পরিচয়
পরিচয়
" ও রিক্সা " বলে জোরে জোরে হাঁক দিল টিনা। রিক্সাওয়ালা একটু ভ্রু কুচছে তাকিয়ে বলল " আসছি দিদিমণি "। টিনা রিক্সাতে চেপে কানে হেড ফোনটা লাগিয়ে নিল।
অভি রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করছে টিনার জন্য। রিক্সা থেকে নেমে টিনা বলল "এই রিক্সা কত হলো"?
কাচাপাকা একগাল দাড়িওয়ালা মানুষটা বলল " দিদিমণি বিশটা টাকা দিন।"
অভি বলল "ও কাকা একঘন্টা পরে তুমি টিনাকে আবার বাড়ি পৌঁছে দিও।"
অভির মুখে "কাকা "ডাকটা শুনে রিক্সাওয়ালার প্রাণটা জুড়িয়ে গেল।
আজকাল "এই রিক্সা যাবি"শুনতে শুনতে কেমন যেন কানের পর্দাটাও পুরু হয়ে গেছে।
অভি আর টিনা শপিং করে একঘন্টা পরে আবার করিম চাচার রিক্সাতে ওঠে। করিমচাচা বলল" দাদাবাবু আপনাকে কোথায় নামিয়ে দেব"।
অভি বলে " দত্ত পাড়ার মোড়ে আর আমাকে এত আপনি আজ্ঞে করার প্রয়োজন নেই আমি আপনার সন্তানতুল্য"।
কথাটা শেষ হতেই করিমচাচার মনের ভেতরে সন্তান স্নেহ দোলা দিয়ে উঠল।
রিক্সা টানতে টানতে "বাবা তোমার নাম কি?" অভি বলল "অভিরূপ সবাই আদর করে অভি বলে ডাকে।"
-কাকা তোমার?
রিক্সাওয়ালা মুচকি হেসে বলে- "করিম"।
টিনা বিরক্ত হয়ে বলে "অভি তুমি কথা বলার লোক পাও নি!"
অভি বলে "আরে কি বলছো শুনতে পাবে যে"!
অভির সাথে করিম চাচার আলাপ জমে উঠল।
অভি অফিসের ঠিকানা দিয়ে বলল "করিমচাচা তোমার কিছু অসুবিধা হলে এসো।"
টিনা রাগে গজ গজ করতে বাসায় চলে গেল।
টিনা আর অভির বিয়ে ঠিক হয়েছে। দুই পরিবার বেশ ঘটা করে বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেছে।
বিশটা বছর আগে হসপিটালে অশোকবাবুর স্ত্রীর মৃত সন্তান হয় আর তার পাশের বেডের পেসেন্টের জমজ সন্তান হয়। অশোকবাবু স্ত্রীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য মমতাজ এক সন্তানকে অশোকবাবুর স্ত্রীর কোলে তুলে দেয়। নিজের সন্তানকে অশোকবাবুর হাতে তুলে দেওয়ার পর মমতাজ স্বামীর সাথে কাজের সন্ধানে অন্য শহরে চলে যায়।
সুসজ্জিত আলোয় ভরা অভির বাড়িতে মালপত্তর নিয়ে করিম চাচা হাজির।
অভির মা বললেন "করিম চারটি হাতে মুখে ভাত খেয়ে যাবে "।
নববধুর সাজে টিনাকে দেখে অশৌকবাবুর মন ভরে গেল। অশোকবাবু আত্মীয় সজ্জনের ভীড় ঠেলে করিমকে দেখে বুকে জড়িয়ে বলে "তোমার জন্য সন্তানসুখ উপলব্ধি করতে পেরেছি।"
করিম অবাক হয়ে টিনার দিকে চেয়ে আছে। বিশ বছর পর নিজের সন্তানের পরিচয় পেয়ে পিতৃহৃদয় সিক্ত হয়ে গেল।
সকলের আশির্বাদে টিনা আর অভির দাম্পত্য জীবন শুরু হল।