hena Mahato

Abstract Romance

3  

hena Mahato

Abstract Romance

যদি প্রেম আসে জীবনে

যদি প্রেম আসে জীবনে

3 mins
321



'তুমি যাকে ভালো বাসো, স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো..'



ফোনটার রিং শুনে সৌম্য বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। রিসিভ করার আগেই ফোনটা কেটে গেল। একটা অচেনা নম্বর থেকে দশটা মিস্ কল। কলব্যাক করতেই ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এল মধুর কন্ঠস্বর "ভালো আছো সৌম্য দা।"

হঠাৎ অচেনা নম্বর থেকে চেনা ডাকটা শুনে সৌম্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। 


" সৌম্য দা " ডাকটা যেন বিদ্যুত গতিতে সারা শরীরে একটা তরঙ্গ সৃষ্টি করল। সৌম্য কিছুক্ষণ পর মৌনতা ভেঙে বলল- "পাপিয়া কেমন আছো?"

পাপিয়া আবেগের গলা চেপে বলল -'ভালো আছি '।

সৌম্য বলল-" এতগুলোবছর পরে আমার কথা মনে পড়ল! আমার নম্বর কোথায় পেলে তুমি ?"


কথা বলতে বলতে দুজনে হারিয়ে গেল অতীতে।

সৌম্য রবীন্দ্র সঙ্গীতটা গুন গুনিয়ে গাইতে থাকে " 


"পুরানো সেই দিনে কথা সেকি ভোলা যায়..."


পাপিয়া তখন নবম শ্রেণি। পাপিয়া সরস্বতী পুজোতে শাড়ি পড়ে স্কুলে অঞ্জলিতে দিতে ব্যস্ত। সৌম্য পাপিয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে । চোখে কাজল,খোলা চুল আর নীল রঙের শাড়িতে পাপিয়ার অপরূপ সৌন্দর্য সৌম্যের মনে নব প্রেমের কুসুম প্রস্ফুটিত করেছে। 


সৌম্য একটা লাল গোলাপ পাপিয়াকে দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। পাপিয়া লজ্জায় নত মস্তকে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করে। 


সৌম্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে ডাক্তারি পড়তে কলকাতা চলে যায়। পাপিয়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হল। স্থানিক দূরত্বে মন পাখি বিরহ যন্ত্রণায় কাতর । কলকাতা থেকে মাঝে মাঝেই সৌম্য ছুটে আসে পরাণ পাখিকে দু'চোখ ভরে দেখার জন্য।


সৌম্য ডাক্তারি পাশ করে পাপিয়ার সাথে ঘর বাধাঁর স্বপ্নকে বুকে বেঁধে গ্রামে ফিরে আসে।


পাপিয়ার বাবা গ্রামের জমিদার পুত্র মদনলালের সাথে পাপিয়ার বিয়ের ঠিক করেছে। পাপিয়ার কোনো অনুনয় বিনয় পাপিয়ার বাবার হৃদয়কে স্পর্শ করল না। ভিন জাতির ছেলের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন আর পূরণ হল না। প্রেমের গাড়ি আর ছাতনা তলা পর্যন্ত গড়াল না। 


জমিদার ঘরে বিলাশমসবহুল জীবন যাপন করে কেটে গেল একটা বছর। জমিদারের ঘর আলো করে জন্ম হল একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের।


সন্তান লালন পালন করে আর সংসারের ঠেলা ঠেলতে ঠেলতে পাপিয়ার বেশ কাটছিল সময়। মদনলাল ক্রমশ নারী আর মদে মত্ত হয়ে পড়েছে । বাড়ি ফিরলেই স্ত্রীকে গালিগালাজ আর মারধর করতে শুরু করল। পাপিয়ার জীবনটা ধীরে ধীরে স্বামীসুখ থেকে বঞ্চিত হয়ে ঊষর মরুভূতিতে পরিণত হল। 


পাপিয়ার স্বামীর শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ ক্যান্সার। চিকিৎসার জন্য চারিদিক ছোটাছুটি করে একটা ভালো ডাক্তারের খবর পেল। 


ডাক্তারের নম্বরের ফোন করতে শুরু হল স্মৃতি রোমন্থন। ডাক্তার সৌম্যদীপ পাপিয়ার স্বামীর চিকিৎসার ভার নিলেন। পাপিয়া স্বামীকে তিনটা কেমো দেওয়ার পর শীর্ণ শরীর আহার গ্রহণ করতে ব্যর্থ হল।মদনলাল ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।


অকাল বৈধব্য নেমে এল পাপিয়ার জীবনে। সময়ের সাথে সাথে সে স্বামীশোক কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। ছোট্ট মেয়েটার ভবিষ্যত গড়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পাপিয়া দিনরাত পরিশ্রম করে।


 সৌম্যর মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে পাপিয়ার জন্য। ফাগুনের হাওয়া মনটাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অতীতে । সেই প্রথম দেখা, প্রথম প্রেমের ছোঁয়া স্মৃতির কবর খুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে বারে বারে।


সৌম্য হসপিটাল থেকে ফিরে ডাক্তারের পোশাকটা খুলে বেরিয়ে পড়ল পাপিয়ার বাড়িরদিকে। চারিদিকে দোল উৎসবে সকলে মত্ত। শ্বেত বস্ত্রে পাপিয়া একঘরে বসে চোখের জল ফেলছে।


একমুঠো লাল আবীর দিয়ে সৌম্য পাপিয়ার শূণ্য সিঁথিটা ভরিয়ে দিল। পাপিয়া বলে ওঠে " একি করলে আমি যে বিধবা !"

সৌম্য আবেগে পাপিয়াকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু এঁকে বলে " সারাজীবনের মতো আমার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিলাম তোমাকে।" 

 "আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী..." 

           

       


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract