান্দ্রাম স্টেশন কে রেখে আমার রয়েল এনফিল্ড ছোটালাম। রাস্তা টা লোকালয় এর মধ্যে দিয়ে সোজা বেশ কিছুটা গিয়ে ডান দিকে ঘুরেছে কোভালাম বিচের দিকে। আজ শনিবার ,কাজের চাপ একটু কম ছিল ,স্টকিস্টএর ওখানে একটু দেরি হয়ে গেল। মিনিট দশেকের মধ্যে কোভালাম বিচের প্রথমে যেখানে প্রবেশপথ সেখানে তড়িঘড়ি বুলেট টা স্ট্যান্ড করে সার সার হোটেল বাম দিকে রেখে ছুটলাম বালির মধ্যে দিয়ে বাতিঘরের দিকে। যথারীতি ক্যামেলিয়া আগে এসে যাবে | আর ঠিক তাই। কপট রাগ দেখিয়ে ক্যামেলিয়া বললো দুবছর আছো কেরালা তে আর সব রাস্তাঘাট তো আমার থেকে ভালো চেনো তারপর ও দেরি! এখনো টাই খোলার টাইম পাওনি ,তোমরা মেডিকেল রিপ্রেসেন্টেটিভ রা ড্যাম স্মার্ট আর মন পাথরের , সেলস ছাড়া কিছু বোঝো না,না? কিছু উত্তর দেবার আগেই ক্যামেলিয়া বললো নো নিড এক্সপ্লানানসন্স | "নীল তোমার ওই নার্সারী পোয়েম টা আবার শোনাতে হবে দেরি করার জন্য "। নাও শুরু করো |

আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এই কবিতা সোনার জন্যই ইচ্ছা করে আগে চলে আসে |

আমি বললাম "আবার"! ক্যামেলিয়া আমার কথা যেন কিছু না শুনতেই পেলো না, বললো " আইও কি সুন্দর "কাল ছিল ডাল খালি আপ্র এন্না ইরিকা "? কাজল পড়া বড় বড় চোখ চেয়ে মাথা নেড়ে আদেশ করলো। লক্ষ্য করে দেখলাম এই গোধূলি বেলায় তার সবুজ গাঘড়া আর কাঁচা হলুদ জামা আর লম্বা খোলা চুল ,তার সাথে দুই গেছি চুল বিনুনি করা। সামান্য সাজে অসামান্য রূপ এই বেলায়।

কোন ক্ষনে যে সহজ পাঠের এই কবিতাটা তাকে শুনিয়েছিলাম , হয়তো বাঙালি তাই ভেবেছে কবিতা ভালো জানে ! কি আশ্চর্য্য ,এই তিন মাসে নিয়ে কত বার শুনিয়েছি তবু বার বার শুনতে চায়। কবিতা টিও খুবই অদ্ভুত লাগে আমার কাছে।

 

কাল ছিল ডাল খালি,

আজ ফুলে যায় ভরে।

বল্ দেখি তুই মালী,

হয় সে কেমন করে।

এই কবিতা টি মনে গেঁথে আছে অথচ আর অন্য কোনো কবিতা সেভাবে মনে নেই আমার। ক্যামেলিয়ার সাথে দেখা হলেই শুনতে চাইবে , বার বার। মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের দেখা করার যেন পূর্ব নির্দিষ্ট জায়গা এই কবিতা টি। কোনো এক সেতু বন্ধন করে আমাদের মধ্যে।

