"রক্তের সম্পর্ক "
"রক্তের সম্পর্ক "
বিপিন রিক্সা চালিয়ে দিনান্তে যেটুকু টাকা পায় তাতে সংসার চলে। বিপিনের বৌ জয়া ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালানোর জন্য পরিচারিকার কাজ করে।
হঠাৎ লকডাউন ঘোষনা হওয়ায় বিপিনের মাথায় বাজ পড়ে। রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে গেল। ছোঁয়াচে রোগের কারনের বাড়ি মালিক জয়াকে কাজে আসতে নিষেধ করে।
বিপিন মেয়ের লক্ষীর ভাঁড়টা ভেঙে খুচরো পয়সা দিয়ে একটু চাল আনে। দু মুঠো ভাতে রাতে পেটের জ্বালা মেটাতে পারল। এরপর দুদিন অনাহারে কাটল।
সুজাতাদেবীর ছেলে দীর্ঘদিন রোগে ভুগছে। হঠাৎ শারীরিক অবনতি শুরু । স্বামী লকডাউনে আটকে আছে ভিনরাজ্যে। কাঁদতে কাঁদতে বিপিনের দরজায় এসে হাজির। হাতজোড় করে বলেন 'ভাই আমার ছেলেটিকে হসপিটালে নিয়ে চলো। ''
বিপিন রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। হসপিটালে ব্লাড ব্যাঙ্কে বি নেগেটিভ রক্ত নেই। লকডাউনের জন্য ডোনারা আসতে পারছে না। সুজাতাদেবী কেঁদে আকুল। দিদিমনিকে কাঁদতে দেখে বিপিন এগিয়ে এসে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে 'কি হয়েছে খোকার'?
ডাক্তার বললেন 'থ্যালাসেমিয়া, সময়ে রক্ত না দিলে বাঁচানো যাবে না।'
ডাক্তার এসে সুজাতাদেবীকে বললেন 'আপনার ভাগ্য ভালো ডোনার পাওয়া গেছে। '
সুজাতাদেবী দেখছেন বিপিন আর ছেলে পাশাপাশি শুয়ে আছে। বিপিনের রক্ত চ্যানেল দিয়ে বইছে খোকনের শরীরে।
সুজাতাদেবী বিপিনের হাত ধরে বললেন' আজ থেকে তোমার সাথে রক্তের সম্পর্ক হল ভাই। '
সুজাতাদেবী বিপিনের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন।
বিপিন ছলছল নয়নে প্রনাম করে বলছে -
'তুমি স্বয়ং অন্নপূর্ণা'