শেষ থেকে শুরু
শেষ থেকে শুরু


মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার। রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন! ঘুমচোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেল!
কান থেকে যে ফোনটা কখন সরে গেছে খেয়াল নেই তনুজার। কান্নার দমকে চৈতির স্বর অস্পষ্ট তখনও। তার মধ্যে থেকেই যেটুকু উদ্ধার করল তনুজা, তার মর্মার্থ দাঁড়ায়,
-"আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে রে তনু। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি কি করব?? আমি কোথায় যাব!! আমার যে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো গতি নেই রে।"
স্কুলজীবনের বান্ধবীর শেষের ওই মর্মান্তিক কথাটা শুনে আমূল কেঁপে উঠল তনুজা। চৈতি খুব সাধারণ মেয়ে। স্কুল-কলেজের পর বিয়ে করে সংসার করাই ওর জীবনের লক্ষ্য ছিল। তনুজার মত চাকরি করে দীর্ঘদিন অনূঢ়া থাকা তার কল্পনার অতীত।
তবু, দুই মেরুর বাসিন্দা, এই দুটি মেয়ের বন্ধুত্বটা কিভাবে যেন টিকে গিয়েছিল। বাবার পছন্দেই রূপমকে বিয়ে করে আজ দুই বছর হল সুখে সংসার করছে ও। কিন্তু সত্যিই কি সুখে ছিল ও!! ফোনের ওপার থেকে চৈতির বলা একেকটা কথা যেন গরম শলাকার মতই বিঁধছে তনুজার কানে।
বিয়ের পর কটা মাস ভালোই কেটেছিল ওদের। কিন্তু তারপর থেকেই প্রকাশ পেতে থাকে রূপমের আসল রূপ। প্রায়ই অফিস থেকে দেরী করে মদ্যপ হয়ে ফেরে রূপম। শার্টে এমনকি শরীরের আনাচে কানাচে লেগে থাকে কোনো কুহকিনীর দেওয়া লিপস্টিকের দাগ।
রূপমকে জিজ্ঞেস করলে নিষ্ঠুর বাক্যবাণ ছাড়া আর কিছুই জুটত না তার। এসব কথা মা বাবাকে বলেনি ও। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়ে তারা এমনিই নিঃসঙ্গ। কি দরকার, তাদের চিন্তা বাড়ানোর!! নিজের বেস্টফ্রেন্ড তনুজাকেও এই লজ্জার কথা জানাতে পারেনি। গুমড়ে মরেছে নিজের মধ্যেই।
কিছুদিন আগেই অফিসের এক পার্টিতে যুগলে গেছিল তারা। নিজের চোখে দেখেছে অফিসের মক্ষীরানি মিস
জুঁইয়ের সাথে রূপমের ব্যবহার। তবু, নিজের মনকে প্রবোধ দিয়েছিল যে, আধুনিক অফিস পার্টিতে অমন একটু হয়েই থাকে।
তাই তো রূপমের কলিগের স্ত্রী মিসেস বাসু যখন তার কাছে এসে বলেছিলেন, "তোমার কর্তাটিকে একটু সামলে রেখো, ওই জুঁই কিন্তু সংসার ভাঙতে ওস্তাদ।" তখন তাকে দুটো কড়া কথা শোনাতেও সে ছাড়েনি।
কিন্তু আজ!! আজ রূপম তো সব সীমা অতিক্রম করে গেল। চৈতিরই চোখের সামনে দিয়ে মদ্যপ অবস্থায় ওই জুঁইয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে ওদের বেডরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল!! আর যে সহ্য করতে পারছে না চৈতি। পেটে দুইমাস বয়সের ভ্রূণটা না থাকলে নিজেকে শেষ করে দিয়ে সব জ্বালা জুড়োত।
সে রাত্রে চৈতিকে আর একা ছাড়তে ভরসা পায়নি তনুজা। সারারাত তার সাথে ফোনে কথা বলে গেছে। ভোর হতেই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে মিনিট কুড়ির দূরত্বে থাকা চৈতির ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে। তার যাবতীয় সব জিনিস নিয়ে চলে এসেছে নিজের ফ্ল্যাটে।
মা মারা যাবার পর এই বিশাল ফ্ল্যাটে ও একাই। স্কুল থেকে ফিরে এই খাঁ খাঁ ফ্ল্যাটে এতদিন দম বন্ধ হয়ে আসত তনুজার। আজ থেকে আর তা হবে না। ডিভোর্স পেতে অসুবিধা হবে না চৈতির। যতদিন না বাচ্চাটা হচ্ছে বিশ্রামে থাকবে ও।
তারপর না হয় চাকরির চেষ্টা করবে। দুই মা মিলে ঠিক পারবে কুঁড়ি থেকে একটা ফুল ফোটাতে।