যদি প্রেম আসে জীবনে
যদি প্রেম আসে জীবনে
ফোনটার রিং শুনে সৌম্য বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। রিসিভ করার আগেই কেটে গেল। অচেনা নম্বর থেকে দশটা মিস্ কল। রিং ব্যাক করতে মধুর কন্ঠ ভেসে এল "ভালো আছো সৌম্য দা।"
হঠাৎ অচেনা নম্বর থেকে চেনা ডাকটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
" সৌম্য দা " শব্দটা যেন বিদ্যুত গতিতে সারা শরীরে একটা তরঙ্গ সৃষ্টি করল। সৌম্য কিছুক্ষণ পর মৌনতা ভেঙে বলল "পাপিয়া কেমন আছো?"
পাপিয়া আবেগের গলা চেপে বলল 'ভালো '।
সৌম্য বলল" এতবছর পরে আমার নম্বর পেলে কোথায়?"
কথা বলতে দুজনে ফিরে গেল অতীতে। পাপিয়া তখন নবম শ্রেণি। সরস্বতী পুজোতে শাড়ি পড়ে স্কুলে অঞ্জলিতে দিয়ে ব্যস্ত। সৌম্য ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে পাপিয়া দিকে। চোখে কাজল,খোলা চুল আর নীল রঙের শাড়িতে পাপিয়ার অপরূপ সৌন্দর্যে সৌম্যের মনে নব প্রেমে কুসুম ফুটেছে।
সৌম্য একটা লাল গোলাপ পাপিয়াকে দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। পাপিয়া লজ্জায় মাথা নত করে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করে।
সৌম্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ডাক্তারি পড়তে কলকাতা চলে যায়। পাপিয়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হল। স্থানিক দূরত্বে মন পাখি বিরহ যন্ত্রণায় কাতর। কলকাতা থেকে মাঝে মাঝে সৌম্য ছুটে আসে পাপিয়াকে দুচোখ ভরে দেখার জন্য।
সৌম্য ডাক্তারি পাশ করে পাপিয়ার সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন বুকে বেঁধে গ্রামে ফিরে আসে।
পাপিয়ার বাবা গ্রামের জমিদার পুত্রের সাথে বিয়ের ঠিক করেছে। প্রেম আর ছাতনা তলায় গড়াল না।
জমিদার ঘরে বিলাশবহুল জীবন যাপন করে কেটে গেল একটা বছর। ঘর আলো করে জন্ম হল একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের।
সন্তান লালন পালন করে সংসারে ঠেলা ঠেলতে বেশ কাটছিল সময়। স্বামী নারী আর মদে মেতেছে। বাড়ি ফিরলে গালিগালাজ আর মারধর শুরু হল। পাপিয়ার জীবনটা মরুভূতিতে পরিনত হল। স্বামীর শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ ক্যান্সার। চারিদিক ছোটাছুটি করে একটা ভালো ডাক্তারের খবর পেল। ডাক্তারের নাম ডঃ সৌম্যদীপ রায়।
ডাক্তারের নম্বরের ফোন করতে শুরু হল স্মৃতি রোমন্থন।ডাক্তার সৌম্যদীপ পাপিয়ার স্বামীর চিকিৎসার ভার নিলেন। তিনটা কেমো দেওয়ার পর শীর্ণ শরীর আহার গ্রহণ করতে ব্যর্থ হল। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
অকাল বৈধব্য নেমে এল পাপিয়ার জীবনে। সময়ের সাথে সাথে স্বামীশোক কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। ছোট্ট মেয়ের ভবিষ্যত গড়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পাপিয়া দিনরাত পরিশ্রম করে।
সৌম্যর মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে পাপিয়ার জন্য। ফাগুনের হাওয়া মনটাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অতীতে । ডাক্তারের পোশাকটা খুলে বেরিয়ে পড়ল পাপিয়ার বাড়িরদিকে।চারিদিকে দোল উৎসবে সকলে মত্ত। শ্বেত বস্ত্রে পাপিয়া একঘরে বসে চোখের জল ফেলছে।
একমুঠো লাল আবীরে পাপিয়া শূণ্য সিঁথিটা ভরিয়ে দিল। সৌম্য আবেগে জড়িয়ে ধরে বলে "আমার ভালোবাসা রঙে রাঙিয়ে দিলাম তোমাকে।"