অগত্যা শোনাতে হলো। শুনেই বললো এবার যেতে হবে এক ঘন্টা হয়ে গেছে ,ঠাকুমা ঘরে একা আছে। জানোই তো ,পেরেন্টস আর এট দুবাই। আমি আর ঠাকুমা এখানে থাকি। হাত ধরে বললো সেদিন তোমাকে না পেলে কি যে হতো নীল ? ভাবলেই এখনো ভয় হয় | আমি বললাম আর একটু বসো। ইচ্ছা থাকলেও বসার উপায় নেই। ঠাকুমা কে গিয়ে ওষুধ গুলো দিতে হবে ,রাতে আবার একটু কম দেখে। ক্যামেলিয়া বললো। অগত্যা উঠতেই হলো। সেদিন ঠাকুমার ক্রিটিকাল কন্ডিশন ,শনিবার কোনো ডাক্তার নেই আর বেড ও নেই। আমি একা ছোটাছুটি করছি। নার্স রা প্রাইভেট হাসপাতাল এ যেতে বলছে। তুমি সে সময় ফোন করে ডাক্তার কে না ডাকলে কি যে হতো ?

এ আর এমন কি আর অন্য কেউ রিপ্রেসেন্টেটিভ থাকলে সেও হেল্প করতো। সে বললো ছিল তো তোমাদের অনেকে কেউ তো আসেনি নীল তুমি ছাড়া। আমি হেসে বললাম তা না করলে যে ক্যামেলিয়া নামের এক মালায়ালী মেয়ে , বেঙ্গলি নার্সারী পোয়েম ভালোবাসে তাকে হয়তো আর জানা হতো না।

ক্যামেলিয়া বললো তোমাকে কি বলে আর ধন্যবাদ জানাবো ! আমি বললাম শুধু এইটুকু করে কবিতা টি আর শুনতে চাইবে না বলো। ক্যামেলিয়া আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো নেভার সে দ্যাট নীল ,ইউ ডোন্ট নো নীল দ্য ওয়ে ইউ রিসাইট এন্ড এক্সপ্লেইনেড ইট ,নাউ ডিস্ ইস দ্য ইন্টিগ্রাল পার্ট অফ মাই লাইফ। মিস্টিক্যালি বিউটিফুল পোয়েম অফ টেগোর | দেখো একদিন পুরোটা আবৃতি করে শোনাবো তোমাকে।সমুদ্রে গেরুয়া র ছাপ লেগেছে, টুরিস্ট দের ভীড় বাড়তে শুরু করেছে। 

রেস্তোরাঁ গুলোতে মাছ কাঁচের মধ্যে সাজানো রয়েছে। আর এই কোলাহল এর মধ্যে দিয়ে রাস্তায় উঠে বুলেট স্টার্ট করলাম।ক্যামেলিয়া উঠে বসে কাঁধে হাত রাখলো যেন অনেক দিনের চেনা। যেতে যেতে পিছনে বসে কবিতার লাইন গুলো আওড়াচ্ছে শুনতে পাচ্ছি। মাঝে মাঝে হওয়ার জন্য তার সবটা শোনাও যাচ্ছে না। এক ভালো লাগা আর পূর্ণতার রেশ নিয়ে স্পিড বাড়িয়ে দিলাম। সব ছাপিয়ে কানে আসছে বুলেটের শব্দ ডুগ ডুগ ডুগ ......

ত্রিভান্দ্রাম মেডিকেল কলেজে ডক্টরদের সাথে দেখা করার জন্য এসেছি। পালমনোলোজি ডিপার্টমেন্ট এ ভিড় আছে মোটামুটি। আয়তকার জায়গায় সামনের দিকে সার সার চেম্বার এ ডাক্তার রা রোগী দেখছেন। আমরা জুনিয়র ডাক্তার দের সাথে দেখা করে গল্প করছি। ডক্টর মায়াপ্পান আমাকে দেখেই চেম্বার এ ডেকে নিলেন। হেসে বললেন এতো ঘন ঘন আসার কি দরকার ,তোমাদের মাল্টিন্যাশন কোম্পানি ,ভালো ভালো ইনহেলার রয়েছে ,সবই তো লিখছি। আমি বললাম এই জন্য বেশি আসি আমার ভালো লাগে আপনাদের মতন বড় ডাক্তার দের সাথে কথা বলতে আর আরো ভালো লাগে দেখতে যে আপনার প্রেসক্রিপশন এ পেশেন্ট রা আমাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ভালো আছে দেখে। ডক্টর মায়াপ্পান বললেন হেসে ইউ নো ইউ হ্যাভ দ্য উইট টু টক্ ইন এ ভেরি সফিস্টিকেটেড ওয়ে দ্যাট উই ডক্টরস আর অলওয়েজ এক্সপেক্টইন । পার্টনারইং উইথ মাইন্ড। 

 ভালো কথা সেদিন তোমার সেই পেশেন্ট চেকআপ এ এসেছিলো ,ভালো আছে। খুব নাম করছিলো ক্যামেলিয়া তোমার। ডাক্তার অপাঙ্গে হেসে জিজ্ঞাসা করলো আমরা কি একজন বাঙালি জামাই কেরালাতে পেতে চলেছি ? আই উইশ সো ,বাট স্যার ,ইট ইস টু আর্লি টু সে।  সো হোটস সি ইস সেয়িং ? কিছুনা স্যার শুধু একটি কবিতা বার বার শুনতে চায়।

ডক্টর মায়াপ্পান জিজ্ঞাসা কবিতা- স্ট্রেঞ্জ হোয়াটস দ্যাট ?

শোনালাম কবিতা টি। ডাক্তার শুনে বললেন দ্য গ্রেট টেগোর এন্ড হিস্ ডিভোশন টু ওম্নিপ্রেসেন্ট গার্ডেনার। তারপরে বললেন শোনানো হ্যাবিট করে নাও নীল ,সারাজীবন ই শোনাতে হবে। ইউ আর সো স্মার্ট বাট মিস্ড দ্য পয়েন্ট তুমি তার জীবনে এসে ফুল ফুটিয়েছ। কবিতা টি তাই যেই তোমার কাছে শুনেছে ,তার মনে হয়েছে এটাই তো তার জীবনে ঘটছে। ইট মুভড হার। সো আন্ডারস্ট্যান্ড হার এন্ড গো অ্যাহেড। ডক্টর কে ধন্যবাদ দিলাম ধাঁধাঁ টি সমাধান ধরিয়ে দেবার জন্য। মেয়েদের মনের কথা কেই বা কবে পুরো বুঝতে পেরেছে ?                                                                                                                                                                        ত্রিভান্দ্রাম এর পট্টম এ ক্যামেলিয়া দের বাড়ি তে ঠাকুমার সাথে থাকে। ছোট এক তালা বাড়িটা খুবই মনোহর ঢুকতেই লাল স্লাইডিং গেট। সেটা পেরোলেই ছোট ছোট পাথর দেওয়া গাড়ি পার্কিং এর জায়গা। লাল সান্ত্রো একটা পার্ক করা আছে। পার্কিং এর ডান দিকে কাঠের রেলিং দিয়ে ঘেরা বসার জায়গা। এরকম বসার জায়গা কেরালায় দেখা যায়। আজ রবিবার। ক্যামেলিয়া নিজে রান্না করবে বলেছে , কেরালিয়ান মিল সাথে মীন কারি। আমার ফেভারিট। আজ নাকি একটা সারপ্রাইস আছে।

রয়েল এনফিল্ড এর এর আওয়াজ পেয়ে ক্যামেলিয়া জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে প্রজাপতির মতো উড়তে উড়তে চলে এলো। সাদা রঙের কেরালা পাট্টু আর সবুজ রঙের জামা যা সত্যি যেন সদ্য ফোটা ফুলের কথা মনে করিয়ে দিলো। এক মুখ হাসি দিয়ে বললো পরিষ্কার বাংলায় "ভেতরে আস্| হোক জনাব " । বিস্ময়ের শুরু। ঠাকুমা এনে দিলো কফি ও পারহাম পরি। ক্যামেলিয়া আমাকে তাড়াতাড়ি শেষ করে রান্নাঘরে আস্তে বললো। অনেক গল্প তার। ঠাকুমা তাতে যোগ করলো ক্যামেলিয়ার ছেলেবেলার কথা। তার কাছেই তো সে মানুষ হয়েছে। তিন জন্যে গল্প চলছে ,মাঝে ক্যামেলিয়া মিউজিক সিস্টেম এ চালিয়ে দিয়ে এলো "পেরি কোমো র" একটি গান।

 

 And I love you so

The people ask me how

How I've lived till now

I tell them I don't know

I guess they understand

How lonely life has been

But life began again

The day you took my hand

And yes, I know how lonely life can be

The shadows follow me 'n' the night won't set me free

But I don't let the evening get me down

Now that you're around me ....      

একসাথে খাবার বানানোর মজাই আলাদা। ছোট ছোট মাছ দিয়ে মাখো মাখো হলুদ রঙের করি মীন খুব সুন্দর সুবাস ছেড়েছে।আমি কারি মীন ফ্রাই করে দিলাম ক্যামেলিয়া অবাক হয়ে দেখলো মাছ তা একদম ঠিক সময় এ ফ্রাইংপ্যান থেকে তুলে নেওয়া। একদন ঠিক বাদামি রং ধরেছে মাছ আর তার মীন চোখেও। রান্না ঘরের হালকা আলোয় সাদা কেরালা পাট্টু আর সবুজ জামায় ক্যামেলিয়া যেন এক জোনাকি। 

খাবার পরে আমাকে আরেকবার কবিতার লাইন গুলো বলতে বললো। এরপর হুবহু কবিতা টি পুরো বাংলায় আবৃত্তি করে গেলো। আমি আরেকবার বলতে , সে কবিতার প্রতিটা শব্দকে যেন ছুঁয়ে গেল ,দৃষ্টি তে এক কিসের প্রসন্নতা ,কি যেন সে পেয়ে গেছে আর মোবাইলের ভয়েস রেকর্ডার আমি এ রেকর্ডিং করে নিলাম। ক্যামেলিয়া তার আবৃত্তি করা কবিতা টি তার নামের সাথে রিং টোন সেট করে দিল আমার ফোনে,আর বললো এবার আমি ডাকলেই তুমি আমার গলা শুনতে পাবে।

 বিকালে ছাদে বসে দুজনে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে আমার হাত দুটো ধরে চেয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষন। আবেগ যখন কথা আটকে দেয় ,তখন যা ফুটে ওঠে তা হলো চোখ। দু ফোটা জল শুধু এটুকুই বলতে পারলো মালায়লামে "নীল তোমাকে পেয়ে আমার জীবন ফুলে ভরা গেছে " .

তার দিকে ফিরে তার সজল আয়ত চোখের দিকে চেয়ে ঘভীরতা মাপতে চেয়ে মুখটা দুই হাতে আলতো করো ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলাম। আর কপালে কপাল স্পর্শ করে চোখের দিকে চেয়ে দেখলাম গভীরতা মাপতে চাওয়া মুর্খামি ,ডুব দিয়ে লীন হয়ে যাওয়ায় শ্রেয়। তাতে আর কোনো সংশয় বা ভয় থাকে না। আকাশে যেন সিঁদুরের ছোয়া লেগেছে।

রাতে বৃষ্টি নেমেছে। কেরালায় বৃষ্টি সাধারণ ব্যাপার।রাতে হালকা ঠান্ডা লাগে। রাতে খাবার পর ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম রবিবার হলেও কেরালায় রাতে রাস্তা ঘাট এ তেমন লোক চলাচল থাকে না। ঘরে আলো কম করে মিউজিক সিস্টেম এ একটা গজল চলছিল "প্যায়ার কি রাহ

মে চলনা শিখ ,ইস্ক কি চাহ মে জ্বলনা শিখ "। সামনের বড় রাস্তা টা স্ট্রিট লাইটের হলুদ হয়ে আছে। রাস্তার দুপাশে সারি সারি ভিজে গাছ গুলি কিছুটা নুয়ে পড়েছে। সামান্য জল জমা রাস্তায় জলের ফোঁটা পড়ার শব্দ আর ফোটা পড়ার জায়গায় চারপাশের জলের একটু ছলকে ওঠা , দেখতে দেখতে মনে হয় আকাশের জল মাটির সাথে মিশে যাবার আনন্দে লাফিয়ে উঠছে।

রাতে বৃষ্টি একটা নেশা ধরিয়ে দেয়। পাতলা একটা চাদর জড়িয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। ফোনে রিং শুনতে ঘুম ভাঙলো দেখি ডাক্তার মায়াপ্পান ফোন করছেন। ধরতে জিজ্ঞাসা করলেন কি করছি। জিজ্ঞাসা করলেন ক্যামেলিয়া কেমন আছে ?বললাম রাত দশটায় ফোনে কথা হলো। তখন তো ঠিকই লাগলো। ঘড়ির দিকে চোখ চলে গেল দেখি প্রায় রাত সাড়ে বারোটা।

হটাৎ মনে হলো ডাক্তার এতো জিজ্ঞাসা করছে কেন ,কিছু কি হলো তার অথবা তার ঠাকুমার?

ডক্টর মায়াপ্পান জিজ্গাসা করলেন একবার মেডিকেল কলেজে আসতে পারবে ,বাট বি কেয়ারফুল এন্ড কাম উইথ এ ফ্রেন্ড। এনিথিং সিরিয়াস? জিজ্ঞাসা করতে না করতেই ফোনটা কেটে গেল। ক্যামেলিয়া কে ফোন করতে দেখলাম একদম ফোন যাচ্ছে না। বাড়ির ফোন ও বেজে যাচ্ছে। অন্য একজন কলিগ কে ডেকে নিয়ে বেরোলাম। বৃষ্টি এখন আর হচ্ছে না। পিছনে বসে ভেবে যাচ্ছি দুঃচিন্তা ছাড়া কিছু আর মনে আসছে না। নিজের হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। কি হতে পারে ভাবছি আর ক্যামেলিয়ার মোবাইল এ ফোন করার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছি ,ফোন যেন ডেড সাইলেন্স।

দশ মিনিটের রাস্তা যেন শেষ হয় না। মাঝ রাতে রাস্তা ফাঁকা , বাইক ছুটছে আর রাস্তার দুদিকে আলো সরে সরে যাচ্ছে। কেমন এক ঘোর লাগছে ,মন যেন একটি ভাবনায় কেন্দ্রীভূত যে কি দেখবো গিয়ে।  বাইক থামতে না থামতেই নেমে পরে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এর দিকে দৌড়ালাম।

ডাক্তার মায়াপ্পান যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে দেখতে পেয়ে কিছু বলতে না দিয়ে পিঠে হাত দিয়ে বললেন "কাম উইথ মি "। সেই অবস্থায় আমাকে এটি ঘরের দিকে নিয়ে এগোলেন। লম্বা একটি প্যাসেজ ,নীল রং, আলো অসম্ভব রকমের উজ্জ্বল ,আর মনে অসম্ভব এক দোলাচল। প্যাসেজের শেষের ঘরে এসে থামলাম। সাদা চাদর দেওয়া একটি অবয়ব ট্রে তে । কার মৃতদেহ দেখাতে ডাক্তার নিয়ে এলো ?ডাক্তার ইশারা করতেই ওনার জুনিয়র মুখের ঢাকাটা অল্প সরিয়ে দিলেন। পিঠে হাত ডক্টরের তখন ও সরেনি। ডাক্তার বললো মাই সন রাত সাড়ে দশ টা নাগাদ বাড়ি থেকে ক্যামেলিয়া বেরিয়েছিল ঠাকুমার জন্য দরকারি একটা ওষুধ আনতে। রাস্তা পেরনোর সময় দেখতে পায়নি একটা ট্রাক আসছিলো। স্পট ডেড। মেডিক্যাল স্টোরের লোক ই এখানে নিয়ে আসে ও পুলিশ এ খবর দেয়। পোলিশ কুড নট ফাইন্ড হার ফোন। আমার জুনিয়র ফোন এ মেয়েটির বিবরণ আর তার সাথে আমার প্রেসক্রিপশন দেখে আমাকে ডাকে। পরের আর কোনো কথা আমার কানে ঢুকছে না। ক্যামেলিয়ার মুখটা আলতো করে ধরে ভালো করে দেখলাম ব্যান্ডেজে মোড়া পুরোটাই। অতীব কষ্ট একটা গলার কাছে এসে যেন আটকে আছে আমার।কান্নাও আসছে না।

একটাই হাহাকার বেরিয়ে এলো ক্যামেলিয়া ,....ডাল তো আজ সত্যিই খালি হয়ে গেল। স্ট্রেচার ধরে দাঁড়িয়ে দেখছি আর মনে হচ্ছে সামনে সবকিছু দুলছে ,জ্ঞান হারাবার ঠিক আগে পিঠে জোরে হাত , ডক্টর মায়াপ্পান বাইরে নিয়ে এলেন জোর করে। ডাক্তার বাইরে এসে একটি কথা বললেন " টেক কেয়ার নীল এন্ড গো টু হোম " । বাইরে তাদের বাড়ির লোকজন দের দেখলাম।

এরপর কিভাবে কি বাড়ি এলাম তা যেন সব বোধ বুদ্ধির বাইরে। বন্ধুই পৌঁছে দিয়ে গেল। থাকতে চাইছিলো কিন্তু আমি বারণ করলাম। কিছু ব্যাথা একা পাওয়া ভালো। কারও সাথে এর ভাগ তো চলে না।  এই পাওয়া তো সম্পূর্ণ নিজের। এখন প্রায় চারটে বাজে। মনের অসম্ভব বিধ্বস্ত অবস্থাতেও লক্ষ্য করলাম মন কিন্তু সমতা ফিরে আসতে চাইছে। চান করে বিছানা তে নিজেকে ছেড়ে দিলাম। খুব মনে পড়ছে ক্যামেলিয়ার সাথে কাটানো মুহূর্ত ,তার কবিতাটি শেখার জন্য আকুতি । তার আবদার আমার কাছে কবিতা টি বার বার শোনার আর তার জন্য নানা ছুতো বার করা। এর পাশাপাশি যখন এটাও মনে পড়ছে এই মুহূর্তরা বা ক্যামেলিয়া আর ফিরে আসবে না। একা ঘরে চোখে জল আর আটকানো গেল না ,এরপরে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না। ঠিক ঘুম না তন্দ্রা মতো ,আধো ঘুম আর জাগরণের মাঝামাঝি এক অবস্থা । শুনতে পাচ্ছি ফোন বাজছে ,ফোনে রিং হচ্ছে যেন কত দূর থেকে। কি মনে হতে ঘুমে থেকে হটাৎ জেগে উঠে চোখ খুললাম। ঘর অন্ধকার,হয়তো ৫ টা বাজবে ,কেরালা তে দেরিতে সকাল হয়। বিছানা থেকে কাত হয়ে একটু উঠে টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলাম।  ফোনের স্ক্রিন এ দেখলাম ফুটে উঠেছে "ক্যামেলিয়া কলিং- রিং টোন এ তার আবৃত্তি করা পংক্তি ধ্বনিত হচ্ছে …… অন্ধকারে নির্বাক হয়ে ফোনটা ধরেই আছি। বেজেই চলেছে ক্রমাগত……

 

কাল ছিল ডাল খালি,আজ ফুলে যায় ভ'রে।বল্ দেখি তুই মালী,হয় সে কেমন ক'রে।

গাছের ভিতর থেকেকরে ওরা যাওয়া আসা।কোথা থাকে মুখ ঢেকে,কোথা যে ওদের বাসা।

থাকে ওরা কান পেতে লুকানো ঘরের কোণে,ডাক পড়ে বাতা সেতেকী ক'রে সে ওরা শোনে।

দেরি আর সহে না যে মুখ মেজে তাড়া তাড়ি কত রঙে ওরা সাজে,চ'লে আসে ছেড়ে বাড়ি।

 


 


 

 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance