স্বার্থ
স্বার্থ
লকডাউন চলছে। একদম প্রথম দিকে তখনও ভ্যাকসিন বাজারে আসেনি। সুতপার অফিস বন্ধ সুতপার বর অন্তু মাঝেমধ্যে অফিস যাচ্ছে । বাকি সময় বাড়িতে। সুতপা র মেয়ে রিনি ক্লাস ফোরে পড়ে অনলাইন ক্লাস চলছে । এক ঘেয়ে ভাবে চলছে সব কিছু ।
প্রতিদিন একি ভাবে চলতে চলতে রিনি তো খুবই বিরক্ত। সুতপা মাঝেমধ্যে কলিগদের ফোন করে এটা সেটা কথা চলে। অন্তু খালি টিভি চালিয়ে বসে থাকে। আর আপডেট যা শোনে সব সুতপাকে জোরে জোরে সোফায় বসে বলতে থাকে আর সুতপা রান্না ঘর থেকে হুঁ হ্যাঁ এ অবধি।
সেদিন সকাল বেলা সুতপা চিৎকার করে বলে উঠলো, "টিভিটা বন্ধ করবে সারাদিন অসহ্য , কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।"
অন্তু বলে উঠলো-" টিভিতেই এখন সব খবর না হলে জানবো কিভাবে বলতো।"
সুতপা রান্নাঘরে থেকে এসে, " এই শোনো !!এত জেনে হবে কি ?? কাপড়জামা গুলো কেচে দাও।
এত কাজ আমি পারবো না, করোনা করোনা করে তো কাজের মাসিদের ছুটি। এদিকে এত কাজ সামলানো যায় আর তুমি শুধু টিভি দেখে যাচ্ছো।" বাহ্"!!
অন্তু --"মানেটা কি বাজার টাতো অমি ই করলাম নাকি।"
সুতপা --" হ্যাঁ হ্যাঁ আমায় উদ্ধার করলে, যেনো সব কি আমি একা খাবো নাকি !!"।
রিনি ওর ঘর থেকে ছুটে এসে বলে উঠলো, " ওহ্ তোমরা এত কথা কি বলছো?? আমার অনলাইন ক্লাস শুরু হবে এবার, অসুবিধে হবে ওহ্"!
সুতপা অন্তু দিকে তাকিয়ে ডলে উঠলো, "শোনো.. ওদের স্কুল থেকে গাদা গাদা কাজ দিচ্ছে গত সপ্তাহে সব আমি করিয়েছি এবার তুমি করবে বুঝতে পেরেছো।"
অন্তু মাথা নাড়লো।
টিভির রিমোট টা সুতপা নিয়ে টিভি বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলো।
অন্তু দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
অন্তুর ফোনটা বেজে উঠলো।
অন্তু ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে সোফা থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়ালো।
কয়েকদিন পরে....
সুতপা খেয়াল করছে অন্তু ভীষণ চিন্তায় আছে। সুতপা র সন্দেহ হতে শুরু হলো হঠাৎ কি হলো অন্তুর চিন্তার কি কারণ।
সন্ধেবেলা সুতপা চা নিয়ে অন্তুকে দিতে যাবে তখন অন্তু গম্ভীর গলায় বললো, " শোনো সুতপা, তুমি রিনি কে নিয়ে কটা দিন ওই বাড়িতে যাও বুঝলে।"
ওই বাড়ি মানে অন্তুর বাবা মা র যে বাড়িতে থাকে ওটা শহর থেকে বেশ ভিতরে, অন্তু পরে সুতপা আর রিনি নিয়ে নতুন বাড়ি করেছিলো রাস্তার কাছে।
সুতপা বলে উঠলো," কেন ?কেউ অসুস্থ হয়েছে ওখানে , মার সাথে তো গত কালই কথা হলো কই কিছু বলেনি তো তাছাড়া এই সময় এই লকডাউনে ওইদিকে যাওয়াও তো মুস্কিল।"
অন্তু বলে উঠলো, " না আসলে একটা ব্যপার হয়েছে।"
সুতপা--"কি ব্যাপার? কি.."
অন্তু --"তোমার নন্দী কাকুকে মনে আছে তো!"
সুতপা--"হ্যাঁ কেন থাকবে না, তোমার যখন মধ্যপ্রদেশে এ পোস্টিং ছিলো। আমি তখন প্র্যাগনেন্ট ওই নন্দী কাকিমাই তো আমায় রান্না করে দিতো কত সাহায্য করেছে। ওদের কি ভোলা যায় ।
কাকিমা পরে রিনিকে নিয়ে কতবার যেতে বলেছিল। যাই করে যাওয়াই হলো না তারপর শুনেছিলাম কাকিমাতো মারা গেলো , কাকু তো একাই এখন, তবে নাকি মেয়ের কাছে এসে থাকে কাকু এই উওর কলকাতার দিকে ফোন করে একবার বলেছিল তো তোমাকে!! , আচ্ছা সকাল থেকে কি হলো তোমার একবার বলছো ও বাড়িতে যেতে ।একবার বলছো নন্দী কাকু... কি হয়েছে বলতো ব্যপারটা কি?"
অন্তু বলে উঠলো, "নন্দী কাকু আমাদের এখানে আসতে চাইছে।"
সুতপা অবাক হয়ে বলে উঠলো,
"মানে এই লকডাউনে এই করোনার মধ্যে কেন? কি হয়েছে.. সেই মধ্যপ্রদেশ থেকে!!"
অন্তু--"সেটাই তো জানি না কাল ফোন করে বলছিলো।"
সুতপা--"তুমি কি বললে ?"
অন্তু--"আমি সব শুনেছি তারপর এখনো কিছু বলিনি, কি বলবো বুঝতে পারলাম না।"
সুতপা--"ওনার মেয়ের বাড়ি থাকতে আমাদের এখানে কেন?"
অন্তু--"বলেছিলাম মেয়ের কথা তখনই ত উনি পুরোনো দিনের কথা তুললেন, কাকিমা তোমায় হেল্প করেছিলো ওই সব কথা সেন্টিমেন্ট করে দিলো তারপর কী বলবো কিছুই বুঝতে পারলাম না।"
সুতপা বলে উঠলো," উনি এখন কোথায় থাকে কিছু ই তো ঠিকমতো ছাই জানি না। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশ থেকে উনি এসেছেন নাকি উওর কোলকাতায় কিছু তো তুমি জানতেই পারোনি।
দ্যাখো এখন এসব সেন্টিমেন্ট হয়ে লাভ আছে কোনো?? । কোথায় কি জ্বর টর এসছে কিনা!! নন্দীকাকুর গলাটা শুনে কিছু বুঝতে পারলে?? কাশছিলো উনি।"
অন্তু বিরক্তি তে বলে উঠলো,
"ওহঃ সুতপা তোমায় নিয়ে আর পারা যায়। এভাবে ফোনের মধ্যে কিছু কি বোঝা যায়!!"
সুতপা বললো "তা তুমি কাটাতে পারতে , কিছু একটা বলে ম্যানেজ করতে! জানো না এখন কি চলছে , তুমি কি বলছো নন্দী কাকু এখন এখানে আসবে , আমি তো ভাবতেই পারছিনা।"
অন্তু -- "স্বার্থপরের মতো কথা বলো না। কি বলতাম বয়স্ক মানুষ মুখের ওপর বলা যায়। তুমি হলে পারতে??"
সুতপা বললো, "নিজের ছোট মেয়ে বাড়িতে আছে তার কথাটা ভেবে পারতে হতো। আমি স্বার্থপর এই কথা তুমি বলতে পারলে আমি তো অস্বীকার করছি না যে ওনারা একদিন আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন কিন্তু এই সময় এই পরিস্থিতিতে উহঃ...".
সুতপা অন্তুর এরকম কয়েকটা দিন ঝগড়া চলছে।
তারপর দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন পরেই সেদিন সকাল নন্দী কাকু আসছেন তেমন তাই জানালেন। তারপর চলেই এলেন। ট্যাক্সির ভাড়া মেটাচ্ছে। সঙ্গে বড় ব্যাগ।
জানলা দিয়ে সুতপা দেখতে পেয়েই তাড়াতাড়ি মাস্ক, স্যানিটাইজার বার করে অন্তুর হাতে দিয়ে বলল, "শোনো.. ওনাকে ওই আমাদের বাইরের বাথরুমে নিয়ে যাবে প্রথমে, তারপর ঘরে নিয়ে ঢুকবে বুঝতে পারছো।
অন্তু--" হ্যাঁ জানি আমি ।এমন করছো যেন আমি মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা পৃথিবীর কোনো খবর জানিনা।
বলে বারান্দা দিয়ে ঢোকার দরজা খুলতে যাবে অন্তু
ওমনি সুতপা , "আচ্ছা তোমায় যে মাক্সটা দিলাম কি.. সেটা হাতে ব্যাগ করে ঝোলানো র জন্য বলো?? পরছো না কেন?"
অন্তু---" তাড়াতাড়ি হাসতে হাসতে পরে নিল।"
এরপর...
নন্দী কাকু সোজা ঘরে ঢুকে এলো আর তারপর সোফায় এসে বসলো। অন্তু কিছুই করতে পারলো না , সুতপা রেগে গিয়ে বারবার তাকাচ্ছে অন্তুর দিকে। অন্তু সুতপাকে বোঝাতে চেষ্টা করে চলেছে।
ফিসফিস করে বলছে" কিছুই করার ছিল না সোজা এসে গেল কি করবো, প্লিজ প্লিজ !!
রাগ করো না।"
সুতপা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো ফিসফিস করে, " তুমি তো তোমাকে দিয়ে হবে না জানতাম। এখন সব স্যানিটাইজ করতে হবে।"
নন্দী কাকু বলে উঠলো, " কি সুতপা কেমন আছো?" তোমাদের মেয়ে কোথায় দেখছি না।"
সুতপা --"দূর থেকে হ্যাঁ কাকু ভালোই আছি , মেয়ে অনলাইন ক্লাস করছে।"
তারপর সুতপা জিগ্গেস করলো" কাকু আপনার মেয়ে কেমন ..
সঙ্গে সঙ্গে নন্দী কাকু সুতপা কে থামিয়ে আমার জন্য এক কাপ চা আনতে পারো। আর অন্তু তোমাদের টয়লেট টা। "
সুতপা ফিসফিস করে ইশারা করছে অন্তুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু নন্দী কাকুকে অন্তু বাইরের বাথরুমে নিয়ে যাবে বলে দেখতে যাবে ওমনি নন্দী কাকু নিজে থেকেই ও "ওই তো কিচেন তোমাদের তার পাশের টাই টয়লেট ... । তোমাদের বাড়িটা ছোটর ওপরে বেশ সুন্দর খুব ভালো বলতে বলতে ঢুকে গেল।
সুতপা অন্তু দুজনেই বিরক্ত হয়ে বসে পড়লো ডাইনিং চেয়ারে।
রিনি এসে বললো, " একি তোমরা এখানে বসে বসে কি করছো । "
সুতপা ---"একদম ঘর থেকে বের হবে না। ঘরে যাও।"
রিনি --" ওই দাদুটা এসে গেছে?"
অন্তু --"রিনি ঘরে যাও আমাদের বিরক্ত করো না। "
বাথরুম থেকে নন্দী কাকু বেরিয়ে বললেন , "এই তো দিদি ভাই । এসো এসো তুমি নিশ্চয় আমায় চিনতে পারছো না। , এসো তোমার সাথে আলাপ করি।"
সুতপা ---"না না কাকু আপনি বিশ্রাম করুন ওর তো ক্লাস আছে অনলাইন এ। "
রিনি--" মা আমার তো ক্লাস শেষ যাই না।"
সুতপা বললো, " রিনি ভেতরে যাও দাদু এখন খাওয়া দাওয়া করবেন। "
রিনি ভেতরে ঢুকে গেল।
অন্তু আর সুতপার ফিসফিস কথা আর মাঝে মাঝে নন্দী কাকু এসে পড়া এভাবেই চলছে কয়েকটা দিন।
রাত তখন প্রায় ১টা।
নন্দী কাকু র ঘরে আলো বন্ধ।
রিনি ঘুমিয়ে পড়েছে।
সুতপা ফিসফিস করে অন্তুকে বললো," চলো ...."
অন্তু হাই তুলতে তুলতে , "কোথায় ...
সুতপা ফিসফিস, " আরে ওঠো তো...
অন্তু ধড়পড় করে উঠলে বললো, "এখন রাত ১টা বাজে এখন তুমি কোথায় যাবে সুতপা এই লকডাউনে।"
সুতপা বললো,
"ওহ তুমি না সত্যি নন্দী কাকুর ফোনটা চুরি করবো। "
অন্তু অবাক চোখে তাকিয়ে, " কেন..?? তুমি চুরি করবে কেন??"
সুতপা, ---"ওনার ফোন থেকে জানবো ওনার মেয়ের ফোন নাম্বার টা আর ছেলে তো মুম্বাই না দিল্লী কোথায় একটা তে থাকে তারপর ওদের ফোন করে জানতে ই হবে কি ব্যপার নন্দী কাকু তো কিছু ই বলেছেন না । "
অন্তু মাথা নাড়লো তারপর বললো, " আচ্ছা যদি কাকু জেগে যায়। তাছাড়া ফোনটা কোথায় রেখেছে তুমি জানো।"
সুতপা বলে উঠলো, হ্যাঁ রে বাবা হ্যাঁ ওই তো বালিশে এ পাশে আছে আমি জল দিতে গিয়ে দেখে এসেছি ।" "
অন্তু-- "আচ্ছা চলো...।"
দুজনে বেরিয়ে পড়লো নন্দী কাকু র ফোন চুরি করতে ।
একবার হালকা জেগে গেছিলো নন্দী কাকু তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।
তখন ই সুতপা ফোন টা নিয়ে বেরিয়ে এলো।
ফোন টা নিয়ে মেয়ে র নাম্বার টা খুজছে
অন্তু বললো, "ওনার ছেলের নাম তো সুধীর তুমি এন দিয়ে কি খুজছো?"
সুতপা বললো, "ওহ ভুলে গেছো ওনার মেয়ের নাম তো নীলিমা।"
অন্তু --"হ্যাঁ তাই তো!!"
দুটো নাম্বার লিখে নিলো ওরা।
এবার ফোনটা আবার জায়গা মতো রাখার পালা। সুতপা বলে উঠলো, "দ্যাখো আমি ফোন টা তুললাম এবার তুমি রাখবে।"
অন্তুর টেনশান এ হাত পা ঠাণ্ডা করে বলে উঠলো, "এসব কাজ আমার দ্বারা হবে না। "
সুতপা অনেক সাহস জোগালো বললো, " অন্তু তুমি সেই পাহাড়ে উঠে ছিলে মনে আছে তুমি কত্ত সাহসী।"
অন্তু খিল খিল করে হেসে উঠলো আর বললো, "পাহাড়ে ওঠা আর এইই ফোনটা রাখা এক হলো এই সব চুরি বিশারদ তুমি আমার দ্বারা হবে এ না।"
সুতপা--" মানে টা কি !! আমি চুরি করার বিশারদ।"
এরপর মাঝরাতে দুজনের ফিসফিস ঝগড়া চলছে। তারপর শেষমেশ অন্তু যাচ্ছে আর সুতপা পিছনে ছিলো।
অন্তু এত নার্ভাস যে পাপোশ এ পা ঠোক্কর লাগিয়ে পড়ে গেলো মোবাইল টা হাত ফসকে মেঝেতে ঠিকরে বিছানার পাশে টেবিলের নীচে কাছাকাছি।
নন্দী কাকু উঠে পড়লো আর চোর চোর বলে চেঁচামেচি শুরু করে দিল।
সুতপা শেষে পুরোটা সামলাতে এলো আর নন্দী কাকু কে শুয়ে পড়তে বললো।
নন্দী বলে উঠলো," এত রাতে তোমরা এখানে কি করছো?"
সুতপা আবার সামলাতে গিয়ে এক মিথ্যে বললো, "আসলে কাকু আমার মাথা ব্যাথা করছে ভীষন।"
তখন অন্তু বললো, "হ্যাঁ ঠিকই তো তাই তো এই ঘরে বামটা নিতে এসেছিলাম আপনি ঘুমচ্ছেন তো তাই বিরক্ত করতে চাইনি।"
বলেই দু'জন এ চলে এলো।
একদিন পর সুতপা ঠিক করলো এবার ফোন করবে। নাম্বার গুলোতে।
সকাল বেলা তখন ও কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। নন্দী কাকু ভীষণ রকম ভাবে সুতপা র দিকে নজর রাখে বিভিন্ন প্রশ্ন করে ওই দিন রাতের ঘটনার পর তাই আর সুতপা র ফোন করাই হয়নি। আজ ঠিক করলো সুতপা ফোন করবেই সুতপা নিজের ফোনটা ঘর থেকে আনতে যাবে তখনই ঘরে গিয়ে জানতে পারলো অন্তু বললো, তার জ্বর এসছে এদিকে রিনি তখনোও ঘুমচ্ছে।
জ্বর এসছে শুনেই সুতপা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।
অন্তু বললো, "শুধু জ্বরই এসছে আর কিছু হচ্ছে না।
সুতপা--" তখন ই বলেছিলাম বাড়িতে বাইরের লোক কে এনো না এখন বোঝো.."
অন্তু বললো, " আচ্ছা নন্দী কাকু তো সুস্থ।"
সুতপা বললো, " দিন রাত তো এত টিভি দ্যাখো আর এটা দেখোনি সিম্পটম ছাড়াও হচ্ছে ব্যপার টা।"
অন্তু সুতপার হাত ধরে, " কি হবে সুতপা, তুমি কি বলছো।"
সুতপা--" একদম ছোঁবে না। এই নাও মাক্স পরো।"
রিনি কে ঘুম থেকে টেনে তুলে বললো, রিনি চিলেকোঠার ঘরে চলে যাও তোমার বই খাতা নিয়ে।
রিনি--" কেন মা আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে।"
সুতপার আবার জোরে বললো।
রিনি বাবার কাছে যাবে তখন রিনিকে সুতপা যেতে দিলো না ।
আর রিনি চিলেকোঠায় যাচ্ছে এটা নন্দী কাকু দেখতে পেয়ে জিগ্গেস করলো রিনি বললো,
"বাবার জ্বর দাদু তাই আমি চিলেকোঠায় যাচ্ছি।"
ভীষন টেনশান এর আবহাওয়া তেরি হলো।
নন্দী কাকু এই সময়টায় সুতপাকে সাহায্য করলো বাজারে যাওয়া এবং ওনার পরিচিত ডাক্তারকে ফোন করে ওষুধ কিনে এনে অন্তুকে খেতে বললো।
এভাবে চললো। অন্তুর জ্বরটা সাধারণ ছিলো চার পাঁচ দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে গেলো।
পরিবেশটা আবার স্বাভাবিক হচ্ছে।
রিনির সঙ্গে ধীরে ধীরে নন্দী কাকু দারুন বন্ধুত্ব হলো। রিনি এই কয়েকটা দিনেই নন্দী দাদু র ভক্ত হয়ে উঠেছে।
সব কিছু ঠিক ঠাক চলছিলো।
এবার এতগুলো দিন পরে সুতপা সেদিন দুপুরে ফোন করলো নন্দী কাকুর মেয়ে কে। কিন্তু ওদিকে থেকে সব শুনে তো অবাক হলো সুতপা।
নন্দী কাকুর মেয়ে বললো," বাবা আমার কাছে নয় দাদার বাড়ি আছে দিল্লি তে। তারপর এই মিথ্যা কথা টা বলেই নন্দী কাকু র মেয়ে কাজ আছে বলে এড়িয়ে গিয়ে তড়িঘড়ি ফোন রেখে দিল।"
এরপরই সুতপা ফোন করলো নন্দীকাকুর ছেলে কে।
ছেলে তো দিব্যি হেসে হেসে কথা বলছে। তারপর ছেলেও বললো, "বাবা এখন বোনের কাছেই থাকে।"
সুতপার তো মাথাতেই এলো না এত মিথ্যা বলছে কেন এরা?
সুতপা অন্তুকে সব কিছু জানালো আর ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল এই ধরনের কথা নন্দী কাকুর ছেলে মেয়ে কেন বললো?
সেই আলোচনাটা নন্দীকাকু শুনে ফেললো।
নন্দী কাকু সুতপাদের ঘরে এলো। সুতপা অন্তু দুজনেই চিন্তা য় পড়লো নন্দী কাকু কি সবটা শুনেছেন তাহলে কি বলবে।
সুতপা নন্দী কাকুকে বললো, "আমরা আসলে সত্যি খুব কৌতুহলে ছিলাম তাই । আপনি তো কিছুই বলেনি আমাদের।"
নন্দী কাকু গম্ভীর হয়ে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই।
অন্তু--" তোমার সবটাতেই বাড়াবাড়ি, বয়স্ক মানুষ নন্দীকাকুর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।"
সুতপা--" ওমনি আমার নামে চাপালে সবটা?
তোমার কোন কৌতুহল ছিল না।"
অন্তু --"আচ্ছা এবার চলো নন্দী কাকু র সাথে কথা বলতে হবে তো নাকি!!"
নন্দী কাকু সোফায় একা বসে ছিলো ।
সুতপা নন্দী কাকুর কাছে ক্ষমা চাইলো বললো, দেখুন আসলে আমাদের সত্যি খুব কৌতুহল হয়েছিল তাছাড়া এখন এই লকডাউন চলছে আপনি বাইরে থেকে আসবেন সেটা ঠিক মানতে পারিনি আর আপনি তো অন্তুকে কিছু ই বলেনি তাই..."
অন্তুও বললো, "কাকু প্লিজ... কিছু মনে করবেন না।"
নন্দী কাকু এবার বলতে শুরু করলেন,
"কি বললবো তোমাদের নিজের ছেলে মেয়ে র কথা বলতে ভীষণ বাজে লাগে ওদের আমি আর নিজের সন্তান মনে করি না। মধ্যপ্রদেশে র বাড়ি জমি তোমরা তো জানো। নীলিমা র বিয়ে দিলাম কোলকাতা য়।সুধীর ও দিল্লী চলে গেলো বউমাকে নিয়ে। আমি আর তোমাদের কাকীমা ওখানে একা একা কতবার ওদের আসতে বলতাম ওরা কাজের ব্যস্ততা দেখাতো আর খালি সম্পত্তি ওদের নামে লিখে দিতে বলতো বারবার এই নিয়ে ফোনে কথা কাটাকাটি হয়েছে ওদের বক্তব্য আমরা ওদের জন্য যেনো কিছু ই করিনি অথএব এখন সম্পত্তি টাকা ওদের দিয়ে আমি কোনো বৃদ্ধাশ্রমে থাকি এটাই ওদের ইচ্ছে। এত স্বার্থপর নিজের ছেলে মেয়ে হতে পারে ভাবিনি কোনো দিন। তোমাদের কাকীমা ছেলেয়মেয়ে দের চিন্তা য় চিন্তা য় অসুস্থ হলো। তারপর মারা গেলো । তারপর ও সেই একি কথা ওদের। আমি যেনো সমস্ত সম্পত্তি ওদের নামে দিয়ে বৃদ্ধশ্রমে চলে যাই। নীলিমার ছেলের জন্মদিনে আমায় ডেকে ছিলো কিন্তু এখানে এসে তারপর এরকম পরিস্থিতিতে আমি আর মধ্যপ্রদেশ ফিরতে পারিনি। আর নীলিমা আমায় এই সুযোগে চাইছিল সম্পত্তি লিখিয়ে নিতে। আমি বুঝতে পেরে এখানে আসার জন্য অন্তুকে বলি। ভাবলাম যদি তোমরা আমায় আশ্রয় দাও । একদিন তোমাদের কাকীমা সুতপাকে মেয়ের মতো দেখেছিলো ।তাই ভেবেই আমি..".. বলতে বলতে নন্দী কাকু কেঁদে ফেললেন। চোখের জল মুছতে মুছতে অসহায়ের মতো নন্দী কাকু তাকিয়ে আছেন সুতপা অন্তু র দিকে। আর ওরাও সব ভাষা হারিয়ে গেছে। ওরাও ভাবতেই পারে না নীলিমা সুধীর এতটা খারাপ হতে পারে।
অন্তু বলে উঠলো, " নন্দী কাকু কে আশ্বাস দিয়ে বললো," আপনি যতদিন ইচ্ছা থাকুন এখানে। কোনো অসুবিধা নেই কাকু এত কিছু হয়েছে কখনো আগে বলেন নি। কাকিমা র মৃত্যু খবরটা বলেছিলেন কিন্তু এত কিছু চলছে এসব কথা জানান নি।"
সুতপা বললো, " অজান্তেই আপনাকে কষ্ট দিলাম । তবে নীলিমা, সুধীর এত বদলে গেছে। আমি যখন দেখেছিলাম তখন তো কোনো খারাপ আচরণ দেখি নি , বেশ ভালো ছিল তো ওরা ।কত সুখী পরিবার মনে হতো আপনাদের।"
নন্দী কাকু বলে উঠলো, "স্বার্থপর হয়ে উঠেছে ওদের কাছে আমি এখন বাতিল। শুধু টাকা টাই বড়ো।"
অন্তু --"সেতো বুঝতে ই পারছি নইলে আপনি কোথায় কিভাবে আছেন সে খোঁজ টুকু নেবার প্রয়োজন করছে না ওরা ।আমি তো অবাক হচ্ছি। সুতপাকে ফোনে দুজনেই মিথ্যে বললো। খুব খারাপ লাগছে।"
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো দিন।
লকডাউন বাড়তে থাকে।
এরপর পুজো এলো ।
রিনির খুব ই মন খারাপ ।
নন্দী কাকু রিনিকে বললো, "দিদিভাই চলো আমরা বরং এবার পুজোটা ঘরেই সেলিব্রেট করবো ঘরটা সুন্দর করে ডেকোরেট করি।"
রিনির সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়েছে নন্দী কাকুর।
সুতপা অন্তু র নন্দী কাকু কে নিয়ে বেশ মজায় কাটছিল সময়টা।
এরপর বছর ঘুরতে চলেছে লকডাউন অনেক টাই শিথিল হয়েছে।
এই সময় নন্দী কাকু ফিরে গেলো মধ্যপ্রদেশ।
আর অন্তু , সুতপা এখন নিয়ম করে ওনার খোঁজ নেন। কিন্তু নীলিমা বা সুধীরের সাথে যোগাযোগ নেই।
সেদিন হলো কী নন্দী কাকুর হঠাৎ বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো।
নন্দী কাকুর যিনি রান্না করেন ইদানিং ওই মেয়েটি নাম লোপা ।
নন্দী কাকুকে ধরে ঘরে এনে বসালো বারবার বললো "আচ্ছা আপকি ল্যাড়কা কো ফোন কিজিয়ে না। কনসি ডক্টর কে পাস জানা চাইয়্যাএ।"
নন্দীকাকু সে ভাবে কথাই বলতে পারছেন না।
লোপা শেষে নন্দী কাকুর মোবাইল থেকে অন্তুকে
ফোন করলো।
ওপাশ থেকে অন্তু ফোন ধরলো। লোপা সব কথা জানালো । অন্তু বললো , " তোমার পরিচিত কাউকে সঙ্গে করে নিয়ে ওনাকে কে হসপিটালে ভর্তি করো আমরা তাড়াতাড়ি পৌছাতে চেষ্টা করছি আর ডক্টরের সাথে আমার ফোনে কথা বলিয়ে দিও ।"
লোপা সেই মতো কাজ করলো। লোপা এবং তার হাজবেন্ড ধীরু মিলে নন্দী কাকু কে হাসপাতালে ভর্তি করলো।
এদিকে সুতপা কে অন্তু বললো, আমাদের খুব শিগগিরই যেতে হবে।
সুতপা বললো, " কিন্তু রিনিকে নিয়ে ওখানে তার চেয়ে বরং রিনিকে ওই বাড়িতে রেখে আসি রিনি কয়েকটা দিন ওর ঠাকুমার কাছে থাক না । "
অন্তু বললো, "না না রিনি পারবে না থাকতে শোনো আমরা সবাই যাব।"
ওদিকে লোপা আর ধীরু হাসপাতালে নন্দী কাকু র সাথে ই আর ফোনে অন্তুর সাথে যোগাযোগ করছে ।
তিনদিন পরে...
নন্দী কাকু এখন খানিকটা ভালো নন্দী কাকু সবটা শুনলো লোপার কাছে।
নন্দী কাকু এবার লোপাকে বললো , "তুমি বাড়িতে থেকে আমার আলমারি থেকে টাকা নিয়ে এসো হাসপাতালে র খরচ তোমরা আর কত দেবে এভাবে।"
লোপা বললো, "নেহি নেহি আপকি ল্যাড়কা অন্তু তো ডক্টর সে সব বাতে করলি ওনারা জানেন টাকা পয়সা হামি কুছু জানি না ও আমার স্বামী ধীরু ও জানে টাকার বন্দোবস্ত ও অন্তু বাবু সব ওদের বলেছেন। ওনারা তো আসছেন এখানে।"
নন্দী কাকু বললো, " ওরা আসবে ভীষণ খুশি হলো। তারপর বললো, তাহলে আমার মোবাইল টা নিয়ে আসো একবার।"
লোপা বাড়িতে গেলো এদিকে নন্দী কাকু র ফোনটা বাড়িতেই পড়ে আছে। আর এই কয়েকটা দিনেই আবার সুধীর ফোন করেছিল এত দিন বাদে।
লোপা ফোনটা তুলে চার্জে দিয়ে অন করলো তারপর সুধীরের মিস কল দেখে কল ব্যাক করলো।
ওদিক থেকে "কি ব্যাপার বলতো বাবা ?
এত দিন ধরে ফোন করছি ফোন তুলছো না কেন? "
লোপা একটু অবাক হয়ে , লোপা তো অন্তুকেই নন্দী কাকু র ছেলে ভেবেছিলো।
তাছাড়া এতদিনে কোনো দিন সে ভাবে যোগাযোগ করতে লোপা কাউকে দেখেনি।
সুধীর নীলিমা কেউ ফোন তো করেওনি।
লোপা বললো, "আপ কন্ জ্যাঠা বাবু তো হসপিটালে ভর্তি আছে ।উনকা তাবিয়েৎ ঠিক ছিলো না। "
সুধীর --"মানে বাবা অসুস্থ ..তুমি কে?"
লোপা --"আমি জ্যাঠাবাবুর এখান এ কাম কাজ করতি হু পার উনকা ক্যায়া দো ব্যটা হ্যায় । এক তো জানতা হ্যায় ওতো কলকাতা সা আ রেহী হ্যায়।
সুধীর বললো, " শান্তা মাসি তো কাজ করতো ? আর কলকাতায় তো আমার বোন থাকে কি সব বলছো তুমি?"
লোপা--"এসব হামি জানি না। হামি ফোন রাখছি এখন জ্যাঠা বাবুর কাছে যেতে হবে। উনকা তাবিয়েৎ ঠিক হলে উনসে পুছ ল্যানা।"
সুধীর এবার তাড়াতাড়ি করে নীলিমা কে ফোন করলে সে তো কিছুই জানে বললো।
সে বললো শান্তা মাসি কাজ ছেড়ে দিয়েছিলো তখন লোপা নামে একজনকে বাবা কাজে রেখে ছিলো কিন্তু তারপর এত দিন কি হয়েছে সে কিছুই জানে না।
সুধীর তো ভীষণ রেগে নীলিমা কে খুব বকাবকি করে বললো, " বাবা শেষ বারের জন্য তোর বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছিলো তুই একটা খোঁজ ও নিস নি। ছিঃ ছিঃ।"
নীলিমা-- " তুই কোন কর্তব্য পালন করে ছিস। তোর জন্য মা অসুস্থ হয়েছিল এবার তোর জন্য বাবা আজ অসুস্থ। তাছাড়া বাবা আমায় বলেছিল তার খোজ নেবার কোনো দরকার নেই। আর আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ঠিকই। আমি আমাদের মধ্যপ্রদেশের পাশের বাড়িতে যে মিঠুরা থাকতো ওই কাকিমা র কাছে জেনেছিলাম বাবা নাকি অনেক দিন পর মধ্যপ্রদেশে ফিরে এসেছিলো তাই আর চিন্তা করিনি।"
সুধীর --" কি অদ্ভুত কথা বাবা তোর বাড়ি থেকে রেগে বেরিয়ে গেছিলো আর তুই বাবার খোঁজ নিলি না। গোটা লকডাউন বাবা কোথায় ছিল সেটা ? সেটা । আর মিঠুদের ফোন করেছিস তোর বুদ্ধি হাস্যকর এক্কেবারে। এতদিনে বাবাকে একটা ফোন করতে পারতিস তো!!
নীলিমা--" তুই কি করছিলিস? বাবা কি আমার একার তোর দায়িত্ব নয়।"
দুজনে মধ্যে ভীষন ঝগড়া চলতে থাকে। তারপর দুজনেই মধ্যপ্রদেশ আসবাব সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে সুতপা অন্তু দুজনেই রিনিকে নিয়ে চলে আসে। নন্দী কাকু হসপিটাল থেকে বাড়িতে আসে। সুতপা নন্দী কাকু র সেবা করতে শুরু করে। বেশ খুশি তে ছিল নন্দী কাকু। রিনিকে পেয়ে খুব খুশি।
রিনি বলে ," দাদু এই বাড়িটা খুব সুন্দর , কি সুন্দর ফুলের বাগান এখানে। আমি তো এখানে সব স্কুলের ছুটি তে আসবো।"
নন্দী কাকু--" হ্যাঁ দিদিভাই তুমি আসবে। "
সুতপা বললো, "কিন্তু কাকু আপনি এই একা একা এখানে আমাদের ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। হঠাৎ কিছু হলে তখন তো ওত দূর থেকে আসাও মুস্কিল।"
অন্তু বললো, হাঁ কাকু চব্বিশ ঘণ্টা থাকার একজন লোকের বন্দোবস্ত করে তারপর আমারা যাবো।
নন্দী কাকু -- না না চিন্তা করো না লোপা আর ধীরু খুব ই ভালো ওরাই পারবে আমায় সাহায্য করতে।
লোপা এদিকে সুধীরের সাথে ফোন এর কথাটা বলতে ভুলেই গিয়েছিল সবাইকে।
এরপর....
সুধীর এসে পৌছালো, তারপর নীলিমা ও।
অন্তু সুতপাকে দেখে তো অবাক।
দুজনেই ওদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করলো।
বললো, "আমাদের বাবাকে ভুলিয়ে নিজের করে নেবার চেষ্টা করছো আর এই সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছো।
তোমরাই তো সেই আগের বছর ফোন করে বাবার খোঁজ নিয়েছিলে তখনই বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা মতলব আছে তোমাদের।"
তীব্র কথাকাটাকাটি চলছে।
অন্তু বললো, "দেখো তোমরা শুধু শুধু এত চেঁচামেচি করো না। কাকু খুব অসুস্থ।"
নীলিমা--" আমাদের বাবার অসুস্থতা আমরা বুঝে নেব তুমি বলার কে?"
নন্দী কাকু বিছানা থেকে উঠে এলো। সুতপা বারণ করলো ," কাকু এই শরীরে যাবেন না ।"
কিন্তু শুনলো না এলো সোফায় বসে বললো, "তোমরা আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। সুধীর, নীলিমা তোমরা আর কোনো দিন এসো না এ বাড়িতে।"
নীলিমা --"এসব তুমি কি বলছো? আমরা তোমার ছেলে মেয়ে তোমার নিজের সন্তান। একটা বাইরের লোক তোমার কাছে আপন হলো। মানছি কয়েকটা দিন তোমার খোজ নিই নি তুমি ও রাগ করে চলে গেলে আমি ও রাগ করে আর তোমায় ...."
নন্দী কাকু কথা থামিয়ে, "তোমরা আমার নিজের সন্তান সেটা ভাবতেই তো তোমার আজকাল কষ্ট হয় তোমরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কি ভেবেছো? আমার কথা তো ছেড়ে দিলাম তোমাদের মা তোমাদের জন্য যন্ত্রণা পেয়ে চলে গেলেন। এই গতবছর লক ডাউনে আমি অন্তু দের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলাম। তোমরা খোঁজ টুকু নাও নি। আর সুতপা যখন তোমাদের ফোন করলো তখন তোমরা মিথ্যে বলেছো। ছিঃ ছিঃ তোমাদের আমি চাই না।"
নীলিমা --"তুমি সেদিন আমার বাড়ি থেকে চলে গেলে আমি তোমাকে ফোন করে ফিরতে তো বলেছিলাম তুমি উওরে বললে, " আমাকে নিয়ে তোমার ভাবার দরকার নেই । আমি কি করতাম।"
সুধীর বললো, "বাবা তোমার জেদটাকে সবসময় বড়ো করেছো তুমি। সেই একি জেদ তোমার।"
সুতপা বললো, "দেখো সুধীর তোমরা কাকু কে বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার কথা না বলে নিজেদের কাছে রাখলে না কে কেন? আর নীলিমা তোমার কাছে যখন গেলো তুমি ও এই মধ্যপ্রদেশের সম্পত্তি লিখিয়ে নিচ্ছিলে।
আচ্ছা তোমরা কি একবারও ভাবলে না নন্দী কাকু র এই বাড়িতে ছোট থেকে বড় হয়েছেন তোমাদের মা তোমাদের ছোট বেলা সব কিছু স্মৃতি জড়িয়ে এই খানে । তোমরা যদি বছরে আসো এখানে তাহলে কাকুর কত ভালো লাগে । তোমরা একজন বৃদ্ধ মানুষ এর আবেগ নিয়ে এ ভাবে তাছাড়া উনি তো তোমাদের বাবা এত কষ্ট করে তোমাদের বড় করেছেন তাকে বৃদ্ধাশ্রমে কেন যেতে বললে ?"
নন্দী কাকু বলে উঠলো, " আমার কোনো ছেলে মেয়ে নেই আমি শুধু অন্তুকে এখন নিজের ছেলে বলে মনে করি । তোমাদের আর দরকার নেই। চলে যাও বলেই নন্দী কাকু উত্তেজিত হয়ে উঠল।
অন্তু নন্দী কাকু কে থামাতে গেলো।
সুতপা বললো, অন্তু তুমি কাকুকে ঘরে নিয়ে যাও এখনি।
সুধীর, নীলিমা আমি তোমাদের অনুরোধ করছি কাকুর এই শরীরে ওনাকে এত কথা বলতে বাধ্য করো না । তোমরা কি বুঝতে পারছো না যে তোমার কতটা অন্যায় করেছো। তোমারা তোমাদের বাবার সাথে এমন একটা আচরণ কেন করলে শুধু সম্পত্তি পাওয়ার স্বার্থে কি তোমাদের ঠিক ভুল বোধ হারিয়ে গেছে।"
এরপর সুধীর নীলিমা নন্দী কাকু র কাছে ক্ষমা চাইতে গেলো বললো, " বাবা সত্যি আমরা নিজেদের স্বার্থ এর জন্য এত দিন এত গুলো ভুল করে ফেলেছি।"
তবু নন্দীকাকু ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
শেষে অন্তু সুতপা অনেক বার বোঝায় বলে, "ওদের একটা সুযোগ দিন কাকু নিজেদের ঠিক করার।"
তখন নন্দী কাকু ক্ষমা করেন।
সুধীর , নীলিমা দুজনেই এরপর অন্তুদের কাছেও ক্ষমা চেয়ে নেয় ।
ধীরে ধীরে নন্দী কাকু র বাড়িটা আবার হাসিখুশি পরিবেশ তৈরি হতে থাকে।